ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে লিফট কিনতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) প্রতিনিধি দলের বিদেশযাত্রা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার দুপুরে পাবিপ্রবির জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশে পাবিপ্রবি প্রশাসন প্রতিনিধি দলের সফর স্থগিত করার সিন্ধান্ত জানিয়েছে।’
এর আগে লিফট কিনতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশবিদ্যালয়ের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের তুরস্ক সফরে যাত্রার কথা জানাজানি হলে সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে পাবিপ্রবি সাধারণ শিক্ষক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান রিজেন্ট বোর্ড সদস্যরাও।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ৬ জুন পাবিপ্রবির ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের লিফট প্রাক জাহাজিকরণ পরিদর্শনে তুরস্ক যাওয়ার সফরসূচি নির্ধারিত ছিল ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খানের নের্তৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ আহমেদ, উপ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী (ইইই) মো. রিপন আলী, উপ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী জহির মোহা. জিয়াউল আবেদীন, প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জি এম আজিজুর রহমান।
বিষয়টি নিয়ে ব্যপক সমালোচনার মুখেও সফর বাতিল না করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদলিপি পাঠায় পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সে সফর স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) সদস্য ও দৈনিক প্রথম আলোর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মোশাররফ শাহ ও সম্প্রতি একাধিক সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে চবিসাস ও চিটাগং ইউনিভার্সিটি এক্স জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক (সিইউজেএন)।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) নেতৃবৃন্দ, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।
সাংবাদিকদের ওপর বারবার হামলার পেছনে প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন বক্তারা। এসময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের ডেপুটি এডিটর তপন চক্রবর্তী চবি উপাচার্যের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কেন তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন? প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকবান্ধব মানুষ। উনি কখনও এ ধরনের ঘটনা মেনে নেবেন না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারেন, আমরা প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। একদিনের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব।’
চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীরা সবসময় হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। মোশাররফের ওপর হামলা একেবারেই পরিকল্পিত। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নামকাওয়াস্তে শাস্তি হয়েছে। আপনি (উপাচার্য) যদি শাস্তি দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমরা বুঝে নেব, আপনি তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।’
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘আজকে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে দাঁড়াতে হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাষ্ট্র- সবার জন্য বিব্রতকর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা-পরিপন্থী কাজ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মোশাররফ শাহের ওপর যে হামলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই প্রত্যাশা করি।’
সিইউজেএন-এর সভাপতি ও দৈনিক আমাদের সময়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হামিদ উল্লাহ বলেন, ‘এ ক্যাম্পাসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ব্যবহার করে ছাত্রলীগ নৈরাজ্য চালাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও জয় বাংলা স্লোগানকে ব্যবহার করে নিয়োগ থেকে শুরু করে সকল অনিয়মে এদের হাত রয়েছে। শিবির থেকে ছাত্রলীগ- কারও চরিত্র পরিবর্তন হয়নি। আজকে যারা ছাত্রলীগের নামে বিভিন্ন নৈরাজ্য চালাচ্ছে, খবর নিয়ে দেখেন, এরা আগে কোন দলের অনুসারী ছিল।’
সিইউজেএন-এর সাধারণ সম্পাদক, চবিসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আজকের পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সবুর শুভ বলেন, ‘গত দুই বছরে চবিতে সাংবাদিকদের ওপর বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মানবিক আচরণ পেয়েছে।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাধারণ সম্পাদক ম. শামছুল ইসলাম বলেন, আজকে আমাদের সহকর্মী মোশাররফ ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালের বেডে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। যা কখনোই আমরা আশা করিনি। আজকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লোক দেখানো ব্যবস্থা নেয়। অথচ যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাদের বিভাগে শাস্তির নোটিশ যায় না। তারা অনায়াসে পরীক্ষায় অংশ নেন। আজকে বহিষ্কৃত, অছাত্ররা হলে অবস্থান করছে। এতে করে আপনাদের ব্যর্থতা সুস্পষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা যদি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে চান, তাহলে হতে পারেন। আপনার এ চেয়ার কিছুদিন পরে থাকবে না। কিন্তু আজকে যারা ক্যাম্পাস সাংবাদিক, তারা আরও বড় বড় সাংবাদিক হবে। তারা আপনাদের ছাড়বে না।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খন্দকার আলী আর রাজি বলেন, ‘মারজান আক্তার, দোস্ত মোহাম্মদ, মোশাররফ শাহ- একে একে আমাদের বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন। প্রশাসন ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।’
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের ব্যুরো প্রধান শিমুল নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের দলীয়করণ এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, উনারাও কথা বলতে এবং ব্যবস্থা নিতে সাহস পান না। খুব বেশিদিন নেই যখন আপনাদের ওপরও তারা এমন হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না। কারণ আপনারা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য এ উচ্ছৃঙ্খলতাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। একদিন তারা আপনাদেরও মাথা ভেঙে দেবে। সেদিনও আমরা লিখব।’
সিউজেএনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সমকালের বিভাগীয় সম্পাদক সারোয়ার সুমন বলেন, ‘এ ক্যাম্পাসে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে। এখানে আমরাও সাংবাদিকতা করেছি।’
উপাচার্যের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি ছাত্রলীগের মাথা না হয়ে সকল শিক্ষার্থীর মাথা হন। এমন শাস্তির ব্যবস্থা করুন যাতে ভবিষ্যতে কেউ সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলার সাহস না পায়।’
সমাপনী বক্তব্যে চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহবুব এ রহমান বলেন, ‘যারা মোশাররফ শাহের রক্ত ঝরিয়েছে, তারা দেশের সকল সাংবাদিকদের রক্ত ঝরিয়েছে। সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে। আজকে সাংবাদিকরাই যদি নিরাপদ না হন, তাহলে এখানে শিক্ষার্থীরা কতটুকু নিরাপদ? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই- প্রতিটি ঘটনায় শুধুমাত্র আশ্বস্ত করেছেন, অথচ পরবর্তীতে বিচারের নামে প্রহসন করেছেন।’
চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শাহাব উদ্দিন নিপু, সিইউজেএন-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, চবিসাস সভাপতি মাহবুব এ রহমান, চবিসাসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবাব আব্দুর রহিম ও সদস্য মারজান আক্তার।
আরও পড়ুন:‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ঢাকার কেরাণীগঞ্জের তেঘোরিয়া ইউনিয়নে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ২০১৮ সালে। এর তিন বছর পর প্রায় ৫ হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চুক্তির কয়েকদিন পর থেকেই শুরু হয় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের মেয়াদ মাত্র এক বছর হলেও তা পেরিয়ে গেছে দুই বছর। প্রকল্পের মেয়াদের দ্বিগুণ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নানা জটিলতায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় আটকে আছে অন্যান্য প্রকল্পের কাজও। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নতুন ক্যাম্পাস পেতে অপেক্ষা আরও দীর্ঘতর হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কেরাণীগঞ্জের তেঘোরিয়া ইউনিয়নে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসের সীমানাপ্রচীর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ক্যাম্পাসের পূর্ব পাশে মুজাহিদনগরের প্রবেশ মুখে জমি অধিগ্রহণ এবং সরকারি গাছ কাটা সংক্রান্ত জটিলতায় এখনও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের প্রাথমিক কাজও শুরু করতে পারেনি। একই অবস্থা ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পাশেও।
পদ্মা সেতু রেললাইনের পাশের এই জায়গায় অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও বড় বড় পুকুর থাকায় সিসি স্ট্রাকচারের কাজও শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উত্তর পাশে মুজাহিদ নগরে প্রবেশের শুরুতেও এখনও শেষ হয়নি প্রাথমিক কাজ। পশ্চিম পাশে অধিকাংশ জায়গায় কাজ শেষ হলেও রাস্তার জন্য অনেক জায়গায় সীমানাপ্রচীর নির্মাণের কাজ বাদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জায়গায় সিসি স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হলেও এখনও ইট গাঁথুনির কাজ শেষ হয়নি।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, পৌনে পাঁচ হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল এক বছর। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি হওয়ায় এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু এক বছর মেয়াদি এই প্রকল্প দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এই সময়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় আটকে আছে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের অন্যান্য কাজও।
সীমানাপ্রাচীরের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় মাটি ভরাট, প্রকৌশল ভবন নির্মাণসহ অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণের কাজও শুরু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বার বার চিঠি দিলেও কাজে কোনো গতি আসছে না। এতে নতুন ক্যাম্পাস পেতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা আরও দীর্ঘতর হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এক বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের দীর্ঘ দুই বছরে মাত্র ৬৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি এর পরিমাণ ৮০ শতাংশেরও বেশি। কাজে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ জটিলতার অজুহাত দিলেও তা মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, অধিগ্রহণ জটিলতায় ছিল মাত্র ১১ একর জমি। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই বছরে বাকি জায়গার কাজও শেষ করতে পারেনি।
এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্ল্যানিং ভবন নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার না পাওয়ায় ক্ষোভে ধীরগতিতে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের টেন্ডার পেতে চুক্তির কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করলেও টেন্ডার না পাওয়ায় পরে কাজের গতি কমিয়ে দেয় ঠিকাদার। এতে এক বছরের প্রকল্পে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অগ্রগতি নেই।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগায় এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করার কথা ভাবছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তবে চুক্তির নিয়মানুযায়ী এক বছর মেয়াদি প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের ঠিকাদার আনোয়ার ব্যাপারী বলেন, ‘সীমানাপ্রাচীরের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ। মুজাহিদ নগরের পাশে কিছু এবং রেললাইনের পাশে এক হাজার ফিটসহ আর মাত্র সাড়ে চার হাজার ফিট বাকি আছে। জমি অধিগ্রহণের কিছু সমস্যা থাকায় আমাদের কাজে দেরি হচ্ছে।
‘অধিগ্রহণ শেষ হলেই মোটামুটি তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। কাজে দেরি হওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ব্যয় বাড়ানোর জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটা প্রস্তাব দেব ভাবছি।’ তবে ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের টেন্ডার না পাওয়ায় কাজে ধীরগতি কি না-এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ঠিকাদার আনোয়ার ব্যাপারী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১১ একর জায়গা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু ঝামেলা ছিল সে কারণে সেসব জায়গায় এখনও কাজ শুরু হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি থাকায় অন্যান্য জায়গায়ও তারা কাজ করেনি। এজন্য আরও বেশি দেরি হয়েছে। অধিগ্রহণের ঝামেলা শেষের পথে, আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ করতে পারব।’
প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী এই প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির কোনো সুযোগই নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কোনোভাবেই ব্যয় বাড়াবে না।’
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দিয়ে আসছি। আমরা ঠিকাদারকে ডেকে পাঠাব। তারা যাতে দ্রুত কাজ শেষ করে সেজন্য আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের হামলায় আহত সাংবাদিক মোশাররফ শাহ হাসপাতালে থেকেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
চবির মেডিক্যাল সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোশাররফ শাহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি দৈনিক প্রথম আলোর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
মঙ্গলবার মোশাররফের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ৪০৮ কোর্সের (মাল্টিমিডিয়া পাব্লিশিং) পরীক্ষা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তার পরীক্ষা শুরু হবে। মোশাররফের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগ হাসপাতালে থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেয়।
ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ‘বিভাগের অনুমতির পরিপ্রেক্ষিতে মোশাররফের পরীক্ষা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিক-বেডে থেকে তার পরীক্ষা হবে। একজন সহকারী প্রক্টর ও বিভাগের শিক্ষক গার্ড হিসেবে থাকবেন।’
তার শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে সোমবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাজিব পালিত বলেন, ‘ওনার শারীরিক অবস্থা ভালো, তবে বাম কানে সমস্যা হয়েছে৷ এটার চিকিৎসা সময় সাপেক্ষ, কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। আমরা যেটাকে কানের পর্দা ফেটে যাওয়া বলি আর কি।’
সংবাদ প্রকাশের জেরে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দ্বিতীয় কলা অনুষদের সামনে হামলার শিকার হন মোশাররফ শাহ।
মোশাররফের ভাষ্য, মারধরকারীরা শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী ও সিএফসি গ্রুপের কর্মী।
মোশাররফ শাহ বলেন, ‘রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে যাচ্ছিলাম বক্তব্য নেয়ার জন্য। এ সময় দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সামনে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রলীগের কর্মী আমাকে আটকায়। আমাকে লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে। আমার মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে সেখান থেকে রব হলে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফা মারধর করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘মারধরের সময় নেতা-কর্মীরা পরবর্তীতে আর ছাত্রলীগ নিয়ে প্রতিবেদন না ছাপানোর হুমকি দেন। তারা বলেন, ‘আর নিউজ করিস, তারপর দেখব তোরে কে বাঁচাতে আসে। ছাত্রলীগকে নিয়ে কোনো নিউজ হবে না।’’
এ বিষয়ে সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আমি এই ঘটনা শুনেছি। খোঁজ খবর নিচ্ছি৷ যারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চবির প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘আমি ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র গিয়েছি। তাকে চিকিৎসা জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সাংবাদিকের ওপর চবি ছাত্রলীগের হামলা এ প্রথম নয়। গত ১৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে চায়ের দোকানে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে চবিসাস সদস্য ও ঢাকা স্টেটের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দোস্ত মোহাম্মদকে মারধর করেন চবি শাখা ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ও আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, উপদপ্তর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হান।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ জুন অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কার হওয়ার পরও ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ক্যাম্পাসে কর্মরত দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি মারজান আক্তারকে হেনস্থা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনা কেন্দ্র থেকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মারুফ ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়।
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র হল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’-এ অবস্থানরত বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের অতিদ্রুত হল ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হল প্রশাসন। একইসঙ্গে মাস্টার্সের ফল প্রকাশ হওয়া আবাসিক ছাত্রীদেরও এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা ও চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার নিউজবাংলাকে এ নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ব্যাপারে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিজ্ঞপ্তির একটি কপি নিউজবাংলার হাতে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, হলের আবাসিকতা লাভ, বসবাসের শর্তাবলি এবং আচরণ ও শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা ২০২১-এর ১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীরা হলে সিট পাবে না। তারা অতিদ্রুত হলের সিট ছেড়ে দেবেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়াও হলের যেসব ছাত্রীর স্নাতকোত্তরের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তাদেরও অতিদ্রুত হল ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। পাশাপাশি কোনো স্নাতকোত্তরের মানোন্নয়ন (ইমপ্রুভমেন্ট) পরীক্ষার্থী বা এম.ফিল অধ্যয়নরত ছাত্রীও হলে থাকতে পারবেন না বলে বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তির পর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হলের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বিবাহিত হলেও তো সবার পরিবার ঢাকায় থাকে না। এক্ষেত্রে তাদের জন্য হলটাই তো সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। এভাবে নোটিশ দিয়ে নামিয়ে দেয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখি না।
হলের বিধিমালার ১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো বিবাহিত ছাত্রী হলে সিটের আবেদন করতে পারবেন না উল্লেখ করে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, ‘আমরা বিধি অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ছাত্রী আছেন যাদের হলে সিট বেশি প্রয়োজন। অনেকের মা-বাবা নেই, অনেকের পরিবার একেবারেই নিম্নবিত্ত। হলে সিট পেলে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সুবিধা হবে। কিন্তু হলে অনেক বিবাহিত মেয়েরা রয়েছেন যাদের খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য পরিবারের আছে। তারা বাইরেও থাকতে পারবেন।’
তবে ওইসব শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে সময়ের প্রয়োজন হলে সে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানান প্রাধ্যক্ষ।
২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫তম সিন্ডিকেটে হল-সংক্রান্ত নীতিমালা পাস হয়। এরপর ১৩ তলাবিশিষ্ট হলটির ১৫৬টি কক্ষে মোট ১২০০ ছাত্রীকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও দৈনিক প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশাররফ শাহর ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার রাতে গঠিত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ জানান, মোশাররফ শাহ-এর ওপর বর্বরোচিত হামলা, সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান তুষারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছাদিকুর রহমান সাগরকে আহত করার পৃথক তিনটি ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শহীদ আবদুর রব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দানেশ মিয়াকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর ড. মো. আহসানুল কবীর পলাশকে সদস্য সচিব করে গঠিত কমিটিতে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট ড. শিপক কৃষ্ণ দেবনাথ ও শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রকিবা নবীকে সদস্য রাখা হয়েছে।
সংবাদ প্রকাশের কারণে রোববার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে দ্বিতীয় কলা অনুষদের সামনে হামলার শিকার হন মোশাররফ শাহ।
মোশাররফের ভাষ্যমতে, মারধরকারীরা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী ও সিএফসি গ্রুপের কর্মী।
তিনি বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে তিনি উপাচার্যের কার্যালয়ে যাচ্ছিলাম বক্তব্য নেয়ার জন্য। এ সময় দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সামনে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রলীগের কর্মী আমাকে আটকায়। আমাকে লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে। আমার মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে সেখান থেকে রব হলে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফা মারধর করে।’
তিনি আরও বলেন, “মারধরের সময় নেতা–কর্মীরা পরবর্তীতে আর ছাত্রলীগ নিয়ে প্রতিবেদন না ছাপানোর হুমকি দেন। তারা বলেন, 'আর নিউজ করিস, তারপর দেখব তোরে কে বাঁচাতে আসে। ছাত্রলীগকে নিয়ে কোনো নিউজ হবে না।”
এ বিষয়ে সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আমি এ ঘটনা শুনেছি। খোঁজ খবর নিচ্ছি৷ যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘আমি ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র গিয়েছি। তাকে চিকিৎসা জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সাংবাদিকের ওপর চবি ছাত্রলীগের হামলা এ প্রথম নয়। গত ১৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে চায়ের দোকানে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে চবিসাস সদস্য ও ঢাকা স্টেটের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিনিধি দোস্ত মোহাম্মদকে মারধর করেন চবি শাখা ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ও আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, উপদপ্তর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হান।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ জুন অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বহিষ্কার হওয়ার পরও ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ক্যাম্পাসে কর্মরত দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি মারজান আক্তারকে হেনস্থা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনা কেন্দ্র থেকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মারুফ ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের হামলায় আহত সাংবাদিক মোশাররফ শাহের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও বাঁ কানের পর্দা ফেটে গেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৯ নম্বর নাক, কান ও গলা বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
সোমবার দুপুরে হাসপাতালের সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাজিব পালিত নিউজবাংলাকে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘ওনার শারীরিক অবস্থা ভালো। তবে বাঁ কানে সমস্যা হয়েছে; আমরা যেটাকে কানের পর্দা ফেটে যাওয়া বলি আর কি। এর চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ, কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।’
এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দ্বিতীয় কলা অনুষদের সামনে হামলার শিকার হন মোশাররফ। ভুক্তভোগী সাংবাদিক মোশাররফ শাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য।
মোশাররফের ভাষ্য, মারধরকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী ও সিএফসি গ্রুপের কর্মী।
ভুক্তভোগী মোশাররফ শাহ বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমি উপাচার্যের কার্যালয়ে যাচ্ছিলাম বক্তব্য নেওয়ার জন্য। এসময় দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সামনে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রলীগের কর্মী আমাকে আটকায়। তারা আমাকে লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে, আমার মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে সেখান থেকে রব হলে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় মারধর করে।’
তিনি বলেন, ‘মারধরের সময় নেতা-কর্মীরা পরবর্তীতে আর ছাত্রলীগ নিয়ে প্রতিবেদন না ছাপানোর হুমকি দেন। তারা বলেন- আর যদি নিউজ করিস, তারপর দেখব তোরে কে বাঁচাতে আসে। ছাত্রলীগকে নিয়ে কোনো নিউজ হবে না।’
এ বিষয়ে সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আমি এই ঘটনা শুনেছি, খোঁজ খবর নিচ্ছি৷ যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘আমি ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়েছি। তাকে চিকিৎসা জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় যারা এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সাংবাদিকের ওপর ছাত্রলীগের হামলা এই প্রথম নয়। গত ১৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে চায়ের দোকানে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে চবিসাস সদস্য ও ঢাকা স্টেটের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিনিধি দোস্ত মোহাম্মদকে মারধর করেন চবি শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, উপদপ্তর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হান। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২২ জুন অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বহিষ্কার হওয়ার পরও ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বহিষ্কৃতরা।
হামলার কয়েক ঘণ্টা পর ছাত্রলীগের চবি শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর জানতে চাইলে সজ্জন ও সচ্চরিত্রবানদের দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে চবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হবে বলে নিউজবাংলাকে জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
এদিকে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অছাত্র ও বহিষ্কৃতের সোমবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় চবি প্রশাসন। রোববার সন্ধ্যায় বিশ্বিবদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদের স্বাক্ষর করা এক জরুরি বিজ্ঞতিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:রাজধানীর শাহবাগে ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণ থেকে ছাত্রদলের এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শেষ হয় রাজু ভাস্কর্যে।
ছাত্রদলের এ মিছিলে ১০ থেকে ১৫ জন নেতা-কর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক তারেক হাসান মামুন, আমান উল্লাহ আমান, হাসান আবিদুর রেজা বায়জীদ এবং নূরে আলম ভূঁইয়া ইমন এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন।
এ সময় নেতা-কর্মীরা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি, ছাত্রদলের ঘাঁটি’, ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’, ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসার দাবি জানান। এ সময় তারা সারা দেশে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার জন্য ছাত্রলীগকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানান।
বক্তারা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে অচিরেই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগনের হারানো গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে ছাত্রদল ঘরে ফিরবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য