কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে চিলিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল। ম্যাচের একমাত্র গোলটি আসে লুকাস পাকেতার পা থেকে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গাব্রিয়েল জেসুস লাল কার্ড পাওয়ায় প্রায় পুরোটা অর্ধ ১০ জন নিয়ে খেলে সেলেকাওরা।
রিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শেষ গ্রুপ ম্যাচের একাদশ থেকে আটটি পরিবর্তন করেন ব্রাজিল কোচ লিওনার্দো তিতে। একাদশে ফেরেন অধিনায়ক নেইমার, গোলকিপার এডারসনসহ অন্য নিয়মিত সদস্যরা।
শক্তিশালী একাদশ নামিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না ব্রাজিল। চিলির বিপক্ষে শুরুতে ছন্দহীন থাকে নয়বারের কোপা আমেরিকা বিজয়ীরা।
ম্যাচে প্রথম গোলে শট নেন সেবাস্তিয়ান ভেগাস। তবে ১০ মিনিটের সময় চিলির এই ডিফেন্ডারের নেয়া শট ঠেকাতে একেবারেই বেগ পেতে হয়নি এডারসনকে।
পাঁচ মিনিট পরে শট নেয় ব্রাজিল। মরিসিও ইসলার ভুল পাসে বল পেয়ে যান ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন। দূর থেকে নেয়া শট জমা পড়ে চিলির গোলকিপার ক্লদিও ব্রাভোর গ্লাভসে।
ধীরে ধীরে আক্রমণের মাত্রা বাড়াতে থাকে ব্রাজিল। ২২ মিনিটে নেইমারের ক্রসে অল্পের জন্য মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন পোস্টে থাকা রবার্তো ফিরমিনো।
এর ১০ মিনিট পরই দানিলোর নেয়া দূরপাল্লার শট বারের কোনা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। গোলশূন্য অবস্থাতেই শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।
বিরতির পরপরই ডেডলক ভাঙে ব্রাজিল। ফিরমিনোর বদলি হিসেবে নামা পাকেতা নেইমারের ছাড়া বল পেয়ে যান বক্সে।
কাছ থেকে লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি পাকেতা। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল।
দুই মিনিট পরই দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১০ জনের দলের পরিণত হয় ব্রাজিল। ইউহেনিও মেনাকে ট্যাকল করার সময় গাব্রিয়েল জেসুসের পা উঠে যায় তার মুখে।
রেফারি সঙ্গে সঙ্গে লাল কার্ড দেখান। ম্যাচের প্রায় ৪৫ মিনিট ১০ জন নিয়েই খেলতে হয় ব্রাজিলকে।
এই সুযোগে চিলি চেপে ধরে ব্রাজিলকে। ৬২ মিনিটে এদুয়ার্দো ভার্গাস গোল করলেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে গেলে স্বস্তি ফেরে ব্রাজিল শিবিরে।
মিনিট সাতেক পর ব্রেরেটনের হেডার লাগে বারে। এ যাত্রাতেও বেঁচে যায় ব্রাজিল।
ম্যাচের শেষ ২০ মিনিট রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে চিলিকে আটকানোর চেষ্টা করে তিতের শিষ্যরা।
এডারসনের দৃঢ়তায় সেই লক্ষ্যে সফল ছিল স্বাগতিক দল। ওই এক গোলেই নির্ধারণ হয় ম্যাচের ভাগ্য। ব্রাজিল পৌঁছায় শেষ চারে। আর চিলিকে নিতে হয় বিদায়।
প্রথম সেমিফাইনালে মঙ্গলবার ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ পেরু।
রাতের আরেক ম্যাচে প্যারাগুয়েকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে পেরু। নির্ধারিত সময়ে খেলা ৩-৩ সমতায় ছিল।
আরও পড়ুন:#CopaAmérica 🏆
— Copa América (@CopaAmerica) July 3, 2021
FINAL! O @cbf_futebol venceu por 1-0 o @LaRoja com gol de Lucas Paquetá pelas Quartas de Final da CONMEBOL #CopaAmérica
¡FINAL! Brasil venció 1-0 a Chile con gol de Lucas Paquetá en los Cuartos de Final
🇧🇷 Brasil 🆚 Chile 🇨🇱#VibraElContinente #VibraOContinente pic.twitter.com/PkBgcMuEDs
দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও রাজবাড়ী জেলার সরকারী কোনো হাসপাতালেই নেই করোনা পরীক্ষার কিট। এমনকি হাসপাতালে কর্মরতরাও পায়নি সুরক্ষা সামগ্রী। এখনও প্রস্তুত করা হয়নি আইসিইউ ইউনিট। এতে হতাশ রোগী ও স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে কিট চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর সিভিল সার্জন দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালটিতে আইসিইউ ইউনিটের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের শেষের দিকে এখনও শুরু হয়নি কার্যক্রম। অথচ হাসপাতালের প্রবেশপথেই টাঙিয়ে রাখা হয়েছে আইসিইউ সেবার সাইনবোর্ড। বিয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, ‘প্রতিদিনই জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যাথাসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য আসছেন রোগীরা। কিন্তু করোনা পরীক্ষার কীট ও জনবল সংকটের কারণে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। কোনো প্রকার উপায় না পেয়ে রোগীদের ছুটতে হচ্ছে ফরিদপুর-কুষ্টিয়া ও ঢাকায়।
হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হতাশা আর দুশ্চিন্তা নিয়ে ফেরা রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, সংকটের কারণে সুচিকিৎসা হচ্ছে না। করোনা পরীক্ষা না করায় আরো বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছে এ জেলার মানুষ।
এদিকে যারা রোগীর পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দিবেন সেই সব সেবিকা ও কর্মীদেরও দেওয়া হয়নি কোন ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী। ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন তারা।
এ সময় স্যাম্পল সংগ্রহকারী সেবিকা হিরা আক্তার বলেন, ‘এর আগে করোনার সময় হাসপাতাল থেকে মাস্ক, পিপি, হ্যান্ডসেনিটাইজারসহ নানা ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছিল। এখন প্রতিদিন জ্বর, সর্দি, শরীর ব্যাথাসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। কীট নেই করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না কিন্তু অন্যান্য পরীক্ষা হচ্ছে। যে কারণে হাসপাতালের সেবিকাসহ সবাই ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছি। নিজেরা নিজেদের মত করে সুরক্ষা মাস্ক ব্যবহার করতে হচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. ফরিদ শেখ বলেন, এত বড় হাসপাতাল শত শত রোগী। এত সব রোগীর পরীক্ষার জন্য মাত্র দুজন টেকনোলজিস্ট দিয়ে চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে রিপোর্ট প্রদান করতেও সময় লাগছে বেশি।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. এস এম এ হান্নান বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আগের সুরক্ষা সামগ্রীগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে নষ্ট হয়েছে। নতুন করে ৩০ হাজার কীট চেয়ে আবেদন করা হলেও পাওয়া যায়নি। ওই কীটগুলো পাওয়া গেলে করোনা টেস্ট কার্যক্রম শুরু হবে। আর আইসিইউ ইউনিটের কাজ শেষে দিকে জনবল না থাকায় সেটিও চালু করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাসুদ বলেন, রাজবাড়ী জেলার শুধু সদর হাসপাতাল নয়! কোনো হাসপাতালেই করোনা পরীক্ষার কীট নেই। জেলা প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। কীট না পাওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা প্রতিহত করতে হবে।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের কারও সঙ্গে আঁতাতের গন্ধ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের যারা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে, তা নাহলে জুলাই শহীদদের প্রতি অবমাননা করা হবে।’
ফরিদপুর জেলা পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক আজ মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ফরিদপুরের সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের কোনো ছাড় না দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
ডিআইজি বলেন, কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। এমনকি দুর্নীতি করলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কোনো অপরাধ পরিলক্ষিত হয় তাহলে পুলিশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো রকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবেন। কোনো সেবাগ্রহীতা যেন থানায় এসে ভোগান্তির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মানুষের জানমাল রক্ষার্থে পুলিশের যা করণীয় তা করতে হবে। আমি শুনতে চাই না, কোনো সেবাগ্রহীতা থানায় এসে হয়রানির শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলার যাতে কোনো অবনতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
সভাশেষে জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্বজনদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। পরে ফিতা কেটে জেলা পুলিশের মাল্টিপারপাস হলের উদ্বোধন করেন তিনি।
এ সময় পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আজম, আজমির হোসেন এবং সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে সপ্তাহব্যাপী প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো. আবদুল জলিল।
এ কর্মসূচির আওতায় ফিল্ম আর্কাইভের প্রজেকশন হলে ১৫ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
সপ্তাহব্যাপী এই প্রদর্শনীর প্রথম দিনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় নির্মিত ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) প্রযোজিত ‘সময়ের বীর শহিদ তানভীর’ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ নির্মিত ‘দ্য মনসুন রেভুলেশন’ প্রদর্শিত হয়।
প্রদর্শনীতে গ্লোবাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০০ জন উপস্থিত ছিলেন।
প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো. আবদুল জলিল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্রিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
নিজস্ব প্রতিবেদক
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মাথা থেঁতলে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনকে ফের ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান এ আদেশ দেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তাকে প্রথম দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
রিমান্ড শেষে এদিন আদালতে হাজির করে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। পরে আদালত আদেশ দেন।
এর আগে গত বুধবার বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি ও পুরোনো ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে।
এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার মামলা করেন। এরপর পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এরপর শুক্রবার (১১ জুলাই) কেরানীগঞ্জ ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার (১১ জুলাই) গভীররাতে টিটন গাজী (৩২) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে কাজী নান্নুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নান্নুকে ধরার মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির সংখ্যা আটজন।
পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব। সীমান্তবর্তী দুর্গম উপজেলা জুরাছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়িতে দিন দিন বেড়েই চলেছে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই চার উপজেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৭ জন। অন্যদিকে পুরো জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৬৭৬ জন ছাড়িয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুন মাসের আংশিক প্রতিবেদনে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়ে ৯৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে বাঘাইছড়িতে ১৬৪ জন, জুরাছড়িতে ২৪৭ জন, বিলাইছড়িতে ১৮৫ জন ও বরকল উপজেলায় ১৮০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ছয় উপজেলায় জুন মাস পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৮ জন।
চলতি বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বাড়তে থাকে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বছরই এ রোগের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা জানান, আগে বর্ষাকালেই ম্যালেরিয়া বেশি হতো। এখন বছরের অন্য সময়েও বৃষ্টির কারণে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় মশার বিস্তার হচ্ছে। ফলে সারা বছরই রোগী পাওয়া যাচ্ছে।এখন সেটি হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে জেলার মোট ৪ হাজার ৭১৪ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০২৪ সালে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৭৬৮ জন। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৬ জন।
এদিকে সীমান্তবর্তী দুর্গম উপজেলাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় অনেকেই সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারছেন না। এই অবহেলা প্রাণঘাতী পরিণতি ডেকে আনছে।
রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের নোয়াদম গ্রামের স্কুলছাত্রী সুদীপ্তা চাকমা (১০) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার (১২ জুলাই) রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে মারা যায়। হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানান, স্কুল ছাত্রীটি এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছিল। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে তার জ্বর বেশি ওঠে। শনিবার (১২ জুলাই) সকালে হাসপাতালে আনার পর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শওকত আকবর খান জানান, হাসপাতালে বতমানে ২ জন ম্যালরিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়ার জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর জ্বর, মাথাব্যথা, কাঁপুনি, শারীরিক দুর্বলতা, রক্তাল্পতা, জন্ডিস, খিচুনি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে কিডনি বিকল, কোমা এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক যৌথভাবে গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে। পাশাপাশি ম্যালেরিয়া নির্ণয় ও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ম্যালেরিয়া বাড়ে। এবছর আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেশি। তবে সরকার ম্যালেরিয়া নির্মূলে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। প্রত্যন্ত এলাকায় টিম পাঠানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা।’ শনিবার (১২ জুলাই) সকালে সুদীপ্তা চাকমা নামে এক স্কুল ছাত্রী ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রোগীটি এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিল। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে জ্বর বেশি আসার পর শনিবার (১২ জুলাই) সকালে যখন তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায় তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তখন তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার মতো অবস্থায় ছিল না।
ডা. নূয়েন খীসা আরো বলেন, ‘ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুর্গম ও অসচেতনতার কারণে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মেয়েটি মারা গেছে। আমরা চিকিৎসা করার সুযোগ পাইনি। ‘জ্বর হলে কেউ অবহেলা করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মশারি ব্যবহার করা এবং ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দেখলেই পরীক্ষা করানোই এর প্রতিরোধের উপায়।’ ২০১৬ সাল থেকে রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়া শূন্য কোটায় নিয়ে আসা হয়েছে। দীর্ঘ ৯ বছর পর নতুন করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।’
রুমা অধিকারীর শৈল্পিক শখ এখন পরিণত হয়েছে এক সম্ভাবনাময় কৃষি উদ্যোগে। স্বামী পুলিশের চাকরির সুবাদে তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন রংপুরে। সেখানে বসবাসকালে ইউটিউবে বড় বড় বিদেশি আমের ভিডিও দেখে তার মনে জাগে আম চাষের আগ্রহ। শখ থেকেই শুরু। ২০২৩ সালের শেষের দিকে রংপুর থেকে ফিরে স্বামীর বাড়ি, নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়ায় এক একর জমিতে শুরু করেন নানা জাতের আমের চাষ।
রোপণকৃত ৩০০টি আমগাছের মধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় ১০টি ভিন্ন ভিন্ন জাতের আম। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের কিং অফ চাকাপাত, চীনের চ্যাং মাই, ডকমাই, ব্যানানা আম এবং আমেরিকার রেড পালমার, হানি ডিউসহ আরও নানা জাতের উন্নত মানের আম।
এই আমগাছগুলোতে মার্চ মাসে মুকুল আসে এবং জুলাই-আগস্ট মাসে পরিপক্ব হয়। লেট ভ্যারাইটির হওয়ায় এসব আম তুলনামূলক দেরিতে পাকে, ফলে দেশীয় আমের মৌসুম শেষে বাজারে এই আমের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। বাজারে দেশীয় আমের সরবরাহ যখন কমে যায়, তখন রুমার বাগানের আমই হয় বিকল্প উৎস। এতে যেমন চাষিরা লাভবান হন, তেমনি বাজারেও মেলে উন্নত জাতের আম।
আজ তার সেই আমবাগান যেন রঙিন এক আমের স্বর্গরাজ্য। যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই নানা আকৃতি, রং ও স্বাদের আম। রুমা অধিকারী নিজেই পরম যত্নে গাছগুলো পরিচর্যা করেন। স্বামী দুলাল অধিকারী ছুটিতে বাড়ি এলে তিনিও সহায়তা করেন এই কর্মযজ্ঞে। শুরুটা ছিল স্বল্প পুঁজি নিয়ে, কিন্তু রুমা অধিকারীর স্বপ্ন অনেক বড়।
জানতে চাইলে রুমা অধিকারী বলেন, ‘প্রথমে তো এটা ছিল শুধুই একটা শখ, কিন্তু এখন এটা আমার স্বপ্ন। আমি চাই, দেশের মানুষের কাছে ভিন্ন জাতের উন্নতমানের আম পৌঁছাক, যেন আম আমরাও বিশ্বমানের ফল চাষে পিছিয়ে না থাকি। নিজের হাতে গাছ লাগানো, পরিচর্যা করা, আর একেক সময় ফল আসতে দেখা- এই আনন্দ ভাষায় বোঝানো যায় না। আমি বিশ্বাস করি, নারী হয়েও সফল কৃষি উদ্যোগ গড়ে তোলা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমার স্বপ্ন হলো- এই আমবাগানকে আরও বড় করে তোলা, যাতে এলাকার আরও মানুষ কাজের সুযোগ পায়। সরকার যদি সুদমুক্ত ঋণ দেয়, তাহলে আমি এই উদ্যোগকে বাণিজ্যিকভাবে আরও শক্ত অবস্থানে নিতে পারব।’
রুমা অধিকারীর স্বামী দুলাল অধিকারী বলেন, ‘আমি যখনই ছুটি পাই তখনই বাসায় আসি। এখানে এসে আমার স্ত্রীকে আম বাগানের পরিচর্যায় সহযোগিতা করি।’
স্থানীয় উত্তম রায় নামে এক যুবক বলেন, ‘রুমা বৌদি যে পরিশ্রম করে তার আম বাগান সাজিয়েছে, তা আমরা যুবকরাই পারব কি না, সন্দেহ। তার আম চাষ দেখে আমাদেরও আম চাষের অনুপ্রেরণা জুগছে।’
শওকত ইসলাম নামে আরেক যুবক বলেন, ‘মানুষের মুখে শুনেছিলাম এখানে বিভিন্ন ধরনের আম গাছ আছে। তাই আমগুলো দেখতে এবং খেতে এসেছিলাম। আমগুলো খেতে অনেক সুস্বাদু।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, ‘আম চাষে রুমা অধিকারীকে শুরু থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার সফলতা শুধু একটি ব্যক্তিগত গল্প নয়, বরং এটি একটি উদাহরণ। যা দেখিয়ে দেয় পরিকল্পনা, শ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে কৃষিতেও গড়ে তোলা সম্ভব টেকসই ভবিষ্যৎ। যদি এমনভাবে তরুণ-তরুণীরা কৃষি খাতে এগিয়ে আসে, তবে তা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় করে তুলবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা স্বৈরাচার হাসিনাকে হটিয়েছি, আর কোনো নব্য স্বৈরাচারের স্থান এ বাংলার মাটিতে হবে না।
তিনি বলেন, ‘আগামীতে আমরা ইনসাফের বাংলাদেশ গড়বো, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবেনা। যেখানে মানুষের মাঝে কোনো ভেদাভেদ থাকবেনা, চাঁদাবাজ, ধর্ষক, লুটেরাদের স্থান থাকবেনা, আমরা এমন বাংলাদেশ চাই।’
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৪টায় ভোলা শহরের প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত এনসিপির জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে চলমান সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, গ্যাসের শহর ভোলা। এ জেলার গ্যাস দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় অথচ ভোলার জনগণকে গ্যাস থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। ভোলাবাসীর সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে।
জুলাই বিপ্লবে দ্বীপ জেলা ভোলার ৫৭ শহীদকে স্মরণ করে নাহিদ বলেন.‘কোনো একক জেলা হিসেবে জুলাই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন ভোলাতে। তাই আজ আমরা এসেছি ভোলাবাসীকে আপন করে নিতে। ভোলাবাসীর সাথে আর বৈষম্য করা হবে না। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের পাশে থাকবে।’
এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা স্বৈরাচার হাসিনাকে তাড়িয়েছি আর কোনো স্বৈরাচারের স্থান এ দেশের মাটিতে হবে না। প্রতিবাদের জায়গা হলো ভোলা। ভোলার বীর সেনারা জুলাই আগস্টের আন্দোলনে যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, সেই ভোলার মানুষ কোন চাঁদাবাজ, ধর্ষককে স্থান দেবে না।
তিনি বলেন, ‘ভোলায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত খারাপ। এখানকার হাসপাতালটি অকেজো। ভোলার যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা পিছিয়ে যা অন্য কোথাও নেই। আপনাদের জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এ ভোলা হবে একটি সুন্দর সমৃদ্ধশালী জেলা।’
ভোলা জেলা এনসিপি আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শরীফের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাকসুদুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব মশিউর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আক্তার মিতু, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন। জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত হাসনাইন, সংগঠনের ভোলা জেলা সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও সমন্বয়কারী ইয়াসির আরাফাত।
ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলার ৭ উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ গ্রহণ করে।
এর আগে এনসিপি কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ ভোলা শহরের কালীনাথ রায়ের বাজার এলাকা থেকে শুরু করে সমাবেশস্থল পর্যন্ত এক পদযাত্রায় অংশ নেন।
মন্তব্য