বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অধীনস্ত বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নরসিংদীর অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় নানামুখী অনিয়মের অভিযোগ তোলায় প্রতিষ্ঠানটি একজন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
নিয়োগ পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি, তুলনামূলক কম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে ভাইভা বোর্ডে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা ও নির্বাচিত প্রার্থীর সহকর্মীর মাধ্যমে খাতা মূল্যায়নসহ নানা অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক হলেন মো. মাহমুদুল আলম সরকার। তিনি বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
ভুক্তভোগীর দাবি, লিখিত অভিযোগের প্রতিকার না পেয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করায় আগের তারিখ উল্লেখ করে তাকে বহিষ্কার দেখানো হয়েছে। আর তিনি বহিষ্কারাদেশের চিঠি পেয়েছেন অনেক পরে।
জানা যায়, ২২ ডিসেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পদে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং বয়স অনূর্ধ্ব ৪০ বছর হতে হবে।
৮ এপ্রিল ঢাকায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চারজন প্রার্থীকে ভাইভার জন্য মনোনীত করা হয় এবং পরদিন ঢাকায় বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে ভাইভা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আর ৯ এপ্রিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একজন প্রার্থীকে নিয়োগদানের জন্য চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনার পর ১০ এপ্রিল ভুক্তভোগী পরীক্ষা প্রার্থী বাছাইয়ে অসংগতির উল্লেখ করে ফল পুনঃবিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও অতিরিক্ত সচিব মো. ইউসুফ আলী বরাবর আবেদন করেন। পরে তিনি ১৬ এপ্রিল পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একই বিষয়ে অবহিত করে চিঠি দেন।
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, অধ্যক্ষ পদটি রাজস্ব খাতে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী তৃতীয় গ্রেডের উচ্চতর পদ। কিন্তু ভাইভাতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকা তিনজনের মধ্যে দুই জন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। ওই দুইজনের মধ্যে একজন আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক, যা ওই অধ্যক্ষ পদের কয়েক ধাপ নিচের পদ।
অন্যদিকে মেধাক্রম অনুসারে প্রথম হিসেবে নির্বাচিত প্রার্থীর সহকর্মী ভাইবা পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং খাতা মূল্যায়নে স্বজনপ্রীতি ও ভাইভাতে একপাক্ষিক আচরণ করেন। নির্বাচিত প্রার্থী রোল ক্রম অনুযায়ী নাম ঘোষণার ৪৫ মিনিট পর হাজির হয়েছেন, যা ওই অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে রয়েছে।
লিখিত অভিযোগ আরও বলা হয়, যাকে চূড়ান্ত মনোনয়নে দ্বিতীয় করা হয়েছে, তার শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছে মাত্র ১১ বছর আগে। সে হিসেবে আবেদনের শর্ত পূরণ করেও তিনি লিখিত পরীক্ষার জন্য বিবেচিত হয়েছেন।
এসবের উল্লেখ করে মাহমুদুল আলম সরকার প্রার্থী বাছাইয়ে অসংগতি ও ত্রুটি থাকায় ফল পুনঃবিবেচনার অনুরোধ জানান। তাতেও কোনো ফল না হওয়ায় ভুক্তভোগী ২৭ এপ্রিল উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন।
এদিকে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন না দেয়ার অভিযোগ তুলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও পরিচালক (প্রশাসন) ১২ এপ্রিল ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। তাতে বলা হয়, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আপনার বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ নেয়া হবে না তার কারণ দর্শাতে বলা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক ২৫ এপ্রিল কারণ দর্শানোর অভিযোগের লিখিত উত্তর দেন এবং ২৭ এপ্রিল উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। এরপর ২৭ এপ্রিল তারিখ দিয়ে ওই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করে আদেশ দেয়া হয়।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী মুনতাসির মাহমুদ রহমান এ বিষয়ে মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাদেরকে ভাইভা বোর্ডে রাখা হয়েছে তারা প্রার্থীর চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন। তাছাড়া যাকে নির্বাচিত করা হয়েছে তার সহকর্মীরা তার খাতা মূল্যায়ন ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন। এজন্য আমার মোয়াক্কেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অনেক অনিয়মের সুযোগ ছিল। আরও অনেক বিষয় রয়েছে প্রমাণসাপেক্ষ। আমরা রিট পিটিশন দায়ের করেছি, আমরা আশাবাদী ন্যায়বিচার পাব।’
এসব বিষয় জানতে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) সুকুমার চন্দ্র সাহাকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘আপনার অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু বলব না। আপনার কিছু জানার থাকলে অফিসে এসে লিখিতভাবে জানান। লিখিত ছাড়া আমি উত্তর দেব না। তাছাড়া আমি নিজে থেকে কিছু করি না, বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশে কাজ করি।’
নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী জানান, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা করার অভিযোগে মো. মাহমুদুল আলম সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এখানে আমরা স্বচ্ছভাবে নিয়োগ দিয়েছি। কোনো স্বজনপ্রীতি করা হয়নি। সে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে।’
দেশে টেক্সটাইলের অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও তিনজন বিশেষজ্ঞের মধ্যে দু’জন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্বাচিত করা হয়েছে কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা বুটেক্স (বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে একজন নিয়েছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থাকতে পারবে না এমন কোনো কথা নেই।’
অধ্যক্ষ পদ থেকে কম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানকে পত্র দিয়েছিলাম। তিনি ওই ব্যক্তিকে ভাইভা বোর্ডে পাঠিয়েছেন। ওখানে আমাদের হাত নেই।’
প্রথম হওয়া প্রার্থীর সহকর্মীকে দিয়ে খাতা মূল্যায়ন এবং তাকে ভাইভা বোর্ডে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে চিঠি দিয়েছি। তিনিই ওই শিক্ষককে নিয়োগ বোর্ডে পাঠিয়েছেন। এখানে স্বজনপ্রীতি হয়নি। আর কম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি ভাইভা বোর্ডে থাকতে পারবেন না, এমন কোনো কথা নেই।’
পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়া প্রার্থীর অভিজ্ঞতা ১২ বছর না হলেও তার পরীক্ষা নেয়া ও নির্বাচিত করার কারণ জানতে চাইলে মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘ওই প্রার্থীর ১২ বছরের অভিজ্ঞতা হয়নি তা ঠিক আছে। কিন্তু তিনি পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তাই অভিজ্ঞতা দুই বছর বেশি ধরা যায়।’
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হলো।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আজ এই মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এরপর আবু সাঈদকে গুলি করার দুটি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন মনিটরে ছেলেকে গুলির দৃশ্যের ভিডিও দেখে বার বার চোখ মুছছিলেন।
এরপর প্রসিকিউসনের আবেদনে আগামীকাল এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ৩০ জুলাই প্রসিকিউসনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এই মামলায় অভিযোগ গঠনের প্রার্থনা করেন।
অন্যদিকে, আসামী পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়।
এরপর গত ৬ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
এই মামলার যে ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়, তাদের মধ্যে গ্রেফতার ৬ জন আজ ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন।
এরা হলেন-বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী মো. আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৩০ জুন ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ।
২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে, সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন।
ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে, একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্জ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ৪১ জন জেলা জজসহ একযোগে জেলা আদালতের ২৩০ বিচারককে বদলি করা হয়েছে। বদলি করা এসব বিচারকের মধ্যে রয়েছেন ৫৩ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ৪০ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং ৯৬ জন সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
গতকাল সোমবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপনে তাদের বদলির আদেশ দেয়।
বদলি করা জেলা ও দায়রা জজদের আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে বর্তমান পদের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২১ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আমলে নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫ দিন ধরে ঘুরে মামলা দায়ের করতে না পারা ভুক্তভোগীকে পুলিশ লাইন্স থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নিয়ে তাকে বাদী করে ধর্ষণ মামলা রুজু করানো হয়েছে। আর ওই মামলাতেই সাফিউরকে আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের অভিযোগের যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য নিজে বাদী হয়ে শুক্রবার মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলাতেই গত শুক্রবার রাতে সাফিউরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সকালে তাকে আদালতে চালান করা হয়। বিষয়টি আরও গভীরভাবে জানতে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাফিউরের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এর আগে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয়তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে একই থানায় কর্মরত সাফিউর রহমান নামে আরেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গত ৬ মাস ধরে থানা ব্যারাকেই ওই নারী সদস্যকে ধর্ষণ করে ওই পুলিশ সদস্য। সবশেষ গত ১৫ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকেও সাফিউর থানা ব্যারাকের ওই নারীর রুমে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এর প্রতিকার চেয়ে গত ৫ দিন ধরে ঘুরেও থানায় মামলা করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
মন্তব্য