‘প্রত্যয় স্কিম’ সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত আল্টিমেটাম সোমবার শেষ হয়েছে।
তবে এটি নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী পহেলা জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই লাগাতার কর্মবিরতি চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম এবং মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পূর্বে ঘোষিত সেই কর্মসূচিটি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া কর্মবিরতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস, পরীক্ষা, দাপ্তরিক কাজসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে।
১ জুলাইয়ের কর্মসূচির আগে আরও দুইটি কর্মসূচি পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। কর্মসূচি দুটি হলো- আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালিত হবে। পরীক্ষাগুলো এই কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। পাশাপাশি একইদিন দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। এ ছাড়া ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হবে। পরীক্ষা এই কর্মবিরতিরও আওতামুক্ত থাকবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তাদের ঘোষিত এসব কর্মসূচির সঙ্গে সম্মতি জ্ঞাপন করে স্ব-স্ব শিক্ষক সমিতি সমূহকে এসব কর্মসূচি পালনের অনুরোধ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তের সাথে আমাদের একাত্মতা আছে। আমরাও এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব।
গত ১৩ মার্চ অর্থমন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা বা তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রত্যয় স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা চলতি বছরের ১ জুলাই এবং তার পরবর্তী সময়ে যারা চাকরিতে নতুন যোগদান করবেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
এরপর থেকেই এই স্কিমকে বৈষম্যমূলক দাবি করে এটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সপ্তম উপাচার্য হিসেবে আগামী চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম।
জবি অধ্যাপকদের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হলেন রেজাউল।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বুধবার নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫-এর ১০ (১) ধারা অনুযায়ী প্রফেসর (অবসরপ্রাপ্ত) ড. মো. রেজাউল করিম, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে তার নিয়োগের মেয়াদ যোগদানের তারিখ হতে চার বছর হবে, তবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তিনি নিয়মিত চাকরির বয়সপূর্তিতে মূল পদে প্রত্যাবর্তনপূর্বক অবসরগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন শেষে উক্ত মেয়াদের অবশিষ্টাংশ পূর্ণ করবেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ভাইস চ্যান্সেলর পদে তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ অথবা অবসর অব্যবহিত পূর্ব পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতাদি পাবেন এবং বিধি অনুযায়ী পদ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন।
‘তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজনে যেকোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর চলতি বছরের ১১ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম পদত্যাগ করেন। এর এক মাসের বেশি সময় পর নতুন উপাচার্য পেল প্রতিষ্ঠানটি।
অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও কাজ করেছেন।
তিনি ২০০৮ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিধি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে মানববন্ধন ও শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বিকেল ৪টায় আবার প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিশ্বিবদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আজকের (১৭ সেপ্টেম্বর) মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায় আগামীকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভিসি নিয়ে নয়-ছয় আর নয় আর নয়, ‘ঢাবি রাবি ভিসি পেল, চবি কেন পিছিয়ে গেল’, ‘আর নয় বিজ্ঞাপন, দিতে হবে প্রজ্ঞাপন’, ‘ঢাবি রাবি স্বর্গে, চবি কেন মর্গে’, ‘শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য, ভিসি হবে দক্ষ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ভিসি নিয়োগের একটি গুঞ্জন শোনা যায়। রোববার ভিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত আসেনি। আমাদের সাথে এই প্রজ্ঞাপন-প্রজ্ঞাপন খেলা বন্ধ করুন। ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই কর্মসূচি চলবে।’
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ’আমরা ক্লাসে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি কিন্তু এখনও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা কি আন্দোলনই করে যাব শুধু?
‘বাংলাদেশের অন্য সব স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দেয়া হলেও আমরা এখনো ভিসি পাইনি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ অতিসত্বর ভিসি নিয়োগ দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার। আমরা শিক্ষার্থী, আমাদের জায়গা হচ্ছে পড়ার টেবিলে। আমাদেরকে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে নিন।’
আরও পড়ুন:তরুণ লেখকদের সংগঠন বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২০২৪-২৫ কার্যবর্ষের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাজীবকে সভাপতি এবং ফার্মেসি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল মাসুম হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সভাপতি আমজাদ হোসেন হৃদয় ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান উদ্দিন এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হোক লেখনীর ধারায়’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। তরুণ লেখকদের পরামর্শ দেয়া, পত্রিকায় লেখা প্রকাশে সহযোগিতা করাসহ লেখালেখি বিষয়ক সভা, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম।
বর্তমানে দেশের সরকারি, বেসরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সংগঠনের কার্যক্রম চলমান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য কমন বাথরুম রয়েছে ২৮টি। এর ২৭টিই পুরনো এবং জীর্ণ দশা। কেবল একটি বাথরুমের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সম্পূর্ণ টাইলস করা এবং বেসিন ও কমোডসহ বেশ কিছু অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বাথরুমটিতে। প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছর নতুন করে এসব সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। অত্যাধুনিক ফিটিংস দিয়ে সাজানো বাথরুমটি ব্যবহার করতেন শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। তাই স্বপ্রণোদিত হয়ে বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয় ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর। কমিটি গঠনের পর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এই হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ২২৮ নম্বর কক্ষে থাকা শুরু করেন। তারা দুজন হলের ২৩৪ নম্বর বাথরুমটি ব্যবহার করতেন।
নেতাদের তুষ্ট করতে বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ। তিনি বাথরুমটি আধুনিকীকরণ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বরাবর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর একটি আবেদনপত্র পাঠান। এই আবেদনপত্রের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
আবেদনপত্রটিতে বলা হয়েছে, ‘...জরুরি ভিত্তিতে বাথরুমটি আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি। উল্লেখ্য যে, উক্ত বাথরুমটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি ব্যবহার করে থাকেন।’
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘হল প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাথরুমটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেই। এ কাজে আনুমানিক দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘বিষয়টিকে মোটেও ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের শিক্ষার্থীরা হলগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করে। যেখানে অন্য বাথরুমগুলোর অবস্থা খারাপ সেই পরিস্থিতিতে দুজন বিশেষ ছাত্রনেতার জন্য বিপুল অর্থ খরচ করে বিশেষ সুযোগ দেয়া অন্যায় এবং বৈষম্য। কারণ এই টাকাগুলো কারও ব্যক্তিগত না; বরং শিক্ষার্থীদের ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান মুন্না বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ হিসেবে তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হতো, যারা ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারবেন। ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও ছাত্রলীগের রাজত্ব বজায় রাখতে পারবেন।
‘বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ শায়খুল কখনোই ছাত্রদের জন্য কিছু করেননি। উল্টো বিভিন্ন সময় ছাত্রদেরকে বিপদে ফেলেছেন তিনি। এমন বাথরুম-সেবা ছাড়াও তিনি সবসময় ছাত্রলীগকে নানামুখী সেবা দিয়ে গেছেন। এমন একজন ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার নেই।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ শাইখুল ইসলাম মামুন জিয়াদ বলেন, ‘ওরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছিল। এখানে আমার কিছু করার ছিল না।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক শায়খুল হল প্রাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সরব অবস্থানের পর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
সংগঠনটির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে থেকে শনিবার ভোরে দেয়া স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানানো হয়।
শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, পরিসর ও সংস্কৃতি নির্মাণ, শিক্ষার্থী কল্যাণ, ছাত্র-নাগরিক রাজনীতি নির্মাণ ও রাষ্ট্র-রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে গত বছরের ৪ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ছিলেন এ সংগঠনের সদস্য সচিব। অন্যদিকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ছিলেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক।
৩১ সদস্যের এ কমিটির অনেকেই বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক পদে আছেন।
এমন এক সময়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি তাদের কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত করেছে, যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে।
শিক্ষার্থীরা শুক্রবার ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আট দফা বা ৯ দফার অন্যতম একটি দফা ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, কিন্তু সেই কথাই অনেকেই এখন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলার চেষ্টা করছেন। সমন্বয়কদের অনেকেই এখন ছাত্র রাজনীতির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আমরা এটি মেনে নেব না।’
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল, তবে ক্যাম্পাস থেকে রাজনীতি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার কথা জানান ওই শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে গণবিয়ের আয়োজন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে পাত্রকে অবশ্যই এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হতে হবে। আর উপস্থিত রাখতে হবে দুই পরিবারের অভিভাবকদের।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর হল প্রাঙ্গণে এই গণবিয়ের আয়োজন করা হবে। আয়োজকরা বলছেন, সমাজে বিয়ের বিষয়টিকে সহজ করতে তাদের এই আয়োজন। সেদিন যারা সব শর্ত পূরণ করে বিয়ে করতে চাইবেন তাদের সেদিনের খরচ বহন করবেন হলের অন্য শিক্ষার্থীরা।
এদিকে জহুরুল হক হলের এমন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে ধুম পড়ে গেছে পাত্রপাত্রী খোঁজার। তবে এখানেও সতর্ক বার্তা দিয়েছেন আয়োজকরা।
আয়োজকদের অন্যতম একজন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন সরকার ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘হঠাৎ করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়াটাকে নিরুৎসাহিত করছি আমরা। বিয়ে জীবনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তাই আবেগের বশে কেউ প্ররোচিত হবেন না, আশা করছি। তবে কাউকে নিষেধও করছি না আমরা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই গণবিবাহের মূল টার্গেট, ক্যাম্পাসে প্রেমিক যুগলদের সম্পর্কটাকে হালাল এবং সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান করা।’
যোগাযোগ করা হলে আল আমিন সরকার বলেন, ‘এটা আমাদের প্রতীকী প্রতিবাদ, যেন সমাজে বিয়ে বিষয়টিকে আরেকটু সহজ করা হয়। ছেলের চাকরি থাকতেই হবে- এরকম বাধ্যবাধ্যকতা যেন বন্ধ করা হয়।’
এই আয়োজনের পরিকল্পনা কীভাবে এসেছে জানতে চাইলে আল আমিন সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমাদের সবাই একটা ট্রমাটাইজ পরিস্থিতি অতিবাহিত করছি। তাই আগামী ২০ তারিখ আমরা একটা ভোজের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেই। এখানে আমাদের হলের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকবেন।
‘পরে মাথায় এলো আমাদের হলের অনেক ভাই প্রেম করেন। বিয়ে বিষয়টিকে অনেক জটিল করে রাখায় অনেকে বিয়ে করতে পারছেন না। তাই গণবিয়ের সিদ্ধান্তটা নেই। তবে পাত্রকে অবশ্যই আমাদের হলের হতে হবে। পাত্রী যে কেউ হতে পারেন। আর অবশ্যই এই বিয়ে হবে দুই পরিবারের অভিভাবকদের অনুমতি এবং উপস্থিতিতে।’
তিনি বলেন, বিষয়টি প্রথমে আমি আমাদের হলের গ্রুপে পোস্ট দেই। ভালো সাড়া পাওয়ার পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপে পোস্ট দিয়েছি।’
এখন পর্যন্ত কতজন যুগল আগ্রহ দেখিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য হলের অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। তবে আমাদের হলের দুই ভাইয়ের বিয়ে কনফার্ম। ওনারা পারিবারিকভাবে বিয়েটা করবেন আর ঘরোয়াভাবে এটির আয়োজন আমরা হলে করব।’
এদিকে জহুরুল হক হলের এমন আয়োজনের পর হাফসাতুল জান্নাত চৈতী নামের এক শিক্ষার্থী সব পাত্রীকে হাতে মেহেদী লাগিয়ে দেয়া এবং সাজিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক।
একই দিনে বুয়েটে উপ-উপাচার্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পদে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগ দেও হয়। এতে সই করেছেন উপ-সচিব মোছা. রোখছানা বেগম।
উপাচার্যকে নিয়োগ দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর ১১(১) এবং (২) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামানকে বুয়েটের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়া হলো।
তাকে নিয়োগের শর্তে বলা হয়েছে, যোগদানের তারিখ থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হবে। আগামী চার বছর তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তার নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
তাছাড়া উপাচার্য পদে তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতা পাবেন। বিধি অনুযায়ী তিনি অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিক তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।
প্রথক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনক্রমে দ্য ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (সংশোধিত) অ্যাক্ট, ২০০১-এর ৩ নং অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১-এর ১২ (এ) ধারা অনুযায়ী অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরীকে বুয়েটের উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়া হলো।
তিনি আগামী চার বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তার নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য