সজ্জন ও সচ্চরিত্রবানদের দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
রোববার বিকালে নিউজবাংলাকে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে দুপুরে চবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা কমিটি দেব। ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকে যারা সজ্জন, সচ্চরিত্রবান তাদেরকে আমরা শীর্ষ নেতৃত্বে আনবো।‘
স্মার্ট ছাত্রলীগ ধারণার সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কার্যক্রম সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না জানতে চাইলে ইনান বলেন, ‘বাংলাদেশ স্মার্ট হচ্ছে, ছাত্রলীগ স্মার্ট হচ্ছে। সুতরাং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকেও স্মার্ট হতে হবে। এটার ব্যতয় ঘটানোর সুযোগ নেই।‘
বৃহস্পতিবার দুই কর্মীর কথা কাটাকাটির জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায় শাখা ছাত্রলীগের দুই উপ গ্রুপ সিক্সটি নাইন ও সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে অন্তত ছয় কর্মী আহত হয়। এ ঘটনার পরই থমথমে অবস্থা বিরাজ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
পরদিন শুক্রবার দুপুরেও দুই গ্রুপের কর্মীরা একে অপরকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দিতে থাকে। সন্ধায় ফের বাধে সংঘর্ষ।
একই সময়ে লাইনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইটে সংঘর্ষে জড়ায় বিজয় ও সিএফসি গ্রুপের আরেকাংশ (সভাপতি গ্রুপ)। এদিন আরও ৪ কর্মী আহত হয়।
ঘটনার জের না কাটতেই শনিবার দিনভর ক্যাম্পাস জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করে৷ রাতে বিজয় গ্রুপের এক কর্মীকে মারধর করে সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা। এ ঘটনায় সংঘর্ষের শঙ্কা থাকলেও পুলিশ ও প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
একই সময়ে শাহ জালাল হলে সিক্সটি নাইন ও শাহ আমানত হলে সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা একে অপরকে উদ্দেশ্য করে মুহুর্মুহু শ্লোগান, স্লেজিং ও বাজি ফুটাতে থাকে।
শেষে প্রশাসন ও পুলিশ দুই হলে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
সংবাদ প্রকাশের জেরে রোববার ক্যাম্পাসে কর্মরত এক সাংবাদিকের ওপরও হামলার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘সাংবাদিককে মারধর এটা অবশ্যই নিন্দনীয় কাজ। আমরা খতিয়ে দেখে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।‘
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ চলাচল এবং প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসসহ চারদিন মেট্রো রেলের টিএসসি স্টেশন বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানান।
টিএসসি মেট্রো স্টেশন যে চারদিন বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলো- আগামী ১৬ ডিসেম্বর, ২৫ ডিসেম্বর, ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি।
প্রক্টর বলেন, ‘বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের ছয়টি পয়েন্ট চাইলেই আমরা বন্ধ করতে পারি। কিন্তু ঠিকই মেট্রো স্টেশন দিয়ে লোকজন চলে আসবে। তাই আমরা উল্লিখিত চারদিন মেট্রো রেলের টিএসসি স্টেশন বন্ধের সুপারিশ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এক সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আমি ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেট্রো রেলের টিএসসি স্টেশন চারদিন বন্ধ রাখার জন্য সুপারিশ করেছি।’
ঢাবি প্রক্টর জানান, সুপারিশের পর যোগাযোগ সচিব তাৎক্ষণিক মেট্রো রেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে তাএই চারদিন স্টেশনটি বন্ধ রাখতে বলেছেন। আশা করি, এ বিষয়ে শিগগির মেট্রো রেলকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হবে।
ডাকসু নির্বাচন
সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডাকসু নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং গঠনতন্ত্র বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের জানুয়ারির শেষে কিংবা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ডাকসু নির্বাচন হতে পারে।
আরও পড়ুন:ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সোমবার রাতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ একাধিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অ্যাকটিভিস্ট জাহিদ আহসান বলেন, ‘আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, ভারতের সঙ্গে খেলা হবে সমানে সমান। কোনো রাজা-প্রজার সম্পর্ক থাকবে না। শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আমরা ভারতের আধিপত্য মেনে নেব না।’
সমাবেশের একপর্যায়ে সেখানে মিছিল নিয়ে যোগ দেন জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় তারা ‘হিন্দু মুসলিম ঐক্য করো, বাংলাদেশ রক্ষা করো’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, চলবে না চলবে না’, ‘দূতাবাসে হামলা, জগন্নাথ হল মানবে না’ ধরনের স্লোগান দেন। ওই সময় বাকি শিক্ষার্থীরা হাততালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান।
সমাবেশে জগন্নাথ হলের ছাত্র জয় পাল বলেন, ‘ধর্ম,বর্ণ, জাত-পাত নির্বিশেষে আমরা সকলেই বাংলাদেশি। এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা সকলেই এক।
‘বাংলাদেশের সনাতনীসহ সকল নাগরিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসে যে হামলা হয়েছে, সেটির বিরুদ্ধে শুধু জগন্নাথ হল নয়, সকলের উচিত প্রতিবাদ জানানো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে আমাদের উদ্দেশে বলা হয়, আমরা নাকি ভারতের দালাল।
‘আমরা যদি ভারতের দালালই হতাম তাহলে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সংহতি জানাতে আমরা এখানে আসলাম কেন?’
পরবর্তী সময়ে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন বিভাজন না করা হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান জয় পাল।
ছাত্রদলের প্রতিবাদ
ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভারত সরকার ভিয়েনা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কূটনীতিকদের সুরক্ষা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সহিংস ঘটনার সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ত অবস্থান উক্ত ঘটনার পেছনে কর্তৃপক্ষের মৌন সম্মতির স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
‘বিগত ২৮ নভেম্বরে কলকাতায়ও একই ধরণের সহিংস ঘটনা ঘটেছে, যা একটি বিপজ্জনক পরম্পরা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি কূটনীতিকদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান, হামলার ঘটনার যথাযথ তদন্তপূর্বক দায়ীদের চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্য ভারত সরকার ও রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানান ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন:বাবাকে না পেয়ে ১৪ বছরের এক শিশুকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উখিয়া-টেকনাফের শিক্ষার্থীরা শনিবার ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ উখিয়া-টেকনাফ (ডুসাট)’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে ডুসাটের সভাপতি জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘টেকনাফ থানা পুলিশ ১৪ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে অস্ত্র মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, শিশুটির বাবাকে না পেয়ে তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রশাসনের প্রতি সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং তদন্তের স্বার্থে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফ প্রশাসনের মাধ্যমে বন্দুকযুদ্ধ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং পাহাড়, বন, নদী, খাল ও সরকারি খাস জমি দখলকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
‘টেকনাফে নাফ নদে জেলেদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। সর্বোপরি টেকনাফ-উখিয়ার শিক্ষার হার বৃদ্ধি করে, শিক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’
সংগঠনের আরেক সদস্য ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমরা আর শেখ হাসিনার ওসি প্রদীপের যুগে ফিরে যেতে চাই না। আমরা উখিয়া ও টেকনাফের মানুষের নিরাপত্তা চাই।’
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা দশটি দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো হলো:
১. সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিকে অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করতে হবে এবং তদন্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
২. টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তদন্তের স্বার্থে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. উখিয়া ও টেকনাফে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ডে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
৪. সন্ত্রাস, মাদক, অপহরণ এবং চাঁদাবাজি নির্মূলে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং একজন অফিসার এক বছরের বেশি যেন দায়িত্বে না থাকেন তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. উখিয়া ও টেকনাফে আগে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. উখিয়া ও টেকনাফের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
৮. প্রশাসনের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে দ্রুততম সময়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯. রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান করতে হবে।
১০. কাউন্সিলর একরামসহ বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ড তদন্তের উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ ওঠে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। আদালত ওই শিশুর জামিন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাউসিফুল করিম রাফি উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (২) রেজাউল করিমের ছেলে এবং হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় তার বাবাকেও আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:আল্টিমেটামে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্য কার্যালয়ের লোকজনকে বের করে দিয়ে দুটি কলাপসিবল গেট তালবদ্ধ করে রাখেন।
বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে উপাচার্যের নামফলক তুলে দিয়ে কার্যালয়ে তালাবদ্ধ করে দেন শিক্ষার্থী। এ সময় তারা বলেন, ‘উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
জুলাই-বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ না করা এবং বার বার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করার অভিযোগ তুলে বুধবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এজন্য তারা বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে নামেন এবং উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দেন।
এদিকে উপাচার্য মঙ্গলবার রাত থেকেই ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখলেও সাংবাদিকদেরকে তিনি এড়িয়ে চলছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মো. মোকাব্বেল শেখ বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের আল্টিমেটাম ছিলো। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। আজকে আমরা তার কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছি। দাবি আদায়ে এরপর ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব সংগঠনের সমন্বয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, ‘আল্টিমেটামে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করায় তার কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছি। তিনি দ্রুত পদত্যাগ না করলে এরপর আমরা উপাচার্যের বাংলো ঘেরাও করব।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন ববি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজা শরিফ বলেন, ‘এই উপচার্য আওয়ামী দোসরদের পুর্নবাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সবশেষ শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার বিরোধিতা সত্ত্বেও বিতর্কিত ব্যক্তিকে ট্রেজারার হিসেবে যোগদানে সহযোগিতা করেছে উপাচার্য।
‘এই উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজই সময়মতো করেন না। তিনি তার নিজের গতিতে চলেন। যার ফলে শিক্ষার্থীরা সময়মতো পরীক্ষার রেজাল্ট পাচ্ছেন না, মেডিক্যালে গেলে ওষুধ মিলছে না। সার্বিক বিষয় মিলে আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলন করছি। আজ আমরা সব শিক্ষার্থী মিলে উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছে। বিষয়টি আমরা অবগত আছি।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতি থাকবে কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
উপাচার্যদের পক্ষ থেকে দুই ধরনের মতামত আসায় শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই দুই পক্ষের মধ্যকার বৈঠক শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে বুধবার বৈঠক করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে তুলনামূলক বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়। আবার নতুন প্রতিষ্ঠিত এবং তুলনামূলক কম শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতি রাখার পক্ষে মতামত দেয়।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযাগ কর্মকর্তা সিরাজ উদ-দৌলা খান জানান, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পাওয়া বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, বৈঠকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির বিষয়ে বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের মতামত গ্রহণ করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) সঙ্গে আলোচনা করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে অংশ নেয়া উত্তরাঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্যরা বিভক্ত। ফলে সিদ্ধান্ত হয়নি।
‘বিষয়টি প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা ও ছাত্র উপদেষ্টাদের কাছেও যেতে পারে। তা ছাড়া ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতামতও নেয়া হতে পারে।’
আরও পড়ুন:রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েক দিনে সংঘটিত সংঘর্ষ এবং উস্কানিমূলক পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের সংযম প্রদর্শনের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক দিনে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষ এবং উস্কানিমূলক পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে না জড়িয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
ভাঙচুর ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট থানার উপ-পরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে রোববার মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সোমবার আদালতে আসে। ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত এজাহার গ্রহণ করে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
সূত্রাপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখার সাব-ইন্সপেক্টর অনুপ দাস এ তথ্য জানান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের ৭/৮ হাজার শিক্ষার্থী ২৪ নভেম্বর রোববার বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রসহ দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে। তারা সরকারি অস্ত্রের (পিস্তল) গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরি, সরকারি ডিউটিতে ব্যবহৃত সাঁজোয়া যান বা এপিসি (আর্মার পার্সনেল ক্যারিয়ার) ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করা, জীবননাশের হুমকি দেওয়া এবং ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে।
এছাড়া পুলিশের এপিসি কার ও ডিউটিরত পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য