ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালুর প্রতিবাদ এবং এই কোর্স বাতিলের দাবিতে আইন পরিবারের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের আইন অনুষদ মাঠের সোনালুতলায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আইন বিভাগে নাইট কোর্স বাতিল চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর আইন বিভাগে শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ কর’, ‘শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্য চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে আইন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি ইউজিসি রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন দিয়েছে। তাদের সেই প্রতিবেদনে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১৭ সুপারিশ রয়েছে। তার একটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সান্ধ্যকোর্স বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রপতিও বলছেন, সান্ধ্যকোর্স বন্ধ করতে হবে। আর আমাদের আইন বিভাগের শিক্ষকরা ভাবছেন, যেখানে নেই সেখানেও সান্ধ্যকোর্স চালু করতে হবে। আইন বিভাগে নাইটকোর্স খোলার উদ্যোগ ২০১৭ সালেও নেওয়া হয়েছিল। সার্টিফিকেট ব্যবসার ফার্স্ট এপিসোড ছাত্ররা সফল হতে দেয়নি, এই এপিসোডও সফল হবে না।’
৪৩তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী জালাল উদ্দীন বলেন, ‘নাইটকোর্স করে কি উন্নতি হয় তা আমরা এফবিএস আর সোশ্যাল সায়েন্সে দেখেছি। আমাদের বাথরুমগুলোর নাজেহাল অবস্থা। সেখানে নাইটকোর্স চালু করে কী উন্নয়ন হবে আমি নিজেও জানি না। এফবিএসে যে খুব বেশি উন্নয়ন হয়েছে তা না। বিল্ডিং হয়েছে, এসি লাগানো হয়েছে। তা ত আমাদের এলামনাইয়রা আগের বার করে দিয়েছে। তাহলে কেন আমাদের নাইট কোর্স লাগবে? আমাদের দাবি আপনারা এই নাইটকোর্স বন্ধ করবেন। আর রেগুলার মাস্টার্সের মান বাড়ান। সেই মাস্টার্সে প্রয়োজনে বাইরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন।
৪৩ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন সিফাত বলেন, নাইট কোর্সের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ডিপার্টমেন্টের উন্নয়ন। আমরা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ডিপার্টমেন্টের উন্নয়নের জন্য কোন খাতে কত টাকা লাগবে সেই তালিকা আমাদের দিন। আমরা সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা মিলে চেষ্টা করব সেই টাকা ম্যানেজ করে দেয়ার। আমরা যদি ম্যানাজ করতে না পারি তারপর আপনারা নাইট কোর্স চালু করিয়েন। আগে আমাদের চেষ্টা করতে দিন।
৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী রাকিব হোসাইন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাদের সারাবছরে পর্যাপ্তসংখ্যক ক্লাস নিতে পারেন না, অথচ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে ঠিকই সময়মতো হাজির হন। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সাবস্ক্রিপশন সময়মতো রিনিউ করা হয় না, তারা দায়িত্বে অবহেলা করেন। সেখানে প্রফেশনাল মাস্টার্স খুলে টাকা কামিয়ে তারা প্রচুর উন্নতি করে ফেলবেন, একথা আমরা বিশ্বাস করি না। এই বাণিজ্যিক উদ্যোগ আইন বিভাগে বাস্তবায়িত হতে দেয়া হবে না।’
সম্প্রতি আইন বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স বা প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ইতোমধ্যেই এই বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন প্রতিবাদমূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এছাড়া বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় আইন পেশায় নিয়োজিতরাও এই কোর্স চালুর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর ও আবাসন নিশ্চিতসহ চার দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার অধিক সময় ধরে গণঅনশন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। তালা মারা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ভবনেও। ঘোষণা করা হয়েছে কমপ্লিট শাটডাউন।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থনে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ফটকসহ একাধিক ভবনে তালা মারার মাধ্যমে তারা এ কর্মসূচি শুরু করেন।
শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।
সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক, শহীদ সাজিদ অ্যাকাডেমিক ভবন, বিজ্ঞান অনুষদ, আর্টস ফ্যাকাল্টির ভবনগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম।
এদিকে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ ব্যাপারে অনশনরত শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা অনশন ভাঙব না। সবার কাছে অনুরোধ, আপনারা যারা অনশন করছেন না, আপনারা ক্লাস-পরীক্ষা বয়কট করুন। আমাদের দাবি পূরণ করেই আমরা বাড়ি যাব।’
অনশনরত শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সময় নির্ধারণ করে দিতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এসে যৌক্তিক সময় দিলে আমরা অনশন ভাঙব।’
জবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহান প্রামাণিক বলেন, ‘আমরা আর লাল ফিতার দৌরাত্ম্য মানব না। এখানেই বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে কাজ করছি। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে; চিঠির কপিও এসেছে।
‘আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত। যৌক্তিক সময় দিয়ে কাজ সম্পন্ন করব।’
এদিকে চলমান গণঅনশনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা দেন তারা।
এর আগে রোববার সকাল থেকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে সারা দিন অভুক্ত থেকে ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন এখনও চিকিৎসা ব্যয় ঠিকভাবে দিচ্ছে না। তাদের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন খরচ শিক্ষার্থীদের টাকায় হচ্ছে। এ প্রশাসন সব দিক দিয়ে ব্যর্থ।
তারা দাবি পূরণ হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস হতে দেবেন না।
এদিকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের দাবির প্রতি পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনুরোধে উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমও রোববার রাতে তাদের সঙ্গে অনশনস্থলে বসে পড়েন। ওই অনশনে একাত্মতা জানাতে রোববার গভীর রাতে হল থেকে বেরিয়ে প্রায় অর্ধশত ছাত্রী শহীদ মিনারের সামনে এসে বসে পড়েন।
শিক্ষার্থীদের দাবি
১. সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে।
২. পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা।
৪. যতদিন আবাসনের ব্যবস্থা না হয়, ততদিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন:গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) শাখার ২৯ জন নেতা-কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আবদুল কাদির স্বাক্ষরিত এক আদেশে রোববার দুপুরে এ তথ্য জানানো হয়।
এ নোটিশে বলা হয়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা সংক্রান্ত বিষয়ে শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট বৈঠকের সিদ্ধান্তে ২৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
একই সঙ্গে যাচাইপূর্বক অধিকতর শাস্তির বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মো. আসিফুল ইসলাম, ২০২০-২১ সেশনের ইলিয়াস সানী, মো. আকাশ আহমেদ, একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের শাবিপ্রবির শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ফারহান হোসেন চৌধুরী, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহসভাপতি শিমুল মিয়া এবং একই বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী দুর্জয় সরকার নিলয়, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী মো. সিয়াম খান ও সজীব চন্দ্র নাথ এবং ২০২১-২২ সেশনের সৈয়দ মাজ জারদি।
পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের মনিরুজ্জামান মুন্না, ২০১৯-২০ সেশনের মোজিদুল হক, একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের শাবিপ্রবি শাখার সহসভাপতি মোহাম্মদ রাকিবুজ্জামান, একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. নাফিউজ্জামান, ২০১৮-১৯ সেশনের মো. ইসমাইল হোসেন ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইউসুফ হোসেন টিটু।
বায়োকেমিস্টি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শুভ্র রায় শ্যাম ও ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. লোকমান হোসেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের মারুফ মিয়া, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তৈমুর সালেহীন তাউস, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের রওফুন জাহান (মিলিনিয়াম), ২০২১-২২ সেশনের শিহাব উদ্দিন মিশু ও মোজাহিদুল ইসলাম সাইমুন, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের রেদোয়ান হোসেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান, একই বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহসভাপতি রেজাউল হক, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের মাঈদুল ইসলাম ও ২০২০-২১ সেশনের তারেক হাসান, বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান। বহিষ্কৃতরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এর মধ্যে শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র সেন হত্যা মামলার আসামি। এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তারা সিলেট কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে মো. শরফুদ্দিনকে তিন বছরের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে সরকার।
পবিপ্রবি আইন, ২০০১ এর ধারা ১৮ (১)(ট) ও ১৮ (৪) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডে সরকার কর্তৃক শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যে নিয়োজিত ব্যক্তি হিসেবে ইনোভা আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরফুদ্দিনকে তিন বছরের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়।
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বাসিন্দা মো. শরফুদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিনিউয়েবল এনার্জি টেকনোলজি বিষয়ে এমএস এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ইইই) বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইইই বিভাগের এডজাসেন্ট ফ্যাকাল্টি শরফুদ্দিন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন প্রকল্পে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।
তার রচিত ‘Physics Panacea’ এইচএসসি এবং এ লেভেল শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি গাইড বেশ সুনাম অর্জন করেছে। অ্যাকাডেমিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য টেলিভিশন সাংবাদিকতা ও লিডারশিপ ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি।
কর্মজীবনে তিনি এমজিআরএস টেক অ্যান্ড ট্রেড, প্যানাসিয়া প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন, এনিপন্য গ্লোবাল বিজনেস, জিজাজো বাংলাদেশ, এবিএস ইন্টারন্যাশন্যাল, এবিসি লার্নিং, ফোকাস স্কিল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, সেন্টার ফর মিডিয়া রিচার্সসহ বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই শরফুদ্দিন বির্তকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং জনসেবায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন।
মো. শরফুদ্দিন ঢাকা বিশ্বব্যিালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ডিবেটিং ক্লাব ও বাঁধন ব্লাড ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী সদস্য, এসএএম ফাউন্ডেশনের সাবেক সদস্য সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দশমিনা স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এবং সেন্টার ফর ইয়ুথ ভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) ২০২৫ সেশনের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি পদে বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী মামুন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন মনোনীত হয়েছেন।
সোমবার দুপুর ২টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। পরে বেলা ১টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলে।
কার্যকরী পরিষদের অন্য সদস্যরা হলেন- সহ-সভাপতি পদে বায়েজীদ হাসান রাকিব (দৈনিক ইনকিলাব), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে জোবায়ের আহমেদ (ডিবিসি নিউজ), কোষাধ্যক্ষ পদে রাজীব রায়হান (প্রতিদিনের বাংলাদেশ) এবং দপ্তর ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে শাহ্ আলম (ডেইলি অবজারভার)।
এছাড়া কার্যকরী সদস্য হয়েছেন- সৈকত ইসলাম (জাগো নিউজ), আশরাফুল মিয়া (দ্য নিউজ) ও রাসেল মাহমুদ (ব্রেকিংনিউজনেট.কম)।
নির্বাচনে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল রকিব এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউসুফ হারুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) মেট্রোরেলের একটি পিলারে নতুন করে আঁকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠন।
সোমবার দুপুর ১টায় টিএসসিতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় ছাত্র সংগঠনগুলোর পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন স্কুল, কলেজ ও শ্রমজীবী মানুষদের এই ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।
এর আগে রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ছাত্রসংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে ছবিটি আঁকে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ অগাস্টে সরকার পতনের পর শেখ হাসিনার ওই ছবিতে লাল রংয়ের ছোপ দিয়ে জুতার মালা পরিয়ে দেয়া হয়। ওই ছবিটি জনতার ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশের প্রতীক হয়ে ওঠে।
এর আগে গত শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অনুমতিতে শেখ হাসিনার ছবিটি মুছে ফেলা হয়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সেদিন রাতেই শেখ হাসিনার একটি ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন।
পরদিন ২৯ ডিসেম্বর রোববার প্রক্টর অফিস থেকে বিবৃতি দিয়ে এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি প্রক্টরিয়াল টিমের অনিচ্ছাকৃত ভুল। এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমরা আরও সতর্ক থাকার অঙ্গীকার করছি।’
বিবৃতিতে এই স্তম্ভটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা জানানো হয়।
সোমবার দুপুর থেকেই টিএসসিতে মেট্রো রেলের সেই পিলারের পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এ সময় ছাত্রসংগঠনগুলো ‘ভারত যদি বন্ধু হও, হাসিনাকে ফেরত দাও’; ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’; হাসিনাকে তুলে আনো, হাজার খুনের বিচার করো’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
এ সময় টিএসসিতে হাসিনার ছবিতে শ্রমজীবী মানুষদের সোৎসাহে জুতা ও ঝাড়ু নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে এসেছেন রিকশাচালক মো. ওমর ফারুক। তিনি একটি জুতা বার বার হাসিনার প্রতিকৃতিতে নিক্ষেপ করছিলেন।
বাসসকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে লাখ লাখ মানুষের সামনে সাধারণ মানুষ ও ছাত্রদের হত্যার দায়ে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত।’
রিকশা না চালিয়ে দাঁড়িয়ে জুতা মারার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষকে অনেক জ্বালাইছে হাসিনা। অনেক ছাত্র হত্যা করছে। এই হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করা আনন্দের। রিকশা তো প্রতিদিনই চালাই, একদিন না হয় হাসিনারে জুতা মারি।’
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান বলেন, ‘টিএসসিতে হাসিনার এই ছবিতে জুতা নিক্ষেপ, ঝাড়ুপেটা করা- হাসিনার প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’
৫ আগস্টের আগেও মানুষ এই ছবিতে ঘৃণার প্রকাশ ঘটিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু সম্প্রতি এটি মুছে ফেলা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন মিলে ওই ছবিটি আবারও এঁকে আগের মতোই ঘৃণা জানাচ্ছেন।’
গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি মুছে ফেলে যখন ফুল, পাখি, লতা-পাতা আঁকা হচ্ছিল, তখন আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি আমাদের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। গ্রাফিতিগুলো স্বৈরাচারের প্রতি আমাদের ক্ষোভ, ঘৃণা ও আক্রোষের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্গীরণ। তাই, আমি মনে করি এই গ্রাফিতিগুলো সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বাসসকে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতিগুলো দেশের প্রতিটি অঞ্চলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজের মতো করে এই গ্রাফিতিগুলোর মধ্যে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ঘৃণা ও ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।’
গ্রাফিতিগুলো ছাত্র-জনতাকে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গ্রাফিতিগুলো ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের অমূল্য সাক্ষী ও সম্পদ। সরকারের উচিত গণঅভ্যুত্থানের এই গ্রাফিতি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া।’
এ সময় ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘স্বৈরাচারের প্রতি মানুষের ঘৃণা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কোনো অপশক্তি মানুষের মনের এই ঘৃণাকে কেড়ে নিতে পারবে না।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানো, পোষ্য কোটা বাতিল, চাকসু নির্বাচন ও গুপ্ত হামলার সুষ্ঠু বিচারসহ নয় দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিতে গেলে তাদেরকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলে বেরিয়ে যান উপাচার্য। তবে পরীক্ষার আবেদন ফি না কমিয়ে এক হাজার টাকা বহাল রাখার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিতে প্রশাসনিক ভবনে যান তারা। তখন উপাচার্যের পিএস তাদেরকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রেখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতারকে অন্য দরজা দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র অধিকার পরিষদ চবি শাখার সদস্য সচিব মো. রোমান রহমান বলেন, ‘আজকে প্রশাসনিক ভবনে নয় দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিতে গেলে ওয়েটিং রুমে আমাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করি।
‘এক সময় দেখা যায় ভিসি স্যার প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আমরা দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে স্যারের গাড়ির সামনে দাঁড়াই। স্যারকে বিষয়টি অবগত করি। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো কথাই শুনতে রাজি ছিলেন না। তার ভাষ্যমতে, তাকে এ ব্যাপারে কেউ জানায়নি।
তবে চবির ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানোর বিষয়ে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় ফি কমানোর বিষয়ে আলাপ হয়েছিলো। তবে আগের বছরের খরচ বিবেচনা করে এ বছর ফি কমানো সম্ভব হয়নি।’
পোষ্য কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পোষ্য কোটা আমরা নির্দিষ্ট আসন থেকে দিচ্ছি না। কোনো বিভাগে ১০০ আসন থাকলে এই আসনগুলোতে পোষ্য কোটা প্রযোজ্য হবে না। বরং এর বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত হিসেবে ওই বিভাগে দুই বা তিনটি আসন রেখে পোষ্যদের ভর্তি নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে ওই বিভাগে ১০২ বা ১০৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন।
শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবি হলো- ভর্তি আবেদন ফি ২০০ টাকা করতে হবে; মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা, পোষ্য কোটাসহ সব ধরনের অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে হবে; বন্ধ হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা, বাড়ির দূরত্ব এবং মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ ও অতিদ্রুত নতুন দুটি হল নির্মাণ করতে হবে; ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল এক্সট্রা কারিকুলার সংগঠনসমূহকে অফিস বরাদ্দ দিতে হবে; অনতিবিলম্বে টিএসসি নির্মাণ করতে হবে; অতি দ্রুত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দিতে হবে; প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল প্রদান ও অনলাইনে রেজাল্ট প্রকাশসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড অনলাইনভিত্তিক করতে হবে; সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হামলার সুষ্ঠু বিচার ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারে থাকা ঘৃণা ও ক্ষোভমিশ্রিত শেখ হাসিনার ছবি শনিবার মধ্যরাতে মুছে ফেলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে গতকাল রাতেই নানা স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
সে সময় মুছে ফেলা সেই গ্রাফিতির ওপর নতুন করে শেখ হাসিনার অন্য একটি গ্রাফিতি আঁকেন একদল শিক্ষার্থী।
ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান, গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে এবং তার সম্মতিতে এ গ্রাফিতি মুছে ফেলার কাজটি করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ, তবে এটি তার ভুল হয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নয়, নিষ্পাপ এবং সরল চিন্তায় এটি করার অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি।
এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেভাবে চাইবে সেভাবেই এই গ্রাফিতি আঁকা হবে এবং এর যাবতীয় খরচ বহন করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটিকে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন এবং এই ঘৃণা স্তম্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উদ্বোধন করবেন বলেও জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।
টিএসসির মেট্রোরেল স্টেশন উদ্বোধনের সময় মেট্রোরেলের পিলারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনার ছবি আঁকে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ।
গত ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণার পর এবং ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পিলারে থাকা এসব গ্রাফিতিতে ছাত্র-জনতা লাল রঙের ছোপ, কাদামাটি এবং জুতা নিক্ষেপ করে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে।
পরে পিলারে উঠে সেই গ্রাফিতির সঙ্গে জুতার মালা সংযুক্ত করে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। সে সময় থেকে গতকাল পর্যন্ত সেভাবেই ছিল গ্রাফিতিটি। এটিকে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবেই মনে করে এসেছে শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘৃণাস্তম্ভে থাকা গ্রাফিতি গতকাল রাত দুইটার দিকে মুছে ফেলার সময় বিষয়টি দুই শিক্ষার্থী প্রথমে লক্ষ করেন। গ্রাফিতি মুছে ফেলার কারণ জানতে চাইলে এবং কাজটি বন্ধ করতে বললে ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং গ্রাফিতি মোছার দায়িত্বরতদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়।
এরপর শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে দেন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ঘটনাস্থলে এসে মুছে ফেলার কারণ ও অনুমতির বিষয়টি জানতে চান।
মেট্রোরেলের এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এটি করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং স্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ফাতেমা বিনতে মোস্তফা।
প্রক্টরের ভাষ্য
গ্রাফিতি মুছে ফেলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আমাকে বলা হয়েছে, তারা যখন রাজু ভাস্কর্যে হওয়া বিভিন্ন প্রোগ্রামের ছবি তুলতে যান, তখন পেছনে শেখ হাসিনা এবং শেখ মুজিবের ছবি চলে আসে। তারা আমাকে জানায়, এই ক্যাম্পাসে শেখ হাসিনা আর শেখ মুজিবের ছবি কেন থাকবে স্যার? এগুলোসহ নানা কথা বললে আমি খুবই ইনোসেন্ট চিন্তা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসকে বললে তাদের কনসার্নে মেট্রো কর্তৃপক্ষ এসব গ্রাফিতি মুছে ফেলে।
‘পরে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালে আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং নতুন ছবি আঁকতে রঙের যাবতীয় খরচ বহন করেছি। এখন শিক্ষার্থীরা যদি চায় আগের গ্রাফিতিই ফিরিয়ে আনা হবে। এটি করতে যা যা খরচ দরকার সেটিও আমরা বহন করব এবং এটিকে অফিশিয়ালি ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করব। একটু পরেই আমরা বিবৃতি দেব।’
পরবর্তী সময়ে প্রক্টর অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা অতি দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, গতকাল গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পেছনে মেট্রোরেলের দুটি পিলারে থাকা শেখ মুজিব এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘৃণাসূচক গ্রাফিতি মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। জুলাই আন্দোলনে এই দুটি গ্রাফিতি বিপ্লব, প্রতিরোধ এবং ফ্যাসিবাদ ধ্বংসের প্রতিনিধিত্ব করে। এই স্মৃতিকে তাজা রাখা এবং প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেয়া আমাদের দায়িত্ব।’
এটি প্রক্টরিয়াল টিমের অনিচ্ছাকৃত ভুল উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমরা আরও সতর্ক থাকার অঙ্গীকার করছি।’
স্তম্ভটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে গত রাতেই শিক্ষার্থীরা মুছে ফেলা গ্রাফিতি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এঁকেছেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার এই ঘৃণাকে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করবে।’
প্রতিবাদ
গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাসহ প্রতিবাদ জানিয়েছেন ছাত্রদলের নেতারাও।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বলেন, ‘অভ্যুত্থানের চিহ্ন মুছে ফেলার অর্থ ইতিহাসের সাক্ষী মুছে ফেলা। পরাজয়ের ইতিহাস মুছে ফেলার তাড়না থাকে কেবল পরাজিত শক্তির। ফ্যাসিস্টের পতনের চিহ্ন মুছে ফেলার ধৃষ্টতা বরদাশত করা হবে না।
‘এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবে সফল হবে না। গণহত্যাকারীদের পরাজয়ের গ্লানি ও মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার বিজয়ের আলেখ্য বারবার নতুন রূপে উদ্ভাসিত হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য