দুই বাংলার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা উত্তম কুমার ইহলোক ছেড়েছেন ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই। এর চার দশক পর মহানায়ককে ফের সিনেমার পর্দায় হাজির করছেন পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
কালজয়ী নায়ককে নিয়ে নির্মিয়মাণ চলচ্চিত্রের নাম ‘অতি উত্তম’। এতে স্বয়ং উত্তমকেই দেখাবেন সৃজিত।
৫৪টি ছবি, ফুটেজ নিয়ে ভিএফএক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে উত্তমকে সিনেমার পর্দায় হাজির করবেন সৃজিত।
টানা তিন বছর ধরে সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন সৃজিত। এ সময়ে মহানায়কের ছবি, ফুটেজ দেখে তার কথা বলার ধরন, হাঁটাচলার ভঙ্গি নিয়েও গবেষণা করেছেন তিনি।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সৃজিতের অন্যান্য সিনেমার মতো এ সিনেমার গল্প রহস্যে ঘেরা নয়। ‘কিং অফ রোম্যান্স’ খ্যাত নায়ক উত্তম কুমারের সিনেমায় প্রেম-ভালোবাসা না থাকলে কি চলে?
সে বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্মাতা অতি উত্তম সিনেমাটিকে প্রেমনির্ভর কমেডি ঘরানার করেছেন।
অতি উত্তম সিনেমাটি উত্তম কুমার ও তার এক একনিষ্ঠ ভক্তকে নিয়ে। সে ভক্ত প্রেমজনিত সমস্যায় পড়ে। তা থেকে নিষ্কৃতি পেতে দ্বারস্থ হন প্রিয় অভিনেতার কাছে। নানান বুদ্ধি দিয়ে ভক্তের বিপদে সাহায্য করেন উত্তম।
এই প্রথম সৃজিত রোমান্টিক কমেডিধর্মী গল্প নিয়ে সিনেমা বানাতে চলেছেন। সৃজিতের প্রথম সিনেমা অটোগ্রাফ-এর ১০ বছর পূর্তিতে উত্তম কুমারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ সিনেমা বানানো হচ্ছে।
এ নিয়ে সৃজিত আনন্দবাজারকে বলেন, ‘অটোগ্রাফ যেমন সত্যজিৎ রায় এবং উত্তম বাবুর প্রতি ট্রিবিউট ছিল, উত্তম কুমারের একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে তাকে এই ছবির মাধ্যমে ফের ট্রিবিউট দিচ্ছি।’
এ সিনেমায় সৃজিত নতুন কিছু অভিনয়শিল্পী নিয়ে কাজ করবেন। তাদের মধ্যে আছেন অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, রোশনি ভট্টাচার্য, জিনা তরফদার ও উত্তম কুমারের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়। তাদের এ সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রে দেখা যাবে। এ ছাড়াও এ সিনেমায় অভিনয় করবেন লাবণী সরকার ও শুভাশিস মুখোপাধ্যায়।
সৃজিত আরও বলেন, ‘মানুষ এমনিতেই করোনার জন্য ভীত, সন্ত্রস্ত। আমি এমন একটা গল্প বলতে চেয়েছি, যা মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে হলে ফেরার জন্য। আমি যার শরণাপন্ন হয়েছি, তিনিই একমাত্র এ কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ দিন ছুটি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
মঙ্গলবার (৬ মে) সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানান।
পাশাপাশি ১৭ ও ২৪ মে দুটি শনিবার অফিস খোলা থাকবে বলে ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। তবে কবে থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে কবে শেষ হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
গত ঈদুল ফিতরে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি ছিল। ঈদে টানা পাঁচদিন ছুটি আগেই ঘোষণা করে সরকার। তার সঙ্গে নির্বাহী আদেশে আরও এক দিন ছুটি বাড়ানো হয়। ওই ছুটি শুরুর দুদিন আগে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ছুটি ছিল। মাঝে ২৭ মার্চ একদিন খোলা ছিল অফিস।
চলতি মে মাসে এরইমধ্যে টানা তিন দিন ছুটি উপভোগ করছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। দ্বিতীয় দফায় আরও একবার তিন দিনের ছুটি পেতে চলেছেন তারা। আগামী ১১ মে (রবিবার) বুদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি। এরআগে দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি আছে তাদের। অর্থাৎ এই মাসে দুদফায় তিন দিন করে ছুটি উপভোগ করবেন তারা।
আগামী ৯ মে (শুক্রবার) আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ। যার সংক্ষিপ্ত রূপ ইউপিবি বা আপ বাংলাদেশ। তবে এটি রাজনৈতিক দল নয়, রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম বলে জানিয়েছেন প্ল্যাটফরমের উদ্যোক্তা আলী আহসান জুনায়েদ।
গতকাল সোমবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এসব তথ্য জানান তিনি।
তবে এর আগে জানা গিয়েছিল, রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা হচ্ছে আপ বাংলাদেশ।
ওই পোস্টে জুনায়েদ বলেন, আগামী ৯ মে (শুক্রবার) বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (ইউপিবি/আপ বাংলাদেশ)। এটি মূলত একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম, দল নয়।
জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করাই হবে এই প্ল্যাটফরমের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা বলে জানিয়েছেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের মধ্যে আলী আহসান জুনায়েদ অন্যতম। গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা হওয়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে একটি পদ পাওয়ার গুঞ্জন ছিল। পরে এক পোস্টে তিনি ওই দলে যাচ্ছেন না বলে জানান।
আজকের পোস্টে জুনায়েদ আরও বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে আমরা বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ, সুবিচার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে চাই। ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের আলোকে সামাজিক চুক্তির পুনর্বহাল করে সাম্প্রদায়িক বন্ধন ও পারষ্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সমাজ গড়ায় কাজ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ, ধর্মবিদ্বেষ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে এই প্ল্যাটফরম কাজ করবে ইনশাআল্লাহ। আপনাদের সবার পরামর্শ, দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। ৯ মে শহীদ মিনারে আপনাদের আমন্ত্রণ রইল।’
দেশে দ্বৈত এনআইডিধারীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক বলে জানিয়েছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, দ্বৈত এনআইডি যাদের রয়েছে, তাদের ব্যাপারে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত—প্রথমটি রেখে দ্বিতীয়টি বাদ যাবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এ এস এম হুমায়ুন কবীর।
তিনি বলেন, ‘মানুষের সেবা নিশ্চিত করা জন্য যৌক্তিক আবেদন কমিশন অতি দ্রুত অনুমোদন দিচ্ছে। কমিশন ও সচিবালয় আমরা সবাই মিলে মানুষকে দ্রুত সেবা দিতে চাই।’
ডিজি হুমায়ুন বলেন, ‘আমাদের এনআইডি অনুবিভাগে প্রচুর আবেদন আছে। এগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারি সে জন্য দায়িত্ব বণ্টন করে দিচ্ছি। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও একটু ক্ষমতা পরিবর্তন করছি, যাতে সহজ হয়। আমাদের আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্যাটাগরি করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। আমরা মনিটর করছি।’
তিনি আরও বলেন, দ্বৈত এনআইডি যাদের রয়েছে, তাদের ব্যাপারে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত—প্রথমটি রেখে দ্বিতীয়টি বাদ যাবে। এ পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি দ্বৈত এনআইডি পাঁচ শতাধিক।
হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘প্রায় ১৩ কোটির বেশি তথ্য একটা একটা করে খোঁজা সম্ভব নয়। কেউ যদি তথ্য দেয় আর আমরা যদি দেখতে পাই তবে ব্যবস্থা নিই।’
এদিকে রোহিঙ্গাদের ডেটাবেজ সংরক্ষণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অন্য একটি মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের ডাটাবেজ যেখানেই থাকুক না কেন তার ব্যবহারের সুযোগ চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ বিষয়ে এনআইডি মহাপরিচালক হুমায়ুন বলেন, প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল রোহিঙ্গাবিষয়ক ডেটাবেইসটা এপিআইয়ের মাধ্যমে ইসিকে দেওয়া। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য দপ্তর মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই তথ্য তাদের কাছে থাকবে। যদিও রোহিঙ্গাদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য কোন মন্ত্রণালয়ে সার্ভার থাকবে, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সরকার বিকল্প কোনো সিদ্ধান্ত নিলে এনআইডি কর্তৃপক্ষ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও জানান, ‘রোহিঙ্গা এবং বিদেশিদের আমরা আমাদের ডেটাবেইসে প্রবেশ করতে দেব না।’
এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটের আওতায় আনতে অস্ট্রেলিয়াসহ আট দেশে ভোটার রেজিস্ট্রেশন কাজ শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ এই কার্যক্রম কানাডায় চালু হবে। এখন থেকে সুনির্দিষ্ট কারণ দর্শানো ব্যতীত এনআইডি সংশোধন আবেদন বাতিল করা যাবে না বলে জানিয়েছেন এনআইডির ডিজি।
মহাপরিচালক জানান, ৪০ দেশে এনআইডি সেবা চালুর বিষয়ে আগামী সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হতে যাচ্ছে।
এনআইডি সেবার দুর্ভোগ কমাতে নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়ে ডিজি হুমায়ুন বলেন, দ্বৈত এনআইডিধারীদের প্রথমটি রেখে দ্বিতীয়টি বাতিল ও রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি রোহিঙ্গাদের আঙুলের ছাপ যাচাই করতে পারি তাহলেই হবে। কাজেই তাদের ভোটার তালিকায় ঢুকে যাওয়া সহজ হবে না। ভোটার হতে যিনি আসবেন, আমরা যত রকমভাবে সম্ভব চেক করে নেব।’
পথে পথে আবেগাপ্লুত নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন দেশনেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
পথে পথে কেউ হাতে ফুল, কেউ ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, কেউ বেগম খালেদা জিয়ার ছবিসংবলিত টি-শার্ট পরে, হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা নেড়ে, শ্লোগানে শ্লোগানে প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘খালেদা, জিয়া’, ‘তারেক, রহমান’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ পথে পথে নানা শ্লোগান দিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা।
চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ চারমাস পর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে আজ ঢাকায় ফেরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সকাল ১০টা ৪৩ মিনিটে অবতরণ করে তাঁকে বহনকারী কাতার আমিরের পাঠানো বিশেষ বিমান (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স)। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে বাসভবন ফিরোজার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। পথে পথে আবেগাপ্লুত উচ্ছ্বসিত নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি।
দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে যেভাবে নেতা-কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমেছেন, তা দলের প্রতি তাদের আস্থার প্রমাণ।’
বিএনপি এবং দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কে কোথায় অবস্থান নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাবেন, তা আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল। তাদের সড়কে ভিড় না করে ফুটপাতে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। যাতে যানজট বা বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য পুরো পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। যদিও অগণিত মানুষকে সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। বহরের সামনে পিছনে এবং বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িকে ঘিরে মিছিল শ্লোগানে প্রকম্পিত করে রাখছে অগণিত নেতা-কর্মী।
বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এসেছেন তার দুই পুত্রবধূ-তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শার্মিলা রহমান।
সকাল থেকেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়ক থেকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত জড়ো হন বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানায়।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ফিরে আসা গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সহজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদ বিদায় নেওয়ার পর কারাবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় ৪ মাস চিকিৎসা শেষে আজকে দেশে ফিরে আসছেন। এটা আমাদের জন্য, জাতির জন্য একটা আনন্দের দিন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র উত্তরণের এই সময়ে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য দিক। তার ফিরে আসা আমাদের গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সহজ করবে। দেশকে সঠিক ও বৈষম্যহীন পথে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি থেকে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
লন্ডনে চার মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাকে বিদায় জানাতে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দলটির প্রবাসী নেতাকর্মীদের ভিড় করতে দেখা গেছে।
সোমবার (৭ মে) স্থানীয় সময় ২টা ১০ মিনিটে লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে তার মাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গেছেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিসকর অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গাড়িতে সামনের আসনে ছেলের পাশে বসেছেন খালেদা জিয়া। দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান, সৈয়দা শার্মিলা রহমান এবং তারেকের মেয়ে জাইমা রহমানও রয়েছেন গাড়িতে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমরা রওনা হব। বিকাল ৪টায় আমাদের রওনা হওয়ার কথা।
দোহায় যাত্রাবিরতি করে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তাদের।
এদিকে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’ সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। নেতাকর্মীদের হাজারো ভিড়ের মধ্য দিয়ে তাকে বিমানবন্দর থেকে বাসায় পৌঁছানোর সময় অভ্যর্থনা জানানো হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইউএনবিকে জানান, ‘তিনি মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বলে আশা করছি।’
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কাকলী রুট ধরে ফিরোজায় পৌঁছাবে। ফখরুল বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে তারা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা হাতে তাকে শুভেচ্ছা জানাবে।’
তিনি জনগণকে অনুরোধ করেন বিমানবন্দর থেকে কাকলী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে, যাতে রাস্তায় যানজট না হয়। মঙ্গলবার সকালে বিমানবন্দরে বিএনপি মহাসচিব, অন্যান্য নেতা ও খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
বিএনপির পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়ান পর্যন্ত অবস্থান নেবে ঢাকা উত্তর সিটি ইউনিট, এরপর ছাত্রদল লে মেরিডিয়ান থেকে খিলখেত পর্যন্ত, যুবদল খিলখেত থেকে রেডিসন পর্যন্ত।
রেডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত থাকবে দক্ষিণ সিটি ইউনিট, এরপর স্বেচ্ছাসেবক দল স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত, কৃষক দল কবরস্থান থেকে কাকলী পর্যন্ত, শ্রমিক দল কাকলী থেকে বনানী শেরাটন পর্যন্ত অবস্থান নেবে।
বনানী শেরাটন থেকে কিচেন মার্কেট পর্যন্ত থাকবে ওলামা দল, তাঁতি দল, জাসাস ও মৎস্যজীবী দল। মুক্তিযোদ্ধা দল ও অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠন থাকবেন কিচেন মার্কেট থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত, আর মহিলা দল ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা থাকবেন গুলশান অ্যাভিনিউ পর্যন্ত।
বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদেরও রুটের সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিমানবন্দর বা ফিরোজা বাসভবনে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না এবং খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে আরও বেশি হারে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী নিতে আগ্রহী ইতালি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (৫ মে) বিকালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।
বৈঠকে ইতালির পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে সফররত দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ম্যাথু পিয়ান্তেডোসি।
উপদেষ্টা বলেন, ইতালির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রমিকরা খুব পরিশ্রমী ও দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশটি নতুন করে বৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী। তবে অন্য দেশের ভিসা নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যাওয়ার প্রবণতাকে তারা সম্পূর্ণরূপে নিরুৎসাহিত করেছে।
তিনি বলেন, ইতালি অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে ও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা নিরাপত্তা খাতেও সহায়তা বৃদ্ধি করার কথা জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যে যেসকল বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইতালিতে গিয়েছেন, তাদের যেন উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় বৈধতা দেওয়া হয়- সে বিষয়েও ইতালিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ইতালির পুলিশ মাফিয়া চক্রসহ সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে পারদর্শী। সেজন্য তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রশিক্ষণ ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে চায়। তিনি বলেন, বৈঠকে আমরা পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও কোস্টগার্ডের দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে ইতালির সহায়তা কামনা করেছি।
সম্প্রতি এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনায় ৫৪ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটানোর চেষ্টা করবে, তাদের কাউকেই কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
বৈঠকে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ, অভিবাসন সংক্রান্ত অপরাধ নেটওয়ার্ক দমনে বাংলাদেশের গৃহীত নীতি ও কর্মপন্থা, অপরাধ দমন ও বিচার প্রক্রিয়ায় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার এবং নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে ইতালির পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিপ্লোমেটিক অ্যাডভাইজার ম্যাক্রো ভিলানি ও ডেপুটি হেড অভ কেবিনেট সাবিনা মাদারো, ইমিগ্রেশন ও বর্ডার পুলিশের সেন্ট্রাল ডিরেক্টর ক্লডিও গালজেরানো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে পৌঁছালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
মন্তব্য