তৃতীয়লিঙ্গের নৃত্যশিল্পীদের বর্ণাঢ্য পরিবেশনায় মুগ্ধ হলো রাজধানী ঢাকার দর্শকরা। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে হয় এ অনুষ্ঠান।
সিক্সটিন ডে'স অফ এক্টিভিজম এর অংশ হিসেবে এ আয়োজনের নাম ছিল ‘রিজয়েস লাইফ’।
লিঙ্গ সহিংসতার প্রতিবাদে গত ২৫ নভেম্বর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে চলছে নানা আয়োজন। এর অংশ হিসেবে ঢাকার আয়োজন হয় বুধবার।
অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে ‘বন্ধু স্যোশাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সত্তা’।
‘সত্তা’ দেশের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি দেশের বাইরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে।
বিষয়ভিত্তিক সাতটি নৃত্য নিয়ে হয় ‘সত্তা’র এ নৃত্যানুষ্ঠান। নৃত্য পরিচলানা করেন কবিরুল ইসলাম রতন।
‘বন্ধু স্যোশাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা রুহুল রবীন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘‘সিক্সটিন ডে’স অফ এক্টিভিজম’র কেন্দ্রীয় কাজ হচ্ছে নারী ও কন্যা শিশুর ওপর সহিংসতা বন্ধে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা। পাশাপাশি ট্রান্সউইমেন, হিজড়া এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকেও এ কার্যক্রমগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে লিঙ্গ সহিংসতার অভিজ্ঞতা এই জনগোষ্ঠীর তুলনামূলক বেশি।’
ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনে রাজশাহীগামী আন্তনগর বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন শারমিন ইসলাম। কোলে তার তিন মাসের সন্তান।
কিছুক্ষণ পর শিশুটি কেঁদে উঠলে তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে এদিক-সেদিক আড়াল খুঁজতে থাকেন শারমিন। উপযুক্ত কোনো স্থান না পেয়ে লোক সমাগমের মধ্যেই অস্বস্তি নিয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে সন্তানকে খাওয়ান তিনি।
এভাবে জনসমাগমস্থলে বসে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পরিস্থিতিকে অনিরাপদ ও সন্তানের প্রতি জুলুম বলে মনে করেন শারমিন।
তিনি বলেন, ‘একজন নবজাতককে এভাবে অনিরাপদভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো তার প্রতি জুলুম। কাপড়ের ঢাকনা দিয়ে দুধ পান করানো তার জন্য ঝুঁকি। তারপরেও তার ক্ষুধা নিবারণের জন্য এ ঝুঁকি আমাকে নিতে হয়েছে।
‘স্টেশনে একটা ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকলে আমরা সহজেই স্বাচ্ছন্দ্যে বেবিকে বুকের দুধ পান করাতে পারি। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি ভাবা উচিত।’
এ ভাবনা এক বছর বয়সী সন্তানের মা পারুল বেগমেরও। রেলস্টেশনে কথা হয় তার সঙ্গে।
পারুল বলেন, ‘রাজশাহী যাব। সঙ্গে কেউ নেই। আমি জানি না আমার পাশের আসনে কে টিকিট কেটেছেন।
‘যেহেতু ট্রেন নিরাপদ বাহন তাই এতেই ভ্রমণ করি৷ কিন্তু ট্রেনের ভেতরে কোনো ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ব্যবস্থা নাই। ভেতরেও এ সেবা নিশ্চিত করা উচিত। তাহলে আমরা অস্বস্তিতে পড়ব না।’
জেলা শহরের বিআরটিসি বাস কাউন্টারেও শিশুর মায়েদের এমন অস্বস্তিতে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত।
রংপুর যাওয়ার জন্য শিশুসন্তানকে নিয়ে সেখানে অপেক্ষায় আছেন রিয়া আক্তার নামে এক যাত্রী। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় বেশ বিব্রতই দেখাচ্ছিল তাকে।
তিনি বলেন, ‘বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এখানে কোনো ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ব্যবস্থা নাই। তাই লোকসম্মুখে বসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হচ্ছে।
‘আমরা মায়েরা যেকোনো পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে দুধ পান করাব। তাই বলে কি ফিডিংয়ের উন্নত ব্যবস্থা হবে না? সরকারের বিষয়টি নিয়ে কাজ করা উচিত।’
শুধু পরিবহন স্পটই নয়, জেলার ক্লিনিকগুলোতেও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নেই।
শহরের বাসিন্দা হেলাল উদ্দীন বিশাল জানান, তার ছোট বাচ্চা আছে। বাইরে গেলে তার স্ত্রী সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে বিব্রত বোধ করেন। কারণ কোথাও কোনো আড়াল পান না।
হেলাল বলেন, ‘অনেক শিশু ডাক্তারের চেম্বারে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নেই। শহরে ও শহরের বাইরের এলাকাসহ অনেক শিশু চিকিৎসক বসেন। তাদের কাছে অনেক রোগীও আসেন। কিন্তু সে চেম্বারগুলোতে বুকের দুধ পান করাতে গিয়ে বিব্রত হন মায়েরা।
‘রাস্তাঘাটে চলন্ত রিকশা ও ইজিবাইকেও শিশুদের ওড়না দিয়ে ঢেকে দুধ পান করাতে দেখেছি। সে ক্ষেত্রে পাবলিক ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারও হতে পারে।’
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম চয়ন বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিদিন নরমাল ও সিজার ডেলিভারি হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৮০-১০০ জন শিশু ভর্তি থাকছে। এখানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার রয়েছে। কিন্তু ক্লিনিকগুলোতে তাদের সেবার মানের কথা চিন্তা করে উদ্যোগ নিতে পারেন ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার বানানোর। এটা নিঃসন্দেহে একটা সভ্য সুবিধা নবজাতক ও মায়েদের জন্য।’
কাপড়ে ঢেকে দুধ খাওয়াতে গেলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে শিশুর? এর জবাবে ডা. রাকিবুল বলেন, ‘সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর সময় অবশ্যই মায়ের নজর সন্তানের ওপর রাখতে হবে। নাহলে দুধ গলায় আটকে গেলে বা বাচ্চাকে দেখতে না পেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
‘শাড়ির আঁচল কিংবা ওড়না দিয়ে ঢেকে দুধ পান করানো ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব স্থানে জনসমাগম রয়েছে, সেসব স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন খুবই জরুরি।’
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জোহা জানান, জনসমাগমস্থলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
একই আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমানও।
তিনি বলেন, ‘রেলস্টেশনের একটি নিজস্ব অথরিটি আছে। ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের বিষয়ে আমি তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। এ ছাড়া প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে যেখানে পাবলিক সার্ভিস দেয়া হয়, সবখানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার করার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করব।’
স্কুলের সহপাঠীদের বিক্ষোভের মুখে নোয়াখালীর চাটখিলে ১৩ বছরের এক কিশোরীর বিয়ে পণ্ড করে দিয়েছে প্রশাসন।
বুধবার দুপুরে উপজেলার ৪ নম্বর বদলকোট ইউনিয়নের মধ্য বদলকোট গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মুসা।
ইউএনও জানান, বদলকোট ইউনিয়নের দারুল ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর বিয়ে বন্ধের দাবিতে লাল পতাকা হাতে বিক্ষোভ করে তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় সহপাঠীরা। পরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
এ সময় কম বয়সে বিয়ে দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে কনের বাবাকে ২ হাজার ও বরপক্ষকে ৮ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে বিয়ে দেয়া হবে না মর্মে মুচলেকা দেয় তার পরিবার।
বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে অবহিত করা ও এ ধরনের বিয়ে বন্ধ করার জন্য উপজেলায় একটি কমিটি রয়েছে বলেও জানান ইউএনও।
চীনে একটি রেস্তোরাঁয় একদল নারীর ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় একজন উপপুলিশ পরিচালককে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তাংশান শহরের ওই হামলায় একদল পুরুষ চারজন নারীকে মারধর করেন। ভাইরাল ভিডিওটি চীনে জেন্ডারকেন্দ্রিক সহিংসতা ইস্যুতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলা পুলিশের উপপরিচালক এবং অন্য কর্মকর্তারা ঘটনার দিন অকারণে সময়ক্ষেপণ করেছেন।
প্রাদেশিক জননিরাপত্তা বিভাগের ওই প্রতিবেদনে এটা স্পষ্ট করা হয়নি যে পুলিশের উপপরিচালক লি-কে চাকরিচ্যুত নাকি বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঘটনাটি ১০ জুন রাতে উত্তর হুবেই প্রদেশের লুবেই জেলার তাংশান শহরের একটি রেস্তোরাঁয় ঘটে।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বারবিকিউ রেস্তোরাঁয় একজন এগিয়ে যাচ্ছেন এক নারীর দিকে। একসময় ওই নারীর পিঠে হাত রাখেন ওই ব্যক্তি। নারীটি তাকে তখন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। পুরুষটি উঠেই ওই নারীকে মারধর শুরু করেন। তার আগে আরেকজন ওই নারীকে টেনে বাইরে নিয়ে যান। সেখানে মেঝেতে ফেলে তাকে মারধর করতে থাকেন।
ভিডিওতে দলটিকে তাদের সঙ্গে খাবারে অংশ নেয়াদের ওপরও হামলা চালাতে দেখা যায়। এ সময় অন্য এক নারী তাদের থামাতে গেলে তাকে ধাক্কা মারা হয়।
আহত দুই নারীকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, সামান্য আঘাত। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, তাদের কথা সত্যি না। আঘাত বেশ গুরুতর। ভিডিওতে আরও দুই নারীর রক্তাক্ত চেহারা দেখা গেছে।
গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় ৩টা ৯ মিনিটে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাদের ডাকা হয়েছিল ২টা ৪১ মিনিটে। অর্থাৎ খবর পাওয়ার আধঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এই সময়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
পরে পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের একজন অবৈধ জুয়া, অপহরণসহ নানা অপরাধে যুক্ত থাকতে পারেন। তারা কোনো অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশকে ধুয়ে দিচ্ছেন অনেকে। ঘটনাটি তীব্র ক্ষোভ আর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে নেট দুনিয়ায়।
চীনের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবোতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি এখন এটি। সেখানে বলা হচ্ছে, নারীর প্রতি সহিংসতা এখনও সাধারণ বিষয়!
অনেকেই হামলাকারীদের কঠিন বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। অনেকে আবার বলছেন, এই দলের সঙ্গে স্থানীয় পুলিশের সম্পর্ক ভালো ছিল।
পুলিশ অবশ্য এসব মানতে নারাজ। হুবেই প্রাদেশিক জননিরাপত্তা বিভাগ বলছে, দেরিতে পুলিশ পাঠানো এবং শৃঙ্খলার গুরুতর লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় মোট পাঁচজন তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বাবা-মায়ের দেয়া নাম বদলাতে চান ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্কের ট্যান্সজেন্ডার মেয়ে।
গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের সুপ্রিম কোর্টে তিনি নাম বদল ও নতুন জন্ম সনদ চেয়ে আবেদন করেন বলে এক প্রতিবেদনে মঙ্গলবার জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সম্প্রতি ১৮ বছরে পা দেয়া জেভিয়ার আলেকজান্ডার মাস্ক তার বাবা বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের মাস্কের সঙ্গে আর কোনোভাবেই সম্পর্কিত থাকতে চান না বলে জানিয়েছেন।
আদালতের কাছে ছেলে থেকে মেয়ে পরিচয়ের স্বীকৃতি এবং বর্তমান নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম নিবন্ধন করতে আবেদন করেন তিনি।
আলেকজান্ডার মাস্ক বলেন, 'আমি আর কোনোভাবেই আমার জন্মদাতা বাবার সঙ্গে থাকতে বা তার নাম-পরিচয় বহনের সম্পর্ক রাখতে চাই না।'
ইলন মাস্ক-জাস্টিন উইলসনের ঘরে জন্ম নেন আলেকজান্ডার মাস্ক। ২০০৮ সালে তার বাবা-মায়ের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাস্টিনের সঙ্গে ঘর করার পর আরও দুই নারীকে বিয়ে করেছিলেন ইলন মাস্ক। অবশ্য এই দুই স্ত্রীর সঙ্গেও বিচ্ছেদ হয় তার।
মেয়ের নাম পরিবর্তনের আবেদনের ব্যাপারে মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলা বা তার নিজের কোনো আইনজীবীর মন্তব্য জানা যায়নি।
তবে এই আবেদনের মাসখানেক পর যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্রতি সমর্থনের কথা জানান ইলন মাস্ক; যে পার্টির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবস্থান দেশজুড়ে ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকে সীমিত করার আইনের পক্ষে।
এর আগে ২০২০ সালে এক টুইট বার্তায় ইলন মাস্ক বলেছিলেন, 'আমি পুরোপুরি ট্রান্সজেন্ডারদের সমর্থন করি। কিন্তু নারী বা পুরুষ পরিচয় বেছে নেওয়া একটি দুঃস্বপ্ন।'
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না ট্রান্সজেন্ডার। এ প্রশ্নে হওয়া ভোটের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাঁতারের বিশ্ব পরিচালন সংস্থা- ফিনা। তারা বলেছে, যেসব নারী পুরুষালি আচরণের যেকোনো শারীরিক অভিজ্ঞতা অনুভব করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ১৫২টি দেশের ফেডারেশন ভোটে অংশ নেয়। ৭১ শতাংশ ভোট পড়ে ট্রান্সজেন্ডারদের বাদ দেয়ার পক্ষে।
ফিনা বৈজ্ঞানিক প্যানেলের একটি প্রতিবেদন বলছে, ট্রান্স নারীরা ওষুধের মাধ্যমে তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমানোর পরও সিসজেন্ডার নারী সাঁতারুদের তুলনায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেয়ে থাকে।
ফিনার নতুন ৩৪ পৃষ্ঠার নীতিতে বলা হয়েছে, পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তর ক্রীড়াবিদরা কেবল তখনই নারী বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, যখন তারা এটা প্রমাণ করতে পারবে যে ট্যানার স্টেজ-টুর বাইরে পুরুষ বয়ঃসন্ধির কোনো কিছু অনুভব করেনি।
নতুন নীতি সম্পর্কে ফিনার প্রেসিডেন্ট হুসেন আল-মুসাল্লাম বলেন, ‘ক্রীড়াবিদদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার রক্ষা করতে হবে। আমাদের ইভেন্টগুলোতে, বিশেষ করে ফিনা প্রতিযোগিতায় নারী বিভাগে প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।’
এই জটিলতায় যারা পড়বেন তাদের আশাহত হওয়ার কারণ নেই। ফিনার নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, কিছু ইভেন্টে ট্রান্স নারীদের জন্য একটি ‘উন্মুক্ত’ বিভাগ খোলা হবে।
ফিনার সভাপতি মুসাল্লাম বলেন, ‘আমরা সব সময় ক্রীড়াবিদকে স্বাগত জানাই। একটি উন্মুক্ত বিভাগ তৈরির অর্থ হলো, প্রত্যেকেরই অভিজাত স্তরে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। এটি আগে করা হয়নি। তাই ফিনাকে পথ দেখাতে হবে।’
এর আগে ২০২০ সালে বিশ্ব রাগবি প্রতিযোগিতায় এমন সিদ্ধান্ত এসেছিল। তবে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দিয়ে বাছাই করাকে অনেকেই করেছেন প্রশ্নবিদ্ধ। আরও অনেক প্রতিযোগিতায় এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় ট্রান্স নারীদের।
যুক্তরাষ্ট্রে লিয়া টমাস এক ট্রান্স নারী সাঁতারু, যিনি কলেজভিত্তিক একটি সাঁতার প্রতিযোগিতায় (পুরুষ বিভাগে) গেল মার্চে শিরোপা জেতেন। বিষয়টি তখন বেশ আলোচিত হয়। অনেকেই দাবি তুলেছিলেন, এ ধরনের সাফল্য অবশ্যই উদযাপন করা উচিত। ফিনার নতুন সিদ্ধান্তে প্যারিস অলিম্পিকে থমাস আর নারী বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
সাবেক ব্রিটিশ সাঁতারু শ্যারন ডেভিস অবশ্য এই খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন। টুইটে তিনি লেখেন, ‘আমি আপনাকে বলতে পারব না যে আমি আমার খেলাধুলার জন্য কতটা গর্বিত। ফিনা এবং ফিনা প্রেসিডেন্ট বিজ্ঞানের ভিত্তিতে এমন করছেন। সাঁতার সব সময় সবাইকে স্বাগত জানাবে, তবে ন্যায্যতা হলো খেলার ভিত্তি।’
I can’t tell you how proud I am of my sport @fina & @fina_president for doing the science, asking the athletes/coaches and standing up for fair sport for females. Swimming will always welcome everyone no matter how you identify but fairness is the cornerstone of sport https://t.co/1IaMkIFOkX
— Sharron Davies MBE (@sharrond62) June 19, 2022
আরেক সাবেক ব্রিটিশ সাঁতারু ক্যারেন পিকারিং বলেন, ‘উপস্থাপনা, আলোচনা এবং ভোটের জন্য ফিনা কংগ্রেসে ছিলাম। যেকোনো ক্রীড়াবিদ যারা এখন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না তাদের জন্য সহানুভূতি জানাতে পারি। নারীদের বিভাগে প্রতিযোগিতামূলক ন্যায্যতা অবশ্যই রক্ষা করা উচিত।’
আরও পড়ুন:ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবসর নেয়া ব্যবসায়ী মো. সাইদুজ্জামান। বয়স এখন ৬৮। স্ত্রীর মৃত্যুর পর থাকছেন ছেলে-মেয়েদের কাছে। কিন্তু একসময় তার মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাব ছিল, সেটি এখন আর নেই। কেমন এক নিসঙ্গতা যেন ভর করেছে তার মধ্যে।
সাইদুজ্জামানের ছেলে সারোয়ার জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আম্মু মারা যাওয়ার পর থেকে আব্বুর কোনো চাহিদা নেই। আগে যেমন আম্মুকে নিজের পছন্দের খাবার রান্না করতে বলতেন, এখন কাউকে আর সে কথা বলেন না। পাশাপাশি তিনি ব্যবসা থেকে অবসর নেয়ার পর আত্মীয়দের মধ্যেও তার গুরুত্ব যেন দিন দিন কমছে। আগে যেমন পরিবারে কোনো সমস্যা হলেই সেটি সমাধানের জন্য তার ডাক পড়ত, এখন আর কেউ তেমনটা করে তাকে ডাকেন না। তার সময় কাটে বিছানায় শুয়ে থেকে বা টেলিভিশন দেখে। কেমন যেন এক নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন।
‘বিভিন্ন সময় তিনি মানুষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে থাকেন। পরিবারে কোনো অনুষ্ঠান হলে বলা হয়, তোমার আব্বু থাক, ওনাকে টানা-হেঁচড়া করার প্রয়োজন নেই। তিনি যে তার বিষয়গুলো মন খুলে বলবেন সে রকম কেউ তার চারপাশে নাই। সামাজিকভাবে তিনি তার গুরুত্ব যেন হারিয়ে ফেলেছেন। যাদের তিনি উপকার করেছেন, তাদের কাছ থেকেও। পরিবারের মধ্যে থেকেও তিনি পরিবার-বিচ্ছিন্ন।’
সাইদুজ্জামানের মতোই অবস্থা অবসরে যাওয়া বেশির ভাগ বাবাদের। মায়েরা যেমন স্বাভাবিকভাবে নিজেদের আদর আর ভালোবাসা প্রকাশ করেন, বাবারা যেন তার বিপরীত। বাবারা সহজে তাদের আদর-ভালোবাসা প্রকাশ করেন না। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে সন্তানদের সঙ্গে তাদের একটি দূরত্ব তৈরি হয় বয়স হয়ে গেলে।
সন্তান যেমন মাকে মন খুলে সব কথা বলেন, বাবার ক্ষেত্রে এমনটা খুব কমই দেখা যায়। সে জায়গায় বরং সন্তানরা বাবাকে একটু ভয়ের চোখে দেখতেই অভ্যস্ত। পাশাপাশি সমাজ বাস্তবতায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপার্জনের দায়িত্বটুকু বাবাদেরই পালন করতে হয়। আর এ কারণে বাবাদের বেশির ভাগ সময় কাটে ঘরের বাইরে। তাই ইচ্ছা থাকলেও যেন সন্তানের কাছে আসা তেমন একটা হয়ে ওঠে না।
কর্মস্থলের পেশাদারত্ব বজায় রাখতে গিয়ে তেমন কোনো বন্ধুও আর শেষ বয়সে গড়ে ওঠে না। এ কারণে প্রিয় সঙ্গিনীর অনুপস্থিতি যেন তাদের মধ্যে তৈরি করে গভীর একাকিত্ব বা বিচ্ছিন্নতা বোধ।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, ষাটোর্ধ্ব বাবাদের মধ্যে এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধ বা একাকিত্বের হার বেশি।
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে যেটা দেখা যায়, বাবাদের নিঃসঙ্গতা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়, যখন বাবারা কর্ম থেকে অবসর নেন। আরেকটি প্রেক্ষাপট হয়, যখন সন্তানদের কর্মব্যস্ততা বা কাজের প্রয়োজনে সন্তানরা দূরে অবস্থান করে। অথবা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব যখন তৈরি হয়, তখন কাজ থেকে অবসরে যাওয়া বাবাদের মধ্যেও নিঃসঙ্গতা তৈরি হয়।
‘বাংলাদেশে যারা একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা অতিক্রম করেছেন, প্রবীণ হয়েছেন, তাদের মধ্যেই এই নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্ব বেশি কাজ করে। আমাদের যে পর্যবেক্ষণ বা সমাজ বাস্তবতা, সেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণভাবে মনে করা হয় বাবা যখন প্রবীণ হবেন বা স্বাভাবিক কাজ থেকে অবসর নেবেন, তার বোধ হয় আর কিছু করার নেই। ধর্মকর্ম করা ও বাসায় অলস সময় কাটানো ছাড়া।’
তিনি বলেন, ‘তাদের কর্মস্পৃহাটা আমরা দুর্বল করে দেই। একটা সময় তিনি যেভাবে সন্তানকে দেখতে চান বা আগের মতো সব কিছুকে উপলব্ধি করতে চান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে চান, এই বিষয়গুলো থাকে না।
‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে যারা উচ্চশিক্ষিত, তারা হয়তো এই প্রচলিত ধারণা থেকে বের হয়ে আসবেন। কিন্তু আমরা এটা দেখছি না। বরং তাদের মধ্যে নতুন একটি বিষয় দেখা যাচ্ছে, সেটা হলো প্রবীণ কেন্দ্র বা সেবা নিবাসে বাবাদের পাঠিয়ে দেয়া, পারিবারিক সেবার পরিবর্তে। একেক জনের বাস্তবতা একেক রকম থাকে। যখন বাবারা আগের মতো আর রেসপন্স পান না, তখন তার মধ্যে নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্ব ভর করে।’
প্রবীণদের সমাজের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি করে দিলে এ ধরনের সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবে বলে মত এই সমাজ বিজ্ঞানীর। তৌহিদুল হক বলেন, ‘যেসব প্রবীণের আর্থিক অসংগতি রয়েছে বা অন্য কোনো ধরনের সম্পর্কজনিত সংকট রয়েছে বা পদমর্যাদার কারণে এই ঘটনা কারও সঙ্গে আলোচনাও করতে পারছেন না, এ ধরনের প্রবীণদের মধ্যে এই একাকিত্ব আরও বেড়ে যায়। প্রবীণবান্ধব সংস্কৃতি তৈরি না হলে এই সমস্যাগুলো থেকেই যাবে।
‘অনেক দেশ যে মডেলটি ব্যবহার করে প্রবীণদের এই একাকিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, সেটা হলো এদের সক্রিয় রাখা। সেই কাজগুলো আমাদের এখানে অনুপস্থিত। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে দেখা যায় তাদের বিভিন্ন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কাজে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। এগুলো আমাদের এখানে অনুপস্থিত।’
তিনি বলেন, ‘প্রবীণরা অবসরের পর একটি মর্যাদাপূর্ণ ও ক্রিয়াশীল জীবন প্রত্যাশা করেন। এ জায়গায় আত্মীয়, প্রতিষ্ঠান ও পরিবারকে তিনি কাছে পেতে চান। তিনি তার যৌবনে যেমন সবার জন্য করেছেন, এই সময়ে সবাই তার জন্য করবেন- এমন একটি প্রত্যাশা তিনি রাখতে চান।
‘এখন যখন সে রকম হয় না, তখন তার মধ্যে নিঃসঙ্গতার বোধ তৈরি হয় এবং অনেক জটিল হিসাব তিনি মেলাতে পারেন না। একপর্যায়ে তার কাছে মৃত্যুই মনে হয় একমাত্র নিশ্চিত ভবিষ্যৎ, সেদিকেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থা থেকে তাকে বের করে আনতে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপির কার্যকর বিকল্প এখনও বাজারে আসেনি। ওষুধের মাধ্যমে তা নিরাময়ে চলছে জোর চেষ্টা। রেকটাল (মলদ্বার) ক্যানসারে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ওষুধের সফলতা পরীক্ষামূলকভাবে সম্প্রতি পাওয়া গেছে। এবার স্তন ক্যানসার চরম অবস্থায় থাকাদের ক্ষেত্রে কেমোর চেয়ে বেশি কার্যকর ওষুধের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন জার্নালে সম্প্রতি এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ হয়।
কেমোথেরাপি একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ধরনের ওষুধের মাধ্যমে ক্যানসারের সেলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়; থামানো হয় বিস্তার। যদিও সব ধরনের ক্যানসারে এ পদ্ধতি কার্যকর না। বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার সেল বিভিন্ন ওষুধে সাড়া দেয়।
স্তন ক্যানসারে আক্রান্তদের ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান (Trastuzumab deruxtecan) ওষুধ প্রয়োগে দেখা গেছে, এটি ক্যানসারের বিস্তার কমিয়ে দেয়। যাদের প্রোটিন লেভেল কম তাদের ক্ষেত্রে অন্যান্য ওষুধ খুব একটা কাজ করে না। নতুন ওষুধটি সেসব রোগীর ক্ষেত্রেও কার্যকর। গবেষকরা দেখেছেন, এই ওষুধ দেয়ার ফলে অন্তত ১০ মাস টিউমার বাড়েনি। এ অবস্থার জন্য অন্তত ৫টি কেমোর দরকার পড়ে সাধারণত।
গবেষকরা এই পরীক্ষার জন্য ৫৫৭ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্তদের বাছাই করেন, যাদের অবস্থা বেশ জটিল। ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান ওষুধ দেয়ায় পর, ১০ মাস তাদের অবস্থার আর অবনতি হয়নি। স্তন ক্যানসারের ট্রায়ালে এমন আশার খবর এটাই প্রথম।
ট্রায়ালটি বেশ অগোছালোভাবেই করা হয়েছিল। যেসব রোগী ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান ওষুধটি গ্রহণ করেছিলেন, তাদের টিউমারগুলো কমপক্ষে ১০ মাস বিস্তার বন্ধ ছিল, যেখানে স্ট্যান্ডার্ড কেমোথেরাপিতে গড়ে পাঁচ মাসের জন্য বিস্তার বন্ধ হয়ে থাকে।
ট্রায়ালে অংশ নেয়া সবার হিউম্যান এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর রিসেপ্টর ২ (এইচইআর২) প্রোটিনের মাত্রা খুব কম ছিল। এ প্রোটিন ক্যানসার কোষগুলোর বিস্তারে সহায়তা করে।
এটি একটি স্বাভাবিক প্রোটিন, যা সাধারণত স্তন কোষে পাওয়া যায়। তবে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত পাঁচজনের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় এ প্রোটিন উৎপাদন করতে দেখা যায়, যা ক্যানসারকে মারাত্মক করে তোলে।
ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান দিয়ে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তদের এইচইআর২ প্রোটিন উৎপাদন ঠেকাতে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে যাদের উচ্চমাত্রায় এই প্রোটিন উৎপাদন হয় না, তাদের ক্ষেত্রে খুব একটা কাজে আসেনি এই ওষুধ।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পরীক্ষামূলক ওষুধ খেয়েছিল তারা দুই বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। যেখানে স্ট্যান্ডার্ড কেমোথেরাপি নেয়ারা গড়ে ১৬ মাস বেঁচে ছিল তাদের তুলনায়।
নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যানসার সেন্টার গবেষণাটি পরিচালনা করেছিল। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ডাইচি সানকিও এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা সেখানে বিনিয়োগ করেছিল। তারাই যৌথভাবে এই ওষুধ আবিষ্কার করে।
কীভাবে কাজ করে ওষুধ
ওষুধটি এনহার্তু নামে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এটি অ্যান্টিবডি কনজুগেটস (এডিসিস) নামক ওষুধের একটি নতুন শ্রেণির অন্তর্গত।
জেনেরিক কেমোথেরাপির মতো এই ওষুধগুলো সুস্থ কোষকেও ধ্বংস করে। ওষুধগুলো মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিকে টার্গেট করে। এই সংমিশ্রণ ক্যানসার কোষের মধ্যে থেকে সুস্থ কোষকে চিনতে সাহায্য করে।
ওষুধটি ট্রাস্টুজুমাব দিয়ে তৈরি। মানে এটি হিউম্যানেইসড মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি। এটি টপোইসোমারেজ ইনহিবিটর এবং ডিরাক্সটেকানের সঙ্গে আবদ্ধ। টোপোমেরেজ ইনহিবিটর কোষের ডিএনএ-তে কাঠামোগত পরিবর্তন এবং প্রতিলিপি তৈরিতে বাধা দেয়। যখন এটি প্রতিলিপি করার চেষ্টা করে, তখন তা ধ্বংস করে দেয়।
ট্রাস্টুজুমাব অণুগুলো শরীরের এইচইআর২ রিসেপ্টরগুলোর সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে প্রতিলিপি প্রতিরোধ করে। তারা তারপর কোষে শোষিত হয়। আর ডিরাক্সটেকান হলো কেমোথেরাপির অণু যা কোষের ভিতরে কাজ করে একবারই।
ওষুধটি ইতোমধ্যেই এইচইআর২ পজিটিভ স্তন ক্যানসারের রোগীদের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। ওষুধটি এইচইআর২ প্রোটিন যাদের কম তাদের চিকিৎসায় ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ অন্যান্য অনুরূপ ওষুধগুলো এই ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েছে।
যদিও গবেষকরা বলছেন, ওষুধটি যেকোনো কোষে প্রবেশ করতে পারে। এর অর্থ যাদের এইচইআর২ প্রোটিন কম তাদের কোষেও প্রবেশ করবে। পরে কোষ ঝিল্লির মধ্য দিয়ে ক্যানসার কোষের মধ্যে পৌঁছে যায়।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ওষুধ সেবনে বমি বমি ভাব দেখা যেতে পারে। ফুসফুসে জটিলতা নিয়ে মারা গেছেন তিনজন। গবেষকরা বলেছেন, যারা ওষুধ সেবন করেছেন তাদের ৫০ শতাংশ গুরুতর পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল। যেখানে কেমো নেয়া রোগীদের ৬৭ শতাংশ এই পরিস্থিতিতে পড়ে। ওষুধ গ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ১২ শতাংশের ওষুধ-সম্পর্কিত ফুসফুসের রোগ হয়েছে।
ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান সাধারণত ব্যবহার হয়ে থাকে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে। যেহেতু এটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে, তাই শনাক্তের শুরুতেই এটি এখনই ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ওষুধটি স্তন ক্যানসার একেবারে নিরাময় করবে বলে আশা করা ঠিক না। তবে এটি উপশমকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে যতক্ষণ রোগীরা তা সহ্য করতে পারবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য