আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে স্তব্ধ পুরো বিশ্ব। কোটি কোটি ফুটবল অনুরাগীকে শোকে ভাসিয়ে চলে গেছে ফুটবল ঈশ্বর।
ভক্তদের এই চোখের জল কি প্রাণহীন জগত থেকে অনুভব করছেন মুকুটহীন মহানায়ক!
জীবনে খ্যাতির চূড়া যেমন স্পর্শ করেছিলেন, তেমনি ডুবেছেন বিতর্কের গহীন সাগরে। এরপরেও জীবনের রিয়েলিটি শোতে তিনি এক ধ্রুব নায়ক। নন্দিত-নিন্দিত এই মহাতারকা জীবনের শেষ সাক্ষাৎকারে অজস্র মানুষের বিপুল ভালোবাসায় মুগ্ধতার কথা জানিয়ে গেছেন।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কয়েকদিন আগে আর্জেন্টাইন পত্রিকা ক্লারিনকে এই সাক্ষাৎকার দেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। সেটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
প্রশ্ন: জীবনে আপনার সঙ্গে সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে খারাপ কী ঘটেছে? কোনো আক্ষেপ আছে কি?
ম্যারাডোনা: আমি সুখী ছিলাম এবং আছি। আমার যা কিছু আছে, সব আমাকে এনে দিয়েছে ফুটবল। কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি আমি পেয়েছি। নেশা আমার জীবনে না থাকলে হয়ত আরও বেশি খেলতে পারতাম।
কিন্তু আজ সেটা অতীত। এখন আমি ভালো আছি এবং আমার আক্ষেপের জায়গা হলো- মা-বাবাকে হারানো। টোটার (ম্যারাডোনার মা) সঙ্গে শুধু একটা দিন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমি সবসময় করি। আমি জানি, স্বর্গ থেকে তিনি আমায় নিয়ে খুবই গর্বিত এবং সেখানে তিনি সুখে আছেন।
প্রশ্ন: জন্মদিন উপলক্ষে সব আর্জেন্টাইনের জন্য আপনি কী চান?
ম্যারাডোনা: আমি চাই এই মহামারি (করোনা) খুব দ্রুত চলে যাক এবং আমার আর্জেন্টিনা সামনে এগিয়ে যাক। সব আর্জেন্টাইনের জন্য আমার চাওয়া, তারা সবাই যেন ভালো থাকে। আমাদের দেশটা খুব সুন্দর এবং আমি বিশ্বাস করি প্রেসিডেন্ট আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে পারবেন।
আমার খুব খারাপ লাগে যখন দেখি, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খেতে পাচ্ছে না। ক্ষুধার্ত থাকার কষ্ট কী সেটা আমি জানি। আমি জানি যখন দিনের পর দিন যখন তুমি না খেয়ে থাক তখন পেটের ভেতর কেমন অনুভূতি হয়। এটা আমার দেশে হতে পারে না। আর্জেন্টাইনদের জন্য আমার চাওয়া- তারা যেন সুখে থাকে, কাজ করতে পারে ও প্রতিদিন খেতে পায়।
প্রশ্ন: করোনা মহামারি আপনাকে খুব কাছ থেকে আঘাত করেছে। স্ত্রীর ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে, আপনার বোন আক্রান্ত হয়েছে এবং আপনাকেও কড়া নিয়মের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আপনি কি করোনাভাইরাসকে ভয় পাচ্ছেন?
ম্যারাডোনা: আমাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারত সেটা এটাই। এমন কিছু আমি আগে কখনো দেখিনি। তবে লাতিন আমেরিকা অনেক বেশি সফল। আশা করছি, এটা খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। অনেক মানুষের খুব খারাপ সময় যাচ্ছে, কারো কাজ থাকছে না, কেউ ঠিকমতো খেতে পাচ্ছে না। আমি পুতিনের উপর ভরসা রাখি। আমি জানি তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভ্যাকসিন নিয়ে আসবেন, কারণ এমন অবস্থা বেশি দিন থাকা উচিত নয়।
প্রশ্ন: মানুষ যখন আপনার কাছে আসে, আপনাকে দেখে, ছোঁয়, যে অভিব্যক্তি চেহারায় ফুটে ওঠে- সেটা কি আপনি অনুভব করতে পারেন?
ম্যারাডোনা: আমি চিরকাল এই মানুষগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। প্রতিদিন তারা আমাকে অভিভূত করে। আর্জেন্টাইন ফুটবলের কারণে আমার যেসব অভিজ্ঞতা হয়েছে তা কোনোদিন ভোলার মতো নয়।
আমার কল্পনাকেও তা ছাড়িয়ে যায়। কারণ, অনেকটা সময় আমি এসবের বাইরে ছিলাম। তখন মনে হতো, মানুষ কি আমাকে আগের মতোই ভালোবাসে! আমাকে নিয়ে তাদের অনুভূতি কি আজীবন একই থাকবে!
প্রেজেন্টেশনের দিন আমি যখন জিমনেশিয়ার মাঠে প্রবেশ করলাম, সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম- মানুষের সঙ্গে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক কোনোদিন শেষ হবে না।
প্রশ্ন: আর্জেন্টাইন ক্রীড়াবিদদের মধ্যে কী এমন আছে যা নীল-সাদা রঙটাকে হারানো অসম্ভব করে তুলেছে?
ম্যারাডোনা: আমরা অল্প বয়সেই বিদেশে পাড়ি জমাই। দেশ থেকে অনেকটা সময় আমরা দূরে থাকি। একে অপরকে ভীষণভাবে মিস করি। এ কারণেই যখন কোনো জাতীয় দল আমাদের ডাকে- সাঁতরে হলেও আমরা চলে আসি। কারণ, এটা নিজ দেশে থাকার অনুভূতি দেয়, নিজ দেশের পতাকাকে সুরক্ষা করার অনুভূতি তৈরি করে এবং এই অনুভূতিটাই আমাদের স্বাতন্ত্র্য তৈরি করে।
প্রশ্ন: আর্জেন্টাইন খেলার কোন দিকটি আপনাকে উৎসাহিত করে?
ম্যারাডোনা: সবকিছু। আমি সবকিছু দেখি। আমি প্রত্যেক আর্জেন্টাইনকে অনুসরণ করি- তিনি যেখানেই যাক। আর্জেন্টাইন পতাকা যেখানেই উপস্থিত, সেখানেই আমি অনুপ্রেরণা দিতে চাই। যখনই কোনো আর্জেন্টাইনকে বিজয়ী হতে দেখি- উচ্ছ্বাসিত হই। সেদিনই আমি পিকুকে (দিয়েগো শোয়ার্টজমান, আর্জেন্টাইন টেনিস খেলোয়াড়) দেখছিলাম নাদালের (স্প্যানিশ টেনিস খেলোয়াড়) সঙ্গে খেলতে এবং তাদের চেয়ে মনে হয় আমি বেশি উত্তেজিত ছিলাম।
প্রশ্ন: মেসি-বার্তোমেউ-বার্সেলোনার বিষয়টা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী? আপনি সে জায়গায় থাকলে কি দরজা বন্ধ করে চলে আসতেন?
ম্যারাডোনা: আমি বুঝতে পারছিলাম এর শেষটা খুব খারাপ হতে যাচ্ছে এবং ভেবেছিলাম লিও বের হয়ে আসবে। বার্সেলোনা বড় একটা ক্লাব। সে ওখানে অনেক দিন ছিল। কিন্তু যে ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য, সেটা লিও পায়নি। সে তাদের সবকিছু দিয়েছে, অনেক উপরে উঠিয়ে নিয়েছে। কিন্তু যখন ও হাওয়া বদল করতে চাইল, তারা না করে দিল।
বিষয়টা হলো, দরজা বন্ধ করে ফেলাটা এত সহজ না। এর সঙ্গে একটা শর্ত জড়িত, বড় একটা ক্লাব জড়িত, মানুষের ভালোবাসা জড়িত। নাপোলির সময়ে আমি এমন করিনি।
প্রশ্ন: রিভার ও বোকার মধ্যে কে কোপা লিবার্তাদোরেস জিতবে?
ম্যারাডোনা: বোকা ভালো, আমি পছন্দ করি। মিগেল (রুসো) দলের শক্তি ফিরিয়ে এনেছে। এখন দলে আরও কিছু খেলোয়াড় যোগ দিয়েছে যারা দলটাকে উপরে তুলছে। রিভার গায়ার্দোর সঙ্গে অনেক সময় ধরে কাজ করেছে, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা একে অপরকে মন থেকে চেনে। তবে এবার বোকার উপর আমি বিশ্বাস রাখছি।
সাক্ষাৎকারটি বাংলায় ভাষান্তর করেছেন ক্রিস্টিনা জয়ীতা মুন্সী
আরও পড়ুন:ব্রাজিলের সাবেক আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলোয়াড় রবিনহোকে ধর্ষণের দায়ে গ্রেপ্তার করেছে ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ।
ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে খেলাকালীন ২০১৩ সালে একটি নাইট ক্লাবে আলবেনিয়ান নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ইতালিতে রবিনহোকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল বলে জানায় বিবিসি।
ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৭ সালে রবিনহোকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয় ইতালির আদালত। এরপর বৃহস্পতিবার নিজ শহর সান্তোসের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন ৪০ বছর বয়সী এ খেলোয়াড়।
ব্রাজিলের একটি আদালত বুধবার তাকে কারাগারের পাঠানোর আদেশ দেয়।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২০২২ সালে ইতালির সর্বোচ্চ আদালত রবিনহোর শাস্তি বহাল রেখে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী, বিদেশে অপরাধ সংঘটিত করে কোনো নাগরিক দেশে ফিরলে বিদেশের বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে অপরাধীকে হস্তান্তর করে না ব্রাজিল সরকার। রায়ের আগেই রবিনহো ইতালি ছাড়ায় ব্রাজিলেই শাস্তি কার্যকরের অনুরোধ জানায় দেশটির আদালত।
ব্রাজিলের বিচার ব্যবস্থার দ্বারা গৃহীত এ পদক্ষেপ স্থানীয় মিডিয়াতে অনেকের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, রবিনহো তার খ্যাতি এবং সম্পদের কারণে ন্যায়বিচার এড়িয়ে যাবেন।
তবে ম্যানচেস্টার সিটিতে দুই বছর কাটানো এ ফুটবলার বরাবরের মতো এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, নাইট ক্লাবের ঘটনাটি ওই নারীর ‘সম্মতিতে’ হয়েছিল।
আরও পড়ুন:মাত্র ২৫ বছর বয়সেই চলে গেলেন জাতীয় নারী দলের ফুটবলার রাজিয়া। বৃহস্পতিবার পুত্র সন্তান জন্ম দেয়ার পর সাতক্ষীরায় মারা গেছেন এই রাইট উইঙ্গার।
রাজিয়া সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার মৌতলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামের নূর আলী সরদারের মেয়ে।
জাতীয় ও বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত খেলেছেন রাজিয়া। ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে খেলেন তিনি। ভুটানে ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন রাজিয়া। এছাড়া ২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফে জাতীয় দলে সাবিনা খাতুনদের সঙ্গেও খেলেছেন তিনি।
নারী ফুটবল লিগে খেলেছেন নাসরিন স্পোর্টিং ও এএফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জার্সিতে।
তার স্বামী ইয়াম রহমান জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাজিয়ার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি গাজীপুরে চাকরি করি। ইফতারির সময় বাসায় গিয়ে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু ফোনটা ওর ছোট ভাই রিসিভ করে বলে ব্যস্ত আছি। কেউ আমাকে জানায়নি যে ওর পেইন (প্রসব ব্যথা) উঠেছে। আসলে ওর প্রচুর রক্তক্ষরণে হয়েছে। অথচ কেউ বিষয়টাতে গুরুত্ব দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওরা আমাকে গত রাত ১১টার দিকে জানায়, ছেলে ও মা সুস্থ আছে। কিন্তু পরে ওর প্রচুর রক্ত ঝরেছে। অচেতন হয়ে ছিল অনেক সময়। ভোর বেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছে। আমি সিজার করাতে বলেছিলাম, কিন্তু ওরা শোনেনি।’
ইয়াম নিজেও ফুটবলার ছিলেন। খেলেছেন বসুন্ধরা কিংস অনূর্ধ্ব-১৮, সাইফ স্পোর্টিং যুব দলে। তৃতীয় বিভাগেও খেলেছেন। ভালোবেসে ৩ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন রাজিয়াকে।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে লিগ পর্বে টানা জয়ের পর শিরোপাও জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
রোববার কাঠমান্ডুর অদূরে ললিতপুরে আনফা একাডেমিতে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ১-১ সমতার পর টাইব্রেকারে ভারতকে ৩-২ গোলে হারান প্রীতিরা।
খেলার পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে যায়ং ভারত। দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে ম্যাচের ৭১ মিনিটে ফেরে সমতা। এরপর টাইব্রেকারে গোলকিপার ইয়ারজান বেগমের দক্ষতায় কাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয় বাংলাদেশের।
এর আগে ৮ মার্চ লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে দারুণ জয় পায় বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপাল ও ভারতকে হারিয়ে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা দল সেদিন ভুটানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয়।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে লিগ পর্বে শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
নেপাল ও ভারতকে হারিয়ে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা বাংলাদেশ শুক্রবার নেপালের কাঠমান্ডুর চেসাল স্টেডিয়ামে ভুটানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয়।
টানা তিন ম্যাচ জিতে শীর্ষে থেকে সাইফুল বারী টিটুর দল খেলার ১৩ মিনিটেই এগিয়ে যায়। এরপর একে একে ৬টি গোল। সুরভী আকন্দ পেয়েছেন জোড়া গোল। বাকি ৪টি গোল করেছেন ফাতেমা, ক্রানুচিং, সাথী মানদা ও থুইনুই মারমার।
আগামী রোববার কাঠমান্ডুর অদূরে ললিতপুরে আনফা একাডেমিতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। লিগ পর্বে তাদের ৩-১ গোলে হারিয়েছিলেন প্রীতিরা।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়ে দারুণ সূচনা করেছে বাংলাদেশের নারীরা।
শুরু থেকেই দাপটের সঙ্গে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। সংঘবদ্ধ এক আক্রমণের প্রদর্শনীতে প্রথমার্ধের ২৪ মিনিটে বাংলাদেশ গোল পায়। সাথী মুন্ডার দারুণ এক মুভে থ্রু বল ঠেলে দেন প্রতিপক্ষের গোল বক্সের ভেতর। নেপালের গোলরক্ষক গোল বাঁচাতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড সুরভী আকন্দ প্রীতি দ্রুতগতিতে বক্সে প্রবেশ করে প্লেসিংয়ে গোল করেন।
৫ মিনিট পর গোলের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন প্রীতি নিজেই। বক্সের বাম দিকে দিয়ে আক্রমণে ছিলেন বাংলাদেশের আরেক খেলোয়ার আলফি। গোলরক্ষক তাকে থামাতে গিয়ে গিয়ে ফেলে দেন মাটিতে। ফলে পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। স্পট কিক থেকে বাংলাদেশকে ২-০ গোলের লিড এনে দেন প্রীতি। এভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
বিরতির পর স্বাগতিক নেপাল ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালালেও বাংলাদেশের রক্ষণভাগ ভেদ করেতে পারেনি। বারবার তাদের আক্রমণ নস্যাৎ করে দিয়েছে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। খেলার ৬২ মিনিটের মাথায় আরিফার করা ক্রসে সুরভী প্রীতির প্লেসিং করা বল ফিরে আসে জালের পাশে লেগে। এরপর নির্ধারিত নব্বই মিনিটের খেলায় গোল পায়নি আর কোনো দল।
এবারের সাফ-১৬ টুর্নামেন্টে চারটি দল অংশ নিয়েছে। এক ম্যাচ শেষে সমান তিন পয়েন্ট করে অর্জন করেছে ভারত ও বাংলাদেশ। ৫ মার্চ বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে।
নব্বই দশকের ফুটবলে ফিরে যেতে চান উল্লেখ করে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করে যাবেন।
তিনি বলেন, ‘আমার যতটুকু সাধ্য, আমি মেম্বার অফ পার্লামেন্ট হিসেবে শুধু আমার এলাকার ফুটবল না, বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করব। যেভাবে কাজ করলে নব্বই দশকের ফুটবলে ফিরে যাওয়া যায়, যেখানে ফুটবল আমাদের ঐহিত্য ছিল। আমরা সেটাই করব।’
জামালপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবদুল হাকিম স্টেডিয়ামে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সুমন বলেন, ‘আমি ফুটবলের ব্যাপারে প্রতিবাদ করছি বহুদিন আগে থেকেই, প্রতিবাদ করতে করতেই আমি এখন মেম্বার অফ পার্লামেন্ট। আমি এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে কথা বলতে পারি। আমার একটা বিশ্বাস ফুটবলের এখন গণজাগরণ শুরু হয়েছে।’
ভারতের ফুটবলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেখেন, ইন্ডিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেছে, এখন তারা মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আর আমরা এখনও সাউথ এশিয়াতেই টিকতে পারি না।
‘যেহেতু আমাদের প্রথম প্রেম ফুটবল, এ ফুটবলের প্রেমটা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাই। আমরা সবাই আবার মাঠে আসতে চাই।’
আরও পড়ুন:গায়ে রঙ-বেরঙের টি-শার্ট, মুখে ভুভুজেলা বাঁশির সুর। শত শত ফুটবল সমর্থক গলা ফাটাচ্ছেন এক নাগাড়ে, সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে হাততালি আর ড্রাম বাজানো তো আছেই। আর যাদের ঘিরে এত এত আবেগের বিস্ফোরণ টার্ফের সবুজ গালিচায়, তারা লড়ছেন বুক চিতিয়ে। এর মাঝে এক ঘণ্টার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে জয় তুলে নেয় এশিয়ান গ্রুপ ফুটবল দল।
এশিয়ান গ্রুপ স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ফুটসাল টার্ফের বৃহস্পতিবার রাতের চিত্র এটি। এশিয়ান গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া ‘করপোরেট ফুটসাল কাপ’ টুর্নামেন্টের ফাইনাল ছিল এদিন।
ফাইনালে ম্যাফ সুজ ফুটবল দলকে ৬-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে জয় পায় এশিয়ান গ্রুপ ফুটবল দল।
২৪ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় এই করপোরেট টুর্নামেন্ট। আট গ্রুপে ২৪ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ফুটবল দল অংশ নেয়। বৃহস্পতিবার ফাইনাল ম্যাচের মধ্যে দিয়ে পর্দা নামল এই টুর্নামেন্টের।
ফাইনাল ম্যাচ শেষে আয়োজন করা হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউর করিম চৌধুরী।
মেয়র তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সুন্দর এই আয়োজনের জন্য এশিয়ান গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই খেলার মধ্যে দিয়ে এশিয়ান গ্রুপ প্রমাণ করেছে মাদক-মোবাইলের নেশা থেকে খেলার নেশায় ফিরিয়ে আনা যায়। এই প্রতিযোগিতা বারবার হোক, তরুণ সমাজও উদ্বুদ্ধ হোক। খেলায় যে উদ্দীপনা দেখছি যেন গণজোয়ার ফিরে আসছে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘এতদিন টেলিভিশনে ফুটবল দেখেছি। আজকে প্রথম সামনে সামনে দেখলাম। সত্যি আমি আনন্দিত। ছেলেমেয়েরা মোবাইল-মাদক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি ভালো সুযোগ পায় তাহলে তারা ভালোভাবে গড়ে উঠবে।
‘যে দেশ খেলাধুলায় উন্নত, সেই দেশ এগিয়েও। সেজন্য আমাদের খেলাধুলায় মনোনিবেশ করতে হবে। এশিয়ান গ্রুপকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম বলেন, ‘এশিয়ান গ্রুপ তরুণদের ভালো উদ্যোগের সঙ্গে, খেলাধুলার সঙ্গে সবসময় আছে। সামনের দিনগুলোতেও থাকবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এশিয়ান গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ সালাম, পরিচালক ওয়াসিফ সালাম, তরুণ উদ্যোক্তা বোরহানুল হাসান চৌধুরী, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু, কাউন্সিলর মোরশেদুল আলম প্রমুখ।
মন্তব্য