বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল সিলেকশনে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর। সিনেমাটির গল্পকার ও পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ।
সাদ ও তার সিনেমা নিয়ে সংবাদমাধ্যমসহ দর্শকের মধ্যে আগ্রহ আছে। আর তাই রেহানা মরিয়ম নূর এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের যাত্রা নিয়ে সাদের ব্যক্তিগত মতামত ও চিন্তাভাবনা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর পাঠিয়েছেন সিনেমাটির সহ-প্রযোজক রাজিব মহাজন।
রাজিব মহাজন এই প্রশ্নোত্তরকে বলছেন, চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে পরিচালকের নোট, যা সাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে সহায়তা করবে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশ-বিদেশের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম থেকে মেইলে প্রশ্ন এসেছিল। আমরা সেগুলোকে কম্বাইন্ড করে প্রশ্ন প্রস্তুত করেছি। আমাদের নিজেদের অল্প কিছু প্রশ্ন আছে। এভাবে পুরো বিষয়টি প্রস্তুত করা হয়েছে। একা কেউ ইন্টারভিউটি নেয়নি।’
ইংরেজিতে লেখা সেই সাক্ষাৎকারটি নিউজবাংলার পক্ষ থেকে অনুবাদ করে পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।
প্রথম সিনেমা লাইভ ফ্রম ঢাকা থেকেই আপনার সিনেমায় গুরুত্ব পেয়েছে চরিত্রগুলোর ব্যক্তিগত জীবনের যাত্রা এবং তাদের নৈতিক ও অস্তিত্বের সংকট। এই রকম গল্পে উৎসাহী হলেন কী করে?
এসব গল্পের প্রতি আমার আগ্রহের শুরু কীভাবে, নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে হয়তো এ কারণে যে, আমি সব সময় জটিল লোকজনের সঙ্গে সংযোগ অনুভব করি, যারা তাদের জীবনে নেয়া কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
রেহানা মরিয়ম নূর-এর অনুপ্রেরণা কী?
আমার মনে হয়, এ সিনেমার পেছনে আমার বড় তিন বোন এবং তাদের গভীর প্রভাবই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি, আমি আমার ভাগনিদের বড় হতে দেখেছি এবং এই বড় হয়ে ওঠার সময়ে আমার মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে বা নানা প্রশ্ন ভাবিয়েছে। এই বিষয়গুলোই আমি বের করে আনার চেষ্টা করেছি রেহানা চরিত্র এবং তার জীবনের যাত্রার মধ্য দিয়ে।
এ ছাড়া নারী ও পুরুষের মধ্যে বিন্যাস এবং তারা একে অপরকে কীভাবে দেখে, সেই বিষয়গুলোতেও আমি আগ্রহী।
আপনার কাজের পদ্ধতি বা আপনার সেটে কাজের পরিবেশ নিয়ে জানতে চাই। ছোটখাটো বিষয়ও বলবেন।
যদিও দীর্ঘদিন ধরেই আমি নিজেকে একটি চেম্বার ড্রামার জন্য প্রস্তুত করেছি, কিন্তু বাস্তবে দেখলাম একটা বদ্ধ জায়গায় পাঁচ সপ্তাহ ধরে কাজ করা কত কঠিন। একই জায়গায় দিনের পর দিন শতাধিক দৃশ্য ব্লকিং করার সমস্যা সমাধান করা কঠিন বলে মনে হলো। সমস্যার আরেকটা কারণ হলো, আমি আমার নিজের ও টিমের জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিলাম। যেমন, আমরা পুরো সিনেমার দৃশ্যধারণ করেছি শুধু ৫০ মিলিমিটার লেন্স দিয়ে। প্রত্যেকটা দিন আমার জন্য ছিল অঙ্ক পরীক্ষা দেয়ার মতো।
আজমেরি হক বাঁধনের অভিনয়কে কীভাবে পরিচালনা করেছেন? আপনারা কি প্রচুর মহড়া করেছেন?
হ্যাঁ, প্রচুর মহড়া করা হয়েছে, আমরা ৯ মাস মহড়া করেছি, পাশাপাশি রেহানা চরিত্রটি নিয়ে বাঁধনের সঙ্গে আলোচনা করেছি প্রচুর।
বাঁধন প্রথম দিন থেকেই সিনেমাটি নিয়ে কমিটেড ছিলেন। আক্ষরিক অর্থেই তিনি সিনেমাটির জন্য জীবনের সবকিছু সরিয়ে রেখেছিলেন। আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন সবকিছু।
সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন তামিজুলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? তিনি আপনার দুটি সিনেমাই ক্যামেরাবন্দি করেছেন। আপনার চরিত্রগুলো উনি যেভাবে হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরায় তুলেছেন, আপনার সিনেমায় ক্যামেরার কাজ চরিত্রগুলোর মনোজগতের মতোই একটা অস্থিরতাকে ধারণ করে।
আমরা বাস্তবেও খুব ভালো বন্ধু। সিনেমার গল্প যখন লেখা শুরু করি, তখন থেকেই আমরা এর গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করতে থাকি। এমন একটি চ্যালেঞ্জিং প্রোডাকশনের জন্য তুহিন এক বছরের বেশি সময় ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। আমি যদিও নিখুঁত কম্পোজিশন ও ব্লকিংয়ের ব্যাপারে অবসেসড, কিন্তু তুহিন জানে যে, শেষ পর্যন্ত তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো তাৎক্ষণিকতা এবং ক্যামেরার সামনে অভিনয়টিকে ধারণ করা।
আপনার সিনেমার চরিত্রগুলোকে চলমান দেখা যায়, একটা উতলা ভাব ও উদ্বেগের মধ্যে। মনের এই অবস্থা দৃশ্য ধারণে কীভাবে কাজ করেন আপনি?
সাধারণভাবে, দৃশ্যের শুরুতেই আমি আমার ব্লকিংয়ের সব খুঁটিনাটি এবং জটিলতা সিনেমাটোগ্রাফার ও অভিনয়শিল্পীদের খুলে বলি না। যখন তারা একটা সিকোয়েন্সের অচ্ছেদ্য উপকরণগুলো বুঝে যায়, তখন আমি একটু একটু করে বিভিন্ন পজিশন ও স্তর যুক্ত করতে থাকি। শারীরিকভাবে এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং তাদের জন্য। কিন্তু এটাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে আমি গভীরতা, আবেগ ও কম্পোজিশন ধারণ করতে পারি।
লাইভ ফ্রম ঢাকা সিনেমার রুক্ষ মনোক্রোম থেকে রেহানা মরিয়ম নূর-এর শীতলতা, আপনি আপনার কাজের টোন এবং টেকচার কীভাবে ঠিক করেন?
রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমার ক্ষেত্রে এটা ব্যাখ্যা করা খুব শক্ত। আমার ধারণা, ক্লস্ট্রোফোবিয়া বা রেহানার ভেতরে চাপা থাকা ক্রোধ ধারণ করার জন্য শীতল টোনটিই সবচেয়ে উপযুক্ত।
লাইভ ফ্রম ঢাকা সিনেমার বেলায় ব্যাপারটা আলাদা ছিল, সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়াটা ছিল সহজ, যেহেতু ঢাকা আমার কাছে সব সময়ই সাদা-কালো, সেটা কেন আমি ব্যাখ্যা করতে পারব না। লাইভ ফ্রম ঢাকা সিনেমাটি মনোক্রোমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তববাদী ছিল, কেননা এতে খরচ কম পড়েছে। আর আমি ও আমার টিমকে তখন যে রিসোর্সের স্বল্পতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছিল, আমাদের ওপর চাপ কম পড়েছে এতে।
আপনার এডিটিং স্টাইল, বিশেষ করে ট্রানজিশন বা কোনো দৃশ্যের সমাপ্তি প্রায়শই কর্কশ, এমনকি পাশবিকও। আপনার ক্ষেত্রে এডিটিং কি ন্যারেটিভের প্রয়োজন সিদ্ধ করে নাকি ব্যাপারটা শুধু ছন্দের?
দৃশ্যের ছন্দ নিয়ে আমি সব সময় উদ্বিগ্ন থাকি। আমি মনে করি, এডিটিংয়ের চয়েসের ক্ষেত্রে খুব বেশি সেন্টিমেন্টাল এবং ব্যাখ্যামূলক হওয়া আমার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ কারণেই সেগুলোকে কর্কশ মনে হয় হয়তো। আরেকটি কারণ হলো, আমার সম্পাদনার স্টাইল চরিত্রগুলোর যাপিত জীবনের হুবহু প্রতিফলন, সেই জীবন কঠিন, কঠোর আর লাবণ্যহীন।
আপনার চলচ্চিত্রের একটা মজার দিক হলো আমরা যদি ভালো করে রেহানাকে দেখি, দেখব ও আসলে এক রকম না। কারণ, ও আসলে ততটা সাদা-কালো না, যেমনটা ওর কর্মকাণ্ডে ওকে মনে হয়। এই যে অস্পষ্টতা কিংবা ধোঁয়াশা, এটা সত্যিকার মানবিক অবস্থা তুলে ধরে। আপনি কী মনে করেন?
আমি আপনার সঙ্গে পুরোপুরি একমত। মানুষের চরিত্রের এই অস্পষ্টতা আমাকে সব সময় টানে। আমরা যে সব সময় কারও ব্যাপারে ভালোমন্দ সিদ্ধান্ত নেয়ার তাগিদ বোধ করি, সে কারণেই সবকিছু কঠিন হয়ে যায়। হয়তো, যদি আমরা এই অস্পষ্টতা বোঝার চেষ্টা করি, পৃথিবী আরও সহনশীল এবং বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।
যেহেতু রেহানা ন্যায়বিচার পাওয়ার বাসনায় পরিচালিত হয়, এটা অতীতে তার মধ্যে গড়ে ওঠা প্যারানোইয়া (আবসেশন) হতে পারে। ও কি একটা নীতিমান চরিত্র?
এটা একটা মজার ব্যাখ্যা। নিশ্চয়ই আরও অনেক ব্যাখ্যাই আছে। তবে আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলতে পারব না, ও নীতিমান কি না। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে, আমার কাজটি ছিল রেহানা চরিত্রের সমস্ত লেয়ার উপস্থাপন করা, আমার কাছে যেসব প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, তা তুলে ধরা এবং দর্শকদের নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দেয়া, যেন তারা নিজেদের মতো করে ভেবে নিতে পারে।
রেহানার দুর্দশা (ডিলেমা) বাংলাদেশি সমাজের একটা ক্ষুদ্র সংস্করণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার মধ্যে কীভাবে তার জন্য একটা ‘জায়গা’ খুঁজে পাওয়া যাবে?
আমি সক্রিয়ভাবে কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করছি না। দুর্নীতি আমার আগ্রহের বিষয় না। আমি এটা সাংবাদিকদের কাছেই ছেড়ে দিতে চাই। আমি জানি না, রেহানার মতো কারও পক্ষে এই দুনিয়ায় সত্যি কোনো জায়গা খুঁজে বের করা সম্ভব কিনা। আমি খুব আশাবাদী লোক না। কিন্তু সত্য হলো রেহানাকে আপনি সবখানে খুঁজে পাবেন, তারা তাদের জায়গা খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করছে এবং ব্যর্থ হচ্ছে।
দৃশ্যে যে শব্দ তৈরি হয় সেটিই আপনি সিনেমায় ব্যবহার করেন, আলাদা সাউন্ডট্র্যাক করেন না। এর কারণ কী?
কখনও কখনও এটি আমাকে গল্পের কনটেক্সট তৈরিতে সাহায্য করে এবং আমার চরিত্রগুলোর জন্য সাধারণ ও মামুলি বাস্তবতা তৈরি করে। অন্য সময় এটি আমাকে আরও সূক্ষ্ম উপায়ে এক্সপোজিশন ও ন্যারেটিভ বলতে সাহায্য করে।
সিনেমায় আপনি কাদের দ্বারা প্রভাবিত এবং তারা কীভাবে রেহানাকে ফুটিয়ে তুলতে আপনার ওপর প্রভাব ফেলেছে?
অনেকের প্রভাব আছে! এই মুহূর্তে আমি হয়তো মাইকেল হানেকি, এডওয়ার্ড ইয়্যাং এবং দার্দেন ব্রাদার্সের নাম বলব। তবে আমি মনে করি আমি রেহানাকে ফুটিয়ে তুলেছি সারা জীবন আমি যা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছি, তা দিয়ে।
লাইভ ফর্ম ঢাকা সিনেমাটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম কুড়িয়েছে। সিনেমাটির সাফল্য বাংলাদেশে পরিচালক হিসেবে আপনার জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এনেছে?
খুব বেশি না, আসলে। আমি আমার দ্বিতীয় সিনেমা বানিয়েছি এমন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে, যাদের ওপর আমি সর্বান্তকরণে আস্থা রাখতে পারি। আগের সিনেমাটির নির্মাণপ্রক্রিয়ার সঙ্গেরেহানা মরিয়ম নূর সিনেমার নির্মাণপ্রক্রিয়ার অনেক মিল।
কান চলচ্চিত্রে রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমাটি নির্বাচন হওয়া আপনার কাছে কী অর্থ বহন করে?
এটা একটা বিরাট অনুপ্রেরণা। নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান লাগছে। আমার প্রযোজক কিস্টিয়ান জুয়েনকে অনেক ধন্যবাদ।
রেহানা মরিয়ম নূর বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা যেটি কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল সিলেকশন পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিবেশ কেমন? আপনার নিজের প্রোডাকশনের কী অবস্থা?
অনেক রকম সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের এখানে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতার সংখ্যা বাড়ছে। রেহানা মরিয়ম নূর কানে বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা হলেও আমরা শেষ এক দশক ধরে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দৃশ্যপটে থাকছি।
আমার ক্ষেত্রে, আমি আমার ঘণিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সিনেমা বানাতে পছন্দ করি। আমার বেশি কিছুর দরকার নেই, তাদের ডেডিকেশন এবং ত্যাগ আমার জন্য যথেষ্ঠ।
আপনি তো সিনেমা নির্মাণ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকবাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন না, কীভাবে চলচ্চিত্র নির্মাতা হলেন?
আমি সত্যি জানি না, কীভাবে চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়ে উঠলাম। এমন না যে আমি ছোটবেলা থেকে ফিল্মমেকার হতে চেয়েছি। প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখার চল ছিল না আমার পরিবারে। হয়তো, জীবনে সবকিছুতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এবং সেটার মধ্য দিয়েই আমার মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্তা গড়ে উঠেছে। একটা পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে, আমি এটা পারব, হয়তো আমার পক্ষে চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন:আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশে অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে আগের আইনের ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে। যা ছিল কুখ্যাত ধারা, এসব ধারাতেই ৯৫ শতাংশ মামলা হয়েছিল। মামলাগুলোও এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক নিয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া উপস্থাপন করা হয়। কিছু সংশোধন শেষে এই সপ্তাহে গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা।
আসিফ নজরুল জানান, এছাড়া কিছু কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ রাখা হয়েছে, একটি হচ্ছে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কন্টেন্ট প্রকাশ, হুমকি দেওয়া। আরেকটি হচ্ছে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো, যেই ঘৃণা ছড়ানোর মধ্যে দিয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়া হয়। ধর্মীয় ঘৃণাকে কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে ভুল বোঝাবুঝি না হয়, কেউ কাউকে হয়রানি করতে না পারে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই প্রথমবারের বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যদি কোনও সাইবার অপরাধ করা হয়, সেটাকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই দুটি ক্ষেত্রে কারো বিরুদ্ধে মামলা হলে এটা আমলি আদালতে যাবে, যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন— এই মামলার কোনো যৌক্তিকতা নেই, তাহলে প্রি ট্রায়াল স্টেজে তিনি মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ চার্জশিটের জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না। যদি দেখেন সম্পূর্ণ ভুয়া মামলা, এই মামলার কোনো ভিত্তি নেই, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন।
আসিফ নজরুল বলেন, বিলুপ্ত করা বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় শহীদ বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত বিদ্বেষ বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার যে দণ্ড দেওয়ার বিধান সেটা বিলুপ্ত করা হয়েছে। এই বিধানে প্রচুর হয়রানিমূলক মামলা হতো। মানহানিকর তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে বিধান যেটা এতে প্রচুর মামলা হতো, অনেক সাংবাদিক এই মামলার ভুক্তভোগী হয়েছেন, এই ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। আরেকটা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে— এই ধরনের কোনও কন্টেন্ট বা কথাবার্তা বলায় প্রচুর মামলা হতো, এটাও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। আক্রমণাত্মক বা ভীতিকর তথ্য উপাত্ত প্রকাশ এটাও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, কোরবানি ঈদের ছুটি ৫-১০ জুন আগে থেকেই ঘোষণা করা ছিল। ১১ এবং ১২ জুন ছুটি ঘোষণা করে ১৭ মে এবং ২৪ মে এই দুই দিন সরকারি ও আধা সরকারি কর্মচারীরা কাজ করবেন। এই দুই দিন ছুটি ঘোষণা করায় ঈদুল আজহার ছুটি হবে ১০ দিন। এই অনুযায়ী ব্যাংক ও প্রাইভেট কোম্পানি তাদের মতো করে ছুটি ঘোষণা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি জ্ঞানের সর্বশেষ অগ্রগতির সাথে প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
আগামীকাল ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। ‘উন্নত জগৎ গঠন করুন’ এই আদর্শকে সামনে রেখে ১৯৪৮ সালের ৭ মে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা প্রকৌশলী সমাজের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি কর্তৃত্ববাদী দু:শাসনের অবসান হয়েছে। বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার একটি বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত উন্নয়ন একটি জাতির উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করে। তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন জ্ঞান ও আবিষ্কার। প্রকৌশলীগণ যার মুখ্য কারিগর।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিশ্বায়নের এ যুগে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল জ্ঞানের বিকাশ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত এবং উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ গঠনেও প্রকৌশলীদের কার্যকর ভূমিকা অত্যাবশ্যক বলে আমি মনে করি। প্রকৌশলীগণ দেশপ্রেমের অনির্বাণ চেতনাকে ধারণ করে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করছি।’
প্রধান উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা পুলিশের কাজে বাধাসহ চার মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার দেখানোর (শ্যোন অ্যারেস্ট) আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দীনের আদালতে শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রায়হানুল ওয়াজেদ বলেন, কোতোয়ালী থানার পুলিশের কাজে বাধা, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলাসহ চার মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। আদালতে শুনানি হয় ও আসামি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কারাগার থেকে ভার্চুয়াল শুনানিতে যুক্ত ছিলেন। আদালত শুনানি শেষে চার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন।
এদিকে চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর ভার্চুয়াল শুনানিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
গত ২৬ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করার পর কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।
এসময় তার অনুসারীরা বিক্ষোভ করলে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিচার্জ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে এদিন বিকেলে রঙ্গম কমিউনিটি হল সংলগ্ন এলাকায় আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এ হত্যার ঘটনায় তার বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।
ময়লা-আবর্জনা আর অবৈধ দখলের কারণে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ জারিরদোনা শাখা খালটি। এ জন্য যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব ও প্রশাসনের উদাসীনতাকে দুষছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা সদর হাজিরহাট বাজার অংশে জারিরদোনা খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় বহু দোকানপাট ও বহুতল ভবন। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই খালের পানি বাধাগ্রস্ত করে ইচ্ছামতো সরু পুল, কালভার্ট নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। সেই সঙ্গে গড়ে তুলেছেন অবৈধ দোকানপাট। এ ছাড়া এলাকার কিছু প্রভাবশালী বাজারের আবর্জনা দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে খালটি ভর্তি করে ফেলেছেন। যাতে করে পরে সময় সুযোগ বুঝে ওই স্থান দখলে নেওয়া যায়।
এলাকাবাসী জানান, চরফলকন, চরলরেন্স, হাজিরহাট ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিকাজ এ খালের পানি প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে যেমন পানি সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়, তেমনি বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনজনিত সমস্যায় সয়াবিন, ধান, মরিচ, বাদাম ও সবজীসহ বিভিন্ন ফসল ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্তমান এ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা চলছে। খালটি দখলের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় জীবনযাত্রা চরম দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের। বন্যার পানি না নামার কারণ হিসেবে খাল দখলকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
হাজিরহাট এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নূর সেলিম বলেন, জারিরদোনা শাখা খালটির সংযোগ সরাসরি মেঘনা নদীর সঙ্গে। আশির দশক পর্যন্ত এ খালটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হিসেবেই বিবেচিত ছিল। এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যেও এর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ওই সময়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে বাস-ট্রাক যাতায়াত করা ছিল দুর্সাধ্য। এমনকি ৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এ অঞ্চলের সড়ক পথই ছিল না।
এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৮০ দখলবাজের কবজা থেকে খালটি উদ্ধার করতে উচ্ছেদের আদেশ হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। তারা খাল উদ্ধারে গড়িমসি করে সময় পার করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্যমতে, পিএস জরিপে হাজিরহাট বাজার অংশে খালের প্রশস্ততা ছিল গড়ে প্রায় ৩২ ফুট। বর্তমান আরএস জরিপে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ ফুটে। কিন্তু কিছু ইমারত (ভবন) এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে ওই সব অংশে খালের প্রশস্ততা বর্তমানে ২ থেকে ৩ ফুটের বেশি নেই।
হাজিরহাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাছান বলেন, ‘এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে খালটি সংস্কার করে পানির প্রবাহ ঠিক রাখা একান্ত জরুরি। পুরো খাল দখল করে যারা ইমারত তৈরি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে খালটি দখলমুক্ত করা এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাত হুসাইন বলেন, ‘জারিরদোনা খাল দখলমুক্ত করতে ইতোমধ্যে আদেশ হয়েছে। আমরা দ্রুত কাজ শুরু করব।’
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত-উজ জামান বলেন, খালটি সংস্কার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ দিন ছুটি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
মঙ্গলবার (৬ মে) সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানান।
পাশাপাশি ১৭ ও ২৪ মে দুটি শনিবার অফিস খোলা থাকবে বলে ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। তবে কবে থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে কবে শেষ হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
গত ঈদুল ফিতরে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি ছিল। ঈদে টানা পাঁচদিন ছুটি আগেই ঘোষণা করে সরকার। তার সঙ্গে নির্বাহী আদেশে আরও এক দিন ছুটি বাড়ানো হয়। ওই ছুটি শুরুর দুদিন আগে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ছুটি ছিল। মাঝে ২৭ মার্চ একদিন খোলা ছিল অফিস।
চলতি মে মাসে এরইমধ্যে টানা তিন দিন ছুটি উপভোগ করছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। দ্বিতীয় দফায় আরও একবার তিন দিনের ছুটি পেতে চলেছেন তারা। আগামী ১১ মে (রবিবার) বুদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি। এরআগে দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি আছে তাদের। অর্থাৎ এই মাসে দুদফায় তিন দিন করে ছুটি উপভোগ করবেন তারা।
আগামী ৯ মে (শুক্রবার) আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ। যার সংক্ষিপ্ত রূপ ইউপিবি বা আপ বাংলাদেশ। তবে এটি রাজনৈতিক দল নয়, রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম বলে জানিয়েছেন প্ল্যাটফরমের উদ্যোক্তা আলী আহসান জুনায়েদ।
গতকাল সোমবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এসব তথ্য জানান তিনি।
তবে এর আগে জানা গিয়েছিল, রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা হচ্ছে আপ বাংলাদেশ।
ওই পোস্টে জুনায়েদ বলেন, আগামী ৯ মে (শুক্রবার) বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (ইউপিবি/আপ বাংলাদেশ)। এটি মূলত একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম, দল নয়।
জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করাই হবে এই প্ল্যাটফরমের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা বলে জানিয়েছেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের মধ্যে আলী আহসান জুনায়েদ অন্যতম। গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা হওয়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে একটি পদ পাওয়ার গুঞ্জন ছিল। পরে এক পোস্টে তিনি ওই দলে যাচ্ছেন না বলে জানান।
আজকের পোস্টে জুনায়েদ আরও বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে আমরা বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ, সুবিচার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে চাই। ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের আলোকে সামাজিক চুক্তির পুনর্বহাল করে সাম্প্রদায়িক বন্ধন ও পারষ্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সমাজ গড়ায় কাজ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ, ধর্মবিদ্বেষ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে এই প্ল্যাটফরম কাজ করবে ইনশাআল্লাহ। আপনাদের সবার পরামর্শ, দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। ৯ মে শহীদ মিনারে আপনাদের আমন্ত্রণ রইল।’
দেশে দ্বৈত এনআইডিধারীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক বলে জানিয়েছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, দ্বৈত এনআইডি যাদের রয়েছে, তাদের ব্যাপারে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত—প্রথমটি রেখে দ্বিতীয়টি বাদ যাবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এ এস এম হুমায়ুন কবীর।
তিনি বলেন, ‘মানুষের সেবা নিশ্চিত করা জন্য যৌক্তিক আবেদন কমিশন অতি দ্রুত অনুমোদন দিচ্ছে। কমিশন ও সচিবালয় আমরা সবাই মিলে মানুষকে দ্রুত সেবা দিতে চাই।’
ডিজি হুমায়ুন বলেন, ‘আমাদের এনআইডি অনুবিভাগে প্রচুর আবেদন আছে। এগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারি সে জন্য দায়িত্ব বণ্টন করে দিচ্ছি। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও একটু ক্ষমতা পরিবর্তন করছি, যাতে সহজ হয়। আমাদের আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্যাটাগরি করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। আমরা মনিটর করছি।’
তিনি আরও বলেন, দ্বৈত এনআইডি যাদের রয়েছে, তাদের ব্যাপারে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত—প্রথমটি রেখে দ্বিতীয়টি বাদ যাবে। এ পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি দ্বৈত এনআইডি পাঁচ শতাধিক।
হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘প্রায় ১৩ কোটির বেশি তথ্য একটা একটা করে খোঁজা সম্ভব নয়। কেউ যদি তথ্য দেয় আর আমরা যদি দেখতে পাই তবে ব্যবস্থা নিই।’
এদিকে রোহিঙ্গাদের ডেটাবেজ সংরক্ষণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অন্য একটি মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের ডাটাবেজ যেখানেই থাকুক না কেন তার ব্যবহারের সুযোগ চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ বিষয়ে এনআইডি মহাপরিচালক হুমায়ুন বলেন, প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল রোহিঙ্গাবিষয়ক ডেটাবেইসটা এপিআইয়ের মাধ্যমে ইসিকে দেওয়া। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য দপ্তর মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই তথ্য তাদের কাছে থাকবে। যদিও রোহিঙ্গাদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য কোন মন্ত্রণালয়ে সার্ভার থাকবে, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সরকার বিকল্প কোনো সিদ্ধান্ত নিলে এনআইডি কর্তৃপক্ষ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও জানান, ‘রোহিঙ্গা এবং বিদেশিদের আমরা আমাদের ডেটাবেইসে প্রবেশ করতে দেব না।’
এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটের আওতায় আনতে অস্ট্রেলিয়াসহ আট দেশে ভোটার রেজিস্ট্রেশন কাজ শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ এই কার্যক্রম কানাডায় চালু হবে। এখন থেকে সুনির্দিষ্ট কারণ দর্শানো ব্যতীত এনআইডি সংশোধন আবেদন বাতিল করা যাবে না বলে জানিয়েছেন এনআইডির ডিজি।
মহাপরিচালক জানান, ৪০ দেশে এনআইডি সেবা চালুর বিষয়ে আগামী সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হতে যাচ্ছে।
এনআইডি সেবার দুর্ভোগ কমাতে নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়ে ডিজি হুমায়ুন বলেন, দ্বৈত এনআইডিধারীদের প্রথমটি রেখে দ্বিতীয়টি বাতিল ও রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি রোহিঙ্গাদের আঙুলের ছাপ যাচাই করতে পারি তাহলেই হবে। কাজেই তাদের ভোটার তালিকায় ঢুকে যাওয়া সহজ হবে না। ভোটার হতে যিনি আসবেন, আমরা যত রকমভাবে সম্ভব চেক করে নেব।’
মন্তব্য