১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট। ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওগামী বাসে উঠেছিলেন ১৮ বছরের তরুণী ইয়াসমিন আক্তার। গন্তব্য দিনাজপুর শহর।
ভোরে হাছনা এন্টারপ্রাইজের সে নাইট কোচের সুপারভাইজার ইয়াসমিনকে নামিয়ে দিয়েছিলেন দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দশমাইল মোড়ে। তিনি মোড়ের এক চায়ের দোকানদারকে বলে দিয়েছিলেন, সকাল হলে ইয়াসমিনকে যেন তুলে দেয়া হয় দিনাজপুর শহরগামী বাসে।
সুপারভাইজারের কথামতো চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন ইয়াসমিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হয় রাতে টহল দেয়া পুলিশের একটি পিকআপভ্যান। তাতে থাকা পুলিশ সদস্যরা ইয়াসমিনকে নানা প্রশ্ন করেন। এর একপর্যায়ে তরুণীকে শহরে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ভ্যানে তুলে নেন তারা।
সে ভ্যানে ওঠাই কাল হয় ইয়াসমিনের। পুলিশ সদস্যরা দশমাইল এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। তারা তরুণীর মরদেহ ফেলে রেখে যায় দিনাজপুর শহরের রানীগঞ্জ মোড়ে ব্র্যাক কার্যালয়ের সামনের রাস্তায়।
বেলা বাড়তেই জানাজানি হয় ঘটনা। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুর। সড়কে নেমে আসে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সভা-সমাবেশ করে তারা দাবি জানায় দোষীদের কঠোর শাস্তির।
মিছিলে গুলি
ঘটনার দুই দিন পর ২৬ আগস্ট রাতে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদী হাজারো জনতা। প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ২৭ আগস্ট সকালেও। দুপুরে জড়িতদের শাস্তি দাবিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিতে যাওয়া মানুষের মিছিলে ঢেকে যায় সড়ক।
সে মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ; নিহত হন সামু, কাদের, সিরাজসহ সাতজন। আহত হন তিন শতাধিক মানুষ। পুরোপুরি ভেঙে পড়ে শহরের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে জারি হয় ১৪৪ ধারা; নামানো হয় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর। একযোগে প্রত্যাহার করা হয় দিনাজপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ১৩ উপজেলার সব পুলিশ সদস্যকে।
এর দুই বছর পর ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট রায় আসে ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার। রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মতিন পুলিশের এএসআই মঈনুল হক, কনস্টেবল আবদুস সাত্তার ও পিকআপভ্যানের চালক অমৃত লাল বর্মণকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
আলামত নষ্ট, সত্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগে এএসআই মঈনুলকে আরও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক।
তার দেয়া সে রায় কার্যকর হয় আট বছর পর। রংপুর জেলা কারাগারে ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় এএসআই মঈনুল, কনস্টেবল আবদুস সাত্তারের। ২৯ সেপ্টেম্বর ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয় পিকআপ ভ্যানের চালক অমৃত লাল বর্মণকে।
এ দণ্ড কার্যকরে ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমন হয় ইয়াসমিনের পরিবারের, কিন্তু আক্ষেপ রয়ে যায় আহতদের। ইয়াসমিন হত্যার এত বছর পরও কেউ খোঁজ রাখে না বলে অভিযোগ তাদের।
সে অভিযোগকারীদের একজন দিনাজপুর শহরের রামনগর এলাকার মাসুদ রানা। ইয়াসমিন হত্যার বিচার দাবিকারীদের দিকে পুলিশ যে গুলি ছোড়েছিল, তার একটি লেগেছিল তার বাম কানের কাছে।
সেদিনকার ঘটনা স্মরণ করে মাসুদ নিউজবাংলাকে জানান, ২৭ আগস্ট কয়েক হাজার মানুষের বিক্ষোভ মিছিলটি জেলা কারাগারের সামনে পৌঁছালে পুলিশ লিলি মোড় থেকে অতর্কিত গুলি ছোড়ে। তিনি তখন জেল রোডের মোটরসাইকেলের দোকানে মেরামতের কাজ করছিলেন। পুলিশের গুলি এসে বিদ্ধ হয় তার গায়ে।
পরে আশপাশের লোকজন মাসুদকে উদ্ধার করে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের দিকে ছোটেন। সেখানেও পুলিশের বাধা। পৌরসভার সামনে থেকে একদল পুলিশ মাসুদদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। সে গ্যাসে অজ্ঞান হয়ে পড়েন মাসুদ। শেষতক হাসপাতালে যেতে পেরেছিলেন তিনি।
ঘটনার এত বছর পর এসে আক্ষেপ করে মাসুদ বলেন, ‘পুলিশের গুলি ও টিয়াল শেলের আঘাতে আহত হয়ে আমি প্রায় ৯ মাস হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহায়তা পাই নাই।
‘আমি বর্তমানে বাহাদুর বাজারে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করি। ঠিকমতো কাজও করতে পারি না। হামলায় আহত হলাম, অথচ আজ পর্যন্ত আমার কেউ খোঁজ নিল না।’
‘শুধু আমিই না, আমার মতো বহুজন আহত হয়ে খুব কষ্টে দিনযাপন করছে। বছর ঘুরে আসে। নেতারা দিবস উপলক্ষে ভাষণ দেন, কিন্তু আমাদের ব্যাপারে কেউ চিন্তা করে না’, বলেন আড়াই দশকের ক্ষত বয়ে বেড়ানো মাসুদ।
ইয়াসমিন ট্রাজেডির পর কেমন আছেন দিনাজপুরের নারীরা?
দিনাজপুর মহিলা পরিষদের সভাপতি কানিজ রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ সারা দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালিত হলেও দিনাজপুরে পালিত হচ্ছে ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস। ওই ঘটনার ২৬ বছর পার হলেও সমাজে এখনও নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
‘মূলত আইনের সঠিক প্রয়োগ ও আইনের বিভিন্ন ফাঁকফোকর দিয়ে দ্রুত জামিনে বের হয়ে যাওয়ায় নারীর প্রতি নির্যাতন বেড়েছে। নারী নির্যাতনকারীদের দ্রুত বিচার হলে এটি অনেকটা কমে যাবে বলে আমি মনে করি।’
ইয়াসমিনকে ধর্ষণ ও হত্যা বিচারের দাবিতে আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইয়াসমিন হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় যে আন্দোলন হয়েছিল, তা পুরো দিনাজপুরবাসীর অবদান। যখন দিনাজপুরে তীব্রতর আন্দোলন চলছিল, সব অচল হয়ে পড়েছিল, ঠিক সেই সময় আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনাজপুর এসেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘মূলত আন্দোলনটি ছিল নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ আন্দোলনের একটি মাইলফলক। আন্দোলনটি দিনাজপুরবাসীর সম্মান, মর্যাদা রক্ষার একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছিল।’
প্রতি বছরই নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর দিনাজপুর দশমাইলের সাধনা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে ইয়াসমিন স্মৃতি পরিষদ। এ ছাড়া ইয়াসমিনের কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল হবে।
ইয়াসমিনের মা শরীফা বেগম দোয়া অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নিজবাড়িতে দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করবেন খাবার।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য