আর কদিন পর আসছে নতুন বছর। প্রথম দিনে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে উন্মুখ বিদ্যালয়পড়ুয়া লাখো শিক্ষার্থী। তবে ১ জানুয়ারি তারা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভিড় জমালেও তাদের মধ্যে ভর করবে অপূর্ণতা। বই উৎসবের জন্য সরকারের সব প্রস্তুতি থাকলেও দেশের সব শিক্ষার্থীর পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সব বই তুলে দিতে সময় লাগবে অন্তত আরও তিন থেকে চার মাস।
শিক্ষার্থীদের হাতে বই যেমন দেরিতে পৌঁছাবে, তেমনি এবারের পাঠ্যপুস্তক পুরো শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত টিকবে কি-না তা নিয়েও আছে সংশয়। কারণ কাগজ সংকটে নিম্নমানের কাগজ দিয়ে ছাপানো হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক।
মাঠ ঘুরে এসব তথ্যের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলেও এসব অভিযোগ মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, তাদের কাছে মাধ্যমিক স্তরের বই প্রস্তুত আছে ৭৮ ভাগ ও প্রাথমিক স্তরের ৬৯ ভাগ। আগামী তিন দিনে তারা সব মিলিয়ে ৮০ ভাগ বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে পারবেন। ১ জানুয়ারি এসব সংকট কাটিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বই সরবরাহ করতে প্রস্তুত আছেন তারা।
কর্তৃপক্ষের এমন বয়ানের সঙ্গে অবশ্য ছাপার কাজে জড়িত ব্যবসায়ীদের কথার মিল নেই। মুদ্রণকারীরা জানিয়েছেন, আলাদা আলাদাভাবে এখনও প্রায় ৫৬ শতাংশ বই ছাপানোর কাজ বাকি। অথচ নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র বাকি তিন দিন। এই অবস্থায় এবারও ১ জানুয়ারি সব শিক্ষার্থীর পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সব বই দেয়া সম্ভব হবে না। পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বই পৌঁছাতে সময় লাগবে অন্তত মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত।
কত বই ছাপা হয়েছে?
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯২৩ কপি পাঠ্যবই ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এগুলোর মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮টি এবং মাধ্যমিক স্তরে ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৫টি পাঠ্যবই ছাপানো হবে।
এনসিটিবি বলছে, এর মধ্যে প্রাথমিকের জন্য ৬ কোটি ৬৬ লাখ ১৯৫টি বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে মুদ্রণ সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮২ হাজার বই প্রস্তুত হয়েছে। অন্যদিকে, এনসিটিবির পক্ষ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার বই প্রস্তুত থাকার দাবি করা হয়েছে। কিন্তু মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সংখ্যা ১৪ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার।
দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ২০১০ সাল থেকে বিনামূল্যে নতুন বই দিয়ে আসছে সরকার। তবে বইয়ের নিম্ন মান নিয়ে প্রতিবারই অভিযোগ ওঠে। এবারও এই অপবাদ ঘুচবে না। মুদ্রণ ব্যবসায়ী ও এনসিটিবির সূত্র জানায়, কাগজ সংকটে ৮৫ জিসিএম কাগজের পরিবর্তে এবার সাধারণ নিউজপ্রিন্টে চলছে বই ছাপানোর কাজ।
মুদ্রণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপানো হয়েছে ৫০ ভাগ। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্য ৬০ ভাগ ও ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য ৪০ ভাগ। অন্যদিকে, প্রাথমিক স্তরের বই ছাপানো হয়েছে ৩০ ভাগ।’
মুদ্রণ সমিতির তথ্য মেনে নিতে আপত্তি করছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ওনাদের তথ্য সাংঘর্ষিক। আমাদের কাছে বই পৌঁছে দেয়ার চালান রয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা মাধ্যমিকের জন্য ৭৮ ভাগ বই প্রস্তুত করেছি আর প্রাথমিকের জন্য ৬৯ ভাগ বই প্রস্তুত করে পৌঁছে দিয়েছি।’
১ জানুয়ারির বই উৎসবের মধ্য দিয়ে সব শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার যে সংস্কৃতি সরকার চালু করেছে, তার সফলতা নিয়ে পূর্ণ আশাবাদি এই কর্মকর্তা।
ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আশা করি পুরোপুরি বই পাবে শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিকে একটু এদিক-ওদিক হতেও পারে আবার নাও পারে। মাধ্যমিকে সব বই পাবে। দেশের সব জায়গায় বই যেতে জানুয়ারির ১৫ তারিখ লাগবে। উৎসব হওয়ার মতো বই আমি পৌঁছে দিচ্ছি।’
ফরহাদুল ইসলাম যুক্তি দিয়ে বলেন, বছরের প্রথম দিন বই দেয়া হলেও সবার পক্ষে তা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ‘আমার ৮০ ভাগ বই ওইদিন চলে যাবে। মাধ্যমিকে ৭৮ ভাগ বই চলে গিয়েছে। প্রাথমিকে ৬৯ ভাগ বই চলে গিয়েছে, গতকালের (সোমবার) রিপোর্ট পর্যন্ত। আমরা এই কয়দিনে মাধ্যমিক বাদ দিয়ে প্রাথমিকের বইটা দিতে বলেছি। বই প্রস্তুত হয়ে আছে এখন মাঠে দেয়া নিয়ে কথা। আমরা চাই ১ তারিখে ৮০ ভাগ বই পৌঁছে যাক।’
বইয়ের মান নিয়ে আপস এনসিটিবির
পাঠ্যবই ছাপাতে যে মানের কাগজ ব্যবহারের শর্ত দেয়া হয়েছে, কাগজ সংকটের অজুহাত দিয়ে তা রাখছে না মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা। শুরুতে বিষয়টি এনসিটিবির নজরে আনা হলে তারা হাঁকডাক দিলেও, এখন নমনীয় সুর।
মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেরি করে দরপত্র দেয়া ও কাগজ সংকটের কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। কাগজের উজ্জ্বলতার মান ৮৫ একক রাখার শর্ত ছিল কার্যাদেশে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় বিকল্প হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে নিউজপ্রিন্ট। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এই শর্তে নমনীয় হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি।
নমনীয় হওয়ার পর কথার ধরনও পাল্টে গেছে এনসিটিবির। ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভার্জিন পাল্প (কাঁচা মণ্ড) না দিলে উজ্জ্বলতা আসবে না। আমরা ৮৫ ব্রাইটনেস চাই। তবে এই চাওয়াটাও আমাদের ঠিক না। বাচ্চাদের চোখের জন্য এটা ঠিক না। আমরা কাগজের মান ভালো রাখতে উজ্জ্বলতা বেশি চেয়েছি। তবে আমাদের ভার্জিন পাল্প না থাকার কারণে এটা হয়েছে।’
উজ্জ্বলতা ছাড়া কাগজের অন্য কোনো মানের সঙ্গে আপস করা হয়নি বলে দাবি করেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি কাগজের বাকি সব প্যারামিটার ঠিক রেখে যেটুকু করা যাবে সেটাই হবে। অনেকেই এটা সুযোগ হিসেবে নিয়ে নিউজপ্রিন্ট ব্যবহার করেছে। তবে আমরা অনেক প্রেসের কাজ, কাগজ ও ফর্মা বাদ দিয়েছি।’
মুখোমুখি মুদ্রণ সমিতি ও এনসিটিবি
বই ছাপানো নিয়ে শুরু থেকেই দুই ধরনের বক্তব্য দিয়ে এসেছে এনসিটিবি ও মুদ্রণ সমিতি। ব্যবসায়ীদের দাবি, সব সংকটের কারণ সরকারপক্ষের দরপত্র আর কার্যাদেশ দিতে দেরি করা। সময় থাকতে এসব কাজ সম্পন্ন হলে, শেষ সময়ে এসে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
এনসিটিবি নিজেদের ঘাড়ে দায় নিতে নারাজ। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করেই সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে। কারণ নিজেদের গুদাম থেকে পুরনো কাগজ দিয়েও তারা চায় ঠিক সময়ে বই আসুক।
মুদ্রণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাস্তবতা ভিন্ন। কাগজের যে সংকট সেটি তো নিরসন হয়নি। উল্টো আরও সংকট তৈরি হয়েছে। তারা অর্ডার করেছিল ৮৫ মানের ব্রাইটনেসে। আর বই নিচ্ছে নিউজপ্রিন্টে। আমরা আগেই বলেছিলাম যে কোনো একটাতে অর্ডার করেন। তখন আমাদের কথা শোনেনি তারা। এখন মেনে নিয়েছে।’
জহুরুলের মতে ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করে জুনে কার্যাদেশ দিলে কোনো ঝামেলা তৈরি হতো না। তিনি বলেন, ‘অর্ডার দেয়া হয়েছে অক্টোবর থেকে। আর নভেম্বরের ৩ তারিখে শেষ অর্ডার হয়েছে। যখন ডিসেম্বরে বই দরকার, তখন ছাড় দিয়ে নিউজপ্রিন্টে বই নেয়া হচ্ছে।’
এমন সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কার কথা আরও চার মাস আগে মন্ত্রণালয়ে লিখিত জানানো হয়েছে বলেও দাবি করেন জহুরুল। তিনি বলেন, ‘তখন কোনো সমাধান দেয়া হয়নি। তখন কেউ শোনেনি।’
ব্যবসায়ীদের এমন তথ্য শুনে বেজায় চটে যান এনসিটিবি চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি এটা তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি যে আপনারা কাদের নেতা? আপনারা যাদের নেতা তারা আমাদের বই দিয়ে দিল। আর আপনারা কী তাদের অস্বীকার করছেন? আপনারা এভাবে কেন কথা বলছেন?’
অনেক ব্যবসায়ী উপজেলা পর্যায়ে বই পৌঁছে দিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। ফরহাদ বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে আমার বই পৌঁছে দিয়ে তো আমাকে চালান দিয়েছে। আমার কাছে রেকর্ড আছে। আপনারা বলছেন ৩০ ভাগ বই দিয়েছে। সেটা আপনারা এনসিটিবির সঙ্গে ব্যবসায়িক স্বার্থে বলতে পারেন। কিন্তু বই তো আপনাদের প্রেসের লোক বানিয়ে দিয়েছে।’
ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘মুদ্রণ সমিতি চাচ্ছে আমরা ব্যর্থ হই। দেশে কাগজ নেই তাদের কাগজ আমদানি করতে দিতে হবে। আমি শুধু জানি, আমার বই দিতে হবে। আমি মুদ্রণ সমিতির কথায় কান দিচ্ছি না। এবার শুধু কাগজের সংকট। আমার গোডাউনের পুরোনো কাগজ দিয়েছি। সেখানে ১০০ টনে ৮০ টন হয়। এটা তো আমাদের কাজ ছিল না। আমরা জানি কারা কী অবস্থায় আছে। আমরা দিচ্ছি। আমার তো টেন্ডার দিয়ে এই দায় নেয়ার কথা না।’
দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ নিয়ে ব্যবসায়ী অভিযোগকেও আমলে নিতে নারাজ ফরহাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তবে নভেম্বরে অর্ডার হয়েছে আর দেরিতে হয়েছে এটা তাদের বাহানা। আমরা তাদের ক্যাপাসিটি জেনে গিয়েছি। তারা ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার দিতে চায় না। তাদের মানসিক সমস্যা আছে।’
আরও পড়ুন:ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের (টিএনই) বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ফুলার রোড অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষা খাতের অংশীজন, অ্যাকাডেমিক কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন এবং ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের (টিএনই) বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর স্যালভাডোর কারবাজাল লোপেজ গবেষণা প্রতিবেদনের মূল তথ্য উপস্থাপন করেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস বলেন, ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে টিএনইয়ের প্রসার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ সুগম করবে।
‘টিএনই মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে আমরা আমাদের অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করে এ প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রচেষ্টার আমি সত্যিই প্রশংসা করি। এটি অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করছে।
‘এ সম্পর্ক জোরদার করা উভয় দেশের জন্যই উপকারী হবে, যা উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, জ্ঞান বিনিময় এবং এই খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, ‘ব্রিটিশ কাউন্সিলের ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন রিসার্চ রিপোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন বৈশ্বিক শিক্ষা অংশীদারত্বের মাধ্যমে শিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে দারুণ সুযোগ তৈরি করছে।’
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের সম্ভাবনা ও সামাজিক মূল্য’ বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সেশনটি পরিচালনা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর প্রোগ্রামস ডেভিড নক্স।
প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারি জেনারেল ইশতিয়াক আবেদিন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাউথ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর সালভাদর কারবাজাল লোপেজ।
ব্রিটিশ কাউন্সিল নিয়োজিত আন্তর্জাতিক যোগ্যতা মূল্যায়ন সংস্থা ইক্টিস গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা করেছে।
১. টিএনই প্রদানকারীদের জন্য নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াগুলো সহজ করা ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা
২. ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ব্রিজিং ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রাম চালু করা
৩. রিমোট ও অনলাইন লার্নিংকে সহায়তা করতে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করা
৪. মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াগুলোতে স্বচ্ছতা ও সমন্বয় বৃদ্ধি করা
৫. বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ
৬. মধ্যম আয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বৈত ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ
অনুষ্ঠানে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) ২০২৫ অনুদানের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি নির্বাচিত ইউকে-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২৫ হাজার পাউন্ড করে অনুদান পাবে।
বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে লিভারপুল জন মুরস ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশ।
এ ছাড়াও রয়্যাল হলোওয়ে, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে কাজ করবে, এবং কীল ইউনিভার্সিটি এফআইভিডিবির সঙ্গে অংশীদারত্ব করবে।
এ অনুদানগুলো ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন উদ্যোগের মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক ও গবেষণামূলক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালীর উদ্দেশে প্রদান করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য।
সম্পূর্ণ রিপোর্টটি ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
আরও পড়ুন:প্রাথমিক শিক্ষার জেলা ও বিভাগের টাস্কফোর্স কমিটি সংশোধন করে পুনর্গঠনের নির্দেশনা এবং এর কার্যপরিধি পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি ও প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপপরিচালককে সদস্য সচিব করে বিভাগীয় টাস্কফোর্স এবং জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে সদস্য সচিব করে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি, বেসরকারি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টার ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার সার্বিক অবস্থা ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করবে বিভাগীয় টাস্কফোর্স।’
জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা টাস্কফোর্স কমিটিকে।
বিভাগীয় বা মহানগরের প্রাথমিক শিক্ষা টাস্কফোর্স কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন রেঞ্জ ডিআইজি, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অদিদপ্তরের প্রতিনিধি, এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বিভাগভুক্ত সব জেলায় জেলা প্রশাসক এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
এ টাস্কফোর্স সরকারি, বেসরকারি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টার ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করবে।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে টাস্কফোর্স। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের যথাযথ বাস্তবায়নের তদারকি করবে এটি।
টাস্কফোর্স প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য নতুন নতুন ধারণা ও উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রয়োগ করবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত ও উদ্বুদ্ধ করবে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া রোধ, শিখন শেখানো কাজের উন্নয়ন, যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিরূপণ ও দূরীকরণে কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন:মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুব আলমের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার এ তথ্য জানানো হয়।
ড. ইহতেসাম উল হক এ বি এম রেজাউল করীমের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
আগের ডিজি অবসরে যাওয়ার এক মাসের বেশি সময় পর এ পদে নিয়োগ দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ৪ জানুয়ারি চাকরি শেষ করে অবসরে যান মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক রেজাউল করীম।
এর আগে গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর ২১ আগস্ট মাউশির মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভাগনে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
আরও পড়ুন:সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে সরকার।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
তার পোস্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নেত্রকোণার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে শুধু শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছে সরকার।
এ ছাড়া নওগাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়, মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে।
পাশাপাশি জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন থেকে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নারায়াণগঞ্জে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন থেকে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বলে ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়াও গোপালগঞ্জের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
আরও পড়ুন:রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট ও যশোর শিক্ষা বোর্ডে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বোর্ডে অধ্যাপক আ ন ম মোফাখখারুল ইসলাম, যশোর বোর্ডে অধ্যাপক খোন্দকার কামাল হাসান, সিলেট বোর্ডে অধ্যাপক শামছুল ইসলাম এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
এর আগে গত ১ জানুয়ারি এ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. নিজামুল করিম, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু তাহের ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. অলিউর রহমান।
দেশের ১১ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সাধারণ ৯টি। এগুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড।
বাকি দুটি বোর্ডের একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং অন্যটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। ১১ বোর্ডে কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার।
আরও পড়ুন:পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত করে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেছেন, ‘কাজটা যুদ্ধের মতো হয়েছে। ঠিক কবে নাগাদ সব বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া যাবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না।’
বুধবার ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন ১৫ জানুয়ারি আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেয়া যাবে। আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেবো না। পাঠ্যবই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলবো না।’
ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম সমস্যাটা হলো- আমরা বিদেশে বই ছাপাব না। তারপর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে। তাতে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যখন কাজ শুরু করা হয়েছিল, সেটা অনেক দেরিতে হয়েছে। অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে।
‘রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না। দলীয় রাজনীতিনিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুদের কাছে বই যাবে। সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সেজন্য উন্নত মানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘তাছাড়া এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছেন তাদের অনেককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যাদের বসানো হয়েছে, তারা অভিজ্ঞ। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সমিতির যে নেতা, তাদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়াটা করতে হয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। বই একটু দেরিতে পেলেও শিক্ষার্থীরা ভালো বই পাবে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে যাবে না।’
পাঠ্যবই নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘গল্পের একেবারে শেষে গিয়ে ছাড়া যেমন ষড়যন্ত্রকারী কে তা বোঝা যায় না, এখানেও তেমন। সেটা সরকারের কেউ হোক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোক, এনসিটিবির হোক, মজুতদার হোক, সিন্ডিকেট হোক। মানে, যে কেউ হতে পারে।
‘তবে এখনই আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আমরা একচেটিয়া ব্যবসা কমিয়ে আনবো। এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে।’
নতুন যে শিক্ষাক্রম আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকে সমালোচনা করছেন- কেন পেছনের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলাম আমরা। আমি মনে করি, যে শিক্ষাক্রম করা হয়েছিল নতুন করে, সেটাতে থাকলে শিক্ষার্থীদের আরও পশ্চাৎপদে নিয়ে যাওয়া হতো।’
তিনি বলেন, ‘দুই বছর এ শিক্ষাক্রম চালিয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরার উপায় ছিল না। সেটা সহজও হতো না। সেজন্য আমরা সাময়িকভাবে পেছনের শিক্ষাক্রমে গেছি। এটা আবার এগিয়ে নেয়ার কাজ করা হবে।
‘এবার কিছু পরিমার্জন হয়েছে। আগামীতে আরও পরিমার্জন করা হবে, যাতে শিক্ষাক্রমে ধারাবাহিকতার কোনো ঘাটতি না থাকে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম।
আরও পড়ুন:দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আজ বুধবার থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টারের অফলাইন ও অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিজিএমই) মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য দেশের ১৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারণী মহল সজাগ রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এবং সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, সতর্কতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকল্পে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখার নির্দেশনার আলোকে ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সব পর্যায়ে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত মেডিক্যাল কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি সব মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। আর ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি।
মন্তব্য