‘বাজান সকাল থাইকান বসে আছি। আইতে একটু লেট কইরা ফালাছিলাম তাই বকশিস পাই নাই। নাতনিডাও আমার সাথে আইয়া বইছিল। ওর মনডি খারাপ। আপনে কি নিউজ করবার জন্য জিগাইলেন। আমাগো নাম দিয়েন না। লজ্জা লাগে।’
কথাগুলো বলছিলেন সিদ্ধেশ্বরী জামে মসজিদের পাশে বসে থাকা জাহানারা বেগম (ছদ্মনাম)। সকালে ঈদের জামাতের পর মুসল্লিরা রাস্তায় বসে থাকা জাহানারা বেগমের মত আরও অনেককে বকশিস দিয়ে থাকেন। যার যেমন মানসিকতা ও সাধ্য তাই দান করেন জাহানারা বেগমদের।
রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় গত একমাস ধরেই রাতের তারাবি নামাজের পর ছিন্নমুল মানুষদেরকে মসজিদের আশেপাশে ভিড় করতে দেখা যায়। উদ্দেশ্য একটাই, বকশিসের টাকা সংগ্রহ। মানুষের বাসায় কাজ করার পাশাপাশি এই টাকা দিয়েই ঈদ পালন করেন তারা।
জাহানারা বেগমের নাতনি রাজধানীর একটি মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ঈদ উপলক্ষে দান থেকে একটা জামা পেয়েছে সে। জামাটা গায়ের চেয়ে কয়েক সাইজ বড়; হাতে পরেছে কিছু পুরান চুড়ি।
ঈদে নাতনির জন্য কিছু কিনতে পেরেছেন কি না জানতে চাইলে জাহানারা বলেন, ‘না বাজান। যেই বাড়িতে কাজ করি হ্যাতেরা একটা জামা দিছে। কিন্তু সেটাও নাতনির পরনে একটু বড় হইয়া গ্যাছে। কী আর করুম। বলছি এইডাই পর। টাকা তুলবার পারলে পরে কিনা দিবনে।’
এমনই আরেকজন শিউলি আক্তার (ছদ্মনাম)। একটা বাসায় কাজ করেন। মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা পান। তা দিয়ে সংসার চালানো দায়। ঈদের দিন সকালে একটু সেমাই রান্না করেই অবস্থান নেন মগবাজারের শাহ আলী মাজার মসজিদ পাশে।
বললেন, ‘অনেকেই ট্যাকা দিসে। এইখানে নাকি আরও আগে থাইক্যা ট্যাকা দিতাছে। আমার দেরি হয়ে গেছে। আগে আসলে আরও বেশি পাইতাম।’
মালিবাগ থেকে মগবাজার মূল রাস্তার উপর দিয়ে উঠে গেছে ফ্লাইওভার। এই ফ্লাইওভারের নিচে বসতি গড়ছে অনেক ছিন্নমূল মানুষ। মানুষের বাসায় কাজ করে অথবা ভিক্ষা করে দিননিপাত করেন তারা।
কথা হয় সাত বছর বয়সী জ্যোৎস্নার সঙ্গে। ফ্লাইওভার এর নিচে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মা গেছে বাইরে।
জ্যোৎস্না বলল, ‘সকাল থাইক্যা মা নাইতো। একটা জামা রাইখ্যা গেছিল। এই যে লাল রঙয়ের। এইডা পরছি।
মা কই জানতে চাইলে জ্যোৎস্না বলে, ‘মা তো টাকা আনতি গেছে। সকাল থিকা দেখি নাই।’
রাজধানীতে শুক্রবার ছিন্নমূলদের এভাবেই কেটেছে ঈদের সকাল-বিকেল। ঈদের বকশিস অনেকের জন্য ধরা দিয়েছে আয়ের অন্যতম উপলক্ষ হয়ে। সঙ্গে ভালো খাবার তাদের কাছে বাড়তি পাওনা।
রিকশাচালক হযরত আলী একাই থাকেন ঢাকাতে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া মেয়ে বৃহস্পতিবার ফোন দিয়ে বাবাকে বাড়ি ফিতে বলেছে। তবে বাড়ি ফেরার মত পুঁজি তার হয়নি।
নিউজবাংলাকে হযরত বলেন, ‘আমার মায়াডা সিক্সে পড়ে। লালমনিরহাট বাড়ি আমার। কিছু কিনে দিবার পারি নাই। পাঁচশ টাকা ওর মাকে পাঠায়ছি। এই টাকায় কি হয়। দুইমাস ধরে ছিড়া লুঙ্গি পিন্দা আছি মামা। কি করুম কোন। লকডাউনে তো সব শ্যাষ। বাড়িত যামু তয় গাড়ি নাই। মেলা ট্যাকা লাগে। সকাল থিকাই রিকশা নিয়ে বের হয়েছি।’
ঢাকায় হযরত আলীর মত মানুষের সংখ্যা নেহাত কম না। তাদের নির্দিষ্ট ঘড়বাড়ি নেই। ফুটপাথ বা ফ্লাইওভারের নিচে কোনোভাবে রাত যাপন করেন।
ঢাকায় ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে সাজেদা ফাউন্ডেশনের ‘আমরাও মানুষ’ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। ওই প্রকল্পের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সালে ঢাকা শহরের দেড় কোটি মানুষের মধ্যে বর্তমানে অনুমানিক ২০ থেকে ২২ হাজার লোক ফুটপাতে বসবাস করে। তাদের অনেকে ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে ফুটপাতে বসবাস করছে।
আরও পড়ুন:শুক্রবার (২৩ মে) সকাল ৮টা থেকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। শনিবার (২৪ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৬৭০ জনে। আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৯ জনের।
এতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ছিল ০ দশমিক ০০ শতাংশ। মোট করোনা পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এ নিয়ে করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৯ জনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ঈদের আগেই বাজারে ১ হাজার, ৫০ ও ২০ টাকার নতুন নোট আসছে। তবে টাকায় কোনো ব্যক্তির ছবি থাকবে না।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্মী-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অডিটোরিয়ামে ক্রেডিট এনহেন্সমেন্ট স্কিমের (সিইএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ’র চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘আমাদের টাকা ছাপানো শুরু হয়ে গেছে। তিনটা নোট আসছে শিগগিরই। সেটা হচ্ছে ১ হাজার টাকার নোট, ৫০ টাকা ও ২০ টাকা। এই নতুন নোট ঈদের আগেই আমরা পাবো। এখানে কোন ব্যক্তির ছবি থাকবে না। নতুন নোটে থাকবে দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা।’
এসময় বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ায় তা ফেরত পাঠাতে চাপ তৈরি হয়েছে। এর ফলেই দেখলাম ব্রিটিশ ক্রাইম এজেন্সি কিছু সম্পদ ফ্রিজ করেছে। পাচার করা অর্থ ফ্রিজ করায় অর্থ ফেরত আনার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। পাচারের টাকা ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড ক্রেডিট এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এই স্কিমের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া সহজ হবে, যা এতদিন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) পক্ষে সংগ্রহ করা কঠিন ছিল।
গভর্নর বলেন, ‘স্কিমের আওতায় পিকেএসএফ অংশীদার এমএফআইগুলোকে ২৪০ কোটি টাকার রিজার্ভ তহবিল ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ গ্যারান্টি দেবে। ঋণের গ্যারান্টি অনুযায়ী এককালীন শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমিশন আদায় করা হবে। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ হবে।
সরকার ও এডিবির সহায়তায় এই পাইলট প্রোগ্রামে আজ পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক ও একটি নন ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে জানান তিনি। আর্থিক সাক্ষরতা বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে প্রতিটি স্কুলের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।
তিনি বলেন, মাইক্রো ফাইন্যান্স সেক্টর যদি অটোমেটেড হয়ে যায়, ইফিশিয়েন্টলি কাজ করে তাহলে পরিচালন ব্যয় অনেক কমে যায়। যারা দক্ষ হবে তারাই টিকে থাকবে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে। আমরা রেগুলেটরি ইন্টারভেনশন করবো না।
দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা আজ সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বসছেন। বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হবে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য়।
এর আগে একনেক বৈঠক শেষে উপদেষ্টা পরিষদের একটি অনির্ধারিত বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রধান উপদেষ্টা শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠকে বসবেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সন্ধ্যা ৭টার দিকে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসবে বলে জানিয়েছেন দলের এক স্থায়ী কমিটির সদস্য। শুক্রবার রাতে তিনি জানান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও পৃথক বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিএনপির ওই নেতা জানান, রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করা ও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি নিরসনের লক্ষ্যে তারা এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দেশকে নতুন সংকটে ফেলবে বলে তাদের মত।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রবিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারা তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবেন এবং দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচনের একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে অনুরোধ জানাবেন।
এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এক বেসরকারি টেলিভিশনে বলেন, ‘আমরা সোমবার থেকেই সময় চেয়ে আসছি, কিন্তু এখনো তা দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইনি, কেবল কিছু বিতর্কিত উপদেষ্টার অপসারণ চেয়েছি। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছি। তিনি যদি রোডম্যাপ না দিয়ে পদত্যাগ করতে চান, সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত—কিন্তু আমরা পদত্যাগ চাইনি।’
বৃহস্পতিবার বিএনপি হুশিয়ারি দিয়ে জানায়, নির্বাচনের রোডম্যাপ অবিলম্বে না এলে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা পুনর্বিবেচনা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নিরপেক্ষতা ও সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থে সদ্য গঠিত একটি রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ কয়েকজন বিতর্কিত উপদেষ্টাকে সরাতে হবে।
এদিকে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও সেনাপ্রধানের বক্তব্যে হতাশ হয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগের কথা বিবেচনা করছেন।
সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, তার স্ত্রী তাহমিদা বেগম ও পুত্র শেখ লাবিব হান্নানের নামে থাকা ৩৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দুদক-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
দুদক-এর আবেদন সূত্রে জানা যায়, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান শেখ আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধন, ঘুষ গ্রহণ, নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং বিদেশে অর্থ পাচারসহ নিজের ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
আবেদনে আরো বলা হয়, এ সব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানকালে আরো জানা যায়, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর, স্থানান্তর বা গোপন করার চেষ্টা করছেন। যদি এ সব সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে সেগুলো পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে শেখ আব্দুল হান্নান ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
পবিত্র ঈদুল আজহা সমানে রেখে জমতে শুরু করেছে জেলার ৫টি পশুর হাট।
সপ্তাহে ১দিন করে এ পশুহাটে গুরু-ছাগল কেনাবেচা হয়। পশুহাটগুলো হলো আলমডাঙ্গা পশু হাট, প্রতি সপ্তাহে বুধবার এ হাটটি বসে। ডুগডুগি পশু হাট সোমবার বসে।
শিয়ালমারি পশুহাট বৃহস্পতিবার বসে, গোকুলখালি পশুহাট শুক্রবার ও ৯ মাইল ভূলটিয়া পশু হাট বসে শনিবার। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও বেশি কেনাবেচা হয় আলমডাঙ্গা পশু হাটে। সাপ্তাহিক এই পশুহাটগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতা বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
কুরবানির হাট উপলক্ষে খামারি ও কৃষকেরা তাদের গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন হাটে। গরু ক্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে পশুহাট।
আজ শনিবার সদরের ৯ মাইল ভূলটিয়া পশু হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু ও ছাগল পালনকারীরা তাদের পশু নিয়ে হাটে আসছেন। গরু-ছাগলের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আজ হাটে ক্রেতা কম। দূর থেকে ব্যাপারীও কম এসেছে। হাট মালিক নাজিম উদ্দিন বলেন, হাটে বেচাকেনা কিছুটা কম। আগামী হাটে গরু-ছাগল বেশি উঠবে, বেচাকেনা বেশি হবে বলে আশা করছি। বর্তমানে ৩ মন মাংস হবে এমন গরু ৯০/৯৫ হাজার টাকায় বেচা কেনা হচ্ছে। এর থেকে বড় অর্থাৎ ৬/৭ মন ওজনের গরু কিনলে দাম কিছুটা কম হবে। কোরবানির আগে ৯ মাইলে আগামী শনিবার আর মাত্র ১টি হাট বসবে।
গত বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক শিয়ালমারি পশুহাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতে বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও গরু কেনাবেচা তেমন বাড়েনি। অনেকেই হাট ঘুরে ঘুরে কুরবানির গরু ও ছাগল পছন্দ করে বেড়াচ্ছেন। কেউ আবার দরকষাকষি করছেন। যেহেতু কোরবানি সময় এখনও ১৫ দিন বাকী রয়েছে। সেই কারণে অনেকেই অপেক্ষা করছেন। আবার কেউ দুই এক দেখে আগামী হাটে কেনার পরিকল্পনা করছেন।
অধিকাংশ ক্রেতারা দেশি জাতের মাঝারি সাইজের গরু পছন্দ করছেন। ১ লাখ টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে গরু গুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। বড় বড় গরু নিয়ে খামারিদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বিশেষ করে দুই লাখ টাকার বেশি দামের গরু গুলো কম বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গরু বিক্রি করতে আসা খামারি সামাদ আলী বলেন, কুরবানির হাটে বিক্রি করবো বলে তিনটি গরু বাড়িতে পুষে আজ বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। গরু নিয়ে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি তেমন কেউ গরুর দামই জিজ্ঞেস করছে না। একজন পার্টি তিনটি গরু সাড়ে ৫ লাখ টাকা দাম বলেছে। অথচ ২ মাস আগে এই তিনটি গরুর দাম বলেছিলো ৭ লাখ টাকা। বর্তমান বাজারে গরুর খুদ, ভূষি, বিচালির দাম অনেক বেশি। গরু তিনটি লালন পালন করতে যত টাকা ব্যয় হয়েছে তাতে করে এই দামে বিক্রি করলে অনেক টাকা লোকসান হয়ে যাবে। আরেক গরু বিক্রেতা শাহজামাল হোসেন বলেন, একটি দেশি জাতের গরু বাড়িতে লালনপালন করে আজ বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। হাটে আসার সাথে সাথে অনেকেই গরুর দাম দর শুরু করে দেয়। আনুমানিক ৪ মনের ওজনের গরুটি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি।
কুরবানির ছাগল কিনতে আসা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে একটা কুরবানির ছাগল কিনতে এসেছি। হাটে অনেক ছাগল এসেছে দেখছি।
দামদরে যদি সস্তা মনে হয় তাহলে কিনবো তা না হলে আগামী সোমবার ডুগডুগি পশুহাট থেকে কিনবো। পশুহাটে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা মূল্যের অনেক বড় গরু আমদানি হয়েছে। কিন্তু বড় গরু বিক্রি অনেক কম হতে দেখা গেছে। তবে ১ থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে গরুগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলার ৪ উপজেলায় কোরবানি উপযোগী গরু পালন করা হয়েছে ৫১ হাজার, ছাগল পালন করা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ও ভেড়া পালন করা হয়েছে ৩ হাজার ৯শ। জেলায় সব মিলিয়ে কোরবানির জন্য গরু, ছাগল ও ভেড়া প্রয়োজন ১ লাখ ২৪ হাজার। অতিরিক্ত পশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর এনবিআর প্রধান কার্যালয়ের সামনে সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার (২৪ মে) সকাল থেকেই এনবিআর ভবনের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনবিআর কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা জেনেছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ এনবিআর চেয়ারম্যান কার্যালয়ে আসার কথা রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ সরকারি, আধা-সরকারি অফিস, ব্যাংক, স্কুল-কলেজ খোলা রয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
এর আগে, বুধবার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সব ধরনের অসহযোগিতাসহ একাধিক নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার সকাল থেকে এনবিআর ভবনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেয় কর্মকর্তারা।
সংগঠনের বিবৃতি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারাদেশের এনবিআর কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
আগামী ২৪ ও ২৫ মে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব কার্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হবে, কাস্টমস হাউস ও এলসি স্টেশন বাদে। রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির বাইরে থাকবে।
২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা বাদে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব কার্যালয়ে পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সংগঠনটি। বুধবার এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের অবিলম্বে অপসারণের নতুন দাবি যোগ করেছে সংগঠনটি।
এর আগে, সংগঠনের তিনটি প্রধান দাবি ছিল—প্রথমত, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; দ্বিতীয়ত, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে; এবং তৃতীয়ত, এনবিআরের প্রস্তাবিত খসড়া ও উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনার পর সব স্টেকহোল্ডার—অকাঙ্ক্ষী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য ও টেকসই রাজস্ব সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।
এদিকে, এনবিআরের কাস্টমস, ভ্যাট ও ট্যাক্স বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের একটি অ্যাড হক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এক কিলোমিটার কাঁচা সড়কের জন্য যুগের পর যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের চর ইসলামপুর, চর ইছামতি ও গোবিন্দপুর গ্রামের মানুষ। সারা দেশে বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ কাঁচা সড়ক পাকা হলেও বদলায়নি চর ইসলামপুর ও গোবিন্দপুর সড়কের চিত্র। বেহাল এ কাঁচা সড়কটির কারণে বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের ১০ হাজার মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দ্রুত রাস্তাটি পাকাকরণের দাবিতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগে আবেদন দিয়েও মেলেনি উন্নয়নের প্রকল্প।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিতে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। এ সড়কের কারণে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েছে এলাকা। সারা দেশে গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া, কাঁচা সড়ক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এ সময় সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের চর ইসলামপুর ও গোবিন্দপুর গ্রামের সড়কটি দেখলে বোঝা যায়, কতটা নাজুক জায়গাটি।
আধুনিক যুগে এসেও এভাবে কাদা মাড়িয়ে চলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, বারবার আশ্বাস দিলেও কথা রাখেননি জনপ্রতিনিধিরা। বহুলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর পশ্চিমপাড়া আবু সিদ্দিকের বাড়ি-সংলগ্ন হেরিংবোন রাস্তার মাথা থেকে চর ইসলামপুর ইছামতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তাটি পাকাকরণের দাবিতে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগে আবেদন দিয়েও রাস্তাটি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ কৃষিপণ্য শহরে নিতে ভোগান্তি পড়ে এ অঞ্চলের মানুষ।
স্থানীয় শিক্ষক মো. আবুল হাসেম, আসাদুজ্জামান মানিক ও সুমাইয়া ইসলামের ভাষ্য, শিশুদের লেখাপড়া, কৃষিকাজ, ফসল আনা-নেওয়া, গ্রাম থেকে শহরে যেতে নানাভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিতে কষ্টের সীমা থাকে না। অনেক সময় এলাকাবাসী নিজেরাই ইটের খোয়া ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা করেন। এতে বর্ষায় ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। একটু বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ কাদা মাড়িয়ে চলতে হয় মানুষকে। কাঁচা সড়কের বেহালদশার কারণে সন্তানদের বিয়ে দিতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে অভিভাবকদের। প্রতিদিন চর ইসলামপুর ইছামতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কওমি মাদ্রাসা, মসজিদে যেতেও দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। একটি সড়কের কারণে আর্থসামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছে এ তিনটি গ্রামের মানুষ। সড়কটি পাকা করতে বারবার আশ্বাস দিলেও কথা রাখেননি জনপ্রতিনিধিরা। দ্রুত সড়কটি পাকা করে ভোগান্তি নিরসনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
চর ইসলামপুর ইছামতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, বহুলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর পশ্চিমপাড়া আবু সিদ্দিকের বাড়ি-সংলগ্ন হেরিংবোনবন্ড রাস্তার মাথা থেকে চর ইসলামপুর ইছামতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তাটি পাকাকরণের দাবিতে প্রায় ২ বছর আগে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগে আবেদন দিয়েছি। পরবর্তী সময় সরেজমিনে প্রকৌশলীরা এসে সড়কটি পরিদর্শন করে মাপ-জরিপ করে নিয়ে গেলেও এখনো সড়কটির কাজ শুরু হয়নি। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ তিনটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না। সবাই মিলে একাধিকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো কাজ করেননি। ভোগান্তি নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
সিরাজগঞ্জের স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী রোমানা আফরোজ বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। রাস্তাটি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে রাস্তাটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য