১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু ও ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লুর সঙ্গে করোনাভাইরাসজনিত রোগে (কোভিড-১৯) মৃত্যুর হার নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। এসব পোস্টে কেউ কেউ দাবি করেছেন, বিশেষজ্ঞরা কোভিডে মৃত্যুর হারকে অতিরঞ্জিত করেছেন।
এমন কিছু পোস্টের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্টে একটি দাবি হলো, সংক্রমণের প্রথম বছরে সোয়াইন ফ্লুর চেয়ে কোভিডে আক্রান্ত কম ছিল পাঁচ কোটি ৬০ লাখ। ইউএসএ টুডে এ দাবিকে ভুল প্রমাণ করেছে।
অন্য দুটি দাবি হলো, প্রথম দফা সংক্রমণের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় বেশি প্রাণঘাতী ছিল স্প্যানিশ ফ্লু। কিন্তু এ দাবিটিও ইউএসএ টুডের যাচাইয়ে ভুল প্রমাণিত হয়।
উল্লিখিত দাবিটি নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে একটি মিম। চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষের দিকে পোস্ট হওয়া মিমটি ৫০ হাজারের বেশি বার শেয়ার হয়েছে।
ওই পোস্টদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছ ইউএসএ টুডে। সংবাদমাধ্যমটির জিজ্ঞাসার জবাবে পোস্টকারী আরও কিছু পরিসংখ্যান দিয়েছেন, স্বাধীনভাবে যেগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হবে না।
জনপ্রিয় মিমটিতে অভিযোগ করা হয়, স্প্যানিশ ফ্লু ও মৌসুমি ফ্লুর সঙ্গে কোভিড-১৯-এর তুলনা করতে গিয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মিমটা শুরু হয় '১% কত বড়?' লেখা বাক্য দিয়ে।
পরবর্তী বাক্যগুলোতে প্রতিটি মহামারী ও মৌসুমি ফ্লুর পরিসংখ্যান দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিশ্বের জনসংখ্যার বিপরীতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হারের তুলনাও ছিল তাতে।
মিমে বলা হয়, স্প্যানিশ ফ্লুতে পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। সে সময় বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৯৫ কোটি। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, সে সময় বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫.২৬ শতাংশের মৃত্যু হয় সংক্রমণে। এ পরিসংখ্যানের পর বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে বলা হয়, 'বিশেষজ্ঞগণ: বেদনাদায়ক ঘটনা!'
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য অনুযায়ী, মিমে উল্লেখ করা মৃত্যুর সংখ্যা সঠিক। তবে গ্লোবাল চেঞ্জ ডাটা ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ১৯১৮ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৯৫ কোটি নয়; ছিল ১৮০ কোটি।
সিডিসি প্রকাশিত স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজেসে ২০০৬ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, স্প্যানিশ ফ্লুতে বৈশ্বিক মৃত্যুর হার ছিল ২.৫ শতাংশ, যেটা মিমে উল্লেখিত হারের অর্ধেকেরও কম। ওই নিবন্ধ অনুযায়ী, স্প্যানিশ ফ্লু দুই বছর (১৯১৮ সালের বসন্ত থেকে ১৯২০ সালের বসন্ত পর্যন্ত) স্থায়ী হয়েছিল।
কোভিড-১৯ কি স্প্যানিশ ফ্লুর চেয়ে বেশি মারাত্মক
মিমে বলা হয়, ২০১৮ সালে বিশ্বে ৭৫০ কোটির মতো মানুষের মধ্যে সাড়ে ছয় লাখ বা ০.০০৯ শতাংশের মৃত্যু হয় মৌসুমি ফ্লুতে। মিম অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞরা ওই বছরকে 'টিপিক্যাল ইয়ার' বা গতানুগতিক বছর আখ্যা দিয়েছেন।
মিমের এই অংশটি সঠিক। প্রতি বছর বিশ্বে ৩০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ মৌসুমি ফ্লুতে আক্রান্ত হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, এতে মৃত্যু হয় গড়ে দুই লাখ ৯০ হাজার থেকে সাড়ে ছয় লাখ মানুষের।
ডব্লিউএইচওর বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্যাক্টচেক সাইট ফুল ফ্যাক্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, মৌসুমি ফ্লুতে বৈশ্বিক মৃত্যুর হার এক শতাংশের কম।
মিমে কোনো তারিখ উল্লেখ না করে বলা হয়, বিশ্বে ৭৭০ কোটি মানুষের মধ্যে কমপক্ষে চার লাখ ৮৮ হাজার ৭২৯ জনের মৃত্যু হয় কোভিডে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যের বরাত দিয়ে ইউএসএ টুডের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৮ জুনেই কোভিডে মৃত্যু পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে।
২৮ জুলাই পোস্ট হওয়া মিমটির শেষের দিকে বলা হয়, 'বিশ্বের ১ শতাংশ জনসংখ্যা ধরলে এখন মৃত্যু হতো সাত কোটি ৭০ লাখ। এখন কথা হলো, ৫.২৬ শতাংশ যদি বেদনাদায়ক ও .০০৯ শতাংশ বড় কোনো বিষয় না হয়, তাহলে আমরা কি এমন জিনিস করতে যাচ্ছি!'
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, মধ্য আগস্টে কোভিডে মৃত্যু হয় সাত লাখ ৭৬ হাজারের বেশি মানুষের।
কোভিড-১৯ কি স্প্যানিশ ফ্লু বা মৌসুমি ফ্লুর চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী
চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেনে গত ১৩ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে স্প্যানিশ ফ্লুর সঙ্গে কোভিডে মৃত্যুর তুলনা করা হয়। এতে নিউ ইয়র্ক সিটিতে কোভিড-১৯-এর প্রথম সংক্রমণের দুই মাসের মৃত্যুর সঙ্গে স্প্যানিশ ফ্লুর সবচেয়ে প্রাণঘাতী দুই মাসের তুলনামূলক আলোচনা করা হয়।
গবেষকরা দেখান, স্প্যানিশ ফ্লুর পুরোপুরি সংক্রমণের সময় প্রতি লাখে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হলেও এখনো এটি কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর সঙ্গে তুলনাযোগ্য।
স্প্যানিশ ফ্লু ও কোভিডে শুরুর দিককার মৃত্যুর হার দিয়ে গবেষকরা পার্থক্যটা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তারা দেখিয়েছেন, ১৯১৮ সালে ফ্লুতে মৃত্যুর চেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন নাজুক স্বাস্থ্যবিধি, জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে। বিপরীতে তুলনামূলক উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থার পৃথিবীতেও কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুর পর্যায়ে মৃত্যুর হার স্প্যানিশ ফ্লুর সর্বোচ্চ পর্যায়ের মৃত্যুর হারের তুলনায় 'উল্লেখযোগ্য হারে বেশি'।
ইউএসএ টুডের ১৩ আগস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউ ইয়র্কে চলতি বছরের ১১ মার্চ থেকে ১১ মে পর্যন্ত দুই মাসে কোভিডে প্রতি লাখে গড়ে মৃত্যু হয়েছে ২০২ জন করে মানুষের। সে তুলনায় স্প্যানিশ ফ্লুর সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময় একই অঞ্চলে ১৯১৮ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে গড়ে মৃত্যু হয় ২৮৭ জন করে আক্রান্তের।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান অনেক উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একই সময়ে নিউ ইয়র্কে ফ্লুতে প্রতি লাখে মৃত্যু ছিল ৫০ জন। অথচ কোভিডে সেটা বেড়ে চার গুণ (২০০) হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মত, কোভিড-১৯ মৌসুমি ফ্লুর চেয়ে বেশি মারাত্মক হবে। মৌসুমি ফ্লু নিয়ন্ত্রণের জন্য জন্য টিকা আছে। কিন্তু কোভিডের কোনো টিকা এখনো সফলভাবে প্রয়োগ করা যায়নি।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০ আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডে আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩.১ শতাংশ। দেশটিতে প্রায় দশমিক ০৫ শতাংশ মৃত্যু হার ছিল বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। সে সময় মৃত্যুর হারে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে ছিল শুধু পেরু, স্পেন, চিলি ও ব্রাজিল।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি জানিয়েছে, মৌসুমি ফ্লুতে বার্ষিক মৃত্যুর হার প্রায় শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ বা ১২ হাজার থেকে ৬১ হাজার। তাদের তথ্য অনুযায়ী, কোভিডে আক্রান্তদের মধ্যে সার্বিক মৃত্যু হার শূন্য দশমিক ০০৬৫ শতাংশ। এ শতাংশ নিরূপণ করা হয় আক্রান্ত সব ব্যক্তির বিপরীতে মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে।
গ্লোবাল চেইঞ্জ ডাটা ল্যাবের মতে, লক্ষণ নেই এমন মাধ্যম থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০ আগস্ট পর্যন্ত কোভিডে বিশ্বে নিশ্চিত আক্রান্তের বিপরীতে নিশ্চিত মৃত্যুর হার ৩.৫ শতাংশ।
সিডিসির নথি অনুযায়ী, ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লুতে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয় এক লাখ ৫১ হাজার ৭০০ জন থেকে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ জনের। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিল ১২ হাজার ৪৬৯। অন্যদিকে করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০ আগস্ট পর্যন্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই এ ভাইরাসে মৃত্যু হয় এক লাখ ৭৪ হাজারের বেশি মানুষের।
ইউএসএ টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আক্রান্তের প্রায় পাঁচ মাস পর সোয়াইন ফ্লুর ভ্যাকসিন আসে। অথচ দেশটিতে প্রথম আক্রান্তের অষ্টম মাসেও কোভিডের কোনো টিকার সফল প্রয়োগ সম্ভব হয়নি।
গ্লোবাল চেইঞ্জ ডাটা ল্যাবের ভাষ্য, কোভিডে মৃত্যুর সঠিক বিশ্লেষণের জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর সম্ভাবনা বা সংক্রমণে মৃত্যুর হারকে বিবেচনায় নেয়া উচিত। সঠিকভাবে হিসাব করতে হলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মোট সংখ্যা জানতে হবে। রোগের গতি-প্রকৃতি বোঝাসহ বেশ কিছু বিষয় মোট আক্রান্তের সংখ্যা নিরূপণে গবেষকদের ঝামেলায় ফেলেছে।
ইউএসএ টুডের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ফেসবুকে পোস্ট করা মিমে শুধু সংখ্যা দিয়ে স্প্যানিশ ফ্লু ও মৌসুমি ফ্লুর মৃত্যুর সঙ্গে কোভিডে মৃত্যুর তুলনা করা হয়েছে। এ তুলনা যথার্থ নয়। মৌসুমি ফ্লুর চেয়ে বেশি দ্রুত হারে ছড়ায় করোনাভাইরাস। এটি মৌসুমি ফ্লুর চেয়ে বেশি সংক্রামক।
মিমের দাবি ও ইউএসএ টুডের মূল্যায়ন
ইউএসএ টুডের গবেষণা অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা মিমে স্প্যানিশ ফ্লুতে মৃত্যুর হার বেশি ছিল বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা আংশিক মিথ্যা। ১৯১৮ সালের ফ্লু ও মৌসুমি ফ্লুর মৃত্যুর হার নিয়ে যেসব পরিসংখ্যান শুরুতে দেয়া হয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগ ছিল সত্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য ও গবেষণা অনুযায়ী, কোভিড-১৯ উল্লিখিত দুটি রোগের চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির গবেষণা মতে, বিশ্বে জনসংখ্যার বিপরীতে কোভিডে মৃত্যুর হার কোনো এক সময়ের জন্য সঠিক হলেও এ সংখ্যাটা ভাইরাসে মৃত্যুর হারের প্রতিফলন নয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মৃত্যুর হার প্রায় শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ। সর্বশেষ ডাটা অনুযায়ী, মৃত্যুর এ সংখ্যাটা বিশ্বে সর্বোচ্চ এবং মৌসুমি ফ্লুতে বার্ষিক মৃত্যুর হারের চেয়েও বেশি।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত আট মাসে বাংলাদেশের ৬৪০ জন সাংবাদিককে টার্গেট করেছে। এ দাবিকে ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের সরকার। আজ এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানায়।
ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ সিএ প্রেস উই ফ্যাক্টস থেকে এক পোস্টে বলা হয়, রাইটস এন্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপের (আরআরএজি) বরাতে দ্য হিন্দু প্রকাশিত রিপোর্টে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বাংলাদেশের ৬৪০ সাংবাদিককে হয়রানি অভিযোগ অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা তথ্য।
সেখানে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জনগণ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নিপীড়নমূলক ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে সরিয়ে দেয়, তখন সরকার ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকরা চাপের মুখে পড়েন। তবে তা কোনোভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি।’
পোস্টে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলা হয়, ‘বরং বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের করা কিছু আইন বর্তমানে সংশোধন করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার কখনও সাংবাদিকদের টার্গেট করেনি।’
প্রেস উইং আরও জানায়, ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ও তাঁর প্রেস সচিব, ঢাকায় এএফপি’র সাবেক ব্যুরো চিফ বহু বছর ধরে মুক্ত গণমাধ্যমের প্রবক্তা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’
বিবৃতিতে আরআরএজি প্রধান সুহাস চাকমাকে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সংগঠনটি বাংলাদেশ বিষয়ে বারবার মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টসে সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়িয়েছিল আরআরএজি। দেশীয় গণমাধ্যম তিনটি ঘটনায় ৪ জনের প্রাণহানির কথা নিশ্চিত করে। কিন্তু সংগঠনটি ৯ জন আদিবাসী নিহতের খবর প্রচার করে।
বিবৃতিতে প্রেস উইং জানায়, ‘পরে নিউজ৯ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি ফের তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নেরও আহ্বান জানান সুহাস চাকমা।’ এরপর আরআরএজির তথ্যের উপর ভিত্তি করে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশি মাইনরিটিস (এইচআরসিবিএম) মৃতের সংখ্যা ৬৭ জন বলে দাবি করে। যদিও পরে তা ডিসমিস ল্যাবের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ফ্রম ফোর টু এ হানড্রেড’ এ ভুল প্রমাণিত হয়।
এই ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে জার্মান ভিত্তিক ডয়চে ভেলের সাংবাদিক তাসমিয়া আহমেদ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি অধ্যাপক ইউনূসের অধীনে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেন। কিছুদিন আগে ছাত্র আন্দোলনকারীদেরও ‘সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এই আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক।
প্রেস উইং আরও জানায়, ‘গেল মার্চ মাসে আরআরএজি জাতিসংঘে অভিযোগ করে, অধ্যাপক ইউনূস ধর্মীয় সহিংসতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সঙ্গে ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাগুলোকেও তাদের তথ্য যাচাইয়ের কাজে বাধা দিচ্ছে।’
আরও বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান নিপীড়নের বিপক্ষে। জনগণের সঙ্গে মিলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া বৈষম্যমূলক নীতির অবসান করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ নির্মাণে কাজ করছে।’
বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তাদের সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করমর্দনের ছবিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে ড. ইউনূসের করমর্দনের ছবি বলে ভারতীয় মিডিয়ার দাবী বিভ্রান্তিকর।
বাংলাদেশে চলমান গুজব এবং ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্বে নিয়োজিত রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রিউমার স্ক্যানার কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘গতকাল ৩ মে ভারতীয় গণমাধ্যম আজতক বাংলা এক ভিডিও প্রতিবেদনে একটি ছবি দেখিয়ে দাবি করেছে, ছবিতে ড. ইউনূসের সাথে করমর্দন করা ব্যক্তিরা সেনা আধিকারিক (সেনা কর্মকর্তা)। উপস্থাপক সে সময় দাবি করেন, ‘তবে পোশাক দেখে মনে হচ্ছে না তারা কেউ বাংলাদেশের সেনা। কেননা বাংলাদেশের সেনার পোশাক এইরকম নয়।.. এরা কি তাহলে অন্য কোনো দেশের সেনা আধিকারিক? তাহলে বাংলাদেশে কী করছেন? এরা কি পাকিস্তানি সেনা আধিকারিক?’
ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচার হওয়া বিষয়টি রিউমার স্ক্যানারের নজরে আসলে তার ফ্যাক্টচেক করা হয়।
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিতে ড. ইউনূসের সাথে করমর্দন করা ব্যক্তিদের কেউই পাকিস্তান বা বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তা নয় বরং এরা সকলেই বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৯ এপ্রিল পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ এর উদ্বোধনের সময়ের ছবি এটি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে গত ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত একই ছবি পাওয়া যায়। জানা যায়, এটি ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫’ এর উদ্বোধন ও পদক অনুষ্ঠানের ছবি। সে সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা) গ্রহণ করেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ এর অ্যাডিশনাল আইজিপি জনাব মো. ছিবগাত উল্লাহ, পিপিএম।
রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজে একইদিনের একাধিক ছবিতেও একই পোশাকে পুলিশ কর্মকর্তাদের দেখা যায়। এমনকি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকেও একই পোশাকে ড. ইউনূসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে আরো জানতে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে এআইজি (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর রিউমার স্ক্যানারকে জানান, এখানে সকলেই বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য। এটা আমাদের আনুষ্ঠানিক পোশাক যা ‘সামার টিউনিক’ নামে পরিচিত। পুলিশ সপ্তাহে আমরা আনুষ্ঠানিক পোশাক পরে থাকি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যাদের সাথে এখানে করমর্দন করছেন, তারা সকলেই বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা।
ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান টিম জানায়, বাংলাদেশ পুলিশের সাথে ড. ইউনূসের করমর্দনের ছবিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর
সদস্যদের সাথে করমর্দন বলে ভারতীয় মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা রিউমার স্ক্যানারের ফ্যাক্ট চেকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
শুধুমাত্র বিগত এপ্রিল মাসেই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়ায় বাংলাদেশকে নিয়ে ভূলতথ্য, অপতথ্য, বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার সম্প্রতি বেড়েছে। ফ্যাক্ট চেক করে এসব বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার শনাক্ত করছে রিউমার স্ক্যানার।
মার্চ মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত হয় যথাক্রমে ২৭১ ও ২৬৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়।
রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে গত মার্চে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ১০৫টি ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৩৫ শতাংশ। এছাড়া জাতীয় বিষয়ে ১০৩টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ১২টি, ধর্মীয় বিষয়ে ৩৬টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে তিনটি, শিক্ষা বিষয়ে তিনটি, প্রতারণা বিষয়ে ১২টি, খেলাধুলা বিষয়ে ১৬টি ভুল তথ্য ফ্যাক্ট চেকের অনুসন্ধানে শনাক্ত হয়েছে মার্চে।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, এসব ঘটনায় ভিডিও কেন্দ্রিক ভুলই ছিল সবচেয়ে বেশি ১৪৩টি। এছাড়া তথ্য কেন্দ্রিক ভুল ছিল ১১০টি এবং ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৪৫টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৬৮টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৯৭টি এবং বিকৃত হিসেবে ৩১টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, প্লাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ২৭৩ টি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। এছাড়া এক্সে ৬২টি, টিকটকে সাতটি, ইউটিউবে ৪৪টি, ইন্সটাগ্রামে ২৬টি, থ্রেডসে অন্তত পাঁচটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৬টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চেও এই ধারাবাহিকতা দেখেছে রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধান টিম জানায়, গত মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে চারটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া তিনটি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি গেল কিছু মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে। মার্চে এমন ২৬টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। এর মধ্যে অর্ধেক ঘটনাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে ফ্যাক্ট চেকের অনুসন্ধানী টিম।
রিউমার স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মার্চে অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১৫টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুল তথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমার স্ক্যানার দু’টি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে৷ সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমার স্ক্যানার দেখেছে, এসব অপতথ্যের সবগুলোই সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে।
মার্চে ২২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও। এর মধ্যে মাত্র ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য তার বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে বলে অনুসন্ধান টিম জানায়।
সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে দু’টি, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে একটি, ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে চারটি, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে জড়িয়ে দু’টি, মো. তৌহিদ হোসেনকে জড়িয়ে একটি এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে একটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
ফ্যাক্ট চেক টিম জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিকে জড়িয়ে গত মাসে দু’টি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এই দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে গত মাসে চারটি অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া দলটির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে ছয়টি, সারজিস আলমকে জড়িয়ে তিনটি, তাসনিম জারাকে জড়িয়ে চারটি, হুমায়রা নুরকে জড়িয়ে একটি, আব্দুল হান্নান মাসউদকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধেও অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। মার্চে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে সাতটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ২৩টি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো তিনটি, র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে জড়িয়ে একটি করে ভুয়া তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
রিউমার স্ক্যানার ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান টিম জানায়, কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ফেব্রুয়ারিতে তিনটি অপতথ্যের শিকার হয়েছে। এই সময়ে সংগঠনটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমাকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।
ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমার স্ক্যানার দেখেছে, বিভিন্ন অঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে মার্চে ১৭টি মৃত্যুর গুজব প্রচার করা হয়। মার্চে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছে নয়টি। একই সময়ে ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয় পাঁচটি।
রিউমার স্ক্যানার গেলো মাসে ধর্ষণ বিষয়ক অন্তত ২৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে একক ঘটনা হিসেবে মাগুরায় আট বছরের এক শিশুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটটি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। রমজান এবং ঈদ পালনকে ঘিরে ২২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৩৮টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ৩৯টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৪৫টি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানারের ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান টিম।
পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে, দেশটি ও প্রতিবেশী ভারতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আঘাত হানতে পারে বড় ধরনের ভূমিকম্প। এ গুজব আরও ডালপালা মেলে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সোলার সিস্টেম জিওমেট্রি সার্ভে (এসএসজিইওএস) নামের একটি সংস্থার টুইটার অ্যাকাউন্টে দেয়া পূর্বাভাসে।
এসএসজিইওএসের ৩০ জানুয়ারির এক টুইটে দক্ষিণ এশিয়ায় ভূমিকম্পের আভাস দেয়া হয়। এতে বেগুনি দুটি রেখা টানা একটি মানচিত্রের ছবি সংযুক্ত করে লেখা হয়, বেগুনি রেখার মধ্যকার বা কাছাকাছি অঞ্চলে ১ থেকে ৬ দিনের মধ্যে শক্তিশালী ভূকম্পনজনিত ঘটনা ঘটতে পারে। বেগুনি রেখার বাইরের অঞ্চলও শঙ্কামুক্ত নয়।
ওই পূর্বাভাসের পর টুইটারে একই অ্যাকাউন্টে ২ ফেব্রুয়ারি আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন ডাচ ভূতত্ত্ববিদ ফ্র্যাংক হুগারবিটস। এতে তিনি ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ সম্ভাব্য কিছু এলাকার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে ভূকম্পনজনিত ঘটনা ঘটতে পারে।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের আগে ‘সঠিক’ আভাস দেয়ায় অনলাইন ব্যাপক প্রশংসিত হন হুগারবিটস। সেই থেকে ভারত ও পাকিস্তানে সম্ভাব্য ভূমিকম্প নিয়ে ডাচ এ গবেষকের ভিডিও শেয়ার করতে থাকেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা।
এসএসজিইওএসের টুইটার অ্যাকাউন্টে দেয়া পূর্বাভাস সত্য হতে পারে কি না, তা যাচাইয়ের চেষ্টা করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্প আগে থেকে আঁচ করা অসম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের মতে, ‘ইউএসজিএসের কিংবা অন্য কোনো বিজ্ঞানী কখনও বড় ভূমিকম্প নিয়ে পূর্বাভাস দেননি।’
ইউএসজিএসের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, নির্দিষ্ট কয়েক বছরের মধ্যে কোনো এলাকায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে হিসাব-নিকাশ করতে পারেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ক্যালটেক) মতে, ঠিক কখন এবং কোথায় ভূমিকম্প হবে, সেটা আগে থেকে ধারণা করা সম্ভব নয়। ভূমিকম্প কতটা ব্যাপক হবে, তা নিয়েও পূর্বাভাস দেয়া যায় না।
দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষত ভারত ও পাকিস্তানে ভূমিকম্প নিয়ে হুগারবিটসের ভিডিওর সমালোচনা করেছেন গবেষকরা। তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ অরেগনের ভূপদার্থবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক ডিয়েগো মেলগার এক টুইটে মজা করে লিখেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রে একে বলি ‘সর্ব রোগের মহৌষধ’। এটাকে ‘হাতুড়ে’ হিসেবেও আখ্যা দেয়া যেতে পারে।”
আরও পড়ুন:তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা দেখল নেপাল। এতে এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ২৪ বছর বয়সী বিমানবালা ওশিন আলে মাগারও। সম্প্রতি তার একটি টিকটক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগের।
তবে এ দাবি সম্পূর্ণ ভুয়া বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ভাইরাল হওয়া ওশিনের ভিডিওটি দুর্ঘটনা আগের নয়। সেটি গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের।
ওশিনের মোবাইলের স্ক্রিন রেকর্ডও এ তথ্য নিশ্চিত করে যে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দুর্ঘটনার আগের নয়।
রোববার সকালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৬৮ যাত্রী ও চার ক্রু নিয়ে পোখারার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ইয়েতি এয়ারলাইনসের এটিআর ৭২ উড়োজাহাজটি পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং পুরনো বিমানবন্দরের মাঝামাঝি এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে।
ওশিন পরিবার জানায়, ফ্লাইট থেকে ফিরে একটি উৎসবে অংশ নেয়ার কথা ছিল তার। দুবছর আগে ইয়েতি এয়ারলাইনসে যোগ দেয়ার পর কাঠমান্ডুতে থাকতেন তিনি।
ওশিনের বাবা জানান, দুর্ঘটনার দিন তার মেয়েকে কাজে যেতে বারণ করেছিলেন তিনি। চার ভাইবোনের মধ্যে ওশিন ছিলেন সবার বড়। দুবছর আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তার স্বামী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে থাকেন।
আরও পড়ুন:কাতার বিশ্বকাপের সময় ড্রোনের ওপর দাঁড়িয়ে সৌদি আরবের পতাকা নাড়ছেন এক ব্যক্তি, এমন একটি ভিডিও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ভিডিওটি ১৪ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
ভিডিওটি আসলে সৌদি আরবে ধারণ করা। ২০১৯ সালের মে মাসে স্থানীয় কিংস কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের সময়।
গত বছরের ২২ নভেম্বর ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার হয়। সেখানে ১৪ লাখের বেশিবার এটি দেখা হয়েছে।
ভিডিওর সঙ্গে উর্দু ভাষার ক্যাপশন বাংলায় করলে দাঁড়ায়, ‘কাতারে ফিফা বিশ্বকাপ চলাকালীন ড্রোনে থাকা এক ব্যক্তি কালেমা তাইয়্যেবা লেখা পতাকা নেড়ে বিশ্বকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেটা হলো, কেবল এই পতাকাটিই ইসলামিক বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে উড়বে।’
কালেমা বা কালিমা (আরবি: ٱلكَلِمَات) ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস সংবলিত কয়েকটি আরবি পঙক্তির নাম। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম স্তম্ভ শাহাদাহ্ পূর্ণতা পায়। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বাক্যের অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ বা উপাস্য নেই। এটি ইসলামের চূড়ান্ত কালেমা। সৌদি আরবের পতাকার মাঝখানে এটি লেখা থাকে।
ক্লিপটি ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং টিকটকে শত শত বার শেয়ার হয়েছে।
প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করে কাতার। এ সময় লাখ লাখ দর্শক আরব দেশটিতে আসে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইসলাম ধর্মের প্রচার করে কাতার কর্তৃপক্ষ।
তবে ভিডিওটি কাতারে ধারণ করা হয়নি।
২০১৯ সালে সৌদি টুর্নামেন্ট
বিপরীত চিত্র এবং কীওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সৌদি ক্রীড়া প্ল্যাটফর্ম ডাওরি প্লাস ২০১৯ সালের ২ মে টুইটারে এমন একটি ভিডিও পোস্ট করে।
আরবি ভাষার লেখা টুইটটি বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘উড়ন্ত মানুষ বিশাল এই শোডাউনের উদ্বোধন করছে। এরপর লেখা- #আল-তাওউন_আল-ইত্তিহাদ
#কাস্টোডিয়ান_অফ_দ্য_টু_হোলি_মস্ক_কাপ #দাওরি_প্লাস।’
ক্যাপশনে হ্যাশট্যাগগুলো দুটি পবিত্র মসজিদ কাপ বা কিংস কাপের কাস্টডিয়ানকে নির্দেশ করে, যেখানে আল-তাওউন দল ২০১৯ সালের ২ মে ফাইনালে আল-ইত্তিহাদকে পরাজিত করেছিল।
এদিন সৌদি সংবাদপত্র আরব নিউজের খবরে বলা হয়, ‘বাদশাহ সালমান টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন। বিজয়ী দলকে তিনি ট্রফি তুলে দিয়েছিলেন। সেবার প্রথমবারের মতো কিংস কাপ ট্রফি জেতে ফুটবল দল আল-তাওউন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক আবুধাবি স্পোর্টস পরদিন ইউটিউবে সে ম্যাচের একটি ডিভিও আপলোড করে। ক্লিপ্টির ৩ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে একই রকম দৃশ্য দেখা যায়।
নিচে একটি স্ক্রিনশট দেয়া হল, যার মধ্যে ভুয়া পোস্টের (বামে) দৃশ্যের তুলনা করা হয়েছে দাওরি প্লাসের (ডানে) সঙ্গে।
ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্যাক্টক্রেসেন্ডোও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন:
‘সোনার চর’ নামে সিনেমার শুটিংয়ে পিরোজপুরের কাউখালী গিয়েছিলেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। শুটিং স্পট থেকে নিয়মিত ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে গত কয়েক দিন ধরে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত এ অভিনেতা।
এসব ছবিতে জায়েদকে কখনও দেখা গেছে শীতের সকালে নৌকার মাঝি হিসেবে, কখনও তিনি বানাচ্ছেন কুঁড়েঘর, আবার কনকনে শীতের মাঝে নদীতীরের কাদামাটিতে তার বিপর্যস্ত ভঙ্গি জুগিয়েছে আলোচনার খোরাক।
সবশেষ জায়েদ খান কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, সিনেমার প্রয়োজনে তিনি কুমিরের ভীতি উপেক্ষা করে ঝাঁপ দিয়েছেন বিপজ্জনক কালীগঙ্গা নদীতে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত সিনেমার একটি দৃশ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে পালাচ্ছিলেন জায়েদ। এর অংশ হিসেবে পানিতে ঝাঁপ দেন জায়েদ। তার ভাষায়, ‘কুমির থাকা নদীতে’ ঝাঁপ দিতে তিনি পরোয়া করেননি। এরপর অনেকটা পথ সাঁতরাতে হয়েছে তাকে।
বিষয়টি নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠকে জায়েদ খান বলেন, ‘একটি দৃশ্য ছিল কালীগঙ্গা নদীতে আমাকে লাফ দিতে হবে। ছোটবেলা থেকেই জানি, এই নদীতে কুমির আছে, আমরা দেখেছি। ফলে লাফ দেব কি না, সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।
‘যেহেতু অভিনয় করতে এসেছি। ঝুঁকি নিতেই হবে। অবশেষে লাফ দিলাম। তারপর অনেকটা পথ সাঁতরাতে হলো। খুবই কষ্টকর একটি দৃশ্য ছিল। ফাইনালি ভালোভাবে শেষ হয়েছে।’
জায়েদ খান যে নদীকে কুমির-সংকুল বলছেন, সেটি সত্যিই তেমন কি না, তা জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নে পিরোজপুর জেলার কালীগঙ্গা নদী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘পিরোজপুর জেলা শহরের প্রবেশপথ হুলারহাট লঞ্চঘাট কালীগঙ্গা নদীতীরে অবস্থিত। নাজিরপুর উপজেলা সদর, শ্রীরামকাঠী বাজারও এ নদীর পাড়ে। নদীটি বলেশ্বর থেকে সূচিত।’
অন্যদিকে মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের লেখা বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি বইয়ে এই নদী সম্পর্কে বলা হয়েছে, কালীগঙ্গা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিরোজপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৩০ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কালীগঙ্গা নদীকে পরিচিত করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২০ নম্বর নদী হিসেবে।
এ বইয়ে আরও বলা হয়, কালীগঙ্গা নদীটি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার শঙ্করপাশা ইউনিয়নে প্রবহমান শালদহ নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা শ্রীরামকাঠী, গুয়ারেখা ও কালাখালী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পিরোজপুর সদর উপজেলার শরিকতলা-ডুমুরিতলা ইউনিয়নে প্রবাহিত কচা নদীতে পড়েছে। নদীটিতে সারা বছর পানিপ্রবাহ থাকে। নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
স্থানীয় লোকজন নিউজবাংলাকে জানান, নদীটি অনেক বছর ধরে ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে, বিশেষ করে শীত মৌসুমে এর বেশির ভাগ অংশই শুকিয়ে যায়। কেবল মধ্যবর্তী অংশে কিছু পানি থাকে।
এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, ছোট এই নদীতে কুমির আছে, এমন কিছু তারা শোনেননি।
কালীগঙ্গা নদীপাড়ের বাসিন্দা মো. সজীব সিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই নদীতে কুমির গত ১৫ বছরেও দেখা যায়নি বা শুনিনি। আমাদের চরে জায়েদ খানের শুটিং হয়েছে। আমরা সেটা দেখেছি, কিন্তু সেখানে কুমির ছিল এমন কোনো তথ্য আমরা জানি না।’
কাউখালীর রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুনেছি এই নদীতে অনেক আগে কুমির ছিল, তাও প্রায় ৩০ বছর আগের কথা, তবে বর্তমানে আছে কি না, সঠিক বলতে পারি না।’
জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারীর কাছেও কালীগঙ্গা নদীতে কেউ কুমির দেখেছে, এমন তথ্য নেই।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিরোজপুর জেলা উপকূল অঞ্চলে। তা ছাড়া সাগর ও সুন্দরবনের কাছের জেলা। সে ক্ষেত্রে কুমির থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়, থাকতে পারে, তবে কেউ দেখেছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
নায়ক জায়েদ খানের বন্ধু জুবায়ের আল মামুনও মনে করছেন এমন দাবিটি তথ্যভিত্তিক নয়।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ধু জায়েদ খানের শুটিং বেশ কয়েক দিন ধরে কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে চলছে, আমরাও দেখতে গিয়েছি। তবে কেউ কুমির দেখেছেন এমন তথ্য আমাদের জানা নেই।’
জায়েদ খান অবশ্য এখন বলছেন, স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে তিনি নিজেও কখনও কালীগঙ্গা নদীতে কুমির দেখেননি, তবে তিনি শুনেছেন।
আলোচিত এ অভিনেতা শনিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিরোজপুরে সোনার চর সিনেমার শুটিংয়ে কালীগঙ্গা নদীতে একটা সিকোয়েন্সে নদীর মাঝখানে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। এরপর অনেক দূর সাঁতরে উঠেছি এবং ওই নদীতে কুমির আছে এটা প্রকাশ পেয়েছে।’
নদীতে কুমির থাকার তথ্য দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি তো ওখানে, আমি তো সব জানি। ওখানে স্থানীয় অধিবাসীরা বলছিল কয়েক দিন আগে চরে এসে একটা গরু নিয়ে গেছে কুমিরে। ওখানে কুমির আছে আমরা জানি।’
তাহলে লোকজনের কথা শুনে এমনটি বলেছেন কি না, প্রশ্ন করলে জায়েদ খানের জবাব, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, রাইট রাইট।’
মন্তব্য