নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রিসোর্ট থেকে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নারীসহ আটকের পর সুনামগঞ্জের ছাতকে হেফাজত কর্মীদের ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে।
ছাতক থানায় হামলার অভিযোগে রোববার দুপুরে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার মিয়া এই মামলা করেছেন। আসামি করা হয়েছে ৫০০ ব্যক্তিকে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাজিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি আসামিদের নাম জানাননি।
সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে ওই নারীর সঙ্গে অবস্থান নেয়া হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় লোকজনের প্রশ্নের মুখে হেফাজত নেতা তার সঙ্গীনিকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও তার নাম, শ্বশুরবাড়ি, শ্বশুরের নাম নিয়ে যে তথ্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে সেই নারীর দেয়া তথ্যে কোনো মিল নেই।
মামুনুল বলেছেন, তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম আমেনা তইয়্যেবা। বাড়ি খুলনায়, শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম।
তবে সেই নারী জানিয়েছেন তার নাম জান্নাত আরা, বাবার নাম অলিয়র, গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
দুইজনের তথ্যে নানান অনিয়মের পর রাতে তিনটি মোবাইল কথোপকথনের অডিও ফেসবুকে ফাঁস হয়। এর একটিতে বোঝা যায় মামুনুল তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, সেই নারী তার পরিচিত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে চাপে পড়ে স্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন।
পরে আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যা মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গীনির মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে সেই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছে, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায় মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি তাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শাশুড়ি এই বিয়ে আয়োজন করেছেন।
এরপর মামুনুল ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তিনি বিয়ে করেছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীকে। পারিবারিকভাবেই এই বিয়ে হয়েছে।
পরদিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি একে একটি মানবিক বিয়ে উল্লেখ করে লেখেন, সেই নারীর সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ির আগে তিনি সংসার টেকানোর চেষ্টা করেছেন। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি দুর্দশায় পড়ে যান। সে সময় তিনি বিয়ে করে নিয়েছেন তাকে।
এরই মধ্যে ফেসবুক লাইভ দেখে স্থানীয় হেফাজত কর্মী-সমর্থকরা ওই রিসোর্টে হামলা চালিয়ে মামুনুলকে বের করে নেন।
ওই রিসোর্ট ও পার্শ্ববর্তী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ করে ভাঙচুরের পাশাপাশি হেফাজত কর্মীরা তাণ্ডব চালান মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও সুনামগঞ্জের ছাতকে।
ছাতক পৌর শহরে রাতে মিছিল বের করে বেশ কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে ছাতক থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে ৬ পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
এ ঘটনায় রাতেই ৯ জনকে আটক করে ছাতক থানার পুলিশ। তাদের রোববারের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত মাসে মামুনুলকে কেন্দ্র করে এই জেলার শাল্লা উপজেলায় হেফাজত সমর্থকদের তাণ্ডব নতুন করে আলোচনায় আসে।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে গত ১৭ মার্চ সকালে শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালায় কয়েক হাজার লোক।
শাল্লার পাশের দিরাইয়ে ১৫ মার্চ সমাবেশ করে হেফাজত। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা হেফাজত নেতা মামুনুল হক ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন। পরদিন মামুনুলের বিরুদ্ধে দেয়া নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমনের স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে।
উত্তেজনা আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা ফেসবুকে পোস্ট দেয়া যুবক ঝুমনকে মঙ্গলবার রাতেই পুলিশের হাতে তুলে দেন।
তা সত্ত্বেও ১৭ মার্চ সকালে এলাকায় বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় হেফাজত। কয়েক হাজার মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভাঙচুর করে নোয়াগাঁওয়ের ৮৭টি হিন্দুবাড়ি।
এ ঘটনায় ১৮ মার্চ রাতে করা হয় দুটি মামলা। হবিবপুর ইউপির চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল প্রথম মামলাটি করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় দিরাইয়ের তাড়ল ইউনিয়নের সদস্য স্বাধীন মিয়াকে। এ মামলায় ৮০ জনের নাম ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলা করা হয় শাল্লা থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে। তাতে আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় দেড় হাজার ব্যক্তিকে। মামলা দুটিতে এখন পর্যন্ত ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:‘হে আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন তুমি আমার মেয়েকে সুস্থ করে দাও, তুমি তাকে বসার তৌফিক দাও, হাঁটার তৌফিক দাও, তার চোখের সমস্যা, মাথার সমস্যা দূর করে দাও। হে আল্লাহ তোমার কাছে আমার মেয়ের সুস্থ জীবন ভিক্ষা চাই।’
মেয়ের সুস্থতা কামনায় এক ব্যক্তি এমনই এক আবেগঘন চিঠি লিখে কিশোরগঞ্জের আলোচিত পাগলা মসজিদের দানবাক্সে দিয়েছেন। টাকা, স্বর্ণালংকারের পাশাপাশি এমন কয়েক শ’ চিঠি পাওয়া গেছে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে।
নিঃসন্তান এক মা সন্তান কামনায়ও চিঠি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আল্লাহ তুমি রহমতের মালিক, তোমার কাছে যা আশা করেছিলাম এবং পাগলা মসজিদের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম, সেগুলো পূরণ হয়েছে। এই মাসে আমার গর্ভে একটি চাঁদের আলো ফুটফুটে সন্তান দিও। আমার স্বামীর ব্যবসায় বরকত দিও।’
এ ছাড়াও দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি, ব্যবসায় উন্নতিসহ, সন্তানদের ভবিষ্যৎ উন্নতি কামনা করে শত শত চিঠি লিখেছেন অনেকে।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, প্রতি বার দানবাক্স খোলার পরেই এমন শত শত চিঠি জমা পড়ে। কেউ তাদের ইচ্ছা পূরণের কথা লেখেন, কেউ আবার তাদের আবেগ তুলে ধরেন চিঠির মাধ্যমে।
পাগলা মসজিদ এতিমখানার মোহতামিম মাওলানা জসিম উদ্দিন জানান, এমন শত শত চিঠি জমা পড়ে দানবাক্সগুলোতে। অনেক সময় খুব ইন্টারেস্টিং চিঠিও পাওয়া যায়, বিভিন্ন কারণে এগুলো গোপন রাখা হয় বলেও জানান তিনি।
মানুষের আবেগ-অনুভূতির অন্যতম কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে পাগলা মসজিদ। দান হিসেবে টাকা-পয়সা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ স্বর্ণালংকারও জমা পড়ে।
মনের আশা পূরণে দোয়া চেয়ে দানের পাশাপাশি চিঠিও লেখেন অনেকে। জুমার নামাজে চিঠিদাতাসহ সবার জন্য দোয়া করা হয় পাগলা মসজিদে।
আরও পড়ুন:গাইবান্ধায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগে আটক পরীক্ষার্থীসহ ৩৭ জনের নামে মামলা করা হয়েছে।
র্যাব-১৩ রংপুর বিভাগের অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ও স্থান থেকে তাদের আটক করে র্যাব-১৩ গাইবান্ধা ক্যাম্পের সদস্যরা। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩২ জন এই নিয়োগ পরীক্ষার পরীক্ষার্থী এবং পাঁচজন বহিরাগত।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) দেওয়ান মওদুদ আহমেদ মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম ধাপের গাইবান্ধার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নকলমুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নেয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইল ব্যবহার করে অসদুপায়ে পরীক্ষা দেয়ার সময় ৩৭ জনকে আটক করে এবং কেন্দ্র থেকেই একই অভিযোগে ৩৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৩ রংপুর বিভাগের অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিচ্ছে কিছু পরীক্ষার্থী। পরে অভিযান চালিয়ে গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে থেকে ৩২ জন পরীক্ষার্থী ও এই চক্রের হোতা মারুফ, মুন্না, সোহেল, নজরুল ও সোহাগসহ মোট ৩৭ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে ২২টি মাস্টার কার্ড, ১৯টি ব্লুটুথ ডিভাইস, ১৬টি মোবাইল, স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, আটককৃত পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং মোবাইলের মাধ্যমে সুকৌশলে পরীক্ষা দিয়ে আসছিল। চক্রের এই পাঁচ সদস্য বিভিন্ন পরীক্ষার্থীকে ১৪ থেকে ১৮ লাখ টাকায় চাকরি দেয়ার শর্তে অংশগ্রহণ করায়। এর মধ্যে এই চক্রের সোহেল নামে এক সদস্য ডিভাইস সংগ্রহ ও বিতরণ করেন, নজরুল পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন এবং মারুফ ও মুন্না বাহির থেকে প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করেন।
র্যাব-১৩ রংপুর বিভাগের অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পরীক্ষার্থীরা জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। উক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। পাশাপাশি আটককৃতদের নামে মামলা করে গাইবান্ধা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’
গাইবান্ধার সাত উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই সহকারী শিক্ষক পদে প্রায় ৭০০টি শূন্য পদের বিপরীতে চাকরিপ্রার্থী ৩০ হাজার ৮৮ জন। এরমধ্যে উপস্থিত ২২ হাজার ৮১৩ জন পরিক্ষার্থী জেলার সদর, পলাশবাড়ি ও ফুলছড়িসহ তিন উপজেলার ৪৭টি কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা লিখিত (এমসিকিউ) প্রথম ধাপের পরীক্ষায় অংশ নেয়।
আরও পড়ুন:বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার যশোরের যুবদল নেতাকে হাসপাতালে চিকিৎসার সময় ডান্ডাবেড়ি পরানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি শেষে আদেশের জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
যুবদল নেতা আমিনুর রহমান মধুকে চিকিৎসার সময়ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তার স্ত্রী হাইকোর্টে এ রিট করেন।
গত ২৯ নভেম্বর যুবদল নেতাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। ওই দিন বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি আদালতের কাছে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ প্রার্থনা করেন।
তখন হাইকোর্ট বলেছিলেন, ‘জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ হেইনাস ক্রাইমের (জঘন্য অপরাধের) ক্ষেত্রে সাধারণত অপরাধীকে ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের একাধিক সিদ্ধান্তও রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে, সে বিষয়ে গাইডলাইন আছে।’
তখন আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেবেন না বলে রিট করার পরামর্শ দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মধুর স্ত্রী রিট করেন।
প্রেক্ষাপট
গত ২ নভেম্বর যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ গ্রাম থেকে পুলিশ মধুকে আটক করে। এরপর ১২ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমিনুর রহমান মধু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কারাগার থেকে তার দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরের দিন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে ও ডান হাতে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে মধুকে চিকিৎসা দেয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন:পিতা-পুত্রকে ডিবি পরিচয়ে ‘অপহরণ করে’ চাঁদা দাবি এবং পরে তা না পেয়ে ছেলেকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনায় অবশেষে শাস্তি পেলেন বরিশালের কাউনিয়া থানার এসআই রেদোয়ান হোসেন রিয়াদ। আর এ ঘটনায় জামিনে মুক্তি মিলেছে নগরীর আলেকান্দা সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ বিন লাদেন।
নিজ থানা এলাকার বাইরে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করায় বৃহস্পতিবার এসআই রিয়াদকে ক্লোজ করে বরিশাল পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর এদনি বিকেলে আদালতে জামিন আবেদনের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্তি মিলেছে আব্দুল্লাহ বিন লাদেনের।
এসআই রিয়াদকে ক্লোজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। অন্যদিকে লাদেনের জামিনের বিষয়টি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলকে নিশ্চিত করেন তার বাবা মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের চরফেনুয়া এলাকার বাসিন্দা কৃষক মোসলেম জমাদ্দার।
শুধু ক্লোজ করাই নয়, তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপরাধে সুষ্ঠু বিচার ও এসআই রিয়াদ ও তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দবি জানিয়েছেন মোসলেম জমাদ্দার। পাশাপাশি তিনি পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে মিথ্যে অভিযোগের মামলা থেকে নিরপরাধ ছেলের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
নিউজবাংলাকে কৃষক মোসলেম জমাদ্দার জানান, বৃহষ্পতিবার দুপুরে তিনি তার ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন। এসময় তিনি ২১ নভেম্বর ঘুটে যাওয়া পুরো ঘটনা কমিশনারকে খুলে বলেন এবং ন্যায়বিচার দাবি করেন। পরে তিনি এসআই রিয়াদ ও তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পুলিশ কমিশনারের হাতে তুলে দেন।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার স্যারের কথায় আমি আশ্বস্ত। তিনি কথা দিয়েছেন- আমার ও আমার ছেলের সঙ্গে ঘটা অন্যায়ের ন্যায়বিচার পাব। আর ছেলে নিরাপরাধ, সেটারও প্রমাণ হবে।’
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো ঘটনাটি এরমধ্যেই উপ-পুলিশ কমিশনার কে (উত্তর) খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
‘প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ওই উপ-পরিদর্শক (এসআই) যে নিজ থানা এলাকার বাহিরে গিয়েছিলেন, সে বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই তাকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, জমিজমা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে চলা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গত ২১ নভেম্বর সকাল উপবন নামক লঞ্চযোগে শ্রীপুর থেকে বরিশালের লঞ্চঘাটে আসেন মোসলেম ও তার ছেলে আব্দুল্লাহ ওরফে লাদেন। কোতোয়ালি মডেল থানাধীন লঞ্চঘাটের গেট থেকে বের হওয়ার সময় ডিবি পরিচয় দিয়ে এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদ ও তার সঙ্গে থাকা অপর এক লোক বাবা-ছেলেকে তল্লাশি করে। কথিত মাদক উদ্ধারের নামে তাদের সঙ্গে নিয়ে দিনভর নগরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ১ লাখ টাকা দাবি করেন এসআই রিয়াদ। টাকা আদায়ে প্রথমে বিকাশ নম্বর ও পরে বাবাকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে কাউনিয়া থানায় আটকে রাখেন তিনি। পরে স্বজনদের মাধ্যমে ঘটনাটি গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পারেন।
নিজের ঝুঁকির কথা বুঝতে পেরে কথিত তিন পিস ইয়াবা উদ্ধারের রহস্যময় কাহিনী জুড়ে দিয়ে কাউনিয়া থানায় আটক থাকা আব্দুল্লাহকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করেন এসআই রিয়াদ। পরে নিজে বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও ঠুকে দেন তিনি। এ ঘটনায় প্রমাণ মেলে, কাউনিয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও এসআই রিয়াদ কোতোয়ালি থানার সহযোগিতা ছাড়াই লাদেনকে আটক করেন।
পরে এসআই রিয়াদকে বাঁচাতে নানাভাবে নিজের বিবৃতি পরিবর্তন করেন কাউনিয়া থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে যৌক্তিক কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন:পিতা-পুত্রকে ডিবি পরিচয়ে ‘অপহরণ করে’ চাঁদা দাবি এবং পরে তা না পেয়ে ছেলেকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনায় ফুঁসছে বরিশালবাসী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেদোয়ান হোসেন রিয়াদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার কাউনিয়া থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। একেক সময় তার একেক রকম বিবৃতিতে বিভ্রান্ত সংবাদকর্মীরাও।
মঙ্গলবার সকালে জমিজমা-সংক্রান্ত একটি মামলায় হাজিরা দিতে মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর থেকে লঞ্চযোগে বরিশাল নদী বন্দরে আসেন মোসলেম জোমাদ্দার ও তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে আব্দুল্লাহ বিন লাদেন। উপবন নামের একটি লঞ্চ থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই দুইজন ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে লাদেন ও তার বাবা মোসলেমকে তল্লাশি শুরু করেন। একপর্যায়ে নিচে পড়ে থাকা একটি নীল রঙের কাগজ দেখিয়ে তারা বলেন- ‘এই তো পেয়েছি’। তারা ঠিক কী পেয়েছেন, তা তারাই জানতেন। এরপর নদীবন্দর থেকে লাদেনকে মোটরসাইকেলে করে আর মোসলেমকে রিকশায় করে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। একপর্যায়ে লাদেনকে মারধর শুরু করেন ডিবি পরিচয় দেয়া ওই দুইজন। এক লাখ টাকা না দিলে তাদের ছাড়া হবে না বলে জানান তারা। সবশেষ ৪০ হাজার টাকায় সমঝোতা করতে রাজি হন তারা।
পরে বাবা মোসলেমকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে আটকে রাখা হয় এবং জানা যায় ডিবি পরিচয় দেয়া ওই দুই ব্যক্তির একজন কাউনিয়া থানার এসআই রেদোয়ান হোসেন রিয়াদ। তিনি প্রথমে তিন পিস ইয়াবা পাওয়ার দাবি করে লাদেনকে কাউনিয়া থানায় আটকে রাখেন। তবে তাকে ধরে আনা হয় কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে।
এ বিষয়ে শুরুতে কাউনিয়া থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘রিয়াদ (এসআই) মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে ৩ পিস ইয়াবাসহ ওই যুবককে আটক করেছেন- এমন খবর আমার কাছে রয়েছে। তার কাছে নাকি আরও ইয়াবা পাওয়ার কথা ছিল। অভিযান শেষ করে বিকেলে তাকে (লাদেন) থানায় রেখে যান তিনি।’ এমনকি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
কিন্তু ওই রাতেই বদলে যায় ওসি আসাদুজ্জামানের সুর। এসআই রিয়াদের পক্ষে সাফাই গেয়ে তখন তার দাবি ছিল, এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছিলেন এসআই রিয়াদ। অভিযানে লাদেনকে তিন পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে।
সে সময় এক থানা পুলিশ অন্য থানা এলাকায় অভিযান চালাতে পারে কি না- এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন ওসি।
পরে বুধবার দুপুরে ওসি আসাদুজ্জামান জানান, ধাওয়া দিয়ে ধরতে গিয়ে ঘটনাস্থল কোতোয়ালি মডেল থানার মধ্যে গিয়ে পড়ে। তাই নিয়মানুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মামলাটি কোতোয়ালি মডেল থানায় করা হয়েছে এবং মামলার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কাউনিয়া থানা থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। পাশাপাশি লাদেনের বিরুদ্ধে কাউনিয়া থানার এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদও কোতোয়ালি মডেল থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছেন।
ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধানে মঙ্গলবার রাতেই সরেজমিনে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানায় হাজির হয় নিউজবাংলা। এ সময় দেখা যায়, থানা গারদে আটকে রাখা হয়েছে কলেজ ছাত্র আব্দুল্লাহ বিন লাদেনকে। গারদ থেকেই লাদেনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
সে সময় লাদেন বলে, ‘আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে লঞ্চঘাট থেকে আমাদের ডিবি বলে তুলে নেন এসআই রিয়াদ স্যার ও আরেকজন। পরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে বিকেলে টাকা দাবি করে আব্বাকে ছেড়ে দেন তারা। কিন্তু আমাকে ইয়াবার মামলা দিয়ে থানায় নিয়ে আসেন। আমি বিড়ি-সিগারেটও খাই না। তাহলে আমার নামে এ মিথ্যা মামলা কেন?’
লাদেনের বাবা মোসলেম জোমাদ্দার জানান, টাকা না দিতে পারলে পরে তাকে চরকাউয়া খেয়াঘাট এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়, কিন্তু তার ছেলের কোনো হদিস ছিল না। পরে ৯৯৯-এ ফোন করা হলে সেখান থেকে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, কাউনিয়া থানার এসআই রিয়াদ এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে মোসলেমের দাবি, তাদেরকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। বলেন, ‘ঘুরে বেড়ানোর মধ্যেই পুলিশের কর্মকর্তা এসআই রিয়াদ ১ লাখ টাকা দাবি করেন, আর সেই টাকা চেয়ে বাড়িতে স্বজনদের কাছে ফোন দিতে বাধ্য করেন। একটি বিকাশ নম্বরও দেন তিনি। পরে ৪০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দেয়ার শর্তে আমার ছেলেকে কাউনিয়া থানায় আটকে রেখে ছেড়ে দেন।
‘টাকা ম্যানেজ করতে না পেরে রাতে থানায় গিয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি খুলে বলি, কিন্তু তারা তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ করেননি। পরে টাকা দেয়ার জন্য এসআই রিয়াদের দেয়া বিকাশ নম্বরে যোগাযোগ করে জানতে পারি সেটি বরিশালের আমতলার মোড় এলাকায় অবস্থিত। এ ধরনের প্রমাণ থাকার পরও পুলিশ লাদেনকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছে।’
জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের যোগসাজশেই এসআই রিয়াদ এমন করে থাকতে পারেন বলে দাবি করেন মোসলেম।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানিয়েছে, এসআই রিয়াদ চাকরির মাত্র কয়েক বছরে মেট্রোপলিটনের বেশ কয়েকটি থানা ও ডিবিতে দায়িত্ব পালন করেন। তবে অজানা কারণে কোনো জায়গাতেই দীর্ঘদিন থাকা হয়নি তার। তার বিরুদ্ধে এর আগে রোগীর দালালদের ধরে কৌশলে টাকা আদায়সহ কয়েকটি অভিযোগও রয়েছে, যদিও সেগুলো পরবর্তীতে আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সূত্র আরও জানায়, ওসি আসাদুজ্জামানের সঙ্গে এসআই রিয়াদের পূর্ব পরিচিতি আছে। কারণ ওসি আসাদুজ্জামান যখন বন্দর থানায় কর্মরত, তখন রিয়াদও ওই থানায় ছিলেন।
এদিকে লাদেনকে ফাঁসানোর বিষয়টি পরিষ্কার হতে তার স্বজনরা সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করার দাবি তোলেন।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. ফজলুল করিম বলেন, ‘ঘটনাস্থল কোতোয়ালি থানা এলাকায় হওয়ায় মামলাটি এখানে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই হয়েছে। তদন্তও সঠিকভাবে করা হবে।’
না জানিয়ে অন্য থানা এলাকায় অভিযান চালানো, তুলে নেয়া ব্যক্তিদের নিয়ে সারা দিন বিভিন্ন স্থানে ঘোরা, রাতে দীর্ঘ সময় এক থানায় আটকে রেখে পরে অন্য থানায় হস্তান্তর এবং দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় ফাঁসিয়ে দেয়াসহ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। সেখানে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া কোনো পুলিশ সদস্য বা অন্য কারও ইন্ধনে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য এমনটা করছে কি না, সে বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ‘এসআই রিয়াদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তাতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। যে অপরাধ করবে সেটার দায় ব্যক্তিরই নিতে হবে। রিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে পেরে ইতোমধ্যে উত্তর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারকে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে সেই অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এক্ষেত্রে পুলিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আশা করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এ ধরনের প্রাকটিস কাম্য নয়। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর ক্ষমতার জবাবদিহিতা থাকাও দরকার। পুলিশের ক্ষমতার জবাবদিহিতা না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’
গবেষক আনিসুর রহমান খান স্বপন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘যে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তাকে কেন থানাতে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো ভালোভাবে তদন্ত করা হয়নি অথবা আইনের কোনো ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে ওই পুলিশ সদস্য আবারও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এখানে সিস্টেমে সমস্যা রয়েছে। এইসব পুলিশ সদস্য পুলিশের ভাবমূর্তি যেভাবে নষ্ট করছে সেইভাবে সমাজেরও ক্ষতি করছে। চাকরির সামান্য কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকটি অপকর্ম ঘটানো এই পুলিশ সদস্যকে স্থায়ী ভাবে বহিষ্কার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। এ ছাড়া এসব পুলিশ সদস্যকে যারা প্রশ্রয় দিয়ে পুষে রেখেছেন, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিৎ।’
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর মিরপুরে ভরদুপুরে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক সাজেদুল আলম টুটুল রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
সোমবার দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের পাশে রাস্তার ওপর বিআরটিসির দোতলা বাসে আগুনের ঘটনায় গাড়ির উপরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, ‘রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের পাশে রাস্তার ওপর বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে যাত্রীবেশে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় ঘটনাস্থলের পাশ থেকে রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদুল আলম টুটুলকে আটক করা হয়েছে।’
তিনি জানান, পুড়ে যাওয়া বিআরটিসি পরিবহনের গাড়ির চালক সাজেদুল আলম টুটুলককে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেন।
আটকের এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কনটেইনার ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতির ঘটনায় ১৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকার সঙ্গে আপলাইনে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু হয়েছে।
রোববার রাত সাড়ে ১০টায় দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনার ট্রেনটি ঢাকা অভিমুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে কনটেইনার ট্রেনটিকে ২০ কিলোমিটার গতিতে ঢাকায় যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি কনটেইনার ট্রেনের একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় আপলাইনে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুর্ঘটনায় অন্তত ৩০০ মিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শতাধিক স্লিপার ভেঙে যায়। পরে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামত এবং স্লিপার পরিবর্তন শেষে দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনার ট্রেনের বগিটি উদ্ধারে কাজ শুরু করে উদ্ধারকারী ট্রেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. জসিম উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনার ট্রেনের বগিটি উদ্ধার কাজ প্রায় ১১ ঘণ্টা পর রাত ৭টা ৫ মিনিটে সম্পন্ন হয়। তবে আপলাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় রাত সাড়ে ১০টায়।
মন্তব্য