বিস্তৃত জলরাশির মাঝে ভাসছে একটি নৌকা। নেই কোনো মাঝি। নৌকার আরোহী বলতে দুটো বানরছানা। এদের একটিকে আক্রমণ করছে পানিতে ভেসে আসা দুটি কুকুর। কুকুরের আক্রমণ থেকে ছানাকে রক্ষার জন্য প্রাণান্ত লড়াই করছে সঙ্গী বানর।
সিলেট আর সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার মাঝে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এটি দেখে আঁতকে উঠছেন সবাই।
নেটিজেনদের অনেকে আক্ষেপ করে বলছেন, বন্যায় মানুষের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে পশুপাখির জীবনেও নেমে এসেছে বিপর্যয়। কেউ কেউ এই ভিডিওটি না করে বরং বানর দুটিকে বাঁচানোর চেষ্টার ওপর জোর দিচ্ছেন।
ভিডিওটির উৎস অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। তাতে দেখা গেছে ভিডিওচিত্রটি সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার সময়কার নয়। এমনকি পুরো দৃশ্যায়নটি অভিনয়ের অংশ। যে দুটি বানর এই অভিনয়ে অংশ নিয়েছে ওদের নাম ‘লোরা’ এবং ‘কাকা’। আর ‘অভিনয়শিল্পী’ হিসেবে ভিডিওতে অংশ নেয়া মোটাতাজা কুকুর দুটির নাম ‘লাকি’ ও ‘লুকাস’।
এক বানরপ্রেমী নারী ‘মাঙ্কি ড্রিম’ নামে চালাচ্ছেন একটি ফেসবুক পেজ। সেখানে ভিডিওটি পোস্ট করা হয় ২০২১ সালের ৩ মে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ বার। ৬ লাখ ১৫ হাজারের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভিডিওতে রিঅ্যাক্ট করেছেন। কমেন্টের সংখ্যাও নেহাত কম নয়, দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজারে।
‘কাকা’ ও ‘লোরা’কে নিয়ে এ ধরনের অনেক ভিডিও রয়েছে ফেসবুক পেজে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখানো হয় বিপজ্জনক বা অদ্ভুত পরিস্থিতি কী করে সামাল দিচ্ছে বানর দুটি।
ফেসবুক পেজটিতে কাকা ও লোরার সঙ্গে ওই নারীর ছবি থাকলেও নিজের নাম-পরিচয় উল্লেখ করেননি। তবে যোগাযোগের যে নম্বর তিনি দিয়ে রেখেছেন, সেটা দেখে আন্দাজ করা যায় ওই নারী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ক্যাম্বোডিয়ার নাগরিক। তার শারীরিক গঠন ও চেহারাও ক্যাম্বোডিয়ানদের মতো।
‘মাঙ্কি ড্রিম’ ফেসবুক পেজে আপলোড করা আলোচিত ভিডিওটির কিছু অংশ কেটে সেটা গত দুই দিনে বাংলাদেশে ভাইরাল করা হয়েছে। পুরো ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকাটি মোটেই মাঝিহীন অবস্থায় ভাসছিল না। এটি একটি গাছের লম্বা কাণ্ডের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা।
আর ভিডিওতে বিস্তৃত জলরাশি দেখা গেলেও বাস্তবে নৌকার কিছুটা পাশেই ছিল পুরোপুরি শুকনো তীর।
কুকুর দুটির সঙ্গে ‘লড়াইয়ের অভিনয়ের’ একপর্যায়ে বানর দুটি ওই কাণ্ডের মাথায় চড়ে বসে। পরে কুকুর দুটিও নেমে তীরে চলে যায়।
‘মাঙ্কি ড্রিম’ পেজের বর্ণনা থেকে জানা যায়, কাকা ও লোরাকে স্থানীয় একটি বন থেকে গ্রামবাসীরা উদ্ধার করে। বাঘ, শিয়ালের মতো হিংস্র প্রাণীরা শাবক জোড়াকে শিকারের চেষ্টা করছিল। গ্রামবাসী উদ্ধার করার পর শাবক দুটিকে আদর মমতায় বড় করছেন ওই নারী। আর ‘মাঙ্কি ড্রিম’ পেজটি তিনি চালু করেন ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর।
প্রায় ৫ বছর আগে পেজটি খোলা হলেও প্রথম ভিডিও পোস্ট করা হয় ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ। অবশ্য সেটি ছিল নম বাকেংয়ের পর্বতে সূর্যোদয়ের দৃশ্য।
বানর শাবক লোরাকে নিয়ে প্রথম ভিডিওটি আসে ২০২০ সালের ১০ জুলাই। আর কাকার ভিডিও আসে ২০২০ সালের ১২ আগস্ট। এরপর থেকে নিয়মিত লরা ও কাকার নতুন নতুন ভিডিও পোস্ট করেছেন পেজের অ্যাডমিন।
পেজটিতে ওই নারী নিজেকে বানর শাবক দুটির ‘মা’ হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। আর নিজের স্বামীকে নেটিজেনদের সামনে তুলে ধরেছেন বানরছানা দুটির ‘বাবা’ হিসেবে।
কখনও কুকুরের সঙ্গে শাবক দুটির খুনসুটি, কখনও দুধ খাওয়ানো, কখনও সেগুলোকে গোসল করানোর ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে পেজটিতে।
সবশেষ ভিডিও পোস্ট করা হয় গত বছরের ২৮ নভেম্বর। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মা পরিচয় দেয়া সেই নারীকে ঘিরে খুনসুটিতে মেতেছে বানরছানা দুটি।
‘মাঙ্কি ড্রিম’ পেজ খোলার ব্যাখ্যা দিয়ে লেখা হয়েছে, এই পেজের মাধ্যমে বানরের জীবন, বেড়ে ওঠা, নাওয়া, খাওয়া, ঝগড়া, খুনসুটি, প্রজনন সবকিছু নেটিজেনদের সামনে তুলে ধরতে চায় শাবক দুটির বর্তমান অভিভাবক। এ ছাড়া পোষা পাখি, প্রাণীরও নানা দিক এই পেজের মাধ্যমে তুলে ধরার ইচ্ছা রয়েছে তার।
সবার কাছে নিবেদনও রেখেছেন প্রাণিপ্রেমী। পেজটিতে অন্তত হাজার দশেক মানুষ লাইক করুক এবং হাজার দশেক অনুসারী থাকুক- এটা তার প্রত্যাশা। তবে পেজটিতে লাইকের সংখ্যা এখনও সেই প্রত্যাশা পূরণ করেনি। সংখ্যাটি মাত্র চার হাজার ৩৬৭। তবে অনুসারী আছেন ৪৫ হাজার ২২৭ ফেসবুক ব্যবহারকারী।
আরও পড়ুন:ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা না থাকার অভিযোগে প্লে স্টোর এবং অ্যাপ স্টোর থেকে জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটক মুছে ফেলতে গুগল ও অ্যাপলকে চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন-এফসিসি।
চীনের কমিউনিস্ট সরকার এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এফসিসি কমিশনার ব্রেন্ড্যান কার। তাই এই অ্যাপ মুছে ফেলতে গুগল ও অ্যাপলকে চিঠি পাঠিয়েছেন ব্রেন্ড্যান।
গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুন্দর পিচাই এবং অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুককে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ৮ জুলাইয়ের মধ্যে প্লে স্টোর এবং অ্যাপ স্টোর থেকে টিকটক অ্যাপ মুছে ফেলতে হবে। এই সময়ের মধ্যে তা না করলে কারণ জানাতে হবে দুই প্রযুক্তি জায়ান্টকে।
চিঠির বিস্তারিত তথ্য মঙ্গলবার টুইট করেন ব্রেন্ড্যান কার। সেখানে তিনি লেখেন, ‘টিকটক কেবল ভিডিও অ্যাপ নয়। এটা বিপুল স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ করছে। তদন্তে দেখা গেছে, বেইজিং থেকে এসব তথ্যে প্রবেশ করছে কেউ বা কারা। এটাকে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’
TikTok is not just another video app.
— Brendan Carr (@BrendanCarrFCC) June 28, 2022
That’s the sheep’s clothing.
It harvests swaths of sensitive data that new reports show are being accessed in Beijing.
I’ve called on @Apple & @Google to remove TikTok from their app stores for its pattern of surreptitious data practices. pic.twitter.com/Le01fBpNjn
কারের অভিযোগকে আংশিক সত্য বলে নিশ্চিত করেছেন টিকটকের এক মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, এমনকি চীন থেকেও প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের তথ্যে ঢুকতে পারে। সেটি কেবল প্রয়োজনের ভিত্তিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে করা হয়।’
রয়টার্স বলছে, এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হয়নি গুগল। অ্যাপলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
অ্যাপ স্টোরের কনটেন্টের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই এফসিসির। সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টেলিযোগাযোগের লাইসেন্স দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় ভূমিকা রাখে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ নিয়ে ট্রাম্প শাসনামলেই দেশটির অনেক আইনপ্রণেতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপের মুখে আছে টিকটক। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধের উদ্যোগও নিয়েছিলেন ট্রাম্প।
টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স। এটি চীনের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টিকটক অ্যাপের উত্থান তুলনামূলক দ্রুত ছিল।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে টিকটক জানিয়েছিল, তাদের অ্যাপ ব্যবহারকারী ১০০ কোটির বেশি মানুষ। দিনে গড়ে অ্যাপটিতে ৫২ মিনিট ব্যয় করেছেন ব্যবহারকারীরা।
আরও পড়ুন:‘৩০ বছর ধরে আমি এই কলেজে শিক্ষকতা করি। ছাত্ররা আমার প্রাণ, স্থানীয়রাও আমাকে ভালোবাসত। তবু আমার সঙ্গে যা ঘটে গেল, এরপর এই মুখ নিয়ে কী করে আমি কলেজে যাব’- বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে নিউজবাংলাকে বলছিলেন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্ত হওয়ার ঘটনায় তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
ঘটনার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। প্রশাসনের দাবি, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে নিউজবাংলাকে স্বপন কুমার জানিয়েছেন গত এক সপ্তাহে দুই বার ঠিকানা বদল করেছেন তিনি।
ঘটনার ভয়াবহতায় মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন স্বপন কুমার। এরপরেও তিনি জীবিকার প্রয়োজনে ফিরতে চান কলেজে।
ভারাক্রান্ত গলায় নিউজবাংলাকে তিনি বলেছেন, ‘কলেজে গেলে নতুন করে আবার হামলা হয় কি না, সেই শঙ্কায় আছি। তারপরেও কলেজে ফিরতে চাই। কারণ আমার পরিবার আছে, সন্তান আছে, তাদের ভরণ-পোষণের খরচ আমাকে বহন করতে হয়। কলেজের চাকরিই আমার আয়ের উৎস।’
ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে শিক্ষক স্বপন কুমারের গলায় জুতার মালা পরানোর সময় আশপাশে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও তারা এখন দাবি করছে, এমন কোনো ঘটনা তাদের চোখে পড়েনি। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ওই ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি তারা। শিক্ষক হেনস্তা বা কলেজে সহিংসতার ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি।
এরই মধ্যে কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিবর্তনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকু। টিংকুর দাবি, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক তাকে দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব করেছেন।
যেভাবে ঘটনার শুরু
ভারতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করে সম্প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে পড়েন বিজেপি নেতা নূপুর শর্মা। চাপের মুখে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি মামলাও হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় গত ১৭ জুন রাতে ফেসবুকে নূপুরকে প্রশংসা করে একটি পোস্ট দেন। রাহুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন স্থানীয় মির্জাপুর হাজীবাড়ি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. ওমর ফারুক।
ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরদিন শনিবার সকালে রাহুল কলেজে আসার পর বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও সে তা করেনি। এরপর বিষয়টি নিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের কাছে নালিশ জানায় কয়েকজন মুসলিম ছাত্র।’
বিষয়টি স্থানীয় পুলিশকে জানান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। একপর্যায়ে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ছাত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে কিছু ছাত্র আমাকে ঘটনাটি জানালে আমি তিনজন শিক্ষককে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তাদের মধ্যে ছিলেন কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শেখ আকিদুল ইসলাম, পরিচালনা পরিষদের আরেক সদস্য ও কৃষি শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক কাজী তাজমুল ইসলাম। বাকি আরেক জন হলেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকু।’
স্বপন কুমার বলেন, ‘কলেজের যেকোনো অঘটন ঘটলে আমি সব থেকে আগে এই তিন শিক্ষককে জানাই। প্রতিবারের মতো সেদিনও একইভাবে তাদের জানালাম।
‘স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়ার বিষয় নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে আলোচনা করলাম। তবে তারা নীরব ছিলেন। কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
‘এরই মধ্যে কলেজে গুজব ছড়িয়ে পড়ে আমি ওই ছাত্রকে সাপোর্ট করছি। তখন কিছু ছাত্র কলেজে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।’
স্বপন কুমার বলেন, ‘একপর্যায়ে কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন ও পাশের একটি মাদ্রাসার ছাত্ররা এসে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে। তখন আমি কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অনেককে ফোন করে কলেজে ডেকেছি। তবে কেউ সময়মতো আসেননি।’
‘এরপর জড়ো হওয়া লোকজনের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। আমার মোটরসাইকেলসহ শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়।’
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘পরে পুলিশ এসে আমাকে বলে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আপনাকে আমাদের হেফাজতে নিতে হবে। তখন আমি পুলিশের কাছে একটি হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট চাই। তবে আমাকে হেলমেট দেয়া হয়নি। একটি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট দেয়া হলেও পরে তা পুলিশ খুলে নেয়।’
চূড়ান্ত হেনস্তার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষক স্বপন কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ আমাকে কলেজ কক্ষ থেকে বের করে আনে। তখন দুই পাশে শত শত পুলিশ ছিল। এর মধ্যেই স্থানীয়রা আমাকে পুলিশের সামনেই জুতার মালা পরিয়ে দিল।
‘আমাকে পুলিশ ভ্যানের কাছে নেয়ার সময় পিছন থেকে অনেকে আঘাত করেন। আমি মাটিতে পড়ে যাওয়ায় পায়ের কিছু জায়গায় কেটে যায়। তখন অনুভব করি পিছন থেকে কেউ আমার মাথায় আঘাত করছে।’
পুলিশ ‘কিছু দেখেনি’
শিক্ষককে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে দেয়ার দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হলেও পুলিশের দাবি, তারা এ সম্পর্কে কিছু জানে না। এমনকি ঘটনার এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরেও ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখেননি জেলার পুলিশ সুপার। তার উল্টো অভিযোগ, পরিস্থিতি সামালে পদক্ষেপ নিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ‘দেরি’ করেছেন।
নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার দিন কলেজ প্রাঙ্গণের পরিস্থিতি খুব বেশি অস্বাভাবিক ছিল। পুলিশ সেখানে চেষ্টা করছিল বিনা রক্তপাতে পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।’
তিনি বলেন, ‘অধ্যক্ষকে যখন কলেজের কক্ষ থেকে বের করে আনা হয়, তখন সেখানে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। এ ছাড়া নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তখন কেউ তাকে জুতার মালা দিয়েছে কি না, আমরা দেখতে পারি নাই। এটা আমার জানাও নেই।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমি এখনও কোনো ভিডিও দেখি নাই। জুতার মালার ব্যাপারটাও জানি না। এ ঘটনায় আমি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা প্রতিবেদন দিলে যে বা যারা দোষী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ঘটনার দিনের বর্ণনায় পুলিশ সুপার বলেন, ‘সেদিনের পরিস্থিতি খুবই বিপৎসংকুল ছিল। আমরা কোনো প্রকার গুলি চালাতে চাইনি, তবে ছয় রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়তে হয়েছে।’
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘অধ্যক্ষের উচিত ছিল ওই দিন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া। কলেজ থেকে ওই ছাত্রের (ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ছাত্র) বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা বিলম্ব করায় পরিস্থিতি এত খারাপ হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে।
‘স্থানীয়দের প্রচুর অভিযোগ ছিল অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। তবে আমরা তাকে দ্রুত রেসকিউ করতে চেয়েছিলাম।’
ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ছাত্রের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে কলেজে সহিংসতা ও শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত পুলিশের কোনো পদক্ষেপ নেই। তারা বলছে, কলেজ বা অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে মামলা না হওয়ার কারণেই বিষয়টিতে কোনো গতি নেই।
পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অধ্যক্ষ এখন চাইলে মামলা দায়ের করতে পারেন। এ ছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষ চাইলেও মামলা দায়ের করতে পারে। আমরা বার বার তা বলে আসছি, কিন্তু কেউ এখনও রাজি হয়নি।
‘এ বিষয়ে আরও অধিক তদন্ত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।’
এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন থেকে সেখানে ২১ সদস্যের পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সেখানে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। আশা করি এরপর আর পরিস্থিতি খারাপ হবে না।’
পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষক স্বপন কুমারের নিরাপত্তা জোরদারের দাবিও করা হয়েছে। নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অধ্যক্ষের কোনো অপরাধ না থাকায় তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাও দেয়া হচ্ছে।
‘তবে রাহুল নামের ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে সে কারাগারে আছে। কলেজে ও ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা আছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত।’
স্বপন কুমারকে জুতার মালা পরানোর ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘ওই দিন পাবলিক খুব বেশি উত্তেজিত ছিল। তাদের কন্ট্রোলে নেয়া যাচ্ছিল না। আর আমার চোখে জুতার মালার মতো কোনো কিছু পড়েনি। তাকে যখন গাড়িতে তোলা হয়েছে তখন তার গলায় এ ধরনের কিছু ছিল না।’
এদিকে পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করলেও হেনস্তার শিকার শিক্ষক এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন ঠিকানায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
স্বপন কুমার শনিবার নিউজবাংলাকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘শনিবার (১৮ জুন) বিকেলে আমাকে থানায় নেয়া হয়। পরের দিন সন্ধ্যায় জানানো হয়, আমাকে বাড়িতে পাঠানো হবে। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, কোথায় যেতে চাই। তখন আমি আমার কলেজের এক শিক্ষকের গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিই। তখন নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সঙ্গে ছিল।
‘২৩ তারিখে তাদের বাড়ি থেকে নড়াইল সদরের একটি গ্রামে আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছি। লোকলজ্জা ও হামলার ভয়- দুটিই কাজ করছে। তাই পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
স্বপন কুমারের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বর্তমান অবস্থানের সুনির্দিষ্ট তথ্য নিউজবাংলা প্রকাশ করছে না।
দায়িত্ব হারানোর মুখে স্বপন কুমার
দেড় বছর ধরে স্বপন কুমার বিশ্বাস মির্জাপুর ইউনাইডেট ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন। তবে ১৮ জুনের ঘটনার পর তাকে এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ঘটনার পরদিন ১৯ জুন নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক কলেজে এসে স্থানীয়দের সঙ্গে সভা করেন। সেখানে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার বিষয়টি আলোচিত হয়।
কলেজের প্রধান সহকারী খান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমপি কবিরুল হক সভা করে দোষীর শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি পরিস্থিতি বিবেচনায় কলেজ বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছেন।
‘কলেজ খোলার পর পুনরায় সভা হবে। ওই সভায় হয়তো নতুন কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।’
কলেজের একজন শিক্ষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কলেজের পরিচালনা পরিষদের কমিটি নতুন কাউকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ এলাকার মানুষ স্বপন কুমারকে এ দায়িত্বে দেখতে চাচ্ছে না। কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকু হয়তো নতুন দায়িত্ব পাবেন।’
জেলা প্রশাসন ৪ জুলাই পর্যন্ত কলেজ না খুলতে নির্দেশ দিয়েছে।
নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে এমপি ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজনের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকু।
তবে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে একেবারে না করে দিয়েছি। আমি চাই যিনি দায়িত্বে আছেন তিনিই থাকুন।’
ঘটনার দিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরামর্শের জন্য ডাকার পর কেন নীরব ছিলেন জানতে চাইলে আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি সেদিন নীরব ছিলাম না। আমি চেয়েছিলাম যে দোষীর শাস্তি হোক।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানো কাউকে চিনতে পেরেছেন কি না- এমন প্রশ্নে আক্তার হোসেনের দাবি, তিনিও এমন কোনো ঘটনা দেখেননি।
তিনি বলেন, ‘জুতার মালা পরানোর ঘটনাটি আমি নিজে দেখি নাই। ওই সময় সেখানে পুলিশ ছিল। তারা ভালো বলতে পারবে। আমি আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রটেক্ট করতেছিলাম। সে সময় আমার গায়ে বেশ কয়েকটি ইটপাটকেল লেগেছে। আমি দোষীদের শাস্তি চাই।’
কলেজের পক্ষ থেকে মামলা করার দায়িত্ব নিতেও রাজি নন আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এটা এখন একটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন বিষয়টির তদন্ত করছে। এ ছাড়া কলেজ খুললে আমরা শিক্ষকরা আলোচনা করে দেখব কী করা যায়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, মাসখানেক আগে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পাঁচজন কর্মচারী নিয়োগের চেষ্টা চালায় কলেজের প্রভাবশালী একটি চক্র। এতে বাধা দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। এরপর থেকেই চক্রটির তোপের মুখে আছেন তিনি।
স্বপন কুমারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কলেজটি ঈদুল আজহা পর্যন্ত বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের পর কলেজ রান করতে নতুন করে একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। কে দায়িত্ব পাবেন সে ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’
স্বপন কুমারকে দায়িত্ব থেকে সরানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সাময়িক সময়ের জন্য করা হচ্ছে। এটা শাস্তিমূলক কিছু না। আপাতত কলেজ ও এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য এটা করা হচ্ছে।
‘এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাকে কিছুদিনের জন্য ছুটিতে রাখা হতে পারে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ওই দিনের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে। বাকি দুজন হলেন জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান ও নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত কবীর।
‘২৩ জুন এ কমিটি গঠনের পর তারা কাজ শুরু করেছে। ৩০ জুন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তদন্ত প্রতিবেদন থেকে ঘটনায় কারা জড়িত তা জানা যাবে। এর আলোকে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হককে ফোন করলে তিনি দাবি করেন, স্বপন কুমারকে দায়িত্ব থেকে সরানোর তথ্য সঠিক নয়। নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে তিনি আক্তার হোসেন টিংকুকে কোনো প্রস্তাবও দেননি।
কবিরুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক একটা ঘটনা এখানে ক্যানসার হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তেজিত জনতা যেন আবারও উত্তেজিত না হয়, সে জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
‘আমি সেদিনের ঘটনাটির নিন্দা জানাই। ঘটনার দিন আমাকে জানানো হয়েছিল। তখন আমি পার্লামেন্টে ছিলাম। রাতেই রওনা দিয়ে নড়াইলে এসেছি। পরের দিন কলেজে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যা যা করার দরকার করেছি।’
অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোয় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখি নাই। আমাকে বলা হয়েছে শুধু ছাত্রকে জুতার মালা পরানো হয়েছে।’
এসব বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার ‘পরামর্শ’ দেন এমপি কবিরুল। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে যদি আবার নিউজ করেন, তখন বাইরের দেশে মিডিয়াও নিউজ করা শুরু করবে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।’
দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ ইমো।
সিলেট বিভাগের ব্যবহারকারীদের জন্য প্ল্যাটফর্মটি ২২ জুন থেকে বিশেষ ডাটা ডোনেশন চালু করেছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ৪০ লাখ টাকার বেশি সমমূল্যের ডাটা পাচ্ছেন বিনা মূল্যে।
বরাদ্দ ডাটা থেকে গ্রামীণফোন ব্যবহারকারীদের জন্য ৫১২ এমবি, বাংলালিংক ব্যবহারকারীদের জন্য ৩০০ এমবি এবং রবি ও এয়ারটেল ব্যবহারকারীদের জন্য ১ জিবি করে ডাটা সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
এই ডাটা ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ইমো ব্যবহারকারীরা ১ হাজার ৫৫০ মিনিট পর্যন্ত অডিও কল এবং ৫৫০ মিনিট পর্যন্ত ভিডিও কল করতে পারবেন।
এই দুঃসময়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং প্রয়োজনীয় ফান্ড বা ত্রাণ সহযোগিতা পেতে ইমোর সুবিধাটি খুবই কার্যকরী হয়ে উঠবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ফ্রি ডাটা চালুর পর থেকে তিন দিন পর্যন্ত ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করতে পারবেন সেগুলো।
সেই সঙ্গে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দ্রুত ত্রাণ এবং অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ রিলিফ’ নামে একটি ইমো চ্যানেল চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একাধিক এনজিওর সমন্বয়ে ইতোমধ্যেই ত্রাণ সংগ্রহ ও প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছে এবং এখন পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি ফলোয়ার এই ‘বাংলাদেশ রিলিফ’ চ্যানেলে যুক্ত হয়েছেন।
এই ভয়াবহ বন্যা লাখ লাখ মানুষকে কঠিন বিপর্যয়ে ফেলে দিয়েছে। বন্যায় ২৪ জুন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
দেশের এমন দুঃসময়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে এবং পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে প্রতিটি সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার একযোগে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি।
ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইমো এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছে এবং সিলেট ও নিকটবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে দ্রুত পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
আরও পড়ুন:সিলেট, সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে শেয়ার করছেন নেটিজেনরা। বানভাসীদের তীব্র দুর্ভোগ ছুঁয়ে যাচ্ছে দেশবাসীকে। তবে যাচাই না করে কিছু ক্ষেত্রে ভুল ছবি শেয়ারের অভিযোগও উঠছে।
অভিনয়শিল্পী জয়া আহসানও এমন ভুল এড়াতে পারেননি। বানভাসীদের অসহায়ত্ব নিয়ে রোববার দুপুর পর্যন্ত ফেসবুকে তিনটি পোস্ট করেছেন তিনি। এর মধ্যে দুটি পোস্টে বেশ কিছু ছবি যুক্ত করেছেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে রোববার বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে শেয়ার করা একটি পোস্টে সাতটি ছবি দিয়েছেন জয়া। তবে এর মধ্যে একটি ছবি সিলেট, সুনামগঞ্জের সাম্প্রতিক বন্যার নয়। এমনকি সেটি নিকট অতীত বা বাংলাদেশ অঞ্চলেরও নয়।
জয়ার পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা যায় পানিতে প্রায় ডুবে যাওয়া একটি শিশু মাথায় একটি গামলা ধরে কোনোমতে একটি কুকুরছানাকে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জয়ার পাশাপাশি আরও অনেকেই শেয়ার করছেন ছবিটি।
গুগল লেন্সের সাহায্যে ছবিটির উৎস অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এতে দেখা যায় ছবিটি বেশ কয়েক বছর আগে গ্লোবালগিভিং নামের একটি উন্নয়ন সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘গ্লোবালগিভিং একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যেটি অন্যান্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে দাতাগোষ্ঠী এবং কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়। আমরা ২০০২ সাল থেকে আফগানিস্তান থেকে জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত (এবং এর মধ্যে শত শত জায়গায়) বিশ্বস্ত, কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থাগুলোকে সহায়তা করছি। আমাদের এই পৃথিবীকে আরও উন্নত জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে ওই সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ এবং সহায়তার অংশীদার করতে সাহায্য করছি।’
গ্লোবালগিভিং তাদের ওয়েবসাইটে ‘রেসকিউ ডগস ইন ফ্লাড এরিয়াস- সেভ চিলড্রেন্স লাইভস’ শিরোনামে কুকুরছানা মাথায় নিয়ে বানের পানির মধ্য দিয়ে চলা শিশুটির ছবি প্রকাশ করে। এই শিরোনামে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানির মাঝে অসহায় ককুরদের উদ্ধারের মোট ছয়টি ছবি রয়েছে।
কুকরছানা মাথায় নিয়ে পানি ঠেলে চলা শিশুটির ছবিটি কোথায় তোলা- সেটি আরও অনুসন্ধান করতে গিয়ে সার্স ইঞ্জিন ইয়াহুর আলোকচিত্রের ব্লগ ‘ফ্লিকার’-এর একটি ছবি পাওয়া গেছে। ফ্লিকারে এই ছবিটি আপলোড করা হয় ২০০৯ সালের ২৮ নভেম্বর। এর বিবরণে লেখা হয়েছে ভিয়েতনামের বাক লিউ রাজ্যের পরিবেশগত পরিস্থিতি।
ফ্লিকারের ছবির বিবরণ সঠিক হলে এটি তোলা হয়েছিল এক যুগেরও বেশি আগে ভিয়েতনামে। ওই শিশুটির একই ধরনের আরেকটি ছবিরও সন্ধান পেয়েছে নিউজবাংলা।
ভিএন এক্সপ্রেস নামের একটি সংবাদমাধ্যমের ভিয়েতনামি সংস্করণে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কুকুর খাওয়ার বিরুদ্ধে হ্যানয় ডিক্রির প্রতি পশুপ্রেমী সংগঠনগুলো সমর্থন জানানোর খবর দেয়া হয় ওই প্রতিবেদনে।
ভিএন এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনের ফাইল ছবিতে কুকুরছানা মাথায় নিয়ে পানি ঠেলে যাওয়া ওই শিশুটির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই ছবিটি খানিকটা ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে তোলা। ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি তোলেন নগুয়েন থান লি নামের একজন এবং এটি ভিএন এক্সপ্রেস আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা থেকে বাছাই করা।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সময়ে সেই অঞ্চলের পরিস্থিতি দাবি করে শিশুটির ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। ভারতের হায়দরাবাদে গত বছরের আগস্টে বন্যার সময়ও ছবিটি ছাড়ানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলের বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলা। সরকারের হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশের ১০ জেলার ৬৪ উপজেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ২১টি জেলার নদীগুলোর পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বন্যায় তলিয়ে যেতে পারে দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চল।
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কিশোরগঞ্জের হাওরে ইটনা-মিঠামইন সড়ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশের দাবি, এ সড়কটির কারণেই বন্যার পানি নেমে যেতে পারছে না। ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা কেন?
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত তিন দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২ হাজার ৪৫৮ মিলিমিটার, যা সিলেটের সুরমা নদী হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরো বাংলাদেশে এক বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ৩০০ মিলিমিটার। অর্থাৎ এ বছর এই অঞ্চলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা পুরো মৌসুমের বৃষ্টিপাতকে এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভারত থেকে ঢল আকারে নেমে আসা এই বিপুল পরিমাণ বৃষ্টির পানি এবারের বন্যার মূল কারণ বলে মনে করছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।
পূর্বাভাস কেন্দ্র বলেছে, এ মুহূর্তে দেশের ১১টি নদীর পানি ১৭টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে।
পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান বন্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে পরপর তিন দিনে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যা উজানে নামছে, যেখানে আমাদের দেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ৩০০ মিলিমিটার।
‘এত বেশি পানি বাংলাদেশের ভেতরে এসে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এবারের বন্যার এটাই মূল কারণ। এত অল্প সময়ে এত বৃষ্টি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টি বেশি হয়। বেশি বৃষ্টিপাতের মাস জুলাই এবং আগস্ট। মূল মাসের আগেই বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া পূর্বাভাস আছে, দেশের ভেতর ও বাইরে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার। যেহেতু জুলাই মাস আসন্ন, তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে।
‘মূল মৌসুম শুরুর আগেই আমরা এবার বন্যা দেখেছি। মে মাসে একটা বন্যা হয়েছে। এবারকার বন্যা তৃতীয়বারের মতো বন্যা। এত বড় বন্যার আঘাত আসলে সেটা সহ্য করা কঠিন। এ কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হচ্ছে।’
দেশের উত্তরাঞ্চলে যে বন্যা, তাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন এই কর্মকর্তা। আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘উত্তর অঞ্চলের বন্যা মৌসুমের স্বাভাবিক বন্যা। এখানে বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে না। উত্তর অঞ্চলের বন্যা সর্বোচ্চ অবস্থানে ওঠার পর পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে নেমে যাবে।
‘সর্বোচ্চ অবস্থানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করতে থাকবে। আগামী তিন-চার দিনে উত্তর অঞ্চলে পানি সর্বোচ্চ অবস্থানে যাবে। এরপর পানি নেমে যাবে। উত্তর অঞ্চলের বন্যায় টাঙ্গাইল পর্যন্ত প্লাবিত হবে।’
সিলেট অঞ্চলের বন্যায় ইটনা, মিঠামইন সড়কের দায় আছে কি না জানতে চাইলে তা উড়িয়ে দেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে রাস্তার কথা বলছেন, সেখানে কিন্তু বড় বড় কয়েকটি সেতু আছে পানি সরে যাওয়ার জন্য। ওই অঞ্চলে এখনও পানিই আসেনি। পানি সরে যাওয়ার তাই প্রশ্নও আসে না। সেখানে দুটি বড় নদীও আছে, সেদিক দিয়েও পানি সরে যেতে পারে।
‘পানিটা এসেছে সিলেটের সুরমা নদীতে, কুশিয়ারাতেও এখনও পানি আসেনি। চেরাপুঞ্জি থেকে যে পানিটা আসে সেটা সাধারণত ফ্ল্যাশ ফ্লাড হয়। গত মাসের ১৬-১৭ তারিখে পানিটা বেড়েছিল, সেটি কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্য কমে এসেছিল। এবারও সেটি আশা করি কমে যাবে। এই পানি মেঘনা দিয়ে চলে যাবে।’
বন্যা নিয়ন্ত্রণে কী করছে সরকার?
দেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি জানান, ‘প্রতি মনসুনে উজান থেকে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন টন পলি ওপর থেকে নিচে নেমে আসে। এই যে পলি আসছে, এতে আমাদের নদীর নাব্য ঠিক থাকে না। তলদেশ উঁচু হয়ে যায়। এতে পানির ধারণক্ষমতা কমে যায়।
‘ফলে বর্ষায় যখন প্রচুর পানি আসে, তখন সেটি বিভিন্ন দিকে ছুটে বের হয়ে যায়। এর ফলে নদীর পাড় আর ধরে রাখতে পারে না। আমাদের পক্ষে তো পুরো দেশের নদীর পাড় ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরি সম্ভব না। এটা অনেক ব্যয়বহুল। স্থানভেদে প্রতি মিটারের জন্য লাগবে ১০ লাখ টাকা। অনেক টাকার বিষয়। এত ব্যয় সরকারের পক্ষে করা সম্ভব হয় না।’
মাটির বাঁধ তৈরি করা হলেও তা স্থানীয়দের অবহেলায় পানি রোধ করতে পারে না বলেও জানান তিনি। জাহিদ ফারুক বলেন, ‘মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করে ঘাস লাগিয়ে বনায়ন করলে ভাঙনের পরিমাণটা কমে আসে। আমরা গাছ লাগালেও দেখা যায়, এসব এলাকায় যেহেতু গ্যাস নেই, কৃষকরা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা এই গাছ কেটেই তাদের রান্নাবান্না করে। তারপর ইটের ভাটায় কাঠটা এখান থেকে নিয়ে যায়।
‘আমাদের একটি ধারণা আছে যে সব দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে সব সামলে রাখা সম্ভব নয়। এখানে যদি সাধারণ মানুষ সহযোগিতা না করে, তাহলে কিন্তু এটা প্রতিরোধ সম্ভব হবে না।’
নদীর নাব্যতা ফেরাতে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর আওতায় খাল ও নদী খননের কাজ করা হচ্ছে বলে জানান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা ৬৪ জেলায় খাল খনন করছি। প্রথম পর্যায়ে ৬২৮টি ছোট নদী-খাল আমরা খনন করছি ড্রেজিং করে। এর ৭০ শতাংশ কাজ আমরা শেষ করতে পেরেছি।
‘দ্বিতীয় পর্যায়ে ২ হাজার ৩৪টি ছোট নদী-খাল আমরা নিচ্ছি। উজান থেকে ১ হাজার ১২০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি আসে বর্ষা মৌসুমে। আর শুষ্ক মৌসুমে আসে ১৪৭ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। পলি মাটি ড্রেজিং করতে হয়। এটা অনেক ব্যয়বহুল প্রজেক্ট। এটা যদি আমরা মেইনটেইন করে রাখতে পারি, তাহলে পানি ওভারফ্লো হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো বড় যে নদীগুলো আছে, প্রস্থে ১০-১২ বা ১৫ কিলোমিটার, সেগুলোকে আমরা মেইনটেইন করতে পারি না। বেশির ভাগেই এখন চর পড়ে গেছে। আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি বড় নদীগুলোকে সাত-আট কিলোমিটারের মধ্যে নিয়ে আসব ম্যাক্সিমাম। এটাকে আমরা ড্রেজিং করব।
‘এই ড্রেজিং ম্যাটেরিয়ালটা দিয়ে বাকি যে জায়গাটা আছে দুপারে সেটা আমরা জমি রিক্লেইম করব। উঁচু করব। এটা ফসলের জন্য ব্যবহার করব। কিছু জায়গায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন করব। এর মধ্যে কিছু জায়গা থাকবে ফ্ল্যাড প্লেইন হিসেবে।’
আরও পড়ুন:দীর্ঘ ২৭ বছরের স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে বিদায় নিচ্ছে মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। সময় আছে ২৪ ঘণ্টারও কম। মোজিলার ফায়ারফক্স এবং গুগলের ক্রোমের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী বের হওয়ার আগে উইন্ডোজ পিসিতে গো-টু ব্রাউজার হিসেবে ব্যবহার হতো ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার।
যুক্তরাষ্ট্রের সময় বুধবার থেকে যারা অ্যাপ্লিকেশনটি খোলার চেষ্টা করবেন, তারা নতুন ব্রাউজার মাইক্রোসফট এজ-এ প্রবেশ করবেন।
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছিল গত মে মাসে। জানিয়েছিল, ১৫ জুন থেকে উইন্ডোজ ১০-এর নির্দিষ্ট সংস্করণের জন্য ওয়েব ব্রাউজারটি বন্ধ করে দেয়া হবে।
মাইক্রোসফট ২০১৫ সালে এজ চালু করে। সময়ের সঙ্গে এটি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের চাহিদাকে ছাড়িয়ে যায়।
মাইক্রোসফট বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের তুলনায় মাইক্রোসফট এজ-এর গতি বেশি ও নিরাপদ। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের তুলনায় এটি অনেক বেশি আধুনিক। ফলে অনেক উদ্বেগের সমাধান মিলবে এটির ব্যবহারে।
It's the end of an era...
— Simulator Radio (@Simulator_Radio) June 13, 2022
After 27 years of support, Microsoft is set to retire Internet Explorer for GOOD on June 15.
It's time to tell your nan to stop using it now, like seriously. pic.twitter.com/hmtVLe3n49
এই পদক্ষেপে মঙ্গলবার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মজুড়ে আবেগঘন স্ট্যাটাসে ভরে যায়।
টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘একটি আমলের শেষ। শৈশব থেকে আমাদের প্রিয় বন্ধু... ইন্টারনেটে আমাদের প্রথম উইন্ডোর প্রেমময় স্মৃতি… ১৯৯৫-২০২২।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘এখন আপনার ন্যানকে (দাদি-নানি) এটি ব্যবহার বন্ধ করতে বলার সময় এসেছে।’
মাইক্রোসফট ২০২০ সালে জানিয়েছিল, ৩৬৫ অ্যাপস এবং পরিষেবাগুলো ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার থেকে বাদ দিতে যাচ্ছে তারা। এটি কার্যকর হয় ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট।
জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটেস্টিকা ডটকমের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে মাইক্রোসফটের এজ ব্রাউজারে ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার ছিল।
মন্তব্য