‘মা, তুমি কি ডায়াপার পর?’
হঠাৎ ছেলের এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই খেয়াল করলাম আমার হাতে প্যাড।
‘হ্যাঁ। পরি তো। তবে আমার ডায়াপারকে প্যাড বলে’, আমি উত্তর দিলাম।
অন্য আরেক দিন বাবার সঙ্গে ছেলের আলাপ।
‘বাবা, তুমিও কি ডায়াপার পর?’
‘না, বড়দের ডায়াপার পরতে হয় না।’
‘মা তো বড় কিন্তু মা ডায়াপার পরে। মায়ের ডায়াপারকে প্যাড বলে।’
গত সপ্তাহে কাপড় গুছাতে গিয়ে কখন প্যাডের প্যাকেটটা বিছানার ওপর রেখেছি! ছেলে দেখতে পেয়ে খুলে ভেতর থেকে রঙিন প্যাডগুলো বের করে একের পর এক রঙের নাম বলছে। প্রথমে খেয়াল করিনি হঠাৎ ফোনকল আসায়। কথা বলার একপর্যায়ে নজরে পড়লে ফোনের ওপারে থাকা বন্ধুকে বলতেই ও আঁতকে উঠল।
‘এমা ছেলের সামনে এগুলো রাখিস কেন?’
ততধিক আঁতকে উঠে আমি বললাম, ‘রাখলে কী সমস্যা?’
‘না, কখন কার সামনে বলে ফেলে। এমব্যারাসিং সিচুয়েশনে পড়বি।’
আমি হাসলাম। বললাম, ‘আমি এমব্যারাসড হলে না এমব্যারাসিং সিচুয়েশনে পড়ব! আমি তো পিরিয়ডকে এভাবে দেখি না।’
উপরের ঘটনাগুলো বলার কারণ মাসিক বা পিরিয়ড নিয়ে লজ্জা, সংকোচ খুবই সাধারণ ঘটনা। তবে আদতে মাসিক নিয়ে লজ্জার কিছু নেই। এটি অস্বস্তিতে পড়ার মতো বিষয়ও নয়।
একটা সময় ঘরের কোনায় আলনার পেছনে অন্ধকার জায়গায় মাসিকের ভেজা কাপড় শুকাতে দিতাম। বাবা বা ভাইয়ের নজরে যাতে না পড়ে, সে জন্য বাইরে রোদে দেয়ার কথা ভাবতেই পারতাম না।
এরপর প্রতি মাসে কষ্টকর দিনগুলোতে ব্যথায় যখন ছটফট করতাম তখন ভাইয়া এসে খেলার জন্য ডাকলে বলতাম, ‘আমার পেট খারাপ।’
ভাইয়া ক্ষ্যাপাত। বলত, ‘এত পেট খারাপ কেন হয় তোমার? কী হাবিজাবি খাও?’
কিশোরী আমি ব্যথা চেপে হাসতাম এবং লুকিয়ে এক টুকরো কাপড় প্যান্টে গুঁজে বড় উঠোন পাড়ি দিতাম স্যাঁতসেঁতে টয়লেটে যাওয়ার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেও কাপড় দিয়েই মাসিক সামলাতাম। এই নিয়ে ঢাকার বন্ধুরা হাসত। হাতখরচের টাকা থেকে প্যাড কেনা তখনো বিলাসিতা। তবু ‘আধুনিক’ হওয়ার চাপে আস্তে আস্তে কিনতে শুরু করি এবং একটা প্যাড যাতে অনেক সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়, সেটা মাথায় রেখে ব্যবহার করতে শুরু করি।
তারপর বহুদিন পর বহু বর্ণিল প্যাড কভার দেখে ছেলে একদিন জানতে চায় ‘মা তুমি কি ডায়াপার পর?’
'হ্যাঁ, ডায়াপার পরি, তবে সব সময় না।'
‘কখন পর?’
‘উম, যখন আমি ব্লিড করি।’
ওকে আর বলা হয় না যে, এই ডায়াপার ছাড়া আমার হাতে আপাতত অন্য আর কিছু নেই। আরও বলা হয় না এই ডায়াপার আমার শরীরসহ পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
মেন্সট্রুয়াল কাপের ব্যবহার এখনও আয়ত্ব করতে পারিনি। তাই পরি।
তবে হ্যাঁ, আমি ওকে মিথ্যা বলি না, যে মিথ্যা প্রতিনিয়ত ভাইকে বলেছি। ছেলে বোঝে কি বোঝে না তবে খুশি হয়। মা-ও ওর মতো ডায়াপার পরে কিন্তু মায়ের ডায়াপারকে প্যাড বলে।
কেন ছেলেকে মিথ্যা বলি না আমি? কেনই বা এড়িয়ে যাই না?
কারণ, মাসিক নিয়ে হাজারো রকম ট্যাবু আছে। আমি এই ট্যাবুগুলোকে ভাঙি। এগুলোর প্রতি অস্বীকৃতি জানাই। মাসিক মানেই লজ্জা। মাসিক মানেই নারীর গোপন ব্যথা। পুরুষ জানবে না কিংবা জানতে দেয়া যাবে না। জানলে বরং নারীরই লজ্জা, নারীরই অস্বস্তি!
জ্বর-সর্দিকাশি-ডায়রিয়া যা-ই হোক তা নিয়ে কথা বলা যাবে, কিন্তু মাসিকের ব্যাপারে কোনো কথা না। ফলে মাসিকের সময় রোজা না রেখেও নারীরা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সামনে রোজাদার সাজতে থাকেন এবং এ অভিনয় নারীরা নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন যুগের পর যুগ।
শুধু লজ্জা বা সংকোচ না, এ সময় খাওয়াদাওয়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। যেমন, আঁশটে গন্ধ হবে সে জন্য মাছ খেতে না দেয়া কিংবা রক্ত সাদা হয়ে যাবে ভেবে দুধ না খেতে দেয়া ইত্যাদি।
অথচ এ সময় পুষ্টিকর খাবার দরকার। কারণ, এই শারীরিক প্রক্রিয়ায় মেয়েদের শরীর থেকে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বেরিয়ে যায়।
খাবারদাবারে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আমাদের সংস্কৃতিতে নারীর বিচরণের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যেমন, এ সময় বাড়ির বাইরে না যাওয়া। ঘরে থাকা।
কিশোরীবেলায় অনেককেই দেখেছি মাসিক হবার কারণে স্কুল কামাই দিতে। তা ছাড়া আমাদের স্কুলের টয়লেটগুলো এত নোংরা, অপরিচ্ছন্ন থাকত যে সেখানে গিয়ে মাসিকের কাপড় বদলানো ছিল এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা।
আমরা অনেকেই এই অসহনীয় পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যও স্কুল কামাই দিতাম কিংবা মাসিকের শেষের দিনগুলোতে স্কুলে যেতাম অথবা গেলেও প্রস্রাব আটকে রাখতাম সারা দিন।
তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, আমরা মাসিক নিয়ে খোলামেলা আলাপ করতাম না। যদিও সবারই মাসিক হতো কিন্তু সেটি কেবল ঘনিষ্ঠ বন্ধুটিই জানত এবং একমাত্র সে-ই হদিস দিতে পারত কেন তার সহচরী স্কুলে অনুপস্থিত। বাকিরা ফিসফাস করত এবং ফিসফাসের একপর্যায়ে এ-কান থেকে ও-কানে সংবাদটি পাচার হয়ে যেত।
এমন একটি পরিস্থিতিতে স্কুল চলাকালীন কারও মাসিক হয়ে গেলে কিংবা কারও স্কুল ড্রেসের ওপর রক্ত ভেসে উঠলে তাকে খুব অস্বস্তি নিয়ে স্কুল ত্যাগ করতে হতো। আমরা তখন কিশোরীসুলভ স্বভাবে এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতাম। যেন হঠাৎ মাসিক হওয়া সহপাঠীর এক নিরেট বেকুবিপনা!
এই যে মাসিক নিয়ে হাসাহাসি, লজ্জা, খোলামেলা কথা না বলা কিংবা সামাজিক রাখঢাক এসব কিছুই মাসিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবাকে নানাবিধ অস্বাস্থ্যকর চর্চা ও বিধিনিষেধের মধ্যে আটকে রেখেছে।
আশার কথা হলো সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এ-বিষয়ক সচেতনতা বাড়ছে। কিশোরীরাও নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে, প্রচারমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রচার চলছে। তবে আমাদের উদ্যোগগুলো কোনো ধরনের ভাবনাচিন্তাকে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে সেদিকেও নজর রাখা জরুরি।
যদিও পুরোনো নরম কাপড় মাসিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উত্তম হিসেবে বিবেচিত (কারণ এটি নারীর শরীর ও পরিবেশবান্ধব), কিন্তু হাল আমলে নারীকে রুখে না দেবার বাহারি বিজ্ঞাপন, যা বোঝায় মাসিক নিয়ে ঘরে বসে কান্নাকাটি করে কেবল ভ্যাবলারা, এটি মোটেই স্মার্টনেস নয়, এবং বাজারব্যবস্থার এই রমরমা যুগে যেখানে বাহারি প্যাডে বিপণিবিতানগুলো সয়লাব, তখন কে আর ঝামেলা বাড়াতে চায় বলুন?
লেখক: নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য