ভালোবাসা শুধু একটা দিনে আবদ্ধ নয়। এ অনভূতি ছড়িয়ে থাকে মানুষের হাসিতে, শিল্পীর তুলিতে, সিনেমার পর্দা, কাল্পনিক চরিত্রেও। সিনেমা বিকাশের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভালোবাসার বিচিত্র সব গল্প দেখতে মানুষ আশ্রয় নেয় মাধ্যমটির।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে জেনে নেয়া যাক এমন পাঁচটি রোমান্টিক সিনেমার গল্প।
পোল্যান্ড: কোল্ড ওয়ার (২০১৮)
জীবন থেকে প্রেমিক বা প্রেমিকার অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে চলে যাওয়া মনের মধ্যে যে শূন্যতা তৈরি করে, তা পাওয়েল পাওলিকোউস্কি তুলে ধরেছেন তার কোল্ড ওয়ার সিনেমায়।
কাহিনিটি উইকটোর ও জুলার প্রেমের, যেখানে তারা সময়ে সময়ে মিলিত হয়েছেন। আবার একে অপরের থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। জীবনের প্রয়োজনে, একটুখানি ভালোবাসার আশায় আবার মিলিত হয়েছেন।
পোল্যান্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় গল্পের প্রেক্ষাপট। গল্পের প্রধান চরিত্র উইকটোর একজন শিল্পী। তিনি হারিয়ে যাওয়া লোকসংগীত সংগ্রহের কাজে তার প্রযোজককে নিয়ে ঘুরে বেড়ান পোল্যান্ডের গ্রামে গ্রামে।
এক গ্রামে গিয়ে তার পরিচয় হয় জুলার সঙ্গে। জুলা তাকে গান শোনায়, গানের তালে খুব দ্রুত নাচ শিখে ফেলার আশ্বাস দেয়। জুলার সোজাসাপ্টা স্বভাব আর চাঞ্চল্য উইকটোরকে আকৃষ্ট করে।
সাদা কালো ছবিতে অদ্ভুতভাবে এগিয়ে যেতে থাকে উইকটোর ও জুলার প্রেম কাহিনী। ভঙ্গুর প্রতিশ্রুতি, বিশ্বাসঘাতকতা, একে অপরকে পরিত্যাগের মতো জটিলতার মধ্য দিয়েই একে অপরের প্রতি ভালোবাসা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কোল্ড ওয়ার পরিচালক পাওয়েল পাওলিকোউস্কির বাবা-মায়ের গল্প। বাস্তব জীবনের নামের সঙ্গে মিল রেখেই সিনেমায় চরিত্রের নামকরণ করা হয়।
জাপান: হুইসপার অফ দ্য হার্ট (১৯৯৫)
জাপানের জুনিয়র হাই স্কুলের দুই কিশোর-কিশোরীর মিষ্টি প্রেমের গল্প বলে হুইসপার অফ দ্য হার্ট। এ গল্পেও তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। কিন্তু সে দূরত্ব তাদের আরও কাছে নিয়ে আসে; নিজেদের জানতে ও তাদের চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা দেয়।
গল্পের নায়িকা শিজুকু বইপ্রেমী। সে একদিন খেয়াল করে লাইব্রেরি থেকে নেয়া তার প্রতিটি বই সেইজি আমাসাওয়া নামে এক ছেলে আগে নিয়েছে। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে শিজুকু তার বান্ধবীকে এ কথা বলে। সেদিনই শিজুকু তার একটা বই স্কুলে ফেলে আসে।
বই ফেরত আনার সময় সে খেয়াল করে তার বইটা একটা ছেলে পড়ছে। ছেলেটা তাকে নিয়ে দুষ্টুমি করে।
পরদিন শিজুকু ট্রেনে একটা বিড়াল দেখে। বিড়ালটার পিছু নিতে নিতে সে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন বিক্রির দোকানে চলে আসে। সে দোকানে স্যুট পরা একটি বিড়ালের মূর্তি তাকে আকৃষ্ট করে।
দোকানের মালিক শিরো নিশি তাকে মূর্তি বিড়ালের গল্প শোনায়। শিজুকুর মনে হয়, এ দোকানটা নতুন গল্প জানার এক বিশাল রাজ্য।
শিজুকু নিয়মিত সে দোকানে যেতে থাকে। একদিন দোকান বন্ধ থাকায় স্কুলের সেই ছেলেটির সঙ্গে শিজুকুর দেখা হয়। দোকানটির নিচেই সে ছেলেটির ওয়ার্কশপ, যেখানে সে ভায়োলিন বানানোর কাজ করে।
কথায় কথায় জানতে পারে এ ছেলেটিই সেইজি আমাসাওয়া যে লাইব্রেরির বইগুলো ইস্যু করেছিল।
সেইজি জানায়, তার স্বপ্ন একদিন মাস্টার লুথিয়ের হবে। অর্থাৎ এমন একজন ব্যক্তি যিনি তারের বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে পারদর্শী ও এ বিদ্যা অন্যদের শেখাতে আগ্রহী।
এ কারণে সে শহর থেকে দূরে এক মাস্টারের কাছে শিক্ষা নিতে চায়। কিন্তু সেইজির মা-বাবা অনুমতি দিচ্ছে না।
সেইজি অবশেষে দুই মাসের জন্য মাস্টারের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে যায়। শিজুকুকে জানিয়ে যায় তার ভালোবাসার কথা। শিজুকুও জানায় তার মনের কথা।
তাদের মধ্যকার এই দূরত্বে নিজেদের পারদর্শিতা সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তোলে। একে অপরের জন্য তৈরি হতে সাহায্য করে।
ইয়োশিফুমি কোন্ডো পরিচালিত স্টুডিও জিবলি প্রযোজিত অ্যানিমেশন সিনেমা হুইসপার অফ দ্য হার্ট। একই নামের জাপানিজ মাঙ্গা কমিকস থেকে এ সিনেমার গল্প নেয়া হয়েছে।
সিনেমাটির চিত্রনাট্য লিখেছেন হায়াও মিয়াজাকি। ইয়োশিফুমি কোন্ডো পরিচালিত একমাত্র সিনেমা এটি।
ফ্রান্স: ব্লু ইজ দ্য ওয়ারমেস্ট কালার (২০১৩)
শিশুসুলভ কিশোরী অ্যাডেল ও নীল রঙের চুলের যুবতী এমার ভালোবাসার গল্প বলে ব্লু ইজ দ্য ওয়ারমেস্ট কালার। আবদেলাতিফ কেশিশে পরিচালিত আলোচিত সিনেমাটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে পালমে দি ওর পুরস্কার জিতে নেয়।
সিনেমাটি শুরু হয় অ্যাডেলের জগৎ দিয়ে। হাই স্কুলের সুন্দরীদের মধ্যে সে একজন। এক জন ছেলেবন্ধুর সঙ্গে থেকেও সে নীল চুলের এক মেয়ের প্রতি বেশি আকর্ষণ অনুভব করে।
নীল চুলের এমা চিত্রশিল্পী। অ্যাডেলকে হাত ধরে সে তার জগতে নিয়ে যায়। পার্কে বসে একে অপরের মন ও চিন্তা সম্পর্কে জেনে নেয়। নিজেদের আরও ভালো করে চিনে নিতে দুজন দুজনার হয়ে যায়।
অ্যাডেল ও এমা তাদের প্রথম ভালোবাসার অভিজ্ঞতা নিয়ে দিন পার করতে থাকে। কিন্তু অ্যাডেল তাদের এ সম্পর্কে এমন এক সমস্যা তৈরি করে যা তাদের মধ্যে নিয়ে আসে অনেক দূরত্ব, কষ্ট আর আঘাত।
সে আঘাত থেকে তারা নিজেদের ফিরিয়ে আনতে পারে কি না তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় কাহিনি।
যুক্তরাষ্ট্র: প্রিটি উইম্যান (১৯৯০)
প্রিটি উইম্যান জর্জিয়ার এক নারীর স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত হওয়ার গল্প বলে। ভিভিয়ান এক যৌনকর্মী, যার স্বপ্ন এক সুদর্শন রাজকুমার সাদা ঘোড়ায় চড়ে তাকে বিয়ে করতে আসবে।
তার স্বপ্ন যে সত্যি হওয়ার পথে, তা সে আন্দাজ করতে পারে না আগে থেকে। বেভারলি হিলসের বিলাসবহুল হোটেলে এক ধনী গ্রাহকের সঙ্গে কাটানো এক সপ্তাহ ভিভিয়ানের মধ্যে বেশ পরিবর্তন আনে। তিনি নিজের মধ্যে নিয়ে আসেন শহুরে অভিজাত্য।
ভিভিয়ানের চরিত্রে হলিউডের অন্যতম সুন্দরী জুলিয়া রবার্টস ও গ্রাহক এডওয়ার্ড লুইসের চরিত্রে অভিনয় করেন রিচার্ড গ্যারে। তাদের সহজাত মিষ্টি প্রেমের গল্প সিনেমাটিকে করে তোলে হলিউডের ক্ল্যাসিক রোমান্টিক কমেডি সিনেমাগুলোর একটিতে।
ব্যবসায়িক সমস্যায় জর্জরিত এডওয়ার্ড ভিভিয়ানের মধ্যে তার জীবনকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার আশা দেখতে পায়। যে মুহূর্তে ভিভিয়ান মনে করেন এডওয়ার্ডের সঙ্গে কাটানো তার জীবনের সেরা মুহূর্তগুলো শেষ হয়ে এসেছে, তখনই ভিভিয়ানের ছোটবেলার স্বপ্নকে সত্যি করে তোলার সিদ্ধান্ত নেন এডওয়ার্ড।
ভারত: দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (১৯৯৫)
বলিউড রোমান্টিক সিনেমার তালিকায় সবসময়ই উপরের সারিতে থাকতে পারে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে। এটি ভারতের প্রেমনির্ভর সিনেমাগুলোর মধ্যে অনন্য।
জনপ্রিয় নব্বইয়ের দশকের জুটি শাহরুখ খান ও কাজলের অন্যতম সিনেমা এটি, যা ২০২০ সালে ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করে।
পরিচালক আদিত্য চোপড়ার প্রথম সিনেমা এটি। এ দিয়েই তিনি ভারতের খুব পরিচিত প্রেমের গল্প দর্শকের সামনে উপস্থাপন করেন।
রাজ ও সিমরানের দেখা হয় বিদেশের মাটিতে। বিয়ের আগে সিমরান ইউরোপ ঘুরতে যান। সেখানে রাজের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ও প্রেম। কিন্তু সিমরানকে ফিরে আসতে হবে। তার বাবা আগে থেকেই বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন।
রাজ সিমরানকে ভুলতে পারেন না। সিদ্ধান্ত নেন দেশে ফিরে সিমরানের পরিবারকে রাজি করিয়ে তাকে নিজের করে নেয়ার।
কিন্তু সিমরানের পরিবারকে রাজি করাতে তাকে গুন্ডাদের হাতে মার খেতে হয়। অবশেষে ভালোবাসার জয় হয় কি না, তা জানতে দেখে নিতে পারেন সিনেমাটি।
আরও পড়ুন:মুক্তির আগ থেকেই তুমুল আলোচনায় ছিল ভারতের দক্ষিণের কন্নড় সিনেমা কেজিএফ চ্যাপ্টার টু।
যেমনটি আলোচনায় ছিল, বাস্তবেও ঠিক তেমনই ঘটছে। গত ১৪ এপ্রিল মুক্তির পর থেকেই বক্স অফিসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কেজিএফ টু।
ইতোমধ্যে হিন্দি ভার্সনে রেকর্ড গড়েছে সিনেমাটি। ৭ দিনে ২৫৫ কোটি রুপি আয় করেছে। যা বাহুবলি টুর রেকর্ডও ভেঙেছে।
হিন্দি ছাড়াও সিনেমাটি কন্নড়, তেলেগু, তামিল ও মালায়ালাম ভাষায় মুক্তি পেয়েছে। সব মিলিয়ে প্রথম সপ্তাহের শেষে সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী ৭০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করেছে।
ভারতীয় চলচ্চিত্র বাণিজ্য বিশ্লেষক মনোবালা বিজয়বালান বৃহস্পতিবার দুপুরে এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছেন।
#KGFChapter2 ZOOMS past ₹700 cr milestone mark.
— Manobala Vijayabalan (@ManobalaV) April 21, 2022
২০১৮ সালের শেষের দিকে মুক্তি পায় প্রশান্ত নীল পরিচালিত এই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম সিনেমা কেজিএফ চ্যাপ্টার ওয়ান।
মুক্তির পর শুধু ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এটি। বক্স অফিসে গড়েছিল ইতিহাস।
গ্যাংস্টারদের নিয়ে গল্পের এই সিনেমায় দুর্দান্ত মারকুটে অভিনয় দিয়ে পুরো ভারত মাতিয়েছিলেন কন্নড় সুপারস্টার যশ। শুধু তা-ই নয়, এই সিনেমা দিয়ে দেশের বাইরেও লাখো ভক্ত-অনুরাগী জুটিয়েছেন এই অভিনেতা।
যশ বাদেও কেজিএফ চ্যাপ্টার টু-তে আরেক মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্তকে। এ ছাড়া এতে গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাবিনা ট্যান্ডন, প্রকাশ রাজ, শ্রীনিধি শেট্টির মতো তারকারা।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্থগিত থাকা ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে আগামী ২৫ এপ্রিল নজরুল মঞ্চে। উৎসব চলবে ১ মে পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলিউড অভিনেতা ও আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে বিজয়ী তৃণমূল এমপি শত্রুঘ্ন সিনহা।
আরও উপস্থিত থাকবেন অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকে।
উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হলেও আমাদের সাবধানে থাকতে হবে। সাবধানতার কথা বিবেচনা করেই এবার বাইরের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’
কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধায় উৎসবের উদ্বোধনী ফিল্ম হিসেবে একই সঙ্গে নজরুল মঞ্চ ও রবীন্দ্র সদনে দেখানো হবে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অরণ্যের দিনরাত্রি।
পরিচালক অরিন্দম শীল সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সত্যজিতের সঙ্গে কাজ করা জীবিত শিল্পী ও কলাকুশলীদের এবার সংবর্ধনা দেয়া হবে।
এবার সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তব্য দেবেন পরিচালক সুজিত সরকার। সত্যজিতের জীবন ও কাজের ওপর প্রদর্শনীও থাকছে উৎসবে।
চলচ্চিত্র উৎসবের থিম ‘কান্ট্রি ফিনল্যান্ড’। কলকাতা শহরের ১০ হলে ৪০ দেশের ১৬৩টি সিনেমা দেখানো হবে এবারের উৎসবে।
২৭তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আটটি বিলুপ্তপ্রায় ভাষার সিনেমা দেখানো হবে। ভাষাগুলো হলো বোরো, টুলু, রাজবংশী, সান্তাড়, ও কোঙ্কনী ও কুড়ুম্বা।
চিদানন্দ দাশগুপ্ত, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, দিলীপ কুমার, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত ও নিকোলাস জাঙ্কসোকে নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকছে।
শিশির মঞ্চে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব শান্তনু বসু, মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তী, পরিচালক গৌতম ঘোষ, পরিচালক অরিন্দম শীল, হরনাথ চক্রবর্তী, অভিনেত্রী জুন মালিয়া।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জানান যে, তার এবং নিক জোনাসের জীবনে সন্তান এসেছে। সারোগেসির মাধ্যমে তারা মা-বাবা হয়েছেন। তবে ছেলে না মেয়ে সন্তান তা জানাননি তিনি।
সেসময় বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম জানায়, কন্যা সন্তানের মা-বাবা হয়েছেন তারকা দম্পতি।
কিন্তু কখনো সন্তানের নাম কিংবা ছবি, কোনোটাই প্রকাশ্যে আনেননি অভিনেত্রী।
তবে দেশটির একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রিয়াঙ্কা-নিক তাদের মেয়ের নাম কী রেখেছেন তা এবার প্রকাশ্যে। তারকা দম্পতি কন্যার নাম রেখেছেন মালতী মারি চোপড়া জোনাস।
জন্ম সনদও নাকি হাতে পেয়েছে হলিউড কেন্দ্রিক একটি সংবাদ সংস্থা। সেই সূত্রেই জানা গেছে এই নাম।
সংস্কৃত এবং ল্যাটিন দুই শব্দ মিশিয়ে মেয়ের নাম রেখেছেন প্রিয়াঙ্কা-নিক। সংস্কৃতে ‘মালতী’ শব্দের অর্থ হল একরকম সুগন্ধযুক্ত ছোট সাদা ফুল অথবা চাঁদের আলো।
অন্যদিকে ‘মারি’ শব্দের অর্থ সমুদ্রকে রক্ষা করে যে নারী। মূলত মাতা মেরিকে অনেক সময় এই আখ্যা দেয়া হয়। যিশুর মাতা মেরিকে ফ্রাঞ্চে ‘মারি’ বলা হয়।
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও মেয়ের নাম বা ছবি কোনোটাই প্রকাশ্যে আনেননি তারকা জুটি।
যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়াগো শহরের এক হাসপাতালে গত ১৫ জানুয়ারি জন্ম হয়েছে নিক-প্রিয়াঙ্কার মেয়ের।
এরপর ২২ জানুয়ারি ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান হওয়ার কথা প্রকাশ্যে আনেন প্রিয়াঙ্কা।
প্রিয়াঙ্কার হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রোজেক্ট। এর মধ্যে টেক্স অফ ইউ রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। পাশাপাশি আমাজনের টিভি সিরিজ সিটাডেল-এর শুটিংও শেষ করেছেন অভিনেত্রী।
সম্প্রতি এক পান মসলার কোম্পানির বিজ্ঞাপন করেন বলিউডের অভিনেতা অক্ষয় কুমার। শাহরুখ খান, অজয় দেবগনের মতো বলিউড তারকারা আগে থেকেই সেই সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
তবে অক্ষয় এই বিজ্ঞাপনে অংশ হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া জানান তার ভক্ত-অনুরাগীরা। তাই তাদের ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে সেই সংস্থা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন অভিনেতা।
নিজের স্বাস্থ্য এবং শরীরচর্চা নিয়ে অত্যন্ত সজাগ অক্ষয়। যা তার চারপাশের লোকজন এবং অনুরাগীদেরও অনুপ্রেরণা জোগায়। তাই তিনি এই ধরনের বিজ্ঞাপনে অংশ নেয়ায় রুষ্ট হন অনেকেই।
এ জন্য বুধবার গভীর রাতে এক টুইট বার্তায় বিজ্ঞাপন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেন অক্ষয়।
সেই পোস্টে ক্ষমা প্রার্থনা করে অভিনেতা লেখেন, ‘আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমার অনুরাগী, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। গত কয়েক দিন ধরে আপনাদের কাছে থেকে যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি তা আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। আমি তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন কখনই করিনি এবং কোনো দিন করব না। বিমন ইলাইচির সঙ্গে আমার চুক্তি নিয়ে আপনাদের আবেগ বুঝতে পারছি। সেই আবেগকে সম্মান জানিয়েই বিনয়ের সঙ্গে সরে দাঁড়াচ্ছি।’
ওই বিজ্ঞাপন থেকে পাওয়া টাকা সমাজসেবার কাজে দান করে দেবেন বলেও জানিয়েছেন অক্ষয়।
তিনি লেখেন, ‘বিজ্ঞাপনের পারিশ্রমিক বাবদ পাওয়া টাকা দান করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই সংস্থা হয়তো বিজ্ঞাপনটির সম্প্রচার চালিয়ে যাবে, অন্তত আইনিভাবে চুক্তির মেয়াদ শেষ না পর্যন্ত। তার দায় আমারই। তবে কথা দিচ্ছি, আগামী দিনে কাজের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকব। বিনিময়ে আপনাদের ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা প্রার্থনা করি।’
তবে সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ কবে শেষ, তার উল্লেখ করেননি অক্ষয়।
আরও পড়ুন:২০১৮ সালের শেষের দিকে মুক্তি পায় ভারতের দক্ষিণের কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিগ বাজেটের সিনেমা কেজিএফ চ্যাপ্টার ওয়ান।
মুক্তির পর শুধু ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এটি। বক্স অফিসে গড়েছিল ইতিহাস।
গ্যাংস্টারদের নিয়ে গল্পের এই সিনেমায় দুর্দান্ত মারকুটে অভিনয় দিয়ে পুরো ভারত মাতিয়েছিলেন কন্নড় রকিং স্টার যশ। শুধু তা-ই নয়, এই সিনেমা দিয়ে দেশের বাইরেও লাখো ভক্ত-অনুরাগী জুটিয়েছেন এই অভিনেতা।
এরপর আবার ১৪ এপ্রিল কেজিএফ চ্যাপ্টার টু মুক্তির পর ঝড় তুলেছে বক্স অফিসে। জনপ্রিয়তা আর খ্যাতির শীর্ষে এখন যশ। তার সঙ্গে যখন অভিনয় করতে মুখিয়ে আছেন একাধিক অভিনেত্রী, কিন্তু তিনি কার সঙ্গে অভিনয় করার অপেক্ষায় রয়েছেন।
সেই অভিনেত্রী আর কেউ নন তিনি বলিউডের মাস্তানি দীপিকা পাডুকোন। ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যশ।
সেই সাক্ষাৎকারে যশ জানান, যদি সুযোগ দেয়া হয় তাহলে দীপিকা পাডুকোনের সঙ্গে কাজ করতে চান তিনি। আর তার বিপরীতে অভিনয় করেই বলিউডে পা রাখতে চান তিনি।
শুধু দর্শকদের নয় অনেক তারকারও পছন্দের অভিনেত্রী দীপিকা। তার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ারের ইচ্ছা প্রকাশ করেন অনেকেই। এবার সেই তালিকায় যোগ হল কেজিএফ তারকা যশ।
আরও পড়ুন:বিগত কয়েক বছরে বলিউডের চেয়ে বেশি সাড়া ফেলছে ভারতের দক্ষিণী সিনেমা। তার উদাহরণ বাহুবলী, পুষ্পা, আরআরআর, কেজিএফসহ অনেক সিনেমা। বর্তমানে বক্স অফিসে চলছে দক্ষিণী কন্নড় সিনেমা কেজিএফ টু-এর ঝড়।
কন্নড়, তেলেগু, তামিল, মালয়ালাম ও হিন্দি ভাষায় মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। এতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কন্নড় রকিং স্টার যশ। আর অন্যতম আরেক প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত।
বলিউড ও দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে পার্থাক্য কোথায়? সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তা নিজের অভিমত জানিয়েছেন সঞ্জয় দত্ত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সেই সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘আমার মনে হয় হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হিরোইজম ভুলতে বসেছে, কিন্তু দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি বীরত্বকে এখনও ভুলে যায়নি। আমি বলছি না যে স্লাইস অফ লাইফ খারাপ। কিন্তু আমরা কেন আমাদের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থানের দর্শকদের ভুলে গিয়েছি, যারা আমাদের দর্শকমহলের একটি বড় অংশ।
‘আমি আশা করি, হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সেই প্রবণতা ফিরে আসবে। আগে আমাদের স্বতন্ত্র প্রযোজক এবং অর্থদাতা ছিল, যা ফিল্ম স্টুডিওগুলোর করপোরেটাইজেশনের অবসান ঘটিয়েছে। করপোরেটাইজেশন ভালো, তবে এটি সিনেমার পছন্দের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেখুন এস এস রাজমৌলির নির্দিষ্ট প্রযোজক রয়েছেন, যারা তার দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন। আমাদের সঙ্গে আগেকার দিনে গুলশান রাই, যশ চোপড়া, সুভাষ ঘাই এবং যশ জোহরের মতো প্রযোজকও ছিলেন। তারা যে সিনেমাগুলো তৈরি করেছেন তা দেখুন। দক্ষিণে তারা কাগজে স্ক্রিপ্ট দেখে, এখানে আমরা কাগজে পরিসংখ্যান দেখি।’
সঞ্জয়কে পরবর্তী সময়ে যশ রাজ ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিতব্য পৃথ্বীরাজ সিনেমায় দেখা যাবে। এতে আরও রয়েছেন অক্ষয় কুমার, মানুষী চিল্লার, সাক্ষী তানওয়ার এবং সোনু সুদ। এ ছাড়া শামশেরায় দেখা যাবে তাকে।
আরও পড়ুন:ভারতের দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল আগারওয়াল মা হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে তার কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে পুত্রসন্তান। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ আছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এ তথ্য জানিয়েছেন অভিনেত্রীর বোন নিশা আগারওয়াল।
এটি জীবনের সেরা সুখবর উল্লেখ করেন নিশা। এর আগে তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন, ‘এটি একটি আনন্দের দিন, একটি বিশেষ খবর আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার অপেক্ষা সইছে না।’
চলতি বছর জানুয়ারিতে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর জানিয়েছিলেন কাজল। ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রেমিক গৌতম কিসলুর সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন অভিনেত্রী। এবার তাদের পরিবারে এলো নতুন সদস্য। তা নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত তারকাদম্পতি।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গৌতম কিসলু তাকে যেভাবে দেখভাল করেছেন, তাতে ভীষণ খুশি অভিনেত্রী। গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বামীকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি আবেগঘন বার্তাও লিখেছিলেন কাজল।
সেখানে তাকে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমাদের সন্তান আসার আগে কতটা যত্ন নিচ্ছ আমার, আমি জানতে চাই, তুমি ঠিক কতটা অসাধারণ একজন মানুষ আর কতটা অসাধারণ একজন বাবা হতে চলেছ।’
শিগগিরই কাজলকে দেখা যাবে চিরঞ্জীবী এবং রামচরণ অভিনীত আচার্য সিনেমায়। ২৯ এপ্রিল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।
মন্তব্য