চট্টগ্রামের স্কুলশিক্ষক মৌলানা সৈয়দ মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন সিদ্দিকির ৬ সন্তানই মেয়ে। এ নিয়ে আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা নানা কথা বললেও মেয়েদের নিয়ে গর্বের শেষ ছিল না তার। স্কুলে শিক্ষকতা করে পাওয়া অর্থ দিয়ে নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি।
মেয়েদের নিয়ে বড় বড় স্বপ্নের কথা বলতেন আলতাফ হোসেন। সেই স্বপ্নে রাঙিয়ে দিতেন কন্যাদের।
চাকরির সুবাদে মেয়েরা ছোট থাকা অবস্থাতেই নিজ এলাকা ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভা ছাড়তে হয় তাকে। পুরো পরিবার নিয়ে ছুটেছেন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা। তবে মেয়েদের পড়ালেখায় ক্ষতি হতে দেননি একবিন্দু।
মেয়েরা বড় হতে থাকলে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা তাদের জন্য বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসতে শুরু করেন। কিন্ত নিজের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েননি আলতাফ হোসেন। তার ভাষ্য, ‘মেয়েরা পড়াশোনা শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে।’ এ নিয়েও আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশীদের আপত্তির শেষ ছিল না। অবশ্য সেসব কখনও গায়ে মাখেননি মৌলানা আলতাফ। বরং মেয়েরা যেন কারও কথায় কখনও স্বপ্নচ্যুত না হয়, সেই চেষ্টাই করতেন তিনি।
২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর আলতাফ হোসেনের মৃত্যু হয়। তবে তার স্বপ্ন আর সংগ্রাম বৃথা যেতে দেননি তার মেয়েরা।
আলতাফ হোসেনের দুই মেয়ে সৈয়দা ফাতেমা সিদ্দিকা ও সৈয়দা জান্নাতুন নাঈম রানী ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
তাদের ছোট দুই বোন সৈয়দা ইসরাত জাহান সিদ্দিকা ও সৈয়দা তানজিনা সিদ্দিকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। পাশাপাশি বিসিএসের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
ছোট দুই বোনের মধ্যে সৈয়দা রাহিমা সিদ্দিকা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে (চমেক) শেষবর্ষে পড়ছেন। সবচেয়ে ছোট সৈয়দা নিশাত সিদ্দিকা পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগে।
জান্নাতুন নাঈম অবশ্য ৪০তম বিসিএসেই ক্যাডার হিসেবে (শিক্ষা) সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সেবারই প্রথম বিসিএসে অংশগ্রহণ করেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে ২০১৫ সালে স্নাতক ও ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।
৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে ফের সুপারিশপ্রপ্ত হন জান্নাতুন, এবার তার সঙ্গে সুপারিশপ্রাপ্ত হন বড় বোন ফাতেমা সিদ্দিকাও। তবে ফাতেমা ৪১তম বিসিএসেই প্রথমবার অংশগ্রহণ করেন তিনি। সে হিসেবে দুই বোনই প্রথমবার অংশগ্রহণ করেই সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
ফাতেমা সিদ্দিকার পড়াশোনা চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে। ২০১৪ সালে বাংলায় স্নাতক ও পরের বছর একই কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।
স্বপ্ন ছুঁয়ে জান্নাতুন নাঈম বলেন, ‘আমরা ৬ বোন একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি। আর্থিক টানাপোড়ন থাকলেও আমাদের কখনও বুঝতে দেননি বাবা। সবার আগে আমাদের পড়াশোনাকে আগ্রাধিকার দিতেন তিনি। আমরা প্রথম তিন বোন ২০১৮ সালে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলাম। তখন বাবা অনেক খুশি হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে আমার ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট ঘোষণার ১০ দিন আগে তিনি আমাদের ছেড়ে যান। উনি আমাদের সফলতা দেখে যেতে পারেননি, তবে আমাদের বিশ্বাস- উনি আমদের সঙ্গেই আছেন।’
ফাতেমা সিদ্দিকা বলেন, ‘আব্বু-আম্মু দু’জনই পড়াশোনা জানা মানুষ হওয়ায় আমরা শিক্ষার পরিবেশটা পেয়েছি। পরিবারে আমাদের পড়াশোনাটাই সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার) পেত। বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলতেন। আব্বুকে এসে বলতেন- আপনারা তো বয়স্ক হয়ে গেছেন, মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন। মেয়েদের কে দেখবে? তখন আমার বাবা বলতেন- আমার মেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হবে। তারা নিজেরাই নিজেদের দেখবে, দেশ ও দশের জন্য কাজ করবে।’
‘মেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল আলতাফ হোসেনের একমাত্র স্বপ্ন ছিল’ বলে জানান তার স্ত্রী সৈয়দা কুলসুমা আকতার। তিনি বলেন, ‘তখন কীভাবে যে মেয়েদের নিয়ে এত কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছি, এখন পেছনে তাকালে অবাক লাগে। তাদের বাবার একমাত্র স্বপ্নই ছিল- মেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করা। রক্ষণশীল পরিবারে মেয়েদের পড়াশোনা করতে দেয়া হয় না বলে ধারণা অনেকের। কিন্তু ওদের বাবার মৌলানা ছিলেন। উনি তো সবকিছু জানতেন। উনি বলতেন- শালীনতার মধ্যে থেকে জ্ঞানার্জনে কোনো বাধা নেই। আমার মেয়েরাও অনেক মেধাবী ছিল। তারা সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় বৃত্তি পেত।’
সৈয়দা কুলসুমা বলেন, ‘একসময় আমাদের মেয়েদের নিয়ে যারা নেতিবাচক কথা বলত, তারা এখন তাদের নিয়ে গর্ব করে। তাদের ধারণ করে। এখন অনেকেই বিশ্বাস করে যে, মেয়েরা চাইলেই অনেক কিছু পারে।’
মৌলানা আলতাফ হোসেনকে উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন, ‘উনি বলতেন- আমার এই ছয়জন মেয়ে বলে কী হয়েছে? তারা মানুষ হলে ছেলেদের চেয়েও বেশি কিছু। আমার ছয়জন মেয়ে নয়, তারা আমার রত্ন।’
স্থানীয় কাউন্সিলর মো. আমান উল্লাহ বলেন, ‘উনি একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন। উনার কোনো ছেল ছিল না, মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করেছেন। আগে তার প্রথম চার মেয়ে প্রাইমারির শিক্ষক ছিলেন। এখন বড় দু’জন বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। ছোট দু’জনও ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। তারা আমাদের এলাকার গৌরব। নারী শিক্ষায় একটা দৃষ্টান্ত এটা।’
আরও পড়ুন:সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে সরকার।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
তার পোস্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নেত্রকোণার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে শুধু শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছে সরকার।
এ ছাড়া নওগাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়, মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে।
পাশাপাশি জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন থেকে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নারায়াণগঞ্জে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন থেকে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বলে ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়াও গোপালগঞ্জের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
আরও পড়ুন:রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট ও যশোর শিক্ষা বোর্ডে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বোর্ডে অধ্যাপক আ ন ম মোফাখখারুল ইসলাম, যশোর বোর্ডে অধ্যাপক খোন্দকার কামাল হাসান, সিলেট বোর্ডে অধ্যাপক শামছুল ইসলাম এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
এর আগে গত ১ জানুয়ারি এ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. নিজামুল করিম, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু তাহের ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. অলিউর রহমান।
দেশের ১১ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সাধারণ ৯টি। এগুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড।
বাকি দুটি বোর্ডের একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং অন্যটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। ১১ বোর্ডে কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার।
আরও পড়ুন:পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত করে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেছেন, ‘কাজটা যুদ্ধের মতো হয়েছে। ঠিক কবে নাগাদ সব বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া যাবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না।’
বুধবার ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন ১৫ জানুয়ারি আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেয়া যাবে। আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেবো না। পাঠ্যবই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলবো না।’
ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম সমস্যাটা হলো- আমরা বিদেশে বই ছাপাব না। তারপর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে। তাতে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যখন কাজ শুরু করা হয়েছিল, সেটা অনেক দেরিতে হয়েছে। অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে।
‘রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না। দলীয় রাজনীতিনিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুদের কাছে বই যাবে। সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সেজন্য উন্নত মানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘তাছাড়া এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছেন তাদের অনেককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যাদের বসানো হয়েছে, তারা অভিজ্ঞ। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সমিতির যে নেতা, তাদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়াটা করতে হয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। বই একটু দেরিতে পেলেও শিক্ষার্থীরা ভালো বই পাবে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে যাবে না।’
পাঠ্যবই নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘গল্পের একেবারে শেষে গিয়ে ছাড়া যেমন ষড়যন্ত্রকারী কে তা বোঝা যায় না, এখানেও তেমন। সেটা সরকারের কেউ হোক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোক, এনসিটিবির হোক, মজুতদার হোক, সিন্ডিকেট হোক। মানে, যে কেউ হতে পারে।
‘তবে এখনই আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আমরা একচেটিয়া ব্যবসা কমিয়ে আনবো। এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে।’
নতুন যে শিক্ষাক্রম আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকে সমালোচনা করছেন- কেন পেছনের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলাম আমরা। আমি মনে করি, যে শিক্ষাক্রম করা হয়েছিল নতুন করে, সেটাতে থাকলে শিক্ষার্থীদের আরও পশ্চাৎপদে নিয়ে যাওয়া হতো।’
তিনি বলেন, ‘দুই বছর এ শিক্ষাক্রম চালিয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরার উপায় ছিল না। সেটা সহজও হতো না। সেজন্য আমরা সাময়িকভাবে পেছনের শিক্ষাক্রমে গেছি। এটা আবার এগিয়ে নেয়ার কাজ করা হবে।
‘এবার কিছু পরিমার্জন হয়েছে। আগামীতে আরও পরিমার্জন করা হবে, যাতে শিক্ষাক্রমে ধারাবাহিকতার কোনো ঘাটতি না থাকে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম।
আরও পড়ুন:দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আজ বুধবার থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টারের অফলাইন ও অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিজিএমই) মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য দেশের ১৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারণী মহল সজাগ রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এবং সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, সতর্কতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকল্পে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখার নির্দেশনার আলোকে ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সব পর্যায়ে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত মেডিক্যাল কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি সব মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। আর ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি।
রাজধানীর সরকারি দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মিরপুরের আর সি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম হবে ‘লালকুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরপুর ঢাকা’। আর শেখ কামাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম হবে ‘আনন্দ নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা’।
গত ২৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিদ্যালয়-২) রেবেকা সুলতানা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রজ্ঞাপনটি মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা, ২০২৩ অনুযায়ী দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হলো। রাজধানীর মিরপুরের আর সি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম ‘লালকুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরপুর ঢাকা’ এবং একই এলাকা মিরপুরের শেখ কামাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম ‘আনন্দ নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা’।”
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২৩–এর তথ্য বলছে, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৫টি। এগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৫ জন। অন্যদিকে শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন।
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) ২০২৫ সেশনের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি পদে বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী মামুন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন মনোনীত হয়েছেন।
সোমবার দুপুর ২টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। পরে বেলা ১টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলে।
কার্যকরী পরিষদের অন্য সদস্যরা হলেন- সহ-সভাপতি পদে বায়েজীদ হাসান রাকিব (দৈনিক ইনকিলাব), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে জোবায়ের আহমেদ (ডিবিসি নিউজ), কোষাধ্যক্ষ পদে রাজীব রায়হান (প্রতিদিনের বাংলাদেশ) এবং দপ্তর ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে শাহ্ আলম (ডেইলি অবজারভার)।
এছাড়া কার্যকরী সদস্য হয়েছেন- সৈকত ইসলাম (জাগো নিউজ), আশরাফুল মিয়া (দ্য নিউজ) ও রাসেল মাহমুদ (ব্রেকিংনিউজনেট.কম)।
নির্বাচনে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল রকিব এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউসুফ হারুন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানো, পোষ্য কোটা বাতিল, চাকসু নির্বাচন ও গুপ্ত হামলার সুষ্ঠু বিচারসহ নয় দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিতে গেলে তাদেরকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলে বেরিয়ে যান উপাচার্য। তবে পরীক্ষার আবেদন ফি না কমিয়ে এক হাজার টাকা বহাল রাখার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিতে প্রশাসনিক ভবনে যান তারা। তখন উপাচার্যের পিএস তাদেরকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রেখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতারকে অন্য দরজা দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র অধিকার পরিষদ চবি শাখার সদস্য সচিব মো. রোমান রহমান বলেন, ‘আজকে প্রশাসনিক ভবনে নয় দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিতে গেলে ওয়েটিং রুমে আমাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করি।
‘এক সময় দেখা যায় ভিসি স্যার প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আমরা দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে স্যারের গাড়ির সামনে দাঁড়াই। স্যারকে বিষয়টি অবগত করি। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো কথাই শুনতে রাজি ছিলেন না। তার ভাষ্যমতে, তাকে এ ব্যাপারে কেউ জানায়নি।
তবে চবির ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানোর বিষয়ে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় ফি কমানোর বিষয়ে আলাপ হয়েছিলো। তবে আগের বছরের খরচ বিবেচনা করে এ বছর ফি কমানো সম্ভব হয়নি।’
পোষ্য কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পোষ্য কোটা আমরা নির্দিষ্ট আসন থেকে দিচ্ছি না। কোনো বিভাগে ১০০ আসন থাকলে এই আসনগুলোতে পোষ্য কোটা প্রযোজ্য হবে না। বরং এর বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত হিসেবে ওই বিভাগে দুই বা তিনটি আসন রেখে পোষ্যদের ভর্তি নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে ওই বিভাগে ১০২ বা ১০৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন।
শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবি হলো- ভর্তি আবেদন ফি ২০০ টাকা করতে হবে; মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা, পোষ্য কোটাসহ সব ধরনের অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে হবে; বন্ধ হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা, বাড়ির দূরত্ব এবং মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ ও অতিদ্রুত নতুন দুটি হল নির্মাণ করতে হবে; ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল এক্সট্রা কারিকুলার সংগঠনসমূহকে অফিস বরাদ্দ দিতে হবে; অনতিবিলম্বে টিএসসি নির্মাণ করতে হবে; অতি দ্রুত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দিতে হবে; প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল প্রদান ও অনলাইনে রেজাল্ট প্রকাশসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড অনলাইনভিত্তিক করতে হবে; সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হামলার সুষ্ঠু বিচার ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য