উপাচার্যের বিরুদ্ধে দূর্নীতির তদন্তের মধ্যেই কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ায় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উত্তাল পরিবেশ বিরাজ করছে। পূর্বঘোষিত মঙ্গলবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) নিয়োগবোর্ড স্থগিত করার পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষক লাঞ্ছনা, সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী দ্বারা শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালি, অস্থায়ী কর্মচারী দ্বারা উপাচার্য ও শিক্ষকদের অপদস্তের মতো ঘটনা ঘটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবকিছু মিলিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে ক্যাম্পাসজুড়ে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে দফায় দফায় এসব ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় স্ব স্ব পক্ষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তারা।
নিয়োগ বোর্ড সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার দাবি জানাতে এ দিন সকালে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান শিক্ষক সমিতির নেতাদের একাংশ। তাদের কথোপকথন চলাকালে হুড়মুড়িয়ে সেখানে প্রবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সদস্যরা।
এক পর্যায়ে তারা উপাচার্যের বিপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। প্রায় একই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। উপাচার্যের নির্দেশেই তারা কার্যালয়ে প্রবেশ করে উপস্থিত শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তুমুল হট্টগোলের মধ্যে উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান শিক্ষক সমিতির নেতারা। পরে গালিগালাজ, অপদস্ত ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে মানববন্ধন করেন শাপলা ফোরাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা।
মানববন্ধনে ইউজিসির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বন্ধ রাখা, বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত অন্যান্য নিয়োগ বন্ধ রাখা, প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত সকল শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখার দাবি জানান তারা। এ ছাড়া প্রচারিত সকল দুর্নীতির তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করাসহ নানা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা, যারা ইতোমধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন।
‘তাদের দাবি, সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা যদি যোগ্য হিসেবে প্রতীয়মান হন, প্রশাসনের যদি মনে হয়, তারা যোগ্য, তবে তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেতে চান। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়ানোর মতো কোনো বিষয় আছে বলে আমার মনে হয় না।’
ঘটনাস্থলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘নিচে মাইক বেঁধে এক পক্ষ একটি কর্মসূচি পালন করছিল। এক পর্যায়ে ওখান থেকে একটা টিম উপাচার্যের অফিসে দাবি নিয়ে আসে।
‘বিষয়টা হচ্ছে- মানুষের দাবি-দাওয়া থাকতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা চাই যে, কেউ অফিসে ঢোকার আগে (উপাচার্যের) পিএসের (ব্যক্তিগত সহকারী) সঙ্গে কথা বলে বা অনুমতি নিয়ে ঢুকুক, কিন্তু পর্যায়ক্রমে না ঢুকে প্রথমে কর্মকর্তা-কর্মচারী, এরই মাঝে আদর্শিক শিক্ষক গ্রুপ, পরক্ষণেই ছাত্রলীগ ঢুকে পড়েছে। আমি জানি না তারা অনুমতি (পিএসের কাছ থেকে) নিয়েছে কি না।’
তিনি বলেন, ‘একটা ডেকোরামের মাধ্যমে একটা গ্রুপের কথা শেষ হলে অন্য গ্রুপ আসবে- এভাবেই তো শৃঙ্খলা রক্ষা হয়। আমার প্রথম পরিচয় শিক্ষক, দ্বিতীয়ত আমি দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সবার প্রতি এটাই অনুরোধ থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরীন বলেন, ‘যেহেতু নিয়োগ নিয়ে একটি বিষয় তদন্তাধীন, তাই আমরা বলেছিলাম যে, তদন্ত প্রতিবেদন ইতিবাচক না হওয়া পর্যন্ত আপনি (উপাচার্য) নিয়োগে যাবেন না। আর যদি নিয়োগে আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তবে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগের মতো ভালো একটি কাজ দিয়ে নিয়োগ প্রক্রীয়া শুরু করুন।
‘এই সামান্য কথাটি আমরা বলা শেষ করতে পারিনি, এর মধ্যেই অনেক সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী, অছাত্র এবং বহিরাগতদের আমাদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে দাঁড় করানো হয়েছে; আমাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পদে থাকলেও নিয়ম মেনে সেখানে যাই, কিন্তু এরকম একটা মিছিল কীভাবে সেখানে প্রবেশ করল, কারা এর নেতৃত্বে ছিল, কারা তাদের সাপোর্ট দিয়েছেন- তা বের করার প্রয়োজন।’
ইবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পদক ও শিক্ষক ইউনিটের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘ইমামের মতো একটি পদ নিয়ে এমন হচ্ছে; এটি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। আমি নিজেই এখানে শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি ছিলাম। আমি দেখেছি, এখানে যারা এসেছে (মঙ্গলবার), তাদের অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে। তারা উপস্থিত শিক্ষকদের সম্মানহানি করেছে।’
তবে শিক্ষক ইউনিটের কর্মকাণ্ড ‘কুচক্র’ হিসেবে দেখছেন শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিক্ষক, যারা নানা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত, এমন কয়েকজন কুচক্রী মিলে নিয়োগ বোর্ড বন্ধ করতে গিয়েছিল, যা একটি গর্হিত এবং রাষ্ট্রবিরোধী কাজ।
‘এ বিষয়গুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করতে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করব। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও এমন হয়ে থাকে যে, একেকজনের নাম বিকৃত করে চাকরি দিয়ে দিচ্ছে বা চাকরির প্রলোভনে আর্থিক লেনদেন হয়েছে। যেখানে এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে আমার কোনো কনভারসেশনই (আলাপ) নেই সেখানে, ওই চ্যাট বা কল রেকর্ড আমার কি না, এর তো কোনো প্রশ্নই আসে না।’
অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত হবে কি না- প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি এরকম কল রেকর্ড বা অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়োগ বোর্ড বাতিল হয়, তবে তো বাংলাদেশে কোনো কিছুই করা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে আমি আমার বোর্ড মেম্বারদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।
‘শিক্ষকরা যে আজকে এখানে আসবেন, এটাও পূর্বনির্ধারিত ছিল না।’
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীদের কার্যালয়ে প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ছাত্ররা এখানে প্রবেশ করে। আমি জানিও না তারা কারা। তাদের প্রবেশটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল।’
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, নিয়ম মেনে মঙ্গলবার নিয়োগ বোর্ডের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার এক পর্যায়ে তাদের বের করে দেন কর্মকর্তা সমিতির নেতারা। তবে পরবর্তীতে আবার পরীক্ষা শুরু হয়ে ৭ জনকে ভাইভার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।
গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে দানবে পরিণত হওয়ার কারণেই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্বে বিগত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি একথা বলেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে দানবে পরিণত হয়েছিল। প্রথমে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ডটাকে ভেঙ্গে দেয়। পরবর্তীতে গুম-খুনের কালচার চালু করে। এরপর তারা আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয়। দেশে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ পায়। এ সবের মাধ্যমেই তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) ক্রমান্বয়ে একটা দানবীয় সরকারে পরিণত হয়েছিল।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘জনগণকে নির্যাতন করা, হত্যা করা ও একটা ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা ছিলো তাদের (আওয়ামী লীগ সরকারের) টার্গেট। এই দানবীয় শাসকই একটা পর্যায়ে ২০২৪ সালে আমাদের তরুণ-তরতাজা প্রজন্মের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়।’
আজ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের আগে গত বুধবার এই মামলার শেষ সাক্ষী (৫৪তম) তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরা শেষ হলে, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।
ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন সাক্ষী।
এই মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করছেন।
সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত থাকেন।
পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে। সূত্র: বাসস
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য প্রস্তুতের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২টি বেকারিকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারাশী গ্রামের লোকনাথ বেকারি ও শ্রী দুর্গা বেকারিতে এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ।
জানা যায়, বেকারি ২টিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছিল। শ্রমিকরা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই কাজ করে আসছিল। উৎপাদন কক্ষে খোলা জায়গায় পাওয়া যায ময়লা-আবর্জনা ও ধুলাবালিযুক্ত কাঁচামাল এবং ছত্রাকযুক্ত ট্রে ।
এ অবস্থায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও খাদ্য নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী লোকনাথ বেকারিকে ৮০ হাজার টাকা এবং শ্রী দুর্গা বেকারিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযান পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে। কোনোভাবেই খাদ্যপণ্যে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বরদাশত করা হবে না। ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রেখে খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করতে হবে।’
সুনামগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়ে়ছে। রোববার সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এই রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার পৈলনপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহীন মিয়া (৪৮)। তিনি পলাতক আছেন।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শামছুর রহমান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ছাতক উপজেলার পৈলনপুর গ্রামের শাহীন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল একই উপজেলার মৈশাপুর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী ছবদর আলীর মেয়ে সুহেনা বেগমের। বিয়ের পর থেকেই শাহীন মিয়া ব্যবসার জন্য বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে সুহেনা বেগম চাপ দিতে থাকেন। বিভিন্ন সময় এ জন্য তাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। শাহীন ও সুহেনার দুই সন্তান আছে। সুহেনার বাবা ছবদর আলী মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন সময় টাকাও দিয়েছেন। এক পর্যায়ে শাহীন পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু সুহেনা বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অস্বীকার করেন। ২০১২ সালে ২০ মার্চ সন্ধ্যায় সুহেনা বেগম তার মা হালিমা বেগমকে ফোন করে জানান যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী তাকে মারধর করেছেন। এরপর রাত ২টার দিকে শাহীন মিয়া হালিমা বেগমেক ফোন করে বলেন, সুহেনাকে পাওয়া যাচ্ছে না। হালিমার স্বামী তখন প্রবাসে। পরদিন সকালে তিনি পৈলনপুর গ্রামে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাননি। তখন শাহীনও বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে তিনি থানায় একটি জিডি করেন। এর দুদিন পর গ্রামের পাশের সুরমা নদীতে সুহেনার লাশ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় সুহেনার মা হালিমা বেগম ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আটজন সাক্ষ্য দেন। মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে রোববার রায় ঘোষণা করেন আদালতের বিচারক।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদের) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
তার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে উসকানি, ষড়যন্ত্র, হত্যা, আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগ ও নিপীড়নমূলক কৌশলে সমর্থনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। শুনানির পর তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
এই ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি ৩৯ পৃষ্ঠার। চারটি ভলিউমে এক হাজার ৬৭৯ পৃষ্ঠার ডকুমেন্টারি এভিডেন্স আমরা দাখিল করেছি। সঙ্গে তিনটি অডিও ও ছয়টি ভিডিও দাখিল করা হয়েছে। এই মামলায় ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি হাসানুল হক ইনু। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখাতে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
প্রথম অভিযোগ (গণমাধ্যমে প্ররোচনা): জুলাই আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত, সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন দমন এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আসামি হাসানুল হক ইনু জাসদের প্রধান হিসেবে গত বছর ১৮ জুলাই ‘মিরর নাও’ নামের একটি ভারতীয় গণমাধ্যমে উসকানি দিয়েছেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ (দেখামাত্র গুলি) : গত বছর ১৯ জুলাই গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইনু উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন, কারফিউ জারি এবং আন্দোলনকারীদের ‘শুট অ্যাট সাইট’ অর্থাৎ দেখামাত্র গুলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাসানুল হক ইনু ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বাস্তবায়নে প্ররোচনা ও উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি তাতে সহায়তা করেছেন।
তৃতীয় অভিযোগ (কুষ্টিয়ায় দমন-পীড়ন): গত বছর ২০ জুলাই হাসানুল হক ইনু তার নিজ জেলা কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে ফোন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্র-জনতার ছবি দেখে তালিকা তৈরি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের ফলে কুষ্টিয়া পুলিশের একটি অংশ এবং ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র ক্যাডাররা গত বছর ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালালে ছয়জন নিহত হন।
চতুর্থ অভিযোগ (লিথাল উয়েপন): সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে আন্দোলন দমনে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার, ছত্রীসেনা নামিয়ে ও হেলিকপ্টার দিয়ে বোম্বিং করে আন্দোলনকারীদের হত্যা ও নির্যাতনের ষড়যন্ত্র করেন ইনু। গত বছর ২০ জুলাই তিনি এ নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
পঞ্চম অভিযোগ (টিভি চ্যানেলে উসকানি): গত বছরের ২৭ জুলাই আসামি হাসানুল হক ইনু নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেলে আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ওইসময় তিনি দেশে সরকারের কারফিউ জারি, আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার ও নির্যাতনের কৌশলকে সমর্থন করেন তিনি।
ষষ্ঠ অভিযোগ (জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব): গত বছর ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের সভায় হাসানুল হক ইনু আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী জোটের ক্যাডারদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনকে বৈধতা দেন।
সপ্তম অভিযোগ (কারফিউ ও গুলিবর্ষণে সমর্থন): গত বছর ৪ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে আন্দোলন দমনে কারফিউ জারি ও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের সিদ্ধান্ত সমর্থন ব্যক্ত করে তার দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন ইনু।
অষ্টম অভিযোগ (কুষ্টিয়ায় আন্দোলনে হত্যা): সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হাসানুল হক ইনুর ষড়যন্ত্র ও নির্দেশে গত বছর ৫ আগস্ট কুষ্টিয়ায় ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা পুলিশের উপস্থিতিতে নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। তাদের গুলিতে শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, মো. উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী এবং চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ শহীদ হন।
ঢাকার একটি আদালত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ ও পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আদেশ দিয়েছেন।
আজ দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
আবেদনে বলা হয়, সাইফুল আলম, আব্দুস সামাদ ও আব্দুল্লাহ হাসান পরস্পরের যোগসাজশে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে ‘এএম ট্রেডিং’ নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে জাল নথি তৈরি ও ব্যবহার করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণের নামে ১০৪ কোটি ২০ লাখ ৭৭ হাজার ৭০৮ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সাইফুল আলম দুর্নীতির মাধ্যমে এই অর্থ এস আলম সুপার ইডিবল ওয়েলের স্বার্থে স্থানান্তর বা পুনর্বিন্যাস বা রূপান্তর করেছেন, যার পরিমাণ ৩৪০ কোটি টাকা বলে অভিযোগে উল্লেখ আছে।
তদন্ত চলাকালে আসামিরা বিদেশে পলাতক থাকায় তাদের আটক করা যায়নি। তাই আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করে।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এজলাসকক্ষে সময় টিভির প্রতিবেদক আসিফ হোসাইনকে মারধরের প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গণমাধ্যমকর্মীরা মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে অভিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ তাঁকে আদালত থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান গণমাধ্যমকর্মীরা।
গণমাধ্যমকর্মীরা বলেছেন, সাংবাদিকদের মারধর করা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এজলাসের মতো জায়গায় বিচারকের সামনে সাংবাদিককে মারধর করা হলো, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
৪ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক মনজুরুল আলমের (পান্না) জামিন শুনানি চলাকালে মারধরের শিকার হন আসিফ হোসাইন। তিনি অভিযোগ করেন, আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি তাকে মারধর করেছেন। তবে আইনজীবী তা অস্বীকার করেছেন।
মানববন্ধনে অভিযুক্ত আইনজীবীর শাস্তি দাবি করে সময় টিভির সাংবাদিক ফারুক ভূঁইয়া বলেন, ‘আদালতের এজলাসে মব সৃষ্টি করে হামলা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই ঘটনা দেখিয়ে দিল বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল না।’ এই ঘটনায় কোনো বিচার হবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
সময় টিভির আরেক সাংবাদিক হারুনর রশীদ বলেন, অপরাধীকে আদালত থেকে বহিষ্কার করা হোক। সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে।
একাত্তর টিভির সাংবাদিক শাহনাজ শারমিন বলেন, সাংবাদিকেরা নির্যাতিত হলে কেউ প্রতিবাদ করে না। সবার কাছেই সাংবাদিকেরা মার খায়। সাংবাদিক মারা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। একসময় সাংবাদিকেরা মার খেলে সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত এসে সুরাহা করত। কিন্তু এখন প্রতিবাদটুকুও হয় না। কারণ, সাংবাদিকদের মধ্যে সেই ঐক্য নেই। সাংবাদিকদের এক হতে হবে।
মানববন্ধনে গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, সাংবাদিকেরা এখন আদালতেও মার খাচ্ছেন। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে হবে, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এজলাসে হামলার মতো ঘটনা লজ্জার।
মানববন্ধনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) ও তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন।
আজ দুদক-এর জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
আবেদনে বলা হয়েছে, গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও অন্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানটি চলমান রয়েছে।
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং দেশের বাইরে দুর্নীতি ও অবৈধভাবে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার স্ত্রী দেশ ছেড়ে বিদেশে পালানোর জন্য তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধানকার্য ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায়, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
মন্তব্য