মহান বিজয় দিবস ঘিরে উচ্ছ্বাসে মেতেছে পুরো জাতি। এ উপলক্ষে রাজধানী জুড়ে ব্যাপক আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস ও স্থাপনা সেজেছে লাল-সবুজের আলোয়।
পিছিয়ে নেই পুরান ঢাকার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । লাল-সবুজ আলোয় ঝলমল করছে পুরো ক্যাম্পাস। ঝলমলে রঙিন আলোয় প্রতিফলিত হচ্ছে বিজয়ের প্রতিচ্ছবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক, ফটকের দুপাশের দেয়াল থেকে শুরু করে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত, নতুন একাডেমিক ভবন, একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ভাষ্কর্য, ভাষা শহীদ রফিক ভবন, অবকাশ ভবন সেজেছে সবুজ আলোয়। মাঝের প্রশাসনিক ভবন লাল আলোয় সাজানোয় ফুটে উঠেছে লাল-সবুজের পতাকার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আলোয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে জ্বলে ওঠে লাল-সবুজ আলো। বিজয় দিবসকে বরণ করে নিতেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বর্ণিল সাজ। ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে বর্ণিল আলোকসজ্জা দেখে বেড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিজয়ের উচ্ছ্বাসে মেতেছেন সবাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাস সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আলোকে লাল-সবুজের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।’
বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনে লাল-সবুজের আলো মেখে বিজয়ের আনন্দকে বরণ করে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আমরা বিজয় দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়েছি।’
এছাড়া পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের ক্যাম্পাসজুড়েও বাহারি রঙের ছড়াছড়ি। পুরো ক্যাম্পাস মেতেছে যেন বিজয়ের উল্লাসে। আলোকসজ্জায় রঙিন ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে একখণ্ড লাল-সবুজের পতাকায়।
পার্শ্ববর্তী সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসও পরিণত হয়েছে একখণ্ড লাল-সবুজের পতাকায়। আলোরও আছে নিজস্ব ভাষা। সে ভাষায় লাল-সবুজ মানেই প্রিয় বাংলাদেশ। তাই আলোয় এই দুই রঙের প্রভাবই একটু বেশি। তবে আনন্দের এই রঙিন শহরে ঠাঁই হয়েছে নীল-হলুদসহ বাহারি আলোর।
আরও পড়ুন:শিক্ষাক্রম নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আর কোনো ইস্যু না পেয়ে এখন একটি গোষ্ঠী এর পেছনে লেগেছে।’
শনিবার চাঁদপুর স্টেডিয়ামে শেখ কামাল আন্তঃস্কুল ও মাদ্রাসা অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
দীপু মনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে আমাদের পুরো পঠন ও শিখন পদ্ধতি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। সেটির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দময় শিক্ষা পাচ্ছে, সত্যিকার অর্থে শিখছে, যেটি তারা সারা জীবন ধারণ করবে, আত্মস্থ ও প্রয়োগ করতে পারবে প্রয়োজন মতো।
এই ডামাডোলের মধ্যে সে বিষয়টি চাপা পড়ে যাচ্ছে। মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যে গুণগত পরিবর্তন এসেছে, তারা এটি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাচ্ছেন। এর অর্থ হচ্ছে সবাই একটি ভাসা ভাসা জিনিস নিয়ে কথা বলছি। একজন চিৎকার করছেন এবং অন্যজন তার সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ ক্যান্টিনে খাবারের মধ্যে তেলাপোকা পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন হলের আবাসিক ছাত্রীরা।
শুক্রবার দুপুরে ক্যান্টিনে খাবার খেতে যান হলের রুহিনা রুহি নামে এক শিক্ষার্থী। এ সময় তার পাশে বসে খাবার খাওয়া অনেক শিক্ষার্থী খাবারের মধ্যে তেলাপোকা দেখতে পান। পরে খাবার নিয়ে দেখানো হলে নতুন করে খাবার দেয়া হলেও ক্যান্টিনের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর বিষয়টিকে তেমন পাত্তা দেননি।
আবাসিক ছাত্রীদের অভিযোগ, ডাইনিংয়ের খাবারে প্রায়ই তেলাপোকা ও মাছি পাওয়া যায়। বিষয়টি বার বার জানালেও দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা গুরুত্ব দেন না। এছাড়া খুব নিম্নমানের চাল দিয়ে ভাত রান্নাসহ বাসি ভাত পরিবেশন করা হয়। অন্যদিকে গ্যাস সংকটে নিজেরা রান্না করেও খেতে পারছেন না তারা।
ছাত্রীদের হল ডাইনিংয়ে দুপুর ও রাত মিলে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর জন্য খাবার রান্না করা হয়। শুক্রবার খাবার খেতে গিলে খিচুড়ির মধ্যে তেলাপোকা দেখতে পেয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিলে ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠে আসে।
সমাপ্তি নামে এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হলে পানির সমস্যা, গ্যাস নেই, কিচেন নোংরা৷ এখন আবার তেলাপোকা ভর্তাও খেতে হচ্ছে। অভিযোগ জানিয়েও কাজ হচ্ছে না।’
এদিকে চাল বা ডালে পোকা ছিলো না দাবি করে ক্যান্টিন ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘রান্নাঘরের উপরে টিনের ছাউনি। সেখানে অনেক ময়লা থাকায় পোকামাকড় আসতে পারে। অনেকদিন ধরে ময়লা সরানো হচ্ছে না, তেলাপোকা তো আসবেই! অনেক সময় ছাত্রীরাও উপর থেকে ময়লা ফেললে ক্যান্টিনের খাবারের ঘরে এসে পড়ে। এসব থেকে তেলাপোকা আসে।’
হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম বিষয়টি অবগত হয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি হলের ক্যান্টিন কমিটির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন হাউজ টিউটর ছুটিতে থাকায় একটু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
গ্যাস সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা প্রধান প্রকৌশলী এবং বাপেক্সকে চিঠি দিয়েছি। উপাচার্যের সঙ্গেও বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত এটার সমাধান হবে।’
আরও পড়ুন:মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছে মেহেরপুর জেলা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ লক্ষ্যে একটি বিল পাস হয়েছে।
অধিবেশনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ‘মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুর বিল-২০২৩’ উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী দলীয় সদস্যরা। তাদের প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর বিলের ওপর আনীত সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পিকার।
১০ জানুয়ারি সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আদেশ-১৯৭৩ এর বিধানাবঈ পরিপালন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
আচার্য নির্ধারিত শর্তে স্বনামধন্য একজন শিক্ষাবিদকে চার বছরের জন্য উপাচার্য পদে নিয়োগ দেবেন। কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে বা অন্য কোনোভাবে উপাচার্য হিসেবে দুই মেয়াদের বেশি নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। আচার্য যেকোনো সময় উপাচার্যের নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
বিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মচারীদের চাকরির শর্তাবলী নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বেতনভোগী শিক্ষক ও কর্মচারী, সংসদ সদস্য বা স্থানীয় সরকারের কোনো পদে নির্বাচিত হতে প্রার্থী হতে চাইলে ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে ইস্তফা দেবেন।
বিলে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনে আচার্যের অনুমোদন নিয়ে ‘বিজনেস ইনকিউবেটর’ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। বিজনেস ইনকিউবেটর হলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্থাপিত বা পরিচালিত কোনো বিজনেস ইনকিউবেটর, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সব সহযোগিতা দেয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কর্তৃক কোনো উদ্ভাবন, মেধাস্বত্ব, আবিষ্কার বা প্রক্রিয়া, বাজারজাত এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য সহযোগিতা প্রদান।
আরও পড়ুন:কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের (সিইউবি) প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী।
রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বলেন, ‘এটিই হয়তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আমার শেষ উপস্থিতি। দেশজ নাম ও ব্র্যান্ডকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এবং গর্বের সঙ্গে নিজেদের পণ্যকে ধারণ করতে হবে।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বহু বছর সাফল্যের সঙ্গে কানাডায় নিজের ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। এখন তিনি দেশে ফিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করছেন। আমি প্রবাসী সব ব্যবসায়ীকে আহবান জানাই দেশে বিনিয়োগ করার জন্য।’
সমাবর্তন বক্তা নোবেল বিজয়ী কৈলাস সত্যার্থী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে বলেন, ‘আপনাদের স্বপ্ন দেখতে হবে, নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে। যে কোনো ভালো কাজের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়িত করতে হবে। হয়তো কোনো একদিন এই কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশেরই এক ছাত্র নোবেল বিজয়ী হবে। আমি সেদিন নিজে আসব বিজয় উৎসবে অংশ নিতে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সরকার প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট-২০১০, জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০, উচ্চ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশনসহ নানা শিক্ষাবান্ধব উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার হার প্রশংসনীয়ভাবে বেড়েছে। আমরা এখন দক্ষ জনবল সরবরাহ করি। যারা এখন সারাবিশ্বেই তাদের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিচ্ছে।’
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ‘গেস্ট অফ অনার’ হিসেবে যোগদান করেন। তিনি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তার বক্তব্যে বলেন, ‘কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশে রয়েছে আধুনিক সময়োপযোগী বিভিন্ন বিভাগ। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে রয়েছে বৃত্তির সুযোগ। ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।’
মালয়েশিয়ার বিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য যোসেফ আদাইকালাম, অ্যারো বিজনেস এবং জিই গ্যাস পাওয়ারের সিইও দিপেশ নন্দ বিশেষ বক্তা হিসেবে যোগ দেন সমাবর্তনে।
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ৪৩০ জন গ্রাজুয়েট রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ডিগ্রি গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে চারজন- সামিয়া বিনতে নাঈম, সুমাইয়া সুলতানা, ফারজানা বিন্ত মোহাম্মদ ও মো. সাখাওয়াত হোসেন স্বর্ণপদক পান।
আরও পড়ুন:শিক্ষা নিয়ে ব্যবসার মানসিকতা পরিহার করতে এই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত না করে জ্ঞান বিতরণ ও একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী গ্রাজুয়েট তৈরির প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ (সিইউবি)-এর প্রথম সমাবর্তনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, ‘শিক্ষাকে নিয়ে ব্যবসা করার মন-মানসিকতা পরিহার করা সবার জন্যই মঙ্গল।’
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আইন ও বিধি-বিধান মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন। নিজেদের ইচ্ছে আর সুবিধামতো বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাবে না।
‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হোক সেটা চাই না। আবার এটাও চাই না যে শিক্ষাকে পণ্য বিবেচনা করে শিক্ষার নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হোক।’
দেশে বর্তমানে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায় কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির নামে সার্টিফিকেট বিতরণ করে চলেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট তৈরির কারখানা খুলে বসেছে।
‘একবিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে, জাতির উন্নয়ন, উন্নত সমাজ গঠন এবং বিশ্বমানের গ্রাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
‘গুণগত মান ছাড়া উচ্চশিক্ষা মূল্যহীন। তাই, উচ্চ শিক্ষা যাতে কোনোভাবেই সার্টিফিকেট-সর্বস্ব না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শিক্ষার সঙ্গে কর্মের সংযোগ ঘটাতে না পারলে ভবিষ্যতে হয়তোবা শিক্ষার্থীর অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিজস্ব ক্যাম্পাস ও অবকাঠামো নির্মাণে পদক্ষেপ নেয়ারও তাগিদ দেন।
স্নাতক ডিগ্রিধারীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে তোমাদেরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তোমাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
‘প্রত্যাশা করি, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় সমৃদ্ধ হয়ে তোমরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীদেরকে শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না, পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে বহির্জগতের জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে।
‘নিজেকে কর্মবীর ও জ্ঞানী করে তোলাই হবে শিক্ষার মূল লক্ষ্য। উচ্চ চিন্তা ও সহজ জীবনাচরণ তোমাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। সদাচরণ আর সদালাপ হচ্ছে শিক্ষা জীবনের ভূষণ।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা উন্নত জাতি তৈরির মহান কারিগর। আপনাদের হতে হবে নৈতিকভাবে বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী, নিরপেক্ষ, অকুতোভয় এবং সত্যবাদী।’
দেশের তরুণ প্রজন্মকে যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমাদের গর্বের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ন্যানো টেকনোলজি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর মতো বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়নেরও নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি।
সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী ও অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ-এর চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিস সরাফাত, সিইউবি উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচএম জহিরুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেখ মামুন খালেদ, উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রিদওয়ানুল হক এবং মার্শাল (প্রফেসর সৈয়দ আখতার হোসেন) প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:শিক্ষক পদে ছাত্রলীগ কর্মীর চাকরি না হওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে শাটল ট্রেন অবরোধ করে রেখেছে তারা।
চবির সিন্ডিকেট সভা চলাকালে সোমবার বিকাল চারটার দিকে ভাঙচুর চালানো হয়।
চবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মঈনুল ইসলাম রাসেল বলেন, ‘ছাত্রলীগের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ছেলেকে চাকরি না দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন নেতা ও জামাত-শিবির মদদপুষ্ট নিয়োগপ্রার্থীকে নেয়া হচ্ছে। আমাদের দাবি এদেরকে বাদ দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত জামাত-শিবির মদদপুষ্ট নিয়োগপ্রার্থীকে বাদ দেয়া হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত ট্রেন অবরোধ থাকবে।’
চবির প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইয়া বলেন, ‘ভাঙচুর কেন হয়েছে সেটা তদন্ত সাপেক্ষে বুঝা যাবে। নিয়োগের বিষয়ে এক্সপার্ট বোর্ড যাদের ভালো মনে করছে তাদের নিয়েছে। শাটলের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’
আরও পড়ুন:পাঠ্যবইয়ের ভুলভ্রান্তি সংশোধনের পাশাপাশি এর পেছনে কারও গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে দুটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রটি জানায়, বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামানকে। বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন ভুল পর্যালোচনা করে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি ভুল সংশোধন করবেন।
অন্যদিকে প্রশাসনিক কমিটির প্রধান করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকে ভুলের পেছনে কারও গাফিলতি আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বইয়ে কী ধরনের ভুল বা বিতর্ক রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আমাদের রিপোর্ট দেবে, আমরা বই সংশোধন করব। পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মতো কোনো বিষয় যেন না থাকে সে জন্য কাজ করব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য