টাকা সংরক্ষণের জন্য মানুষের নিরাপদ স্থান ব্যাংক। কষ্টার্জিত আমানত ভল্টেই রাখা হয়। কিন্তু সেই ভল্ট কি নিরাপদ? দেখা যাচ্ছে ভল্ট থেকে হাওয়া হচ্ছে টাকা। আর এই কাজে যুক্ত হচ্ছে খোদ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। এই অর্থ নিয়ে খেলা হচ্ছে জুয়া, যা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ।
ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে গায়েব হয়েছে ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এ ঘটনায় আটক ব্যাংক কর্মকর্তাই স্বীকার করেছেন, ধারাবাহিকভাবে টাকা তুলে জুয়ার বিনিয়োগ করেন তিনি।
শুধু বংশাল শাখাই নয়, এর আগে গেল বছর প্রিমিয়ার ব্যাংকের রাজশাহীর শাখার ক্যাশ ইনচার্জ শামসুল ইসলাম কৌশলে ব্যাংকের ভল্ট থেকে সরিয়ে ফেলেন ৩ কোটি ৪৫ কোটি টাকা। তিনিও পুলিশি জেরায় স্বীকার করেন, একটি অ্যাপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জুয়াড়িচক্রের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। সেখানেই এই অর্থ খোয়া গেছে।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকের ইন্টারনাল অডিটে এটা ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার ব্যাংকের শাখায় ইন্টারনাল অডিটে ক্যাশ কম পাওয়া যায়। পরে আবারও ইনভেস্টিগেশন করা হয়।
‘পৌনে ৪ কোটি টাকার মত কম ছিল। এরপর দায়িত্বে থাকা ক্যাশ-ইনচার্জের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রাথমিকভাবে ক্যাশ সরিয়ে ফেলার বিষয় স্বীকার করেন। ব্রাঞ্চের ক্যাশ-ইনচার্জ ও ম্যানেজার (অপারেশন) দুইজনকে থানায় দেয়া হয়েছে। এ দুইজনের কাছে ভল্টের চাবি থাকে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংক কর্মকর্তারা টাকা সরানো একটা বিপজ্জনক প্রবণতা। আমানতকারীদের অর্থ সরিয়ে তারা বিনিয়োগ করবে এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য না। এটা বন্ধ করতে হবে। যারা এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের অতিসত্ত্বর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিলে হবে না। অভিযুক্ত কর্মকর্তার চাকরি থেকে বরখাস্ত এটা সমাধান নয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে জেল-জরিমানা করতে হবে।
‘একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছে মানে এতে বোঝা যায় অধিকাংশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খুব দুর্বল। সুপারভিশন ও মনিটরিংও ঠিকমতো হয় না। যে যার মতো ছেড়ে দিয়েছে। জনগণের টাকা নিয়ে এ ধরনের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা মোটেও ঠিক না।’
জুয়ায় ঢাকা ব্যাংকের টাকা
আশ্চর্যজনক, বিশ্বাসযোগ্য না হলেও স্বীকারোক্তিতে এটিই প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ঢাকা ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা নিয়ে খেলা হয়েছে জুয়া। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বংশাল শাখার ক্যাশ-ইনচার্জ রিফাতুল হক জিজ্ঞাসাবাদে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন পুলিশ।
ঢাকা ব্যাংক বংশাল শাখার ক্যাশ ইনচার্জ রিফাতুল হক জানান, ২০১৮ সাল থেকে ব্যাংকের ক্যাশে হাত দেয়া শুরু। সময় সুযোগ বুঝে ধীরে ধীরে সরিয়ে নেয়া হয় বড় অঙ্কের অর্থ। গেল ১৭ জুন ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ তদন্তে ওঠে আসে টাকা সরানোর ঘটনা।
অডিট কমিটির কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে বলা হয়, ভল্টে রাখা ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিলের ভেতরে ১০০ টাকার নোট দিয়ে বাকি নোট সরিয়ে নেয়া হয়। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে একাই এই কাজ করতেন রিফাতুল। খরচ করতেন জুয়ার আসরে।
বিষয়টি ধরা পড়ার পর আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
জুয়ায় গেছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের টাকাও
গেল বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা উধাওয়ের আরও একটি ঘটনা ঘটে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের রাজশাহীর শাখার ক্যাশ ইনচার্জ শামসুল ইসলাম কৌশলে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা সরাতেন। ভল্টে সব সময় প্রায় ১৫ কোটি টাকা থাকতো। তিনি টাকার বান্ডেলের সামনের লাইন ঠিক রেখে পেছনের লাইন থেকে টাকা সরাতেন, যাতে কারও সন্দেহ না হয়। এভাবে তিনি ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়ে ফেলেন।
এরপর এই টাকা দিয়ে শামসুল জুয়া খেলেন। একটি অ্যাপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জুয়াড়িচক্রের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। জবানবন্দিতে তখন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, লোভে পড়ে তিনি ২০১৮ সাল থেকে কৌশলে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা সরিয়ে জুয়া খেলতে শুরু করেন।
পিছিয়ে নেই অন্য ব্যাংকও
কিছু দিন আগে ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে ওই ব্যাংকের একজন আইটি অফিসারের ২ কোটি ৫৭ লাখ সরিয়ে ফেলেন। ব্যাংকের ইন্টারনাল ও পুলিশি তদন্তে জানা যায়, তিন বছরে ৬৩৭টি অ্যাকাউন্টের ১৩৬৩টি লেনদেনের মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কিন্তু ধরা পড়ার আগেই ওই কর্মকর্তা দেশের বাইরে চলে যান। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মোট ৬ জনকে আসামি করে মামলা করে। ওই ঘটনার চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বড় অঙ্কের অর্থ জুয়ায় ব্যবহার হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ভল্টের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জুয়ার এমন নেশায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে, রক্ষক ভক্ষক হলে কোথায় যাবে মানুষ। দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের হাতেই ব্যাংকের টাকা এখন নিরাপদ নয়।
শুধু জুয়াতেই বিনিয়োগ নয়, ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভল্টের অর্থ তছরুপের ঘটনা ঘটে। নিরীক্ষাতে এমন অনিয়ম অহরহ উঠে আসছে।
টাকা নিয়ে গ্রাহকের উদ্বেগ
একের পর এক বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা খোয়া যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমানতকারীরা। তারা বলছেন, ব্যাংকের ভল্টে যদি টাকা সুরক্ষিত না থাকে তাহলে তারা টাকা কোথায় রাখবেন!
ঢাকা ব্যাংকের ভল্ট থেকে লোপাট করা টাকা গ্রাহকের আমানত। তাই যেসব গ্রাহক এই ব্যাংকে অর্থ জমা রেখেছেন, তাদের অর্থ পেতে সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে ব্যাংক। তারপরেও গ্রাহকের উদ্বেগের শেষ নেই।
ঢাকা ব্যাংকের এমডি এমরানুল হক বলেন, ‘খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কারণ, টাকা তো উদ্ধার করতে হবে। যারা এ টাকা নিয়েছে তাদেরকে এ টাকা ফেরত দিতে হবে। যতদিন না পাওয়া যাবে, ততদিন প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে।’
ঢাকা ব্যাংকে কমিটি গঠন রোববার
কীভাবে, কতদিনে এত টাকা সরানো হয়েছে সে বিষয়ে একটি কমিটি করবে ঢাকা ব্যাংক। ব্যাংকের এমডি এমরানুল হক বলেন, ‘এটা এখন আইনিভাবেই এগিয়ে গেছে। ক্রিমিনাল কেস সুতরাং, পুলিশের কাছে দেয়া হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য ব্যাংক থেকে একটা তদন্ত কমিটি করা হবে।
‘বৃহস্পতিবারের ঘটনা কিন্তু পরের দুইদিন শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন। রোববারে কমিটি করা হবে। এজন্য কয়েকদিন সময় লাগবে। কমিটি গঠন করার পর পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
আরও পড়ুন:
উপজেলা নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে, আগামী ৮ মে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন চলাকালে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে কোনো সম্মেলন, মেয়াদোত্তীর্ণ সম্মেলন, কমিটি গঠন এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে।’
মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নিকটজনেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা ভবিষ্যতে করতে চায় তাদেরও নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যারা আছে তাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’
নির্দেশনা দেয়া হলেও অনেকেই এখনও নির্বাচনে আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রত্যাহারের তারিখ শেষ হোক, তার আগে এ বিষয়ে কীভাবে বলা যাবে।’
ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক যাত্রায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
ঈদযাত্রায় অন্যান্য পথে দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত হয়েছে।
‘সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে।
‘দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল।
‘বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায় শিশু হৃদরোগ (কার্ডিয়াক) বিভাগের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) লাগা আগুন পুরোপুরি নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর ওই আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় এক এক ঘণ্টার চেষ্টার পর ২টা ৪০ মিনিটে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নিয়েছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট, সিদ্দিক বাজার থেকে একটি ইউনিট, তেজগাঁও থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ২টা ৪০ মিনিটে আগুন পুরো নিভিয়ে ফেলা হয়।
তবে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে লাগা এই আগুনে রোগীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, রোগীদের সবাইকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েচে। ইউসিইউতে ১৭ জন রোগী ছিলেন আমরা নামিয়ে এনেছি। কারো কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, হাসপাতালের বি ব্লকের ৫ তলার কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে আগুন লেগেছে। আগুনের চেয়ে ধোঁয়া একটু বেশি ছড়িয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে করা হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে আশঙ্কা করছি এসি থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে লাগা আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে একজন মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এদিকে বিকেলে দেখা যায়, আগুন লাগার পর হাসপাপতালের ৫ তলা ও ৪ তলার পুরো ধোঁয়ায় ভরে গেছে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নেন।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে। ওপরে সবকিছু কখন ঠিক হবে তা জানেন না এ রোগী ও স্বজনরা। রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা আশঙ্কা করছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের বাচ্চারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭ দিন আগে শিশু হাসপাতাল আইসিইউতে ভর্তি হয় পাঁচ মাসের শিশু রাইয়ান। আগুন লাগার পর শিশুটির মা আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে শিশুটিকে নিয়ে নিচে নামে আসেন। বাচ্চাকে নিয়ে এই অসহনীয় গরমে অবস্থান নিয়েছেন হাসপাতালের বাইরে।
কয়েকজন শিশুর অভিভাবক জানান, পাঁচতলার আইসিইউতে যেসব বাচ্চা ছিল তাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক বাচ্চাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। তাদের অক্সিজেন ছাড়া নিচে নামানো হয়। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল।
মধ্যসত্ত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ।
শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সজাগ থাকলে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন না।
মন্ত্রী বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য দিতে চায় সরকার। সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুনামগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে বন্যা দুর্যোগ বেশি হয়। খড়াও হয়। জেলা প্রশাসনকে বলেছি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, কৃষিকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ। কৃষকের ধানের মূল্য নির্ধারণ করতে আগামী পরশু মিটিং করব। দাম নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, ১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ধরা আগুন প্রায় এক ঘণ্টা পর নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর মিডিয়া সেল জানায়, শুক্রবার বেলা দুইটা ৩৯ মিনিটে আগুন নেভানো হয়।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা লিমা খানম নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ কেন্দ্রে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে।
আগুনে হতাহতের কোনো কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বার্তায় জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় নৌবাহিনী।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগে শুক্রবার আগুন ধরেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
আসন্ন জুলাইয়ের আগেই পান্থকুঞ্জকে নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার সকালে নগরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের অভ্যন্তরে পান্থপথ বক্স কালভার্টের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মেয়র এ কথা জানান।
মেয়র তাপস বলেন, পান্থকুঞ্জ উদ্যান এই এলাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যান। এটা উন্নয়নের জন্য ২০১৭ সালে মেগা প্রকল্পের আওতায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক কারণে ঢাকা লিমিটেড এক্সপ্রেসওয়ে এদিক দিয়ে নওয়ার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ফলে এই পার্কের উন্নয়ন কাজটা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আলোচনা করেছি, দেন-দরবার করেছি। এর ফলশ্রুতিতে তারা সুনির্দিষ্ট জায়গায় কাজ করবে। বাকি জায়গা আমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। সেই জায়গায় আমরাই কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে এটার অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে।
মেয়র আরও বলেন, আমরা ঢাকাবাসীকে একটি নান্দনিক উদ্যান উপহার দিতে চাই। যদিও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের কারণে উদ্যানের বড় একটা অংশ তাদের কাছে চলে যাবে। তারপরও যতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি তা ঢাকাবাসীর জন্য অচিরেই উন্মুক্ত করে দিতে পারব। পার্কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। জুলাইয়ের আগে পান্থকুঞ্জকে একটি নান্দনিক উদ্যানে পরিণত করা হবে।
নিউমার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, গত বছর কয়েকটি জায়গায় জলাবদ্ধতা হয়েছে বিশেষ করে নিউমার্কেটের সামনে ও শান্তিনগরে। যেসব কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আমরা সেগুলো পরিষ্কার করেছি। আশা করি এবার আর জলাবদ্ধ থাকবে না। নিউমার্কেট এলাকার জন্য নতুন প্রকল্প নিয়েছি।
তিনি বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে পিলখানা ভেতর দিয়ে আগে যে পানি প্রবাহ প্রবাহের নর্দমা ছিল সেগুলো ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য গত বছর সেখানে বড় ধরনের জলবদ্ধতা হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি এবং সম্মতি পেয়েছি। আমরা পিলখানার ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহের বড় নর্দমা করছি। এটা করতে পারলে ওই এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। এভাবে প্রত্যেকটা এলাকায় বিচার-বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঢাকায় বিচ্ছিন্ন কয়েকটি জায়গা ছাড়া তেমন কোন জায়গায় এখন দীর্ঘ সময় জলবদ্ধতা থাকে না উল্লেখ করে মেয়র বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগে সূচি অনুযায়ী বক্স কালভার্ট, খাল ও নর্দমাগুলো পরিষ্কার করে থাকি। কারণ যাতে করে বর্ষার সময় পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া ঢাকা শহরে আমরা ব্যাপকভাবে নর্দমা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রেখেছি।
পরে মেয়র সায়েদাবাদ টার্মিনাল সংলগ্ন সায়েদাবাদ সুপার মার্কেট, গেন্ডারিয়ার জহির রায়হান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র পাঠাগার ও ওয়ারীর তাজউদ্দীন স্মৃতি পাঠাগার পরিদর্শন করেন।
মন্তব্য