ফুটবলে খেলোয়াড়দের অভিনয়টা কমন। ফাউল আদায় করার জন্য বা সময় নষ্ট করার জন্য ম্যাচের মধ্যে অনেক ফুটবলারই এই অভিনয়ের সহায়তা নিয়ে থাকেন। পেনাল্টি বক্সে এ ধরনের ঘটনা একটু বেশিই দেখা যায়।
তবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালের একটি ম্যাচে এক অদ্ভুদ ইনজুরি নাটকের ঘটনা রীতিমত অবাকই করে দিয়েছে ফুটবল বিশ্বকে।একটি ইনজুরি অভিনয়ের ভিডিও রীতিমত ভাইরাল হয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বেলজিয়াম-ইতালি ম্যাচ। ম্যাচের তখন ৩১ মিনিট চলছিল। বেলজিয়ামের ডি-বক্সে আক্রমণ সাজায় ইতালি। ডি-বক্সের ভেতরে বল পান ইতালির স্ট্রাইকার চিরো ইমোবিলে। বলটা শূন্যে ভাসলে বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার ভেরতোঙ্গেনের সঙ্গে বল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার লড়াইয়ে নামেন ইমোবিলে।
শূন্যে ভাসা বলটা ক্লিয়ার করেন বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার। তবে, বলে স্পর্শ না করে ডিফেন্ডারের পা ইমোবিলের পায়ে লেগেছে এমনভাবেই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন ইমোবিলে।
তখনও মাটিতে ইতালির স্ট্রাইকার। এদিকে ও ক্লিয়ার হওয়া বল থেকেই গোল করে বসে ইতালি। বেরেলার গোলে যখন উদযাপন চলছে তখন হঠাৎ করেই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়া ইমোবিল উঠে পড়েন। এদিক ওদিক তাকিয়ে যোগ দেন উদযাপনে।
ইনজুরি না হয়েও পেনাল্টি বক্সে ফাউলের এই অভিনয়ের দৃশ্যই ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
চিরো ইমোবিল চলতি ইউরো চাম্পিয়নশিপে ইতালির হয়ে চার ম্যাচে তিন গোল করেন। সেরি আতে গেল মৌসুমে ৩৬ গোল নিয়ে গোল্ডেন বুট জেতেন এই স্ট্রাইকার।
এর আগেও ইতালিয়ান লিগের গোল্ডেন বুট জেতেন ইমোবিলে। এর আগে ২০১৩-১৪ মৌসুমে ২২ গোল করে এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে ২৯ গোল করে এই পুরস্কার জেতেন ইতালিয়ান এই ফুটবলার।
Injured Italian player suddenly recovers when Italy scores #Euro2021 pic.twitter.com/E6b2O9EUET
— Don Moynihan (@donmoyn) July 2, 2021 ">
আরও পড়ুন:Injured Italian player suddenly recovers when Italy scores #Euro2021 pic.twitter.com/E6b2O9EUET
— Don Moynihan (@donmoyn) July 2, 2021
বাংলাদেশের নাগরিকরা যেন কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ অভিমত দেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডব্লিউইএফের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ক্লাউস শোয়াব ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল।’
তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকার দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি এঁকে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগই হয়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা তুলে ধরে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের মানুষ কোন ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কী ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি বলে, না আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দরকার, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগবে।’
বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি বর্তমান প্রজন্মকে বদলে দেওয়ার কারণে তারা এখন শুধু বাংলাদেশি আর তরুণ নয়, বরং সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অংশ হয়ে গেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রজন্ম পুরোনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না। তাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণদের কাজের প্রতিটি অংশে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে।
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ নামের হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।
বাসসকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন লন্ডনের বসবাসরত বাংলাদেশি সাংবাদিক শাহেদ শফিক।
ডা. জাহিদকে উদ্ধৃত করে শাহেদ শফিক বলেন, ‘বেগম জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়নি। বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার নতুন করে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে।
‘শুক্রবার সেসব রিপোর্ট পাওয়া যাবে। রিপোর্টে যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে তার ছুটি হতে পারে। এরপর তিনি বাসায় ফিরবেন।’
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, পরবর্তী সময়ে বাসা থেকে নিয়মিত চিকিৎসা নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সার্বক্ষণিকভাবে অধ্যাপক পেট্রিক কেনেডি ও জেনিপার ক্রসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকবেন তিনি।
ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘গত ১৭ দিনে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। দুই-একটি রিপোর্ট এখনও আসেনি। কয়েকটি পরীক্ষা ‘দ্য ক্লিনিকে’ করা যায় না। সেগুলো বাহিরের হাসপাতাল থেকে করাতে হয়।
‘তবে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে আগের চেয়ে এখন অনেকটাই বেটার আছেন।’
খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে না আসার কারণ জানিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, ‘ম্যাডামের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। কারণ, বয়সটা এখানে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। তা ছাড়া জেলে রেখে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।’
ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকের ডাক্তাররা বলছেন, আরও অনেক আগে ম্যাডামকে বিদেশে নিয়ে আসা গেলে তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যেত। তাকে দ্রুত সুস্থ করা যেত।
‘এখন ওষুধের মাধ্যমে উনার যে চিকিৎসা চলছে, তা অব্যাহত রাখার জন্য সব চিকিৎসকরা একমত এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।’
ওই সময় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে ফ্যাসিবাদীরা ফিরে আসবে বলে শুক্রবার মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে সকালে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এমন কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন না যাতে আমাদের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয় এবং ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসার সুযোগ পায়।’
তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে ফ্যাসিস্টরা। জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে।’
উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ সরকার ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে অভিযোগ করে শফিকুর বলেন, সেই ফ্যাসিস্টদের আশ্রয় আর বাংলার মাটিতে হবে না।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সংঘটিত সকল হত্যার বিচার চাই। মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই যুদ্ধ চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৩ বছরের প্রত্যেকটি খুন, গুম ও অপকর্মের বিচার বাংলার মাটিতে হবে। যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছে, জমি দখল করেছে, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে, অন্যায়ভাবে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে,তাদের ইজ্জতে হাত দিয়েছে, সেসব দুষ্কৃতিকারীদের তালিকা তৈরি করে জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।’
আরও পড়ুন:অবৈধ ইটভাটায় সয়লাব হয়ে গেছে যশোর।
জেলায় ১৪৪টি ইটভাটা থাকলেও সেগুলোর ১১৪টিই অবৈধ বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় ও ডিসির লাইসেন্স না থাকায় ওই ভাটাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার বৈধতা নেই। এমনকি জেলার কোনো ভাটাই সব শর্ত পূরণ করেনি।
জিগজ্যাগ পদ্ধতির মাত্র ৩০টি ইটভাটা এখন পর্যন্ত মোটামুটি আইনসিদ্ধভাবে চলছে বলে দাবি পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের।
যশোরের বেশির ভাগ ভাটার বৈধতা না থাকার বিষয়টি এর আগে আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও উঠে আসে। এমন বাস্তবতায় সম্প্রতি অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠে নামার ঘোষণা দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক এমদাদুল হক জানান, গত এক মাসে ১৮টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। শিগগিরই অবৈধ ভাটাগুলো উচ্ছেদে কাজ শুরু হবে।
২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে সংশোধনী এনে ইটভাটার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়।
নির্দিষ্ট এলাকায় ইটভাটার জায়গা, ভাটার দূরত্ব ও সংখ্যা নির্ধারণের নির্দেশনাও সে সময় দেওয়া হয়। এমনকি লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা চালালে দুই বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান সংযোজন করে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন, ২০১৯’ বিল সংসদে পাস হয়।
ধারা-৪ এ সংশোধনী এনে বলা হয়, চলমান যেকোনো আইনে যা কিছুই থাক না কেন, ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত, সেই জেলার জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ না করলে কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না। কিন্তু যশোরের প্রেক্ষাপটে এ সবের ব্যত্যয় ঘটে আসছে ২০১৯ সালের সংশোধনীর পরও।
পবিবেশ আইন অনুযায়ী, এক কিলোমিটারের মধ্যে আবাসিক এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, বাগান, জলাভূমি, কৃষি জমি, বিশেষ কোনো স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটার বা ১ হাজার মিটার দূরত্বে ভাটা স্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে ভাটাগুলো এখন জিগজ্যাগ পদ্ধতির হতে হবে।
১২০ ফুট চিমনির সনাতনী ভাটা এখন আর আইনসিদ্ধ নয়, কিন্তু যশোর জেলার অধিকাংশ ভাটার ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে চলেছে।
আইনের ব্যত্যয় ঘটলেও অনেকে এর আগে ছাড়পত্র সংগ্রহ করেছেন। যদিও বিধি অনুযায়ী, পরিবেশ আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার ভেতরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স দিতে পারবে না। অথচ এর আগে অনেকেই নানা বাঁকা পথে হাসিল করেছেন ছাড়পত্র।
জেলায় এমন ভাটাও রয়েছে, যেখানে এক কিলোমিটার তো দূরের কথা, ২০ গজের মধ্যেই রয়েছে বসতবাড়ি। ১০০ গজের মধ্যে ঘনবসতি গ্রাম রয়েছে। ভাটা নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো শর্তই মানা হয়নি।
আবার সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবেও চলছে কয়েকটি ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, আবাসিক এলাকায় ধানী ও কৃষি জমি নষ্ট করে নির্মাণ করা হয়েছে ইটভাটা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও মসজিদ, শতাধিক পরিবারের বসতি গ্রামসহ রয়েছে স্পর্শকাতর অনেক প্রতিষ্ঠান। বিগত সময়ে পরিবেশ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে ভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এক কিলোমিটারের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে—জেলায় এমন ভাটার সংখ্যা রয়েছে ১১০টি। এর অনেকগুলো জিগজ্যাগ হলেও পরিবেশ আইন মানা হয়নি। শর্ত পূরণ না করেই চলছে এসব ভাটার কার্যক্রম। যে কারণে অবৈধ ভাটার তালিকায় পড়েছে সেগুলো।
ওই তালিকা থেকে বছর কয়েক আগে ৩৩টি ভাটার ব্যাপারে যশোর পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা সদর দপ্তরের মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট শাখায় প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল। আইনগত বৈধতা না থাকায় ওই ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল প্রতিবেদনে। তারপরও ভাটাগুলোর অধিকাংশই এখন চলছে বহাল তবিয়তে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ডিসির লাইসেন্স ও পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই ভাটাগুলো চলায় সেগুলোর বেশির ভাগের পাশেই রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। ভাটার কারণে নষ্ট হয়েছে কৃষিজমি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আবাসিক এলাকার ওপর।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, জেলার অবৈধ ১১৪টি ভাটার ওপর সম্প্রতি নজরদারি শুরু হয়। এরই মধ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর ও ৮ জানুয়ারি জেলার ১৮টি অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালায় অধিদপ্তর। আইনগতভাবে না হলেও পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় ঘটলে একে একে সেগুলো উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
অধিদপ্তর আরও জানায়, জেলায় খাতা-কলমে এখন যে ৩০টি বৈধ ভাটা আছে, তাদের ব্যাপারেও নতুন করে খোঁজখবর নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক এমদাদুল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘ভাটা-সংক্রান্ত সব অসঙ্গতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মাঠে নামা হচ্ছে। সব ধরনের দেন-দরবার উপেক্ষা করে জনস্বার্থে এবং এলাকার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে অবৈধ সব ভাটা উচ্ছেদে কাজ শুরু হয়েছে।
‘অনেক ভাটার আংশিক ভেঙে দেওয়াও হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে।’
তার ভাষ্য, ‘যশোরে (পরিবেশ নিয়ে) কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। আগে কী হয়েছে, সেটি বিবেচ্য নয়। এখন সব ভাটাই বিধি অনুযায়ী চালাতে হবে। পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় ঘটলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বেসরকারি স্বদেশ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই প্রসূতির নাম শাবনুর আক্তার (২২), যিনি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের কদমচাল গ্রামের নুরুল ইসলামের স্ত্রী।
ভৈরব শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালটিতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।
খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মেহেদী ওই হাসপাতালে পরিদর্শন ও রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ওই সময় রোগীর অবস্থা গুরুতর দেখে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে থানা পুলিশ হাসপাতালে যায়।
বর্তমানে প্রসূতি ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার বড় ভাই সোহেল মাহমুদ বৃহস্পতিবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছোট বোন শাবনুর আক্তার প্রসূতি হিসেবে প্রসব বেদনা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় স্বদেশ হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ সময় তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সন্ধ্যায় তাকে সিজার করলে একটি মেয়ে শিশুর জন্ম নেয়। তারপর হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমানের নিকট থেকে জানতে পারি, আমার বোনের জরায়ু কেটে ফেলা হয়।
‘আমার বোনের সিজার অপারেশন করেছে ডাক্তার মিশুতি রানী ঘোষ। এরপর ঘটনাটি আমি পুলিশকে অবহিত করি। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে আমার বোনকে রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছি। সেখানে এখন চিকিৎসা চলছে।’
এ বিষয়ে স্বদেশ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রসূতির সিজার করার পর জরায়ু সেলাই করার সময় বারবার ফুলে গেলে সেলাই করা যাচ্ছিল না। এতে তার রক্তক্ষরণ চলছিল। কিন্তু বন্ধ করা যাচ্ছিল না।’
অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক মিশুতি রানী ঘোষ বলেন, ‘অপারেশন শেষে জরায়ুর মুখ সেলাই করার সময় বারবার ফুলে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে রোগীর অভিভাবকের সাথে কথা বলে তাকে বাঁচাতেই জরায়ু কেটে ফেলতে হয়। এটা ভুল চিকিৎসা নয়।’
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি আমার হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার মেহেদিকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। ঘটনাস্থলে এই ডাক্তার রোগী দেখে তার অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করার পরামর্শ দেন।
‘ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হলে তিনি আজ শুক্রবার তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিন মিয়া বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল হাসপাতালে যাই (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ৯টায়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার এসে রোগীকে ঢাকায় পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ করেন।
‘রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
আরও পড়ুন:বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ও রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক বিশিষ্ট রাজনীতিক আশরাফ হোসেন বড়দা (৮৫) আর নেই।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় তার।
তিনি এক কন্যাসন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী, আত্মীয়স্বজন ও শুভান্যুধায়ী রেখে যান।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রংপুর মহানগরীর গুপ্তপাড়া জামে মসজিদে শুক্রবার বাদ জুমা জানাজা শেষে নূরপুর কবরস্থানে বড়দাকে দাফন করা হবে।
আশরাফ হোসেন বড়দা ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন। জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটি লেখা পড়ে রাষ্ট্রভাষার প্রতি উদ্বুদ্ধ হন তিনি।
পরে প্রগতিশীল শিক্ষক সন্তোষ গুহের সান্নিধ্য ও কবি শাহ আমানত আলীর অনুপ্রেরণায় আন্দোলনে অংশ নেন তিনি।
ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতির স্বপ্ন না দেখা এ ভাষাসৈনিকের চাওয়া ছিল ‘ভাষা আগ্রাসন’ যেন বন্ধ হয়।
ভাষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করার কারণে আশরাফ হোসেন ১৯৫৪ সালে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ১৯৫৫ সাল থেকে রংপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
নগরীর গুপ্তপাড়ার নিউ ক্রস রোডের ডুয়ার্স ভবনই ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসেনের ঠিকানা।
ঢাকা পোস্টের দ্বিতীয় বর্ষে পদাপর্ণ অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ আফজাল ও ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসনে বড়দাকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
এদিকে ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসেন বড়দার মৃত্যুতে রংপুর বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন, প্রেস ক্লাব রংপুর, সিটি প্রেস ক্লাব, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, মাহিগঞ্জ প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুর, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-টিসিএ, রংপুর ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলার চোখসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন শোক জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:সরকার যখন আটঘাঁট বেঁধে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে নেমেছে, ঠিক সে সময়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থ আত্মসাতের মামলায় ১২ বছর সাজাপ্রাপ্ত রাশেদুল হক চিশতী জামিন পেয়েছেন।
সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ব্যাংকখেকো হিসেবে পরিচিত মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীর ছেলে হলেন রাশেদ চিশতী।
সাবেক ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে ১৬০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর বাবুল চিশতী, তার স্ত্রী ও ছেলেসহ চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। পাশাপাশি তাদের ৩১৯ কোটি ৯০ লাখ ৯৯ হাজার ২৪০ টাকা জরিমানা করেন আদালত।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় বাবুল চিশতী ও তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতীকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর বাবুল চিশতীর স্ত্রী রোজী চিশতীকে দেওয়া হয় ৫ বছরের কারাদণ্ড। পাশাপাশি তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান খানকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।
এ ছাড়া মাহবুবুল হক, তার স্ত্রী রোজী চিশতী ও ছেলে রাশেদুল হকের নামে থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
পরবর্তী সময়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সাজার অর্ধেকের বেশি সময় তিনি জেল খেটেছেন উল্লেখ করে রাশেদ চিশতী তার আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারপতি মোহাম্মদ আলী ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এমন এক মুহূর্তে অর্থ আত্মসাতের মামলায় দণ্ডিত রাশেদ চিশতী জামিন পেলেন, যখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে জোরেশোরে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর তথা ম. খা. আলমগীরের ঘনিষ্ঠ ছিল ব্যাংকখেকো চিশতী পরিবার। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের অনুকম্পা পেতে তারা নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যে মামলায় বাবুল চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যদের সাজা হয় সেই মামলার অভিযোগে বলা হয়, ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ব্যাংকের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাহবুবুল হক চিশতী গুলশান শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ নগদে ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা ও উত্তোলন করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন শাখার মোট ২৫টি হিসাবে নগদ ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে মোট ১৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪২ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেন।
হিসাবগুলোতে গ্রাহকদের হিসাব থেকে পাঠানো অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করে এবং নিজেদের নামে কেনা ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
এ ছাড়া রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির আরও আটটি মামলা বিচারাধীন।
এর আগে ফারমার্স ব্যাংকের বিপুল টাকা আত্মসাতের মামলায় বাবুল চিশতী ও তার পুরো পরিবার ফৌজদারি অপরাধে জড়িত বলে মন্তব্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।
২০২১ সালের ২৭ মে বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদ চিশতীর জামিন শুনানির সময় এমন মন্তব্য করেন আপিল বিভাগের বিচারক।
তখন আদালত বলেন, মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীই মূল অপরাধী।
মামলার নথি থেকে দেখা যায়, অপরাধ কার্যক্রমে তিনি তার পুরো পরিবারের সদস্যদের ব্যবহার করেছেন।
সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ওরফে বাবুল চিশতীর ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে নতুন প্রজন্মের ওই ব্যাংকটি ধ্বংস হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি নামে-বেনামে ঋণ, ব্যবস্থাপনা কমিটিকে তোয়াক্কা না করে ঋণ অনুমোদন, নামমাত্র প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সেসব হিসাবে কোটি কোটি টাকা হস্তান্তর, ঋণ অনুমোদন হওয়ার আগেই টাকা সরবরাহ, ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের কমিশন ও শেয়ারবাণিজ্য করেছেন।
শুধু তা-ই নয়, ব্যাংকটিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলের রিপোর্ট বলছে, ২০১৭ সালে ৮৫ জন কর্মকর্তা নিয়োগে প্রায় প্রতিটির ক্ষেত্রে তখনকার চেয়ারম্যানের সুপারিশ ছিল। অনেক প্রার্থীর বায়োডাটায় ‘চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর চিশতী’ বড় করে লেখা ছিল বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষকদের নজরে আসে।
এইচআর কর্তৃক লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে তা শুধুই নামমাত্র। কয়েকটি পরীক্ষায় কোনো নম্বর দেয়নি এইচআর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক দল বলছে, এইচআর পলিসি ছিল শুধু খাতা-কলমে, যার কোনো প্রয়োগ ছিল না।
প্রধান অফিসের পাশাপাশি শাখা অফিসগুলোতেও নিজেদের লোক বসিয়ে সুপারিশের ঋণ অনুমোদন করাত এ চক্র।
গুলশান শাখায় কয়েকটি ঋণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো ‘স্যাংশন লেটার’ ছাড়াই শুধু চেয়ারম্যানের সুপারিশে বড় বড় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। ২০১৭ সালে গুলশান শাখাসহ বেশ কয়েকটি শাখা থেকে আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্টে ৪০ কোটি, ১২ কোটি ৪৫ লাখ, ৯ কোটি ১৫ লাখ, ১০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রদান করা হলেও কোনোটির ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাপনা কমিটি ‘লোন স্যাংশন’ করেনি।
একই বছরের অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে ৪০ কোটি টাকার ঋণ বর্ধিতকরণের জন্য চেয়ারম্যান ও এমডি ফরমাল সুপারিশ করলেও তার আগেই ঋণটি প্রদান করা হয়, যেখানে কোনো প্রকার ব্যাংকিং নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টে আরও উঠে আসে, বড় ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে বাবুল চিশতীর ভাই ও তার ছেলের কয়েকটি কোম্পানি ছিল, যেসব কোম্পানির নামে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়া হয় ফারমার্স ব্যাংক থেকে। শুধু তা-ই নয়, ভুয়া ও সাইনবোর্ড-সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে মোটা কমিশনের বিনিময়ে বড় অঙ্কের লোন দিতেও কার্পণ্য করত না এ চক্র।
ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার কথা বলেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দুজনের বিরুদ্ধে। আমানতকারীদের অর্থ লুট করার উদাহরণও তৈরি করেছিলেন তারা।
ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে বাবুল চিশতী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ব্যাংক খাতে যেন আর কখনোই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি তুলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য