সড়ক সুনসান। কোথাও শোভাযাত্রা নেই, ঢাকঢোলের আওয়াজ নেই। মাঝে মাঝে কেবল পুলিশের বাঁশির শব্দ ভেসে আসছে।
ক্যাম্পাসগুলোও ফাঁকা। মেলা নেই, সাউন্ড সিস্টেম থেকে ভেসে আসা বাউল সুর নেই, উজ্জ্বল রঙের শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরা তরুণ-তরুণীদের ভিড়ও নেই। এ যেন এক অন্য পয়লা বৈশাখ। অন্য নববর্ষ।
অনলাইনে কেউ গাইছে হয়তো, কিন্তু জনারণ্য থেকে ভেসে আসছে না বৈশাখের সেই আগমনী গান- ‘এসো হে বৈশাখ’, কোথাও বাজছে না- ‘মেলায় যাইরে’। সুর নেই, রং নেই, প্রাণের উচ্ছ্বাস নেই- তবু আজ নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়।
আজ পূর্ব দিগন্তে যে সূর্য উদিত হয়েছে, তা প্রতিদিনকার মতো হলেও, সে নিয়ে এসেছে এক নতুন বার্তা। নতুন দিনের বার্তা। এ যে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়।
এক আজব অসুখ এসেছে পৃথিবীতে। যা কেড়ে নিয়েছে মানুষের সব উদযাপন আর উৎসব। রূদ্ধ করে দিয়েছে মানুষে মানুষে মিলনের পথ। করোনাভাইরাস নামক সেই অণুজীবের কারণে এবারও পয়লা বৈশাখ, যা কি না, বাঙালির সার্বজনীন উৎসব- তা পালিত হচ্ছে উৎসবহীনভাবে; গৃহবন্দি থেকে।
বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই দেশে শুরু হলো ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। তাই এবার ভিড়ে নয়, নীড়েই পালিত হচ্ছে বর্ষবরণ উৎসব।
বাঙালির আত্মোপলব্ধি আর আত্মজাগরণের কবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন- ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী, কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ!’
কিন্তু এবার প্রতিদিনকার ক্ষুদ্র মানুষের মহৎ হয়ে ওঠার আর সুযোগ কই! মানুষের সঙ্গে একত্র হওয়ার সুযোগই যে বন্ধ! মিলনের এই উৎসবের দিনেও শহরে মাইক লাগিয়ে প্রচারণা চলছে- ‘দূরত্ব বজায় রাখুন’, ‘জনসমাগম এড়িয়ে চলুন’।
গত বছরও এমন হয়েছিল। করোনার কারণে গত নববর্ষও কেটেছে ঘরে বসে, উৎসবহীনভাবে। গত বছর মনে হয়েছিল, এই বছরটা অন্তত বেঁচে থাকা যাক। আগামীবার উৎসব হবে। কিন্তু করোনা এমন ঘাঁটি গেড়েছে যে, তা আর সহজে যেতে চাচ্ছে না। এবার বরং আরও জেঁকে বসেছে। ফলে আজ থেকে ঘর হতে বের হওয়া বারণ।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু মনে করেন, আগে জীবন, পরে উৎসব। বেঁচে থাকলে অনেক উৎসব করা যাবে। আর বেঁচে থাকার জন্য এখন ঘরে থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের আয়োজন করি। এবার সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও করোনার কারণে উৎসব বন্ধ রেখেছি। আশা করছি, আগামী বছর করোনা চলে যাবে। আগামী বছর আরও বড় করে উৎসব হবে।
ঢাকায় যেমন ছায়ানট, তেমনি সিলেটে বর্ষবরণ উৎসবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ‘আনন্দলোক’। রবীন্দ্রসংগীত চর্চাকারী এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি বছর ‘শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ’ মাঠে আয়োজন করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। গত বছর থেকে যা বন্ধ রয়েছে।
এই উৎসব, আয়োজন নিয়ে রয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠীর অপপ্রচারও। তবে এগুলো বর্ষবরণ উৎসবে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন আনন্দলোকের প্রতিষ্ঠাতা রানা কুমার সিনহা। করোনা চলে গেলেই আরও উৎসবের আমেজে বর্ষবরণ করা হবে বলে মত তার।
রানা বলেন, এই যে দুই বছর ধরে উৎসব হচ্ছে না, এ জন্য সবার মনের ভেতরেই একটা খারাপ লাগা আছে। করোনা চলে গেলে মুক্ত হাওয়ায় উদযাপনের তাড়না আছে। এটা সব সম্প্রদায়ের সব বাঙালির উৎসব। এটা সব সময়ই থাকবে।
তিনি বলেন, কূপমণ্ডূকরা একটু বিরক্তির তৈরি করতে পারে হয়তো, তবে বর্ষবরণ উৎসব কখনও বন্ধ হবে না। কারণ, বেশির ভাগ বাঙালিই উৎসবপ্রিয়।
একই মত সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশুরও। তিনি বলেন, মৌলবাদের কারণে কখনওই বর্ষবরণ উৎসব বাধাগ্রস্ত হবে না। বর্ষবরণ নিয়ে বাঙালির উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা রয়েছে। তরুণরা এই উৎসবের শক্তি। তারাই এটি টিকিয়ে রাখবে। এ ক্ষেত্রে সংস্কৃতিকর্মীদেরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে প্রথম নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করে ছাত্র ইউনিয়ন, ১৯৬৮ সালে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে উদীচী প্রথমবারের মতো নববর্ষের আয়োজন করে।
আর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সিলেটে প্রথম বৈশাখী মেলার আয়োজন শুরু হয় ১৯৮৩ সাল থেকে। খেলাঘর ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উদ্যোগে নগরের মীরাবাজারে মডেল হাই স্কুল প্রাঙ্গণে প্রথম বৈশাখী মেলার আয়োজন হতো।
এ ছাড়া প্রতিবছর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজের কাছে সুরমা নদীর পাড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়।
সিলেটে ব্যাপক আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান প্রথম শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজে। ১৯৯৫ সালে ‘উচ্ছ্বাস’ নামে একটি সংগঠন প্রথমবারের মতো এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বর্ষবরণ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রতিবছর বর্ষবরণ হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও বর্ণাঢ্য আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করা হয়। এই দুই ক্যাম্পাসে তারুণ্যের ভিড় থাকে সর্বাধিক।
এ ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনও নিজ নিজ উদ্যোগে বর্ষবরণের আয়োজন করে।
নতুন বছরের প্রথম দিনে দোকানে দোকানে হালখাতাও বাঙালির ঐতিহ্য। দোকানে আসা ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো হয়, মিষ্টি খেয়ে পুরোনো ক্রেতারা পরিশোধ করে যান বকেয়া টাকা। তবে দুই বছর ধরে এই আয়োজনও বন্ধ রয়েছে।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী সঞ্জয় দে বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা হালখাতা করি। এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। বছরে এই একটিবার নতুন-পুরোনো সব ক্রেতাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত হয়। কিন্তু দুই বছর ধরে করোনার কারণে এই আয়োজন হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য