করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পরপর দুই বছর সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ হচ্ছে সৌদি আরবে। কেবল দেশটিতে বসবাসরতদেরই দেয়া হচ্ছে হজের অনুমতি।
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ সুবিধার অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার জন্য এ বছর হজ কোটা রাখা হয়েছে বলে একটি সংবাদ প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট সম্প্রতি ভাইরাল হয় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ খবর সত্যি নয়। মালয়েশিয়া বা কোনো দেশই এ বছর হজ কোটার সুবিধা পাচ্ছে না।
মালয়েশিয়ার জন্য চলতি বছর হজ কোটা রাখার খবরটি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর টুইটারে ছড়ায় মূলত ইন্দোনেশীয় ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে।
এতে বলা হয়, মহামারির কারণ দেখিয়ে চলতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়াসহ অন্য দেশের মানুষকে হজ করার সুযোগ না দিলেও মালয়েশিয়াকে তা দিচ্ছে রিয়াদ।
ফেসবুকে ভাইরাল স্ক্রিনশটটি ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা অন্তরার একটি প্রতিবেদন থেকে নেয়া। ৪ জুন স্ক্রিনশটটি প্রথম প্রকাশ হয়। যদিও এতে থাকা খবরটি প্রকাশের তারিখ চলতি বছরের ১১ মার্চ।
প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে ইন্দোনেশীয় ভাষায়। এর শিরোনামের বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘হজে মালয়েশিয়ার জন্য ১০ হাজার কোটা দিচ্ছে সৌদি আরব।’
ভেতরে লেখা হয়েছে, ‘এটা কীভাবে সম্ভব? কেন মালয়েশিয়ার ১০ হাজার মানুষকে হজের জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার অনুমতি দিতে কোটা রাখা হয়েছে, যেখানে মালয়েশিয়াতেই করোনাভাইরাস মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।’
ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত খলিল কুমাসের কাছে এর জবাবদিহিতা চাওয়া হয় ফেসবুক পোস্টটিতে।
একই স্ক্রিনশট ফেসবুকে আরও কয়েকটি, টুইটারে একাধিক আর ইনস্টাগ্রামেও পোস্ট করেছেন অনেকে, যেগুলো শেয়ার হয়েছে অসংখ্যবার।
গুগল সার্চ করে দেখা যায়, স্ক্রিনশটের সংবাদটি অন্তরায় গত ১০ ও ১১ মার্চ প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে রয়েছে।
এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ ছড়ালে মুখ খোলেন খোদ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহিদিন ইয়াসিন।
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১০ মার্চ একটি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মহিদিন।
সেখানে বলা হয়, রিয়াদ সফরে মালয়েশিয়ার জন্য অতিরিক্ত হজ কোটা নিয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন তিনি।
মহিদিন বলেন, ‘হজে মালয়েশিয়ার জন্য সৌদি সরকার ১০ হাজার কোটা দিলেও সেটি কার্যকর হবে কেবল করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার পর।’
মহামারি পরিস্থিতিতে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বেশি মানুষ হজের অনুমতি পেলেও সে সংখ্যা মাত্র ৬০ হাজারে সীমিত রেখেছে সৌদি সরকার। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০ হাজার।
মুসলিমদের সর্ববৃহৎ এই বার্ষিক মিলনমেলায় স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন দেশের ২০ লাখের বেশি মুসল্লি অংশ নিলেও মহামারির কারণে ঘটছে ব্যতিক্রম।
কেবল সৌদি আরবে বসবাসরতরাই ২০২০ ও ২০২১ সালের হজে অংশ নেয়ার অনুমতি পেয়েছেন।
এর মধ্যে এ বছর হজের চূড়ান্ত অনুমোদন মিলবে দুই ডোজ টিকা গ্রহণের শর্তে।
ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক, আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম মুসলিমদের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ বাধ্যতামূলক।
চলতি বছর ১৭ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত হবে হজ।
গত ৩ জুন ইন্দোনেশিয়ার সরকার জানায়, ২০২০ সালের পর এ বছরও মহামারির কারণে দেশটি থেকে কেউ হজে যেতে পারবে না।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া আর মালয়েশিয়ায় করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।
মহামারির দেড় বছরে ইন্দোনেশিয়ায় ২০ লাখের বেশি এবং মালয়েশিয়ায় প্রায় সোয়া ৭ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:#إنفوجرافيك | 📊
— وزارة الحج والعمرة (@HajMinistry) June 12, 2021
بيان #وزارة_الحج_والعمرة بشأن آليات وضوابط #حج_1442هـ
باللغة ( الإنجليزية ) pic.twitter.com/6w2pIypWAh
ষাট বছরেরও বেশি সময় আগে বন্ধ হওয়া একটি কুখ্যাত কারাগার নতুন করে চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোর দুর্গম দ্বীপ আলকাট্রাজে ১৯৩৪ সালে এই কারাগারটি স্থাপন করা হয়েছিল। পরে ১৯৬৩ সালে সেটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এবার কারাগারটি কেবল চালু করাই না, এটিকে আরও বড় করে পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রবিবার (৪ মে) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এক সময় আমেরিকার জনগণকে রক্ষায় দেশটির বিপজ্জনক অপরাধীদের আলকাট্রাজ কারাগারে আটকে রাখা হতো। সেই কারাগারটিই আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকা হিংস্র ও সহিংস অপরাধীদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এমনকি কিছু কিছু অপরাধী বারবারই সহিংস কার্যকলাপ করে দেশটির ক্ষতি করে আসছেন। আমি বিচার বিভাগ, ফেডারেল ব্যুরো অব আমেরিকা (এফবিআই) ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে কারাগার ব্যুরোকে একীভূত করে আলকাট্রাজ কারাগারটি ফের চালু ও সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছি। সেখানে আমেরিকার সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও সহিংস অপরাধীদের রাখা হবে।’
এ বিষয়ে ফ্লোরিডা থেকে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারাগারটির একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এটি আইন ও শৃঙ্খলার প্রতীক।’
প্রসঙ্গত, সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরে অবস্থিত আলকাট্রাজ কারাগারটি ৬৩ বছর ধরে বন্ধ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ প্রিজনসের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ভঙ্গুর অবকাঠামো ও উচ্চব্যয়ের কারণে ১৯৬৩ সালে কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্বীপে অবস্থিত হওয়ার কারণে এটি পরিচালনার খরচ ছিল অন্য যেকোনও ফেডারেল কারাগারের তুলনায় প্রায় তিনগুণ।
এছাড়া দ্বীপের অবস্থান, তীব্র স্রোত এবং বরফ শীতল পানির কারণে আলকাট্রাজকে আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ কারাগার হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে এ কারাগার থেকে কোনো বন্দির পালানোর রেকর্ডও নেই। এফবিআইয়ের তথ্যমতে, কারাগারটি চালু থাকাকালীন ৩৬ জন আসামি অন্তত ১৪ বার পালানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। সবাই কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়েছেন। এটি বর্তমানে সান ফ্রান্সিসকোর অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।
এদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেছেন সাবেক হাউস স্পিকার ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা ন্যান্সি পেলোসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে তিনি বলেন, ‘ষাট বছরেরও বেশি সময় আগে আলকাট্রাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটি এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় জাতীয় উদ্যান এবং প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। ট্রাম্পের প্রস্তাবটি যথোচিত নয়।’
শুরুতে আলকাট্রাজ একটি নৌ প্রতিরক্ষা দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ২০ শতকের প্রথম দিকে এটিকে একটি সামরিক কারাগারে রূপান্তর করা হয়। ১৯৩০-এর দশকে বিচার বিভাগের অধীনে নেওয়া হয় এই কারাগারটি। এরপর থেকে ফেডারেল বন্দিদের এ কারাগারে পাঠানো শুরু করা হয়।
এখানে রাখা কয়েদিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কুখ্যাত গ্যাংস্টার আল কাপোন, মিকি কোহেন এবং জর্জ মেশিন গান কেলি।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ১৯৬২ সালে বার্ট ল্যাঙ্কাস্টার অভিনিত ‘বার্ডম্যান অফ আলকাট্রাজ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমেও বিখ্যাত হয়েছিল কারাগারটি। এছাড়াও ১৯৯৬ সালের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘দ্যা রকে’র শুটিংও হয় এই দ্বীপে। ওই মুভিতে বিখ্যাত অভিনেতা শন কনারি ও নিকোলাস কেজ অভিনয় করেন।
সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে আবারও জয় পেয়েছে পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি)। এর মধ্য দিয়ে টানা ৬৬ বছরের মতো দেশটির ক্ষমতায় টিকে থাকল দলটি। এই জয়কে প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াংয়ের একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
শনিবার (৩ মে) অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, দেশটির পার্লামেন্টের ৯৭টি আসনের মধ্যে ৮৭টি পেয়েছে পিএপি। এছাড়া ৩৩টি নির্বাচনি এলাকার বেশিরভাগেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে দলটি।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে পিএপি। এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তারা। ফলাফল ঘোষণার পরপরই পতাকা নেড়ে ও আনন্দ করে বিজয় উদযাপন করেন পিএপির সমর্থকরা।
১৯৫৯ সাল থেকে সিঙ্গাপুরের শাসনক্ষমতায় রয়েছে এই দলটি।
নির্বাচনে জয় পেয়ে সিঙ্গাপুরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াং। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন অর্থনীতিবিদ।
দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে একের পর এক শুল্কারোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার ওই তালিকা থেকে বাদ যায়নি সিঙ্গাপুরও। এ কারণে নির্বাচনি প্রচারের সময় এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাণিজ্যনির্ভর দেশটি পরিচালনার জন্য জনগণের সমর্থন চেয়েছিলেন লরেন্স।
এবার নির্বাচন জিতে তিনি বলেন, ‘এই ফলাফল সিঙ্গাপুরকে বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে আরও ভালো অবস্থানে রাখবে।’
সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন অধ্যাপক ইউজিন তান বলেন, ২০২০ সালের পর বিরোধীদের কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়াটা বিস্ময়কর। তবে দীর্ঘদিন ধরে যারা সেবা দিয়ে আসছে, জনগণ তাদের প্রতিই আস্থা রেখেছেন বলেন মন্তব্য করেন তিনি।
গত বছর সিঙ্গাপুরের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন লরেন্স ওয়াং। এর আগে দুই দশক ধরে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ছিলে লি হসিং লুং। তিনি আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইয়েওয়ের ছেলে। লিয়ের পদত্যাগের মাধ্যমে লি কুয়ান ইউয়ের শুরু করা পারিবারিক রাজনীতির অবসান ঘটে।
গতকালের ফলাফল অনুযায়ী, নির্বাচনে মূল বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি ১০টি আসনে জয় পেয়েছে। গত নির্বাচনেও তারা ১০টি আসন পেয়েছিল। সিঙ্গাপুরে কোনো বিরোধী দলের এটি সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার ঘটনা।
বিশ্লেষকদের ধারণা, কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণ, জীবিকার উচ্চ ব্যয়, আয় বৈষম্য, নাগালের বাইরে চলে যাওয়া আবাসন ব্যবস্থা ও মত প্রকাশের সীমাবদ্ধতা—এসব বিষয় বিশেষত তরুণদের মধ্যে পিএপির জনপ্রিয়তায় প্রভাব ফেলেছে।
বিরোধীদলগুলো জানিয়েছে, পার্লামেন্টে তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি একটি আরও ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। তবে অনেক সময় সম্পদের অভাব, বিভক্ত সমর্থন ও দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের ঘাটতির কারণে তাদের পিছিয়ে থাকতে হয় বলে মন্তব্য করেন তারা। তাছাড়া, নির্বাচনি এলাকার সীমার পুনর্বিন্যাস পিএপিকে বাড়তি সুবিধা দেয় বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।
ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা প্রীতম সিং জানান, তারা আরও ভারসাম্যপূর্ণ পার্লামেন্টের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখবেন। তিনি বলেন, ‘ফলাফল যা হয়েছে তা ভুলে আমরা আগামীকাল থেকেই আবার কাজ শুরু করব।’
ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের সংসদীয় উপস্থিতি বাড়াতে না পারলেও কিছু এলাকায় শেয়ার ভোট বাড়িয়ে নিজেদের সমর্থন আরও সুসংহত করেছে বলে করেন মন্তব্য করেন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাজনীতি বিশ্লেষক ব্রিজেট ওয়েলশ। তবে অন্য ছোট বিরোধী দলগুলো উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি বলে মনে করেন তিনি।
ওয়েলশের মতে, ‘বৈশ্বিক অস্থিরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুরের ভোটাররা স্থিতিশীলতাকে বেছে নিয়েছেন। তরুণদের সঙ্গে ওয়াংয়ের সহজ-সরল বোঝাপড়া এবং পিএপিতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নতুন মুখ নিয়ে আসাও ভোটে প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এই ফলাফলকে বলি, লরেন্স ও ট্রাম্পের প্রভাব। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ লরেন্সের ম্যান্ডেটকে আরও শক্তিশালী করেছে।’
এদিকে, সিঙ্গাপুর ও লরেন্স ওয়াংকে এই বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর প্রায় ৬০ বছর ধরে একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত অংশীদারত্বের সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
নবনির্বাচিত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ওয়াংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় গুরু পোপ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের কয়েকদিন পর, পোপের পোশাক পরিহিত একটি ছবি শেয়ার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি ছবিটি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
গতকাল শনিবার মাকিন সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইরাল হওয়া ছবিটি পরে হোয়াইট হাউসের এক্স অ্যাকাউন্টেও শেয়ার করা হয়েছে।
পোপের বেশে প্রকাশ করা ছবিটিতে দেখা যায়, পোপের পোশাকে গম্ভীর মুখে চেয়ারে বসে আছেন ট্রাম্প। উঁচিয়ে আছেন ডান হাতের তর্জনী।
ট্রাম্পের এই ছবিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চটেছেন অনেকে। অনেকে ট্রাম্পকে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু নিয়ে উপহাস করার অভিযোগ করেছেন।
গত ২১ এপ্রিল ৮৮ বছর বয়সে মারা যান পোপ ফ্রান্সিস। এরপর গত ২৬ এপ্রিল সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর তাকে রোমের ব্যাসিলিকা ডি সান্তা মারিয়া ম্যাগিওরে সমাহিত করা হয়। পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
ভ্যাটিকানে কার্ডিনালরা সমবেত হয়ে নির্ধারণ কররেন ক্যাথলিক চার্চের ২৬৭তম ধর্মগুরু। এক প্রতিবেদন মতে, ২৯ এপ্রিল ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, পরবর্তী পোপ হিসেবে তিনি কাকে দেখতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্পের মজার উত্তর, আমি নিজেই পরবর্তী পোপ হতে চাই। এটা এখন আমার এক নম্বর পছন্দ।
রসিকতা করার পরপরই অবশ্য কে আসলে এই দায়িত্ব পেতে পারেন, সে বিষয়ে নিজের মতামত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি কে হওয়া উচিত, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার কোনো পছন্দ নেই। তবে আমাকে বলতেই হচ্ছে, আমাদের একজন কার্ডিনাল আছেন যিনি নিউইয়র্কের একটি এলাকা থেকে এসেছেন। তিনি খুবই ভালো। দেখা যাক কী হয়।’
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। সম্প্রতি পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে টানাপড়েন আরও বেড়েছে। দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নানা বিধিনিষেধের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে, চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ভয়ংকর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান।
ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য এই ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ ৪৫০ কিলোমিটার। পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) বরাতে এ কথা জানা গেছে। জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, এই এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ছিল সেনাদের অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম এবং উন্নত ম্যানুভারেবিলিটি বৈশিষ্ট্যসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যাচাই করা।
আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, উৎক্ষেপণটি সেনাবাহিনীর কৌশলগত বাহিনী কমান্ডের কমান্ডার, কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পাকিস্তানের কৌশলগত সংস্থাগুলোর বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা প্রত্যক্ষ করেছেন।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনা, বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সম্প্রতি অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুটি দেশই সীমিত পরিসরে সামরিক হামলার আভাস দিচ্ছে। এতে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাবস্থার মধ্যে এশিয়ায়ও একই পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে কোনোমতেই আরেকটি যুদ্ধ চাইছে না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ভারতীয় পর্যটক ছিলেন। এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করেছে চিরবৈরী ভারত। যদিও হামলার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
এ হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব কন্ট্রোল) বরাবর সপ্তম দিনের মতো দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিবেশী এই দুটি দেশই সীমিত পরিসরে হামলার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে উভয় পক্ষ। তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলের রান্তিসি হাসপাতালে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় সালেহ আল-সাকাফি নামে এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত কারণে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, ইসরায়েলের হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আল জাজিরার তথ্যানুসারে, ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে। এর ফলে উপত্যকাটিতে কোনো খাদ্য, পানি বা চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশ করতে পারেনি। আর তারই জেরে এখানকার নারী ও শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি চরম আকার ধারণ করেছে।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ আগেই সতর্ক করে বলেছিল, গাজায় ৫ বছরের কম বয়সি ৩,৩৫,০০০ শিশু তীব্র অপুষ্টির কারণে মৃত্যুর চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দখলদার ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ২৭৫ জন আহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে এ সময়ে আগের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে বিকেলে গাজা শহরের দারাজ এলাকায় ড্রোন হামলায় ২ জন এবং খান ইউনিস শহরের দক্ষিণে আরেকটি হামলায় ১ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৩৯৬ জনে, আহত ৬,৩২৫ জন।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫২,৪৯৫ জন নিহত এবং ১,১৮,৩৬৬ জন আহত হয়েছেন।
গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া জাহাজে বোমা হামলা : মানবিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া একটি জাহাজে ড্রোন দিয়ে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। শুক্রবার ভোরে মাল্টা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ হামলায় জাহাজটি বিকল হয়ে গেছে বলে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
আয়োজক সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে হামলার জন্য দায়ী করেছে। এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি।
মাল্টার সরকার জানিয়েছে, জাহাজ এবং ক্রুদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘটনার সময় তুর্কি নাগরিকরা জাহাজে ছিলেন এবং তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে তারা মাল্টার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছেন।
‘আমরা এই বেসামরিক জাহাজে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই,’ বলা হয়েছে বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, ‘যত দ্রুত সম্ভব হামলার বিস্তারিত তথ্য উদ্ঘাটন এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় সব প্রচেষ্টা চালানো হবে।’
সুইডিশ অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থানবার্গ রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি মাল্টায় ছিলেন এবং ইসরায়েলের অবরোধ ও বোমা হামলার শিকার গাজার সমর্থনে ফ্রিডম ফ্লোটিলার পরিকল্পিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তার জাহাজটিতে ওঠার কথা ছিল।
এনজিওটি অন্ধকারে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের একটি জাহাজ, কনসায়েন্সে আগুন দেখা যাচ্ছে। ফুটেজে জাহাজের সামনে আকাশে আলো এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন; যার মধ্যে গাজার চলমান অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের বেসামরিক জাহাজে বোমা হামলার বিষয়ে জবাবদিহি করতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতদের তলব করা উচিত।’
জাহাজে ১২ জন নাবিক ও চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন জানিয়ে মাল্টা সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা সবাই সুস্থ আছেন। জাহাজটিকে সহায়তা করতে কাছাকাছি থাকা একটি টাগ বোটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও মাল্টা সরকারের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এনজিওর মুখপাত্র কাওইমে বাটারলি বলেছেন, যখন জাহাজটি অন্য একটি জাহাজ থেকে কর্মীদের তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন হামলা হয়। তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিক কারণে জাহাজটি বন্দরে যাওয়ার পরিবর্তে সমুদ্রেই স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। থানবার্গ বলেছেন, ‘হামলায় জাহাজে একটি বিস্ফোরণ ও বড় ধরনের ক্ষতি করেছে, যার ফলে মিশন চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নানা বিধিনিষেধ ঘোষণার পরও কাশ্মীরের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি হয়তো এর চেয়ে খারাপ হবে না। কিন্তু গত সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলি বিনিময়ের কারণে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষরা। এদিকে যুদ্ধের আশঙ্কায় বাঙ্কার তৈরির কাজ শুরু করেছেন আজাদ কাশ্মীরের কিছু বাসিন্দা।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট এবং পাকিস্তান শাসিত লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গত সপ্তাহে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এহসান-উল-হক শামি পাকিস্তান শাসিত লিপা উপত্যকার বাসিন্দা। ওই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই আইন মেনে চলেন। নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাড়ি শামির। ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময়ে ২০১৯ সালে তার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি জানিয়েছেন, একইভাবে ২০০২ ও ১৯৯৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তার বাড়ি।
পেশায় আইনজীবী এহসান-উল-হক শামি বলেন, পেহেলগামের ঘটনার পর গত শুক্রবার ও শনিবার পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যবর্তী রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলে। এরপর শনিবার রাতে ফের গোলাগুলি শুরু হয়। ওই দিন রাত ১০টায় গোলাগুলি শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চললেও সাধারণ মানুষকে কিন্তু নিশানা হতে হয়নি।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত। গত শুক্রবার কুপওয়ারার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটা নির্দেশ জারি করে জানিয়েছিলেন, কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে যেতে হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে।
আতঙ্কে সাধারণ মানুষ : কুপওয়ারায় এখন পর্যন্ত সীমান্তে গুলি বিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছাকাছি যারা বাস করেন, তাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কুপওয়ারার কারনাহ সেক্টরের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার তৈরির কাজ শুরু করেছেন বা সেগুলো পুনর্নির্মাণ করছেন। পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির নিচে বাঙ্কার তৈরির কাজ যারা শুরু করেছেন, তাদেরই একজন পীরজাদা সৈয়দ।
তিনি বলেন, সীমান্তে গোলাগুলির পরিণতি আমরা এরই মধ্যে দেখেছি। জীবনহানি হয়েছে, অতীতে কৃষিকাজের অভাবের কারণে মানুষও অনাহারে মারা গেছে। আল্লাহ করুন যেন কিছু না হয়, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। সে কারণেই আমরা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বানাচ্ছি যাতে কিছু হলে আমরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারি।
কুপওয়ারার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সামরিক তৎপরতা এবং রাতের আকাশে জেট বোমারু বিমানের আওয়াজ তাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণ রেখার জিরো লাইনে অবস্থিত টোড গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, ২০১৭ সালে যখন গোলাবর্ষণ হচ্ছিল, তখন আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে একটা শেল এসে পড়েছিল এবং তার মৃত্যু হয়।
কিন্তু ২০২১ সালে যখন ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কঠোরভাবে অস্ত্রবিরতি মেনে চলতে রাজি হয়। তারপর গত চার বছর জীবন শান্তিপূর্ণ ছিল। এখানে কৃষিকাজ হয়েছে, বাচ্চারা স্কুলে গিয়েছে, ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু এখন আশঙ্কা হচ্ছে, আগের মতো পরিস্থিতি হয়ত ফিরে আসতে পারে।’
পীরজাদা সৈয়দ বলেন, দুদিন আগে নামবরদার এসে এখানকার বাসিন্দাদের বাঙ্কার পরিষ্কার করতে এবং তার চারপাশের আগাছা বা কাঠের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে বলেছিলেন। এই ঘোষণার কারণে সবাই হতবাক হয়েছে। কিন্তু বাঁচতে হবে তাই সকলে বাঙ্কার পরিষ্কার করতে বা সেগুলো পুনর্নির্মাণ করতে শুরু করে দিয়েছে।
‘সারারাত ঘুমাতে পারিনি’
এহসান-উল-হক শামি জানান, তার এলাকায় প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে। বাড়ির কাজে এই বাঙ্কার ব্যবহার করা হয়। বাঙ্কারগুলো এমনিতে মজবুত কিন্তু সব ধরনের বিপদ এড়াতে সক্ষম নয়। তিনি বলেন, বাঙ্কারগুলো বেশ মজবুত। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এটি বুলেট বা গোলা থেকে রক্ষা করতে পারলেও ভারী অস্ত্রের শেল সরাসরি বাঙ্কারে পড়লে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
‘আমরা যে বাড়িতে থাকি সেটি ২০০২ এবং ১৯৯৯ সালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমরা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আছি। এই কারণে আশঙ্কা থেকে যায় যে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারি। অবশ্য এমনিতেই গুলি চললে কারও পক্ষে ঘুমানো সম্ভব নয়।’
শামির মতো ওই অঞ্চলের অন্য বাসিন্দারাও বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। তার কথায়, প্রায় পুরো এলাকার মানুষই গোটা রাত জেগে ছিল। তারা একে অপরের মঙ্গল কামনা করেছে। তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে যে এখন পর্যন্ত এই গোলাগুলিতে বেসামরিক জনগণের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
‘বাঙ্কারগুলো অবস্থান করার মতো যোগ্য নয়’ : উরি সেক্টরেও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই সেক্টরের ভাটগ্রান ও চরন্দা এলাকায় ১৬টি বাঙ্কার নির্মাণ করা হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানির ব্যবস্থা নেই। ভাটগ্রানের বাসিন্দা মোহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, কেউ কেউ নিজের খরচে বাঙ্কার তৈরি করেছেন, কিন্তু দরিদ্র মানুষরা যাবে কোথায়। এখন আমরা এই একই বাঙ্কারগুলোই পরিষ্কার করব।
‘আল্লাহ দয়া করুন, যাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্ত কিছু ঠিক থাকে আর গুলিবিনিময় বন্ধ হওয়ার পর জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়,’ বলেন কুদ্দুস।
অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এ পরিস্থিতিকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমদ।
শুক্রবার (২ মে) নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
আসিম ইফতিখার জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব, সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সাম্প্রতিক আঞ্চলিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছে পাকিস্তান। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও দেশটি তাদের উদ্বেগ ও কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেছে।
উত্তেজনা এড়াতে পাকিস্তানের সদিচ্ছার কথা উল্লেখ তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।’
পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের সমালোচনা করে আসিম বলেন, ‘নিরাপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
এ সময় পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ, সহযোগিতামূলক ও সুসম্পর্কপূর্ণ প্রতিবেশী নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
আসিম বলেন, ‘পারস্পরিক সম্মান ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে যেকোনো বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চায় পাকিস্তান। এমনকি ভারতের সঙ্গেও একই নীতি অনুসরণ করতে চায় দেশটি।’
তিনি বলেন, ‘২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করছে।’
চলমান পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে উত্তেজনা নিরসন প্রয়োজন বলে মনে করেন আসিম। এ লক্ষ্যে একতরফা যেকোনো পদক্ষেপ ও উস্কানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিব ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে আলোচনা ও উত্তেজনা কমানের পক্ষে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান আসিম। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেকেনো সংঘাত এড়াতে এ ধরনের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন পাকিস্তানের এই রাষ্ট্রদূত।
মন্তব্য