‘মা, তুমি কি ডায়াপার পর?’
হঠাৎ ছেলের এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই খেয়াল করলাম আমার হাতে প্যাড।
‘হ্যাঁ। পরি তো। তবে আমার ডায়াপারকে প্যাড বলে’, আমি উত্তর দিলাম।
অন্য আরেক দিন বাবার সঙ্গে ছেলের আলাপ।
‘বাবা, তুমিও কি ডায়াপার পর?’
‘না, বড়দের ডায়াপার পরতে হয় না।’
‘মা তো বড় কিন্তু মা ডায়াপার পরে। মায়ের ডায়াপারকে প্যাড বলে।’
গত সপ্তাহে কাপড় গুছাতে গিয়ে কখন প্যাডের প্যাকেটটা বিছানার ওপর রেখেছি! ছেলে দেখতে পেয়ে খুলে ভেতর থেকে রঙিন প্যাডগুলো বের করে একের পর এক রঙের নাম বলছে। প্রথমে খেয়াল করিনি হঠাৎ ফোনকল আসায়। কথা বলার একপর্যায়ে নজরে পড়লে ফোনের ওপারে থাকা বন্ধুকে বলতেই ও আঁতকে উঠল।
‘এমা ছেলের সামনে এগুলো রাখিস কেন?’
ততধিক আঁতকে উঠে আমি বললাম, ‘রাখলে কী সমস্যা?’
‘না, কখন কার সামনে বলে ফেলে। এমব্যারাসিং সিচুয়েশনে পড়বি।’
আমি হাসলাম। বললাম, ‘আমি এমব্যারাসড হলে না এমব্যারাসিং সিচুয়েশনে পড়ব! আমি তো পিরিয়ডকে এভাবে দেখি না।’
উপরের ঘটনাগুলো বলার কারণ মাসিক বা পিরিয়ড নিয়ে লজ্জা, সংকোচ খুবই সাধারণ ঘটনা। তবে আদতে মাসিক নিয়ে লজ্জার কিছু নেই। এটি অস্বস্তিতে পড়ার মতো বিষয়ও নয়।
একটা সময় ঘরের কোনায় আলনার পেছনে অন্ধকার জায়গায় মাসিকের ভেজা কাপড় শুকাতে দিতাম। বাবা বা ভাইয়ের নজরে যাতে না পড়ে, সে জন্য বাইরে রোদে দেয়ার কথা ভাবতেই পারতাম না।
এরপর প্রতি মাসে কষ্টকর দিনগুলোতে ব্যথায় যখন ছটফট করতাম তখন ভাইয়া এসে খেলার জন্য ডাকলে বলতাম, ‘আমার পেট খারাপ।’
ভাইয়া ক্ষ্যাপাত। বলত, ‘এত পেট খারাপ কেন হয় তোমার? কী হাবিজাবি খাও?’
কিশোরী আমি ব্যথা চেপে হাসতাম এবং লুকিয়ে এক টুকরো কাপড় প্যান্টে গুঁজে বড় উঠোন পাড়ি দিতাম স্যাঁতসেঁতে টয়লেটে যাওয়ার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেও কাপড় দিয়েই মাসিক সামলাতাম। এই নিয়ে ঢাকার বন্ধুরা হাসত। হাতখরচের টাকা থেকে প্যাড কেনা তখনো বিলাসিতা। তবু ‘আধুনিক’ হওয়ার চাপে আস্তে আস্তে কিনতে শুরু করি এবং একটা প্যাড যাতে অনেক সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়, সেটা মাথায় রেখে ব্যবহার করতে শুরু করি।
তারপর বহুদিন পর বহু বর্ণিল প্যাড কভার দেখে ছেলে একদিন জানতে চায় ‘মা তুমি কি ডায়াপার পর?’
'হ্যাঁ, ডায়াপার পরি, তবে সব সময় না।'
‘কখন পর?’
‘উম, যখন আমি ব্লিড করি।’
ওকে আর বলা হয় না যে, এই ডায়াপার ছাড়া আমার হাতে আপাতত অন্য আর কিছু নেই। আরও বলা হয় না এই ডায়াপার আমার শরীরসহ পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
মেন্সট্রুয়াল কাপের ব্যবহার এখনও আয়ত্ব করতে পারিনি। তাই পরি।
তবে হ্যাঁ, আমি ওকে মিথ্যা বলি না, যে মিথ্যা প্রতিনিয়ত ভাইকে বলেছি। ছেলে বোঝে কি বোঝে না তবে খুশি হয়। মা-ও ওর মতো ডায়াপার পরে কিন্তু মায়ের ডায়াপারকে প্যাড বলে।
কেন ছেলেকে মিথ্যা বলি না আমি? কেনই বা এড়িয়ে যাই না?
কারণ, মাসিক নিয়ে হাজারো রকম ট্যাবু আছে। আমি এই ট্যাবুগুলোকে ভাঙি। এগুলোর প্রতি অস্বীকৃতি জানাই। মাসিক মানেই লজ্জা। মাসিক মানেই নারীর গোপন ব্যথা। পুরুষ জানবে না কিংবা জানতে দেয়া যাবে না। জানলে বরং নারীরই লজ্জা, নারীরই অস্বস্তি!
জ্বর-সর্দিকাশি-ডায়রিয়া যা-ই হোক তা নিয়ে কথা বলা যাবে, কিন্তু মাসিকের ব্যাপারে কোনো কথা না। ফলে মাসিকের সময় রোজা না রেখেও নারীরা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সামনে রোজাদার সাজতে থাকেন এবং এ অভিনয় নারীরা নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন যুগের পর যুগ।
শুধু লজ্জা বা সংকোচ না, এ সময় খাওয়াদাওয়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। যেমন, আঁশটে গন্ধ হবে সে জন্য মাছ খেতে না দেয়া কিংবা রক্ত সাদা হয়ে যাবে ভেবে দুধ না খেতে দেয়া ইত্যাদি।
অথচ এ সময় পুষ্টিকর খাবার দরকার। কারণ, এই শারীরিক প্রক্রিয়ায় মেয়েদের শরীর থেকে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বেরিয়ে যায়।
খাবারদাবারে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আমাদের সংস্কৃতিতে নারীর বিচরণের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যেমন, এ সময় বাড়ির বাইরে না যাওয়া। ঘরে থাকা।
কিশোরীবেলায় অনেককেই দেখেছি মাসিক হবার কারণে স্কুল কামাই দিতে। তা ছাড়া আমাদের স্কুলের টয়লেটগুলো এত নোংরা, অপরিচ্ছন্ন থাকত যে সেখানে গিয়ে মাসিকের কাপড় বদলানো ছিল এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা।
আমরা অনেকেই এই অসহনীয় পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যও স্কুল কামাই দিতাম কিংবা মাসিকের শেষের দিনগুলোতে স্কুলে যেতাম অথবা গেলেও প্রস্রাব আটকে রাখতাম সারা দিন।
তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, আমরা মাসিক নিয়ে খোলামেলা আলাপ করতাম না। যদিও সবারই মাসিক হতো কিন্তু সেটি কেবল ঘনিষ্ঠ বন্ধুটিই জানত এবং একমাত্র সে-ই হদিস দিতে পারত কেন তার সহচরী স্কুলে অনুপস্থিত। বাকিরা ফিসফাস করত এবং ফিসফাসের একপর্যায়ে এ-কান থেকে ও-কানে সংবাদটি পাচার হয়ে যেত।
এমন একটি পরিস্থিতিতে স্কুল চলাকালীন কারও মাসিক হয়ে গেলে কিংবা কারও স্কুল ড্রেসের ওপর রক্ত ভেসে উঠলে তাকে খুব অস্বস্তি নিয়ে স্কুল ত্যাগ করতে হতো। আমরা তখন কিশোরীসুলভ স্বভাবে এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতাম। যেন হঠাৎ মাসিক হওয়া সহপাঠীর এক নিরেট বেকুবিপনা!
এই যে মাসিক নিয়ে হাসাহাসি, লজ্জা, খোলামেলা কথা না বলা কিংবা সামাজিক রাখঢাক এসব কিছুই মাসিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবাকে নানাবিধ অস্বাস্থ্যকর চর্চা ও বিধিনিষেধের মধ্যে আটকে রেখেছে।
আশার কথা হলো সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এ-বিষয়ক সচেতনতা বাড়ছে। কিশোরীরাও নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে, প্রচারমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রচার চলছে। তবে আমাদের উদ্যোগগুলো কোনো ধরনের ভাবনাচিন্তাকে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে সেদিকেও নজর রাখা জরুরি।
যদিও পুরোনো নরম কাপড় মাসিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উত্তম হিসেবে বিবেচিত (কারণ এটি নারীর শরীর ও পরিবেশবান্ধব), কিন্তু হাল আমলে নারীকে রুখে না দেবার বাহারি বিজ্ঞাপন, যা বোঝায় মাসিক নিয়ে ঘরে বসে কান্নাকাটি করে কেবল ভ্যাবলারা, এটি মোটেই স্মার্টনেস নয়, এবং বাজারব্যবস্থার এই রমরমা যুগে যেখানে বাহারি প্যাডে বিপণিবিতানগুলো সয়লাব, তখন কে আর ঝামেলা বাড়াতে চায় বলুন?
লেখক: নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক
আরও পড়ুন:নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে দেশের ২৮টি জেলায়। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে ১০ বেডের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার এ নির্দেশ দেয়া হয়।।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের ২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ায় ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০ বেডের আইসিইউ প্রস্তুত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।
২০০১ সালে দেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে ৩২৫ জনের দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৩০ জনের। গত বছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজই মারা গেছেন।
সম্প্রতি সচিবালয়ে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত আটজন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার শতকরা ৭০ শতাংশ।
১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথম নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সংক্রমণের উৎস ছিল নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত অসুস্থ শূকর। নিপাহ ভাইরাস প্রাণী থেকে বিশেষ করে বাদুড় ও শূকর থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়ে থাকে।
আক্রান্ত বাদুড় কোনো ফল খেলে বা খেজুরের রস পান করলে এটির লালা, প্রস্রাব বা অন্যান্য বর্জ্য দিয়ে সরাসরি সেই ফল বা খেজুরের রস দূষিত হয়ে যায়। কেউ সেই ফল বা কাঁচা খেজুরের রস পান করলে তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া আক্রান্তের সরাসরি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন।
রাজধানীতে সারাহ ইসলাম ও নন্দিতা বড়ুয়ার মরণোত্তর দেহদান নিয়ে আলোচনার মধ্যে জামাল উদ্দিন নামের আরেকজনের অঙ্গদানের খবর পাওয়া গেল, যিনি থাকতেন মিরপুরে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ৬২ বছর বয়সে প্রাণ হারানো জামালের দুটি কর্নিয়া সংগ্রহ করে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করে জামাল উদ্দিনের ছেলে জাহিন জামাল বলেন, তার বাবা রোটারী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন। ডায়াবেটিসজনিত নানা জটিল রোগে ভুগে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
জাহিন আরও জানান, এক মাস আগে অসুস্থ অবস্থায় পরিবারকে মরণোত্তর দেহদানের কথা জানিয়েছিলেন তার বাবা। তার দুটি কর্নিয়া কারা পাবেন, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জামালের কর্নিয়া সংগ্রহের আগের দিন বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যানাটমি বিভাগের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ ঢাকার বাসাবোর বাসিন্দা নন্দিতা বড়ুয়ার মরণোত্তর দেহ গ্রহণ করেন।
বিএসএমএমইউর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নন্দিতা বড়ুয়ার মৃত্যু হয় ৩০ জানুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনিজনিত জটিল রোগে ভুগছিলেন। কিডনি রোগের পাশাপাশি এসএলই ও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিলেন। মরণোত্তর দেহদানের বিষয়ে সন্তানদের বলে গিয়েছিলেন তিনি।
গত ৩১ জানুয়ারি আবদুল আজিজের চোখে বিএসএমএমইউর চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শীষ রহমান নন্দিতার একটি কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন। একই দিনে প্রতিষ্ঠানের অপথালমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজশ্রী দাস আরেকটি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেন জান্নাতুল ফেরদৌসির চোখে।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি মরণোত্তর অঙ্গদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ২০ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সারাহ ইসলাম।
তার দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দুই নারীর শরীরে। আর কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় আরও দুজনের চোখে।
আরও পড়ুন:বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সারা ইসলামের পর মরণোত্তর দেহ দান করেছেন ৬৯ বছর বয়সী নন্দিতা বড়ুয়া, যার কর্নিয়ায় চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন দুজন।
তারা হলেন পিরোজপুরের কাউখালী কলেজের ব্যবস্থাপনার বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ২৩ বছর বয়সী ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ও পটুয়াখালীর ৫০ বছর বয়সী দলিল লেখক আবদুল আজিজ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যানাটমি বিভাগের পক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ নন্দিতা বড়ুয়ার মরণোত্তর দেহ গ্রহণ করেন। ওই সময় তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঢাকার বাসাবোর বাসিন্দা নন্দিতা বড়ুয়ার দেহ গ্রহণের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন, অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লায়লা আনজুমান বানু, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ আলম, হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার (টিটো), কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শীষ রহমান, কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক রাজশ্রী দাস, অ্যানাটমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন আক্তার সুমি, নন্দিতা বড়ুয়ার দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া ও সেঁজুতি বড়ুয়া. নন্দিতা বড়ুয়ার কর্নিয়াগ্রহীতা জান্নাতুল ফেরদৌস ও আবদুল আজিজসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানে নন্দিতা বড়ুয়ার দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া ও সেঁজুতি বড়ুয়াও মরণোত্তর দেহদানের ইচ্ছা কথা জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নন্দিতা বড়ুয়ার মৃত্যু হয় ৩০ জানুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনিজনিত জটিল রোগে ভুগছিলেন। কিডনি রোগের পাশাপাশি এসএলই ও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিলেন। মরণোত্তর দেহদানের বিষয়ে সন্তানদের বলে গিয়েছিলেন তিনি।
গত ৩১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শীষ রহমান আবদুল আজিজের চোখে ও অপথালমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজশ্রী দাস জান্নাতুল ফেরদৌসির চোখে নন্দিতা বড়ুয়ার একটি করে কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি মরণোত্তর অঙ্গদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ২০ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সারা ইসলাম।
তার দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দুই নারীর শরীরে। আর কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় আরও দুজনের চোখে।
আরও পড়ুন:ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক শিশুকে ফেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুর থেকে শিশুটি হাসপাতালের পুরনো ভবনের ১১০ নম্বর ওয়ার্ড নার্সিং স্টেশনের পাশে বাথরুমের বারান্দায় ট্রলিতে পড়ে ছিল।
রাতে শিশুটিকে সেখান থেকে নিয়ে আসেন হাসপাতাল ক্যাম্প পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। শিশুটির বয়স আনুমানিক ১০ বছর।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করার পর ঢামেক হাসপাতালের পরিচালকের নির্দেশে ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান ২০৮ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে তার রেফারেন্সে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
ঢামেকে ডিউটিরত আনসার সদস্য (এপিসি) জামাল উদ্দিন বলেন, ‘দুপুর থেকে শিশুটি ওখানে ট্রলিতে পড়ে থাকার দৃশ্য আমাদের নজরে আসে। বার বার ঘুরে গিয়ে দেখি শিশুটির জন্য কেউ আসছে কী না।
পরে বুঝতে পারি প্রতিবন্ধী শিশুটিকে কেউ এখানে ফেলে চলে গেছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়াকে জানাই। ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকের নির্দেশে পরে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়া হয়েছে।’
‘করোনা বিশ্বকেই পাল্টে দিয়েছে। কিডনি রোগীদের করোনা হলে ফল খুব খারাপ হয়। ডায়ালাইসিসের রোগীদের করোনা হলে ৫০ শতাংশই মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যারা সুস্থ হয়ে ওঠেন তাদেরও নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হচ্ছে। করোনায় আক্রান্তদের ১২ শতাংশ ডিপ্রেশনে ভুগছেন।’
সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিলন হলে ‘কিডনি ডিজিজ রিসার্চ গ্রুপ’ আয়োজিত সিম্পোজিয়ামে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিএসএমএমইউ-তে করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে ‘মাল্টিটিউড অফ ইস্যুস ইন রেনাল, কার্ডিয়াক অ্যান্ড মেটাবলিক ইনফ্লুয়েন্স’ ও ‘লং টার্ম হেলথ কনসিকোয়েন্সেস অ্যাজ এ পোস্ট কোভিড-১৯ সিকোয়াল ইন হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক এই সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়।
সিম্পোজিয়ামে বলা হয়, ক্রনিক কিডনি ডিজিজের রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের রোগীদের করোনা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি ৫০ ভাগ।
আবার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের ক্ষেত্রে করোনা টিকার কার্যকারিতা অনেক কম। করোনার টিকা ডায়ালাইসিস রোগীদের কার্যকারিতা শতকরা ৮৭ ভাগ। করোনার এই টিকা আবার নেফ্রাইটিস রোগের পুনরাগমন ঘটাতে পারে।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনায় আক্রান্তদের ১২ শতাংশ ডিপ্রেশনে ভুগছেন। এ অবস্থা থেকে চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।
‘করোনায় বাংলাদেশে পেশাজীবীদের মধ্যে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়াও কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসকদের ৪০ ভাগ চিকিৎসক এবং ৩৪ ভাগ নার্স লং কোভিডে ভুগছেন। করোনায় যাদের ডায়াবেটিস ছিল না তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে। করোনায় অনেকের মায়োপ্যাথি হয়েছে।’
বিএসএমএমইউ-এর অর্থায়নে ২০২২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৮০৪ জন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর একটি প্রাথমিক গবেষণা করা হয়।
বিষয়টির উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চিকিৎসককে গবেষণার কাজ করতে হবে। একবার গবেষণার কাজ করলেই হবে না। ধারাবাহিকভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, ‘কোভিড শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বের অনেক দেশেই কোভিড রয়েছে। কোভিডের সংক্রমণের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।’
সিম্পোজিয়ামে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু সালেহ আহমেদ, বারডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারিয়া আফসানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কানসালট্যান্ট মীর ইসারাকুজ্জামান একটি করে গবেষণা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে গবেষণা ফল প্রকাশ করেন অধ্যাপক মাসুদ ইকবাল।
আরও পড়ুন:সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে সুচিকিৎসাসহ পাঁচ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে ‘নিরাপদ হাসপাতাল চাই’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শুক্রবার মানববন্ধনে এ দাবি করেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তাদের একজন বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারিনি। অনেকে অর্থের অভাবে এখনও চিকিৎসা করাতে পারছে না। সঙ্গে ভুল ও অপচিকিৎসার শিকার তো নিত্যদিনের বিষয়। ডাক্তার থাকলে ওষুধ থাকে না; ওষুধ থাকলে ডাক্তারের দেখা মেলে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাস্তবতা হলো চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশের ২৪ শতাংশ পরিবার বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এ হার সবচেয়ে কম ভুটানে।’
পাঁচ দফা দাবি
১. দালালমুক্ত ও রোগীবান্ধব হাসপাতাল গড়ে তোলা।
২. জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) স্থাপনসহ সব পরীক্ষা সেবা নিশ্চিত করে আসন বাড়ানো।
৩. রোগী ও চিকিৎসকদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৪. হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা নিশ্চিত করা।
৫. পরীক্ষা ফি ও ওষুধের মূল্য নির্ধারণ।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ হাসপাতাল চাইয়ের সমন্বয়ক এফ. এ. শাহেদ, সহসমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ, সদস্য সালেকুজ্জামান রাজিব, আহসান হাবিব সবুজ, ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিকসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:সারা দেশে ২০২২ সালে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ৪৪৬ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে জানিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশন বলেছে, তাদের বেশির ভাগ অভিমান থেকে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা: সমাধান কোন পথে’ শীর্ষক সমীক্ষায় বিষয়টি উঠে এসেছে।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার সমীক্ষা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আঁচল ফাউন্ডেশন। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস এবং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।
আঁচল ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের দেড় শতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থকে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে গত বছর স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের আত্মহত্যাকারী ৪৪৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের রয়েছে ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ে ১০৬ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেন, যাদের মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ৫৪ জন।
এতে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৮৫ ছাত্রী ও ১৬১ ছাত্র রয়েছে। একই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যার কারণ নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে মান-অভিমান থেকে সবচেয়ে বেশি আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে। ২৭.৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে অভিমান করে। তাদের বড় অংশেরই অভিমান ছিল পরিবারের সঙ্গে।
এর বাইরে প্রেমঘটিত কারণে ২৩.৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহে ৩.১৪ শতাংশ, হতাশায় ২.০১ শতাংশ, মানসিক সমস্যায় ১.৭৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যায় ১.৭৯ শতাংশ, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ৩.১৩ শতাংশ স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে বলে সমীক্ষায় উঠে আসে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য