কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষার্থীকে স্থানীয় একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মূল সড়ক অবরোধ করে হামলাকারীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় টায়ারে আগুন জালিয়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
জানা যায়, সোমবার বিকেলে ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজারে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দিয়ে ইবির দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালানো হয়। স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল যুবকেরা তাদেরকে এলোপাতাড়ি চর-থাপ্পড় ও লাথি মারতে থাকে।
হামলার শিকার দুই শিক্ষার্থী দৌড়ে ক্যাম্পাস গেটে এলে অন্য শিক্ষার্থীরা তাদেরকে উদ্ধার করে ইবি মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে কুষ্টিয়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত শিক্ষার্থীরা হলেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ম্যানেজমেন্ট ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মেহেদি হাসান সুপ্ত ও জিসাদ।
আহত শিক্ষার্থীর বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মফিজ লেকে কিছু শিক্ষার্থী আড্ডা দেয়ার সময় স্থানীয় কয়েকজন বখাটে তাদের সঙ্গে থাকা বান্ধবীদের ভিডিও করে। এর প্রতিবাদে তারা ভিডিও ডিলিট করতে বললে উভয় পক্ষে তর্কাতর্কি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বখাটেরা তাদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীকে শেখপাড়া বাজারে পেয়ে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করে।
এ ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করেন। তারা বহিরাগত মুক্ত ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থী হামলার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ তিন দফা দাবি নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন। ক্যাম্পাসের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এই বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘ঘটনা শোনামাত্র ইবি থানার ওসি ও সহকারী প্রক্টরদের সেখানে পাঠিয়েছি। পরবর্তীতে আমি দুইজন সহকারী প্রক্টর নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার যারা আছেন তাদের নিয়ে বসেছি। আমাদের কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়ে থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
‘তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত করা, জনগণের জানমালের ক্ষতি, রাস্তা আটকে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করা সমর্থন করি না। আহতদের ক্যাম্পাসে চিকিৎসা দিয়ে কুষ্টিয়ায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ইবি থানার ওসি আননূর জায়েদ বিপ্লব বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নজরে রাখছি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। গেটে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।’
এদিকে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা রাত পৌনে ১০টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রথম আলোর সাংবাদিক মো. শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ প্রতিবাদ জানিয়েছেন বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।
বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন।
আন্দোলনকারীরা ‘নজরদারি মুক্ত গণমাধ্যম চাই’; ‘সংবাদ প্রকাশ কোন অপরাধ নয়’; ‘সাংবাদিকতা অপরাধ নয়’; ‘ফ্রি শামস’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
মিছিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেয়া হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মেঘমল্লার বসু। তিনি বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে সরকার সাংবাদিকতাকে সন্ত্রাস হিসেবে দেখাচ্ছে এবং সাংবাদিকতা করার কারণে জেলে দেয়া হচ্ছে।
সাভারে কর্মরত দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে তুলে নেয়ার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ মিছিল করেন।
মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। সরকার তার প্রয়োজনের সময় অসৎ উদ্দেশ্যে এই আইন ব্যবহার করছে। নিকৃষ্ট উপায়ে সাদা পোশাকে এসে রাষ্ট্রীয় গুণ্ডা বাহিনী সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে গেছে।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত দে বলেন, ‘কোনো সংবাদে আপত্তি থাকলে তার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু এখানে অন্যায়ভাবে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হোক।’
কথিত প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যদের চিহ্নিত করতে আন্তঃহল তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল রউফ মামুনকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে সহকারী প্রক্টর ড. এম এল পলাশকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় আন্তঃহল তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, স্যার এ এফ রহমান হল, কবি জসীমউদ্দীন হল, জগন্নাথ হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, বিজয় একাত্তর হল, জিয়া হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথিত প্রলয় গ্যাং নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর উত্থানের কথা জানা যায়। কথিত এই গ্যাং-এর সদস্যদের আচরণে বখাটেপনা ও উচ্ছৃঙ্খলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী এই গ্যাং কার্যক্রম কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না।
এ অবস্থায় যেসব শিক্ষার্থী এই গ্যাং অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করার জন্য এই আন্তঃহল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীকে পেটানোর ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া প্রলয় গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বহিষ্কার হওয়া দুই শিক্ষার্থী হলেন- নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাইমুর রহমান দুর্জয় এবং অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাকিব ফেরদৌস। সাকিব। দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় , দুজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাময়িক বহিষ্কারের এই অনুমোদন প্রদান করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না' মর্মে পত্রপ্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মর্তুজা মেডিকেল সেন্টারে এই দুই আসামি অবস্থান করছেন খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীও উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের আটক করে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর তাদের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় স্থানীয়দের হাতে মারপিটের শিকার হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার রাত ১০টার দিকে গেন্ডারিয়ার মুরগিটোলা মোড়ে প্রথম দফায় ও ১১টার দিকে বানিয়ানগর এলাকায় দ্বিতীয় দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত এক শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আহত শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয়দের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে শিক্ষার্থীদের। তখন এক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় দুইজনকে আটক করে সূত্রাপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
পরে রাত ১১টার দিকে আবু সুফিয়ান ও শিহাব নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরা অবস্থায় মুরগিটোলা মোড়ে চা খেতে গেলে হঠাৎ ৫০-৬০ জন স্থানীয় যুবক এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ওই দুই শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালান তারা।
এসময় তাদের চিৎকারে আরও আশেপাশে অবস্থান করা আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে তাদের ওপরও আক্রমণ করেন স্থানীয়রা।
আহত সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি চা খাওয়ার জন্য আমার বন্ধুর সাথে বের হয়েছিলাম। হঠাৎ স্থানীয় কয়েকজন এসে আমাদের আটকিয়ে কোথায় থাকি জিজ্ঞাসা করে। বানিয়ানগর থাকি বলতেই আমাদের ওপর অনেকগুলো ছেলে আক্রমণ করে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে আর মারতে থাকে। আমরা আগের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালেও পাশে অবস্থান করা পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখেছে। হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে যায়নি পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ৫০ থেকে ৬০ জন মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। ঘটনাস্থলে ১০-এর বেশি পুলিশ সদস্য অবস্থান করলেও তারা কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
হামলার শিকার শিহাব নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মারধর করার পর পুলিশ এসে থামায়। কিন্তু বলতে থাকে তোরা জগন্নাথের স্টুডেন্ট এখানে আসছিস কেন? এই কথা বলেই পুলিশ আমাকে মারতে থাকে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর আহতদের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া দুই থানার ওসির সাথেই কথা বলেছি। থানায় অভিযোগ দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ যে শিক্ষার্থীদের ওপর হাত তুলেছে সেই ভিডিওটিও ওসিকে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, ‘এটা সূত্রাপুর থানা অধীনে। তবে ঘটনার সময় সেখানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা ছিল। তারা মারামারি থামিয়ে দিয়েছে। পরে আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। তবে এ ঘটনায় আমাদের এখানে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।’
সূত্রাপুর থানায় ওসি মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘটনায় হামলার শিকার কেউ এখনো আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। কোথা থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে তা তারা আসলে তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারবো। আর যেই দুজন কে আটক করা হয়েছিল তারা এ ঘটনার সাথে জড়িত না। তাই তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বেপরোয়া গতিতে গাড়ি না চালাতে বলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে বেদম পিটুনির ঘটনার পর প্রকাশ্যে এসেছে ‘প্রলয় গ্যাং’। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা মারধরসহ বিভিন্ন চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একদল শিক্ষার্থী এই গ্যাং তৈরি করেছেন। আর এই গ্যাং-এর কিছু সদস্য ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
প্রলয় গ্যাংস্টারের উদ্ভব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশব্যাপী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের ‘সিরিজ অপকর্ম’-এর প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। এ সময় সংগঠনটির নেতারা প্রলয় গ্যাংকে ছাত্রলীগের নতুন সহযোগী সন্ত্রাসী সংগঠন বলে উল্লেখ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হয়ে কার্জন হলের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে এই বিক্ষোভ শেষ হয়।
এ সময় খোরশেদ আলম সোহেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কখনও কোনো গ্যাংস্টার সংস্কৃতির জন্ম হয়নি। কিন্তু ছাত্রলীগ তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য এই গ্যাং সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫ বছর ধরে পেশিশক্তির মাধ্যমে নানা অপকর্মসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এসব অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা ও কঠোর প্রতিবাদ জানায় এবং সব সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি।’
সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি নব্য সন্ত্রাসী সংগঠন হচ্ছে প্রলয় গ্যাং, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন সেল।
‘ছাত্রলীগ তাদের অতীত ঐতিহ্যগত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত রেখেছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, হলে সিট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, মাদকের কারবার ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে ঘৃণ্য সংগঠনে পরিণত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ছাত্রলীগের এহেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের নির্দেশনায় ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অচিরেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে ইনশাআল্লাহ।’
ঢাবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মাসুম বিল্লাহ, তরিকুল ইসলাম তারিক, নাছির উদ্দিন শাওন, সাদ্দাম হোসেন, রাজু আহমেদ, হান্নান তালুকদারসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করায় বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক ছাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হলের সামনে রোববার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে।
সেই ছাত্রকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে তিনি হলে অবস্থান করছেন।
ওই ছাত্রের নাম জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন। তিনি অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী, থাকেন স্যার এ. এফ রহমান হলে।
জুবায়ের জানান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ছাত্র তবারকের নেতৃত্বে তাকে পেটানো হয়। এতে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হেদায়েতুন নুর, জিয়া হলের বিপ্লব হাসান জয়, মোহাম্মদ শোভন, সাকিব, সিফরাত সাহিল, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের লাবিব, কবি জসীম উদ্দীন হলের সাদ ও রহমান জিয়া এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের অর্ণব খান জড়িত ছিলেন। তারা সবাই ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী।
ঢাবি ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরাসহ আরও কয়েকজন মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটা গ্যাং পরিচালনা করে, যার নাম ‘প্রলয়’। গ্যাংয়ের সদস্যদের অনেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ঢাবির ছাত্র জুবায়ের বলেন, ‘আজকে (রোববার) আমি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে আমার অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের বন্ধুদের সাথে ইফতার করছিলাম। ইফতার শেষে যখন আমরা কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে বসার জন্য যাচ্ছিলাম, এ সময় একটা প্রাইভেট কার খুব বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে আমাদের অতিক্রম করছিল। বৃষ্টি পড়ায় রাস্তা পিচ্ছিল হয়েছে। সে জন্য রাস্তার সব কাদা রাস্তার পাশে থাকায় সবার ওপর ছিটকে পড়ছে। আমাদের গায়েও পড়েছে।
‘এরপর তাদের থামিয়ে আমরা জিজ্ঞাসা করি আপনারা এ রকম উগ্র আচরণ করছেন কেন? পরে তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি, তারা সবাই আমাদের ব্যাচমেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরপর আমরা তাদের এভাবে গাড়ি না চালাতে বলে ছেড়ে দিছি।’
এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি যখন তাদের সাথে কথা বলছি, তাদের মুখ থেকে একটা স্মেল আসছিল, যেটাতে আমরা প্রায় নিশ্চিত হয়েছি তারা ড্রাংক ছিল। গাড়িতে থাকাদের পরে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তারা হলেন জিয়া হলের সাকিব, জসিম উদ্দীন হলের দুর্জয় আর রহমান জিয়া, জগন্নাথ হলের প্রত্যয় আর জহুরুল হক হলের আব্দুল হাই।’
তিনি আরও বলেন, “তাদের সাথে কথা শেষ করে আমরা জসিম উদ্দীন হলে এসে ফ্রেশ হচ্ছিলাম। এরপর আমার মোবাইলে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। পরে আমরা জানতে পারি এই নম্বরটা জিয়া হলের সাহিলের নম্বর। ফোনে আমরা কই আছি সেটা জানতে চাওয়া হয়। আমি আমার লোকেশন বলি। এ সময় আমরা তিনজন ছিলাম। হঠাৎ দেখি, ২০/৩০ জন ছেলে স্টাম্প, বাঁশ, রড হাতে নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। তারপরও আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারা এসে ‘ক্যাম্পাসে আমরা যেমন ইচ্ছা তেমন করব। তোরা কে ঠেকাবার?’ এই কথা বলে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পাঁচ থেকে সাত মিনিট ধরে আমাকে হাত, পা, মাথাসহ শরীরের সব জায়গায় পেটানো হয়। পরে কয়েকজন বড় ভাই আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।”
অভিযুক্তদের ভাষ্য
এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত তবারক হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বরং তাদেরকে পেটানোর হাত থেকে রক্ষা করছি।’
ঘটনার ভিন্ন বর্ণনা দিয়ে তবারক বলেন, ‘জুবায়েরের সাথে প্রাইভেট কারে থাকা আমাদের যেসব বন্ধুদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে, সেটা আমাদের কানে আসে। যেহেতু এটা আমাদের ব্যাচের ঘটনা, তাই জুবায়ের আমাদের বন্ধুদের গাড়ি কেন থামিয়েছে সেটা জিজ্ঞস করতে আমাদের একজন সাহিলের ফোন থেকে জুবায়েরকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে, তারা কই আছে। এরপর আমরা তাদের বলা লোকেশন জসিম উদ্দীন হলের সামনে যাই। এ সময় তাদের সাথে আমাদের কথা বলার একপর্যায়ে জুবায়ের আমাদের বন্ধু হেদায়েত নুরকে থাপ্পড় দেয়। পরে সাথে থাকা বাকি বন্ধুরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করে। আমিসহ আরও কয়েকজন তাদেরকে থামিয়ে হাসপাতালে পাঠাই।’
আরেক অভিযুক্ত সাহিল বলেন, ‘আমার মোবাইল থেকে ফোন দেয়া হয়েছে, এটা ঠিক। আমার কয়েকজন বন্ধু এই ফোন দিয়েছে। আমি দেইনি। আর আমি মারধরেও ছিলাম না।’
যা বললেন হলের প্রাধ্যক্ষ ও ঢাবির প্রক্টর
ঘটনার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আমার হলের যেসব শিক্ষার্থী এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত, তাদের কাছ থেকে বক্তব্য নিয়েছি। শুনে বুঝেছি, এটার সাথে অনেক হলের শিক্ষার্থী জড়িত এবং আরও ডিটেইলসে এই সম্পর্কে জানা দরকার। তাই আমি তিন সদস্যের একটা কমিটি গঠন করেছি। তারা আমাকে আমি এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট দেবে।’
ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য