নিজেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী নারী হিসেবে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নাম মিলিয়ে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা বিতর্কিত রাজনীতিবিদ হেলেনা জাহাঙ্গীর।
সমালোচনার মধ্যে হেলেনার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে চাকরিজীবী লীগ নিয়ে স্ট্যাটাসটি আর দেখা যাচ্ছে না। পোস্টটি ডিলিট করে ফেলেছেন কি না, নিউজবাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ওটা প্রাইভেসি দিয়ে রেখেছি আমার ওয়ালে।
‘আমি রিমুভ করব কেন? আমার কি সাহস নেই বুকে? আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী নারী। যেহেতু এটা নিয়ে কথা হচ্ছে, আমি এটা হাইড করে রেখেছি।’
হেলেনার ইউটার্ন
‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে সংগঠনটির জন্য দুদিন আগে সাফাই গাইলেও তুমুল সমালোচনার মধ্যে হেলেনা জাহাঙ্গীর এখন বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই।
এ বিষয়ে সোমবার সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে দেয়া এক স্ট্যাটাসে হেলেনা লিখেছেন, ‘আমি হেলেনা জাহাঙ্গীর গতকাল থেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি যে, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ চাকরিজীবী লীগ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে বিভিন্নমুখী সংবাদ প্রচার হচ্ছে।
‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ ধরনের কোনো সংগঠনের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। আমি ছোটবেলা থেকেই পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। বর্তমানে আলোচিত বিষয়টি আমি দলীয় সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে আমার বক্তব্য তুলে ধরে সাইবার ক্রাইম আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে।’
সম্প্রতি নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠন। এটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নাম আসে হেলেনা জাহাঙ্গীরের। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাহবুব মনিরকে। তাদের নাম-সংবলিত পোস্টার ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
পোস্টারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। সংগঠনটির দাবি, দুই-তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ নিয়ে গত শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুক্রবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে চাকরিজীবী লীগ গঠনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন হেলেনা।
তিনি লিখেছেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় আর সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার প্রত্যাশায় বাংলাদেশের আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ।
‘নামটি অনেকের কাছে নতুন মনে হলেও এটি অনেক দিন ধরে কাজ করা একটি সংগঠন। এটির বয়স ৩ থেকে ৪ বছর। অনেক দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে সারা বাংলাদেশব্যাপী। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩২ জেলায় অফিসসহ কমিটি দেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে এই সংগঠনটির সদস্য লক্ষ লক্ষ। অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনী, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ব্যাংকার, বেসরকারি অনেক চাকরিজীবী এখানে আছেন।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রচার-প্রচারণা নেই হয়তো এই জন্য অনেকের অজানা। কিছুদিনের মধ্যেই সবাই জেনে যাবেন। কারণ, প্রতিদিন জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে আগামীর কার্যক্রম আলোচনা চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই এটি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে দেশ ও জনগণের জন্য নিবেদিত সহায়তাকারী সংগঠন হিসেবে কাজ করবে।’
পরের দিনই হেলেনাকে দলের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। আর তাকে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদ থেকে আরও আগেই বাদ দেয়া হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
এর মধ্যেই এক স্ট্যাটাসে হেলেনা জানালেন, আলোচিত চাকরিজীবী লীগের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এই স্ট্যাটাস দেয়ার পর হেলেনা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চাকরিজীবী লীগের পোস্টার আমি বানাইনি। আমার অফিসও বানায়নি বা আমার অর্ডারে বানানো হয়নি। এখন আপনি একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আমার, আপনি একটি পোস্টার বানাতেই পারেন। প্রায় ৫ কোটি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তাদের সবাইকে কি কন্ট্রোল করা সম্ভব আমার একার পক্ষে?’
চাকরিজীবী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ইমন হেলেনা জাহাঙ্গীরের সংগঠনের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হেলেনা বলেন, ‘ওনাকে (ইমন) বলেন, ভাই আপনি একটি কাগজপত্র পেপার্সে আপার সাইন করা এগুলো দেখান একটু।’
তাহলে চাকরিজীবী লীগ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস কেন দিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হেলেনা বলেন, ‘আমি যদি আপনাকে ভালোবাসি, বা যদি পরিচিত হন বা আমাকে অনুরোধ করেন যে আপা আমি একটু বিপদে পড়েছি, আমাকে আপনি একটু প্রচার করে দেন। যেহেতু আমার ২০ লাখ ফলোয়ার আছে ফেসবুকে।
‘আমি তো সমাজের জন্য কাজ করি, মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। আমি তো সেই পোস্টে কোথাও লিখি নাই যে আমি চাকরিজীবী লীগে যোগ দেব ভবিষ্যতে, বা দায়িত্ব নেব এটাও তো কোথাও বলা নেই। আর আমি তো পোস্ট পদবি পাওয়ার পরেই আমার বায়োতে লিখে ফেলি, এটাও তো লিখিনি। সংগঠনকে আগে দেখব-বুঝব, এখানে থাকা যাবে কি না। আর আওয়ামী লীগ নাম তো কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। আমি তো দুই-তিন মাস অ্যানালাইসিস না করে যাব না কোনো সংগঠনে।’
এ সময় নিউজবাংলা জানতে চায়, তাহলে কি আপনার সাথে চাকরিজীবী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই? জবাবে হেলেনা বলেন, ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট নেই। কোনোভাবেই নেই। কোনোমতেই নেই। আমি কি আপনাকে একটু সাপোর্ট দিতে পারি না। আপনি যদি বলেন, আপা এই ব্যাপারে একটু অমুককে বলে দেন। তাহলে কি আমি বলে দেব না? আমি তো মানুষের উপকার করতে গিয়েই এ ধরনের বিপদে পড়ছি।
‘তারা বিশাল একটি সংগঠন করেছে, তাদের নাকি থানা কমিটি আছে, জেলা কমিটি আছে। তখন আমি বলেছি, ঠিক আছে আমি এটার অনুমোদন নেয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারি। এখন তো লকডাউন, কারও সঙ্গে তো কথাও বলা যাবে না, তাই না।’
এ সময় আওয়ামী লীগের উপকমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন হেলেনা। বলেন, ‘এখনও কোনো চিঠি তিনি পাননি।
‘কোথায় অব্যাহতি? আমি তো এখনও আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য। আমাকে তো কোনো শোকজ করা হয়নি। একটা পদ থেকে বাদ দিতে হলে তো আগে শোকজ করতে হবে। অনেক নিয়মকানুন আছে, আমি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করেছি, সেটা আমাকে প্রমাণ করতে হবে। তারপর আমাকে বাদ দেয়া হবে। আমি চিঠি পাইনি, শোকজ পাইনি, কিছুই তো হয়নি।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু বলেনছেন- নির্বাচনটা বানচাল করার জন্য অনেকেই চেষ্টা করতেছেন। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতেছে, কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে একটি নির্বাচিত সরকার দেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে। নির্বাচন ছাড়া এ দেশের অবস্থা খারাপের দিকে যাবে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা এবং ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু বলেন, নির্বাচন নিয়ে যারা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করুন না কেন এই বাংলাদেশের মানুষ অন্তত সচেতন। আমরা জনগণকে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে যাতে সঠিক সময়ে নির্বাচন হয় এবং সরকারও নির্বাচনটা সঠিক সময়ে দিতে বদ্ধপরিকর। সে ব্যাপারে আমরা সচেতন থাকব এবং সক্রিয় থাকব।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের সাথে জোটের ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ সময় ভূঞাপুর বালিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকে গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তরফদার। এতে অতিথি ছিলেন- উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
আগামী রমজানের আগেই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, এতে ষোলো বছর পর দেশের ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতিহা পাঠ শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের মানুষ এখনো নানাভাবে অধিকারবঞ্চিত উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের দিক থেকে আমরা এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের মধ্যে বাস করছি। আমাদের আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য গণতন্ত্র এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। তবে আমাদের বিশ্বাস খুবই দ্রুত রমজানের আগেই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তাতে এ দেশের ভোটাররা ষোলো বছর ধরে যে ভোট দিতে পারেননি, এবার তারা সেই ভোট দিতে পারবেন।’
‘পাশাপাশি গণতন্ত্রের আরও বিভিন্ন শর্ত, যেমন: এ দেশের মানুষের মনে নিরাপত্তাবোধ তৈরি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা— পূরণ করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘আদালত হতে হবে অসহায় মানুষের শেষ ভরসার স্থল। সেই ধরনের একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর এই লক্ষ্য পূরণে মানুষের অনুপ্রেরণা হচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন মানবতা, প্রেম ও দ্রোহের কবি। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, স্বাধীনতার লড়াই, নব্বইয়ের গণআন্দোলন এবং বছরখানেক আগে যে দুনিয়া কাঁপানো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, প্রতিটি জাতীয় অর্জন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যার গান ও কবিতা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে, দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে, তার গান গাইতে গাইতে ও তার কবিতা আবৃত্তি করতে করতে আমরা রাজপথে নেমে আসতাম।’
রিজভী বলেন, ‘স্বৈরশাসনের তপ্ত বুলেটের সামনে নিঃশঙ্কচিত্তে দাঁড়াতেও দ্বিধা করিনি, কারণ আমাদের কণ্ঠে ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান ও কবিতা। যখনই এ দেশের মানুষ অধিকারহারা হয়, তখনই তাদের সংঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করে অত্যাচারীর শৃঙ্খল ভাঙার প্রত্যয় জেগে ওঠে যার কবিতা ও গানে, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে তিনি (নজরুল) তার শানিত কলম চালাতে দ্বিধা করেননি। তার লেখা কবিতা, গান ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যে চেতনা তিনি গোটা জাতিকে দিয়েছেন, তা ধারণ করেই আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সংগ্রাম করেছি, জুলাই আন্দোলনে যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠোমোতে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য চলে আসছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সেখানে রাতারাতি এগুলোর সমাধান সম্ভব হবে না। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এই রাষ্ট্রকাঠামো বদলাতে হবে।
তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারর চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা এখনো আসতে পরিনি। এমনকি নির্বাচন নিয়েও একই বিষয় আছে, যদিও জাতি এখন সেই দিকেই মনোনিবেশ করেছে। যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম ও লড়াই করেছি, এটা মুহূর্তের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে— এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবে একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটুকু সু-রক্ষিত’ শিরোনামের এই সেমিনারের আয়োজন করে অর্পণ আলোক সংঘ নামের একটি সংগঠন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। সেমিনারটির সঞ্চালনা করেন অর্পণ আলোক সংঘের চেয়ারম্যান বীথিকা বিনতে হোসাইন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের কথা বলছি, একইসঙ্গে অর্থনৈতিক কাঠামোর কথাও বলছি। কিন্তু দীর্ঘদিনের সব অনাচার, অবিচার, নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচার— সবকিছু কাটিয়ে একদিনে সুন্দর করে একটি রাষ্ট্র আমরা তৈরি করব, এটা মনে করার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। যে ৫২ বছরে একটা নিয়মিত ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিধান আমরা তৈরি করতে পারিনি, সেখানে আজ হঠাৎ করে মুহূর্তের মধ্যে আমরা সবকিছু ঠিক করতে পারব না। আমরা যারা রাজনীতি করছি, তারা চেষ্টা করছি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিংবা জোড়াতালি দিয়ে কোনোকিছু করা যায় না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা ও লক্ষ্য প্রয়োজন। পাশাপাশি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও আন্তরিকতা থাকতে হবে।’
এ সময়ে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। এই কাঠামো বদলাতে হবে। কারণ, বেগুন গাছ লাগিয়ে আমরা কমলালেবু আশা করতে পারি না। কাজেই আমাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে, সেটা যদি কাজে লাগাতে পারি, বৈষম্যহীন একটা সমাজব্যবস্থার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি, তাহলে হয়তো-বা অভ্যুত্থানের কিছুটা মূল্য আমরা পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারা। সেখান থেকে সবকিছু নেমে আসে। একজন স্কুলশিক্ষককেও নিজের সমস্যা সমাধান করতে ঢাকায় আসতে হয়, যেটার কোনো প্রয়োজন নেই। এর জন্য তো জেলা পরিষদই যথেষ্ট হওয়ার কথা।’
‘কিন্তু ওই যে সিস্টেম। কারণ, তারা যদি ঢাকায় না আসেন, তাহলে ঘুষ আসবে কোথা থেকে? এখন স্কুলশিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক— সব নিয়োগ হয় ঘুষের বিনিময়ে। যেই রাষ্ট্রকাঠামোতে এমন বৈষম্য চলতে থাকে, সেখানে রাতারাতি কিছু করে ফেলতে পারব না।’
অনুষ্ঠানে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মেহনিত মানুষের আন্দোলনের দাবি-দাওয়ার মঞ্চ হিসেবে আমরা নিজেদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ২০১৫ সালে গণসংহতি আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করি। এ সময়ে বাংলাদেশের মানুষের লড়াই-সংগ্রামে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি।’
‘রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ রাখা; আমাদের লক্ষ্যও তাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে শ্রেণিগত পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য ধনসম্পদে। গত ৫৪ বছরে যে দলগুলো ক্ষমতায় ছিল, তারা যে নীতি তৈরি করেছে, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষ, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী কিংবা লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষ, তাদের জন্য সাম্য তো দূরের কথা, ন্যূনতম ভারসাম্যও তৈরি করতে পারেনি।’
‘এতে লুটপাট-নির্ভর একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে ধরে নেওয়া হয়, ক্ষমতা দিয়ে টাকা-পয়সা বানাবে।’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে ব্যাংক লুট হয়ে সাফা হয়ে গেছে। কিন্তু গত পরশুদিন দেখলাম, ৯টি নন-ব্যাংকি ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা বিশাল ব্যাপার। কিন্তু হাসিনা চলে যাওয়ার পরও লুটপাট বন্ধ হয়ে যায়নি। গেল ১২ মাসে প্রায় একইভাবে ব্যাংকিং খাতে লুটপাট হয়েছে। এটি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়, যেগুলো হাসিনার আমলে বেশি হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এজন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ব্যাংক থেকে একটি টাকা লুট হলেও বাংলাদেশের ব্যাংকের নজরদারি থাকে। লুট হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক জানবে না— এটা হয় না। হাসিনার আমলে যে লুট হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক জানত। কিন্তু সেখানে যে কর্মকর্তাদের এই নজরদারি করার কথা ছিল, তাদের নামে কোনো নিউজ হয়নি, মামলা হয়নি। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হয়নি।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, সাধারণ মানুষ ইসলামকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আমি নির্বাচনের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। যদি জনগণ চায় তবে আমরাই সরকার গঠন করব।
তিনি বলেছেন, ইসলামী সমমনাদের এক মঞ্চে আনার বিষয়ে সবাই একমত। বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় পিআর বুঝেন না, কিন্তু সাধারণ মানুষ বিষয়টি ভালোভাবেই বোঝে। কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন ও বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে ইতোমধ্যে অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই সুখবর আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দিনব্যাপী কুমিল্লা ফানটাউনে জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগরীর ‘নির্বাচনী দায়িত্বশীল সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. তাহের বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালুর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রয়োজনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে হ্যাঁ/না ভোটের মতো পদ্ধতিও গ্রহণ করা হতে পারে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন- কুমিল্লা মহানগরীর আমির ও কুমিল্লা ৬ সংসদীয় আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কাজী দ্বীন মোহাম্মদ।
কুমিল্লা মহানগরীর দুরবস্থার প্রসঙ্গ টেনে ড. তাহের বলেন, আমি কান্দিরপাড় থেকে ডুলিপাড়া ফানটাউনে আসতে ৪৫ মিনিট সময় নিয়েছি। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে ৫ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালুর বিষয়ে জামায়াত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। প্রয়োজনে বিকল্প ফরম্যাটেও কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো দল যদি মনে করে আগামী নির্বাচনে নিশ্চিত জয়ী হবে তাহলে বোঝা যায় জেতার জন্য তারা কোনো একটা মেকানিজম করছে। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশকে সংকট থেকে বের করে আনতে পারবে। জনগণ যাকে চাইবে তারাই জয়ী হবে।
মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মাহবুবুর রহমান এবং সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগরীর নায়েবে আমির অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন, যুব বিভাগের সভাপতি কাজী নজির আহমেদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগর সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন মোল্লা, মোতাহার আলী দিলাল, ভিপি মুজিবুর রহমান, কুসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক এ জি এস শহিদুল্লাহ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সবুজ প্রমুখ।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের পলায়নের পর বিএনপিকেও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে রাজনীতি শূন্য করতে দেশি-বিদেশি মহলের প্ররোচনায় আবারও একটি নতুন ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ সক্রিয় হয়েছে।
এক সাক্ষাৎকারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আব্বাস বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, খাগড়াছড়ির সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে কেন্দ্র করে ‘অশুভ উদ্দেশ্য’ সাধনে সচেষ্ট মহলগুলো দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল বিভিন্ন অজুহাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার মাধ্যমে এমন চক্রান্তকারীদের ফাঁদে পা দিচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস ঘোষিত ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে দেশকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে বলেও সতর্ক করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
আব্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন নতুন এক মাইনাস-টু ফর্মুলা চালু হয়েছে, যা ১/১১ সময়কার মাইনাস-টু ফর্মুলার মতোই। আগেরবার সেটি এসেছিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে। আর এবার দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা ভিন্ন আকারে একই চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’
তিনি বলেন, এসব অপচেষ্টার অংশ হিসেবে একটি গোষ্ঠী সমন্বিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা ও রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বিএনপিকে ‘খারাপ’ বা ‘অবিশ্বস্ত’ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে।
তিনি অভিযোগ করেন, এখনো প্রশাসনের ভেতরের আওয়ামীপন্থি ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক ও আদর্শিক গোষ্ঠীর একাংশ বিএনপিকে দুর্বল করতে সক্রিয় রয়েছে। ‘তারা মনে করছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় বিএনপিকে সরিয়ে দিতে পারলেই দেশের শাসন ক্ষমতা তাদের হাতে চলে যাবে।’
আব্বাস বলেন, ‘যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখতে চায়, তারাই নিজেদের স্বার্থে নতুন করে মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। ১/১১–তে এটি এক রূপে এসেছিল, তখন একটি সেনাসমর্থিত সরকার ছিল। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকায় ভিন্ন ধরনের ‘মাইনাস-বিএনপি ফর্মুলা’ চালানো হচ্ছে।
কারা এর পেছনে রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আব্বাস বলেন, ‘শয়তান নানা ছদ্মবেশে আসে। একই দেশি-বিদেশি মাস্টারমাইন্ডরা নতুনভাবে মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।’
তার মতে, এই প্রচেষ্ঠার উদ্দেশ্য একমাত্র বিএনপিকে দুর্বল বা সরিয়ে দিয়ে দেশের রাজনীতি নিজেদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করা। এই পরিকল্পনায় পিছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয়।
আব্বাস দাবি করেন, অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক আমলা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ তারা মনে করছে বিএনপিকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিলে তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল হবে। ‘প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব থেকে তারা বিএনপিকে বাদ দিতে চায়।’
তিনি বলেন, এমনকি কিছু রাজনৈতিক দলও এই সুরে সুর মিলিয়ে বলছে, বিএনপি এখন সেই একই পথে এগোচ্ছে, যা একসময় আওয়ামী লীগ অনুসরণ করেছিল।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ইসলামী দলসহ কয়েকটি রাজনৈতিক শক্তি নানা ইস্যু উত্থাপন করছে, যাতে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হয়।
‘একটি দল তো বলছে, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত নির্বাচন হতে দেবে না। তারা ফ্যাসিবাদীদের মতো আচরণ করছে’ যোগ করেন আব্বাস।
এই পরিস্থিতিতে আব্বাস দেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ‘আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি, নিজ দেশের মাটি অন্যদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নয়।’ তার মতে, নতুন মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা এবং সেন্ট মার্টিন, সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনাও আসলে একই সূত্রে গাঁথা, ভিন্ন কোনো বিষয় নয়।
বিএনপির এই নেতা মনে করেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হবে। বিএনপির বিপুল জনপ্রিয়তা থাকায় কিছু মহল প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। ‘কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, জনগণ বিএনপিকে ভালোবাসে, মিথ্যা প্রচারণায় কেউ দলের জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করতে পারবে না,’ বলেন তিনি।
মির্জা আব্বাস বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রশাসন থেকে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের সরাতে হবে। ‘অন্যথায়, সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন হবে।’ বিএনপি সাংগঠনিকভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং ফেব্রুয়ারিতে ভোটের প্রত্যাশায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
সম্ভাব্য জোট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আব্বাসের ধারণা, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে, যা সফল হলে দেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ফেব্রুয়ারিতে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণার প্রতি আস্থা প্রকাশ করে আব্বাস বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না—এ বিষয়ে আব্বাস বলেন, এটি তার ইচ্ছা ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ‘খালেদা জিয়া নিজেও এ বিষয়ে কিছু বলেননি।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়ার কোনো ভূমিকা থাকবে কি না—এমন প্রশ্নে আব্বাস বলেন, সময়ই এই প্রশ্নের উত্তর দেবে।
ইসলামী দলগুলোর জোট গঠনের চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিএনপি এতে চিন্তিত নয়। ‘বাংলাদেশের জনগণ উদারপন্থি মুসলিম, তারা সাম্প্রদায়িকতাকে নয়, গণতান্ত্রিক ও মধ্যপন্থি দলকেই পছন্দ করে।’
জুলাই সনদের খসড়া পর্যালোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দলটির পক্ষ থেকে এই মতামত জমা দেওয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বরাত দিয়ে দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছিল দলটি ২১ আগস্ট তাদের মতামত জমা দেবে।
এদিকে জুলাই সনদের মতামত জমাদানের সময় আগামী ২২ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বুধবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার মতামত চেয়ে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সনদের পটভূমিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
জুলাই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে, তা বলা হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন বলছে, সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো কোনো কোনো দল একমত হননি। সেসব বিষয়ে দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।
ওই সব বিষয়ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমতের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদের খসড়ায়।
মন্তব্য