সাইফুল আলমের বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ হয়েছে বেশি দিন হয়নি, চার বছর। মাসে তিন থেকে চারবার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া হতো। চাকরির কারণে মাঝে মাঝে সময় মেলাতে পারতেন না। তবু ওই দুই-তিন দিন তার কাছে বাকি দিনের রসদ ছিল।
গত বছর করোনা আসার পর থেকে সাইফুলের জীবনের অনেক কিছুই বদলে গেছে। বন্ধুদের সঙ্গে মুক্ত আড্ডা একেবারে বন্ধ।
করোনার প্রভাবে সবাই জীবনের ছন্দ ভিন্ন তালে মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে আড্ডা দেয়া না হলেও অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন সাইফুল। মেসেঞ্জারে একটা গ্রুপ খুলে নিয়েছেন। এরপর সেখানে যোগ করেন আরও বন্ধুদের। এখন মাঝে মাঝে ভিডিও কলে সবার সঙ্গে কথা হয়।
তবে মুখোমুখি আড্ডা বা সত্যিকার ঘোরাঘুরির যে মজা সেটি ভীষণভাবে অনুভব করেন সাইফুল।
গত বছর করোনার শুরুতে হুট করে বন্ধ হয়ে যায় সবকিছু। দফায় দফায় লকডাউন আর বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে পড়ে গোটা দেশ। অনেক কিছু স্বাভাবিক হলেও স্বাভাবিক হয়নি মানুষের উন্মুক্ত চলাফেরা। হারিয়ে গেছে অনেক কিছু। বন্ধ আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, গত দেড় বছরের এই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মানুষের মনোজগতে। সামাজিক যোগাযোগনির্ভর হয়েছে সম্পর্কগুলো। আগের মতো আড্ডা আর দেখা হওয়ার বাইরেই গড়ে উঠেছে সম্পর্কগুলো।
বন্ধুত্বের ধরন যেমনই হোক না কেন, প্রতিবছর পালন হচ্ছে বন্ধু দিবস। ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৩০ জুলাইকে অফিশিয়াল ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে ঘোষণা করা হয়। তবে ভারত, বাংলাদেশসহ কিছু দেশ আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধুত্ব দিবস উদযাপন করে।
ফ্রেন্ডশিপ ডে ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ‘জয়েস হল’ ১৯১৯ সালে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে সবাইকে কার্ড পাঠাতেন। ১৯৩৫ সালে আমেরিকার সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। দিনটি ছিল আগস্টের প্রথম শনিবার। তার প্রতিবাদে পরদিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন।
আমেরিকান কংগ্রেসে ১৯৩৫ সালে আগস্টের প্রথম রোববারকে বন্ধু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৩০ জুলাই অফিশিয়াল ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে ঘোষিত হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে বন্ধু তৈরির যে সময়, সেটি হারিয়ে ফেলতে বসেছে একটি প্রজন্ম। স্কুলে আলাদা জায়গায় আড্ডা, বিকেলে খেলার মাঠে অথবা একটু বেশি বয়সে কোনো কফিশপ বা চায়ের দোকানের যে গল্পগুলো তৈরি হয়, তা এখন আর নেই। আড্ডা ছাড়াই চলছে বন্ধুত্ব।
তবে আড্ডা না হলেও এখন বন্ধু হওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যথেষ্ট। আগের মতো দেখা করা বা গল্প করা এখন সীমাবদ্ধ হয়েছে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। যেটি নিয়ে এই প্রজন্মের আফসোস থাকলেও বিকল্প কিছু পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক মো. তৌহিদুল আলম অফিসের কাজেই ব্যস্ত থাকেন। তবে শুক্রবার ও শনিবার ছুটি থাকার কারণে সময় পেলেই ছুটে যেতেন তার ক্যাম্পাসে।
আড্ডা দেয়ার সেই সময়গুলো খুব মিস করেন জানিয়ে তৌহিদুল বলেন, ‘রাতে মাঝে মাঝেই এখন অনলাইনে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি। তবে চায়ের দোকানে বসে গল্প করা, একটু হাঁটাহাঁটি করে ছবি তোলা এইগুলো আর হয় না।’
তৌহিদুলের মতো একই রকম অনুভূতি বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইন কর্মকর্তা শেখ মো. ফেরদৌস আরাফাতের।
তারা দুজনই সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরিজীবনে যোগ দিয়েছেন।
আরাফাত বলেন, ‘এবার ঈদে বাড়ি যাওয়া হয়নি। ঢাকায় খুব নিঃসঙ্গ সময় কাটিয়েছি। অনলাইনে আপনি কতটুকুই বা সময় কাটাতে পারেন। খুব ইচ্ছা হয় ছুটে বেরিয়ে পড়ি। বন্ধুদের সাথে খুনসুটি করি। করোনা একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সমাজে। এখন সবকিছুই যেন স্ক্রিনে বন্দি হয়ে আছে।’
আরাফাত আর তৌহিদুল জীবনের একটা সময় বন্ধুদের নিয়ে সময় পার করলেও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে এই সময়টা যেন থমকে আছে। শুরুতে অনলাইনে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হলেও এখন আর সেটিও হচ্ছে না। সারা দিন অনলাইনে ক্লাস ও কোচিংয়ের কারণে সেই সময় আর হয়ে ওঠে না। স্কুল বা কলেজে আড্ডা দেয়ার জায়গাগুলো স্মৃতি থেকে যেন মুছে যাচ্ছে সবার।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রাচীর কাছেও তাই বন্ধু এখন খুব অপরিচিত একটা বিষয়। সারা দিন অনলাইন ক্লাস আর কোচিংয়ের কারণে কারো সঙ্গে অনলাইনেও কথা হয় না প্রাচীর। চার দেয়ালে তার বন্ধু এখন বোন ও ভাই।
বিভিন্ন সময়ে গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্ক হয় দুই থেকে তিনজনের সঙ্গে। ভালো বন্ধুর সংখ্যা সর্বোচ্চ পাঁচজন থাকে। একজন মানুষ নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারে ২০ন জনের সঙ্গে। তবে একজন মানুষ একবারে ১৫০ জনের বেশি মানুষের কথা মনে রাখতে পারেন না।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসক হেলাল উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনকার অনলাইনভিত্তিক সম্পর্কের ভালো ও মন্দ দুই ধরনের প্রভাবই রয়েছে।
আন্তব্যক্তিক সম্পর্ক কোনো কোনো ক্ষেত্রে হ্রাস পাচ্ছে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের নতুন করে পরিচিত করতে পারছি। আগে অনেকেই অনলাইনে কথা বলতে পারতেন না। তারা এখন সেই জায়গাটা তৈরি করতে পারছেন।’
এই অধ্যাপক অনলাইন সামাজিকায়নের বিষয়টিকে ভালো বলেই অভিহিত করেছেন। এখন যে জীবনধারা, সেখানে অনলাইনভিত্তিক জীবনধারা অনেক কিছুই সহজ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে আজ শনিবার ১২ রবিউল আউয়াল ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মানব জাতির রহমত স্বরূপ প্রেরিত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোলে জন্ম নেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ঠিক একই তারিখে ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি।
এক সময় গোটা আরব সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সমগ্র আরবে বিরাজ করত নানারূপ ধর্মীয় অনাচার, কুসংস্কার ও পাপাচার লিপ্ত। ইসলামের ধারণায় এ সময়কে বলা হয় আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকার যুগ। ‘আইয়াম’ শব্দের অর্থ সময় বা যুগ ও ‘জাহেলিয়া’ শব্দের অর্থ অজ্ঞতা বা তমসা।
সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে ‘তমসা’ বা ‘অজ্ঞতার যুগ’ বুঝায়। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তি ও তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতাআলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে পৃথিবীতে শেষ নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেন। তাঁর জীবনাদর্শ (সুন্নাহ) ইসলামের ভিত্তি।
মুহাম্মাদ (সা.) এর জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। মাত্র বছর বয়সে তিনি তাঁর মাকে হারানোর পর প্রথমে তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিব ও পরে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হন। মহানবী (সা.) অল্প বয়সে হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ’র ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) খাদিজা (রা.) নামের এক ধনাঢ্য নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত প্রাপ্ত হন ও আল্লাহতাআলার নৈকট্য লাভ করেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মহফিল।
পবিত্র দিনটি উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানসহ সারা দেশে ব্যাপক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
শুক্রবার বাদ মাগরিব বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ আ. আউয়াল হাওলাদার প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন।
বিশ্বনবীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বাদ মাগরিব থেকে শুরু হওয়া ওয়াজ মহফিল আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। ১৫ দিনব্যাপী বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ পূর্ব সাহানে এতে বয়ান করবেন দেশবরেণ্য আলেম-ওলামারা।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে জাতীয় মসজিদের পূর্ব ও দক্ষিণ সাহানে মাসব্যাপী ইসলামি বই মেলারও আয়োজন করা হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে এ মেলা। চলবে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। মেলায় মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান ও লেবাননের পুস্তক প্রকাশনা সংস্থাসহ দেশবিদেশের প্রায় ২ শ’টি স্টল স্থান পাবে মেলায়।
আগামী ১৫-১৬ সেপ্টেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আগারগাঁও কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরীর স্কুল, কলেজ, আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। কিরআত, আযান, হামদ-না’ত, রচনা, কবিতা, উপস্থিত বক্তৃতা ও আরবিতে খুতবা লিখন- এ সাতটি বিষয়ে প্রতিযোগিতা হবে।
জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর বাদ মাগরিব ক্বিরাআত মহফিল, ১৭ সেপ্টেম্বর বাদ মাগরিব হামদ-না’ত ও ১৮ সেপ্টেম্বর বাদ আসর রাসূল (সা.) শানে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর আয়োজন করা হবে। এতে দেশের প্রখ্যাত ক্বারী, কবি ও শিল্পীরা অংশ নিবেন।
এছাড়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৬টি ইসলামিক মিশন ও ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে- মহানবী (সা) এর জীবন ও কর্ম সম্পর্কিত ওয়াজ মহফিল এবং ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন।
সঙ্গে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৭ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ‘জশনে জুলুস’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম এ জশনে জুলুস (শোভাযাত্রা) ৫৪তম বারের মত আয়োজন করছে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ও ১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষ্যে রাজধানীতে জশনে জুলুস শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুফিবাদী জনতার অংশগ্রহণে এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়া।
শনিবার সংগঠনের সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহসুফি ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে এ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম গেট থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রা দোয়েল চত্বর, শিক্ষা ভবন ও কদম ফোয়ারা সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার উদ্যানে এসে শান্তি মহাসমাবেশে মিলিত হয়।
এদিকে সকালে জামালপুরে জেলা মডেল মসজিদ মিলনায়তনে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৭ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা ও দোয়া মহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ধর্ম সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক। জামালপুর জেলা প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এস এম তরিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়াও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে বিভিন্ন মিশন, দূতাবাস ও হাইকমিশনেও যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দঘন এই দিনটি।
মেহেরপুরে বিদেশি পিস্তল, নকল পিস্তল, ম্যাগজিন, তিনটি ওয়াকিটকি সেট, মাদকদ্রব্য ও সরঞ্জামাদিসহ তিন কিশোর গ্যাং গ্রুপের তিন সদস্যকে আটক করেছে যৌথবাহিনী।
আজ শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাত থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন— মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়পাড়ার আব্দুর রশিদের ছেলে আকাশ ওরফে শাকিল (২৬), বোসপাড়ার জসীম উদ্দীনের ছেলে সজিব (২৭) এবং হালদারপাড়ার হামিদুর শেখের ছেলে রায়হান (৩৬)।
যৌথবাহিনীর সূত্র জানায়, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মেহেরপুর আর্মি ক্যাম্পের নেতৃত্বে একটি সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি আকাশ গ্যাংয়ের প্রধান আকাশ ও তার অপর দুই সদস্য রায়হান ও সজিবকে আটক করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, একটি নকল পিস্তল, তিনটি ওয়াকিটকি সেট ও চার্জার, মাদকদ্রব্য এবং মাদক ব্যবহারের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
অভিযান শেষে আটক ব্যক্তিদের এবং জব্দকৃত মালামাল র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, পিডিবিএফের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতির অভিযোগের কথা শোনা যায়নি। আর স্বচ্ছ, পক্ষপাতিত্ব-স্বজনপ্রীতি মুক্ত ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ হলে নিয়োগপ্রাপ্ত সকলেই আমাদের ও দেশের সম্পদ হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে ‘পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) নবনিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওরিয়েন্টেশন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সদ্য যোগদান করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘উৎকোচ কিংবা ঘুষ ছাড়া আপনারা নিয়োগ পেয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটাবেন। জনগণ ও সেবাপ্রার্থীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেবেন, এই প্রত্যাশা করি।’
জাতীয় চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম দারিদ্র্য বিমোচন, মাঠ পর্যায়ে দারিদ্র বিমোচনে এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে সদ্য যোগদান করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিয়োগ পিডিবিএফের এই নিয়োগ। দীর্ঘদিন পরে পিডিবিএফে নিয়োগ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বেকারত্ব দূর করতে বদ্ধ পরিকর, প্রায় সকল মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
চলতি বছরের মার্চ মাসে ৩টি পদে ১ হাজার ৬৬৫ জন জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিডিবিএফ। যার মধ্যে উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা পদে ১৫৫ জন, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে ৩৩৫ জন এবং মাঠ কর্মকর্তা পদে ১ হাজার ১৭৫ জন রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. ইসমাইল হোসেন।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহমুদ হাসান।
পরে উপদেষ্টা পাইকপাড়া সরকারি ডি-টাইপ কলোনিতে অবস্থিত মডেল একাডেমি, মিরপুরে ‘বীর শহীদ আহনাফ গ্রন্থাগার’ উদ্বোধন করেন।
গ্রন্থাগার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্কুল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘শহীদ আহনাফ আপনাদের বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী যা অত্যন্ত গর্বের, আপনারা নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলবেন। নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে, বাংলাদেশ আর কখনো ফ্যাসিবাদের দিকে যাবে না এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
উল্লেখ্য, বীর শহীদ আহনাফ আহমেদ বিএএফ শাহীন কলেজ, ঢাকার একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ এ শহীদ হন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুপম জীবনাদর্শ, সর্বজনীন শিক্ষা ও সুন্নাহর অনুসরণ আজকের এ দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় বিশ্বে শান্তি, ন্যায় এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।
‘পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.)’ উপলক্ষ্যে দেওয়া আজ শুক্রবার এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ বিশ্ববাসীর জন্য উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং এর মধ্যেই মুসলমানদের জন্য অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে।’
বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সর্বশেষ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) সারাবিশ্বের মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত একটি দিন উল্লেখ করে এ উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে সমগ্র মানবজাতির হেদায়েত ও নাজাতের জন্য প্রেরণ করেছেন। নবী করিম (সা.) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে নবী, আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য কেবল রহমতরূপে প্রেরণ করেছি’ (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)। হজরত মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়ায় এসেছিলেন ‘সিরাজাম মুনিরা’ অর্থাৎ আলোকোজ্জ্বল প্রদীপরূপে। সব ধরনের কুসংস্কার, অন্যায়, অবিচার, দাসত্ব ও পাপাচারের অন্ধকার থেকে মানুষকে মুক্তি ও আলোর পথ দেখাতে শান্তি, প্রগতি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তিনি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আল্লাহর প্রতি অসীম আনুগত্য ও ভালোবাসা, অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, অপরিমেয় দয়া ও মহৎ গুণের জন্য পবিত্র কুরআনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনকে বলা হয়েছে ‘উসওয়াতুন হাসানাহ্’ অর্থাৎ সুন্দরতম আদর্শ। তিনি বিশ্ব মানবতার জন্য যে অনিন্দ্য সুন্দর অনুসরণীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন, তা প্রতিটি যুগ ও শতাব্দীর মানুষের জন্য মুক্তির দিশারী হিসেবে পথ দেখাবে।’
পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) সকলের মাঝে বয়ে আনুক অপার শান্তি ও সমৃদ্ধি এই কামনা করে তিনি বলেন, ‘সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ঐক্য আরো সুসংহত হোক। মহানবী (সা.)-এর সুমহান জীবনাদর্শ লালন ও অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তি সুনিশ্চিত হোক—এ কামনা করি। আমিন।’
১২ রবিউল আউয়াল ও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যাণ হতে আঞ্জুমানে রহমানিয়ার মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়ার সভাপতি ও বিএসপি চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে লাখো নবীপ্রেমী সুফিবাদী জনতার অংশগ্রহণে জাঁক-জমকভাবে জশনে জুলুস র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার(৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিমদিক থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি দোয়েল চত্তর, শিক্ষা ভবনূ? ও কদম ফোয়ারা সড়ক প্রদক্ষিন করে আবার পশ্চিম গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তি মহাসমাবেশে মিলিত হয়।
ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লাখো ধর্মপ্রাণ সুফিবাদী জনতা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হন। এবার ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) এর ১৫০০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ও মানুষের মধ্যে ছিল ব্যপক উচ্ছ্বাসও উদ্ধিপনা।
শোভাযাত্রার অগ্রভাগে বড় অক্ষরে লেখা ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা’, ‘ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা’। অংশগ্রহণকারীদের হাতে কালেমা খচিত পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন। তারা বিশাল জাতীয় পতাকা বহন করে রাজধানীর রাস্তাঘাট মুখরিত করে তোলেন। চারদিকে ধ্বনিত হতে থাকে নারায়ে তাকবির ও নারায়ে রিসালতের স্লোগান। অংশগ্রহনকারীদের গায়ে ছিলো সাদা টিশার্ট মাথায় সাদা ক্যাপ।শোভাযাত্রা শেষে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শান্তি সমাবেশে নারীদের ও অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএসপি’র চেয়ারম্যান শাহসূফী ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বলেন, মহানবী (দ.) সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণকর সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
রাসূলুল্লাহ (দ.) আমাদের সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার দীক্ষা দিয়েছেন। অথচ আজ পৃথিবী জুড়ে চলছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, সন্ত্রাস ও অমানবিকতা। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো প্রিয় নবীর শিক্ষা বাস্তবায়ন।
বিএসপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের উচিত ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)-এর পবিত্র বার্তা হৃদয়ে ধারণ করে ব্যক্তি, পরিবার ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তা প্রয়োগ করা। তবেই সমাজে শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার আলো ছড়িয়ে পড়বে।
মন্তব্য