সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের মনমোহন দাসের ভাঙা ঘরে লেগেছে নতুন টিন। সূর্যের আলোয় ঝলমলিয়ে উঠছিল সেটি।
মনমোহন দাসের চোখেমুখে তবু রাজ্যের আঁধার। সঙ্গে চাপা ক্ষোভ আর আতঙ্ক।
এই গ্রামে ১৭ মার্চ তাণ্ডব চালিয়েছে আশপাশের গ্রামের হাজারও লোক। ভেঙে দেয়া হয়েছিল ৮৭টি হিন্দুবাড়ি। এর মধ্যে একটি মনমোহনের। তিনি বলেন, ‘এটা কী হলো? এ রকম তো কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি। হিন্দু-মুসলমান মিলে কত যুগ ধরে আমরা একসঙ্গে বসবাস করে আসছি। কোনো বিভেদ ছিল না। অথচ আজ কী হলো?’
তিনি তবু বাড়িতেই আছেন। তবে বাড়ি ফিরতে এখনও ভয় পান কেয়া চৌধুরী। মনমোহনের পাশের ঘরের রঞ্জনা চৌধুরীর মেয়ে তিনি। পড়েন সুনামগঞ্জ কলেজে।
যেদিন হামলা হয়, সেদিন দুপুরে ভয়ে তাকে সুনামগঞ্জ শহরে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন রঞ্জনা। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন বাড়ি আসতে চায় না। বাড়ি ফিরতে ভয় পায়। কেবল বলে, তারা যদি আবার আসে।’
হামলার দিন গ্রাম ছেড়ে বোনের বাড়ি চলে যান শাল্লা কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাস করা পান্না রানী দাস। তিনিও ভয়ে বাড়ি ফিরতে চাচ্ছেন না বলে জানালেন তার বড় বোন সোনালী রানী দাস।
এই গ্রামেরই মায়া দেবীর ছেলে অয়ন। নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। হামলার পর থেকে প্রতি রাতে ঘুমের মধ্যেই ভয়ে কেঁদে ওঠে সে। ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠে বলে, ‘মা, এরা আবার আইছে।’
ছেলের এমন কান্নায় ভয় পেয়ে যান মা মায়াও। ছেলেকে সান্ত্বনা দেন। তারপর বুকে জড়িয়ে রাখেন।
বুধবার নোয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে।
সারা দেশ যখন ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনে ব্যস্ত, সেদিন সকালে নোয়াগাঁও গ্রামে মিছিল নিয়ে এসে হামলা চালায় কয়েক হাজার সশস্ত্র লোক। তারা আসে আশপাশের গ্রামগুলো থেকে, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সমালোচনা করে এক যুবকের স্ট্যাটাসের জের ধরে এই হামলা চালানো হয়। হিন্দুধর্মাবলম্বী যে যুবক ওই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তার বাড়ি নোয়াগাঁওয়ে।
আগের রাতেই হামলার ভয়ে ঝুমন দাশ নামের ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসী। তবু সেই আক্রোশে ভেঙে দেয়া হয় গ্রামের অন্তত ৮৭টি হিন্দুবাড়ি। ভাঙচুরের পর প্রতিটি বাড়ি থেকে লুট করে নেয়া হয় মূল্যবান জিনিসপত্র। ভাঙচুর করা হয় সাতটি মন্দির।
হামলার পর থেকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতিদিনই পরিদর্শনে যাচ্ছেন সেখানে। তারা গ্রামবাসীর প্রতি জানাচ্ছেন সহমর্মিতা, জোগাচ্ছেন সাহস। তবু ভয় কাটছে না গ্রামবাসীর।
নোয়াগাঁও গ্রামে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরা রীতিমতো টানাটানি শুরু করে দেন। প্রথমে তারা ভাবেন আগন্তুকেরা সরকারি সংস্থার কেউ হয়তো। অনেকে ভাবেন, সহায়তা এসেছে বোধ হয়।
হামলায় নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির চিহ্নগুলো দেখাতে শুরু করেন সবাই। কেউ নিয়ে আসেন নিজেদের ক্ষতবিক্ষত হাঁড়িপাতিল। কেউবা দেখান ভেঙে চুরমার হওয়া বাদ্যযন্ত্র।
গ্রামের পুরোহিত অসীম চক্রবর্তী নিয়ে যান টিনের একটি ছোট্ট ঘরে। গ্রামবাসীর কাছে এটি ‘বিপদনাশিনী মন্দির’। হামলাকারীরা মন্দিরের মূর্তিগুলো চুরমার করে দিয়েছে।
এই গ্রামেই বাড়ি স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ দাসের। তার ঘরটিও টিনের। চেয়ারম্যান বাড়িতে নেই। তার স্ত্রী দিপালী মজুমদারের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আলমারি ভেঙে সব সোনাদানা নিয়ে গেছে। ভয়ে বাথরুমে লুকিয়েছিলেন আমার জা। বাথরুমের দরজা ভেঙে তাকে বের করে এনেছে।’
বলতে বলতেই বাথরুমের ভাঙা দরজা দেখান তিনি।
রঞ্জনা চৌধুরী, যার মেয়ে ভয়ে বাড়ি আসতে ভয় পায়, তিনি বলেন, ‘সেদিন বাচ্চারাও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলায় এসেছিল। তারা সবাই আশপাশের গ্রামের। আমাদেরই প্রতিবেশী। হামলার সময় স্বাধীন মেম্বার উঠানের চেয়ার বসে বিড়ি ফুঁকছিল। আমরা হাওর থেকে সব দেখতে পাচ্ছিলাম।
‘আমার ঘরের চুলা ভেঙেছে। হাঁড়ি ভেঙেছে। ঘরে গরু বিক্রির টাকা ছিল, সেটা নিয়ে গেছে। আমাকে একেবারে সর্বস্বান্ত করে গেছে।’
কথা বলার সময় ক্ষোভে বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে রঞ্জনা চৌধুরীর চোখ। বলেন, ‘এ রকম লুটপাট করছে জানলে আমি নিজেই লাঠি নিয়ে তাদের ঠেকাতে বের হতাম। তাতে মারা গেলেও শান্তি ছিল। সব হারিয়ে এখন বেঁচে থেকে কি লাভ?’
নোয়াগাঁও হাওরবেষ্টিত শাল্লা উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম। বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেলই এখানকার বাহন। হাওরের ফসলরক্ষার জন্য যে বাঁধ তৈরি হয়েছে, সেটিই এখন সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সড়ক না থাকলেও গ্রামে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। গ্রামের পাশেই পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মিত হচ্ছে। গ্রামে পাকাঘর তেমন নেই। প্রায় প্রতিটি ঘরই টিনের, যার মধ্যে বেশির ভাগ ঘরই ভাঙাচোরা। সবকিছুতে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট।
গ্রামের কিছু তরুণের হাতে স্মার্টফোন থাকলেও বয়স্করা এখনও ইন্টারনেট, ফেসবুক এসবের সঙ্গে পরিচিত নন।
ফেসবুকে যে স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে হামলার কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামের গৃহবধূ ঢলি রানী দাস বলেন, এ কয়দিন হলো তিনি ফেসবুক শব্দটা শুনছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ফেছবুক কিতা জানি না। অনেকে এর কথা কইতে হুনলাম। ঝুমনে ওনো বুলে (ওখানে নাকি) কিতা লেখছে।’
এইটুকু বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ঢলি। ফেসবুক সম্পর্কে কিছু জানতে চান বোধ হয়।
কোনো উত্তর না পেয়ে আবার নিজে থেকেই বলতে শুরু করেন, ‘হামলার ঠিক আগে আমরা পাশের হাওরে গিয়ে লুকিয়েছিলাম। সেখান থেকে হামলার শব্দ শুনেছি। এখনও সেই শব্দ কানে ভাসে। এখনও ভয়ে গা শিউরে ওঠে।’
হামলার পর সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ভাঙা ঘরগুলো পুনর্নির্মাণেও সহায়তা করেছে সরকার।
এখন বিচার চায় গ্রামবাসী।
গ্রামের গৃহবধূ সুধা রানী দাস বলেন, ‘সাহায্য অনেক পেয়েছি। কিন্তু আমরা সাহায্য নয়, বিচার চাই। নিরাপত্তা চাই।’
নোয়াগাঁওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহমর্মিতা জানাতে সিলেট থেকে বুধবার গিয়েছিলেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ এর সংগঠক আব্দুল করিম কিম।
মামুনুলকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ঝুমন দাশের ঘরে যান তিনি। ঝুমন দাশের মুক্তির জন্য তার পরিবারের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মামুনুল হকের সমালোচনা করলে কাউকে কেন গ্রেপ্তার করতে হবে? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবারই সমালোচনা করার আধিকার আছে। ঝুমনকে অন্যায়ভাবে জেলে রাখা হয়েছে।’
কিমের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বিশ্বজিত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নোয়াগাঁওয়ে হামলার পর হামলাকালীরা মিছিল নিয়ে শাল্লা সদরের দিকে গিয়েছিল। সেখানে একটি প্রাচীন মন্দিরে হামলার চেষ্টা করেছিল তারা। আমরা সবাই জড়ো হয়ে তাদের প্রতিহত করি। এখানে হামলার ব্যাপারে আগে থেকে জানলে তাদের প্রতিহত করা যেত।’
গ্রাম থেকে বের হওয়ার পথে দেখা হয় একাত্তরের যুদ্ধ দেখা বৃদ্ধ সাবিত্রী বালার সঙ্গে। লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন তিনি।
সাবিত্রী বলেন, ‘একাত্তরের সময় একবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলাম। এইবার আবার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাতে হলো। স্বাধীন দেশে কেন নিজ বাড়িঘর ছেড়ে ভয়ে পালাতে হয়? আমাদের অপরাধ কি?’
তার পাশে থাকা অনিল দাস বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ও একবার দিরাইয়ের নাচনি ও চণ্ডীপুরের রাজাকাররা নোয়াগাঁওয়ে হামলা করেছিল। তখন চারজন রাজাকারকে ধরে হত্যা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এবারও হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে নাচনি ও চণ্ডীপুর গ্রামের লোকজন।’
নোয়াগাঁও পরিদর্শনে যাওয়া দলে ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল। তিনি বলেন, ‘এই হামলা একাত্তরের হামলা থেকে ভিন্ন কিছু না। এই হামলায় যতটা না জানমালের ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে মানসিক ক্ষতি, বিশ্বাসের ক্ষতি।’
নোয়াগাঁও থেকে ফেরার পথে পড়ে ধারণ বাজার। এই বাজারের একটি মন্দির একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। সেটি দেখিয়ে স্থানীয় ছাত্রনেতা অরিন্দম চৌধুরী বলেন, ‘এখন বলা হচ্ছে জলমহাল নিয়ে বিরোধ থেকে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা হয়েছে। জলমহাল নিয়ে বিরোধ হলে এই মন্দিরে হামলা হবে কেন?’
তার মত, এটা স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক হামলা।
হামলার ঘটনার পর দুইটি মামলা হয়। তাতে বুধবার পর্যন্ত ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের মধ্যে পাশের দিরাই উপজেলার নাচনি গ্রামের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম স্বাধীনকে ৫ দিনের এবং ২৯ জনকে ২ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ‘এই হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ্ররই মধ্যে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩০ জনের রিমান্ডও চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও যাদের নাম পাওয়া যাবে, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
তিনি জানান, নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর নিরাপত্তায় গ্রামেই একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে আছেন ১৫ জন পুলিশ। এ ছাড়া গ্রামে র্যাবও একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করেছে।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকেই উচ্চ তাপমাত্রায় আলোচনায় রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। মৃদু, মাঝারি, তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপমাত্রা দেখছে জেলাবাসী। মাঝে তাপমাত্রা সামান্য কমলেও ফের অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশের পশ্চিমের এই জেলা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার মানে জেলায় আবারও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে এই জেলা।
আগের দিন বুধবারও এখানে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। ওইদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন তাপমাত্রা নেমেছিল ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেই তীব্র তাপপ্রবাহ বৃহস্পতিবার এসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
জেলা জুড়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি আরও বেড়েছে। স্বস্তি মিলছে না কোথাও। তীব্র গরমে একটু স্বস্তি পেতে দিনের অধিকাংশ সময় মানুষ গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে।
গরমের প্রভাবে বাড়ছে রোগবালাই। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। তীব্র তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে পারছে না। নষ্ট হচ্ছে ধান, কলা, আম, লিচুসহ মৌসুমী ফসল।
গোপালপুর গ্রামের কৃষক হান্নান আলী বলেন, ‘এই তাপে মাটে উঠতি ফসল নষ্ট হয়ি যাচ্চি। আর রোদির তাতে মাটে দাঁড়ানু যাচ্চি না। ধানের ক্ষেতে বেশি সেচ লাগচি। তাও আবার দিনের বেলায় পাম্পে পানি উটচি না। রাতি দিতি হচ্চি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়েছে। জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ রূপ নিয়েছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে। সহসা বৃষ্টি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই। চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
রাজশাহীর বাগমারায় ভাড়া বাসায় আটকে রেখে এক মাস ধরে এক তরুণীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার রাতে উপজেলার তাহেরপুর পৌর এলাকার হরিফলার মোড়ের একটি বাসা থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার ও এ ঘটনায় অভিযুক্ত একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক রাজু হোসেন (২৫) পেশায় চা দোকানি। তিনি তাহেরপুর পৌরসভার হরিফলা মহল্লার আবদুর রাজ্জাক শাহের ছেলে।
পুলিশ জানায়, অসুস্থ অবস্থায় তরুণীকে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়ার পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওই তরুণীর বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। ফোনে রাজুর সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৪ মার্চ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোনে ভুক্তভোগী তরুণীকে তাহেরপুরে নিয়ে আসেন রাজু। পরে তাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠেন রাজু। সেখানে আটকে রেখে এক মাস ধরে রাজু ওই তরুণীকে ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে ধর্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের বাড়ির লোকজন টের পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানান। তিনি থানায় খবর দিলে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ওই বাসা থেকে তরুণীকে উদ্ধার করে। পরে ওই এলাকা থেকে রাজুকে আটক করে পুলিশ। রাতেই তরুণী বাদী হয়ে অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মুখপাত্র রফিকুল আলম জানান, মেয়েটার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আটক তরুণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য