শাটডাউনের ফেরে পড়ে টাপুর বাবার কাছে, টুপুর মায়ের কাছে। কাছে যাওয়ার আকুতি আছে, কিন্তু উপায় নেই।
শিশু দুটির বয়স সবে ১৩ মাস। লঞ্চে করে বাবা-মায়ের বরিশাল থেকে ঢাকায় ফেরার চেষ্টায় আলাদা হয়ে যায় তারা।
কঠিন পরিস্থিতিতেও টুপুরকে নিয়ে সহি-সালামতেই ঢাকায় পৌঁছতে পেরেছেন তার মা। তার বাসা মিরপুরে।
অন্যদিকে টাপুর আছে বাবার সঙ্গে। প্রথমবারের মতো মায়ের সান্নিধ্য ছাড়া রাতটা তার খুব একটা খারাপ কেটেছে, এমনটা বলা যাবে না।
কখন কী করতে হবে, মেয়ের চাহিদা কীভাবে পূরণ করতে হবে, ফোন করে স্ত্রীর কাছ থেকে জেনে নিয়েছেন সুশান্ত শীল।
তবে তার স্বাভাবিক জীবনাচরণে ঘটেছে বিঘ্ন। মেয়েকে দেখাশোনা করতে দিনভর থাকতে হয়েছে বাসায়।
কঠোর শাটডাউন শুরুর আগে স্ত্রী সুমা শীলকে নিয়ে বরিশাল লঞ্চঘাটে আসেন সুশান্ত শীল। ইচ্ছা ছিল বউ-বাচ্চাকে নিয়ে যাবেন রাজধানীর মিরপুরের শ্বশুরবাড়িতে।
কিন্তু যাত্রীর ভিড়ের কারণে দুই কন্যাকে নিয়ে মা ও বাবা উঠে পড়েন দুই লঞ্চে। পাশে স্ত্রী-কন্যাকে না পেয়ে দ্রুত নেমে পড়েন সুশান্ত।
ঘাটে তিনি যখন হন্যে হয়ে তাদের খুঁজছিলেন, তখন বেজে ওঠে মোবাইল ফোন। অপর প্রান্ত থেকে স্ত্রী জানান, তিনি আছেন সুন্দরবন লঞ্চে। কিন্তু তখন আর ঢাকায় যাওয়ার উপায় নেই সুশান্তের। কারণ, ঘাট ছেড়ে যায় সব লঞ্চ। পরে টাপুরকে নিয়ে ঝালকাঠির কিস্তাকাঠি আবাসনের বাড়িতে ফিরে আসেন সুশান্ত।
পথিমধ্যে তার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের। তিনি তখন মেয়ের জন্য দোকানে প্যাকেট দুধ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত।
সুশান্ত তখন বলেন, ‘এই বাচ্চা সকালে ঘুম থেকে উঠেই মা মা করে ডাকবে। এদিকে শাটডাউন শুরু। আমি তো ঢাকাতেও যেতে পারব না।’
টাপুরের খোঁজ নিতে শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নিউজবাংলার প্রতিবেদক যান সুশান্তের কিস্তাকাঠি আবাসনে ২৪ নম্বর ব্যারাকের ঠিকানায়।
৬ নম্বর ঘরে টোকা দিতেই ম্লানমুখে দরজা খোলেন সুশান্ত। ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায়, বিছনায় ঘুমিয়ে আছে ছোট্ট টাপুর।
সুশান্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাতে বাসায় ফেরার পর বেশ কান্নাকাটি করেছে মেয়েটি। তারপর প্যাকেট দুধ গুলিয়ে খাইয়েছি। রাতে ভালো ঘুমিয়েছে। সকালে বিস্কুট-দুধ আর দুপুরে স্যালাইন পানি খাইয়ে দিয়েছি। তারপর ঘুমিয়ে পড়েছে, এখনও ওঠেনি।’
টুপুর কেমন আছে, জানতে চাইলে তিনি ফোন দেন শ্বশুরবাড়িতে। স্ত্রী সুমা ফোনে সুশান্তকে জানান, টুপুর সারা দিন কমবেশি কান্নাকাটি করেছে। ঘুরেফিরে যেন তার বোনকে খুঁজছে। জবাবে সুশান্ত মেয়েকে নিয়ে দ্রুত ঝালকাঠি ফেরার তাগাদা দেন। সুমাও তাকে ঢাকায় যেতে বলেন।
কিন্তু শাটডাউনের মধ্যে তা কীভাবে সম্ভব হবে, সেই প্রশ্নে নীরব থাকেন দুজনই।
প্রায় আধা ঘণ্টা এই প্রতিবেদক অবস্থান করেন সুশান্তের বাড়িতে। এ সময়ে একবারও ঘুম ভাঙেনি মেয়েটির। স্বপ্নে কি সে টুপুরের সঙ্গে খেলছে?
আরও পড়ুন:শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘ঠাকুরগাঁও মডেল’ অনুসরণ করে বরিশাল জেলাকে সম্পূর্ণরূপে শিশুশ্রম মুক্ত করা হবে। শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে নিয়োজিত না রাখার পাশাপাশি তাদের নিয়মিত স্কুলে পাঠানোর উপর জোর দেন তিনি।
শুক্রবার বরিশালের শিল্পকলা একাডেমিতে ‘শিশু শ্রম নিরসনে তারুন্যের ভুমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সচিব এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন ১৮২ অনুস্বাক্ষর করেছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৪৩ ধরনের কাজের তালিকা প্রকাশ করেছে। কোনো শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকবে না। তারা বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাবে।”
শ্রম সচিব আইএলও'র অর্থায়নে ইএসডিও কর্তৃক বাস্তবায়িত ঠাকুরগাঁও জেলার ‘চাইল্ড লেবার মনিটরিং সিস্টেম (সিএলএমএস)’ মডেলকে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ আখ্যায়িত করেন। তিনি জানান, জাতীয় পর্যায়ে এই মডেল অনুসরণ করে বরিশাল জেলাসহ অন্যান্য জেলাতেও শিশুশ্রম নিরসনের কার্যক্রমকে গতিশীল করা হবে।
শ্রম সচিব তরুণ সমাজ ও এনজিওগুলোর প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “শিশুশ্রম নিরসনে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সমাজকে শিশুশ্রম মুক্ত করতে পারে। এখানে উপস্থিত সকলে যদি ১ জন শিশুরও দায়িত্ব নেন, তাহলেও বরিশাল জেলা অনেকাংশে শিশুশ্রম মুক্ত হবে।”
তিনি আরও জানান, শিশুশ্রম নিরসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন দুস্থ শ্রমিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫৭ জন শ্রমিক ও তার পরিবারকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফাউন্ডেশন হতে ২৫ লক্ষ টাকার অর্থ সহায়তার চেক প্রদান করা হয়।
বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো: রায়হান কাওসার। এছাড়াও বরিশাল জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সুধীজন, এনজিও কর্মী ও তরুণরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ বিকেলে খাগড়াছড়ি জেলার কমলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সুপ্রদীপ চাকমা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে। বিশেষ করে পাহাড়ি কন্যারা তাদের দক্ষতা ও প্রতিভা দিয়ে দেশ-বিদেশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। উপদেষ্টা আরও বলেন, দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটের উন্নয়নের ফলে এখন মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে এবং উৎপাদিত পণ্য সহজে পরিবহণ করা সম্ভব হচ্ছে।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা কমলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সংলগ্ন জীর্ণশীর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি দ্রুত মেরামত ও পুনঃনির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে ছাত্রাবাস নির্মাণের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য বৌদ্ধ মিশন (পিবিএম) কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে পার্বত্য বৌদ্ধ মিশন পালি কলেজ প্রাঙ্গণ, ম্যাপল হাউস গার্লস হোস্টেল এবং অনাথালয় ভবন ঘুরে দেখেন। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপদেষ্টা এসব প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে অনাথালয় পরিচালনা কমিটি গঠনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যবৃন্দ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, সকল কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে আধুনিক ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে ইংলিশ ভার্সনে রূপান্তরের পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (উপসচিব) খন্দকার মুশফিকুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য এডভোকেট মঞ্জিলা, সদস্য কংজপ্রু মারমা, সদস্য প্রফেসর আবদুল লতিফ, সদস্য অনিময় চাকমা, সদস্য শহীদুল ইসলাম সুমন, সদস্য প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা, সদস্য বঙ্গমিত্র চাকমা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান বাবুলের সাজা বাতিল ও নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান যুবদল নেতা বেনজির আহমেদ তাবরিজ এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জনতা ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের আরেক সাবেক সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো.সেলিম মিয়া সেলিম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কাউয়ুম মিয়া, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান বকু, যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম লিটন, বিএনপি নেতা শাহিন হক, জরিুলহক ঝন্টু, তামজিদ মোল্যা, বাচ্চু মোল্যা, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন সাদ্দাম সহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম খাঁন বাবুলকে কারাগারে পাঠানোর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদুল ইসলাম বাবুলকে মুক্তি দেওয়া না হলে বৃহত্তর ফরিদপুরে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নে চুরির আপবাদে মাহিন (১৪) নামে সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুল শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের চেঙ্গুয়া ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
মানিক ও রাহাত নামে দুই কিশোরকে বেড়ধক পেটানো হলে, তারা গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও মাহিন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়।
নিহত মাহিন স্থানীয় কাঞ্চন নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র এবং একই এলাকার সাগর আলী তালুকদার বাড়ির জনৈক লোকমানের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার ভোরে মাহিনসহ তিন কিশোর চেঙ্গার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। সেসময় কয়েকজন কিশোর দৌড়ে এসে তাদের ধাওয়া করে। প্রাণ ভয়ে তিনজন পাশ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা ছাদে উঠে জোরপূর্বক তাদের নিচে নামিয়ে এনে ব্রিজের উপর বেধড়ক মারধর করে সটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে মাহিনের মৃত্যু ঘটে। গুরুতর আহত দুজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহতদের পরিবারের অভিযোগ, মানিক ও রাহাত আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। চোর সন্দেহে তাদের উপর এমন নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছি। ফটিকছড়ি থানার ওসি নুর আহমদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইতোমধ্যে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহজনকভাবে নোমান ও আজাদ নামে দুইজনকে আটক করেছে। কেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পুলিশের পৃথক দুটি মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও ইয়াবাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে উপজেলার সলিমগঞ্জ ও মিরপুর এলাকায় এ অভিযান দুটি পরিচালিত হয়।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নবীনগর থানার এএসআই শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল সলিমগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মেঘনা নদী-সংলগ্ন খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক পুরুষ ও চার নারীকে আটক করে। সেসময় তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ১২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন মো. আরিফুল ইসলাম (৪২) ও তার স্ত্রী বিলকিস বেগম (৩৭), বাড়ি: গৌরীপুর, ময়মনসিংহ নাজমা (২৬), বাড়ি: পঞ্চগড় মাইমুনা (২২), বাড়ি: আশুলিয়া, ঢাকাআমেনা (২৭), বাড়ি: বগুড়া । একই রাতে নবীনগর থানার এসআই শাহ আলমের নেতৃত্বে আরেকটি দল মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার মোল্লা (৪৮) কে আটক করে। তার দেহ তল্লাশি করে ২৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং মাদক বিক্রির নগদ ৩,৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘দুটি পৃথক অভিযানে মোট ১২ কেজি গাঁজা, ২৬০ পিস ইয়াবা ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি পৃথক মামলা রুজু করা হয়েছে।’
গ্রেপ্তারকৃতদের গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আবাসন চাহিদা পূরনের জন্য কৃষি জমিতে বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানীর বালি ভরাটের কারনে এ সংকট দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত পশু পালনে কৃষকদের এখন ভরসা নেপিয়ার জাতের ঘাস। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে গোখাদ্যর সংকটের বিষয়টি কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। গোখাদ্য সংকটে অনেকই কম দামে পশুগুলোকে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার কাঞ্চন, ভোলাব, দাউদপুর, মুড়াপাড়া, মাঝিনা নদীর পাড়, দেইলপাড়া, নদ্দাসহ অর্ধ শতাধিক গ্রামে এখন নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। বেসরকারি দুগ্ধ খামারিরা তাদের বাড়িতে খরচ কমানোর জন্য নেপিয়ার ঘাস চাষের দিকে ঝুকছে। আঁশযুক্ত, পুষ্টিকর, সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে চাহিদা ব্যাপক। একবার কেটে নিলে ঘাস মরে যায়না বরং কাটা অংশ থেকে পুনরায় কুঁড়ি জন্মে আবার তা পূর্নাঙ্গ ঘাসে পরিণত হয়।
সরজমিন ঘুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে গোখাদ্য সংকট এবং নেপিয়ার জাতের ঘাসে কৃষকের ভরসার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
বারৈ গ্রামের কদম আলী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, অন্যের জমি চাষ করি। বাড়তি আয়ের জন্যে গরু-ছাগল পালি। কৃষক টিপু হায়দার বলেন, গরুর খাদ্য সমস্যার জন্যে আমাদের গরু কম দামে বিক্রি করে দিছি। নেপিয়ার জাতের ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল, ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই কেটে নেয়া ঘাসগুলো বড় হয়ে যায়।
উপজেলা পশু পালন কর্মকর্তা ডা. সজল কুমার দাস গোখাদ্যের সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, বর্তমানে পশু খাদ্যের আরেক নাম নেপিয়ার ঘাস। দ্রুত বর্ধনশীল, উৎপাদন খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় এলাকার চাষিরা দিনদিন নেপিয়ার জাতীয় ঘাস চাষে ঝুঁকছেন। এতে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অপরদিকে গোখাদ্য সংকট নিরসনেও ভূমিকা রাখছেন। প্রতিমাসে খামারিদেরকে বিনামূল্যে নেপিয়ার ঘাসের বীজ কাটিং দেয়া হয়। নেপিয়ার ঘাস ১০/১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। চাষের পদ্ধতিও সহজ।
নেত্রকোনার হৃদয়ে একসময় মানুষের স্বপ্ন, ভরসা আর যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল লঞ্চ। নেত্রকোনা পৌর এলাকার মালনী রোড সংলগ্ন মগড়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা সেই পুরানো লঞ্চঘাট এখন শুধুই স্মৃতিচিহ্ন বহন করে যাচ্ছে। এই লঞ্চঘাট ঘিরে একসময় গড়ে উঠেছিল পাটপট্রি এলাকায় অসংখ্য পাট গুদাম ও ধানের বড় বড় গুদাম ঘর। বিভিন্ন এলাকা থেকে বড়-ছোট নৌকা আর লঞ্চ আসত এই ঘাটে। অপরিকল্পিত নৌযোগাযোগের কারণে আজ বিলীন হয়েছে এই লঞ্চ ঘাটটি। মগড়া নদী বয়ে গেছে সদর দেওপুর, লক্ষীগঞ্জ, আটপাড়া কোনাপাড়া, ব্রোজের বাজার, নাজিরগঞ্জ বাজার হয়ে মদন দেওয়ান বাজার ও মদন বাজার পর্যন্ত। আর এই রুটেই লঞ্চ দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পৌঁছাত নির্বিঘ্নে। তখনকার দিনগুলোতে সড়ক যোগাযোগের অবস্থা ছিলো খুবই দুর্বল, তাই মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো লঞ্চ ভ্রমণ করতে। লঞ্চঘাটে ভিড় জমতো সকাল-বিকেলে। এখানে যাত্রী ওঠা-নামার ভিড়, নদীর ঢেউ আর হুইসেলের শব্দে সরগরম হয়ে উঠত পুরো এলাকা। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা নদীর পাড়ে দৌড়ে এসে লঞ্চ দেখত, আনন্দে হাত নেড়ে যাত্রীদের বিদায় জানাত ছোট-ছোট শিশুরা। সেইসব মুহূর্ত আজ কেবলই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। কালের আবর্তে সেই লঞ্চ সেবা হারিয়ে গেছে এলাকা থেকে। নদী নিয়মিত খনন না হওয়া, আর এর উপর অপরিকল্পিতভাবে নিচু ব্রিজ নির্মাণ করায় এখন নৌকা বা ট্রলারও চলাচল করতে পারছে না। ফলে একসময়কার নদীপথের প্রাণচাঞ্চল্য নিভে গেছে। এলাকার মানুষের এখন সড়কপথই প্রধান ভরসা। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে সমষ্টিগতভাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি নদী পথটিকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, তবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে যেমন বিকল্প সুবিধা মিলবে, তেমনি সড়কের চাপও কমবে। নেত্রকোনার লঞ্চঘাট তাই এখন কেবলই মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে আছে। পুরোনো দিনের সেসব কোলাহল, শিশুদের হাসি আর যাত্রীদের ভরসা সবকিছুই সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে।
মন্তব্য