‘বইষ্যা নামলে মোর ঘরের চালের যে কয় জায়গা দিয়া পানি পরে, হেই পানি ধরার লইগ্যা মোর ঘরে হেতডি হাঁড়ি-পাতিলও নাই।’
আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন কিস্তাকাঠি আবাসনের ২২/৮ নম্বর ঘরের নাসিমা বেগম।
২১/৫ চা-বিক্রেতা নূপুর বেগম। তিনি শহর থেকে শাড়ি কিনে আবাসনে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে সংসার চালান। তার ঘরটির চাল এমনভাবে ঝাঁজরা হয়ে গেছে যে এখন ভিতর থেকে আকাশ দেখা যায়। নূপুর গত বর্ষায় অন্যত্র গিয়ে থেকেছেন। চালের টিনের যে অবস্থা তার চেয়ে তার ঘরের বেড়ার অবস্থা আরও খারাপ। যখন-তখন তার ঘরের ভিতর সাপ ঢোকে বলেও জানান তিনি।
এমন বাস্তবতায় দিনাতিপাত করছেন ঝালকাঠির উত্তর কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা। নির্মাণের পর এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সংস্কার না করায় অধিকাংশ ঘরই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব ঘরের টিনের চালাগুলো মরিচা ধড়ে ঝাঁজরা হয়ে গেছে। চালার ছিদ্র দিয়ে দেখা যাচ্ছে আকাশ।
এ ছাড়া বেশির ভাগ শৌচাগার ও গোসলখানা এখন ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট পাকা না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এখানকার বসবাসকারীরা।
২০০৭ সালে ঝালকাঠি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৫ একর খাসজমিতে স্থাপন করা হয় উত্তর কিস্তাকাঠির এই আবাসন প্রকল্পটি। তিনটি ব্যারাকে নির্মাণ করা হয় ৪৫০টি ঘর। যা বরাদ্দ দেয়া হয় ৪৫০টি ভূমিহীন নিম্ন আয়ের পারিবারকে। সংস্কার না হওয়ায় প্রকল্পের ৪৫০টি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। টিনের চালা এবং বেড়ায় হওয়া ছিদ্র পলিথিন দিয়ে ঢেকে পানি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন তারা।
প্রতি ১০টি পরিবারের জন্য ২টি শৌচাগার ও ২টি করে গোসলখানা রয়েছে এখানে। শৌচাগারগুলো এখন ব্যবহারের অযোগ্য। পয়োনিষ্কাশনের জন্য ব্যারাকে কোনো ড্রেন না থাকায় ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি যাচ্ছে এখানকার একমাত্র পুকুরটিতে। আর দূষিত পুকুরের পানি ব্যবহার করে বাসিন্দারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
দুই-একজন সচ্ছল বাসিন্দা ঘর মেরামত করে বসবাস করলেও নিম্ন আয়ের অসহায় বাসিন্দারা সংস্কার না করেই দিনের পর দিন কষ্ট করে কাটাচ্ছেন।
ঝালমুড়ি বিক্রেতা ৬৮ বছর বয়সী খলিল সিকদার আবাসনের ২ নম্বর ব্যারাকের ১০ নম্বর ঘরে থাকেন। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে মাঠের চেয়ে আমার ঘরে পানি বেশি ওঠে। পলিথিন টাঙিয়েও বৃষ্টি ঠেকানো যায় না।’
১২ বছরে একবার প্রত্যেকটি ঘরে দুটি করে নতুন টিন দিয়ে মেরামত করা হয়েছিল। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্ন।
৩ নম্বর ব্যারাকের ২০/৫ নম্বর ঘরের বাসিন্দা শহিদ হাওলাদার বলেন, ‘পেত্তেক ঘরে ৩ বান হইরা টিনের প্রয়োজন। অথচ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মাসে ঘরপ্রতি দু’হান হইরা টিন লাগাইয়া দেছেলে সদর উপজেলা টিএনও (ইউএনও)।’
বাসিন্দাদের দুর্দশা নিয়ে উত্তর কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প সমবায় সমিতি-১-এর সাধারণ সম্পাদক মন্টু খলিফা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় আবাসনের এসব সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অনেক সময় বিভিন্ন কর্মকর্তা এখানে পরিদর্শনে এসে সংস্কারের কথা বলে চলে যান।’
জরাজীর্ণ ঘর তো আছেই, এ ছাড়া এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে নেই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। গোরস্থানও নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় তাদের শহরে গিয়ে উঠতে হয়। আর এখানে বসবাসরত সাড়ে ৪০০ পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে দাফনের জন্য যেতে হয় ছয় কিলোমিটার দূরে পৌর গোরস্থানে।
এরই মধ্যে অনেক বাসিন্দাই আশ্রয়ণ কেন্দ্র ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বাধ্য হয়ে যারা বসবাস করছেন তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। তাদের দাবি দ্রুত প্রতিটি ঘরের চালের টিন পরিবর্তন করে নতুন করে চালা তৈরি করে দেয়াসহ শৌচাগার ও গোসলখানাগুলো সংস্কার করা।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প অনেক পুরোনো। তাই প্রতিটি ঘরের চাল পরিবর্তন করে নতুন টিন না দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। ইতোমধ্যে সংস্কারের জন্য চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক জোহর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ নিরসনের জন্য যথাসাধ্য কাজ করা হবে। বিষটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ডিসি আরও বলেন, শুধু কিস্তাকাঠিই নয়, ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও যেসব আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী সবগুলো ঘরই মেরামতের জন্য বরাদ্দ চেয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:নাটোরের লালপুরের গোধড়া এলাকায় প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুই বছরের মেয়ে শিশুসহ বাবা নিহত হয়েছেন।
উপজেলার গোধড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় শিশুটির মা ও গাড়ির চালক গুরুতর আহত হন।
নিহত দুজন হলেন বগুড়া সদরের কইতলা এলাকার বাসিন্দা শাহরিয়ার শাকিল ও তার মেয়ে সুমাইরা আক্তার।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন জানান, নাটোর-পাবনা মহাসড়কের গোধড়া এলাকায় যশোর থেকে বগুড়াগামী দ্রুতগতির একটি প্রাইভেট কার মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যানকে রক্ষা করতে গিয়ে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে প্রাইভেট কারটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হন দুজন।
পুলিশ জানায়, শাহরিয়ার শাকিল যশোরের কর্মস্থল থেকে পরিবার নিয়ে ঈদের ছুটিতে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
রাজশাহীর পুঠিয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন।
উপজেলার বেলপুকুর রেলগেট এলাকায় বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন নাটোর সদর উপজেলার চাঁদপুর বাজারের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩) ও একই এলাকার সোলাইমান ইসলামের ছেলে জহুরুল ইসলাম (৩৫)।
রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, ‘ইফতারের আগ মুহূর্তে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেন বেলপুকুর রেলক্রসিংয়ের কাছাকাছি এলে ব্যারিকেড ফেলা হয়। কিন্তু মোটরসাইকেলটি ব্যারিকেডের নিচ দিয়ে ঢুকে লাইনে উঠে যায়। আর তখনই ট্রেন চলে এলে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হন।’
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে প্রতিবেশী এক মুদি দোকানিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঘটনার দিন মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারের পর ৬৫ বছর বয়সী আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানতে পারি। খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়।
‘রাত ৯টার দিকে অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পরে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী দাবিদার শিশুটির ফুফু জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাদের বাড়ির পাশের মুদি দোকানে যায় শিশুটি। দোকানের মালিক শিশুটিকে চকলেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দোকানের ভেতরে নিয়ে যান। সে সময় তিনি শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। হঠাৎ তিনি (ফুফু) সেখানে উপস্থিত হলে হাতেনাতে বিষয়টি ধরে ফেলেন।
ফুফুর অভিযোগ, তাৎক্ষণিকভাবে তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে উল্টো মুদি দোকানি ও তার ছেলেরা তার ওপর চড়াও হন। অভিযুক্তের পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ধর্ষণের অভিযোগ করে ভুক্তভোগীরা উল্টো নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
শিশুটি বলে, ‘শুধু আমি একা না, দাদার দোকানে যারাই যায় আশেপাশে কেউ না থাকলে তিনি বাচ্চাদের তার কোলে নিয়ে বসায়। বিস্কুট দেয়, বেলুন দেয়। তারপর শরীরে হাত দেয়।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মুদি দোকানির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আগেও পাওয়া গিয়েছিল। এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।
বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত দোকানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন।
ঢাকা জেলার আদালত পরিদর্শক আকতার হোসেন বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন মো. সজিব, মো. রাকিব ও শাওন ওরফে ভ্যালকা শাওন। এ ছাড়া লাশ গুমের ঘটনায় তাদের তিনজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
এদিকে আলী আকবর ও মো. রিয়াজ নামে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দেন আদালত।
রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা তিন আসামি রাকিব, রিয়াজ ও শাওনকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে দণ্ডিত রাকিব এবং শাওনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডিত সজিব পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১১ জুন কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আঁটিবাজার এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছিল। ডিউটি চলাকালে সকাল পৌনে ৮টার দিকে জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে সংবাদ পায়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পশ্চিম বামনসুর জামে মসজিদের সামনে পুকুরের পানিতে একজনের লাশ পানিতে ভাসছে। পুলিশ সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
পরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় পুলিশ মামলা করে তদন্ত শুরু করে। প্রথমে ভুক্তভোগীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার বান্ধবী বৃষ্টি আক্তার সাক্ষী হিসেবে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানান, এটা তার বান্ধবী মারিয়ার লাশ।
স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ শাওনকে গ্রেপ্তার করে। শাওন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। সেখানে জানান, তিনি, মো. রাকিব, মো. সজিব, মো. আলী আকবর মিলে ভিকটিম মারিয়াকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পশ্চিম বামনসুর জামে মসজিদের পানিতে ফেলে রাখেন। পরে রাকিব এবং সজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারাও একই কথা বলে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক অলক কুমার দে। মামলার বিচার চলাকালে ১৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও তাকে বিশ্রামে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর।
তিনি বলেন, ‘তবে তার স্বাভাবিক কাজকর্মে—অর্থাৎ খেলাধুলায়—ফিরতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।’
সাভারের কেপিজি হাসপাতালে মঙ্গলবার দুপুরে তামিমকে দেখে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘তামিম ইকবালকে নরমাল কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য অন্তত তিন মাস সময় দিতে হবে। মানে খেলাধুলায়। এ ছাড়া তিনি বাসায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ও হাঁটাচলা করবেন সপ্তাহখানেক। তাকে বিশ্রামেই থাকতে হবে। যদিও সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সব রোগ সবসময় ধরা পড়ে না।
‘প্রথমিক ইসিজিতে কোনো চেঞ্জ আসেনি। আজ সকালে ইকো (ইকোকার্ডিওগ্রাম) করা হয়েছে। সবকিছুই ভালো। কিন্তু তারপরও যেকোনো সময় যেকোনো জিনিস ঘটে যেতে পারে। এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তার পরিবারের সাথে আলাপ করেছি। এখন তাদের সিদ্ধান্ত আমাদের সিদ্ধান্ত।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সম্পদ তামিম ইকবালের শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করেন গতকাল সাড়ে ১০টায়। তিনি এখানে আসার পর ডাক্তাররা তাকে কার্ডিয়াক প্রবলেম হিসেবে সন্দেহ করেছেন। প্রাথমিকভাবে কিছু চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তাকে এখন মুভ (নিয়ে যাওয়া) করানো ঠিক হবে না বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
‘তিনি একজন জাতীয় সেলিব্রেটি। নিজের অবস্থান বিবেচনা করে তিনি তাড়াতাড়ি ঢাকায় শিফট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হেলিকপ্টারের ব্যবস্থাও হয়েছিল। আমাদের এখানকার দুজন ও ওখানকার দুজন মিলে চারজন চিকিৎসক মিলে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তখন তার হার্ট অ্যাটাক হয়, তার নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায়নি। তারপর ডাক্তারররা সিপিআর দিয়েছেন। হার্ট বন্ধ হয়ে গেলে চালু করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।’
অধ্যাপক আবু জাফর বলেন, ‘আপনাদের সবার দোয়ায় আমাদের জাতীয় দলের ক্রিকেট তারকা তামিম ইকবাল এখন সুস্থ। তার সার্বিক অবস্থা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু কখনও কখনও যে প্রাইমারি পিসিআই হয়েছে, এটা একটা ফরেন বডি, এটা রিঅ্যাকশন হতে পারে, হার্ট নানাভাবে এটার ওপর অ্যাকশন ও রিঅ্যাকশন হতে পারে।
‘রে রিংটা লাগানো হয়েছে, সেটা সামায়িকভাবে, কোনোভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই ঝুঁকি রয়েছে। যদিও সেই পরিসংখ্যান খুবই কম।’
তিনি বলেন, ‘তার পরিবারের সদস্যদের সেটা বলেছি। চিকিৎসক যারা ছিলেন, ডা. মারুফ, তাদের পরিশ্রমে, আল্লাহর বিশেষ রহমতে তাকে আমরা একটি নবজীবন দিতে পেরেছি। সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা যেখানে সম্ভব, সেখানে মানুষ যেতে চাইবে। কিন্তু তার যাওয়াটা কতটা নিরাপদ, সে বিষয়ে আমরা তার পরিবারের সঙ্গে আলাপ করেছি। তার এই মুহূর্তে শিফট করায় ঝুঁকি আছে।’
এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ঝুঁকিটা কম, এক শতাংশ। যদি ঘটে যায়, তখন ঝুঁকিটা শতভাগ। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা তার এখানে থাকা উচিত। তার পর তিনি অন্য কোথাও যেতে পারবেন।’
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘তামিমের যেটা হয়েছিল, অ্যাকিউট হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে সেটা কিন্তু হয়। আমরা দেখেছি, অ্যাকিউট হার্ট অ্যাটাক হলে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগী কখনও হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। তার হার্ট অ্যারেস্ট হয়। এখানেও তাই হয়েছে। কিন্তু তার সাথে চিকিৎসকরা ছিলেন, সাথে সাথে কার্ডিয়াক ম্যাসেজ শুরু হয়েছিল। হার্ট নিজে পাম্প করছে না, জোর করে কিছুটা পাম্প করিয়ে রাখা হয়েছিল। তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
‘তার বন্ধ আর্টারি খুলে দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, অ্যাকিউট এপিসোডটা গেছে। ৩২ মিনিটের মতো তাকে কার্ডিয়াক প্লেসে দিতে হয়েছে। সেখান থেকে উঠে আসার সৌভাগ্য সবার হয় না। যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়ার কারণেই তামিমকে আমরা ফিরে পেয়েছি। কতটা ফেরত পেয়েছি, আজ সকালবেলায় ইকোকার্ডিয়াক করে হার্টের ফাংশন দেখা হচ্ছিল, দেখে মনে হয়, কোনো সমস্যা নেই, একেবারে তরতাজা। মনে রাখতে হবে, এটিই একটি ছদ্মবেশ। হার্ট আবার অ্যাবনরমাল হতে পারে। তবে শঙ্কা অবশ্যই কমে গেছে।’
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তবে ওটা হয়েছিল, কারণ একটা বড় আর্টারি বন্ধ ছিল। খাবার নেই, অক্সিজেন নেই, ওই টিস্যুটা ইরিটেটেড, সে জন্যই এটা হয়েছিল। এখন সেটা খুলে গেছে। স্লাইট শঙ্কা আছে। সে জন্য আমরা তাকে বলেছি, ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত একটি ক্রিটিক্যাল টাইম, যাতে আর কোনো প্রবলেম না হয়।
‘কথাবার্তা একটু কম বলা উচিত, বিশ্রামে থাকা উচিত। এখানে থেকে স্থিতিশীল হয়ে আরও ভালো কোনো জায়গায় যদি যেতে চান, তাহলে যেতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের হৃৎপিণ্ডে রিং পরানো হয়েছে।
বর্তমানে তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছে।
ইউএনবিকে সোমবার এমন তথ্য নিশ্চিত করেন বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘তাকে রিং পরানো হয়েছে নিশ্চিত। প্রথমে মাঠে খেলার সময় তার বুকে ব্যথা ওঠে। আমরা তাকে হাসপাতালে পাঠাই। তাকে যখন হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছিল, তখন আবার বুকে ব্যথা শুরু হয়।
‘হঠাৎ করেই তার বুকে ব্যথা ওঠে। এরপর আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকসহ তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসা বিভাগের প্রধান দেবাশীষ চৌধুরী সাংবাদমাধ্যমকে জানান, তামিমের দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে টসেও অংশ নেন।
এরপর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে বিকেএসপিতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বিকেএসপির পাশে সাভারের ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে। এ মুহূর্তে তিনি সেখানেই ভর্তি।
তামিমের অসুস্থতার খবরে বিসিবির বোর্ড সভা স্থগিত করা হয়। দুপুর ১২টায় ১৯তম বোর্ড সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এ ক্রিকেটারকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য