সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের মনমোহন দাসের ভাঙা ঘরে লেগেছে নতুন টিন। সূর্যের আলোয় ঝলমলিয়ে উঠছিল সেটি।
মনমোহন দাসের চোখেমুখে তবু রাজ্যের আঁধার। সঙ্গে চাপা ক্ষোভ আর আতঙ্ক।
এই গ্রামে ১৭ মার্চ তাণ্ডব চালিয়েছে আশপাশের গ্রামের হাজারও লোক। ভেঙে দেয়া হয়েছিল ৮৭টি হিন্দুবাড়ি। এর মধ্যে একটি মনমোহনের। তিনি বলেন, ‘এটা কী হলো? এ রকম তো কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি। হিন্দু-মুসলমান মিলে কত যুগ ধরে আমরা একসঙ্গে বসবাস করে আসছি। কোনো বিভেদ ছিল না। অথচ আজ কী হলো?’
তিনি তবু বাড়িতেই আছেন। তবে বাড়ি ফিরতে এখনও ভয় পান কেয়া চৌধুরী। মনমোহনের পাশের ঘরের রঞ্জনা চৌধুরীর মেয়ে তিনি। পড়েন সুনামগঞ্জ কলেজে।
যেদিন হামলা হয়, সেদিন দুপুরে ভয়ে তাকে সুনামগঞ্জ শহরে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন রঞ্জনা। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন বাড়ি আসতে চায় না। বাড়ি ফিরতে ভয় পায়। কেবল বলে, তারা যদি আবার আসে।’
হামলার দিন গ্রাম ছেড়ে বোনের বাড়ি চলে যান শাল্লা কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাস করা পান্না রানী দাস। তিনিও ভয়ে বাড়ি ফিরতে চাচ্ছেন না বলে জানালেন তার বড় বোন সোনালী রানী দাস।
এই গ্রামেরই মায়া দেবীর ছেলে অয়ন। নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। হামলার পর থেকে প্রতি রাতে ঘুমের মধ্যেই ভয়ে কেঁদে ওঠে সে। ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠে বলে, ‘মা, এরা আবার আইছে।’
ছেলের এমন কান্নায় ভয় পেয়ে যান মা মায়াও। ছেলেকে সান্ত্বনা দেন। তারপর বুকে জড়িয়ে রাখেন।
বুধবার নোয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে।
সারা দেশ যখন ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনে ব্যস্ত, সেদিন সকালে নোয়াগাঁও গ্রামে মিছিল নিয়ে এসে হামলা চালায় কয়েক হাজার সশস্ত্র লোক। তারা আসে আশপাশের গ্রামগুলো থেকে, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সমালোচনা করে এক যুবকের স্ট্যাটাসের জের ধরে এই হামলা চালানো হয়। হিন্দুধর্মাবলম্বী যে যুবক ওই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তার বাড়ি নোয়াগাঁওয়ে।
আগের রাতেই হামলার ভয়ে ঝুমন দাশ নামের ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসী। তবু সেই আক্রোশে ভেঙে দেয়া হয় গ্রামের অন্তত ৮৭টি হিন্দুবাড়ি। ভাঙচুরের পর প্রতিটি বাড়ি থেকে লুট করে নেয়া হয় মূল্যবান জিনিসপত্র। ভাঙচুর করা হয় সাতটি মন্দির।
হামলার পর থেকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতিদিনই পরিদর্শনে যাচ্ছেন সেখানে। তারা গ্রামবাসীর প্রতি জানাচ্ছেন সহমর্মিতা, জোগাচ্ছেন সাহস। তবু ভয় কাটছে না গ্রামবাসীর।
নোয়াগাঁও গ্রামে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরা রীতিমতো টানাটানি শুরু করে দেন। প্রথমে তারা ভাবেন আগন্তুকেরা সরকারি সংস্থার কেউ হয়তো। অনেকে ভাবেন, সহায়তা এসেছে বোধ হয়।
হামলায় নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির চিহ্নগুলো দেখাতে শুরু করেন সবাই। কেউ নিয়ে আসেন নিজেদের ক্ষতবিক্ষত হাঁড়িপাতিল। কেউবা দেখান ভেঙে চুরমার হওয়া বাদ্যযন্ত্র।
গ্রামের পুরোহিত অসীম চক্রবর্তী নিয়ে যান টিনের একটি ছোট্ট ঘরে। গ্রামবাসীর কাছে এটি ‘বিপদনাশিনী মন্দির’। হামলাকারীরা মন্দিরের মূর্তিগুলো চুরমার করে দিয়েছে।
এই গ্রামেই বাড়ি স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ দাসের। তার ঘরটিও টিনের। চেয়ারম্যান বাড়িতে নেই। তার স্ত্রী দিপালী মজুমদারের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আলমারি ভেঙে সব সোনাদানা নিয়ে গেছে। ভয়ে বাথরুমে লুকিয়েছিলেন আমার জা। বাথরুমের দরজা ভেঙে তাকে বের করে এনেছে।’
বলতে বলতেই বাথরুমের ভাঙা দরজা দেখান তিনি।
রঞ্জনা চৌধুরী, যার মেয়ে ভয়ে বাড়ি আসতে ভয় পায়, তিনি বলেন, ‘সেদিন বাচ্চারাও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলায় এসেছিল। তারা সবাই আশপাশের গ্রামের। আমাদেরই প্রতিবেশী। হামলার সময় স্বাধীন মেম্বার উঠানের চেয়ার বসে বিড়ি ফুঁকছিল। আমরা হাওর থেকে সব দেখতে পাচ্ছিলাম।
‘আমার ঘরের চুলা ভেঙেছে। হাঁড়ি ভেঙেছে। ঘরে গরু বিক্রির টাকা ছিল, সেটা নিয়ে গেছে। আমাকে একেবারে সর্বস্বান্ত করে গেছে।’
কথা বলার সময় ক্ষোভে বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে রঞ্জনা চৌধুরীর চোখ। বলেন, ‘এ রকম লুটপাট করছে জানলে আমি নিজেই লাঠি নিয়ে তাদের ঠেকাতে বের হতাম। তাতে মারা গেলেও শান্তি ছিল। সব হারিয়ে এখন বেঁচে থেকে কি লাভ?’
নোয়াগাঁও হাওরবেষ্টিত শাল্লা উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম। বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেলই এখানকার বাহন। হাওরের ফসলরক্ষার জন্য যে বাঁধ তৈরি হয়েছে, সেটিই এখন সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সড়ক না থাকলেও গ্রামে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। গ্রামের পাশেই পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মিত হচ্ছে। গ্রামে পাকাঘর তেমন নেই। প্রায় প্রতিটি ঘরই টিনের, যার মধ্যে বেশির ভাগ ঘরই ভাঙাচোরা। সবকিছুতে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট।
গ্রামের কিছু তরুণের হাতে স্মার্টফোন থাকলেও বয়স্করা এখনও ইন্টারনেট, ফেসবুক এসবের সঙ্গে পরিচিত নন।
ফেসবুকে যে স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে হামলার কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামের গৃহবধূ ঢলি রানী দাস বলেন, এ কয়দিন হলো তিনি ফেসবুক শব্দটা শুনছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ফেছবুক কিতা জানি না। অনেকে এর কথা কইতে হুনলাম। ঝুমনে ওনো বুলে (ওখানে নাকি) কিতা লেখছে।’
এইটুকু বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ঢলি। ফেসবুক সম্পর্কে কিছু জানতে চান বোধ হয়।
কোনো উত্তর না পেয়ে আবার নিজে থেকেই বলতে শুরু করেন, ‘হামলার ঠিক আগে আমরা পাশের হাওরে গিয়ে লুকিয়েছিলাম। সেখান থেকে হামলার শব্দ শুনেছি। এখনও সেই শব্দ কানে ভাসে। এখনও ভয়ে গা শিউরে ওঠে।’
হামলার পর সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ভাঙা ঘরগুলো পুনর্নির্মাণেও সহায়তা করেছে সরকার।
এখন বিচার চায় গ্রামবাসী।
গ্রামের গৃহবধূ সুধা রানী দাস বলেন, ‘সাহায্য অনেক পেয়েছি। কিন্তু আমরা সাহায্য নয়, বিচার চাই। নিরাপত্তা চাই।’
নোয়াগাঁওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহমর্মিতা জানাতে সিলেট থেকে বুধবার গিয়েছিলেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ এর সংগঠক আব্দুল করিম কিম।
মামুনুলকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ঝুমন দাশের ঘরে যান তিনি। ঝুমন দাশের মুক্তির জন্য তার পরিবারের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মামুনুল হকের সমালোচনা করলে কাউকে কেন গ্রেপ্তার করতে হবে? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবারই সমালোচনা করার আধিকার আছে। ঝুমনকে অন্যায়ভাবে জেলে রাখা হয়েছে।’
কিমের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বিশ্বজিত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নোয়াগাঁওয়ে হামলার পর হামলাকালীরা মিছিল নিয়ে শাল্লা সদরের দিকে গিয়েছিল। সেখানে একটি প্রাচীন মন্দিরে হামলার চেষ্টা করেছিল তারা। আমরা সবাই জড়ো হয়ে তাদের প্রতিহত করি। এখানে হামলার ব্যাপারে আগে থেকে জানলে তাদের প্রতিহত করা যেত।’
গ্রাম থেকে বের হওয়ার পথে দেখা হয় একাত্তরের যুদ্ধ দেখা বৃদ্ধ সাবিত্রী বালার সঙ্গে। লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন তিনি।
সাবিত্রী বলেন, ‘একাত্তরের সময় একবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলাম। এইবার আবার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাতে হলো। স্বাধীন দেশে কেন নিজ বাড়িঘর ছেড়ে ভয়ে পালাতে হয়? আমাদের অপরাধ কি?’
তার পাশে থাকা অনিল দাস বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ও একবার দিরাইয়ের নাচনি ও চণ্ডীপুরের রাজাকাররা নোয়াগাঁওয়ে হামলা করেছিল। তখন চারজন রাজাকারকে ধরে হত্যা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এবারও হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে নাচনি ও চণ্ডীপুর গ্রামের লোকজন।’
নোয়াগাঁও পরিদর্শনে যাওয়া দলে ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল। তিনি বলেন, ‘এই হামলা একাত্তরের হামলা থেকে ভিন্ন কিছু না। এই হামলায় যতটা না জানমালের ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে মানসিক ক্ষতি, বিশ্বাসের ক্ষতি।’
নোয়াগাঁও থেকে ফেরার পথে পড়ে ধারণ বাজার। এই বাজারের একটি মন্দির একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। সেটি দেখিয়ে স্থানীয় ছাত্রনেতা অরিন্দম চৌধুরী বলেন, ‘এখন বলা হচ্ছে জলমহাল নিয়ে বিরোধ থেকে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা হয়েছে। জলমহাল নিয়ে বিরোধ হলে এই মন্দিরে হামলা হবে কেন?’
তার মত, এটা স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক হামলা।
হামলার ঘটনার পর দুইটি মামলা হয়। তাতে বুধবার পর্যন্ত ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের মধ্যে পাশের দিরাই উপজেলার নাচনি গ্রামের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম স্বাধীনকে ৫ দিনের এবং ২৯ জনকে ২ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ‘এই হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ্ররই মধ্যে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩০ জনের রিমান্ডও চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও যাদের নাম পাওয়া যাবে, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
তিনি জানান, নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর নিরাপত্তায় গ্রামেই একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে আছেন ১৫ জন পুলিশ। এ ছাড়া গ্রামে র্যাবও একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করেছে।
আরও পড়ুন:কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
মন্তব্য