জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আসিফুল হক আসিফ ও চয়ন দেওয়ান। করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের টিউশনিতেও ভাটা পড়ে। এমন বাস্তবতায় একটি বিকল্প বের করেন তারা; খোলেন ব্যতিক্রমধর্মী রেস্তোরাঁ।
‘মটকা আঁচ’ নামের সেই রেস্তোরাঁ ময়মনসিংহ শহরের র্যাব সদর দপ্তরের উল্টো পাশে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে রেস্তোরাঁটি।
অল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করেছিলেন দুইজন। এখন সাতজন শ্রমিক কাজ করছেন এতে।
রেস্তোরাঁটি এরই মধ্যে ময়মনসিংহে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। শিক্ষার্থীরা এটি পরিচালনা করায় অল্প বয়সীরা আকৃষ্ট হয়েছেন। এ ছাড়া চাসহ বিভিন্ন খাবারের পরিবেশনায় ভিন্নতার কারণে সব বয়সীরাই এখানে আসছেন।
এখানে মাটির হাঁড়িতে চা পরিবেশন অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
উদ্যোক্তা দুজন চারুকলার শিক্ষার্থী হওয়ায় এর ইন্টেরিয়রেও শিল্পের ছাপ। ভেতরে ডেকোরেশনে কাঠ, ফোক আর্ট ও পত্রিকার কাগজ দিয়ে সাজানো।
বাইরের দেয়ালে নব্বই দশকের জনপ্রিয় টিভি চরিত্র বাকের ভাইয়ের দেয়ালচিত্র। এ ছাড়া সুবিধাবঞ্চিত ও গ্রামীণ নারীদের জীবন তুলে ধরা হয়েছে।
রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা যায়, উদ্যোক্তা শিক্ষার্থীরা নানা বয়সী ক্রেতাদের বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন করছেন। বেশির ভাগ ব্যক্তিই মটকা চা পান করছেন।
কেউ কেউ চায়ের চুমুকের ফাঁকে খোশগল্পে সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে বাইরের বেঞ্চে বসে চায়ের আড্ডা জমিয়েছেন।
চা পানের ফাঁকে আসাদ, মুস্তাকিম নামে দুজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, দুই বন্ধু মাঝেমধ্যে সময় পেলে এখানে চা পান করতে আসেন। বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকলেও এখানকার মটকা চা তাদের বেশি পছন্দ। এর স্বাদও আলাদা। ভেতরের প্রাকৃতিক পরিবেশ তাদের ভালো লাগে।
করোনায় হাল না ছাড়া শিক্ষার্থীদের এই রেস্তোরাঁর কর্মী আজিজুল হক রমজান, শরীফ আহমেদ ও বিল্লাল হোসেন জানান, রেস্তোরাঁয় ওয়েটারদের পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও খাবার পরিবেশন করেন। ভালো ব্যবহারের কারণে তৃপ্তি নিয়ে কাজ করেন তারা।
আবিদ হাসান সাকিব নামে চারুকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, ‘আসিফুল হক আসিফ ও চয়ন দেওয়ান দুই বন্ধু টিউশনি করে পড়াশোনার খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ জোগাত। করোনার প্রকোপে টিউশনি না থাকায় দুজন এই রেস্তোরাঁ দিয়েছে। বন্ধুদের এমন সাফল্য দেখে আমাদেরও ভালো লাগে।’
উদ্যোগ শুরুর প্রেক্ষাপট
মটকা আঁচের উদ্যোক্তা আসিফুল হক আসিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিউশনি হচ্ছে অস্থায়ী কাজ। যা কিছু টাকা পেতাম তা দিয়ে কোনো রকম নিজের খরচ জুগিয়েছি। তবে মনে মনে সব সময় চিন্তা করেছি, ভালো একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে পারলে আর হতাশায় ভুগতে হবে না।
‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই একজন সফল উদ্যোক্তা আফজাল হোসেন শান্ত ভাইয়ের পরামর্শ নিয়ে রেস্টুরেন্ট দিতে অনুপ্রাণিত হই। আমরা দুই বন্ধু মিলে ময়মনসিংহে এই রেস্টুরেন্ট দিয়েছি। এখন আমরা নিজেরা সচ্ছল হওয়ার পাশাপাশি তিনজনকে নিয়মিত ও আরও চারজনকে অস্থায়ী হিসেবে এখানে চাকরি দিয়েছি।’
আসিফ জানান, তার রেস্তোরাঁয় শুধু চায়েরই আছে নানান আইটেম। এগুলো হলো মটকা স্পেশাল চা, মটকা কুলফি, মটকা ফালুদা, রেগুলার চা, তন্দুরি চা ও স্পেশাল তন্দুরি চা। এর বাইরে আছে চিকেন মোমো, হাঁসের মাংস, খাসির নলি ও কলিজা ভুনা। সবগুলোই হাঁড়ি-পাতিলে পরিবেশন করা হয়।
মটকা আঁচের আরেক উদ্যোক্তা চয়ন দেওয়ান বলেন, ‘অন্যান্য খাবারের চেয়ে মটকা চা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। কারণ হচ্ছে গরুর খাঁটি দুধ, দুধের মালাই, সর্বোচ্চ ভালো মানের চা পাতি, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পাস্তাবাদাম, কিশমিশসহ আরও বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্যসম্মত ড্রাইফুড দিয়ে চা পরিবেশন করা হয়।
‘চা বানানোর মাটির পাত্রটি ৩ হাজারের বেশি তাপমাত্রায় পুড়িয়ে নিই৷ ফলে এতে কোনো ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস থাকে না।’
চয়ন জানান, এ রেস্তোরাঁয় সবকিছু মাটির পাত্রে পরিবেশন করা হয়। ফলে প্রচুর মাটির পাত্রের প্রয়োজন হয়। দুটি কুমারের বাড়ি মাটির পাত্রের জোগান দেয়। মাটির হাঁড়ি বানিয়ে সুদিন ফিরেছে উজ্জ্বল কুমার পাল ও সুলভ কুমার পালের।
আরও শাখা খোলার চিন্তা
প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে রেস্তোরাঁ। তবে সন্ধ্যার পর থেকে লোকজন বেশি আসতে শুরু করে।
উদ্যোক্তারা জানান, জনপ্রিয়তার কারণে আরও আউটলেট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এর মধ্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চত্বরে একটির নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলে এর উদ্বোধন হবে।
শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রধান ড. এমদাদুর রাসেদ সুখন।
নিউজবাংলাকে সুখন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, চাকরি না হলেও হতাশ হওয়া যাবে না; উদ্যোক্তা হতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা নিজের প্রয়োজনে উদ্যোক্তা হয়েছেন।
‘ছোট পরিসরে ব্যবসা করে নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কয়েকজন কর্মহীনেরও তারা কর্মের ব্যবস্থা করেছেন। এটির জন্য নিঃসন্দেহে তারা প্রশংসার দাবিদার। কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে।’
জ্যৈষ্ঠ মাসের দশ দিন চলছে। এই সময়ে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা যেমন থাকে তেমনি থাকে বৃষ্টিপাতও। বাংলা এই মাসের শুরুতেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা কমেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা গণমাধ্যমকে বলেন, বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। আর এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে আগামী আরও দশ দিন। বাংলাদেশ সংলগ্ন এলাকায় জড়ো হওয়া গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার জন্য এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মিয়ানমারের আকিয়াব উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। এটি আরও অগ্রসর হওয়ার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আগামী ২৭ মে পশ্চিমমধ্য এবং তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিকে সাগরে একটি নিম্নচাপ হতে পারে। এ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ও সৃষ্টি হতে পারে।
কাজী জেবুন্নেছা বলেন, ২৫ থেকে ২৬ মে সাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। সেটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেবে কী না, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে নিশ্চিত করে এখনও কিছু বলার সময় আসেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মে মাস সাধারণত ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস হিসেবে পরিচিত। গত বছরের মে মাসেই ঘূর্ণিঝড় রিমাল সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। গত বছরের ২৬ মে এ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশের উপকূলে। এবারও নিম্নচাপ ও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের সময় কাছাকাছি। এর আগেও একাধিক বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় এ মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে। তাই আবহাওয়াবিদরা এ সময় সতর্ক থাকতে বলছেন।
কাজী জেবুন্নেছা আরও বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার উপযোগী রয়েছে। তবে নিম্নচাপ তৈরি হলে সেটি কোথায় যাবে, কীভাবে শক্তি সঞ্চয় করবে, এসব বিষয় আরও কিছুদিন পর জানা যাবে।’এবার যদি ঘূর্ণিঝড় হয়, তবে এর নাম হবে ‘শক্তি’। নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক একটি প্রতিরক্ষা কোম্পানির সঙ্গে ২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের (প্রায় ১৮০ কোটি রুপি) চুক্তি বাতিল করেছে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার ভারতের একাধিক শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তির আওতায় কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (জিআরএসই) নামের প্রতিরক্ষা কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য একটি ৮০০ টন ওজনের টাগ বোট সংগ্রহ করার কথা ছিল।
এই চুক্তিটি হয়েছিল গত বছরের জুলাই মাসে, যেখানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও ভারতীয় কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। চুক্তিটি ছিল ভারত সরকারের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তার অংশ, যা ২০২৩ সালে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই টাগ বোট কেনার উদ্যোগটিকে সেই ঋণচুক্তির প্রথম বড় প্রকল্প হিসেবে ধরা হচ্ছিল।
তবে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ সরকার এই ক্রয়াদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, এর পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক এক কূটনৈতিক উত্তেজনা। এর আগে গত শনিবার ভারত তাদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপরই বাংলাদেশ পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, এই চুক্তি বাতিলের ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জিআরএসই কোম্পানিটি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। এনডিটিভি জানিয়েছে, কোম্পানিটি ভারতীয় পুঁজিবাজারকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে।
এদিকে, বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক কারণ দেখছেন অনেকে। ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলকে ‘স্থলবেষ্টিত’বলে অভিহিত করেন এবং এই অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে, ভারত এর জবাবে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দু বিজনেস লাইন বলেছে, বাংলাদেশ সরকার ও জিআরএসইর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতেই চুক্তি বাতিল হয়েছে। যদিও এই আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ পায়নি। ভারত ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশকে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) সুবিধার আওতায় ৮ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এই সহায়তার বেশিরভাগ প্রকল্পই বাস্তবায়ন হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে।
চুক্তি বাতিলের এই সিদ্ধান্তকে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভবিষ্যতে এর প্রভাব দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক লেনদেনে কতটা পড়ে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরেকটি এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে- বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিকে সব ধরনের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করে স্বাধীন ও সার্বভৌমভাবে পরিচালনা করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশকে বারবার বিভাজিত করা হয়েছে, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা হয়েছে, বাংলাদেশেকে দুর্বল করে রাখার লক্ষ্যে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর থেকে আবারো দিল্লি থেকে ছঁক আকা হচ্ছে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার, দেশকে বিভাজিত করার। গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করে আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে।
তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক, বাংলাদেশপন্থী ও ধর্মপ্রাণ ছাত্র-জনতাকে সার্বভৌমত্ব, সংস্কার ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার ও সৈনিকদের সার্বভৌমত্ব ও বাংলাদেশ রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ড. ইউনূসকে জনগণকে দেওয়া সংস্কার, বিচার ও ভোটাধিকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। তাকে দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দিতে হবে। ঘোষিত টাইম ফ্রেমের মধ্যেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারের জুলাই সনদ রচিত হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হবে এবং বিচারের রোডম্যাপ আসতে হবে। নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচন একই সঙ্গে দিতে হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি বাতিল করেছে এবং বর্তমানে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীদের অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। অন্যথায় তারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অবস্থান হারাতে পারে বলে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস)। হার্ভার্ড এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও প্রতিশোধমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোয়েম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (এসইভিপি) প্রত্যয়ন বাতিলের নির্দেশ দেন।
ডিএইচএস-এর বিবৃতিতে বলা হয়, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আগেই চাওয়া কিছু তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নোয়েম বলেন, 'এই প্রশাসন হার্ভার্ডকে জবাবদিহির আওতায় আনছে—যেহেতু তারা সহিংসতা ও ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং ক্যাম্পাসে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সমন্বয় করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ কোনো অধিকার নয়, বরং একটি সুবিধা, যা তারা অধিক টিউশন ফি নিয়ে বহু বিলিয়ন ডলারের তহবিল ফুলিয়ে তোলার কাজে ব্যবহার করে।'
হার্ভার্ড পাল্টা বিবৃতিতে জানায়, 'সরকারের এই পদক্ষেপ অবৈধ। আমরা হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের উপস্থিতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা এসব মানুষ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরো জাতিকে অসামান্যভাবে সমৃদ্ধ করেন।'
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
এই সিদ্ধান্তকে ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ড-বিরোধী অভিযানের একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ম্যাসাচুসেটসের এই আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ‘বামপন্থী’ বা ‘মার্কসবাদী’ আদর্শ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছেন।
গত মাসে হার্ভার্ড একটি ২.২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল বরাদ্দ স্থগিতাদেশের মুখে পড়ে, কারণ তারা হোয়াইট হাউসের দেওয়া একগুচ্ছ শর্ত প্রত্যাখ্যান করে।
এসব শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কাঠামো, নিয়োগ নীতি ও ভর্তি পদ্ধতিতে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল বৈচিত্র্য সংক্রান্ত দপ্তরগুলো বন্ধ করা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্ক্রিনিংয়ে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা।
হার্ভার্ড পরে এই বরাদ্দ স্থগিতাদেশ ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
আগামী সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ায় দেশে অস্থিতিশীলতা বাড়ছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যদি অপমানজনকভাবে পদত্যাগ করেন—তাহলে তার দল ব্যথিত হবে।
শুক্রবার (২৩ মে) একটি প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক বলেন, ‘দেশে অস্থিরতার ঢেউ বইছে বলে মনে হচ্ছে। এই অস্থিরতার পিছনে মূলত দায়ী কারা? নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা কারা করছেন? আপনার (ড. ইউনূসের) মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা এই বিষয়গুলো জানতে চাই।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফারুক বলেন, সরকার যদি একটি স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ দিত—তাহলে শেখ হাসিনার আমলে যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন এবং অসংখ্য মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন—তারা গঠনমূলকভাবে জড়িত হয়ে নির্বাচনমুখী হতেন।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আপনি (ড. ইউনূস) এখনও কোনো রোডম্যাপ দেননি। যদি এই অস্থিরতা আপনার তৈরি হয়—তাহলে জেনে রাখুন, বিএনপি কখনই এর দায় নেবে না।’
সরকারকে অবিলম্বে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানান সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ফারুক।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করুন—দেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়ান’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সম্ভাব্য পদত্যাগ সম্পর্কে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে ফারুক বলেন, ‘যদি আপনার মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্বকে অপমানজনকভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়—তাহলে তা আমাদের ক্ষতি হবে।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে যেভাবে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে, ঠিক সেভাবে আপনার নামও লেখা থাকুক। দিনের আলোতে ভোটদানের সুযোগ দিয়ে আমাদের ভোটাধিকার রক্ষা করলে... এমন উত্তরাধিকার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
বিএনপি নেতা প্রধান উপদেষ্টাকে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করে একটি উদাহরণ সৃষ্টির আহ্বান জানান, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতির একজন গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া, মাহফুজ আলম এবং খলিলুর রহমান—এই তিন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করে চিঠি দেন। অন্যথায়, তাদের অপসারণের দায় আপনার উপর বর্তাবে।’
ফারুক বলেন, সংস্কার অবশ্যই করা উচিত, কিন্তু এমনভাবে নয়—যাতে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি করিডোর তৈরি হয় বা চট্টগ্রাম বন্দর অন্যদের হাতে চলে যায়।
ষড়যন্ত্রকারীদের নির্বাচন বিলম্বিত করা ও অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে—এমন যেকোনা সংস্কারের বিষয়ে সতর্কও করেন তিনি।
এই অস্থিতিশীলতা দূর করতে অধ্যাপক ইউনূসকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানান ফারুক।
প্রতারণা এড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন সেবা ও স্টেশন কাউন্টার ব্যতীত অন্য কোনো উৎস থেকে টিকিট সংগ্রহ করা হতে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
আজ এক তথ্য বিবরণীতে আরো জানানো হয়েছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য বুধবার সকাল থেকে অনলাইনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২৭ মে পর্যন্ত ৭ দিন রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। এ সময় ৩১ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত চলাচলকারী আন্ত:নগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। এবারও ঈদযাত্রার শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হবে।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর লগো ব্যবহার করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে উল্লেখ করে, দেশবাসীকে গুজবে কান না দিয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
গতকাল সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক পোস্টে এ আহ্বান জানানো হয়।
পোস্টে বলা হয়, সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর লোগো ব্যবহার করে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা চলছে।
আরও লেখা হয়, গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। সত্যতা যাচাই করুন, সচেতন থাকুন।
পোস্টে ওই ভুয়া প্রেসবিজ্ঞপ্তিটির ছবিও দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য