দেশের লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের থ্রিলার উপন্যাস ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ অবলম্বনে একই নামে ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেছেন কলকাতার নামকরা পরিচালক সৃজিত।
১৩ আগস্ট ভারতীয় ওয়েব প্ল্যাটফর্ম হইচইতে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটি। এতে মুসকান জুবেরী নামের এক রহস্যময়ী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ দেশের বাঁধন।
সিরিজটি মুক্তি পাওয়ার পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন অভিনেত্রী? কোন কোন বিষয় নিয়ে হচ্ছে আলোচনা?
নিউজবাংলার সঙ্গে সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আজমেরী হক বাঁধন।
ওয়েব সিরিজটা যেহেতু এখন স্ট্রিমিং হচ্ছে হইচইতে, ওটা মানুষ দেখেছেন। ভালো রিভিউ আসছে আমার কাছে। আমি দেখতে চাচ্ছিলাম যে আসলে কে কী বলছেন। কেউ কেউ আবার যেসব ত্রুটির কথা বলছেন আমি সেটাও লক্ষ্য করছি; কে কোন জায়গাটার কথা বলছেন।
এক ধরনের মাইন্ডসেট তো আমাদের থাকে। আমরা সব সময়ই আমাদের মাইন্ডসেট থেকে বের হতে পারি না। এটা আমাদের আসলে সামাজিক সমস্যা। যার কারণে নতুন কিছু গ্রহণ করার প্রবণতা কম।
এটা এমন একটি চরিত্র যে চরিত্রটা মানুষ অলরেডি জানেন। কারণ এটা তো একটা উপন্যাসের চরিত্র। এই ধরনের চরিত্র করা কিন্তু কঠিন। কারণ আমরা যখন একটা বই পড়ি তখন আমাদের মাথায় ওই চরিত্রকে আমরা দেখি। সেটার সঙ্গে যখন ভিজ্যুয়ালি মিল পাব না তখন আমার কাছে ভালো নাও লাগতে পারে।
আমি এটা মেনে নিতে চাই। কারণ আমি সবাইকে খুশি করতে পারব না। যাদের ভালো লেগেছে তারা তো খুবই ভালো বলছেন, স্পেশালি আমি এটা উল্লেখ করতে চাই যে কলকাতার দর্শক আমার কাজের প্রশংসা করছেন। এটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
এর কারণ নতুন কাউকে গ্রহণ করাটা কিন্তু অনেক বড় একটা ব্যাপার এবং সেটা তারা অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে করেছেন। কলকাতা থেকে আমি অনেক রেসপন্স পেয়েছি। আমাদের এখানকার যারা আমার পরিচিত বা পরিচিতর পরিচিত বা যারা ফেসবুকে লিখছেন তারা আমাকে অনেক ভালো ফিডব্যাক দিচ্ছেন।
একেকজন একেক রকম। আমি আসলে ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। কিন্তু ব্যাপারটা এ রকম না যে, আমি সেগুলো দেখিনি। সেগুলো জানাটাও আমার জন্য ভীষণ জরুরি বলে আমি মনে করি। কোন জায়গাগুলোতে মানুষ মনে করছেন যে, হয়তো আরেকটু বেটার হতো।
কিন্তু আমি যেটা বলছিলাম যে মাইন্ডসেট অনেক বড় একটা ব্যাপার। ওই জায়গা থেকে বের হয়ে যারা দেখেছেন, তারা ভালো বলেছেন। আর যারা বের হতে পারেননি কিংবা অন্য কাউকে ভেবে রেখেছিলেন এই চরিত্রে, তাদের জন্য একটু ডিফিকাল্ট হয়েছে।
আমার চরিত্র নিয়ে মানে মুসকান জুবেরীকে নিয়ে বেশির ভাগ রিভিউ ভালো এসেছে।
এটা খুবই স্বাভাবিক। এটা আসলে হবেই। বই পড়ার একটা সুবিধা হচ্ছে যে আমরা আমাদের মতো করে তা ভাবতে পারি বা দেখতে পারি। কিন্তু যখন আমরা একটা ওয়েব সিরিজ দেখব বা ফিল্ম দেখব, তখন সেটা দেখতে হবে পরিচালক যেভাবে দেখাতে চাচ্ছেন সেভাবে।
প্রথমত, এই ধরনের নারী চরিত্র যে হয় এটা কিন্তু আমাদের এখানে আসলে দেখে না কেউ। আমি আমাদের দেশের রাইটার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের কাছে খুবই গ্রেটফুল এই জন্য যে, এ রকম একটা পাওয়ারফুল নারী চরিত্র সে ভেবেছে।
যদিও এটা কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু বিভিন্ন লেয়ারে লেয়ারে মুশকানকে দৃঢ় করে তোলা হয়েছে।
আপনি যে লাইনের কথা বলছেন, আমি মনে করি এটা আমার দেয়া সিরিজের সবচাইতে বেস্ট ডায়লগ। আমি এই ডায়লগটা ভালোবেসেছি এবং আমি খুবই পছন্দ করেছি যে এ রকম একটা ডায়লগ আসলে মুসকান বলেছে।
শাড়িগুলো কিন্তু আমাদের এখানকার। আমি বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছি। লিনা নামের একজনকে আমি চিনি, ওর পরিচিত অনলাইন পেজ জায়া থেকে শাড়িগুলো নিয়েছি। প্রায় সব শাড়ি তার কাছ থেকে নেয়া, আমার ছিল একটা-দুটো।
এখান থেকে শাড়িগুলো নিয়ে গিয়েছিলাম কারণ ঢাকার জামদানি কলকাতায় খুব একটা পাওয়া যায় না; পাওয়া গেলেও সেগুলোর অনেক দাম। কলকাতা থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিল যে, আমি যেন আমারগুলো নিয়ে যাই।
আমরা মুসকানকে এভাবেই পোর্ট্রেট করতে চেয়েছিলাম যে সে সব সময় ঢাকাই জামদানি পরে।
আমি যখন বইটি পড়ি, তখনই আমার মুশকানকে অনেক অ্যাটার্কটিভ মনে হয়েছে। এর অন্যতম কারণ তার চরিত্রের দৃঢ়তা এবং কনফিডেন্স। আমার কাছে মনে হয়েছে যে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং শারীরিক গঠন অনেকভাবে প্রভাবিত হয় মানুষের মানসিক গঠন এবং তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে, তার আত্মবিশ্বাস দিয়ে। মুসকানের তো সেটা প্রখর।
তবে আমার কাছে সব মানুষই দেখতে ভালো। সবাই তার তার জায়গা থেকে সুন্দর।
আমার জন্য অভিনয়টা মাত্র শুরু হয়েছে। আমি অভিনয় নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে পারি না। কারণ হচ্ছে, অভিনয়ের যে টেকনিক আছে বা মঞ্চ থেকে আসলে বা প্রশিক্ষণ থাকলে বা যারা অলরেডি প্রমাণিত অভিনেতা-অভিনেত্রী তারা ভালো করে বলতে পারবেন।
আমি যেটা করেছি সেটা আমি রেহানা মরিয়ম নূরের ক্ষেত্রে করেছি এবং মুসকানের ক্ষেত্রে করেছি, সেটা হলো আমার পরিচালক যেভাবে চেয়েছেন আমি সেভাবে কাজ করেছি।
আমি খুব গুড লার্নার, আমি ভালো স্টুডেন্ট হিসেবে টিচারদের খুব পছন্দের ছিলাম। মেডিক্যালে যখন পড়েছি, সবাই আমাকে চিনত গুড স্টুডেন্ট হিসেবে।
সৃজিত যেভাবে বলেছেন আমি সেটা ভালো করেছি। আমি হয়তো কিছু জায়গায় মুশকান থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম, পরিচালক সেগুলো আমাকে ধরিয়ে দিয়েছেন।
প্রত্যেকটা সংলাপ মুসকান কেন বলছে সেটা নিয়েও আমাদের বিশ্লেষণ হয়েছে। তখন আমি সেভাবে অ্যাডাপ্ট করেছি এবং প্রচুর রিহার্সেল হয়েছে।
এখান থেকে তো আমি সংলাপ পড়ে গেছিই, ওখানে গিয়েও বিভিন্নভাবে পড়েছি। ওখানে আমি হোটেলে ছিলাম। ওখানে তো আমাকে কেউ চেনে না। আমি ব্রেকফাস্টে যাচ্ছি, জিমে যাচ্ছি আর স্ক্রিপ্ট পড়ছি। ওরা মনে করেছে আমার পরীক্ষা।
সৃজিত আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। সৃজিত আমার সহশিল্পীর সংলাপ বলতেন আর আমি আমারটা।
আমি আমার জায়গা থেকে যা যা করতে পারি সেগুলো করে রাখার চেষ্টা করেছি। আর চরিত্র বা সংলাপের যে পরিমিতিবোধ, কোন সংলাপ কখন কীভাবে বলব, সেগুলো পরিচালক আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন।
আপনি জানেন নিশ্চয়ই এই ঘটনাটা কিন্তু হয়েছে। এই অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছে এবং এই মানুষগুলো এভাবেই সারভাইব করেছে। এই ঘটনা নিয়ে মুভিও হয়েছে। এমন ঘটনা পৃথিবীতে এক্সিস্ট করে কোথাও কোথাও।
এটা পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। পরিচালক যেভাবে দেখাতে চেয়েছেন, আমি সেখানে অ্যাক্ট করেছি। আমার কোনো সমস্যা হয়নি। তবে সবার মেন্টাল স্ট্রেন্থ তো এক রকম নয়। সে জন্য দৃশ্যগুলো স্ক্রিনে আসার আগে স্ক্রলে বলে দেয়া হয়েছে।
সেকেন্ড বইটা তো আছেই। সেখানে রেস্ট্রুরেন্টের জায়গায় একটা লাইব্রেরি হওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু আমি জানি না যে সেকেন্ড সিজন হবে কি না।
যারা পড়েননি তারা পড়ে নিতে পারেন। তবে যেহেতু বই পড়ে সিরিজ দেখলে অসুবিধা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে আসলে বইটা আগেই পড়ে ফেলাটা ঠিক হবে কি না, এ বিষয়ে সাজেশন দিতে পারছি না।
তবে আমি নিজেকে ভীষণ লাকি মনে করছি এই কারণে যে, আমি এ রকম একটি চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
আমাকে তো তিন বছর সময় অনেকেই পাগল বলেছে, বলেছে যে মাথা খারাপ আমার, কী করছি।
এই কাজগুলোই তো করছি তিন বছর ধরে। আমার পরিকল্পনাতেই ছিল এভাবে কাজ করা বা এই কাজগুলো করা।
এখানে আমার যদি একটা ভুল হয়ে যেত, তাহলে হয়তো বলত যে এটা কেন করলা, আবার এখন আমি ঠিক করছি বলে বলছে যে হ্যাঁ, খুব ভালো করেছ, এরপর সব ভালো করবা।
ব্যাপারটা কিন্তু একেবারে এ রকম না। আমি একজন মানুষ, আমি ভুল করবই এবং সেটা এখন বা পরেও হতে পারে। আমার এত বড় বড় সাকসেসের পরেও আমার ভুল হতে পারে এবং এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা।
সব ভালো কাজ আমি এখন করতে পারব এটা ভাবার মতো ইমপ্র্যাকটিক্যাল মানুষ আমি না। আমি খুবই মাটিতে থাকার মতো মানুষ। আমি বাস্তবতা জানি এবং মেনে নিয়ে চলতে চাই।
আর ভালো কাজের সুযোগ তো আমার পেতে হবে। প্রথম কথা হচ্ছে, এই সুযোগটা পাওয়ার পরে সেটা আমি কাজে লাগাতে নাও পারি। আমার এখন যে মেন্টাল স্ট্রেন্থ, সেটা নাও থাকতে পারে। আগাম কিছুই বলতে পারছি না।
আমি চেষ্টা করব আমার যে কাজগুলো করার ইচ্ছা, সেগুলো আমি টাকার জন্য করব না। মানে মিনিমাম যে টাকাটা নিতে হয় সেটা নেব। আর কিছু কাজ আমাকে তো সারভাইভ করার জন্য করতে হচ্ছে, হবে। সেটাও আমি করব।
জানি না এখনও। আমি একটা কাজের অডিশন দিয়েছি অনলাইনে। সেটা দেশের না বাইরের সেগুলোও এখন বলতে চাচ্ছি না। কাজটি চূড়ান্ত হলে আনন্দ নিয়ে জানাব।
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ২৪ ঘণ্টায় বজ্রপাতে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় চারজন এবং কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে তিনজন মারা গেছেন। এসব জায়গায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত তিনজন।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লার মুরাদনগরের কোরবানপুর পূর্বপাড়ার একটি মাঠে কৃষক নিখিল দেবনাথ ও জুয়েল ভূঁইয়া পাশাপাশি জমিতে ধান কাটছিলেন। এ সময় বজ্রপাত শুরু হলে এর আঘাতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হন আরেক কৃষক নাজির।
একই সময় খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগচ্ছ গ্রামের কয়েকজন শিশু মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে এর আঘাতে ফাহাদ, জিহাদ ও আবু সুফিয়ান নামে তিনজন মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরে হাসপাতালে নিলে ফাহাদ ও জিহাদকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রাঘাতে কিশোরগঞ্জের হালালপুর গ্রামে ইন্দ্রজিৎ দাস নামে একজন মারা গেছেন। এ ছাড়া রানীগঞ্জ গ্রামে ধানের খড় ঢাকতে গিয়ে বজ্রাঘাতে ফুলেছা বেগম এবং খয়েরপুর হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে স্বাধীন মিয়া নামে এক যুবক বজ্রাঘাতে মারা গেছেন।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার বুড়িগাঙ্গাল হাওরে সকালে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান কলেজ শিক্ষার্থী রিমন তালুকদার। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হলে এর আঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে জমি থেকে খড় আনতে গিয়ে বজ্রাঘাতে নিহত হয়েছেন বিশাখা সরকার নামে এক নারী।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোণার মদনে আজ মাদরাসায় যাওয়ার পথে বজ্রাঘাতে আরাফাত মিয়া নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে রোববার রাতে বজ্রাঘাতে মারা যান মাদ্রাসা শিক্ষক দিদারুল। মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অলিদুজ্জামান জানান, আরাফাত নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর বজ্রাঘাতে মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, সোমবার দুপুরে কালবৈশাখী ঝড় হয় চাঁদপুরের কচুয়ায়। ঝড়ের সময় বজ্রপাতের বিকট শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে বিশকা রানী সরকার (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার উত্তর কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের নাহার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বিশকা রানী নাহারা গ্রামের পূর্বপাড়া মন্দির ওয়ালা বাড়ির হরিপদ সরকারের স্ত্রী।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের বেপারীকান্দি এলাকায় বজ্রাঘাতে এক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তার নারীর নাম শেফালী বেগম (৩৫)। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ছোরহাব বেপারীর স্ত্রী।
নিহতের পরিবার জানায়, দুপুরে তিনি ও তার স্বামী গরুর জন্য ঘাস আনতে বিলে যান। ফেরার সময় বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। সেখানে বজ্রাঘাতে শেফালী আহত হন। তার স্বামী দ্রুত ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শেফালীকে মৃত ঘোষণা করেন।
৪৬তম বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮ মে থেকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, অনিবার্য কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
একটি জাতীয় সনদ তৈরির মাধ্যমে ক্ষমতার বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটানো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। জনগণের প্রতি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে এই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে বলে মত দেন তিনি।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের আলোচনার শুরুতে আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন, মতামত বা সুপারিশমালাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন তিনি। এজন্য রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিসহ জনমানুষের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন কমিশনের এই সহ-সভাপতি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘গত ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেছে, সেটি বাস্তবায়নের দুয়ার খুলতে হবে। শুধু কাগজে আমরা কী লিখছি; তা নয়, জনগণের প্রতি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা। যেটির মাধ্যমে ক্ষমতার বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটতে পারে, যাতে বাংলাদেশ তার সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে জেগে উঠতে পারে।’
এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আলোচনায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরুর নেতৃত্বে ১০ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদলে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান ছাড়াও আরও আবু হানিফ, হাবিবুর রহমান রিজু, এডভোকেট খালিদ হোসেন, সাকিব হোসাইন, শাকিল উজ্জামান, ফাতেমা তুজ জোহরা রেসা এবং মুনতাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়।
ইতোমধ্যে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে। গণঅধিকার পরিষদসহ এ পর্যন্ত ২০টি রাজনৈতিক দল কমিশনের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ রোববার রাতে এ সংক্রান্ত গেজেট সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী হিসেবে মেয়র ঘোষণা করা হয়। এ সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ৩ মার্চ তাপস, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ আটজনকে বিবাদী করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। গত ২৭ মার্চ সেই ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল।
ইশরাক হোসেন প্রয়াত বিএনপি নেতা ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে।
সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিজ্ঞ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ও যুগ্ম জেলা জজ, ১ম আদালত, ঢাকা এ দায়েরকৃত নির্বাচনি মামলা নং-১৫/২০২০ এর ২৭ মার্চ ২০২৫ তারিখের আদেশে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে 'নৌকা' প্রতীক এর প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করে 'ধানের শীষ' প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করায় এতদ্বারা নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত ১৯৯৩ নং পৃষ্ঠার ১নং কলামের ১নং ক্রমিকের বিপরীতে ২নং কলামে বর্ণিত ‘শেখ ফজলে নূর তাপস’ এর পরিবর্তে ‘ইশরাক হোসেনকে’ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা' এবং ৩নং কলামে বর্ণিত 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ' এর পরিবর্তে 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি' শব্দ ও চিহ্নসমূহ প্রতিস্থাপন করিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে জানান, রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ঢাকায় এসে পৌঁছান।
গত শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসও পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেন।
অধ্যাপক ইউনূস চারদিনের সরকারি সফরে গত ২১ এপ্রিল কাতারের রাজধানী দোহা যান। পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে গত শুক্রবার সেখান থেকে তিনি সরাসরি রোমে পৌঁছান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ভারতে আটক থাকা দেশের যেকোনো নাগরিককে ফিরিয়ে আনবে। তবে, তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য যাচাই করা প্রয়োজন।
তিনি আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতে আটক থাকা কেউ যদি বাংলাদেশি নাগরিক বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে আনব।’
হোসেন বলেন, তবে, তারা বাংলাদেশি নাগরিক কিনা তা অবশ্যই যাচাই করা আবশ্যক।
ভারতে বাংলাদেশিদের আটকের খবর সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কেবল গণমাধ্যমের খবর সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাদের সাথে কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়নি।’
তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক বার্তা পাওয়ার পর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বন্দীদের জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সত্যাসত্য যাচাই শুরু করবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভারতের বাংলাভাষী কিছু লোক বাংলাদেশিদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সতর্কতার সাথে যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৈধ ভারতীয় ভিসা নিয়ে ভ্রমণকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের হয়রানির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হোসেন বলেন, কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন, ‘সুস্পষ্ট সমঝোতা থাকা উচিত- যারা বৈধ ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করছেন, তারা তাদের ভ্রমণ সম্পন্ন করে যথা সময়ে দেশে ফিরে আসবেন।’
‘তবে, যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সংশ্লিষ্ট দেশের অধিকারের মধ্যে পড়ে।’
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ এখনও ভারত সম্পর্কে কোনো ভ্রমণ পরামর্শ জারি করেনি। তবে, এই মুহূর্তে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে নাগরিকদের ভ্রমণ এড়ানো উচিত।
হোসেন বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চায়।
গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শনিবার আহমেদাবাদ এবং গুজরাটের সুরাটে অভিযানের সময় ১,০২৪ জন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করার দাবি করেছে।
বরগুনায় এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে দুই শিশুসন্তান বাধা দেওয়ায় তাদের হত্যা মামলায় ইলিয়াস পহলান নামে এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মো. ইলিয়াস পহলান (৩৪) বরগুনা সদর উপজেলার পূর্ব কেওড়াবুনিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রঞ্জু আরা শিপু, আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আহসান হাবীব স্বপন। আইনজীবী রঞ্জু আরা শিপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ওই নারী তার মেয়ে তাইফা (৩) ও ছেলে হাফিজুলকে (১০) নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় ইলিয়াস তাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে পড়েন। বিষয়টি টের পেয়ে বাধা দেন ওই নারী। এ সময় তাইফা ও হাফিজুলের ঘুম ভেঙে গেলে ইলিয়াস ধারালো অস্ত্র দিয়ে তিনজনকেই কুপিয়ে আহত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় হাফিজুল নিহত হয়, আর বরিশালে নেওয়ার পথে মারা যায় শিশু তাইফা।
তবে গুরুতর আহত ওই নারী দীর্ঘ চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার পরই ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়।
তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনাল সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে ইলয়াস পহলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দোষী তাকে সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দেন। একই সঙ্গে দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত।
এ ছাড়াও ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছর করে আরও ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মন্তব্য