‘নতুন পাঠক্রমের ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে। যা নেই তা উপস্থাপন করা হচ্ছে। এডিট করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকের ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে কিছু অসাধু ধর্ম ব্যবসায়ী গুজব ছড়াচ্ছে।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শনিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) চতুর্থ সমাবর্তনে চ্যান্সেলরের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন।
বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়। স্মার্ট নাগরিক গড়তে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে সহায়ক শিক্ষাক্রম নিয়ে সরকার কাজ করছে। একটি মহল এই শিক্ষাক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।’
দীপু মনি বলেন, ‘বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করছে না। আগামীতে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগামীতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিতে একটি পরীক্ষা নেয়া হবে।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যেতে হবে।’
নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নতুন বইগুলো পরীক্ষামূলক সংস্করণ করা হচ্ছে।’
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আনোয়ার হোসেন।
বক্তব্য দেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. হাসিনা খান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে গবেষণার বিকল্প নেই। গবেষণা এগিয়ে নেয়ার সব উপকরণ দেশে রয়েছে।’
সমাবর্তনে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন ১ হাজার ৮৩৪ জন গ্রাজুয়েট। এবারের সমাবর্তনে যবিপ্রবির ২২ জন গ্রাজুয়েট চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক, ২৬ জন ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড এবং ৯ জন ডিন অ্যাওয়ার্ড পান।
এই আয়োজনে বিভিন্ন বিভাগের ডিন, চেয়ারম্যান, শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে কলেজটির অধ্যক্ষের নামে লিখিত অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
উপজেলার কলিম উল্লাহ কলেজের শিক্ষার্থীরা রোববার দুপুরে নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে অবস্থা নিয়ে আন্দোলন করে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে চার থেকে ছয় হাজার টাকা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের সঙ্গে রোববার দুপুরে কথা বলে জানা যায়, উন্নয়ন ফির নামে তাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফির চাইতে অনেক বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীরা এত বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করতে পারছেন না।
তারা জানায়, ফরম পূরণের শেষ সময় চলে আসায় বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছে। প্রাথমিকভাবে তারা তাদের আপত্তির বিষয়টি কলেজটির অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের জানিয়েছে। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত না করায় বাধ্য হয়ে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এসেছে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গজারিয়া উপজেলার ইউএনওর কাছে তারা একটি লিখিত অভিযোগ করে। নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খবর নিয়ে জানা যায়, শিক্ষা বোর্ডগুলোর নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞান শাখার পরীক্ষার্থীদের মোট ২ হাজার ৬৮০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার জন্য ২ হাজার ১২০ টাকা করে ফরম পূরণের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনো পরীক্ষার্থীর চতুর্থ বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলে এ ফির সঙ্গে অতিরিক্ত ১৪০ টাকা যুক্ত হবে। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনো শিক্ষার্থীর নৈর্বাচনিক বিষয়ে ব্যবহারিক থাকলে বিষয় প্রতি আরও ১৪০ টাকা যোগ হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ মোনতাজ উদ্দীন মর্তুজা বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছে তারা অধিকাংশ টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থী। ফরম পূরণে চার হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে তা সত্যি নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত টাকার বাহিরে যে টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে তা হলো বেতন ও উন্নয়ন ফির টাকা। উন্নয়ন ফি বাবদ ১ হাজার ১৪০ টাকার মতো আদায় করা হচ্ছে। আমরা এমপিওভুক্ত কলেজ। এ টাকাটুকু যদি না আদায় করি, তাহলে কলেজ কীভাবে চলবে?’
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন রোববার বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। আমাদের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও এ বিষয়ে সম্পর্কে অবগত আছেন। আমি সোমবার সকালে কলেজটি পরিদর্শনে যাব। সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
গজারিয়ার ইউএনও কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আমার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের লিখিত পরীক্ষার প্রকাশিত ফল স্থগিত করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার রাতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকাশিত ফলাফলে দুটি সেট কোডের উত্তরপত্র মূল্যায়নে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফল পুনরায় মূল্যায়ন শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম। পুনঃমূল্যায়ন শেষে রোববার রাত ১২টার মধ্যেই সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ফল রোববার দুপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক স্মারকে প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ২৩ হাজার ৫৭ জন প্রার্থী। প্রকাশিত ফলাফলে মেঘনা ও যমুনা সেটের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে কারিগরি ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে।
মেঘনা ও যমুনা সেটের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র আইআইসিটি, বুয়েটের কারিগরি টিম ইতোমধ্যে পুনঃমূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে। রাত ১২টার মধ্যে মেঘনা ও যমুনা সেটের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন করে নিরীক্ষান্তে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে রোববার দুপুরে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়। অনেক প্রার্থী ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফল না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দেন। পরে মেঘনা ও যমুনা কোডের প্রার্থীরা গ্রুপ খুলে সেখানে কারা কারা ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফল পাননি তা জানাতে থাকেন।
বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিপদপ্তরের দৃষ্টিগোচর করলে দুই সেটের উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়।
আরও পড়ুন:সার্টিফিকেট বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরই মধ্যে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
রোববার এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ বিষয়ে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আলী আকবরকে ওএসডি করে তার জায়গায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বোর্ডের পরিচালক অধ্যাপক মামুন উল হককে। এ ঘটনায় কারিগরি বোর্ডের সচিবও নজরদারিতে আছেন।
এর আগে শনিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে আলী আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট-বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
রাজধানীর মিণ্টো রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে রোববার সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘সার্টিফিকেট-বাণিজ্যের এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক না কেন কাউকে ছাড় দেব না। তথ্য-উপাত্তে কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করব। যেকোনো সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকব।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জাল সার্টিফিকেট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১ এপ্রিল রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকার একটি বাসা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান এবং একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারী ফয়সাল।
এরপর ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়ার সদর থানা এলাকা থেকে গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার এই তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র এবং শত শত সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির মতো বিশেষ কাগজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, শতাধিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি জব্দ করা হয়।
ডিবিপ্রধান বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চক্রের সঙ্গে জড়িত কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বি এম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর চক্রের সঙ্গে জড়িত ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯ এপ্রিল।
চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সবশেষ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে শনিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার এ কে এম শাসমুজ্জামান ও তার ব্যক্তিগত সহযোগী ফয়সাল গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে হস্তান্তর করেছে। একইসঙ্গে সরকারি ওয়েবসাইটে সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সার্টিফিকেটগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে কোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর গুগলে সার্চ করলে তা সঠিক পাওয়া যায়।
এই অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন-নিবেদনের ফোকাল পারসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক; কোনোক্রমেই ই-সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা নন।
সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে সংবেদনশীল এই কাজগুলো করার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালরা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর তৈরি, রেজাল্ট পরিবর্তন-পরিবর্ধন, নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে টাকার বিনিময়ে আদান-প্রদান করেছেন কম্পিউটার অপারেটর ও সিস্টেম এনালিস্টদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এরকম প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিপরায়ণ ২৫/৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
ডিবি প্রধান বলেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ সিবিএ দালাল কর্মচারী-কর্মকর্তা, কম্পিউটার ও পরিদর্শন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে রেজাল্ট পরিবর্তন, নাম-ঠিকানা পরিবর্তন, প্রার্থীদের বয়স পরিবর্তন ও সময়ে অবৈধভাবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও রোল নম্বর প্রদান সংক্রান্ত কাজগুলো করার জন্য সিন্ডিকেট বানিয়েছে।
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলো ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের তাপ থেকে সুরক্ষিত রাখতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
নিউজবাংলার সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বিস্তারিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক ও ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস তাদের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ছাড়াও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বৈঠক ডেকেছে। আর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসের সময়সীমা কমিয়ে এনেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ রাখা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য।
চলমান তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে পরীক্ষাগুলো শিক্ষার্থীদের সশরীরে উপস্থিত থেকে দিতে হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো নিজেদের মতো করে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এসব তথ্য জানানো হয়।
তীব্র দাবদাহের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলতি সপ্তাহে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসময় সব পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান দাবদাহের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় শনিবার (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সশরীরে সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইনে ক্লাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি চালু থাকবে।
তীব্র দাবদাহের কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাসও অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পরীক্ষা সশরীরেই হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের অন্যতম বাহন শাটল ট্রেন ও শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস নিয়মিত সূচিতে চলবে।
এক জরুরি সভা শেষে এসব সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, অফিস খোলা থাকবে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বিবেচনায় ক্লাস অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তীব্র দাবদাহের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ২২ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। তবে ওই সময়ে অনুষ্ঠিতব্য সব পরীক্ষা যথারীতি চলমান থাকবে।
সশরীরে ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক ও ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস অনলাইনে চলবে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসের সময়সীমা কমিয়ে এনেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্লাস সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলবে। আগে তা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত হতো।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশারের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সোনালী সেবার মাধ্যমে ৬ মে পর্যন্ত ফি পরিশোধ করা যাবে। বিলম্ব ফিসহ ফরম পূরণের সময় ৭ মে থেকে শুরু হয়ে চলবে ১২ মে পর্যন্ত। আর সোনালী সেবার মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যাবে ১৩ মে পর্যন্ত।
এবার বিজ্ঞান শাখার পরীক্ষার্থীদের দুই হাজার ৬৮০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার জন্য দুই হাজার ১২০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনো পরীক্ষার্থীর চতুর্থ বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলে এ ফির সঙ্গে অতিরিক্ত ১৪০ টাকা যুক্ত হবে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনো শিক্ষার্থীর নৈর্বাচনিক বিষয়ে ব্যবহারিক থাকলে বিষয়প্রতি আরও ১৪০ টাকা যোগ করা হবে।
এছাড়া পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি বাবদ পত্রপ্রতি ১১০ টাকা, ব্যবহারিকের ফি বাবদ পত্রপ্রতি ২৫ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের ফি বাবদ পরীক্ষার্থীপ্রতি ৫০ টাকা, মূল সনদ বাবদ ১০০ টাকা, বয়েজ স্কাউট ও গার্ল গাইডস ফি বাবদ ১৫ টাকা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি বাবদ পরীক্ষার্থীপ্রতি ৫ টাকা নেয়া হবে।
অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা অনিয়মিত ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। জিপিএ উন্নয়ন ও প্রাইভেট পরীক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা তালিকাভুক্তি ফি নির্ধারণ এবং রেজিস্ট্রেশন নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫০ টাকা। বিলম্ব ফি ১০০ টাকা।
কেন্দ্র ফি বাবদ প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে ৪৫০ টাকা ও ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ পরীক্ষার্থীদের পত্রপ্রতি ২৫ টাকা দিতে হবে। আর ব্যবহারিক উত্তরপত্র মূল্যায়ন ফি দিতে হবে ২০ টাকা।
প্রসঙ্গত, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয় ১৬ এপ্রিল। এই কার্যক্রম ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর করার সময়সূচি ছিল। আর বিলম্ব ফি দিয়ে ফরম পূরণের সুযোগ ছিল ২৯ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:তীব্র দাবদাহে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ক্লাস কার্যক্রম চলবে অনলাইনে। তবে পরীক্ষা যথারীতি সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার বিকেল ৩টায় এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম।
রেজিস্ট্রার বলেন, সারাদেশে চলমান তীব্র দাবদাহের বিষয়টি মাথায় রেখে আজ (রোববার) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এক জরুরি মিটিং আহ্বান করেন। ওই মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, সব অনুষদের ডিন, ২৫টি বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রক্টর ও বিভিন্ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রুতিকটু হওয়ায় গাইবান্ধার ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ২৪৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গত ৩ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে এ মন্ত্রণালয়। বদলে দেয়া ওই সব বিদ্যালয়ের মধ্যে গাইবান্ধার দুটি উপজেলার ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা-২০২৩ জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা-২০২৩ এর সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক ভাবার্থ সংবলিত। যা শিশুর রুচি, মনন, বোধ ও পরিশীলিতভাবে বেড়ে ওঠার বড় অন্তরায়।
তাই এ মন্ত্রণালয় এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে সুন্দর, রুচিশীল, শ্রুতিমধুর এবং স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী এ রকম নেতিবাচক ভাবার্থ সংবলিত নাম পরিবর্তন করা হবে।
নীতিমালা-২০২৩ জারি করে বলা হয়, ‘প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিশুদের বুনিয়াদি শিক্ষা। শিশুদের শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপের সেই বুনিয়াদি শিক্ষাঙ্গনের নাম যখন হয় ‘গলাকাটি’ ‘ধুতিচোরা’, ‘পাগলার চর’ এর মতো নাম, তখন সাভাবিকভাবে নানা ভাবে ট্রলের শিকার হয় ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা। যেখানে শিক্ষা জীবনের প্রথম সিঁড়িতেই শিশুদের মনে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
‘শুধু কি তাই? ঠাট্টার ছলেও মানুষ কিংবা ছোট্ট শিশুদের অনেক সময় বতে শোনা যায়, “গলাকাটি স্কুলে পড়ি, শালা গলা কেটে দেব”। এছাড়া পাগলার চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী পাগল ছাড়া আর কী হবে? "ধুতিচোরা স্কুলের ছাত্র/ছাত্রী চোর ছাড়া আর কী হবে? বলে উচ্চারণ করতে দ্বিধা করেনা অনেকে। ফলে অনেক শিশু লজ্জা পেয়ে এসব বিদ্যালয়ে অনেক সময় আসতে চায় না। অথচ বিভিন্ন সময়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করণ করা হয়েছে।’
ওই সব বিদ্যালয়ের নেতিবাচক নামের ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সচেতনমহলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শ্রুতিকটু শোনায় এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর নাম পরিবর্তন করা হোক। অবশেষে এমন একটি দায়িত্বশীল যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের গত ৩ এপ্রিল শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক অর্থ দাঁড়ায় এমন ধরনের দেশের ২৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, প্রথম পর্যায়ে ৩০ টি জেলায় শ্রুতিকটু নাম পরিবর্তন করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৪৮টি। যার মধ্যে গাইবান্ধার রয়েছে ৯টি। এ জেলার সদর উপজেলার চারটি এবং ফুলছড়ি উপজেলার পাঁচটিসহ মোট ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
নাম পরিবর্তন হওয়া ফুলছড়ি উপজেলার বিদ্যালয়গুলো হলো- ফুলছড়ি উপজেলার ‘গলাকাটি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টে হচ্ছে ‘আনন্দ বাজার’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘পাগলার চর’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে ‘ভোরের পাখি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘নাপিতের হাট’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে ‘থানাপাড়া আদর্শ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘বাজে ফুলছড়ি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে ‘চর ফুলছড়ি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ‘কঞ্চিপাড়া ১ নং’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরর নাম পাল্টে হচ্ছে ‘কঞ্চিপাড়া আদর্শ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়াও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ‘পঁচারকুড়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টে হচ্ছে ‘গিদারী কৃষ্ণচূড়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘বাজে চিথুলিয়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে ‘পশ্চিম চিথুলিয়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘ধুতিচোরা’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে ‘রহমাননগর’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ‘পূর্ব ধুতিচোরা’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টে নতুন নাম হচ্ছে ‘গিদারী আনন্দনগর’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
তুলনামূলক এসব পুরাতন এবং পরিবর্তিত নাম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ধুতি শব্দটি সংস্কৃত ধৌতি শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ শুদ্ধ করা বা ধৌত করা। যার মাধ্যমে প্রতিদিনের পরিধান করা পরিষ্কার পোশাককে বোঝায়। যা প্রাচীনকালে অন্তরিয়া পরিধেয় বর্তমানে বিবর্তিত হয়ে ধুতির আকার নিয়েছে। ধুতি এখন হিন্দু ধর্মীয় পুরুষদের পরিধান বস্ত্র হিসেবেই পরিচিত।
আর চোরা শব্দটির অর্থ হলো চোর অর্থাৎ যে চুরি করে। সে হিসেবে ধুতিচোরা শব্দের অর্থ যে ধুতি চুরি করেছে বা ধুতি চোর। যা অত্যন্ত শ্রুতিকটু এবং নেতিবাচক শব্দ। তাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যালয়টির নাম বদলে করেছে রহমাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যা প্রসিদ্ধ ও অর্থবহ একটি নাম।
একইভাবে পাগলার চর বলতে বোঝায় পাগলের চর। যে বিদ্যালয়টির নাম পাল্টে দেয়া হয়েছে ভোরের পাখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যা কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর উপাধি। এছাড়াও সর্বক্ষেত্রে ভোরের পাখি নামটি ইতিবাচক এবং শ্রুতিমধুর নাম হিসেবে প্রকাশ পাবে। এছাড়াও নতুন করে ওই বিদ্যালয় এ নাম ধারণ করায় শিশুদের মনে একটি ইতিবাচক ধারণার জন্মদিবে। একই সঙ্গে তারা পুলকিত হবে- এমনটাই প্রত্যাশা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা বোরহানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজাদী হাবিবা সুলতানা বলেন, ‘এমন কিছু বিদ্যালয়ের নাম আছে যেসব নাম উচ্চারণ করতে মুখে বাধে। প্রতিনিয়ত শিশুরা ওইসব নাম নিয়ে ঠাট্টার শিকার হন। সারা দেশের শ্রুতিকটু নামের বিদ্যালয়গুলো চিহ্নিত করে নামগুলো পরিবর্তন জরুরি। ওই সব নেতিবাচক নাম পরিবর্তন করে অর্থপূর্ণ নাম রাখা হলে নরম মনের কোমলমতি শিশুরা তাদের বিদ্যালয়ের নাম নিয়ে লজ্জা না পেয়ে গর্ব করতে পারবে।’
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলাল হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ফুলছড়ি উপজেলার পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টানো হয়েছে। পাল্টে যাওয়া নামগুলো ছিল শ্রবণকটু। যা শিশুদের মনে খারাপ প্রভাব ফেলত।’
তিনি আরও বলেন, ‘রমজান এবং ঈদের ছুটি শেষ হয়ে বিদ্যালয় খুললে নাম পাল্টে যাওয়া বিদ্যালয়গুলোর সাইনবোর্ডে নাম পাল্টে দেয়া হবে। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে সকল পেপারসে নাম পরিবর্তনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘অর্থহীন নামগুলো থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকেনা। যার কারণে মানুষ সন্তানের খুঁজে খুঁজে উজ্জ্বল-সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ নাম রাখেন। ইতিহাসে যে সব নাম উজ্জ্বল সে সব নাম রাখার চেষ্টা করেন। একই রকম বিদ্যালয়গুলোর নামের বেলাতেও।
‘তবে যেকোনো কারণে হোক সারা দেশেই স্থানীয় পর্যায়ের লোকজনের মাধ্যমে কিছু বিদ্যালয়ের বা শ্রুতিকটু নাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ওইসব নাম পরিবর্তনের উদ্যোগটি একটি ভাল দিক।’
শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি মনে করি পরিবর্তন করা এসব অর্থপূর্ণ, শ্রুতিমধুর এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ এসব নাম কোমলমতি শিশুদের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে শিশুরা গর্বের সঙ্গে তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম উচ্চারণ করবে।’
গাইবান্ধায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৪৬৬ টি। এসব বিদ্যালয়ের বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা ৮ হাজার ২১৩ জন এবং এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ৪৭৩ জন।
মন্তব্য