টোকিও অলিম্পিক বাতিল নিয়ে আলোচনা করা হবে জাপানি সংবাদমাধ্যমের এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছে আয়োজক কমিটি। দেশটির সংবাদমাধ্যম কিয়াদো নিউজের একটি জরিপের তথ্য দিয়ে কমিটি জানিয়েছে টোকিও অলিম্পিক বাতিল করা নিয়ে তারা কোনো চিন্তাই করছে না।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক পিছিয়ে দেয়া হয় এক বছর। ২০২১ সালে ২৩ জুলাই শুরু হয়ে ৮ আগস্ট শেষ হবে ‘বিগেস্ট শো অন আর্থ’।
খেলাধুলার সর্ববৃহৎ আয়োজনটি নিয়ে সম্প্রতি জাপানের একটি সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বাতিল করা হতে পারে এটি।
টোকিও অলিম্পিকের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) ও টোকিও ২০২০ আয়োজকেরা আলোচনায় বসবেন।
বিশ্বের কয়েকটি দেশে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্ত এবং জাপানে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী টোকিওতে জরুরি অবস্থা জারির পরপরই এই সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
জাপানের সংবাদমাধ্যমটির এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছে টোকিও ২০২০ আয়োজক কমিটি। দেশটির সংবাদমাধ্যম কিয়াদো নিউজের একটি জরিপের তথ্য দিয়ে কমিটি জানিয়েছে টোকিও অলিম্পিক বাতিল করা নিয়ে তারা কোনো চিন্তাই করছে না। বেশিরভাগ মানুষ এখনও এটি আয়োজনের পক্ষে।
ফ্যাক্ট চেক
করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই টোকিও অলিম্পিক নিয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রায়শ নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এএফপি জানিয়েছে, খোদ জাপান সংবাদমাধ্যমও নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের পর টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির সিইও তোশিরো মুতো এটি ‘ভূয়া সংবাদ’ বলে জানান।
কিয়াদো নিউজের জরিপের তথ্যের বরাত দিয়ে তোশিরো জানান, টোকিও অলিম্পিক পিছিয়ে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন ৪৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। অপরদিকে এটি বাতিলের পক্ষে রয়েছেন ৩৫ শতাংশ।
মুতো বলেন, ‘এটি বাতিল করার পক্ষে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ শতাংশ। আর পিছিয়ে দেয়ার পক্ষে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। এর অর্থ তারা এখনও চান, এটি হোক।’
অলিম্পিকের নিরাপত্তা নিয়ে মুতো বলেন, ‘অবশ্যই অ্যান্টি-ভাইরাস ব্যবস্থা নিয়ে নিরাপদ গেমস আয়োজন করার নিশ্চয়তা আমাদের দিতে হবে। এটি দিতে পারলে, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আরও অনেক মানুষ আমাদের সমর্থন দেবেন।’
জাপানি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা সংবাদ’ হিসাবে বাতিল করে দিয়ে মুতো বলেন, ‘যখন এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তখন কিছু মানুষ উদ্বিগ্ন হন। আমি বলতে চাই, আমরা মোটেও এ ধরনের কিছু ভাবছি না এবং এই প্রতিবেদনগুলো ভুল।’
গত বছরের ডিসেম্বরে আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনার টিকা জীবন্ত কোনো ভাইরাস নয়। তাই টিকা নেয়ার জন্য গর্ভধারণের চেষ্টা পিছিয়ে দেয়ার কোনো কারণ নেই। একই সঙ্গে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার আগ পর্যন্ত চিকিৎসা স্থগিত রাখারও দরকার নেই।
করোনাভাইরাসের অনুমোদিত টিকা নিলে বন্ধ্যত্ব হয় বলে একটি গুজব রটেছিল। তবে টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেয়া কারও মধ্যে এমনটি হয়নি বলে জানিয়েছে ফ্যাক্টচেক ডটঅর্গ নামের একটি গণমাধ্যম।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকার ট্রায়ালে অংশ নেয়া হাজার হাজার মানুষের কারও প্রজননক্ষমতা নষ্ট হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া লাখ লাখ মানুষ করোনার টিকা নিচ্ছে। তাদের কারও বন্ধ্যত্ব হয়েছে, এমন তথ্যও পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে একটি প্রশ্ন যুক্ত করে তার উত্তর দেয়া হয়। সে প্রশ্নটি ছিল, ‘২০ বছর বয়সী নার্স ও শিক্ষিকারা করোনার টিকা নিচ্ছেন না। তাদের বক্তব্য, করোনার টিকা নিলে বন্ধ্যত্ব হয়। এটা কি সত্য?’
উত্তরে বলা হয়, ৫ ফেব্রুয়ারি আমেরিকান কলেজ অব অবসটেট্রিশানস অ্যান্ড গাইনোকলোজিস্টস, আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিন এবং সোসাইটি ফর ম্যাটারনাল-ফেটাল মেডিসিন যৌথ বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, অনুমোদিত করোনার টিকায় গর্ভধারণের ক্ষমতা নষ্ট হয়, তার কোনো প্রমাণ মেলেনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজন গর্ভধারণ করেছেন। প্রাণীদের ওপর মডার্নার টিকা প্রয়োগ করার পর প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যায়, ওই টিকা নেয়ার পর প্রজনন বা ভ্রূণের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।
করোনার টিকা প্রজননক্ষমতায় প্রভাব ফেলে কি না, তা জানতে বেশ কিছু সময় লাগে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য অনুযায়ী, লাখ লাখ টিকাগ্রহীতার মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রজননক্ষমতা নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
বিবৃতিতে প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ‘প্রজননক্ষমতা হারানো বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব।’
করোনার টিকা নিলে বন্ধ্যত্ব এমনকি নারীদের মধ্যে নির্বীজনও হতে পারে বলে ভিত্তিহীন দাবি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের উদ্বেগ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ওই তিন সংস্থা বিবৃতিটি দিয়েছিল।
গত বছরের ডিসেম্বরে আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনার টিকা জীবন্ত কোনো ভাইরাস নয়। তাই টিকা নেয়ার জন্য গর্ভধারণের চেষ্টা পিছিয়ে দেয়ার কোনো কারণ নেই। একই সঙ্গে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার আগ পর্যন্ত চিকিৎসা স্থগিত রাখারও দরকার নেই।
বাংলাদেশে কোন কোন দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে, সেটি আইন দ্বারা নির্দিষ্ট। ফাইল ছবি
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঈদে মিলাদুন্নবীতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত প্রথম আসে ১৯৭৬ সালের ১০ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রায় সাত মাস পর। একই সঙ্গে ওই সংশোধনীতে জাতির পিতার জন্মদিন ১৭ মার্চ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধান বাতিল করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী ৭ মার্চের ভাষণের দিনটি স্মরণে প্রতিবছর ওই দিনে সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশি কূটনৈতিক মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আর সে জন্য ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২’-এ ৭ মার্চ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধান যুক্ত করে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। চার দিন পর, ১৫ ফেব্রুয়ারি তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়।
তবে এই গেজেটের একটি অংশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে জোর বিতর্ক। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মদিন অর্থাৎ ঈদে মিলাদুন্নবীতেও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সরকারি নির্দেশনার বিষয়টি সামনে এনে এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন নেটিজেনরা।
এমনকি কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম ৭ মার্চ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্তের খবরের চেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবীতে পতাকা তোলার বিষয়টিতে। ‘ঈদে মিলাদুন্নবীতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের প্রজ্ঞাপন’ এমন শিরোনামও এসেছে সংবাদমাধ্যমে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তর আলোচনা এবং কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে পরিষ্কার, ঈদে মিলাদুন্নবীতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সরকারি সিদ্ধান্ত এবারই ‘প্রথম’। তবে বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে নিউজবাংলা।
সরকারি নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, ঈদে মিলাদুন্নবীতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত প্রথম আসে ১৯৭৬ সালের ১০ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রায় সাত মাস পর। একই সঙ্গে ওই সংশোধনীতে জাতির পিতার জন্মদিন ১৭ মার্চ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধান বাতিল করা হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় পতাকা-সংক্রান্ত বিধিমালা জারি করা হয়। ‘দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ রুলস, ১৯৭২’ বা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২’ শিরোনামের এই বিধিমালায় জাতীয় পতাকার রং, আকার এবং উত্তোলনের নিয়ম সুনির্দিষ্ট করা ছাড়াও সরকারিভাবে পতাকা উত্তোলনের কয়েকটি দিন নির্ধারণ করা হয়।
ওই বিধিমালার ৪-এর ১ উপবিধিতে বলা হয়, নিম্নোক্ত দিনগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশি মিশন ও কনস্যুলারে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে:
ক) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ, খ) স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ, গ) বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, ঘ) সরকার ঘোষিত অন্য যেকোনো দিবস।
বিধিমালার ৪-এর ২ উপবিধিতে দুটি দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত অবস্থায় উত্তোলনের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো: ক) শহিদ দিবস ও খ) জাতীয় শোক দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে এই বিধিমালায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে এর পরেই বিধিমালায় প্রথম সংশোধনী আসে ১৯৭৬ সালের ১০ মার্চ। এখন পর্যন্ত মোট ছয়বার সংশোধন হয়েছে জাতীয় পতাকা বিধিমালা, তবে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২’ শিরোনামটি অপরিবর্তিত রয়েছে।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতার পালাবদলে ওই বছরের ৬ নভেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখনকার প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। সে সময় অবশ্য পেছন থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান।
১৯৭৬ সালের ১০ মার্চ তার সময়েই জাতীয় পতাকা বিধিমালায় প্রথম সংশোধনী এনে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মদিন ঈদে মিলাদুন্নবীতে সরকারি, বেসরকারি ভবন এবং দেশের বাইরে কূটনৈতিক মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হয়।
বিধিমালা সংশোধন করে বিধানটি যুক্ত করার পর প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই দিনই প্রকাশ করা হয় প্রজ্ঞাপনের গেজেট। রাষ্ট্রপতির আদেশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব এ কে এম মহসিন গেজেটে সই করেন।
এই সংশোধনীতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ পতাকা উত্তোলনের বিধানটি বিলোপ করা হয়। এটি পরে আর কোনো সংশোধনীতেই ফিরিয়ে আনা হয়নি।
প্রথম সংশোধনীর প্রায় ১৬ বছর পর জাতীয় পতাকা বিধিমালায় দ্বিতীয়বার পরিবর্তন আনা হয় ১৯৮৯ সালে। স্বৈরশাসক হিসেবে তখন ক্ষমতায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
১৯৮৯ সালের ১৩ জুন আনা পরিবর্তন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিধি ৩-এর উপবিধি ২-এর নিচে ‘ডিপেন্ডিং অন দ্য সাইজ অব দ্য বিল্ডিং’-এর জায়গায় ‘ডিপেন্ডিং অন দ্য সাইজ অফ দ্য বিল্ডিং অ্যান্ড ইন কেস অফ নেসেসিটি, অ্যা ফ্ল্যাগ অফ বিগার সাইজ মেইন্টেনিং দ্য প্রপোরশন অফ লেংথ অ্যান্ড উইথড মে বি অ্যালাউড বাই গভর্নমেন্ট টু বি ফ্লোন’ বাক্যটি প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
অর্থাৎ এই সংশোধনীতে ভবনের আকারের ওপর নির্ভর করে দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের অনুপাত বজায় রেখে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে বড় আকারের পতাকা উত্তোলনের বিষয়টি অনুমোদন পায়। এরশাদের সময়ে এর বাইরে পতাকা বিধিমালায় তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়নি।
এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তবে বিএনপির ওই আমলে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২’-এ কোনো পরিবর্তন আসেনি।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিজয়ী হয়ে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার কিছু আগে আগে তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বেশ কিছু পরিবর্তন আনে জাতীয় পতাকা বিধিমালায়।
জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার দিন ১৫ আগস্টকে ‘জাতীয় শোক দিবস’ ঘোষণা করে দিনটিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান যুক্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার।
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল বিধিমালায় ‘শহিদ দিবস’ এবং ‘জাতীয় শোক দিবস’ ২১ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান ছিল। তবে সেখানে শহিদ দিবসের তারিখ উল্লেখ ছিল না।
২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সেটি সংশোধন করে ২১ ফেব্রুয়ারি ‘শহিদ দিবস, ১৫ আগস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’ এবং সরকার ঘোষিত অন্য যেকোনো দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান যুক্ত করা হয়।
১৯৭২ সালের বিধিমালা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ছাড়া গাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর সুযোগ পেতেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিসভার পূর্ণ মন্ত্রী, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও কনস্যুলার প্রধানরা।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এর আওতা বাড়িয়ে প্রধান বিচারপতি, চিফ হুইপ, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার গাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর বিষয়টি বিধিমালায় যুক্ত করে।
তখন প্রতিমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার কোনো ব্যক্তি, উপমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদার কোনো ব্যক্তি ঢাকার বাইরে গেলে তাদের গাড়িতেও জাতীয় পতাকা ওড়ানোর বিধান যুক্ত হয়।
ওই বছরের ১ অক্টোবর হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট।
ক্ষমতা গ্রহণের বছর না পেরোতেই চতুর্থ দফায় সংশোধনী আসে জাতীয় পতাকা বিধিমালায়। ১৫ আগস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’ ঘোষণা করে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধানটি নতুন সংশোধনীতে বাদ দেয় বিএনপি সরকার।
২০০২ সালের ৩ আগস্ট এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এমনকি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তও বাতিল করে বিএনপি।
জাতীয় পতাকা বিধিমালা পঞ্চম দফায় সংশোধন হয় সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এতে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল করা হয়।
২০০৮ সালের ১১ আগস্ট তখনকার রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রজ্ঞাপনটি জারি করেন।
এর প্রায় এক যুগ পর ১১ ফেব্রুয়ারি ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২’ ষষ্ঠ দফায় সংশোধন করা হয়েছে।
আর এতে নতুন করে শুধু যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের দিন দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিষয়টি।
এর আগে ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দেয়া ভাষণের দিনটিকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
বিধি ও সেবা অধিশাখা এবং আইন অনুবিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দিনটিকে (৭ মার্চ) সরকার ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করেছে। ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত হওয়ার কারণে ওই দিন কোনো ছুটি থাকছে না। ফলে দিবসটি কীভাবে পালন করা হবে, তা বিবেচনা করেই ওই দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার মাইলফলকের একটি দিন ৭ মার্চ। ফলে সেদিন জাতীয় পতাকা উড়বে সেটাই তো স্বাভাবিক।’
দ্য পয়জন গার্ডেনের সামনে প্রধান বাগান পরিচর্যাকারী ট্রেভার জোনস
যুক্তরাজ্যের নর্থআমব্রিয়ার অ্যালউইক গার্ডেন এমন একটি স্থান, যেখানে শুধু এমন বিষাক্ত উদ্ভিদই রোপণ করা হয়, যা আপনাকে মেরে ফেলতে পারে।
মানুষের তৈরি বাগান বলতেই মনে হয় বিভিন্ন উপকারী উদ্ভিদের সমষ্টি, নির্মল বাতাস আর প্রশান্তি আনার স্থান। তবে যুক্তরাজ্যের নর্থআমব্রিয়ার অ্যালউইক গার্ডেন এমন একটি স্থান, যেখানে শুধু এমন বিষাক্ত উদ্ভিদই রোপণ করা হয়, যা আপনাকে মেরে ফেলতে পারে।
বিষাক্ত উদ্ভিদের এ বাগান নিয়ে বিভিন্ন নিবন্ধ ও তথ্যচিত্রে একে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী বাগান’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। উপযোগিতা হিসেব যার নামকরণ করা হয়েছে ‘দ্য পয়জন গার্ডেন’।
অ্যালউইক গার্ডেনের ওয়েবসাইটের বর্ণনা অনুযায়ী, অ্যালউইক গার্ডেনটি ছোট তবে মারাত্মক বিষাক্ত—যা প্রায় ১০০ প্রজাতির বিষাক্ত, নেশা ও চেতনানাশক উদ্ভিদ দিয়ে পূর্ণ।
বাগানের কালো লোহার ফটকটি শুধু বিশেষ পরিদর্শকসহ ভ্রমণের ক্ষেত্রেই খোলা হয়। দর্শনার্থীদের কোনো উদ্ভিদের গন্ধ নেয়া, স্পর্শ করা ও স্বাদ নেয়ার ওপর কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ বাগানের বাতাস এতটাই বিষাক্ত যে মাঝে মাঝে কিছু মানুষ বাগানের মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
নর্থঅ্যাম্বারল্যান্ডের প্রথম ডিউক হিউ পার্সি ১৭৫০ সালের দিকে অ্যালউইক ক্যাসলের কাছে এ বাগানটি তৈরি করেন।
নর্থঅ্যাম্বারল্যান্ডের বর্তমান ডাচেস জেন পার্সি ১৯৯৭ সালে এতে আমূল পরিবর্তন আনেন।
প্রধান বাগান পরিচর্যাকারী ট্রেভার জোনসের ভাষ্য মতে, ডাচেস বিষাক্ত বাগানের ধারণাটি নিয়ে আসেন, যা ২০০৫ সালে উন্মুক্ত করা হয়।
এক ভিডিওতে জোনস বলেন, ‘এটা একান্তই ডাচেসের ব্যক্তিগত উদ্ভাবন। তিনি ভেষজ উদ্যান তৈরির চেয়ে অধিক আগ্রহ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেন এবং এই বিষাক্ত বাগান বানান।’
বাগানের ওয়েবসাইটের আগের সংস্করণে সিদ্ধান্তটির ব্যাখ্যা দেন ডাচেস জেন পার্সি।
সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি অবাক হয়েছি, কেন বিশ্বজুড়ে এতগুলো বাগানের ক্ষেত্রে উদ্ভিদের হত্যা করার ক্ষমতার চেয়ে শুধু নিরাময়ের শক্তির ওপর দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। … আমি অনুভব করেছি, আমার জানা বেশির ভাগ শিশুই কীভাবে একটি উদ্ভিদ হত্যা করতে পারে তা শুনতে আগ্রহী হবে।
‘আপনি যদি এটি খেয়ে ফেলেন তাহলে মৃত্যুর জন্য কত সময় লাগবে এবং তা কতটা কষ্টদায়ক ও বেদনাদায়ক হতে পারে!’
এ বাগানের প্রতিটি উদ্ভিদই বিষাক্ত এবং আপনাকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে—এমন সতর্কতা দিয়ে জোনস বাগানের উদ্ভিদের তালিকায় লেখেন, ‘এই উদ্ভিদটি জায়ান্ট হাওকউইড: এটি প্রায় আট ফুট বড় হতে পারে তবে এটি ফটোটক্সিক। তাই এটি আপনার ত্বক পুড়িয়ে দেবে এবং সাত বছর পর্যন্ত এর ফোস্কা থাকতে পারে। …
‘এই উদ্ভিদটি আখেনাটেন বা মনকসহুড। সুন্দর নীল ফুল, কিন্তু সম্পূর্ণ গাছটিই বিষাক্ত। এর ফল চূর্ণ করে খাওয়ানো হলে আপনি মারা যাবেন। পাতাগুলোও আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। …
‘এই উদ্ভিদটি লরেল। এটি সায়ানাইড তৈরি করে এবং আমরা সবাই জানি, এটি আপনার কী করবে।’
জোনস আরও একটি বিষয় উল্লেখ করেন, বাগানের অনেক উদ্ভিদই পরিচিত এবং প্রায়শই মানুষ এর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে না জেনেই রোপণ করেন।
তিনি বলেন, ‘এগুলো খুবই পরিচিত উদ্ভিদ। এগুলো অনেকের বাগানে রয়েছে। কিন্তু তারা জানেন না, এগুলো আসলে কতটা ক্ষতিকর।’
ভ্রমণবিষয়ক সাময়িকী অ্যাটলাস ওবস্কুরা জানিয়েছে, গাঁজা, আফিমের পপি, ম্যাজিক মাশরুম ও কোকোর মতো উদ্ভিদের চাষে সরকারের অনুমতি রয়েছে ডাচেসের।
ফ্যাক্ট চেক ওয়েবসাইট সনুপস জানিয়েছে, এ ধরনের বাগানের তালিকা না থাকায় এটিই ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক উদ্যান’ কি না তা বলা যাচ্ছে না। তবে নর্থআমব্রিয়ায় আসলেই পয়জন গার্ডেন রয়েছে।
ফেসবুক ও টুইটারে অনেকে দাবি করেছেন ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) প্রকাশ করেছে।
অতিরিক্ত তাপের কারণে সূর্যপৃষ্ঠের ছবি তোলা মোটেই সহজ নয়। যা তোলা হয় তাও যে খুব সুস্পষ্ট তেমনটা নয়।
সম্প্রতি সূর্যপৃষ্ঠের একটি চমকপ্রদ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুক ও টুইটারে অনেকে দাবি করেছেন ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) প্রকাশ করেছে।
এক জন ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি ক্যাপশনে লেখেন, ‘নাসা প্রকাশিত সূর্যপৃষ্ঠের সবচেয়ে স্পষ্ট চিত্র।’
ছবিটি এতটাই ভাইরাল হয়েছে, একটি ফেসবুক পোস্ট ৭৭ হাজার বার শেয়ার হয়েছে।
অনেকে এটি নাসার ছবি বলে শেয়ার করলেও আরেকটি পক্ষ অবশ্য এটি চিত্রকর্ম না আসলেই সূর্যপৃষ্ঠের ছবি না নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে অনুসন্ধানের পর জানিয়েছে, ছবিটি তোলা এবং ডিজিটালি সম্পাদনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আলোকচিত্রী জেসন গুনজেল। এর সঙ্গে নাসার কোনো সম্পর্ক নেই।
ফ্যাক্ট চেক
গুগলের রিভার্স ইমেজ সার্চ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন আর্ট মার্কেট ‘ফাইন আর্ট আমেরিকা’ নামের একটি ওয়েবসাইটে মূল ছবিটি পেয়েছে ইন্ডিয়া টুডে।
সেখানে ১৬ জানুয়ারি ছবিটি দেন গুনজেল। ছবিটির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘চৌম্বকীয় সূর্য: কাছ থেকে সৌরশক্তির বিশেষ উপস্থাপনা। এই ছবিটি আমাদের তারার দৃশ্যমান পৃষ্ঠের অশান্ত চৌম্বকীয় ক্ষেত্রটি তুলে ধরে।’
গুনজেল তার পরিচিতিতে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের এক জন চিত্রগ্রাহক বলেছেন।
ছবিটি ১৩ জানুয়ারি তার টুইটারেও দেন গুনজেল। সেখানে তিনি স্পষ্ট করে লেখেন, ‘খুবই উন্নত সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত সৌরমণ্ডলের ছবি।’
‘বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে পাতলা রেখায় হাঁটা ... সম্ভবত এটি কিছুটা ঝাপসা।’
ক্যাপশনটি এ ইঙ্গিত দেয়, ছবিটি শৈল্পিকভাবে সম্পাদিত।
টুইটারে ছবিটি শেয়ার করেছেন এমন এক জনের পোস্টেও গুনজেলের ছবিটি বিশেষভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
নাসার প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছবিটি বা এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভারতের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির প্রেসিডেন্ট শারদ পাওয়ারকে প্রকাশ্যে এক ব্যক্তি চড় মারছেন এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহারকারীদের দাবি, ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারকে নিয়ে সম্প্রতি শারদ পাওয়ারের মন্তব্যের কারণে ক্ষিপ্ত ওই ব্যক্তি তাকে চড় মারেন।
ভারতে চলমান কৃষক আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করার জন্য শচিনের সমালোচনা করেন শারদ। অন্য কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার আগে শচিনকে সতর্ক থাকতে পরামরশ দেন এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা এনডিটিভির লোগো থাকা ১০ সেকেন্ডের ভিডিওটি পোস্ট করে লেখেন, শচিনকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় ক্ষুব্ধ হয়ে শারদকে চড় দেন ওই ব্যক্তি।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে অনুসন্ধান করে জানিয়েছে, ভিডিওটি ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বরের। ওই সময় দেশটির কৃষিমন্ত্রী ছিলেন শারদ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির জন্য ওই সময় শারদকে চড় মারেন অরবিন্দ সিং নামের ওই ব্যক্তি।
ফ্যাক্ট চেক
গুগলের কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূল ভিডিওটি বের করেছে ইন্ডিয়া টুডে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, নয়াদিল্লি মিউসিপাল কাউন্সিলের প্রধান কার্যালয়ে ওই ঘটনা ঘটে। একটি সাহিত্য অনুষ্ঠানে শেষে ভবনটি থেকে বের হওয়ার সময় প্রকাশ্যে তাকে চড় মারেন অরবিন্দ।
পুরো ঘটনাটি ধরা পড়ে ক্যামেরায়। ২০১১ সালে ওই ঘটনার পর এনডিটিভির প্রতিবেদনের ছোট একটি অংশ কেটে নিয়ে এটি বিভ্রান্তিমূলক দাবি করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ঘটনার পর অরবিন্দকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ওই ঘটনা ঘটান।
শারদকে চড় মারার সময়ও তিনি চিৎকার করছিলেন, ‘দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের জন্য এটাই আমার জবাব।’
গাড়ির ভেতরে বসে এক জন মদ ঢেলে দিচ্ছেন। আর সেই মদ নেয়ার জন্য বাইরে ভিড় করেছেন অনেক মানুষ। এমন একটি ভিডিও ভারতে চলমান কৃষক আন্দোলনের বলে দাবি করে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
৩১ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে তারা লেখেন, ‘কৃষক আন্দোলন। বিনা মূল্যে মদ বিতরণ।’
ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক জন গাড়ির মধ্যে মদের বোতল হাতে নিয়ে আছেন। বাইরে থেকে যুবক-বৃদ্ধ অনেকে তার দিকে গ্লাস ও পাত্র এগিয়ে দিচ্ছেন। তিনি তাতে মদ ঢেলে দিচ্ছেন।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে অনুসন্ধানের পর জানিয়েছে, ভিডিওটি কৃষক আন্দোলনের নয়। ভারত সরকারের বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন পাসের আগে থেকেই এটি বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ছিল।
ফ্যাক্ট চেক
ইন্ডিয়া টুডে গুগলের রিভার্স ইমেজ সার্চ ব্যবহার করে ভিডিওটি খুঁজে বের করেছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ২০২০ সালের এপ্রিলে অনেকে ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। অথচ ভারত সরকার ওই সময় কৃষি বিল পাসই করেনি।
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বিল তিনটি সংসদে উত্থাপন করে ২০২০ সালের জুনে। এরপর বিরোধী দলগুলোর বিরোধিতার মুখেই এটি সংসদের নিম্ন ও উচ্চকক্ষে পাস হয়। দেশটির রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের পর ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে এটি আইনে পরিণত হয়।
এরপরই আন্দোলনে নামেন দেশটির কৃষকরা। পাঞ্জাবে কয়েক সপ্তাহ বিক্ষোভের পর দেশটির কৃষক সংগঠনগুলো এখন দিল্লি ঘিরে অবস্থান নিয়েছে।
নতুন ঘর ধসে পড়ায় অল্পের জন্য রক্ষা পান বরগুনার উর্মিলা রাণী। ছবি: নিউজবাংলা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাণশ্রমিক বলেন, ‘কমপক্ষে তিন ফুট গভীরতায় ইটের গাঁথুনি থাকার কথা। এখানে এক ফুটেরও কম গভীর থেকে ইটের গাঁথুনি দিয়ে দেয়াল তোলা হয়েছে। একইভাবে প্রতিটি ঘরেরই মাটির নিচে এমন গাঁথুনি।’
বরগুনার তালতলীতে হস্তান্তরের ১২ দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ধসে পড়ার ঘটনায় নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যার সত্যতা পাওয়া গেছে নিউজবাংলার অনুসন্ধানেও।
তবে এই অনিয়মের দায়ভার নিতে রাজি নন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কেউই।
শুক্রবার তালতলী উপজেলার বেহালা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া উর্মিলা রানীর ঘরের ভেঙে যাওয়া দেয়াল থেকে ইটগুলো আলাদা করছেন কিছু শ্রমিক। সেই ইট ফের গেঁথে নতুন করে দেয়াল তোলার প্রস্তুতি চলছে।
এই ইটগুলো ভালো না বলে দাবি উর্মিলার। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ইটের মান নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাকে ধমক দিয়ে বলা হয়েছে, ‘মাগনা ঘর পাইছ আবার এত কথা কও ক্যা।’
দেয়াল গাঁথুনির সময়ও গভীরতা ও মাটি ভরাট নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন বলে জানান উর্মিলা।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় যার জমি আছে, ঘর নেই, তার জমিতে ঘর করে দিতে বরগুনার তালতলী উপজেলায় ১৭ কোটি ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
এ বরাদ্দ থেকে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১০০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। কাজের তদারকির দায়িত্ব ছিল তালতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুনু বেগমের।
উর্মিলার এই ঘরটি গত ২৩ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দুবার ধসে পড়ে ঘরটি। দ্বিতীয় দফায় বুধবার সকালে দেয়াল ভেঙে পড়লে অল্পের জন্য বেঁচে যান ৭১ বছর বয়সী উর্মিলা।
এ ঘটনার পর থেকে নতুন ঘর নিয়ে শঙ্কিত অন্যরাও। তাদের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও দায়সারা কাজের ফলে ঘরগুলো মজবুত হয়নি। যেকোনো মুহূর্তেই ভেঙে পড়তে পারে এগুলো, ঘটতে পারে হতাহতের ঘটনা।
উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের বথীপাড়ায় ২০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগেরই অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে, শুধু টিনের ছাউনি দেয়া বাকি।
ওই এলাকার আশপাশের কোথাও সুফলভোগী কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে আবদুল খালেককে নিয়ে গাঁথুনির গভীরতা খুঁড়ে দেখেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক।
দেখা যায়, কোনো কোনো ঘরের মাটির নিচে গাঁথুনি ছাড়াই সমতল থেকে দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। আবার কিছু ঘরের গাঁথুনি দেয়া হলেও তার গভীরতা এক ফুটের কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার এক নির্মাণশ্রমিক বলেন, ‘কমপক্ষে তিন ফুট গভীরতায় ইটের গাঁথুনি থাকার কথা। এখানে এক ফুটেরও কম গভীর থেকে ইটের গাঁথুনি দিয়ে দেয়াল তোলা হয়েছে। একইভাবে প্রতিটি ঘরেরই মাটির নিচে এমন গাঁথুনি।
এরই মধ্যে দেখা হলো সেখানকার এক সুফলভোগী আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ঘরগুলোতে নিম্নমানের ইট ও কংক্রিটের ব্যবহারের বিষয়ে শুরু থেকেই তারা মাঠে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমাদের কাজ আমাদের করতে দেন।’
আবুল জানান, দেয়ালের গাঁথুনির গভীরতা এত কম যে, সামান্য ঝড়েই এসব ঘর ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আরেক সুফলভোগী নিউজবাংলাকে জানান, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইট-বালু-সিমেন্ট আনার জন্য আমাগো কাছ দিয়া হেরা ভাড়া টাহা নেছে…সবাই কমবেশি দেছে...১০ হাজারের কম হবে না।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে একমত কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কৃষ্ণকান্ত মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘এই ঘরগুলোর নির্মাণকাজ তদারকি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। এ ছাড়াও ঘরের নির্মাণসামগ্রী ক্রয় ও নির্মাণ ঠিকাদার নিয়োগ করে ঘর নির্মাণের কাজটি করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুনু বেগম।
‘ঘরের নির্মাণের জন্য নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কথা বলেছি। কিন্তু ইউএনও ও পিআইও আমাদের বলেছেন, বরাদ্দ অনুসারেই ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।’
এ নিয়ে জানতে ঠিকাদার নয়ন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিবহন খরচ সুফলভোগীদের কাছ থেকে নেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ঘরপ্রতি আমাদের যে পরিমাণ খরচা ধরা হয়েছে তাতে লাভ তো হবেই না, বরং গচ্চা যাবে। তাই আমরা সচ্ছলদের কাছ থেকে পরিবহন বাবদ কিছু খরচা নিয়েছি।’
গাঁথুনির বিষয়ে জানতে চাইলে নয়ন বলেন, ইউএনও ও পিআইও যেভাবে বলেছেন, তিনি সেভাবেই কাজ করেছেন।
তবে কোনো দায় নিতে রাজি হননি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুনু বেগম। এ বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
রুনু বলেন, ‘এ বিষয়ে যা তথ্য জানা দরকার স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’
শুক্রবার দুপুরে উর্মিলার ভেঙে যাওয়া ঘর পরিদর্শনে যান তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, নিজেই এবার নির্মাণকাজ তদারকি করছেন।
সে সময় নির্মাণকাজ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘আমরা ঘরগুলো নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করেছি। ঠিকাদার কিছু ঘরে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়াও কিছু ঘরের কাজ ঠিকভাবে করেননি। আমরা ওই সব ঘর পুনরায় নির্মাণ করে দেব।’
তিনি আরও বলেন, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে প্রকল্প কর্মকর্তাকে শিগগিরই তলব করা হবে।
মন্তব্য