× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল
পুঠিয়া রাজবাড়িতে একদিন
google_news print-icon

পুঠিয়া রাজবাড়িতে একদিন

পুঠিয়া-রাজবাড়িতে-একদিন
নাটোর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহীর পুঠিয়ায় অবস্থিত বিখ্যাত পুঠিয়া রাজবাড়ি। প্রবেশের পরপরই বিশাল আকারের পুকুরের পাশে এই উপমহাদেশের বৃহত্তম শিবমন্দিরটির অবস্থান।

পুঠিয়া রাজবাড়ির মাঠ। ক্রিকেট খেলছে স্থানীয় ছেলেরা। তাদের একজন আবার পকেটে ফুল নিয়ে বল করছে।

ছেলেটার কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম, ‘তুমি ফুলগুলো কোথায় পেলে?’ তার সরল উক্তি, ‘খুব সুন্দর দেখতে। তাই এসব আমি একটা অটোরিকশা থেকে নিয়ে এসেছি।’

‘এই ফুলগুলো আমার’ বলতেই সে কিছু না বলে সব ফুল ফেরত দিল।

আখের ফুল। এসব আমি কাছের আখ ক্ষেত থেকে তুলে এনেছি। নাটোর থেকে পুঠিয়া আসতে আমরা পথে পথে অনেক আখ খেতের দেখা পেয়েছি।

ছবি তুলেছি; সঙ্গে ফুলও তুলেছি। সেসব ফুলই ছেলেটি আমাদের অটোরিকশা থেকে নিয়েছিল।

শীতের মধ্যে আমরা নাটোর ঘুরতে এসেছি। ভোর পাঁচটায় যখন ন্যাশনাল ট্রাভেলসের গাড়ি ভিআইপি হোটেলের ফটকে থামল, তখন ঠান্ডায় শরীর জমে গেছে। কোনো রকমে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। সে ঘুম ভাঙল দুপুর ১২টায়।

তখনও প্রকৃতি কুয়াশার চাদরে মোড়া; ঘোর ঘন কুয়াশা যাকে বলে। আস্তে-ধীরে তৈরী হয়ে বের হলাম। কই যাব করতে করতে ফারুকের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে বসি।

ফারুক আমার পূর্ব পরিচিত। নাটোরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ব্যবসা প্রথম তিনিই শুরু করেন। এখন অটোরিকশা নাটোরের পথে পথে অনেক। তবু আমি এখানে এলেই ফারুকের খোঁজ করি। সেও যেখানেই থাকুক, আমার ডাকে সারা দিয়ে চলে আসবেই।

আজ ফারুক আমাকে নিয়ে চলেছে পুঠিয়া রাজবাড়িতে। এখানে পথ চলতে পথের দুই ধারে আখ ক্ষেত চোখে পড়ে। আরও চোখে পড়ে একটু পরপর আখবোঝাই গাড়ি।

পথ চলছি, ছবি তুলছি। এভাবেই আখ ক্ষেতে আখের মাথায় ফুল দেখে ফারুককে তার অটোরিকশা থামাতে বলি। তারপর ক্ষেতের আল ধরে একেবারে আখ ক্ষেতের ভেতরে যাই।

পুঠিয়া রাজবাড়িতে একদিন

ছোটবেলায় আদর্শ লিপিতে পরেছি ইক্ষুর রস অতি মিষ্ট। সেই অতি মিষ্ট ইক্ষুকে কেউ কেউ বা কোথাও বলে গেন্ডারি। ১২ বছরের দুই শিশু আখ ক্ষেতে আখ ছিঁড়ে খাচ্ছিল। তারা আমাকে দেখে কাছে আসে।

আমাকে আখের ফুলে হাত বুলাতে দেখে বলে, ‘আপনি কুইশাল দিয়ে কী করবেন?’ আমি ‘কিছু না’ বলে ছবি তুলতে উদ্যত হতেই তারা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘তাইলে আগে আমাগো ছবি তুইলা দেন।’

কী আর করা। ওদের ছবি তুলে দিয়ে আমি আখ ফুলের ছবি তুলি। তারপর ক্ষেতমালিক সলিম মিয়ার সঙ্গে কথা বলি।

এই আখ খাওয়ার জন্য নয়। তবে কেউ তা খেলেও আসলে এসব চলে যায় চিনিকলে। মূলত এই আখ থেকে চিনি তৈরি হয়; হয় গুড়ও। এসব সলিম মিয়ার কথা।

আমি তার সেসব কথার চাইতে আখ ফুল নিয়ে ভাবছি। মিথ্যা বলে কী হবে, আমি জীবনে প্রথমবার আখ ফুল দেখলাম। আখ ফুল দেখে আমি যারপরনাই অভিভূত। সে অনুভুতি নিয়ে পথ ধরি পুঠিয়া রাজবাড়ির।

নাটোর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহীর পুঠিয়ায় অবস্থিত বিখ্যাত পুঠিয়া রাজবাড়ি। এখানকার পিচঢালা পথের সৌন্দর্যে মন ভরে যায়। রাস্তার দুই পাশের আখ ক্ষেতের কথা আগেই বলেছি; রয়েছে শর্ষে ক্ষেতও।

তবে এই শীতেও আমাদের কিছু বিবর্ণ কাশফুলের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। বিষয়টা অবাক করার মতো। সে অবাক করা ভাব বুকে থাকতেই দেখি সারি সারি ভ্যান গাড়ি। আর সে ভ্যানগাড়িতে মাটির হাঁড়ি।

এভাবেই আমরা আধা ঘণ্টায় ফাঁকা রাস্তা, ক্ষেত আর ছোট ছোট গঞ্জ পেরিয়ে পুঠিয়া বাজারে পৌঁছাই। এখান থেকেই শুরু পুঠিয়া রাজবাড়ির পথ। এ পথে প্রবেশের পরপরই বিশাল আকারের পুকুরের পাশে এই উপমহাদেশের বৃহত্তম শিবমন্দিরটির অবস্থান।

পুঠিয়া রাজবাড়িতে একদিন

চমৎকার কারুকার্যময় পুকুর ঘাট পেছনে ফেলে দাঁড়িয়ে শিবমন্দিরটি। রানী ভুবন মোহিনী দেবী এই শিবমন্দির নির্মাণ করেন।

আমরা শিবমন্দিরের ভেতর প্রবেশ করি। মন্দিরের কক্ষ মাত্র একটি। সে কক্ষে রয়েছে শিবলিঙ্গটি। কিন্তু ভর দুপুরে সে কক্ষটিতে তালা ঝুলতে দেখে মন খারাপ হওয়ার উপক্রম হতেই পাশের তরকারি বিক্রেতা এগিয়ে আসেন।

তিনি মন্দির রক্ষক বিশ্বনাথ দাসের বাড়ি দেখিয়ে বললেন, ‘আপনি ডাকলেই তিনি চলে আসবেন।’ সত্যি তাই হলো। বিশ্বনাথ এসে মন্দিরের কক্ষটি খুলে আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন। তারপর বললেন মন্দিরের ইতিহাস আর নিজের সম্পর্কে অনেক কিছু।

এখানে আমরা নকশাখচিত শিবলিঙ্গ দর্শন করলাম। আর ঘুরে দেখলাম পুরো মন্দির এলাকা।

৬৫ ফুট দীর্ঘ বেদির ওপর শিবমন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের দুই দিক দিয়েই সিড়ি আছে। চারিদিকে বিশাল বারান্দা। বারান্দার দেয়ালের গায়ে হিন্দু পুরানের ১৪টি চিত্র। এসব চিত্র এখন নামমাত্র আছে। কারণ সবকিছুই ভেঙে গেছে।

তবে এখনও এখানে শিবপূজা ঠিকই হয় প্রতি বছর। আর দূর-দুরান্ত থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসেন। আমরা চমৎকার গম্বুজ শোভিত শিব মন্দির দর্শন শেষে বিশ্বনাথ বাবুকে বিদায় জানিয়ে হেঁটে পুঠিয়া রাজবাড়ি চলে আসি।

আমাদের সামনে এখন পুঠিয়া রাজবাড়ির বিশাল মাঠ; পেছনে দোলমঞ্চ। পিরামিড আকৃতির দোলমঞ্চটি চমৎকার।

আমরা দোলমঞ্চ ঘুরে দেখে রাজবাড়ির দিকে যাই। রাজবাড়ির মাঠে এলাকার ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে, গরু চড়তেও দেখা গেল। সাথে বিয়ে বাড়ির প্যান্ডেল করা, বরযাত্রী এসেছে।

১৯৭৩ সালে এই বিশাল রাজবাড়িটিতে পুঠিয়া ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা লস্করপুর ডিগ্রি বিদ্যা নিকেতন নামে পরিচিত। ডিগ্রি কলেজের সাইনবোর্ডটি এখন আর নেই।

রাজবাড়িটির সংস্কারমূলক কাজ চালানো হয়েছে, গায়ের নতুন রং দেখেই তা বোঝা যায়। শুক্রবার বিধায় আজ দর্শনাথীদের সংখ্যাও কম নয়। আমরা ইট আর সুড়কির তৈরী রাজবাড়িটি ঘুরে দেখি। চমৎকার দোতলা বাড়িটি গ্রিক স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে নির্মিত। এর সুন্দর কারুকার্যময় কাঠের দরজা-জানালা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

পুঠিয়া রাজবংশের রাজা পাঁচআনী জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ। পরবর্তী সময় তার মৃত্যুর পর দত্তক পুত্র হরেন্দ্র নারায়ণ এখানকার রাজা হন।

হরেন্দ্র নারায়ণের পর তার পুত্র যোগেন্দ্র নারায়ণ জমিদারির দায়িত্ব নেন। যোগেন্দ্র নারায়ণের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী শরৎ সুন্দরী রাজ্যভার গ্রহণ করেন।

রানী হেমন্তকুমারী দেবী তার শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।

শেষ কথা

পুঠিয়া রাজবাড়ি চত্বর বিশাল। এখানে রয়েছে চারদিক পরিখাবেষ্টিত পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দির, জগদ্বাত্রী মন্দির, কালীমন্দির ও গোপাল মন্দির। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ভান্ডার এই পুঠিয়া রাজবাড়িটি দেখলেই বোঝা যায় চরম অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে।

কোনো সংস্কার নেই। অবশ্য সারা দেশের চিত্রটাই এমন।

পুঠিয়া রাজবাড়িতে বেড়াতে আসা দশনার্থীদের কৌতূহল মেটাতে নেই কোনো গাইডের ব্যবস্থা বা তথ্য কেন্দ্র।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের দিকে তাকালেই বুঝতে পারব, তারা ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে কত যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করে চলেছেন। আমরাই কেবল তার ব্যতিক্রম। নিজের স্বার্থে দখল করি, ধ্বংস করি। এমন যদি চলতে থাকে, তাহলে একদিন এসব ইতিহাস বিলুপ্ত হবে।

পুঠিয়া রাজবাড়িতে একদিন

পুঠিয়া রাজবাড়ির পথ

আমরা নাটোর হয়ে পুঠিয়া গিয়েছি। এখান থেকে সময় কম লাগে। বাসে মাত্র ১৫ মিনিট। রাজশাহী হয়েও পুঠিয়া যেতে পারেন। কলাবাগান, কল্যাণপুর বা গাবতলী থেকে ভোর পাঁচটায় শুরু হয়ে রাত একটা পর্যন্ত বাস পাওয়া যায়।

ন্যাশনাল ট্রাভেলসের বাসে যেতে আগেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। এ ছাড়া হানিফ ও শ্যামলী পরিবহনের বাস ও এই পথে চলে।

নাটোরে থাকতে পারেন হোটেল ভিআইপি কিংবা হোটেল আরপিতে। রেস্তোরাঁর প্রসঙ্গ এলে অনেকেই বলবেন ইসলামিয়া পচুর হোটেলের কথা। তা ছাড়া নয়ন হোটেলেও খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন। হোটেল ভিআইপিতে দেশীয় খাবারের সঙ্গে চায়নিজ খাবারের ব্যবস্থা আছে।

নাটোরে গিয়ে কাচাগোল্লা না খেয়ে আসবেন, তা কী হয়? কাচাগোল্লা খেয়ে সঙ্গে নিয়েও আসুন।

নাটোরে দেখারও আছে অনেক কিছু। রাজবাড়ি, দিঘাপাতিয়ায় উত্তরা গণভবন এবং চলন বিল এগুলোর অন্যতম।

আরও পড়ুন:
জাপানি ধনকুবেরের সঙ্গে বিনা খরচে চাঁদে যাবেন ৮ জন!
জাহাঙ্গীরের ক্যাকটাস প্রেম
বসন্তের মোহনীয় প্রকৃতি দেখতে ঘুরে আসুন তাহিরপুর
ডিজিটাল ট্রাভেল পাস চালু করছে এমিরেটস
কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনস চলাচল শুরু বিলাসবহুল ক্রুজ শিপের

মন্তব্য

আরও পড়ুন

ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল
From Saturday to Tourist Travel to St Martin

সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ শনিবার থেকে



সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ শনিবার থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সৈকতের একাংশ। ফাইল ছবি
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। পর্যটক যাতায়াত বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বিকল্প জীবিকার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।

সেন্টমার্টিনে যেকোনো প্রকার পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপটিতে শনিবার থেকে ৯ মাস কোনো পর্যটক যেতে পারবেন না।

দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলও বন্ধ থাকবে।

সরকারি বিধিনিষেধের অংশ হিসেবে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে স্থানীয় প্রশাসন।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে নিবন্ধনের নিয়ম চালু করে পর্যটক যাতায়াত সীমিত করা হয়।

ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হকের নেতৃত্বে সম্প্রতি পরিবেশবাদীদের ১০ সদস্যের একটি দল সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে এসেছেন। তারা জানান, পর্যটক সীমিত করায় দ্বীপে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার, নানাভাবে পরিবেশ দূষণ এবং নির্বিচারে প্রবাল, কোরাল,পাথর উত্তোলন কমে এসেছে।

অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক বাসসকে বলেন, ‌‘সেন্টমার্টিনে যে অবৈধ হোটেল-রিসোর্ট নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে, তা প্রশাসনের কারও অজানা নয়।

‘তারপরও আশার বাণী হচ্ছে গত ডিসেম্বর থেকে পর্যটক সীমিতকরণের পর সেন্টমার্টিন দ্বীপে একদিকে যেমন ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে গেছে, দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ অনেকটা দূষণমুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা একটা পরিচ্ছন্ন দ্বীপ পাচ্ছেন, যা সরকারের পাশাপাশি পরিবেশবাদীদের একটা বড় সাফল্য।’

ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধের পর দ্বীপ সম্পর্কে কী পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়।

তারা জানান, পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকার সময়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ কর্মসূচিতে দ্বীপটিকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে প্লাস্টিক বোতলসহ ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে অভিযান চালানো হবে। এর বাইরে পর্যটক নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎপাদন ও সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং একই সময়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করার পরিকল্পনাও রয়েছে প্রশাসনের।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এরপর কেউ সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন কি না, তা নজরদারিতে রাখা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে ২ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানেই সেন্টমার্টিনের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। পর্যটক যাতায়াত বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বিকল্প জীবিকার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গত দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এ সময় ভ্রমণের আগে অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করে ট্রাভেল পাস নিয়ে সেন্ট মার্টিন যেতে হয়েছে পর্যটকদের।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা দ্বীপটিতে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসবেন। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের জন্য সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আগে দ্বীপের বাসিন্দা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পরিবেশকর্মীসহ অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে। সেন্ট মার্টিনে অবৈধভাবে ২৩০টি হোটেল- রিসোর্ট-কটেজ রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে।

‘দ্বীপবাসীর কল্যাণে তাদের অবদান কতটুকু তা খতিয়ে দেখতে হবে। পর্যটন বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপের মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন:
সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে মাঝসাগরে জাহাজের ইঞ্জিন বিকল
ফের গোলার শব্দ, সেন্টমার্টিন রুটে বিকল্প পথে নৌ-চলাচল
সাজেকে গোলাগুলি, আটকা পড়েছেন পাঁচ শতাধিক পর্যটক
ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন রওনা ৬৫৩ পর্যটকের
পর্যটক সংকটে সেন্টমার্টিনে কোনো জাহাজ যায়নি

মন্তব্য

ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল
The ships engine broke down in the middle of the sea on the way back from St Martin

সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে মাঝসাগরে জাহাজের ইঞ্জিন বিকল

সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে মাঝসাগরে জাহাজের ইঞ্জিন বিকল ফাইল ছবি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ মো. আবুল কালাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া উপকূলবর্তী সাগরে জাহাজটি আটকা পড়ে। আটকাপড়া জাহাজটিতে অন্তত ৭১ জন পর্যটক রয়েছেন। তাদেরকে উদ্ধারে তৎপরতা চলছে।’

সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে কক্সবাজারে টেকনাফের বাহারছড়া উপকূলবর্তী সাগরে পর্যটকবাহী জাহাজ ‘ইঞ্জিন বিকল’ হয়ে আটকা পড়েছে।

খবর পেয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডসহ স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় আটকা পড়া পর্যটকদের উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া উপকূলবর্তী সাগরে জাহাজটি আটকা পড়ে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ মো. আবুল কালাম।

আটকাপড়া জাহাজটিতে অন্তত ৭১ জন পর্যটক ছিলেন বলে জানান তিনি।

জাহাজটির সংশ্লিষ্টদের বরাতে আবুল কালাম বলেন, সকালে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট থেকে এমভি গ্রীন লাইন নামের পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা হয়। দুপুরের আগে জাহাজটি সেখানে পৌঁছায়। পরে বিকেল ৪টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি ঘাট থেকে জাহাজটি ৭১ জন যাত্রী নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা করে।

ফেরার পথে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া উপকূলবর্তী সাগরে পৌঁছলে আকস্মিক ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এতে জাহাজটি সেখানে আটকা পড়ে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এসময় জাহাজটির ক্রুসহ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় কোস্টগার্ড স্টেশনকে অবহিত করে। প্রায় এক ঘণ্টা পর রাত সোয়া ৮টার দিকে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ নৌবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও স্থানীয়দের সহায়তায় পর্যটকদের উদ্ধারে তৎপরতা শুরু হয়।

টেকনাফের ইউএনও শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ, নৌবাহিনী, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা উপস্থিত আছেন। জাহাজটি যেহেতু একেবারে উপকূলে ভিড়েছে জোয়ারের পানি কমে গেলে তাদের উদ্ধার করা হবে।’

আটকা পড়া পর্যটকদের নিরাপত্তার কোনো ধরনের ঝুঁকি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পর্যটকরা নিরাপদে আছেন। যে কোনো ধরনের ঝুঁকি এড়াতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উদ্ধারের পর তাদের কক্সবাজার শহরে পৌঁছাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন রওনা ৬৫৩ পর্যটকের
পর্যটক সংকটে সেন্টমার্টিনে কোনো জাহাজ যায়নি
সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু বৃহস্পতিবার

মন্তব্য

ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল
More than five hundred tourists were trapped in Sajeke shells

সাজেকে গোলাগুলি, আটকা পড়েছেন পাঁচ শতাধিক পর্যটক

সাজেকে গোলাগুলি, আটকা পড়েছেন পাঁচ শতাধিক পর্যটক
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকা নিয়ন্ত্রণে বিগত কয়েকদিন ধরে সাজেক ও মাচালং এলাকায় সন্তু লারমা জেএসএস ও প্রসীত দলের ইপিডিএফ দফায় দফায় গোলাগুলিতে জড়িয়েছে। এতে একজনের প্রাণহাণির খবর পাওয়া গেলেও দুর্গম এলাকা হওয়ায় প্রশাসনের কেউ তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির অনুষ্ঠানে আসা না আসা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দুটি দলের মধ্যে কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় বন্দুকযুদ্ধ চলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির জেরে সাজেকে পাঁচ শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন।

মঙ্গলবার রাতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জোবায়দা আক্তার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বুধবার একদিনের জন্য সাজেক ভ্রমণে নিরুসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকা নিয়ন্ত্রণে বিগত কয়েকদিন ধরে সাজেক ও মাচালং এলাকায় সন্তু লারমা জেএসএস ও প্রসীত দলের ইপিডিএফ দফায় দফায় গোলাগুলিতে জড়িয়েছে। তবে আঞ্চলিক এই দু’দলের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় একজনের প্রাণহাণির খবর পাওয়া গেলেও দুর্গম এলাকা হওয়ায় প্রশাসনের কেউ তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

সাজেকে আটকা পড়া গাড়িচালকরা বলেন, সকালে খাগড়াছড়ি থেকে ২৭টি গাড়ি সাজেকে গেছে। এই গাড়িগুলোতে করে আসা চার শতাধিক পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন।

দুই আঞ্চলিক দলের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে এই গোলাগুলির ঘটনা বেড়ে যায়। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিকেলে পর্যটকবাহী কোনো গাড়ি সাজেক থেকে খাগড়াছড়িতে আসেনি।

সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা জানান, সাজেক ও মাচালং সড়কের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শীপপাড়া নামক এলাকায় এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। জায়গাটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। এই গোলাগুলির ঘটনার কারণে কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। রাতে পাঁচ শতাধিক পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন।

রাঙ্গামটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, দুই আঞ্চলিক দলের গোলাগুলির ঘটনায় পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বুধবার একদিন সাজেকে পর্যটক ভ্রমণকে নিরুসাহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যারা আছেন তাদেরকে নিরাপদে আজ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন:
পানছড়িতে দু’পক্ষে গোলাগুলি, ইউপিডিএফ সংগঠক নিহত
রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার 
সাজেকে আটকে পড়া ১৪০০ পর্যটককে উদ্ধার
অবরোধে সাজেকে আটকা পড়েছেন ১৪শ’ পর্যটক

মন্তব্য

ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল
No ships went to St Martin due to tourist crisis

পর্যটক সংকটে সেন্টমার্টিনে কোনো জাহাজ যায়নি

পর্যটক সংকটে সেন্টমার্টিনে কোনো জাহাজ যায়নি
চলাচলের অনুমতি পাওয়া জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাতযাপনে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই তখন দ্বীপে পর্যটকের সংকট থাকবে না। এ কারণে ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে আজ বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের কথা থাকলেও যাত্রী সংকটের কারণে কক্সবাজার থেকে কোনো জাহাজ ছাড়েনি।

চলতি মৌসুমে প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া জাহাজ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে।

চলাচলের অনুমতি পাওয়া জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়ায় বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট দিয়ে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু যাত্রী সংকটের কারণে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়া সম্ভব হয়নি।

কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৩৫০ জন। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেন্টমার্টিন যেতে ইচ্ছুক যাত্রীর টিকিট বুকিং শতজনেও গড়ায়নি। এতে যাত্রী সংকটের কারণে আজ বৃহস্পতিবার জাহাজটি না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মূলত নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাতযাপনে নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রবাল দ্বীপটি ভ্রমণে পর্যটকদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা কাজ করছে বলে মনে করেন নুর মোহাম্মদ।

তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাতযাপনে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই তখন দ্বীপে পর্যটকের সংকট থাকবে না। এ কারণে ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবিতে কক্সবাজারে সেন্টমার্টিনবাসীর সড়ক অবরোধ
সেন্ট মার্টিনে সীমিত হলো পর্যটক

মন্তব্য

ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল
St Martins people blocked the road after coming to Coxs Bazar city

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবিতে কক্সবাজারে সেন্টমার্টিনবাসীর সড়ক অবরোধ

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবিতে কক্সবাজারে সেন্টমার্টিনবাসীর সড়ক অবরোধ কক্সবাজার শহরের কলাতলী পয়েন্টে সড়কে অবস্থান নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীর প্রতিবাদ। ছবি: নিউজবাংলা
সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণ ও রাতযাপন নিষিদ্ধসহ সব বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বীপটির বাসিন্দারা কক্সবাজার শহরের কলাতলী মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।

কক্সবাজার শহরে এসে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা। দেশের সর্বদক্ষিণে একমাত্র প্রবাল দ্বীপটিতে পর্যটক সীমিতকরণ ও রাতযাপন নিষিদ্ধসহ সব বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের দাবিতে তারা কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে পড়েন।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে কক্সবাজার শহরের প্রবেশমুখ কলাতলীর ডলফিন মোড়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ঘটনাস্থলে আসেন কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরীসহ প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবিতে কক্সবাজারে সেন্টমার্টিনবাসীর সড়ক অবরোধ
অবরোধের কারণে কক্সবাজার শহরে যানজট দেখা দেয়। ছবি: নিউজবাংলা

টানা আলোচনার পর দাবি পূরণে প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

কলাতলী মোড় কক্সবাজার শহরের অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা এবং প্রবেশমুখ। এই পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচির কারণে চারদিকে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র যানজট। শত শত যানবাহন আটকা পড়ায় পর্যটক ও স্থানীয়রা দুর্ভোগে পড়েন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ী মাওলানা আব্দুর রহমান খান, মোহাম্মদ আলম, সরওয়ার কামাল, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অফ কক্সবাজার (টুয়াক) একাংশের সভাপতি রেজাউল করিমসহ অনেকে।

কর্মসূচিতে দ্বীপবাসীর পাশাপাশি হোটেল-মোটেল, রেঁস্তোরা ও ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

টুয়াক একাংশের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ সম্পর্কে তারা সম্যক অবগত। পরিবেশ রক্ষা করতে দ্বীপবাসীকে সঙ্গে নিয়েই পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সরকার পরিবেশ রক্ষার দোহাই দিয়ে পর্যটক গমনাগমনে বিধি-নিষেধ আরোপ করে পর্যটন শিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। এতে দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকাসহ পর্যটনের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে দ্বীপের মানুষের মাঝে অভাব-অনটনের পাশাপাশি অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন।

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেন, নভেম্বর মাসে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জটিলতায় এখনও সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। এতে চলতি মৌসুমে দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়াত নিয়ে অনিশ্চিয়তা কাটেনি। সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম হুমকির মুখে দ্বীপবাসীসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সাড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষ।

পরিবেশ রক্ষা করেই পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সব মহলের সমন্বয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।

পর্যটন ব্যবসায়ী মাওলানা আব্দুর রহমান খান জানান, প্রশাসনের পক্ষে দ্বীপ নিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। বুধবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত না জানালে আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ৪টার পর আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

কক্সবাজার সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী জানান, দ্বীপের বিষয় নিয়ে ঢাকায় বৈঠক চলছে। আন্দোলনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত দ্বীপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানানোর পর আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিকেল ৪টার পর সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

আরও পড়ুন:
রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার 
সেন্ট মার্টিনে সীমিত হলো পর্যটক
সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে রোহিঙ্গা যুবক গুলিবিদ্ধ

মন্তব্য

ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল
Sylhet Indiscriminate looting of stones faded nature

নির্বিচারে পাথর লুট, বিবর্ণ প্রকৃতির লীলাভূমি

নির্বিচারে পাথর লুট, বিবর্ণ প্রকৃতির লীলাভূমি সাদা পাথরে সমৃদ্ধ স্থান বলেই নামকরণ হয়েছে সাদাপাথর। অথচ সিলেটের অন্যতম আকর্ষণীয় এই পর্যটন স্পটে সেই পাথরই লুট হয়ে গেছে। ছবি: নিউজবাংলা
সিলেটের জাফলং ও সাদাপাথর এলাকা থেকে ৫ আগস্টের পর দুশ’ কোটি টাকার পাথর লুট হয়ে গেছে। পাথর উত্তোলনের ওপর প্রশাসনের দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ফের আন্দোলনে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে প্রকৃতি রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আপত্তি জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।

দেশের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণীয় এলাকা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত জাফলংয়ে সারাবছরই থাকে পর্যটকের ভিড়। তবে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের ফলে দিন দিন সৌন্দর্য হারিয়ে মলিন হয়ে পড়ে জাফলং।

কেবল জাফলং নয়, পাথর কোয়ারি হিসেবে পরিচিত সিলেটের পর্যটন আকষর্ণীয় আরও পাঁচটি এলাকারও একই অবস্থা।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এসব এলাকায় চলছে নির্বিচারে পাথর লুট। কেবল জাফলং আর সাদাপাথর থেকেই লুট হয়েছে দুশ’ কোটি টাকার পাথর। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান সত্ত্বেও পাথর লুট থামানো যাচ্ছে না।

নির্বিচারে পাথর লুট, বিবর্ণ প্রকৃতির লীলাভূমি
সিগনাল পয়েন্টের চিত্র। ছবি: নিউজবাংলা

পরিবেশের সুরক্ষা এবং পর্যটকদের আকর্ষণ ধরে রাখতে ২০১৬ সালে পাথর উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনা জারি করে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। তারও আগে ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এ-সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে পাথর উত্তোলন ও নানাবিধ কার্যকলাপের ফলে সিলেটের জাফলং-ডাউকি নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন। ভবিষ্যতে এই সংকট আরও ঘণীভূত হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যেকোনো খনিজ সম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ।’

জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম কিছুদিন প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কেবল গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও সাদাপাথর পর্যটন এলাকা থেকেই প্রায় দুশ’ কোটি টাকার পাথর নিয়ে গেছে লুটপাটকারীরা। এই লুটপাটে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে লুটপাটের এই মচ্ছবের পরও থেমে না থেকে জাফলং-সাদাপাথরসহ সব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আন্দোলনে নেমেছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এ জন্য নতুন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে চলেছেন তারা।

অপরদিকে, পরিবেশকর্মীদের পক্ষ থেকে পাথর লুটপাট বন্ধ ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিবেশ ও পর্যটন সুরক্ষার দাবি উঠেছে। ফলে সরকার পরিবর্তনের পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে- পাথর উত্তোলন নাকি পরিবেশ ও পর্যটনের সুরক্ষার পথে হাঁটবে সরকার!

নির্বিচারে পাথর লুট, বিবর্ণ প্রকৃতির লীলাভূমি

মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছর বন্ধ ছিলো পাথর উত্তোলন। ফলে জাফলংয়ের পিয়াইন ও কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর উৎসমুখে (সাদাপাথর) বিপুল পরিমাণ পাথর মজুদ হয়েছে। স্রোতের তোড়ে উজান থেকে আসা পাথর স্তরে স্তরে মজুদ হয় দুই নদীর উৎসমুখে। এসব পাথরের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে জাফলং ও সাদাপাথরে পর্যটক সমাগম বাড়ছিলো।

তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার সময়টাকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়ে এই দুই জায়গা থেকে নির্বিচারে পাথর লুটপাট চালানো হয়। ৫ আগস্ট-পরবর্তী তিন দিনে দুই কোয়ারি থেকে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় লুট হয়েছে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার পাথর।

এই সময়টাতেহাজার হাজার শ্রমিক লাগিয়ে প্রভাবশালীরা রাত-দিন পাথর উত্তোলন করেন। লুটের কারণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে এই দুই পর্যটন কেন্দ্র। পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পদ হারিয়েছেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ এক নেতা। এছাড়া বিএনপির দুই নেতাসহ ১৪৪ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর দুটি মামলা করেছে।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, সরকার পতনের পর প্রথম তিনদিন পুলিশসহ অনান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিলো। এই সুযোগে জাফলং থেকে প্রায় ১২০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে।

আর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানার ভাষ্যমতে, সাদাপাথর থেকে লুট হয়েছে ২০ কোটি টাকার পাথর। যদিও স্থানীয়দের দাবি, দুই কোয়ারি থেকে ১৪০ কোটি নয়, দু’শ কোটি টাকার উপরে পাথর লুট হয়েছে। কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু লুটের ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় তিনটি ও কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হলেও হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই কোয়ারিতে বালু ও পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীদের বেশিরভাগ বিএনপির রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট। জাফলংয়ের পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের প্রমাণ পেয়ে দলীয় পদ হারান জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ।

এছাড়া পাথর লুটের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সদ্য অপসারিত চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্সের নাম জড়িয়েছে।

জাফলংয়ে পাথর লুটের ঘটনায় বিএনপির এই তিন নেতাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট থানায় একটি ও পরিবেশ আদালতে অপর মামলা হয়েছে। এছাড়াও জাফলং, সাদাপাথর, লোভছড়া, ভোলাগঞ্জ ও শাহ আরেফিন টিলায় প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে পাথর জব্দ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান, মামলা আর অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ- কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পাথর লুট।

নির্বিচারে পাথর লুট, বিবর্ণ প্রকৃতির লীলাভূমি
জাফলংয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান। ছবি: নিউজবাংলা

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে গত ৬ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনেও এমন অভিযোগ করা হয়। মো. ইসমাইল হোসেন নামে জাফলংয়ের এক ব্যক্তি ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মদদে চলছে পাথর লুট।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকেই পাথর উত্তোলন চালুর দাবিতে আন্দোলনে নামেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তবে তৎকালীন সরকার এমন দাবি আমলে নেয়ৱনি। নতুন সরকার আসার পর আবার একই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এই দাবিতে গত ২৩ অক্টোবর জাফলংয়ে বিশাল মানববন্ধন করা হয়। এতে বিভিন্ন পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সমিতি অংশ নেয়।

পাথর উত্তোলনের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে জাফলং ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সামাজিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন খান আনু বলেন, ‘জাফলংসহ সব পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন, সংগ্রহ ও সরবরাহ করে দেশের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই ঢলের সঙ্গে প্রচুর পাথর ভারত থেকে এই এলাকায় এসে জমা হয়। এসব পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর উৎসমুখ বন্ধ হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে ঘন ঘন বন্যা দেখা দিচ্ছে। তাই পরিবেশের স্বার্থেই পাথর উত্তোলন করা প্রয়োজন।’

জাফলং স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত বলেন, ‘পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় প্রতিবছরই ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ পাথর আমদানি করতে হচ্ছে। এতে দেশে ডলার সংকট আরও বাড়ছে।’

তবে ব্যবসায়ীদের এসব দাবির সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ, জাফলংয়ে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও পাথর ভাঙার মেশিন নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সিলেটের পরিবেশ কর্মীরা।

২৩ অক্টোবর এসব দাবিতে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

নির্বিচারে পাথর লুট, বিবর্ণ প্রকৃতির লীলাভূমি
বেলা-র পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার দাবি। ছবি: নিউজবাংলা

এ প্রসঙ্গে বেলা’র সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে লুটপাট করে জাফলং ও সাদপাথরকে পাথরশূন্য করে ফেলা হয়েছে। এখন আবার পাথর উত্তোলনের দাবিতে মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের এই দাবি মানা হলে এসব পর্যটন এলাকা আবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।’

পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশারুল কবির বলেন, ‘দেশে চাহিদার খুব স্বল্পসংখ্যক পাথর সিলেটের কোয়ারিগুলোতে পাওয়া যায়। ফলে বড় অংশই ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। তাই পাথর কোয়ারি খুলে দিলে আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে এমন দাবি সত্য নয়। কোয়ারি সচল হলে কিছু মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। কিন্তু দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।’

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহমুদ মুরাদ জানিয়েছেন, পাথর কোয়ারি সচল করা হবে কী না এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে এখন পর্যন্ত সরকার থেকে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফলে যারা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে এখন নিয়মিতই অভিযান চালানো হচ্ছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জাফলং দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলোর একটি। এখানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে পর্যটনকেন্দ্রটির সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশও হুমকির মুখে। ইসিএ ঘোষিত জাফলং থেকে সব ধরনের বালু ও পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও একটি গোষ্ঠী বালু-পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে জাফলংয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।’

আরও পড়ুন:
টানা ২৩ দিন পর সিলেট দিয়ে পাথর আমদানি শুরু

মন্তব্য

ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল
Japan Visa Application Center opened in Dhaka

ঢাকায় জাপান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার চালু

ঢাকায় জাপান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার চালু
ভিএফএস গ্লোবাল এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আমরা আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে আমাদের জাপান ভিসা সেবা এখন বাংলাদেশেও পাওয়া যাবে। আবেদনকারীরা ভিসা আবেদন কেন্দ্রে গিয়ে তাদের যাত্রা নির্বিঘ্নে শুরু করতে পারবেন।’

ঢাকায় জাপান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের (ভ্যাক) কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার এই কার্যক্রম চালু হয়েছে বলে জানিয়েছে ভিএফএস গ্লোবাল।

আবেদনকারীদের ‘কার্যকর ও সুবিন্যস্ত’ আবেদন জমা দেয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে এই কেন্দ্র।

ভিএফএস গ্লোবাল এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আমরা আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে আমাদের জাপান ভিসা সেবা এখন বাংলাদেশেও পাওয়া যাবে। আবেদনকারীরা ঢাকায় অবস্থিত আমাদের অত্যাধুনিক ভিসা আবেদন কেন্দ্রে গিয়ে তাদের যাত্রা নির্বিঘ্নে শুরু করতে পারবেন।’

মন্তব্য

p
উপরে