সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের মনমোহন দাসের ভাঙা ঘরে লেগেছে নতুন টিন। সূর্যের আলোয় ঝলমলিয়ে উঠছিল সেটি।
মনমোহন দাসের চোখেমুখে তবু রাজ্যের আঁধার। সঙ্গে চাপা ক্ষোভ আর আতঙ্ক।
এই গ্রামে ১৭ মার্চ তাণ্ডব চালিয়েছে আশপাশের গ্রামের হাজারও লোক। ভেঙে দেয়া হয়েছিল ৮৭টি হিন্দুবাড়ি। এর মধ্যে একটি মনমোহনের। তিনি বলেন, ‘এটা কী হলো? এ রকম তো কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি। হিন্দু-মুসলমান মিলে কত যুগ ধরে আমরা একসঙ্গে বসবাস করে আসছি। কোনো বিভেদ ছিল না। অথচ আজ কী হলো?’
তিনি তবু বাড়িতেই আছেন। তবে বাড়ি ফিরতে এখনও ভয় পান কেয়া চৌধুরী। মনমোহনের পাশের ঘরের রঞ্জনা চৌধুরীর মেয়ে তিনি। পড়েন সুনামগঞ্জ কলেজে।
যেদিন হামলা হয়, সেদিন দুপুরে ভয়ে তাকে সুনামগঞ্জ শহরে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন রঞ্জনা। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন বাড়ি আসতে চায় না। বাড়ি ফিরতে ভয় পায়। কেবল বলে, তারা যদি আবার আসে।’
হামলার দিন গ্রাম ছেড়ে বোনের বাড়ি চলে যান শাল্লা কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাস করা পান্না রানী দাস। তিনিও ভয়ে বাড়ি ফিরতে চাচ্ছেন না বলে জানালেন তার বড় বোন সোনালী রানী দাস।
এই গ্রামেরই মায়া দেবীর ছেলে অয়ন। নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। হামলার পর থেকে প্রতি রাতে ঘুমের মধ্যেই ভয়ে কেঁদে ওঠে সে। ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠে বলে, ‘মা, এরা আবার আইছে।’
ছেলের এমন কান্নায় ভয় পেয়ে যান মা মায়াও। ছেলেকে সান্ত্বনা দেন। তারপর বুকে জড়িয়ে রাখেন।
বুধবার নোয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে।
সারা দেশ যখন ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনে ব্যস্ত, সেদিন সকালে নোয়াগাঁও গ্রামে মিছিল নিয়ে এসে হামলা চালায় কয়েক হাজার সশস্ত্র লোক। তারা আসে আশপাশের গ্রামগুলো থেকে, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সমালোচনা করে এক যুবকের স্ট্যাটাসের জের ধরে এই হামলা চালানো হয়। হিন্দুধর্মাবলম্বী যে যুবক ওই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তার বাড়ি নোয়াগাঁওয়ে।
আগের রাতেই হামলার ভয়ে ঝুমন দাশ নামের ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসী। তবু সেই আক্রোশে ভেঙে দেয়া হয় গ্রামের অন্তত ৮৭টি হিন্দুবাড়ি। ভাঙচুরের পর প্রতিটি বাড়ি থেকে লুট করে নেয়া হয় মূল্যবান জিনিসপত্র। ভাঙচুর করা হয় সাতটি মন্দির।
হামলার পর থেকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতিদিনই পরিদর্শনে যাচ্ছেন সেখানে। তারা গ্রামবাসীর প্রতি জানাচ্ছেন সহমর্মিতা, জোগাচ্ছেন সাহস। তবু ভয় কাটছে না গ্রামবাসীর।
নোয়াগাঁও গ্রামে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরা রীতিমতো টানাটানি শুরু করে দেন। প্রথমে তারা ভাবেন আগন্তুকেরা সরকারি সংস্থার কেউ হয়তো। অনেকে ভাবেন, সহায়তা এসেছে বোধ হয়।
হামলায় নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির চিহ্নগুলো দেখাতে শুরু করেন সবাই। কেউ নিয়ে আসেন নিজেদের ক্ষতবিক্ষত হাঁড়িপাতিল। কেউবা দেখান ভেঙে চুরমার হওয়া বাদ্যযন্ত্র।
গ্রামের পুরোহিত অসীম চক্রবর্তী নিয়ে যান টিনের একটি ছোট্ট ঘরে। গ্রামবাসীর কাছে এটি ‘বিপদনাশিনী মন্দির’। হামলাকারীরা মন্দিরের মূর্তিগুলো চুরমার করে দিয়েছে।
এই গ্রামেই বাড়ি স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ দাসের। তার ঘরটিও টিনের। চেয়ারম্যান বাড়িতে নেই। তার স্ত্রী দিপালী মজুমদারের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আলমারি ভেঙে সব সোনাদানা নিয়ে গেছে। ভয়ে বাথরুমে লুকিয়েছিলেন আমার জা। বাথরুমের দরজা ভেঙে তাকে বের করে এনেছে।’
বলতে বলতেই বাথরুমের ভাঙা দরজা দেখান তিনি।
রঞ্জনা চৌধুরী, যার মেয়ে ভয়ে বাড়ি আসতে ভয় পায়, তিনি বলেন, ‘সেদিন বাচ্চারাও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলায় এসেছিল। তারা সবাই আশপাশের গ্রামের। আমাদেরই প্রতিবেশী। হামলার সময় স্বাধীন মেম্বার উঠানের চেয়ার বসে বিড়ি ফুঁকছিল। আমরা হাওর থেকে সব দেখতে পাচ্ছিলাম।
‘আমার ঘরের চুলা ভেঙেছে। হাঁড়ি ভেঙেছে। ঘরে গরু বিক্রির টাকা ছিল, সেটা নিয়ে গেছে। আমাকে একেবারে সর্বস্বান্ত করে গেছে।’
কথা বলার সময় ক্ষোভে বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে রঞ্জনা চৌধুরীর চোখ। বলেন, ‘এ রকম লুটপাট করছে জানলে আমি নিজেই লাঠি নিয়ে তাদের ঠেকাতে বের হতাম। তাতে মারা গেলেও শান্তি ছিল। সব হারিয়ে এখন বেঁচে থেকে কি লাভ?’
নোয়াগাঁও হাওরবেষ্টিত শাল্লা উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম। বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেলই এখানকার বাহন। হাওরের ফসলরক্ষার জন্য যে বাঁধ তৈরি হয়েছে, সেটিই এখন সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সড়ক না থাকলেও গ্রামে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। গ্রামের পাশেই পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মিত হচ্ছে। গ্রামে পাকাঘর তেমন নেই। প্রায় প্রতিটি ঘরই টিনের, যার মধ্যে বেশির ভাগ ঘরই ভাঙাচোরা। সবকিছুতে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট।
গ্রামের কিছু তরুণের হাতে স্মার্টফোন থাকলেও বয়স্করা এখনও ইন্টারনেট, ফেসবুক এসবের সঙ্গে পরিচিত নন।
ফেসবুকে যে স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে হামলার কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামের গৃহবধূ ঢলি রানী দাস বলেন, এ কয়দিন হলো তিনি ফেসবুক শব্দটা শুনছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ফেছবুক কিতা জানি না। অনেকে এর কথা কইতে হুনলাম। ঝুমনে ওনো বুলে (ওখানে নাকি) কিতা লেখছে।’
এইটুকু বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ঢলি। ফেসবুক সম্পর্কে কিছু জানতে চান বোধ হয়।
কোনো উত্তর না পেয়ে আবার নিজে থেকেই বলতে শুরু করেন, ‘হামলার ঠিক আগে আমরা পাশের হাওরে গিয়ে লুকিয়েছিলাম। সেখান থেকে হামলার শব্দ শুনেছি। এখনও সেই শব্দ কানে ভাসে। এখনও ভয়ে গা শিউরে ওঠে।’
হামলার পর সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ভাঙা ঘরগুলো পুনর্নির্মাণেও সহায়তা করেছে সরকার।
এখন বিচার চায় গ্রামবাসী।
গ্রামের গৃহবধূ সুধা রানী দাস বলেন, ‘সাহায্য অনেক পেয়েছি। কিন্তু আমরা সাহায্য নয়, বিচার চাই। নিরাপত্তা চাই।’
নোয়াগাঁওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহমর্মিতা জানাতে সিলেট থেকে বুধবার গিয়েছিলেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ এর সংগঠক আব্দুল করিম কিম।
মামুনুলকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ঝুমন দাশের ঘরে যান তিনি। ঝুমন দাশের মুক্তির জন্য তার পরিবারের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মামুনুল হকের সমালোচনা করলে কাউকে কেন গ্রেপ্তার করতে হবে? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবারই সমালোচনা করার আধিকার আছে। ঝুমনকে অন্যায়ভাবে জেলে রাখা হয়েছে।’
কিমের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বিশ্বজিত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নোয়াগাঁওয়ে হামলার পর হামলাকালীরা মিছিল নিয়ে শাল্লা সদরের দিকে গিয়েছিল। সেখানে একটি প্রাচীন মন্দিরে হামলার চেষ্টা করেছিল তারা। আমরা সবাই জড়ো হয়ে তাদের প্রতিহত করি। এখানে হামলার ব্যাপারে আগে থেকে জানলে তাদের প্রতিহত করা যেত।’
গ্রাম থেকে বের হওয়ার পথে দেখা হয় একাত্তরের যুদ্ধ দেখা বৃদ্ধ সাবিত্রী বালার সঙ্গে। লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন তিনি।
সাবিত্রী বলেন, ‘একাত্তরের সময় একবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলাম। এইবার আবার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাতে হলো। স্বাধীন দেশে কেন নিজ বাড়িঘর ছেড়ে ভয়ে পালাতে হয়? আমাদের অপরাধ কি?’
তার পাশে থাকা অনিল দাস বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ও একবার দিরাইয়ের নাচনি ও চণ্ডীপুরের রাজাকাররা নোয়াগাঁওয়ে হামলা করেছিল। তখন চারজন রাজাকারকে ধরে হত্যা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এবারও হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে নাচনি ও চণ্ডীপুর গ্রামের লোকজন।’
নোয়াগাঁও পরিদর্শনে যাওয়া দলে ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল। তিনি বলেন, ‘এই হামলা একাত্তরের হামলা থেকে ভিন্ন কিছু না। এই হামলায় যতটা না জানমালের ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে মানসিক ক্ষতি, বিশ্বাসের ক্ষতি।’
নোয়াগাঁও থেকে ফেরার পথে পড়ে ধারণ বাজার। এই বাজারের একটি মন্দির একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। সেটি দেখিয়ে স্থানীয় ছাত্রনেতা অরিন্দম চৌধুরী বলেন, ‘এখন বলা হচ্ছে জলমহাল নিয়ে বিরোধ থেকে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা হয়েছে। জলমহাল নিয়ে বিরোধ হলে এই মন্দিরে হামলা হবে কেন?’
তার মত, এটা স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক হামলা।
হামলার ঘটনার পর দুইটি মামলা হয়। তাতে বুধবার পর্যন্ত ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের মধ্যে পাশের দিরাই উপজেলার নাচনি গ্রামের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম স্বাধীনকে ৫ দিনের এবং ২৯ জনকে ২ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ‘এই হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ্ররই মধ্যে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩০ জনের রিমান্ডও চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও যাদের নাম পাওয়া যাবে, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
তিনি জানান, নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর নিরাপত্তায় গ্রামেই একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে আছেন ১৫ জন পুলিশ। এ ছাড়া গ্রামে র্যাবও একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করেছে।
আরও পড়ুন:নওগাঁর ধামইরহাটে রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল নামে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি আসলে তা নন, প্রতারণার স্বার্থে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রুপনারায়নপুর গ্রাম থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।
২৫ বছর বয়সী রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ম্যানুয়েল তপন জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিনি (পিয়াল) তার কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৩৮ টাকা গ্রহণ করেন এবং আরও টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে প্রতারক পিয়ালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
তপন বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে আমার মতো এলাকার অন্য লোকজনের কাছেও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামইরহাট থানার ওসি মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘প্রতারক রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। ইতোমধ্যে একজনের কাছে থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিতেন তিনি।
‘এদিনও প্রতারণা করতে গেলে জনগণ তাকে আটক করে রাখে। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. সুলতান নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১৬ নম্বর ক্লাস্টার থেকে পুলিশ সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারের বাসিন্দা ছিলেন।
ভাসানচর থানার ওসি কাওসার আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, সুলতান ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারে বসবাস করতেন। ১১৬ নম্বর ক্লাস্টারের খালি জায়গায় তিনি সবজি চাষ করতেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বাবাকে দেখতে না পেয়ে তার ছেলে ওই ক্লাস্টারে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার বাবার গলা কাটা মরতেজ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় অন্য ক্লাস্টারের লোকজন এগিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি কাওসার আহমেদ জানান, পেছনের দিক থেকে গলা কেটে এই রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে অপর প্রার্থী মো. লুৎফুল হাবিবকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বৃহস্পাতবার অভিযুক্তকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ৮ মে অনুষ্ঠেয় নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনায় আপনি লুৎফুল হাবীবকে দায়ী করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে বর্ণিত বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এছাড়া সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচিত্র বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
উল্লেখিত প্রতিবেদন ও পত্রিকান্তে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ হয়েছে। এরূপ ঘটনার জন্য কেন আপনার প্রার্থিতা বাতিল অথবা আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে লিখিত জবাবসহ নির্বাচন কমিশনে ২২ এপ্রিল সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর নাটোর জেলা নির্বাচন অফিসে গেলে দেলোয়ার হোসেনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আহত অবস্থায় তাকে তার বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
ভুক্তভোগী প্রার্থীর পরিবার এ ঘটনার জন্য আরেক প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক। দেলোয়ার হোসেন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে লুৎফুল হাবীব ছিলেন একক প্রার্থী।
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে টিউবওয়েল বসানোর জন্য স্থাপন করা পাইপে পানির পরিবর্তে উঠে আসছে এক ধরনের তরল। অনেকটা ডিজেলের মতো গন্ধযুক্ত এই তরল নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।
উপজেলার ভোলামোড় এলাকায় এক বাড়িতে ঘটেছে এই ঘটনা। বাড়ির মালিক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘পানীয় জলের জন্য তিন বছর আগে এখানে মোটর বসানো হয়। এটি উপজেলা পরিষদ থেকেই বসানো হয়েছিল। কয়েক মাস থেকে মোটরটি দিয়ে পানি উঠছে না। কারণ জানার জন্য বুধবার সকালে মিস্ত্রি ডেকে আনা হয়।
‘মিস্ত্রি কাজ করার সময় মোটরের সঙ্গে যুক্ত পাইপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানির পরিবর্তে তেলের মতো এক ধরনের তরল উঠে আসে। তা দেখে মনে হয়েছে ডিজেলের মতো। বিষয়টি আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি, যাতে তারা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।’
স্থানীয় সংবাদকর্মী মনিরুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে ঘটনাটি দেখার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এ সময় পাইপ দিয়ে উঠে আসা তরলে তিনি কাগজ চুবিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে তাতে আগুন ধরে যায়। তার প্রশ্ন- পানি হলে তো ভেজা কাগজে আগুন ধরতো না। তাহলে এই তরল কি খনিজ তেল?
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার জানান, তিনিও বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর করবেন বলে জানান তিনি।
গাইবান্ধায় ভাঙারির দোকানে চুরি করা রেলপাত (রেললাইন) বিক্রির সময় এক অটোচালকসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এসময় দোকান মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের ব্রিজ রোড এলাকার আশা ভাঙারি দোকানে সরকারি এসব রেলপাত বিক্রির সময় তাদের হাতেনাতে আটক করে গাইবান্ধার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।
এ সময় চুরি করে বিক্রি করতে নিয়ে আসা রেলপাত এবং সেসব পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একটি অটোরিকশাও জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- সদর উপজেলার পশ্চিম দুর্গাপুর এলাকার ৩০ বছর বয়সী সাগর মিয়া, ফুলছড়ি উপজেলার উত্তর কঞ্চিপাড়া এলাকার ৪০ বছর বয়সী ওয়াহেদ মিয়া ও আশা ভাঙারি দোকানের শ্রমিক সদর উপজেলার বালুয়া বাজারের পাকারখুটি এলাকার ৩৩ বছর বয়সী মোকলেছুর রহমান। এদের মধ্যে ওয়াহেদ মিয়ার অটোরিকশায় এসব মালামাল পরিবহন করা হয়েছিল।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বোনারপাড়া রেলওয়ে পুলিশের ওসি খাইরুল ইসলাম তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের ব্রিজ রোডের একটি ভাঙারির দোকানে সরকারি রেলপাত অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয়কালে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় দোকান মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় তাদের কাছ থেকে খণ্ড খণ্ড তিন ফুট দৈর্ঘ্যের ৯ টুকরা রেললাইনের পাত উদ্ধার করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দেয়া হবে।’
রেলপাতগুলো বালাসিঘাটের পরিত্যক্ত রেলপথ থেকে খুলে আনা হয়েছে বলে জানান রেলওয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আটককৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া এদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
অপহরণের ৬ ঘণ্টার মধ্যে সিরাজগঞ্জ থেকে তামিম হোসেন নামের ৭ বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় এ মামলার আসামি আল-আমিন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে বেলকুচি উপজেলার চন্দনগাতী গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে র্যাব ১২-এর একটি দল। বুধবার দুপুর তিনটার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার হানুরবাড়াদি গ্রাম থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
অপহৃত তামিম হোসেন চুয়াডাঙ্গার হানুরবাড়াদি গ্রামের মো. সুন্নত আলীর ছেলে। অপরদিকে গ্রেপ্তার হওয়া ২৯ বছর বয়সী আল-আমিন কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানায় মেষতলী বাজারের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব ১২-এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মারুফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অপহরণের পর শিশুটির বাবা সুন্নত আলী চুয়াডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি র্যাবকে জানালে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামির অবস্থান নির্ণয় করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, তামিমের বাবার সঙ্গে আল আমিনের দুই মাস আগে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়েই সুকৌশলে তামিমকে অপহরণ করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তিপণের জন্যই শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছিল।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হস্তান্তর করার আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
মন্তব্য