১৯১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নেয়া লোকটি একদিন গান ধরেছিলেন, ‘আমি বাংলা মায়ের ছেলে...।’
কাকতালীয়ভাবে আরেক ফেব্রুয়ারিতেই বাংলা ভাষার অধিকার আদায় করে নিয়েছিল ‘বাংলা মায়ের’ আরও অনেক ছেলেরা।
আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি তার ১০৫তম জন্মদিন। বলছি শাহ আবদুল করিমের কথা।
পুঁজি আর সাম্রাজ্যবাদের বিকাশের যুগে তার জন্ম। লালন-হাসন-রাধারমনের যুগে এত এত টিভি ক্যামেরা, মিডিয়ার ম্যানিপুলেশন, আর পুরস্কারের জৌলুস ছিল না। ছিল না রক, ব্যান্ড, ফিউশন, রিমিক্সের বাহার। আবদুল করিমের যুগে এসে এসব কিছুরই রমরমা অবস্থা। তবু এই অস্থির, ব্যস্ত, প্রদর্শনবাদী নগরায়নের যুগে এসেও এক আশ্চর্য অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে গেছেন শাহ আবদুল করিম।
আকাশচুম্বী খ্যাতি, কিংবদন্তি অভিধা আর নানা প্রলোভনও তাকে সামান্যতম বিচলিত করতে পারেনি। কত শত পদক আর সম্মাননা পেয়েছেন। নাগরিক নানা বিউটি পার্লারেও ঢোকানো হয়েছে তাকে। কিন্তু তাতে বদলানো যায়নি এই বাউলের চেহারা।
সবকিছুকে উপেক্ষা করে আবার তিনি ফিরে গেছেন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কালনীর তীরে; তার উজানধলে, ভাঙা কুঠিরে। যেখানে চিরনিদ্রায় আছেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী সরলা কিংবা বলা যেতে পারে ‘বাউল সম্রাটের’ জন্য অপেক্ষায় ছিলেন সরলা। তাই তো স্ত্রীর পাশেই চিরনিদ্রায় ডুবেছেন আবদুল করিম।
বাউল আর বাউলপনা যখন সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের রক্তচক্ষুর কোপানলে পড়ছে অহর্নিশ, আবদুল করিম তখন আত্মবিশ্বাস ও সাহসের সঙ্গে নিজেকে বাউল হিসেবে প্রচার করলেন। লালনরা লিখেছেন, ‘আমি কিছু নয় রে আমি কিছু নয়’, কিংবা ‘ভাইবে রাধারমন বলে’, তখন আবদুল করিম এসে লিখলেন, ‘বাউল আবদুল করিম বলে’ কিংবা ‘বাউল আবদুল করিম গায়’। তখনই প্রথম আমরা কোনো বাউলের মুখে নিজেকে বাউল হিসেবে দাবি করতে শুনি।
তিনি ছিলেন রাখালবালক। স্কুলে কয়েক দিন মাত্র গিয়েছেন। সারা জীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন। বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী। তবু গান ছাড়েননি বাউল করিম। বরং এইসব প্রতিকূলতা তাকে আরও দৃঢ়চেতা করেছে।
গানের জন্য তাকে ধর্মজীবীরা একঘরে করেছে, স্ত্রী সরলা ও শিষ্য আকবরের জানাজায় অংশ নেয়নি এলাকাবাসী। তবু করিমকে টলানো যায়নি।
কবি টি এম আহমেদ কায়সারকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখোনই আসমানি খোদাকে মান্য করি না... প্রচলিত ধর্ম ব্যবস্থা আমাদের মধ্যে সম্প্রদায়গত বিদ্বেষ তৈরি করে দিয়েছে। মোল্লাদের কায়কারবার দেখলে মনে হয় একাই আবার যুদ্ধ করি। একাই আবার লড়াইয়ের ময়দানে নামি, জীবনের ভয় আর করি না।’
শাহ আবদুল করিম শুধুমাত্র বাউল ছিলেন না, তিনি একাধারে গণসঙ্গীত শিল্পীও। সারা জীবন শোষিত বঞ্চিতদের পক্ষে গান লিখেছেন।
যেমন তিনি লিখেছেন, ‘মন মজালে অরে বাউলা গান।’ ভালো কথা। বাউলের মন তো বাউলা গান মজবেই। অথচ এই গানের শেষে এসে বলছেন, ‘তত্ত্বগান গেয়ে গেলেন যারা মরমী কবি/ আমি তুলে ধরি দেশের দুঃখ-দুর্দশার ছবি/ বিপন্ন মানুষের দাবি করিম চায় শান্তি বিধান।’
তার লেখার এমন আরও কিছু উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন, ‘শোষিত বাঙালি আর ভুলবে না কখন/ এই দেশে শাসনের নামে চলবে না শোষণ।’
গেয়েছেন, ‘ভোট দিবায় আজ কারে?/ ভোট শিকারী দল এসেছে নানা রঙ্গ ধরে/... কেউ দিতাছে ধর্মের দোহাই, কেউ বলে গরিবের ভাই/ আসলে গরিবের কেউ নাই, গরীব ঠেকছে ফেরে।’
কিংবা, ‘মনে মনে চিন্তা করি রাজনীতি নয় দোকানদারি/ স্বার্থ মারামারি ধর্ম ধর্ম সব গেছে/ বাউল করিমের বাণী শোনেন যত জ্ঞানীগুনি/ মনে মনে আমি গুনি সর্ষেতে ভূত পাইছে।’
আবদুল করিমের একটি বক্তব্য শুনলেই তার দর্শন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বেহেশত, দোজখ চাই না। জীবিত অবস্থায় আমার ভাটি অঞ্চলের বিপন্ন মানুষের সুখ দেখতে চাই। ওই মানুষগুলোর সুখ যারা কেড়ে নিয়েছে আমার লড়াই তাদের বিরুদ্ধে।
‘একসময় তত্ত্ব সাধনা করতাম, এখন দেখি তত্ত্ব নয়, নিঃস্ব-বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দেহতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব আর সোনার বাংলা সোনার বাংলা করলে হবে না। লোভী, শোষক, পাপাত্মাদের আঘাত করতে হবে।’
২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাউল করিম। তার মৃত্যুতে বাউল ধারার সবশেষ প্রজন্মের উজ্জ্বলতম বাতিটি নিভে যায়। এখন তো ‘বাউল’ তৈরি করে দিচ্ছে রিয়েলিটি শো!
তবে মৃত্যু আবদুল করিমকে অমরত্ব দিয়েছে। ফলে মৃত্যুর এক যুগ পরও বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের কাছে সমান জনপ্রিয় তিনি।
গ্রাম থেকে শহর, রাবীন্দ্রিক পৌঢ় থেকে রক যুগের তরুণ- সবার কাছেই প্রিয় করিমের গান। শারীরিক অনুপস্থিতি সত্ত্বেও বাঙালির সকল উৎসবে আয়োজনে উপস্থিত থাকেন করিম।
সাধারণ মানুষ প্রিয় বাউলকে মনে রাখলেও করিমকে দেয়া কথা রাখেননি কর্তাব্যক্তিরা।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শাহ আবদুল করিমের জীবনীকার ও লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ। তিনি বলেন, ‘শাহ আবদুল করিম যদিও তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন, কিন্তু সরকারি উদ্যোগে তার স্মৃতি ধরে রাখতে এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, দিরাইয়ের উজানদল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি করিমের নামে নামকরণ করার দাবি উঠেছিল। এই বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। কিন্তু সে দাবিও অদ্যাবধি পুরণ হয়নি।’
মৃত্যুর পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তার নামে সুনামগঞ্জ শহরে তোড়ন নির্মাণ করা হবে। সড়ক ও মিলনায়তনের নামকরণ করা হবে। অথচ তার মৃত্যুর এক যুগ পেরোলেও এসব প্রতিশ্রুতি ও দাবির কিছুই পূরণ হয়নি।
পরিবার ও ভক্ত-স্বজনদের উদ্যোগে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের উজানদল গ্রামে আবদুল করিমের নিজ বাড়ি ও সমাধিস্থল সংরক্ষণ এবং একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। অর্থাভাবে থেমে গেছে সে উদ্যোগও।
সুমন বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে করিম গান গেয়ে গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন জনসভায় করিম গান গেয়েছেন। তার গানে প্রেরণা পেয়েছেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। শাহ আবদুল করিমকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা উচিত। এতে রাষ্ট্রই দায়মুক্ত হবে।’
শাহ আবদুল করিম রচনাসমগ্রের সম্পাদক কবি শুভেন্দু ইমাম বলেন, ‘অন্তত একটি স্থাপনা বা সড়কের নামকরণ তার নামে তো হতেই পারত। এজন্য তো অর্থের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন সদিচ্ছার। কিন্তু এই সদিচ্ছাটুকু আজ পর্যন্ত তার প্রতি দেখানো হয়নি।’
শাহ আবদুল করিমকে ভালোবেসে ‘বাউল সম্রাট’ নামে অভিহিত করেছেন ভক্ত-অনুরাগীরা। কে কবে প্রথম তাকে এই উপাধি দিয়েছিল তা জানা যায় না। তবে তিনি আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠেছিলেন বাংলার মাটির গান, গ্রামীণ জনপদ, সেখানকার খেটে খাওয়া মানুষ, যারা দেশ ও দশের পেটে প্রতি মুহূর্তে অন্ন যোগায়, তাদের কষ্ট, মান-অভিমান, ভালোবাসা ও বেঁচে থাকার সুরের সম্রাট।
কোথাও স্মৃতিচিহ্ন থাকুক বা না থাকুক, আবদুল করিম তার গান ও সুরের জন্য সম্রাট থেকে যাবেন চিরকাল।
আরও পড়ুন:কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
মন্তব্য