ফেসবুক-ইউটিউবে বিড়ালের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচিত-সমালোচিত ‘পুচি ফ্যামিলি’র তাপসী দাশ এবার ১৫ জন বিড়ালপ্রেমীর নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। যারা মূলত তার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন; তার কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
প্রাণী-সংক্রান্ত তিনটি ফেসবুক গ্রুপ বা পেজকেও মামলায় আসামি করেছেন তিনি। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় অনেককে আসামি করা হয়েছে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে গত সোমবার করা মামলায়। মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে আগস্ট মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীর ডিওএইচএসের বাসিন্দা পার্থপ্রতিম চৌধুরীর স্ত্রী তাপসী দাশ ফেসবুকে ‘পুচি ফ্যামিলি’ পেজ ও ইউটিউবে ‘পুচি ফ্যামিলি অরিজিনাল’ চ্যানেলের কর্ণধার।
তার বিরুদ্ধে বিড়াল আটকে রাখা ও বিড়াল নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি রাজধানীর পল্লবী, গুলশান, উত্তরার পাশাপাশি সাভার থানায় বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন কয়েকজন বিড়ালপ্রেমী। একই অভিযোগ এনে তাপসীর বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশও পাঠান তারা।
এ ছাড়া তার বিড়াল পালন পদ্ধতি, বিড়াল বিক্রি, অপচিকিৎসাসহ বিড়াল নির্যাতনের নানা অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করেন অনেকেই। তাদের মধ্যে যারা ‘বেশি প্রতিবাদী ভূমিকায়’ ছিলেন, তাদের সবাইকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
আসামির তালিকায় রয়েছেন বেসরকারি সংস্থা অ্যানিমেল শেল্টারের (অ্যানিমেল লাভার্স অফ বাংলাদেশ- এএলবি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দ্বীপান্বিতা হৃদি ও কর্মী তাজকিয়া দিলরুবা, বাংলাদেশ ক্যাট ফ্যান্সিয়ার্স সোসাইটির প্রেসিডেন্ট সারা বিনতে জামান ও পল্লবী থানায় বিড়াল আটকে রাখার অভিযোগকারী মনিরা আলম ওরফে মনিরা আক্তার।
এই মনিরা আলম নিউজবাংলাকে বলেছেন, তার বিড়াল মাথিনের ওপর নির্যাতন ও তাপসীর ‘কর্মকাণ্ডে’ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।
তাপসীর বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন থানায় যারা অভিযোগ করেছেন কিংবা অনলাইনে তীব্র প্রতিবাদ কিংবা সমালোচনা করেছেন, তাদের আসামি করা হয়েছে মামলায়। এই আসামিরা হলেন হিয়া চৌধুরী, সাবরিনা, গৌতম সাহা, আমিনুল ইসলাম সুজন, রৌতিক ইসলাম লিনজয়, দিলরুবা রহমান, ফারজানা লিও, অলি উনি নাহার আশা, ইশরাত উদ্দিন, তাহসিন ফারিহা ইয়াছিন ও দিলরুবা।
যে তিনটি ফেসবুক গ্রুপ বা পেজকে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ক্যান্ডি হাউস (ফেসবুক গ্রুপ/পেজ), কুত্তাওয়ালা-KUTTAWALA (Dog lovers of BD), ক্যান্ডি লায়ন ওজি লাভার্স (Candy Lion Ozzy Lovers) ফেসবুক গ্রুপ/পেজ।
পুচি ফ্যামিলির তাপসী দাশের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিড়াল নির্যাতনের পাশাপাশি বিড়ালপ্রেমীদের চরিত্র নিয়ে কুৎসা রটনার লিখিত অভিযোগ করা হয় বিভিন্ন থানায়। অভিযোগকারীরা রাজধানীর মিরপুরের ডিওএইচএসে তাপসী দাশের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে সেখানে থাকা বিড়ালগুলোকে তার কবল থেকে বাঁচানোর অনুরোধও করেছেন।
তাপসীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হিসেবে নিউজবাংলাকে তারা বলেছিলেন, পুচি ফ্যামিলির ফেসবুক পেজে ফলোয়ার প্রায় ৯ লাখ। ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার আছে ১ লাখ ৪০ হাজার। এসব ফলোয়ারকে ভুল তথ্য দিয়ে বিড়ালের প্রতি নিষ্ঠুরতা শেখাচ্ছেন তাপসী দাশ।
তাপসী দাশের মামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছেন, এসব অভিযোগ জানিয়ে মামলার জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন থানায় লিখিত আবেদন করেও কোনো সাড়া পাননি। এখন উল্টো তাদের বিরুদ্ধে ‘হয়রানিমূলক মামলা’ হলো। এই মামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে পোষা প্রাণী নির্যাতনের মতো ঘটনাটিকে আড়াল করে প্রকৃত প্রাণিপ্রেমীদের মধ্যে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা।
আসামিরা বলছেন, পুচি ফ্যামিলির পুচি নামের বিড়ালটিও তাপসী দাশের নয়। পুচি ফ্যামিলির বিরুদ্ধে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিড়াল বিক্রির অভিযোগও তুলেছেন তারা। তাদের দাবি, পুচি ফ্যামিলিকে ডিওএইচএস কর্তৃপক্ষ বাসা ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে। পুচি ফ্যামিলির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল বন্ধের জন্য ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এসব প্রাণিপ্রেমী।
মামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অন্যতম আসামি বেসরকারি সংস্থা এএলবির চেয়ারম্যান দ্বীপান্বিতা হৃদি মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুচি ফ্যামিলির বিরুদ্ধে যারা প্রথম থেকেই কথা বলেছেন, অনেক মানুষই কথা বলেছেন, কিন্তু যারা বেশি প্রতিবাদ করেছেন, তাদের মধ্য থেকে একটি লিস্ট করেছে। এদের মধ্যে ব্যক্তি ও বিভিন্ন অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার গ্রুপ রয়েছে। ১৮ জনের একটি লিস্ট করে মামলার আসামি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তাপসী দাশের বিরুদ্ধে বিড়াল নির্যাতন, অন্যের বিড়াল আটকে রাখা, অপচিকিৎসা, বিক্রি কিংবা আর্থিক মুনাফার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেছেন বা প্রতিকার চেয়ে পুলিশ, বিভিন্ন সংস্থা ও সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, তাদের সবাইকে তার মামলার আসামি করেছেন।
‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার নিয়ে কাজ করতে এসে উল্টো অ্যানিমেল অ্যাবিউজার আমাদের হ্যারাজমেন্টের মামলায় ঢুকিয়ে দিল।’
প্রাণীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দ্বীপান্বিতা বলেন, ‘সে কেস করার আগেই আমরা ১৩ জুন তার নামে অভিযোগ দিয়েছি। সেটা থানাতেই দিয়েছি, আইসিটি ডিপার্টমেন্টেও দিয়েছি। এরপর তাপসীর কোনো রকম রেসপন্স পাই নাই।
‘পুলিশ যতবার ফোন দিয়েছে, ততবারই তিনি ঢাকার বাইরে, বাসার বাইরে বলে জানিয়েছেন। কখনও বাসায় তালা মারা বলে জানিয়েছেন। তার মানে এখানে কোনো ইনভেস্টিগেশন হয় নাই। কমপ্লেইন বলেন, উকিল নোটিশ বলেন, এসবের কোনোটির ক্ষেত্রেই আমরা কার্যকর কোনো রেসপন্স পাই নাই।’
এএলবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে, তারা আসলে এই টাইমটা নিয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে উল্টো কেস করার জন্য। আমাদের হ্যারাস করার জন্যই এই কেস করা হয়েছে। কারণ তিনি তার মামলার এজাহারে যা যা বলেছেন, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে অপদস্থ করার কারণে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তাদের মানুষজন গালাগাল করছে, এতে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
‘এখন আমার কথা হচ্ছে, সে বারবার বলছে, সে বিড়াল নিয়ে ব্যবসা করছে না। আমরা তাকে কখনোই গালিগালাজ করি নাই। সে চেয়েছিল আমাদের দমাতে, ভীতি তৈরি করতে। আমরা এখনও আইনিভাবে তার বাসার বিড়ালগুলো উদ্ধার করে ভালো কোনো পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।’
তাপসীর করা মামলার এজাহারের একটি অনুলিপি নিউজবাংলা পেয়েছে।
মনিরা আলম বলছেন, তার বিড়াল মাথিনের ওপর নির্যাতন ও তাপসীর ‘কর্মকাণ্ডে’ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।
এজাহারে তাপসী দাশ বলেছেন, শখের বশে প্রাণীদের প্রতি মায়া তৈরি হওয়ায় তিনি মানুষকে বিনোদন দিতে বিড়ালের কর্মকাণ্ডের ভিডিও অনলাইনে প্রচার করেন। এতে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হন। তার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে আসামিরা থানায় অভিযোগসহ ডিজিটাল মাধ্যমে নানা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে আর্থিক ক্ষতি করছেন।
তাপসী বলেছেন, তিনি একজন সহজ, সরল, উচ্চশিক্ষিত, ভদ্র-নম্র ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নারী। পক্ষান্তরে আসামিরা ধূর্ত, তথ্য-সন্ত্রাস, পরধনলোভী ও আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল। একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে ‘পুচি ফ্যামিলি’ নামে ফেসবুক পেজ ও ‘পুচি ফ্যামিলি অরিজিনাল’ নামে ইউটিউব চ্যানেলের কর্ণধার তিনি।
ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ফলোয়ার সমৃদ্ধ হয়ে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলটি পরিচালনা করে আসছেন।
তিনি শখের বশে তার পোষা প্রাণীদের যত্নের জন্য ৬০ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় থেকে প্রাণীদের যাবতীয় চিকিৎসা, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সব রকমের সেবাযত্ন দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। এই কাজে তার স্বামী ও তার বাবা তাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছেন।
মামলায় তাপসী দাশ আরও বলেছেন, শখ ও প্রাণিকুলের প্রতি মায়ার কারণে পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসায় উজ্জীবিত হয়ে তার ব্যক্তিগত আনন্দ ও ভালোলাগা তথা সমমনা লোকদের হাসি, আনন্দ ও বিনোদন, শখ, আহলাদ ইত্যাদি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ‘পুচি ফ্যামিলি’ নামে ফেসবুক পেজ ও ‘পুচি ফ্যামিলি অরিজিনাল’ নামে ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও পোস্ট বা শেয়ার করেন।
মানুষের ভালোবাসা ও তার মানবিক আচরণ বা ব্যবহারের জন্য পেজটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। ফলে প্রায় সাড়ে নয় লাখ ফলোয়ার হয়।
মামলায় তাপসী দাবি করেছেন, তিনি তার জীবনযাত্রার ও বার্ষিক খরচের টাকা দিয়ে পোষা প্রাণীদের আদর-যত্ন, চিকিৎসাসেবা ও ভরণপোষণ করেন। তিনি বলেছেন, তার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে উল্লিখিত আসামিসহ অজ্ঞাতপরিচয় অনেক আসামি ও বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপ থেকে বিভিন্নভাবে তার মানহানির চেষ্টা করা হয়েছে।
এমনকি আসামিরা তাপসীর ছবির সঙ্গে মিল করে ফেক নিউজ করিয়েছেন। তাপসীকে নিয়ে বাজে বাজে মন্তব্য করেছেন। যেমন: শাকচুন্নি, ডাইনি, রাক্ষসী। তাপসীর স্বামীকে ব্রহ্মদৈত্য, টাকলু বলেছেন। পোষা প্রাণীদের চিকিৎসকদেরও বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন তাপসী দাশ।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, আসামিদের এহেন কর্মকাণ্ডে তাপসী ও তার স্বামীর স্বাভাবিক জীবন যাপনে অশান্তি ঘটছে। আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে পুচি ফ্যামিলি বয়কটের অপপ্রচার চালানোর পাশাপাশি মানহানিকর স্ট্যাটাস, পিকচার পোস্ট, কমেন্টস ইত্যাদি শেয়ার করছেন, যা সুস্পষ্ট অপরাধ। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে তার প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এ জন্য এজাহারে ২০১৮ সালের ডিজিটাল আইনের ২৩/২৪/২৫/২৬/২৭(১)(খ)(গ)(ঘ)/২৯/৩৭/৩৫ ধারায় আসামিরা অপরাধ করেছেন দাবি করে আদালতের কাছে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসহ শাস্তির প্রার্থনা করেন তিনি। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে আগস্ট মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।
মামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাপসী দাশ ও তার স্বামী পার্থপ্রতিম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে গত চার দিন ফোন করলেও তারা সাড়া দেননি। তাদের ফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে এ-সংক্রান্ত প্রশ্নসংবলিত খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পায়নি নিউজবাংলা।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুচি ফ্যামিলির তাপসী দাশের হাতে নির্যাতনের শিকার বিড়ালগুলো উদ্ধার করার জন্য যারা আইনি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিভিন্ন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন, ফেসবুক-ইউটিউবে যারা তার তীব্র সমালোচনা করেছেন, মামলায় তাদের আসামি হয়েছে। এই মামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে পোষা প্রাণী নির্যাতনের মতো ঘটনাটিকে আড়াল করে প্রকৃত প্রাণিপ্রেমীদের মধ্যে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা।’
প্রাণিপ্রেমী ও অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, পুচি ফ্যামিলির বিরুদ্ধে বিড়াল নির্যাতনের অভিযোগ করে তার বাসা থেকে নির্যাতনের শিকার বিড়ালগুলোকে উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি।
অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সংস্থার এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে পুচি ফ্যামিলির তাপসী দাশ গত সোমবার আমাদের ১৫ জনের নাম ও তিনটি গ্রুপের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারাই তার বিরুদ্ধে বিড়াল নির্যাতনের অভিযোগ করে লেখালেখি করেছেন, তাদের নামে এই মামলা করেছেন। মামলার তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সিআইডিকে।’
তবে সিআইডির জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে জানান, মামলার নথি এখনও তাদের কাছে পৌঁছায়নি। পৌঁছালেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রাণিপ্রেমীরা জানান, বিড়াল নির্যাতনের অভিযোগ মিরপুর ডিওএইচএস পরিষদকেও জানানো হয়। সেই বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। এখন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলো, উল্টো তিনিই অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করায় আতঙ্কে রয়েছেন বিড়ালপ্রেমীরা।
তাদের জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার এসআই শরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওনারা যে ধরনের অভিযোগ করেছেন, সে বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু করার নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেন তারা।’
পুচি ফ্যামিলিকে ‘বাসা ছাড়ার নোটিশ’
অ্যানিমেল কেয়ার সোসাইটি অফ বাংলাদেশের পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্যাট ফ্যান্সিয়ার্স সোসাইটির (বিসিএফএস) চেয়ারম্যান সারা বিনতে জামানের দাবি, মিরপুর ডিওএইচএসের ভাড়া বাসার মধ্যে নোংরা পরিবেশে বিড়াল পালন, নির্যাতন ও নানা ধরনের সমালোচনা তৈরি হওয়ায় পুচি ফ্যামিলিকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, ‘ডিওএইচএস কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, তাকে বাসা ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে।’
প্রাণীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা অ্যানিমেল শেল্টারের কর্মীরা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, বাড়ি ছাড়ার নোটিশ পাওয়ার পর থেকেই পুচি ফ্যামিলির তাপসী দাশ ও তার পরিবারের সদস্যরা আবারও আত্মগোপনে চলে গেছেন।
তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিড়াল বিক্রির অভিযোগ
একাধিক বিড়ালপ্রেমী নিউজবাংলাকে জানান, পুচি ফ্যামিলি বিড়াল পালনের কোনো সঠিক নিয়মকানুন মানে না। নিষ্ঠুরতার দৃশ্য ধারণ করে ইউটিউবে আপলোড করেন ভিউ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর জন্য। এর ফলে বিভিন্ন বিড়ালপ্রেমী তার মাধ্যমে বিড়াল কিনে থাকেন। পুচি ফ্যামিলির তাপসী দাশ ও পার্থ চৌধুরী এ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিড়াল বিক্রি করে থাকেন।
বিসিএফএসের চেয়ারম্যান সারা বিনতে জামান নিউজবাংলাকে বলেন, তাপসীর কাছে যেসব বিড়াল রয়েছে, তার সবই অন্যের কাছ থেকে অ্যাডাপশনে নেয়া। মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে অ্যাডাপশনে নিয়ে তিনি বিড়ালগুলোর ওপর নির্যাতন করছেন। বিড়াল পালনে অনিয়ম ও নির্যাতনের দৃশ্য দেখে বিড়ালগুলোর প্রকৃত মালিকরা তাদের বিড়াল ফেরত চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করার পর বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিয়েছেন তাপসী দাশ ও তার অনুসারীরা। এ কারণে অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন।
‘পুচি ফ্যামিলির পুচিও তাপসী দাশের নয়’
সারা বিনতে জামান আরও বলেন, তাপসী দাশের কাছে পুচি, হাম্বা ও মাথিন নামে বেশ কিছু বিদেশি বিড়াল রয়েছে, যেগুলোর একটিরও প্রকৃত মালিক নন তিনি। এই বিড়ালগুলো যখন তার কাছে মালিকরা দিয়েছিলেন, তখন শর্ত ছিল তিনি ব্রিডিং মেটিং করাতে পারবেন না, কিন্তু সেই নিয়ম মানেননি। হাম্বাকে তিনি মেরে ফেলেছেন। মাথিনকে এখনও নির্যাতন করে থাকেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
জান্নাতি নামে এক নারীর দাবি, পুচি ফ্যামিলির কাছে থাকা ফিউনা বিড়ালের মালিক তিনি। তাপসীর কাছে ফিউনাকে অ্যাডাপশনে দেন প্রেগন্যান্ট অবস্থায়।
জান্নাতি বলছেন, পরবর্তীতে তাপসীর বাসায় ফিউনার একটি বাচ্চা হয়। যেটি পুচি নামে পরিচিত। কাজেই এই পুচির মালিক তিনি। তবে তাপসী পুচিকে নিজের বাচ্চা বলে দাবি করে আসছেন।
মাথিনকে নির্যাতন ও তাপসীর হুমকিতে অসুস্থ মনিরা
নিজের বিড়াল উদ্ধার করার জন্য পল্লবী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন রাজধানীর শাহজাহানপুরে গৃহিণী মনিরা আলম। মনিরার সেই বিড়ালের নাম মাথিন। দেশি প্রজাতির সেই বিড়াল এখনও উদ্ধার হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, তাপসী দাশ মাথিনের মালিক মনিরা আলমকে নিয়ে ফেসবুকে-ইউটিউবে বাজে বাজে মন্তব্য করেছেন। লাইভে এসে তাকে নিয়ে গালিগালাজও করেছেন।
মনিরা আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানেই শেষ নয়, জিডির পর তাপসীর লোকজন আমার স্বামীকে হুমকি দিয়েছেন। এসব ঘটনায় আমরা পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বাধ্য হয়ে শাহজাহানপুর থানায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘তাপসীর সঙ্গে আমার ফেসবুকে পরিচয়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার কাছে আমার মাথিনকে দত্তক দিই। পরে যখন দেখলাম সে বিড়ালকে নির্যাতন করে ভিডিও বানাচ্ছে, তখনই তার কাছে আমার বিড়াল চাইলে গালিগালাজ শুরু করেন। এমন ভাষায় গালমন্দ করেছেন, যেগুলো শুনে আমার স্বামী ছেলেসহ আমরা রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেছি। এরপর থেকেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
মনিরা আরও বলেন, ‘মাথিনকে মৌখিক শর্তে তাপসীর কাছে রাখতে দিয়েছিলাম। নির্যাতন করার পর মাথিনকে যখন ফেরত চাইলাম, তখন তাপসীসহ তার ফ্যান ফলোয়াররাও আমাকে ফেসবুকে নোংরা গালিগালাজ করেন। তিনি লাইভে এসে আমাকে যে গালি দেন, তার ভিডিও আছে আমার কাছে। মাথিনকে দেয়ার আগে থেকে তার সঙ্গে কথাবার্তার প্রমাণও আছে আমার কাছে।
‘এসব ঘটনায় আমাদের আমেরিকাপ্রবাসী ছেলে আপসেড হয়ে পড়েছে। সন্দেহ হচ্ছে, আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করে মাথিনের ওপর নির্যাতন আরও বাড়িয়েছে পুচি ফ্যামিলি।’
ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল বন্ধের আবেদন
বিড়াল নির্যাতনের (অ্যানিমেল অ্যাবিউজ) অভিযোগ এনে পুচি ফ্যামিলির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল বন্ধের জন্য ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছে ভার্চুয়াল পিটিশন করেছে বেসরকারি সংস্থা এএলবি। এই আবেদনের পক্ষে সমর্থন আদায়ে ফেসবুক-ইউটিউবে কাজ করছেন প্রাণিপ্রেমীরা।
আরও পড়ুন:নাটোর জেলার উত্তরা গণভবনে এখন হৈমন্তি আর ম্যাগনোলিয়ার ভরা মৌসুম। সাতটি করে হৈমন্তি আর ম্যাগনোলিয়ার রুপে রসে গন্ধে অনন্য হয়ে উঠেছে উত্তরা গণভবনের আঙিনা। এছাড়া দুটি হোয়াইট এলামন্ড গন্ধ বিলিয়ে যাচ্ছে। ফুলের কানে ভ্রমরের গুঞ্জনে মোহনীয় চারিদিক।
অপরুপ স্থাপত্য শৈলীর রাজপ্রাসাদ আর বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসা অসাধারণ সব সামগ্রীর সংগ্রহশালাকে ছাড়িয়ে যায় গণভবনের দুষ্প্রাপ্য কিছু গাছের সমাহার। এর বেশির ভাগটাই ফুল গাছ। এরমধ্যে পারিজাত, ম্যাগনোলিয়া, নাগালিঙ্গম, এগপ্লান্ট, হোয়াইট এলামন্ড, সুরভিকা আর হৈমন্তি অন্যতম। এসব ফুল গাছের উপস্থিতি জানান দেয়, উত্তরা গণভবন শুধু রাজপ্রাসাদই নয় সুবিশাল পুষ্প সাম্রাজ্যও বটে।
এরমধ্যে পারিজাত চক্রাকারে পাতার রঙ পাল্টিয়ে লাল রঙের ফুলের থোকায় পরিণত হয় বসন্তে। এগপ্লান্টে প্রায় সারা বছর দু’একটা ফুল থাকলেও শীত আর বর্ষা এর ভরা মৌসুম। নাগালিঙ্গম আর ম্যাগনোলিয়া বসন্তে ফুটলেও বিস্তৃতি বর্ষাকাল পর্যন্ত। সুরভিকা ফোটে মূলত শীতকালে। গ্রীষ্মের তাপদাহকে উপেক্ষা করে হোয়াইট এলামন্ড তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে এখন।
আর বসন্তে পাতা হারিয়ে হৈমন্তি গাছগুলো হয়ে পড়ে বিবর্ণ। বসন্তের শেষার্ধে ফুল আসতে শুরু করলেও গ্রীষ্মে হৈমন্তির রুপ হয়ে ওঠে অপরুপ। সারাগাছ জুড়ে ফুল আর ফুল, কোন পাতা নেই। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে এ যেন শুভ্র সুন্দর শান্তির পরশ। গ্রীষ্মের এই ফুল সুবাস ছড়াবে অন্তত দুই মাস। এটিই হৈমন্তির ভরা মৌসুম। শরতে আরো একবার হৈমন্তি শুভ্র সুন্দর হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। তবে এত ফুলের প্রাচুর্য আর সুবাস তখন থাকে না।
গণভবনের সিংহ দুয়ার পেরিয়ে সোজা এগিয়ে গেলে ইটালিয়ান গার্ডেনের প্রবেশপথের আগে দাঁড়িয়ে আছে একটি হৈমন্তি। ইটালিয়ান গার্ডেনে একটি, হরিণনিবাসে একটি, সংগ্রহশালার সাথে একটি, রাজপ্রাসাদের সামনে দুইটি হৈমন্তি গাছ। আর রাণীমহলে একটি হৈমন্তি গাছ। ধীরে বর্ধনশীল হৈমন্তির সাতটি গাছের মধ্যে রাজপ্রাসাদের সামনের গাছটি ফুলে ফুলে সবচেয়ে সমৃদ্ধ।
দুষ্প্রাপ্য গাছের তালিকায় আছে ম্যাগনোলিয়া। এর সংখ্যাও সাতটি। কুমার প্যালেস এর সাথে একটি ছাড়া অন্য ছয়টি ইটালিয়ান গার্ডেনে। কাঁঠাল পাতার মত প্রায় পাঁচ মিটার উঁচুতে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাগনোলিয়ার প্রতিটি গাছে শত শত ফুলের কলি আর ফুল। বিরাট আকৃতির সাদা ফুল অকৃপণভাবে সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইটালিয়ান গার্ডেনকে সুশোভিত করে রাখে অতিকায় দুটো হোয়াইট এলামন্ড। এখন শুধু সুশোভিতই নয় সারা গাছ জুড়ে সাদা ঝিরিঝিরি ফুল রাশি পুরো গার্ডেনকে সুরভিত করে রেখেছে।
জেলা প্রশাসক ও উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আসমা শাহীন বলেন, হৈমন্তী, ম্যাগনোলিয়া আর হোয়াইট এলামন্ড গণভবনকে সুশোভিত সুরভিত করে রেখেছে। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীদের আগমনে মুখর উত্তরা গণভবনের আঙিনা। সৌন্দর্য পিপাসুদের মধ্যে অনেকেই গ্রীষ্মের এই তাপদাহে এসব ফুল গাছের তলায় দু’দণ্ড শান্তির পরশ খুঁজে পাচ্ছেন। দুষ্প্রাপ্য এসব গাছের সুরক্ষায় জেলা প্রশাসন সদা সচেষ্ট।
গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। তার ইচ্ছা ছিল এলাকায় বিচারক হয়ে ফেরার; ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়ার। সে ইচ্ছা অপূর্ণ রেখে সোমবার লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এ ছাত্রী।
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি ছাত্রীনিবাস থেকে রবিবার রাতে ঝুলন্ত অবস্থায় আনিকাকে উদ্ধার করে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
আনিকার বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামে। সেখানে সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তার শতবর্ষী দাদা আলহাজ সোলাইমান আলী মণ্ডল হতভম্ব হয়ে এদিক-সেদিক দেখছেন। কান্না থামছিল না ফুফু আক্তার বানুর।
আনিকার এমন মৃত্যুতে বিস্মিত পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীরা চেয়েছেন ঘটনার রহস্য উদঘাটন।
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ২৪ বছরের এ তরুণী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হন ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও স্থিতিস্থাপকতা বিভাগে।
এ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিচারক হতে চেয়েছিলেন আনিকা।
গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনে নওগাঁয় সম্মুখসারিতে ছিলেন আনিকা। পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলায় মাইক হাতে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে সড়কে দাঁড়ান তিনি।
সুষ্ঠু তদন্ত দাবি
পরিবারসহ এলাকাবাসীর দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আনিকার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হোক।
বকুল নামের একজন মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গিয়ে দেখি আনিকার মরদেহ ফ্যানের সাথে ঝুলছিল, কিন্তু অর্ধেক মেঝেতে লেগে ছিল। আমার জানা মতে একটা ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।
‘আমরা ঢাকায় আছি। তার বাবা পাগল হয়ে গেছে। তবে আমরা যখন যাই, তখন দেখি লক ভাঙা ছিল। মনে হয় তাকে কেউ নামানোর চেষ্টা করেছিল।’
বুটেক্স ছাত্র আটক
আনিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) এক ছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বাহিনীর ধারণা, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন ঢাবির এ ছাত্রী। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় অনিয়ম করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিইসি) বীজ ও সারের ডিলারশিপ নিয়েছেন সরকারি কলেজের প্রভাষক ও কৃষি কর্মকর্তা। তাদের স্বজনদেরও একই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন তারা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ অনুসারে, একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে অন্য কোথাও থেকে কোনো ধরনের সুযোগ- সুবিধা নেওয়ার বিধান নেই। একই সঙ্গে একজন ব্যক্তি একের অধিক ডিলারশিপ নিতে পারবেন না।
অন্যদিকে আচরণ বিধিমালার ১৭ (১) নম্বর ধারায় বলা হয়, ‘এই আইনের অন্য বিধান অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায় জড়াতে পারবেন না অথবা দায়িত্বের বাইরে অন্য কোনো কাজ কিংবা চাকরি নিতে পারবেন না।’
অনিয়মে যুক্তদের ভাষ্য
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী নওগাঁতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ফজলে রাব্বি। তিনি তার স্ত্রী সম্পা বেগমের নামে বিএডিসির বীজের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়ে কৌশলে ডিলারশিপ বিক্রি করে খাচ্ছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই নওগাঁ শহরে বসবাস করলেও তারা পোরশা উপজেলায় ‘সাইফ ট্রেডার্স’ নামের ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স নিয়ে রেখেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্পা বেগম তার নামে লাইসেন্স স্বীকার করে বলেন, ‘আমি নওগাঁ বসবাস করলেও পোরশায় আমার দোকান রয়েছে। ওখানে একটি ছেলে আছে। সে দোকান চালায়।’
দোকানের ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী রাব্বি নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। তিনি সব বলতে পারবেন।’
সাইফ ট্রেডার্স নামের কোনো দোকান পোরশা বাজারে পাওয়া যায়নি। দোকানের সঠিক ঠিকানা কোথায় জানতে চাইলে সম্পা কোনো সদুত্তর না দিয়ে কথা না শোনার ভান করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফজলে রাব্বির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই লাইসেন্সটা আমার স্ত্রী সম্পার নামে করা আছে।’
নিয়মিত বীজ তোলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভাই অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান। আপনাদের অনেক সাংবাদিক আসে; চা খেয়ে যায়।
‘সবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। আপনি অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান।’
ওই বক্তব্যের পর সংযোগটি কেটে দেন তিনি।
এদিকে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মেসার্স জিমান ট্রডার্স নামে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন নিয়ে রেখেছেন বিএডিসির সার লাইসেন্সের ডিলারশিপ। প্রোপাইটারে জায়গায় রয়েছে তার নিজের নাম।
তার ছেলে জিমানের নামে নিয়ামতপুর বাজারে রয়েছে দোকান। নিয়মিত বিএডিসির সার ও বীজ তুলে বিক্রি করেন তিনি।
এ বিষয়ে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘লাইসেন্সটা অনেক আগে করা ছিল। তখন আমার কলেজ সরকারি হয়নি। ২০১৮ সালে আমার কলেজ সরকারি হয়েছে।’
‘তাহলে দীর্ঘ সাত বছর ধরে সরকারি ডাবল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। এটার সুযোগ রয়েছে কী?’
উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই একাধিক জায়গা হতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা আমার অন্যায় হয়েছে। আমি তিন মাস আগে ডিসি অফিসে লাইসেন্স বাতিলের আবেদন জানিয়েছি।’
এদিকে ধারাবাহিকভাবে গত মাসেও সরকারি গুদাম থেকে সার তুলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সটা আমার ছেলের নামে হস্তান্তর করা হবে। তার প্রক্রিয়া চলছে।’
অপরদিকে ধামইরহাট উপজেলার ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলাম তার নিজ নামে নিয়ে রেখেছেন বিসিআইসির সার ডিলারশিপ। সরকারি গুদাম থেকে নিয়মিত সার তুলে উপজেলার আমাইতাড়া বাজারে বিক্রি করছেন তিনি।
এ বিষষে জানতে ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে ওটা অনেক আগে করা হয়েছিল। পরে আমার কলেজ সরকারীকরণ হয়।
‘সরকারি একাধিক জায়গা হতে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি বেআইনি হয়েছে। আমি লাইসেন্সটা ট্রান্সফার করে দেব।’
‘আপনি তো এখনও নিয়মিত সার তোলেন।’ এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আসলে এখন ইরি-বোরো মৌসুম চলছে তো। তাই একটু তুলতেছি।’
যা বলছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা
ডিলারশিপের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা এটা করতে পারে না।’
‘আপনার অধিদপ্তরে এমন অনেকে রয়েছে। তাহলে তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’
এমন প্রশ্নে প্রোগ্রামের ব্যস্ততার কথা বলে ফোন লাইন কেটে দেন এ কর্মকর্তা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়।
‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অজ্ঞাত মুখোশধারীরা গত রবিবার রাতের বেলায় জমিদার বাড়ির পুরোহিতকে ধরে নিয়ে জঙ্গলে বেঁধে রাখে। টাকা-পয়সা এবং জমিদারেরও খোঁজ করে তারা।
এমন পরিস্থিতিতে ডাকাত আতঙ্কে রয়েছেন বাড়ির লোকজন।
মুখোশধারীরা ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশপাশে তল্লাশি চালানোর কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে।
এতে দেখা যায়, রবিবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী নেলী চক্রবর্তী ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে দুজন মুখোশধারী ধরে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের সঙ্গে পুরোহিতকে বেঁধে ফেলে।
জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাতে ঘুমানোর আগে স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। এর মধ্যেই দুজন মুখোশধারী আমাদেরকে ধরে বাড়ির পাশে জঙ্গলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এ সময় মুখোশধারীরা জমিদার কোন ঘরে জানতে চায়। সিন্দুকের খোঁজও চায় তারা।
‘বাড়ির তিন তলায় ওঠার চেষ্টাও করে। ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশেপাশে তল্লাশি চালায়।’
বাড়ির কেয়ারটেকার স্বপন সাহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত জমিদার বাড়িতে চাকরি করছি। দেশের বিভিন্ন জায়গার লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন। পুরো বাড়ি তাদের ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করি।
‘কিন্তু অতীতে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এই ঘটনার পর থেকে বাড়ির লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটিতে জমিদারের একমাত্র শেষ বংশধর মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বসবাস করছেন। নিঃসন্তান ব্যক্তিটির স্ত্রী কিছুদিন আগে লোকান্তরিত হন। বাড়িটিতে বর্তমানে তিনি ছাড়া কয়েকজন কর্মচারী ও পুরোহিত অবস্থান করছেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।
বাড়ির মালিক মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বলেন, ‘মুখোশধারীরা হয়তো ধনদৌলত নিতে কিংবা আটকে রেখে টাকা-পয়সা দাবি করতে চেয়েছিল। তবে বাড়ির লোকজন সজাগ হয়ে যাওয়ার মুখোশধারীরা সেটা করতে পারেনি।’
জানতে চাইলে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন:বিনা নোটিশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, বগুড়ার আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে।
এ ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।
কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী লোকজনও। তাদের একজন বেসরকারি সিম কোম্পানির কর্মী আল-আমিন।
তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে সকাল সাড়ে আটটায় মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে তেল শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আধা কিলোমিটার ঠেলে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় পেট্রল পাম্পে নিয়ে আসি।
‘পাম্প বন্ধ থাকায় আবার ঠেলে নিয়ে চলে যেতে হয়। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না।
‘এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে অবস্থিত মেসার্স সাকিব ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অনেকেই অফিসগামী মোটরসাইকেল আরোহী ও জ্বালানিচালিত বিভিন্ন যানবাহনগুলো পাম্পে এসে বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যানবাহন চালকদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান যানবাহন চালকরাও।
‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সকল পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়েছে।’
প্রেক্ষাপট
পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সওজ বগুড়া। ওই সময় সান্তাহারের হামিম ফিলিং স্টেশন ও আনিকা ফিলিং স্টেশনে তেলের মিটার উচ্ছেদ করা হয়।
তারা জানান, পূর্বঘোষণা, নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিয়ে এ উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ ট্রেন ব্যবহার করেন। হঠাৎ করে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগে বাসের ওপর বাড়তি যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে বাসের টিকিটের মূল্য বেড়ে গেছে।
খুলনা থেকে নওগাঁ যাওয়ার জন্য সকালে রেলওয়ে স্টেশনে এসেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক।
তারা জানান, খুলনা থেকে নওগাঁ যেতে তারা সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কোনো টিকিট পাননি। বাসে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তাতে ভাড়া গুনতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এ পথে নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকার বেশি নয়।
শ্রমিকদের একজন সান্তনু বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা কয়েকজন এখানে এসে বসে আছি। কয়েকজন গিয়ে বাসের খোঁজ নিয়েছে; কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
‘অতিরিক্ত ভাড়ায় আমরা যেতে পারছি না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি ট্রেন চালু হয় কি না। না হলে সন্ধ্যার দিকে বাসে করে রওনা দেব।’
সান্তনুর মতো অনেক দূরপাল্লার যাত্রীকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা বাসে করে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।
খুলনা থেকে উত্তরবঙ্গে দৈনিক একাধিক ট্রেন যাতায়াত করে। এর মধ্যে কপোতাক্ষ ও সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস খুলনা থেকে রাজশাহী, রূপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চিলাহাটি, মহানন্দা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রকেট এক্সপ্রেস খুলনা থেকে পার্বতীপুর, নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, বেনাপোল ও মোংলা কমিউটার খুলনা থেকে বেনাপোল যাতায়াত করে।
এ ছাড়া সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ঢাকাতে যাতায়াত করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এর মধ্যে কোনো ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যায়নি। ফলে হাজার হাজার হাজার যাত্রী স্টেশনে এসে ফিরেছেন।
রেলওয়ের রানিং স্টাফরা মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এ সুবিধা সীমিত করা হয়।
ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত বুধবার রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তারা।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সোমবার রাত ১২টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। আজ কোনো ট্রেন চলেনি। টিকিট বুকিং দেওয়া যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’
এ সমস্যার সমাধান কবে হবে, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন:দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে নব্বইয়ের দশকে নির্মিত ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি।
এমন পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও আদালতে কর্মরতদের।
সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থদের অবহিত করে গণপূর্ত বিভাগের ঝালকাঠি অফিস ২০১৯ সালে চিঠি চালাচালি করলেও বিষয়টি এখনও ফাইলবন্দি।
ভবনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণের দাবি আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগ ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর জরাজীর্ণ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ৫ নভেম্বর বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরাবর পরিদর্শন প্রতিবেদন পাঠান।
ভবন পরিদর্শনকালে তিনজন উপসহকারী প্রকৌশলী, গণপূর্তের ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রতিবেদনের একটি কপি সংগ্রহ করেছে নিউজবাংলা।
কী ছিল পরিদর্শন কপিতে
ঝালকাঠি গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী অনিরুদ্ধ মন্ডল, মো. বদরুজ্জামান, মো. ইমরান বিন কালাম এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল-মাসুম স্বাক্ষরিত ওই পরিদর্শন কপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ভবনটির দুই তলায় করিডোরের বেশ কিছু স্থানে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়ছে। এ ছাড়াও নলছিটি কোর্ট রুমের পরিদর্শনকারীদের বসার ওপরের ছাদের অংশ খসে পড়েছে। এ সমস্ত স্থানে মরিচা পড়ে রড উন্মুক্ত হয়ে আছে। দ্বিতীয় তলা এবং নিচ তলার করিডোরের বেশ কিছু বিম ও কলামে ফাটল লক্ষ করা গেছে।
‘ভবনটির নিচ তলায় হাজতখানার ছাদের বেশ কিছু অংশসহ করিডোরের বিভিন্ন অংশে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়েছে। এসব স্থানেও মরিচা পড়ে রড বের হয়ে আছে। নিচ তলার বিভিন্ন কলাম এবং বিমের ফাটল লক্ষ করা গেছে। কিছু স্থানে কলাম ফেটে রড বের হয়ে গেছে।’
পরিদর্শন প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘ভবনটির দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ১৯৮৯-৯০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে ২০০৪-০৫ সালে তৃতীয় তলার উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে বিম কলামে ফাটল থাকায় এবং ছাদের কনক্রিট খসে পড়ায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
‘এমতাবস্থায়, উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত ডিজাইন বিভাগের মতামতসহ পরবর্তী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রয়োজন।’
প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ
সম্প্রতি জজ আদালত ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনের ছাদের ওপর থেকে খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফাটল ধরেছে অনেক পিলারেও। ভারি বৃষ্টি এলেই ছাদ ও দেয়াল চুষে পানি পড়ে মেঝেতে। নষ্ট হয়ে যায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র।
দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় তিন তলা ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিচারকের এজলাস, খাসকামরা, পেশকার, সেরেস্তাদারের কক্ষ, নকল কক্ষ, হাজতখানাসহ প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যেই চলছে আদালতের কার্যক্রম। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
যা বলছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা
আদালতের জরাজীর্ণ অবস্থার বিষয়ে কথা হয় আবদুর রহমান, তৈয়ব আলী, কামরুল ইসলাম, মুরাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থীর সঙ্গে।
তাদের একজন বলেন, ‘আদালত ভবনের ভিতরে প্রবেশের পর কার্যসম্পাদন করে বের হওয়া পর্যন্ত আমরা থাকি আতঙ্কে। প্রায় সময়ই ছাদের পলেস্তারা খসে নিচে পড়ে।
‘বর্ষায় তো বারান্দায় পানি জমে যায়। দেয়ালে পানি চুষে অনেক ফাইল নষ্ট হয়ে যায়।’
আইনজীবী মানিক আচার্য্য বলেন, ‘ভবনটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তার সংস্কার করছে না কর্তৃপক্ষ। বিচারকরা যদি ভালো পরিবেশে বিচারকার্য পরিচালনা করতে না পারে, তাহলে বিচারকার্যে মনোনিবেশও করতে পারেন না।
‘ঝালকাঠির বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সকলেই আমরা এ ভোগান্তিতে রয়েছি। বিভিন্ন সময়ে উচ্চপদস্থদের বিষয়টি অবগত করলেও এখনও কোনো ভূমিকা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’
আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফয়সাল বলেন, ‘ড্যামেজড ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।
‘আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা এবং নতুন ভবন নির্মাণ অথবা টেকসই সংস্কারের জন্য গণপূর্তের চিঠি চালাচালি হলেও দীর্ঘদিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাইনি। জনস্বার্থে দ্রুত নতুন আদালত ভবন নির্মাণ জরুরি।’
আইনজীবী আক্কাস সিকদার বলেন, ‘বর্তমানে এ আদালতে ১৬ হাজার দেওয়ানি মামলা এবং দেড় হাজার ফৌজদারি মামলা চলমান। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।
‘আদালত ভবনের নিচ তলায় হাজতখানার পশ্চিম দিকে মসজিদের সামনে একাধিকবার ধসে পড়েছে ছাদের অংশ। এখন এই ভবন অস্থায়ী সংস্কার না করে এটি ভেঙে এখানে নতুন ভবন করা উচিত।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘নব্বই দশকে দোতলা জজ আদালত ভবনটি নির্মাণের পর ২০০৬ সালে এর ওপর আরও এক তলা বর্ধিত করে তৃতীয় তলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে নিচ তলার অনেক পিলারে ফাটল ধরেছে। ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আদালতের স্টাফ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা রয়েছেন আতঙ্কে।
‘হাজতখানা সরিয়ে পার্শ্ববর্তী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে নেওয়া হয়েছে। ভবনে আগতদের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। দ্রুত এটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।’
জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ ঝালকাঠির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলম ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকার একই ধরনের বক্তব্য দেন।
তাদের একজন বলেন, ‘ভবন পরিদর্শনের রিপোর্ট ২০১৯ সালে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন ভবনের জন্য সম্ভাব্য বাজেট তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে আছে।
‘সেখান থেকে অর্ডার হলেই গণপূর্ত বিভাগ টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কার্যসম্পাদন করবে।’
ক্যাপশন: ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন। ছবি: নিউজবাংলা
ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের ভেতরের জরাজীর্ণ অংশ। ছবি: নিউজবাংলা
আরও পড়ুন:
মন্তব্য