লেখাটির শুরুতেই দুটি অভিজ্ঞতার উল্লেখ করতে চাই। প্রথমটি শৈশবের। তখন দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। মফস্বল শহর শেরপুরে দুরন্ত শৈশব উদযাপন করছি। আশির দশকের শেষাশেষি। পাড়ায় ওয়ার্ল্ড ভিশন অফ বাংলাদেশের স্কুল স্থাপিত হলো। মান্দি নৃগোষ্ঠির লোকজন স্কুলটি পরিচালনা করতেন। সেই সুবাদে আমার প্রথম পরিচিতি ও সাক্ষাৎ ঘটে বাঙালি ভিন্ন অন্য কোনো নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে।
এ সময় পাড়ায় মান্দি জনগোষ্ঠীর আনাগোনা বেড়ে যায়। লক্ষ্য করতাম, সমবয়সী আমরাসহ চারপাশের সবার মধ্যেই নতুন পরিচয় ঘটা এই নৃগোষ্ঠী সম্পর্কে ব্যাপক ফিসফিসানি, কৌতুহল, আলোচনা এবং সমালোচনা। আমরা যারা একসঙ্গে খেলতাম কোত্থেকে যেন কিছু ছড়াও আয়ত্ব করে ফেলি। দুটি ছড়া এই মহূর্তে মনে পড়ছে-
ছড়া: এক
গারো গান্নি এগারো
ধইরা ফালা পাগারো।
ছড়া: দুই
গারো আছে গান্নি নাই
শীতল আলু তুলে নাই।
ছড়া দুটিতে ‘গারো’ বলতে পুরুষ মান্দি এবং ‘গান্নি’ বলতে নারী মান্দি ব্যক্তিকে বোঝানো হচ্ছে, যা এখনও স্থানীয়ভাবে মান্দি নৃগোষ্ঠীর লিঙ্গীয় ভিন্নতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
এক্ষেত্রে প্রথম ছড়াটিতে ১১ জন মান্দি ব্যক্তিকে ‘পাগার’ (স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত শব্দ) বা মজাপুকুরে ময়লার মতো ফেলে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। একভাবে বলা যায়, এখানে মান্দি জনগোষ্ঠীকে ময়লার সঙ্গে তুলনীয় এবং উচ্ছিষ্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দ্বিতীয় ছড়াটি সম্পর্কে শৈশবে কেউ একজন বলেছিলেন, ‘গারোরা তো শুধু শীতল আলু (এক প্রকার স্থানীয় আলু) খায়, গান্নি বাড়িতে না থাকায় তা তোলা হয় নাই এবং তারা না খেয়ে আছে।’
এই ভাবনাটি মূলত মান্দি নৃগোষ্ঠীর মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে, যেখানে নারী গৃহস্থালির সর্বময় অধিকারী। নির্দিষ্ট একপ্রকার আলুই তাদের প্রাত্যহিক খাবার এবং এই জনগোষ্ঠীর খাদ্যতালিকা যে খুব একটা সমৃদ্ধ নয়, সেদিকেও মনোযোগ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বেশির ভাগ সময়েই আমরা সমবয়সীরা রাস্তায় কোনো মান্দি ব্যক্তিকে দেখলেই জোরেজোরে ছড়াগুলো আওড়াতাম, তবে অসচেতনভাবে হলেও একটি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতাম এই ভেবে যে, যদি ওরা মারতে আসে!
বিষয়টি আমাদের খেলার অংশে পরিণত হয়। একদিন একজন ষাটোর্ধ্ব মান্দি ব্যক্তি আমার ছড়া শুনে এমন ভাবে তেড়ে আসেন যে, আমি দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়ে পালাই।
পুরো এলাকা তাড়া করে বয়সের কারণেই হোক, তিনি আমাকে ধরতে ব্যর্থ হন। এরপর থেকে তাকে দূর থেকে দেখতে পেলেই সরে পড়তাম এবং ভুলেও আর কখনও ছড়াগুলো মুখে আনিনি।
শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে এ পর্যায়ে এসেও মাঝেমধ্যে ভাই-বোনেরা ঠাট্টাচ্ছলে ওই তাড়ার কথা আমাকে মনে করিয়ে দিয়ে হাসাহাসি করে। আমিও স্মৃতিকাতর হই।
দ্বিতীয় অভিজ্ঞতাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসার পরের। আমার একজন অন্তরঙ্গ সহপাঠী এবং রুমমেট উভয়েই ছিলেন চাকমা জনগোষ্ঠীর। দুজনের সঙ্গেই আমার সখ্য গড়ে ওঠে খুব অল্প সময়েই।
একদিন আমার রুমমেট দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে জানায়, ওর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর রুমমেট তার বন্ধুটির কাছে জানতে চেয়েছে, ‘চাকমা মেয়েটার সঙ্গে মেশো কীভাবে? গন্ধ পাও না?’
অন্য একদিন আমার সহপাঠী বন্ধুটি জানায়, তার পাশের রুমের এক মেয়ে জানতে চেয়েছে, ‘তোমরা কি গাছে থাকো? সাপ-ব্যাঙ খাও?’
এটা শুনে ও নাকি স্তব্ধ হয়ে নিজের কক্ষে চলে আসে।
ব্যক্তিগত এই অভিজ্ঞতাগুলো উল্লেখ করার কারণ মূলত কিছু প্রশ্ন উত্থাপনের জন্যে। এক. প্রথম অভিজ্ঞতায় বয়স্ক একজন মান্দি ব্যক্তি কেন অচেনা এক বাঙালি শিশুকে তাড়া করেছিলেন?
দুই. উচ্চশিক্ষার পরিসরে সমগোত্রীয় (অধ্যয়নরত হিসাবে) অথচ ভিন্ন নৃগোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণাকে নিছক ‘ধারণা’ হিসেবে বিবেচনা করা সম্ভব কিনা?
একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে উপরে উল্লেখ করা দুটি অভিজ্ঞতারই অর্ন্তনিহিত সাযুজ্য বিদ্যমান; সমতলের বাঙালির বিষমতলের (পাহাড়ি) নৃগোষ্ঠী সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ। সেটি শিশুর ছড়ার মাধ্যমেই হোক, আর উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই হোক।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, ‘মনোভঙ্গী’ এবং কে, কার প্রতি সেটি প্রকাশ করে? বিস্তর আলোচনার সুযোগ এখানে না থাকলেও মনোভঙ্গী এবং এর ক্রিয়াশীলতার সঙ্গে ‘অপরায়ন’ (otherness) এর সম্পর্ক নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
মনোভঙ্গী মূলত একটি দশা বা পর্যায় যা হুট করে বা এক মহূর্তে দৃশ্যমান হয় না বা প্রতিষ্ঠিত হয় না। নানাবিধ কর্তা (actor), প্রক্রিয়া এবং বিচরণশীলতার মধ্যে দিয়ে এর ক্রমাগত বিস্তার ঘটে। ফলে এটি নবায়নযোগ্য ও পুনরুৎপাদনশীল।
যেমন, আমরা হরদম ব্যবহার করি আনকালচারড, ক্ষ্যাত বা গেঁয়ো-ভূত। এ বিষয়গুলোর মাধ্যমে আমরা মূলত কী বোঝাতে চাই? মামুলি শব্দবন্ধ বা পদ হিসাবে কি এদের ছেড়ে দেয়া যায়?
শব্দবন্ধ বা পদের চাইতে এরা কয়েকগুণ বেশিই ক্ষমতাধর। কেননা আনকালচারড, ক্ষ্যাত বা গেঁয়ো-ভূত বলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দ্বৈতবাদী ভাবনার শিকার হই। যেমন, কালচার-আনকালচার, শহুরে-গ্রামীণ অথবা স্মার্ট-আনস্মার্ট। সর্বোপরি একটি আদর্শ-মান (standard) বিরাজ করে আমাদের চেতনায়। আর এই আদর্শ-মান আমরা শুধু চেতনাতেই স্থান দেই না, নিজেদের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে তার পুনরুৎপাদন ঘটাই।
‘অপরায়ন’ তেমনি একটি মনোভঙ্গী, বোধ বা দশা। যা ‘নিজ’ সাপেক্ষে ‘অপর’ প্রতিষ্ঠা করে বৈপরীত্যের মধ্যে দিয়ে। এক্ষেত্রে ‘অপর’ মূলত সেই সত্তা বা পরিচিতি যা ‘নিজ’ দ্বারা নির্মিত, পরিবেশিত এবং অবধারিতভাবেই ‘নিজ’ এর তুলনায় দুর্বল এবং ‘অপর’ দ্বারা পরিবেশিতকরণের আওতার ঊর্ধ্বে।
এই পরিবেশিতকরণ সবসময়ই ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যেহেতু দুর্বল, মোটের উপর সবলের সঙ্গে পেরে ওঠে না, তার এই দৃশ্যমান ব্যর্থতা সবলকে শক্তি প্রদান করে দুর্বলের ক্ষয়িঞ্চু, ভঙ্গুর এবং বিকৃত প্রতিকৃতি নির্মাণের এবং ক্ষমতা কাঠামোর জন্যেই এই প্রতিকৃতি নির্মাণ বৈধতা পায়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘সবল’ কর্তৃক ‘দুর্বল’-এর পরিবেশন হয় মনগড়া, কাল্পনিক এবং আরোপিত। একটির সাপেক্ষে অপর সত্তাটিকে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব প্রদান, উপেক্ষা করা অথবা বাদ দেয়ার মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হয় অপরায়ন।
সবলের স্বজাত্যবোধ দুর্বলের সম্পদ-অর্জন-ঐতিহ্য-পরম্পরাকে ভুলুণ্ঠিত করে একদিকে মেকি প্রতিমূর্তি তৈরি করে, অন্যদিকে সবলকে সর্বোচ্চ-সর্বোৎকৃষ্ট-সর্বোন্নত বলে প্রতিষ্ঠিত করে।
রাষ্ট্র এবং এর নানাবিধ মেকানিজম এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দেয়। এই সম্মিলিত শক্তি পর্যায়ক্রমে সমাজ মানসে প্রবল মনোভঙ্গী তৈরিতেও প্রণোদনা জোগায়। আর এ কারণেই শৈশবে আমার মতো অনেকেই হয়তো ছড়া আওড়ায় কিংবা সর্বোচ্চ বিদ্যাপঠে এসেও বাঙালি ভিন্ন অন্য নৃগোষ্ঠীকে ‘জংলি’ ভেবে নিতে সংকোচে ভোগে না।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণের বিষয়টি উপেক্ষা করে মূলধারার লেখালেখি বা আলাপচারিতায় প্রায়শই বাঙালির কৃতিত্বকেই একমাত্র অর্জন ধরে নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। প্রায়শই আরও বড় যে ভুলটি আমরা করে বসি তা হলো, বাংলাদেশকে শুধু বাঙালি জাতির দাবিকৃত বাসস্থান হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলি।
বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি জনগোষ্ঠীর বাস্তুসংস্থান প্রকল্পের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বিষয়টি পরিষ্কার বোঝা যায়। নির্বিচারে ‘পাহাড়ি’ জনগোষ্ঠীর ভূমি দখল, ভূমি হতে উচ্ছেদ চলছে রাষ্ট্রের সম্মতিতে। বাস্তবে তাই দেখা যায় রাষ্ট্রের ‘প্রবল’ জনগোষ্ঠীর বিপরীতে ‘ক্ষুদ্র’ জনগোষ্ঠীর মেরুকরণ ঘটে ‘উপজাতি’, ‘ট্রাইব’ প্রভৃতি ভগ্নাংশে। অভিন্ন রাষ্ট্রে প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকত্বের প্রতিষ্ঠা হয় সংখ্যাতাত্ত্বিক বিচারে।
মেরুকরণকৃত নাগরিকত্ববোধ অধিবাসীদের মনোভঙ্গীরও মেরুকরণ ঘটায়। ফলে ‘প্রথম’ ও প্রবল শ্রেণির মনোভঙ্গী ও নাগরিকত্ববোধের সাপেক্ষে বাদবাকিরা ‘অপরায়নের’ শিকার হন।
এরই ধারাবাহিকতায় উচ্চতর বিদ্যাপীঠে বাঙালি কর্তৃক পার্বত্য জনগোষ্ঠীর ‘জংলি’ প্রতিকৃতি অংকনকে ভিন্ন দুটি জনগোষ্ঠীর সহজাত আলাপচারিতা কিংবা শৈশবে মান্দি ব্যক্তি কর্তৃক আমার তাড়া খাওয়ার ঘটনাকে নিছক স্মৃতি হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায় না। ষাটোর্ধ্ব একজন মান্দি ব্যক্তি যখন একটি বাঙালি শিশুকে অকস্মাৎ তাড়া করেন তার পেছনে নিশ্চয়ই রয়েছে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্রোধ, ক্ষোভ এবং যন্ত্রণা।
ঘটনাটি মনে পড়লে আজও আমি অপরাধবোধে তাড়িত হই। মানসপটে দেখতে পাই ময়লা পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি পরা একজন বয়স্ক মান্দি ব্যক্তি পথ ধরে হাঁটছেন আর পাশেই কিছু বাঙালি শিশু আস্পর্ধা দেখাচ্ছে খেলাচ্ছলে তাকে অপমান করার। চারপাশের ফিসফিসানি, কৌতুহল, আলোচনা এবং সমালোচনা তাদেরকে প্রশিক্ষিত করেছে, সাহস জুগিয়েছে আচরণটি করার জন্য। অপদস্ত ব্যক্তিটির তৎক্ষণাৎ আর কী-ই বা করার থাকে তাড়া করা ছাড়া?
জাতিগত পরিচয়ের যে ভগ্নাংশ তিনি বহন করছিলেন বা করেন সেজন্য তিনি অপমানের বিচারের আর্জি জানাবেন কার কাছে? প্রশাসন? সরকার? রাষ্ট্র? কথায় বলে, সর্ষে ভূত তাড়ায়, কিন্তু সর্ষের ভূত তাড়াবে কে?
লেখক: নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেছেন, দেশের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের মূল ধারা হবে সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যের নিরসন এবং নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন বিকাশে বাধাগুলো নিয়ে বিষয় চিহ্নিত করা।
‘অন্য সকল সংস্কার কমিশনে নারী অধিকারের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ক্রান্তিকালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ।’
অনুষ্ঠানে সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সবুজায়ন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন ক্যাটাগরিতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর পদক গ্রহণ করেন ডনাইপ্রু নেলী, রিনা খাতুন ও আফরোজা খন্দকার।
দিবস উদ্যাপন আয়োজনে নারীদের সাফল্য প্রদর্শন ও পুরস্কার প্রদানসহ ছিল আলোচনা সেশন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। ওই সময় দেশের সব ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাদের একজন বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা। ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্তরের নারীদের সামনে থাকা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ নারী ও কন্যাশিশুরা যেন সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করতে পারে, সে লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপের গতি বাড়াতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে সেটা বের করা দরকার। জুলাইয়ের আন্দোলনে মেয়েরাই রোকেয়া হল থেকে সবার আগে বের হলো। কিন্তু পরে এত দ্রুত মেয়েরা সরে গেল কেন?
‘জায়গা কেউ ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়নি। চাপ সৃষ্টি করে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। মেয়েদের পেছনে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
‘আমরা দেখেছি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নারীরা দারুণ সাহস দেখিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে আশা করিনি।’
নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন ফারাহ কবির।
তিনি বলেন, ‘দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা। আমরা চাই, নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে আরও গতি আসুক।’
ওই সময় নারী উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’
‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।
‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।
‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।
‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।
‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। প্রতি বছর ৮ মার্চ নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়।
এ বছর নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য হল ‘নারীদের ওপর বিনিয়োগ করুন, দ্রুত উন্নতি আনুন।’ এর মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা আনতে যে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে না সেই বিষয়টাতে মনোযোগ দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এ বছরের থিম ‘ইনস্পায়ার ইনক্লুশন’, যার লক্ষ্য হচ্ছে নারীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা সমাজে নিজের জায়গা সম্পর্কে জানতে পারে। এর সঙ্গে এ গল্পগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দিবসটির উৎপত্তি ২০ শতকের গোড়ার দিকে, যা উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের শ্রমিক আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম জাতীয় নারী দিবস পালন করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯১০ সালে মার্কসবাদী তাত্ত্বিক এবং ‘নারী অধিকার’ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রস্তাব করেন। ধারণাটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছিল ১৯১১ সালে। যেখানে ১০ লাখেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নারীর অধিকারের পক্ষে ছিলেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধু নারীদের অর্জন উদযাপনের দিন নয়, এটি লিঙ্গ সমতা, এর প্রতিফলন, সমর্থন, এবং বিশ্বজুড়ে নারী এবং মেয়েদের জন্য বাধাগুলো ভেঙে ফেলার পদক্ষেপকে উৎসাহিত করে।
আরও পড়ুন:মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার এই নীতিমালা দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আদালত এই নীতিমালার ওপর শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
দাখিল করা নীতিমালায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনোরকম বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো ডাক্তার, নার্স, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, টেকনিশিয়ান কর্মীদের নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে ট্রেনিং দেবে এবং নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ বিষয়ে ট্রেনিং দেবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে- হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো এ সংক্রান্ত সব ধরনের টেস্টের ডাটা সংরক্ষণে রাখবে। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো ডিজিটাল ও প্রিন্ট মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা এবং কন্যাশিশুর গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন মেসেজ প্রচার করবে।
এর আগে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ রোধে নীতিমালা তৈরি করতে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রুল জারি করেছিলেন।
রুলে অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের ওই রুলের পর নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
প্রথমবারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ কোনো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ক্লদিন গেকে নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নেতৃত্ব দেয়া দ্বিতীয় নারী ক্লদিন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর ও হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট মাউরা হ্যালি শুক্রবার বিকেলে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্লদিনের নিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট গে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার দায়িত্বপ্রাপ্তি সত্যিই ঐতিহাসিক। আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সমর্থন।’
প্রেসিডেন্ট পদে ব্যাপক অনুসন্ধানের পর হার্ভার্ডের প্রধান নিয়ন্ত্রক বোর্ড হার্ভার্ড করপোরেশন ক্লদিন গেকে নিয়োগ দেয়।
১৬৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ক্লদিনকে। তিনি ১৯৯৮ সালে সরকার বিষয়ে হার্ভার্ড থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।
এর আগে কলা ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্লদিন। তিনি রাজনৈতিক আচরণের ওপর শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ।
২০১৭ সালে ‘ইনইকোয়ালিটি ইন আমেরিকা ইনিশিয়েটিভ’ নামের উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ছিলেন তিনি। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য নিয়ে গবেষণা।
আরও পড়ুন:লন্ডনে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনার বক্তারা মেরিন একাডেমিতে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করাসহ মেরিটাইম শিল্পে নারীদের উৎসাহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনে (আইএমও) ‘এমপাওয়ারিং উইমেন ইন মেরিটাইম অ্যান্ড ওশান ডিপ্লোম্যাসি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সূত্র: ইউএনবি
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি আইএমও-তে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং উইমেন ইন ডিপ্লোম্যাসি নেটওয়ার্ক (ডব্লিউডিএন), লন্ডনের সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, আইএমও-তে নিয়োজিত স্থায়ী প্রতিনিধি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞসহ ১০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি এতে অংশ নেন।
বৈশ্বিক সামুদ্রিক শিল্পে নারীদের কম উপস্থিতির কথা তুলে ধরে হাইকমিশনার তাসনিম বলেন, বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ২ মিলিয়ন সনদপ্রাপ্ত নাবিকের মধ্যে নারী মাত্র ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে ক্রুজ শিল্পে শ্রমশক্তির মাত্র ২ শতাংশ নারী।
হাইকমিশনার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেরিন ইন্ডাস্ট্রিতে নারী ক্যাডেট নিয়োগের দূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য গর্ব বোধ করি। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে নেভিগেশন অফিসার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এমনকি ক্যাপ্টেনের মতো সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পদসহ বিভিন্ন ভূমিকার জন্য বার্ষিক ১০০ জনেরও বেশি মহিলা নাবিক নিয়োগ করা হয়।
‘এই রূপান্তরমূলক প্রচেষ্টাগুলো ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষ-প্রধান সামুদ্রিক শিল্পে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের প্রচারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।’
দূত নারী-পুরুষ সমতা বাড়াতে ও সামুদ্রিক খাতে নারীদের কণ্ঠ জোরদার করতে বিআইএমসিওসহ আইএমও সচিবালয়, আইএমও-এর সহযোগী সদস্য, উইমেনস ইন্টারন্যাশনাল শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউআইএসটিএ) ইন্টারন্যাশনাল, উইমেন ইন মেরিটাইম অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউআইএমএএস) এবং নেতৃস্থানীয় শিপিং শিল্প সমিতিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কাজ করার জন্য ডাব্লিউডিএন-এর দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী নারী নাবিকসহ নাবিকদের অবদানের ওপর বাংলাদেশ হাইকমিশনের তৈরি একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়, যা অংশগ্রহণকারীদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে ও প্রশংসিত হয়।
উচ্চ পর্যায়ের এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড এক্সটারনাল রিলেশনস ডিভিশনের ডিরেক্টর ডোরোটা লস্ট সিমিনস্কা, যুক্তরাজ্যে মালদ্বীপের হাইকমিশনার ড. ফারাহ ফয়জল, জর্জিয়ার আইএমও-এর রাষ্ট্রদূত ও জনসংযোগ সোফি কাস্ত্রাভা, অ্যান্টিগুয়া ও বারমুডার হাইকমিশন কারেন-মাই হিল ওবিই, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ফর শিপিং অ্যান্ড মেরিটাইম কেনিয়ার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি ডব্লিউ কারিগিথু, আইএমওর মার্শাল আইল্যান্ডের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও কার্গোস অ্যান্ড কন্টেইনার ক্যারেজ অন আইএমও সাব-কমিটির চেয়ার মেরিয়ান অ্যাডামস, আইএমওতে আর্জেন্টিনার জনসংযোগ এবং ইউএস জারেড ব্যাংকসের জনসংযোগ ফার্নান্দা মিলিশে, সৌদি আরবের এপিআর হায়াত আল ইয়াবিস এবং এডিটর অব ম্যাগাজিন লন্ডনের সম্পাদক এলিজাবেথ স্টুয়ার্ট।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটলিয়নে (এপিবিএন) দেশে প্রথমবারের মতো নারী পুলিশ সদস্যদের ডগ হ্যান্ডলার হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
সাতজন নারী পুলিশ সদস্য বেসিক কেনাইন হ্যান্ডলার ট্রেনিং কোর্সে অংশ নিয়ে নতুন এ যুগের সূচনা করেছেন।
নারীদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডের পেশাদার ডগ স্কোয়াড প্রশিক্ষক টনি ব্রাইসন ও মেলিন ব্রডউইক।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও এয়ারপোর্ট এপিবিএনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি নারী পুলিশ সদস্যরা সফলতার সঙ্গে শেষ করেছেন।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের হাতে বৃহস্পতিবার সকালে সমাপনী সনদ তুলে দেন এয়ারপোর্ট এপিবিএন অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি তোফায়েল আহম্মদ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল বলেন, ‘২০১৭ সালে দুইটি ল্যাবরেডর, দুইটি জার্মান শেফার্ড ও চারটি বেলজিয়ান ম্যালিনয়েস জাতের কুকুর এবং ১৬ জন হ্যান্ডলার নিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কেনাইন ইউনিট যাত্রা শুরু করে। শুধু বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় ডেডিকেটেড এই ডগ স্কোয়াড বিমানবন্দরে আসা যাত্রী, সহযাত্রী এবং তাদের ব্যাগেজ স্ক্রিনিংয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়াও ক্যানোপি নিরাপত্তা, পার্কিং এরিয়া এবং যানবাহনে বিস্ফোরক পদার্থের উপস্থিতি সার্চ, ব্যাগেজ বেল্ট এলাকার নিরাপত্তা রক্ষা এবং ভিভিআইপি নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।’
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ডগ স্কোয়াডে ২০২৫ সালের মধ্যে কুকুরের সংখ্যা ৬৬টি করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান জিয়াউল হক।
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালের সম্ভাব্য বিশাল অপারেশনের কথা মাথায় রেখে এই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডস থেকে আরও অন্তত ১৫টি ডগ এই স্কোয়াডে যুক্ত হবে। বর্তমানে ভগগুলো এক্সপ্লোসিভ সার্চের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলেও অচিরেই নারকোটিকস ডগ, ট্রাকিং ডগ, কারেন্সি শিফিং ডগও এই বহরে যুক্ত হবে। এ সকল ট্রেনিংয়ে কারিগরি ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে সহায়তা করবে ঢাকার ইউএস অ্যাম্বাসি।’
পরিপূর্ণ ডগ স্কোয়াড বিমানবন্দরে নাশকতা, মাদক চোরাচালান, স্বর্ণ চোরাচালন, মুদ্রা পাচার রোধে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকরা।
মন্তব্য