ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো যুদ্ধ করছে বলে দাবি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে ‘পশ্চিমা উপদেষ্টাদের ডি-ফ্যাক্টো কমান্ডের অধীনে’ সামরিক ইউনিট সক্রিয়।
রাশিয়ার টেলিভিশন ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোও একই খবর প্রচার করছে। তারা বলছে, ন্যাটো সেনারা সক্রিয়ভাবে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িত।
তবে ন্যাটোর দাবি, এসব কিছুই করছে না তারা। কিয়েভে কেবল অস্ত্র ও লজিস্টিক সহায়তা দিচ্ছে সামরিক জোটটি; কারণ ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য না।
পাল্টাপাল্টি দাবিগুলো খতিয়ে দেখেছে বিবিসির ফ্যাক্টচেক দল।
কী দাবি করা হচ্ছে?
জাতির উদ্দেশে বুধবার দেয়া ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘কিয়েভ সরকার বিদেশি ভাড়াটে এবং জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে নতুন গ্যাং প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা ন্যাটোর মানদণ্ডে প্রশিক্ষিত সামরিক ইউনিট; কাজ করছে পশ্চিমা উপদেষ্টাদের ডি-ফ্যাক্টো কমান্ডের অধীনে।’
বিদেশি যোদ্ধারা ইউক্রেনের সামরিক ইউনিটে যোগ দিয়েছে, এটা সবার জানা। তবে রুশ কর্মকর্তারা এখন বলছেন, ইউক্রেনের ভূখণ্ড ব্যবহার করে পুতিন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে ন্যাটো।
রুশ চ্যানেল ওয়ানে ভ্রেম্যা পোকাজেটের উপস্থাপক রুসলান ওস্তাশকো ১৩ সেপ্টেম্বর বলেছিলেন, ইউক্রেনীয় সেনারা যুদ্ধ করার চেয়ে ছবি তোলা এবং টিকটকে ভিডিও বানাতে ব্যস্ত; তাদের হয়ে লড়াই করছে ন্যাটোর সেনারা। প্রমাণ হিসেবে অনুষ্ঠানজুড়ে ইউক্রেনে যুদ্ধরত বিদেশিদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া ফুটেজ দেখানো হয়।
এর আগে পূর্ব ইউক্রেনের স্বঘোষিত লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের (এলপিআর) সামরিক মুখপাত্র আন্দ্রেই মারোচকো রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তিকে জানান, খারকিভ অঞ্চলে নিয়মিত ন্যাটো কর্মকর্তাদের আসার খবর রয়েছে তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে।
‘ন্যাটো কর্মকর্তারা ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের ক্রামতোর্স্কে শহরে অবস্থান নিয়েছে। বিদেশি এবং ইউক্রেনীয় ইউনিটের মধ্যে ভারসাম্য ঠিক করার উদ্দেশ্যে তারা (ন্যাটো) এই এলাকায় এসেছে।’
অন্য দাবিগুলো সাধারণত বিদেশি যোদ্ধাদের উপস্থিতি সম্পর্কে; যেগুলো ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরি করে না। উদাহরণস্বরূপ, আরআইএ নভোস্তির কলামিস্ট ভ্লাদিমির কর্নিলভ বলেছেন, ইজিউম শহরকে ‘মুক্ত’ করতে আসাদের ভিডিও ফুটেজ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে; যেখানে তারা ইংরেজিতে কথা বলছে।
কী প্রমাণ দেয়া হচ্ছে?
যেসব বিদেশি যোদ্ধা স্বেচ্ছায় ইউক্রেনে গেছেন, তাদের সঙ্গে ন্যাটো সেনাদের পার্থক্য খুঁজে বের করা খুব জরুরি। বিবিসি সেই চেষ্টাই করেছে।
রাশিয়ার মিডিয়া আউটলেটগুলো ইউক্রেন ভূখণ্ডে ন্যাটোর উপস্থিতির কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। যুদ্ধের ময়দানে তারা কেবল বিদেশি যোদ্ধা থাকার কথা বলছে।
ভ্রেম্যা পোকাজেট অনুষ্ঠানে যেসব বিদেশি যোদ্ধার ফুটেজ দেখানো হয়েছে, তাদের একজন সাবেক আমেরিকান নৌ কর্মকর্তা, নাম ম্যালকম ন্যান্স। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেন থেকে তিনি নিয়মিত ভিডিও আপলোড করছেন।
অনুষ্ঠানে ন্যান্সের একটি ভিডিও খুব হাইলাইট করা হয়; যেখানে ন্যান্সের কাঁধে ঝোলানো ছিল একটি আর্টিলারি ব্যাটারি। ভিডিওতে তাকে এটির ব্যবহার সম্পর্কে বলতে শোনা যায়।
ন্যান্স এখন আমেরিকার নৌবাহিনীতে নেই। ইউক্রেন সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার বিষয়টি টুইটে তিনি এপ্রিলে জানিয়েছিলেন। এই হ্যান্ডেলে তার ১০ লাখের বেশি ফলোয়ার আছে। তার মানে এখানে আসলে গোপন করার কিছু নেই।
রুশপন্থি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলোতে হাইলাইট হওয়া অপর ব্যক্তিটিও একজন আমেরিকান। নাম রব-রয় লেন; যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহো রাজ্যে তিনি বেড়ে উঠেছেন৷
লেন নিয়মিত ইউক্রেনীয় সামরিক ইউনিটের সঙ্গে কাজ করার ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করেন। পাশাপাশি তার দলে আরও কয়েকজন বিদেশি স্বেচ্ছাসেবকের নামও জানান দেন। এই ভিডিওগুলো রাশিয়াপন্থি সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে ব্যাপক হারে শেয়ার করা হয়েছে।
লেনের সামরিক অভিজ্ঞতা আছে বলে কোনো অনলাইন প্রমাণ নেই। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লেনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে লেন তার ইউনিটে দুই ব্রিটিশ নাগরিকসহ আরও বেশ কয়েকজন সদস্যের নাম উল্লেখ করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করা হয় যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তবে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সাবেক কর্মীদের পরিষেবা রেকর্ড বা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে মন্তব্য করবে না।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের হামলার খবরের মধ্যে ইরানের স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম শুক্রবার বলেছে, দেশটির পরমাণু ক্ষেত্রগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদে আছে।
সিরিয়ার দামেস্কে গত ১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় নগর ইস্পাহানে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ জানায়, ইস্পাহানের একটি বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, তবে কী কারণে এ বিস্ফোরণ হয়েছে তা জানা যায়নি।
‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের’ বরাত দিয়ে ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিমের খবরে বলা হয়, ‘ইস্পাহান প্রদেশের পরমাণু ক্ষেত্রগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ।’
এদিকে ইরানের মহাকাশ সংস্থার মুখপাত্র হোসেইন দালিরিয়ান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে লিখেন, দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সফলভাবে কিছু ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এ মুহূর্তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কোনো খবর নেই।
ইস্পাহানের কাছে শেকারি সেনা বিমানঘাঁটিতে তিনটি বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ।
আরও পড়ুন:ইরানের একটি স্থানে ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছে এবিসি নিউজ।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি এ খবর জানায়।
এবিসির বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স শুক্রবার জানায়, ইরানের কেন্দ্রস্থলে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
সিরিয়ার দামেস্কে গত ১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই ইরানে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া গেল।
এবিসির প্রতিবেদনের সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ জানায়, দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইস্পাহানের একটি বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, তবে কী কারণে এ বিস্ফোরণ হয়েছে তা জানা যায়নি।
ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ইস্পাহান, সিরাজ ও তেহরানে বিমান চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে।
ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক ক্ষেত্র রয়েছে ইস্পাহান প্রদেশে। অঞ্চলটিতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কেন্দ্রে থাকা নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রও রয়েছে।
গত শনিবারের হামলার জবাব দেয়ার কথা জানিয়েছিল ইসরায়েল। দেশটি বড় পরিসরে কোনো হামলা চালালে এবং এর জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা করলে গাজা যুদ্ধ পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলে রকেট ও ড্রোন হামলার পর ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসরায়েলের ঘনিষ্ট দুই মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্র। কারণ হিসেবে ইসরায়েলের ওপর তেহরানের ওই আক্রমণ মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক যুদ্ধের ইন্ধন যোগাতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদন থেকে এ খবর জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি অফিস অফ ফরিন অ্যাসেট কন্ট্রোল (ওএফএসি) জানিয়েছে, ১৩ এপ্রিলের হামলায় ব্যবহৃত ড্রোন উৎপাদনে জাড়িত ইরানের ১৬ ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া ইরানের সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য নিষিদ্ধ গোষ্ঠীকে সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করার অভিযোগ এনে দেশটির ইস্পাত উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত পাঁচটি সংস্থা ও গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাহমান গ্রুপকেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ওএফএসি।
অন্যদিকে, ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত সামরিক বাহিনী-সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি ইরানি সংস্থা, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে যুক্তরাজ্য।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে ১৩ এপ্রিল রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ভূপাতিত করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো।
হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটিতে কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে বলে জানা যায়। এ হামলায় সাত বছর বয়সী এক ইসরায়েলি শিশু মারাত্মক আহত হয়। এর বাইরে বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ইতোমধ্যে ইরানের জবাবের পাল্টা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের অবশ্যই নিজেদের সুরক্ষা করার অধিকার রয়েছে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের সামরিক তৎপরতাকে নিরুৎসাহিত করে, দেশটির ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ চালিয়ে যেতে ওএফএসিকে নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বাইডেন বলেছেন, ‘যারা ইরানকে হামলায় ইন্ধন দেয় ও তা সমর্থন করে, তাদের সবাইকে এটি স্পষ্ট করতে চাই যে, সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেবে।’
ট্রেজারি বিভাগের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও ইরানের বাণিজ্যিক গ্রেডের মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স শিল্পের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স খাতে ইরানের রাশ টেনে ধরতেই তাদের এ সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশটির বাইরে উৎপাদিত প্রযুক্তি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
ইসরায়েলে হামলার পর এ অঞ্চলে ইরানের কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে চলতি সপ্তাহেই সতর্ক করে যুক্তরাষ্ট্র। তার পরপরই বৃহস্পতিবার এমন সিদ্ধান্তের কথা জানাল ওয়াশিংটন।
ইসলামী প্রজাতন্ত্রের দেশ ইরান ও এর নেতাদের আর্থিক শাস্তির মুখোমুখি করতেই ক্যাপিটল হিলে তড়িঘড়ি করে এসব আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারাও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে তেহরানের মিত্র দেশগুলো তথা গাজা, ইয়েমেন ও লেবাননে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবাহের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে।
এ বিষয়ে ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতি বিভাগের প্রধান জোসেফ বরেল বলেছেন, ‘তেহরানকে শাস্তি দিতে ও ইসরায়েলের ওপর ভবিষ্যত হামলা প্রতিরোধে সহায়তায় বিদ্যমান ইইউ নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও প্রসারিত করা হবে।’
তবে একইসঙ্গে ইসরায়েলকেও সংযমী হতে বলেছেন তিনি।
বরেল বলেন, ‘আমরা একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি, মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক যুদ্ধ, যা বিশ্বের বাকি অংশ বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তাই যেকোনো মূল্যে আমাদের এটি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।’
আরও পড়ুন:ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। লোকসভার ৫৪৩টি আসনে সাত দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের রয়েছে ৪২টি আসন। শুরুর দিনে এই রাজ্যে তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। আসন তিনটি হলো-কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার।
বাকি ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হচ্ছে ১৭টি রাজ্য ও ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে। একইসঙ্গে এদিন ভোটগ্রহণ হবে অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভার ৬০টি ও সিকিমের ৩২টি আসনে।
ভারতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো হলো- পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু, সিকিম, রাজস্থান, পদুচেরি, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্রিশগড়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩০৩, কংগ্রেস ৫২, সমাজবাদী পার্টি ৫, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, তৃণমূল ২২, ডিএমকে ২৩, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ ও টিডিপি ২টি আসনে জয় পেয়েছিল।
গত নির্বাচনে গোটা দেশে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপির ৪০ জন, তৃণমূলের ৯ জন, কংগ্রেসের ৬ জন, ওডিশার বিজেডির ৫ জন মিলিয়ে সর্বমোট ৭৮ জন।
এ বছর ভারতে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন (১৮-১৯ বছর বয়সী) এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার।
ইসরাইলে ইরানের হামলাকে ‘সীমিত আকারের’ বর্ণনা করে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, যদি ইরান বড় কোনো হামলা করতে চাইত, তাহলে ইহুদি শাসকগোষ্ঠীর (ইসরাইল) কিছুই অবশিষ্ট থাকত না।
বুধবার তিনি ইরানের রেভলুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) বার্ষিক প্যারেডে দেয়া ভাষণে এ সতর্কতা উচ্চারণ করেন।
রাইসি বলেন, ‘এই হামলার জবাবে ইসরাইল যদি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আক্রমণও চালায়, তাহলে তার জবাব হবে বিশাল ও কঠোর।’
ইসরাইল-ইরান সংকট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যখন একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের হুমকি বিরাজ করছে, সে সময়ই এই হুংকার দিলেন ইব্রাহিম রাইসি।
সিরিয়ায় গত ১ এপ্রিল ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তেহরান। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ভূপাতিত করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো।
হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটিতে কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। এ হামলায় সাত বছর বয়সী এক ইসরায়েলি শিশু মারাত্মক আহত হয়েছে। এর বাইরে বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ওই হামলার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকে বার বার বিরত থাকার আহ্বান জানানো হলেও জবাব দেয়ার অঙ্গীকার করেছে ইসরাইল।
শনিবারের ওই হামলার প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। তিনি জানান, ওই হামলার নাম দেয়া হয়েছে ‘ট্রু প্রমিজ’। একইসঙ্গে ইসরাইল থেকে সম্প্রতি যে হুমকি দেয়া হচ্ছে তার জবাব কঠোর ও অগ্নিঝরা হবে বলে পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
১৩ই এপ্রিল ইসরাইলে ইরানের চালানো হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই অপারেশনের পরে বিশ্ববাসী দেখেছে যে, ‘ট্রু প্রমিজ’ ইহুদি রাষ্ট্রের মিথ্যা আধিপত্যকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”
ভাষণে ইসরাইলি মিত্রদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেসব দেশ এই নিষ্ঠুর ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে, তারাও তাদের জাতির কাছে লজ্জিত হবে।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে দুই বছরে ৫০ হাজারের বেশি সেনা সদস্য হারিয়েছে রাশিয়া। এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করেছে বার্তা সংস্থা বিবিসি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মৃত সেনাদের তথ্য সংগ্রহ করে আসছেন বিবিসির প্রতিবেদকরা।
রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে। এরপর থেকে বিবিসি রাশিয়া, স্বাধীন মিডিয়া গ্রুপ মিডিয়াজোনা ও স্বেচ্ছাসেবীরা মৃতের সংখ্যা গণনা করে আসছে। এই পরিসংখ্যান তৈরিতে কবরস্থানে সেনাদের কবর, বিবিসির অফিসিয়াল রিপোর্ট, সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ওপেন সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।=
বিবিসি অনুসন্ধান অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে ২৭ হাজার ৩০০ জনের বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। তবে সেনা নিহতের সংখ্যা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি রাশিয়া।
বিবিসি বলছে, সামগ্রিক মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রুশ কর্তৃপক্ষের দেয়া সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যার তুলনায় এই সংখ্যা আট গুণ বেশি। যদিও বিবিসির বিশ্লেষণে পূর্ব ইউক্রেনে রুশ-অধিকৃত দোনেস্ক ও লুহানস্কে মৃতের সংখ্যা হিসাবে নেয়া হয়নি। সেটি হিসাবে নিলে রাশিয়ার পক্ষে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে।
অন্যদিকে বিবিসি ও মিডিয়াজোনার সঙ্গে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া জুড়ে ৭০টি কবরস্থানে নতুন সামরিক কবর গণনা করছেন। কবরস্থানগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে।
ছবি এবং ভিডিও থেকে বোঝা যায় যে এই নতুন কবরগুলোর বেশিরভাগই ইউক্রেনে নিহত রুশ সেনা ও অফিসারদের।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) স্যামুয়েল ক্র্যানি-ইভান্স বলেন, ‘২০২২ সালে যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়া জটিল সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য তার পেশাদার ও অভিজ্ঞ সেনাদের ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।
‘যুদ্ধের মধ্যে সেই অভিজ্ঞ সেনাদের অনেকের মৃত বা আহত হওয়ায় তাদের স্থানে অল্প প্রশিক্ষণ বা সামরিক অভিজ্ঞতা আছে এমন স্বেচ্ছাসেবক, বেসামরিক এবং বন্দিদের ব্যবহার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পেশাদার সেনারা যা করতে পারে, বিকল্প সেনারা তা করতে পারে না।’
আরও পড়ুন:মরুভূমির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত কয়েকদিন ধরে চলছে তীব্র বৃষ্টিপাত ও ঝড়। এ ঘটনায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বন্যায় স্থানীয় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া বন্যার কবলে পড়ে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে রয়টার্স।
দেশটির জাতীয় আহওয়া কেন্দ্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আমিরাতের আবুধাবি প্রদেশের ওমান সীমান্তে অবস্থিত আল আইন শহরে ২৫৪ মিলিমিটার (৮ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ৭৫ বছরে অর্থাৎ ১৯৪৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত এটিই দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
মঙ্গলবার দিনের শেষভাগে বৃষ্টিপাত কমে এলেও বুধবার সকাল থেকেই জলাবদ্ধতার কারণে দুবাই বিমানবন্দরের কার্যক্রমে বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বেশ কিছু ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয়।
বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরের অন্যতম দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তাদের ফ্লাইট শিডিউল উল্লেখযোগ্য আকারে বিঘ্নিত হয়েছে। অসংখ্য ফ্লাইটকে ভিন্ন দেশে অবতরণ করতে বলা হয়েছে বা আগমন বিলম্বিত করা হয়েছে।
দুবাই ছাড়তে আগ্রহী যাত্রীদের বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে ফ্লাইট শিডিউল সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে বলা হয়েছে।
বিমানবন্দরের প্রাতিষ্ঠানিক এক্স অ্যাকাউন্টে জানানো হয়, ‘অত্যন্ত বৈরি পরিবেশে আমরা বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থিতিশীল করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, আরব আমিরাতের ৭০ বছর বয়সী এক নাগরিক মঙ্গলবার সকালে মারা গেছেন। দেশের উত্তরের রাস আল খায়মাহ প্রদেশে আকস্মিক বন্যায় তার গাড়িটি ডুবে যায়।
আরব আমিরাতের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারী বৃষ্টিপাতে দেশের কিছু অংশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির কথা জানানো হয়েছে, যার মধ্যে আছে ধসে পড়া সড়ক ও দালান। এগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
এদিকে প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে ওমানে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে।
মন্তব্য