একসময়ের দুর্গম সাজেকের যোগাযোগব্যবস্থা এখন উন্নত হয়েছে। বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করছে সাজেক। মানুষের জীবনমান হয়েছে উন্নত।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট হলো সাজেক সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ, বাঁশসহ বিভিন্ন বনজদ্রব্যের প্রসিদ্ধ বিক্রয়কেন্দ্র। এই বাঘাইহাট থেকে রুইলুই পর্যটন কেন্দ্রের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার। এই দুই স্থানের মধ্যে অবস্থিত সাজেক সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
২০১৩ সালে বাঘাইহাট-রুইলুই পর্যটনকেন্দ্র সড়ক নির্মাণের পর রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পর্যটনকেন্দ্র রুইলুই এলাকা বিদ্যুৎ-সংযোগের আওতায় আসে।
তবে সড়ক নির্মাণের আগে রুইলুই পর্যটনকেন্দ্র ছিল বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম। সেই সময় সেখানে মানুষের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাও পূরণ করার সুযোগ ছিল না। সেই দুর্গম সাজেক বিজলিবাতির আলোয় আলোকিত। আর যোগাযোগব্যবস্থাও উন্নত হয়েছে।
সম্প্রতি সাজেক পর্যটন এলাকা ও আশপাশের বাসিন্দারা নিউজবাংলাকে বলেছেন, তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে।
রুইলুই মৌজার হেডম্যান এল থাংগ্যা পাংখোয়া জানান, আগে তো তারা বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কোনো সড়ক ছিল না। উপজেলা সদর বাঘাইছড়িতে যেতে তাদের পুরো একদিন হাঁটতে হতো। সংরক্ষিত বন অতিক্রম করার সময় পশু ও সাপের আক্রমণের ভয় থাকত। এখন সড়ক হওয়ায় অনায়াসে যাতায়াত করতে পারেন। এখন রুইলুইতে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়া হয়েছে। তাদের জীবনযাত্রা এখন অনেক সহজ হয়েছে। এ জন্য তিনি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।
সাজেক রুইলুই পর্যটনের পার্শ্ববর্তী এলাকা ছয়নাল ছড়া দোপথা গ্রামের ব্যবসায়ী বিপুল কান্তি চাকমা বলেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ পাওয়ায় এবং যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। আগে তারা অন্ধকার দূর করতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতেন। এরপর এলো বিদ্যুৎ। এখন বিজলিবাতির আলোয় রাতেও তারা সহজে অনেক কাজ করতে পারেন।
তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে সাজেকে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।’
বাঘাইহাট-রুইলুই সড়কের পাশে ৯ নম্বর ত্রিপুরা পাড়া অবস্থিত। এই পাড়ার প্রধান চিরন কার্বারি বলেন, এই দুর্গম সাজেকে রাস্তা হবে, বিদ্যুৎ আসবে তারা কখনও কল্পনা করতে পারেননি। এখন পাড়ার পাশ দিয়ে চলে গেছে পাকা সড়ক। বিদ্যুতের আলো পেয়েছেন। তবু দুঃখ আছে, এই এলাকার মানুষ খাদ্যের অভাবে থাকে। এই অভাব দূর করা দরকার।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বলেন, রুইলুই পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় অনেক সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন তা সত্য। কিন্তু সাজেক ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ অত্যন্ত গরিব। চিকিৎসাব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
তিনি সাজেকের প্রত্যন্ত এলাকায় বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রতিটি ঘরে সোলার প্যানেল, প্রতিটি গ্রামে সংযোগ সড়ক ও অভাবের সময় রেশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
পার্বত্য খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরন্তর যে উন্নয়নের কাজ করছেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পার্বত্য অঞ্চলেও তার ছোঁয়া লেগেছে। যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থায় বিপুল উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা বলতে পারি একসময়ের দুর্গম সাজেক এখন অনেক আলোকিত ও সমৃদ্ধ। এভাবেই তো দেশ এগিয়ে যাবে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে আর বেশি দেরি নেই বাংলাদেশ একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’
দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় বুধবার বিকেলে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে এই প্রাণহানি ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন।
পাহাড়ি সড়ক ধরে ছুটে চলার পথে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আর এর যাত্রী শ্রমিক সড়কের পাশের ঢালে ছিটকে পড়েন। কেউ কেউ ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই ৬ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও আটজন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হতাহত শ্রমিকদের বাড়ি রংপুর অঞ্চলে। তারা উদয়পুর-বাঘাইছড়ি সীমান্ত সড়কের ১৭ কিলোমিটার নামক স্থানে হারিজাপাড়া সেতু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে কর্মস্থল থেকে ফিরছিলেন তারা।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে খবর নিয়ে জানতে পেরেছি যে গাড়িটিতে থাকা সবাই সীমান্ত সড়কের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ছিলেন। এই সড়কে অনেক স্থানে উঁচু নিচু পাহাড় আছে। উদয়পুর সড়কের ৯০ ডিগ্রি নামক স্থানে গাড়ি নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।’
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার জানান, আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের কাজ শেষে খাগড়াছড়ির দিকে ফেরার পথে একটি ডাম্প ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। গাড়িটিতে মোট ১৭ জন শ্রমিক ছিলেন। তাদের মধ্যে ৬ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী আহতদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। আগামী তিন বছরের জন্য এই পদে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বুধবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮ এর ধারা-৭ অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপ-সচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেয়া হয়। বিকেলে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এই পদে যোগদান করেন।
মোহাম্মদ ইউনুছ আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার সদস্য সচিব।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার (২৪ এপ্রিল)। ২০১৯ সাল থেকে দুই মেয়াদে টানা পাঁচ বছর এই পদে ছিলেন তিনি।
২০০৯ সাল থেকে সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই পদে চুক্তিভিত্তিক রাজনৈতিক নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকার। মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম টানা ১০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল নিয়োগ দেয়া হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষকে।
চিটাগাং ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ কে যুগোপযোগী করে ২৯ জুলাই ২০১৮ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনের ৭ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে- চেয়ারম্যান বা বোর্ড সদস্য হিসেবে কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি সময়ের জন্য নিয়োগলাভের জন্য বলে বিবেচিত হবেন না। জহিরুল আলম দোভাষ ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল প্রথম মেয়াদে দুই বছরের জন্য ও ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে তিন বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
সিডিএ’র উপ-সচিব অমল কান্তি গুহ বলেন, ‘দুপুরে প্রজ্ঞাপন হয়েছে। আমরা পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান মহোদয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে এরপর সিডিএ কার্যালয়ে আসবেন।’
মোহাম্মদ ইউনুছ প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত। সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ইউনুছ বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য।
দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও উত্তপ্ত তাপমাত্রার কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
বুধবার ইয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের দিকে নজর রাখুন- দুর্বল পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা তাপপ্রবাহের সময় অসুস্থতা বা মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সময় নিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন, বিশেষ করে যারা একা থাকেন।’
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা।
ইউনিসেফের মতে, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য যারা তাপজনিত অসুস্থতা যেমন হিট স্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে বিশেষভাবে ডায়রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইয়েট বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের ওপর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের উদ্বেগের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তাই ইউনিসেফ অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের হাইড্রেটেড ও নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই তাপপ্রবাহের তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তাপমাত্রা নজিরহীনভাবে বাড়তে থাকায় অবশ্যই শিশু এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানান ইয়েট।
এই তাপপ্রবাহ থেকে ইউনিসেফ কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, যত্নগ্রহণকারী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের রক্ষায় নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে-
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কোনো শিশু বা গর্ভবতী নারীর হিটস্ট্রেসের লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্তপাত, পেশি খিঁচুনি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি; ওই ব্যক্তিকে ভালো বায়ু চলাচলসহ শীতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং ভেজা তোয়ালে বা শীতল পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।
পানি বা ওরাল রিহাইড্রেশন লবণ (ওআরএস) গ্রহণ করুন।
হিটস্ট্রেসের গুরুতর লক্ষণগুলোতে (যেমন: বিভ্রান্তি বা প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষমতা, অজ্ঞান হওয়া, শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, খিঁচুনি এবং চেতনা হ্রাস) হলে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে কক্সবাজারের টেকনাফে উপজেলার একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের মোট ৫২৩ জন ভূমি ও গৃহহীনের মাঝে ঘর বিতরণ করা হয়। মাথা গোঁজার স্থায়ী একটি আবাসন পেয়ে নতুন জীবন শুরু করেন ভূমিহীন অসহায় মানুষ।
তবে এখানে ঘর বরাদ্দ পাওয়া অনেকেই ভূমিহীন নন। অভাবগ্রস্তও নন। দুর্নীতি ও প্রভাব খাটিয়ে ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত অনেকেই সচ্ছল। আশ্রয়ণের সেসব ঘর মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য।
আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দে অনিয়ম ও ভাড়া আদায়ের এমন একাধিক ঘটনা নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে সেসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নে নয়াপাড়ার শেষ মাথায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের তালিকায় ৫ নম্বর সিরিয়ালে রয়েছে নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. কামালের ঘর। ওই গ্রামেই তার নিজস্ব টিনশেড ঘর রয়েছে। তারপরও প্রভাব খাটিয়ে তিনি আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। কামালের নিজের ঘর থাকায় এখন আশ্রয়ণে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকেন আরেকজন।
আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কামাল হোসেন নিজের নামে বরাদ্দ ঘরে কখনোই বসবাস করেননি। কামালসহ প্রভাবশালী সাতজন একটি করে ঘর বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কামাল দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ঘরটি বিক্রি করে দেন রাশেদা নামের এক নারীর কাছে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ওই নারীকে তিনি টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানান বাসিন্দারা।
নয়াপাড়ায় (পুরান পাড়া) আশ্রয়ণের ঘরে বসবাসকারী এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের এখানে ১০টি ঘরের মধ্যে মাত্র তিনটিতে আমাদের মতো অসচ্ছল উপকারভোগী বসবাস করে। বাকি সাতটি ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্তরা কেউ থাকেন না।
‘৫ নম্বর ঘর বিক্রি করলেও পরে টাকা ফেরত নিছে। আর ১ নম্বর ঘর সাইফুল ইসলাম ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছিল। এখন সেই টাকা ফেরত দিছে কিনা তা জানি না। কেউ কেউ নিজের নামে বরাদ্দ ঘরটি দীর্ঘদিন তাদের আত্মীয়দের কাছে ভাড়া দিয়েছিল। বর্তমানে সেই সাতটি ঘরে তালা ঝুলিয়ে রাখলেও তারা নতুন ভাড়াটে খোঁজ করছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল ও সাইফুল মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ঘর আগে বিক্রি করেছিলাম। এখন আর ঘর বিক্রি করব না। ভাড়াও দেব না। অন্যদের পাঁচটি বাড়ি ভাড়া চলে। আমাদের ঘর তালাবদ্ধ করে রাখছি।’
বিষয়টি নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন তারা।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের তালিকা সঠিকভাবে করা হয়নি। তালিকা প্রস্তুতকারীরা প্রকৃত ভূমিহীনদের বদলে নিজেদের পছন্দের লোকের নাম দিয়েছেন। ফলে প্রকৃত অভাবীদের অনেকে আশ্রয়ণের ঘর থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সচ্ছল ব্যক্তিরা ঘর বরাদ্দ পেয়ে সেগুলো মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে রাখছেন।
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মুফিত কামাল ও ফেরুজা বেগম বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে সরকার গুচ্ছগ্রাম করে টিনের ঘর বানিয়ে বরাদ্দ দিয়েছিল। সেখানে প্রতিটি ঘরেই বরাদ্দপ্রাপ্ত অভাবী মানুষগুলো থাকে। বর্তমানে ওইসব ঘর জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।
‘পাশেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর রয়েছে। অথচ অনেকে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকছেন না। সবময় তালাবদ্ধ থাকে। আর যারা বসবাস করেন তাদের সিংহভাগই অন্যের বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকেন। অনেকে উপহারের ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার অনেকে ভাড়া দিয়েছেন।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের যেসব ঘর তালাবদ্ধ থাকে, সেগুলো গুচ্ছগ্রামে জরাজীর্ণ ঘরে থাকা বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া ছাত্র মো. শাহ্ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সিংহভাগ ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্তরা থাকেন না। শুধু সাবরাং নয়, টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে এই প্রকল্পের আওতায় যেসব ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সবখানেই এমন অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যাদের ঘরের প্রয়োজন নেই তারাই এসব ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাছের লোক এবং আত্মীয়দের ঘর দিয়েছেন। তাই সিংহভাগ ঘর তালাবদ্ধ থাকছে।’
প্রশাসনের কাউকে কোনোদিন আশ্রয়ণ প্রকল্পে এসব ঘর তদারকি করতেও দেখেননি বলে উল্লেখ করেন তিনি। বরাদ্দ পাওয়া যেসব ঘরে প্রকৃত মালিকরা থাকেন না, সেগুলো ফেরত নিয়ে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে বণ্টন করার দাবি জানান এই শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর কেউ বিক্রি করে থাকলে এবং ভাড়া দিয়ে থাকলে যাচাই-বাছাই করে তাদের দেয়া ঘরের বরাদ্দ বাতিল করা হবে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিজের নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘর ভাড়া দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এসব বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের বোদা-দেবীগঞ্জ জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও ট্রলির (ট্রাক্টর) মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পথচারী নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার জন।
বুধবার সকালে বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের কলাপাড়া নামক স্থানে মহাসড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন- বোদা পৌরসভার সদ্দারপাড়া গ্রামের সাফিরের স্ত্রী ৬০ বছর বয়সী নুরজাহান ও একই উপজেলার মাজগ্রাম এলাকার মানিক ইসলামের ছেলে ২৫ বছর বয়সী জাহিদ ইসলাম।
বোদা থানার ওসি মোজাম্মেল হক দুজনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেবীগঞ্জ থেকে পঞ্চগড়গামী একটি দ্রুতগামী ট্রাক ও বিপরীতমুখী একটি ট্রলির সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে থাকা এক পথচারী নারীকে গাড়িদুটি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দুর্ঘটনায় ট্রলির চালক জাহিদও ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বেশ কয়েকদিন ধরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের পর গত দুদিন কিছুটা কমে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছিল চুয়াডাঙ্গা জেলায়। তবে আবারও তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহের রূপ নিয়েছে।
বুধবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এর মধ্যে জেলার কয়েকটি জায়গায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে বেশ কিছু সময় ধরে (৪০ মিনিট) গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ডে তা ১ দশমিক ৬ মিলিমিটার। বৃষ্টির কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়ায় ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
তাপদাহে স্বস্তি মিলছে না কোথাও। গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে সেখানেও মিলছে না শান্তি।
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল। দাবদাহে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রমও।
দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘এই তাপে ধানের খেত শুকিয়ে যাচ্চি, বেশি বেশি সেচ দিতি হচ্চি। দিনের বেলায় পাম্পে খুব একটা পানি উটচি না। রাতি পানি দিতি হচ্চি। তাছাড়া আম, লিচু, কলা সব নষ্ট হয়ি যাচ্চি। গরমে আমারও মাটে টিকতি পারচি নি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবারের তুলনায় আজ (বুধবার) তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি বেড়েছে। এপ্রিল মাসজুড়ে এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য