এসএসসি বা এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষার ফল ঘোষণার দিন দেশজুড়ে তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। পরীক্ষায় ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা মাতেন উচ্ছ্বাসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবক, শিক্ষকেরাও। ভালো ফল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খবর ফলাও করে প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে। পরের কয়েক দিন কৃতী শিক্ষার্থীদের নিয়েও প্রকাশ হয় প্রতিবেদন।
বছরের পর বছর এমন রীতিই চলছে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা ঘিরে। তবে শিক্ষাব্যবস্থাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎসবের এই জোয়ার কৃতী শিক্ষার্থীদের আলোড়িত করলেও সম্পূর্ণ বিপরীত প্রভাব ফেলছে পিছিয়ে থাকা কিংবা অকৃতকার্য হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ওপর। পরীক্ষায় ‘খারাপ করা’ শিক্ষার্থীর আত্মহননের মতো ঘটনাও ঘটছে প্রতিবছর।
তারা বলছেন, উৎসবের মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের রীতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। সব শিক্ষার্থীর মানসিক দিক বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন দেশ অনেক আগেই ঘটা করে ফল প্রকাশের ব্যবস্থা থেকে সরে এসেছে।
দেশের একটি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওই দিন একজন শিক্ষার্থী আমাকে ফোন করেই কাঁদতে শুরু করে। সে জানায়, পরীক্ষায় খারাপ ফলের কথা জানাজানি হওয়ায় বাবা-মা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইছে। যদি আমি (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) তার দায়িত্ব না নিই সে (শিক্ষার্থী) আত্মহত্যা করবে।’
বিশেষজ্ঞরা জানান, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের পর রোল ও নিবন্ধন নম্বর দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে যেকোনো শিক্ষার্থীর ফল যে কারও পক্ষে জানা সম্ভব। তবে উন্নত দেশে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে ফলটি জানায় তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল অন্য কারও জানার সুযোগ নেই। পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেডিংয়ের শীর্ষে থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও সেখানে প্রকাশ করা হয় না।
তারা বলছেন, দেশে জিপিএ ফাইভকে শীর্ষ মানদণ্ড ধরে নেয়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ বেড়েছে। এতে যোগ দিয়েছেন অভিভাবক-শিক্ষকও। সরকারের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমও বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে।
শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করছেন ঘটা করে পরীক্ষার ফল প্রকাশের রীতি একটি ‘অত্যন্ত অপ্রয়োজনীয় চর্চা’।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই পাবলিক পরীক্ষার ফল কেন ঘটা করে প্রকাশ করতে হবে? এখানেই তো গোড়ায় গলদ।’
ইংরেজি মাধ্যমে পড়া নিজের ছেলের পরীক্ষার ফল প্রকাশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে যখন এ-লেভেল এবং ও-লেভেলের পরীক্ষা দিল তখন কেউ জানল না। সে রেজাল্ট পেয়ে গেল। নিজের কম্পিউটারে চলে এলো, সে আমাকে দেখাল, বন্ধুদের সঙ্গে মজা করল। ওরা ওরা মজা করে পৃথিবীর সব পথে বেরিয়ে গেল।’
তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এটা (পরীক্ষায় কৃতিদের সামনে আনা) ঘটা করে তারা শুরু করেছে। তারা শীর্ষ জিপিএ প্রাপ্তদের রিসিপশন দেয়। একটা ভজঘট ব্যাপার হচ্ছে।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার দর্শন হচ্ছে প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নয়, প্রতিযোগিতা হবে নিজের সঙ্গে। আমি কত জোরে দৌড়াতে পারি আমার সক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুটা নিয়ে আমি কাজ করে ওই লক্ষ্যে দৌড়াব। এমন অনেকে আছে যারা জিপিএ ফাইভ পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেনি। জিপিএ ফাইভ বাচ্চাদের একটা ফাঁদের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। পরিবারগুলোকে একটা ধন্ধের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এগুলো বাচ্চাদের ওপর মানসিকভাবে অনেক প্রভাব ফেলে। যারা জিপিএ ফাইভ পায়নি তারা নিজেদের অধম মনে করে। তাদের আত্মবিশ্বাসের ভিত কেঁপে যায়। এরা আর সেই ভিত খুঁজে পায় না। অথচ অনেক ছেলে-মেয়ে বাইরে পড়াশোনা করতে গেছে যারা জিপিএ ফাইভ পায়নি।’
অভিভাবকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘মা-বাবারা এখন ফেসবুকে পাবলিসিটি করেন। এতে বাচ্চাদের ওপর একটা চাপ তৈরি হয়ে যায়। যে সময়ে পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করার কথা নয়, শিক্ষার আনন্দ পাওয়ার কথা সেই সময়ে তাদের ভি সাইন দেখিয়ে, ড্রাম বাজিয়ে বিশেষ করে পত্রিকাগুলো এ ব্যাপারে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে।
‘সব মিডিয়া ঢাকাতে ভিকারুননিসা, আইডিয়াল, না হয় উত্তরা মডেল নিয়ে ব্যস্ত। এখানকার ছেলে-মেয়েদের ছবি দেখিয়ে তারা সন্তুষ্টি পায়। অথচ যে বাচ্চা এই চাপের মধ্যে পড়ে আত্মহত্যা করল, তার খবর কেউ রাখে না।’
নীতিনির্ধারকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘এই রেজাল্ট শুধু বাচ্চারা জানবে, স্কুল জানবে। ঘটা করে ফল প্রকাশের দিনের কোনো দরকার নেই। এটা প্রত্যেকটা বোর্ড শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেবে। তারাই শুধু জানবে। জিপিএ ফাইভ উৎসব অন্যদের জন্য বিষাদের দিন তৈরি করে। এটা অত্যন্ত অপ্রয়োজনীয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির ফ্রাঙ্ক এইচ নেটার এমডি মেডিসিন স্কুলের ইআইডি অনুষদের সহযোগী ডিনের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক সেজান মাহমুদ।
আমেরিকায় এভাবে ঘটা করে পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় না জানিয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো পরীক্ষার ফল জানানোর ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কতার সীমা বিবেচনা করা হয়। ১৮ বছরের নিচে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সাধারণত বাবা-মা বা লিগ্যাল গার্জিয়ানকে ডেকে ফল শেয়ার করা হয়। এর চেয়ে বেশি বয়সের ক্ষেত্রে সন্তানের অনুমতি সাপেক্ষে বাবা-মা রেজাল্ট দেখতে পারেন।’
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বাবা-মা খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীর সঙ্গে যুক্ত থাকেন বলে পরীক্ষার রেজাল্ট পরিবারের নির্দিষ্ট কারও কাছে এবং ছাত্রছাত্রীদের কাছে পাঠানো যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই প্রকাশ্যে পত্রিকায় বা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে নামসহ পরিচয়সহ দেয়া উচিত নয়। বড়জোর যেকোনো আইডির শেষ চার নম্বর দিয়ে ফল দেয়া যেতে পারে।’
চিকিৎসাবিজ্ঞানী সেজান মাহমুদ বলেন, ‘যাদের ফল আশানুরূপ হচ্ছে না তারা নানান মানসিক বিপর্যয়ের স্বীকার হচ্ছে। স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, এমনকি সুইসাইডের ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। আমাদের মনে রাখা দরকার একবারের রেজাল্টই জীবনের সবকিছু নয়।’
শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের ফল ঘোষণা করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার। এরপরেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল অন্যদের মাঝে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকাকে দায়ী করছেন তিনি।
তপন কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বোর্ড থেকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফল পাঠিয়ে থাকি। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠান রেজাল্ট পেয়ে থাকে। নৈতিকভাবে তারা সেটা উন্মুক্ত করতে পারে না।
‘আমাদের বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে চাইলেই যে কারও ফল জানার সুযোগ নেই, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সুযোগ আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের ফল পাঠাতে হয়। এটা ব্রিটিশ সময় থেকে আছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটা ডিজক্লোজ করবে কি না, সেটা তাদের বিষয়। এটা তাদের নীতি-নৈতিকতার বিষয়। এখানে আমাদের কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই।’
ঘটা করে ফল প্রকাশ না করার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই প্রস্তাবটি ভেবে দেখা যায়। এটি আমি এরপর নির্ধারিত ফোরামে আলোচনা করব। ফলাফলটা যার যার তার তার হয়, সামাজিকভাবে অন্য কেউ যেন না জানে।’
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জামাল নাছের অভিভাবকদের আরও সচেতনতার তাগিদ দিচ্ছেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিভাবকরা এখন সন্তানদের নিয়ে অনেক বেশি অশান্ত পরিবেশ তৈরি করে থাকেন, যা তাদের আরও ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।
‘এই আয়োজনটা (উৎসব করে ফল প্রকাশ) আমাদের এখানে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে এখন পরিবেশ ও পরিস্থিতি বদলে গেছে। আমাদের ছেলেমেয়েদের ইমোশনাল জায়গাটা বেড়ে গেছে। তারা একটু স্পর্শকাতর হয়েছে। এখন এটা করা যেতে পারে যে একটি নির্দেষ্ট তারিখের পর থেকে শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইটে রেজাল্ট পাবে। অবশ্য অভিভাবক সচেতন না হলে তাতেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এখন অভিভাবকরা ভাবেন তার বাচ্চাকে এটা করতেই হবে, এই ফল আনতেই হবে। এটা একটা প্রেস্টিজিয়াস ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এই জায়গা থেকে তাদের সরে আসতে হবে।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারও মনে করছেন ‘উৎসব করে’ পাবলিক পরীক্ষার ফল ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অনেক শিক্ষার্থীর ওপর।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো বাচ্চা যখন রেজাল্ট খারাপ করে, আর তার বন্ধু যখন রেজাল্ট ভালো করে সেটা যখন ফেসবুকে বা পত্রিকাতে আসে, তখন খারাপ করা শিক্ষার্থীর মধ্যে হতাশা কাজ করে। সে এটা কাউকে বলতেও পারে না। এ জন্য আমরা অনেক সময় দেখি সুইসাইড পর্যন্ত করে ফেলছে। এটা দুঃখজনক।’
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ঘটা করে ফল প্রকাশের পেছনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাকেও দায়ী করেছেন। তবে এর সঙ্গে একমত নন সাংবাদিক নেতা ও টিভি টুডের সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলছেন, পরিবার ও সামাজের অতিমাত্রায় সংবেদশীলতা ও অতিমাত্রায় কম সহনশীলতার কারণেই পরীক্ষার ফল নিয়ে ঝুঁকিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে কিন্তু এটা (কৃতীদের নিয়ে প্রতিবেদন) আরও বেশি হতো। তখন মেধা তালিকায় যারা প্রথম দশে থাকতেন বা স্ট্যান্ড করতেন তাদের ছবিসহ ছাপানো হতো। তারা কে কী হতে চান সেটাও জানানো হতো।
‘আমাদের বর্তমান স্পিকার যখন ফার্স্ট হলেন তখন তার ছবি ছাপানো হয়েছিল। তখন কিন্তু এখনকার মতো এত সংবেদনশীল হিসেবে দেখা হয়নি। এটা নতুন হচ্ছে তা নয়, বরং এটা আগে বেশি হতো। এটা আগের ধারাবাহিকতাতেই চলছে।’
এসএসসি ও এইচএসসি প্রথম পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষা বলে এটি উৎসবের মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন যেটা হচ্ছে সেটা হলো একজন ছাত্র বা ছাত্রী ফেল করলে সে যেন অচ্ছুৎ হয়ে পড়ে। আগে এমন হতাশা বা আত্মহত্যা ছিল, তবে কম ছিল। এখনকার বাচ্চারা একসঙ্গে বড় হচ্ছে, মোবাইলের কারণে সবকিছু জানতে ও জানাতে পারছে।
‘ফল ছাপানোর ক্ষেত্রে তো আমি বাধা দিতে পারব না। পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট ছাপা হবে। সেখানে যারা ভালো করবে, সেটাও ছাপা হবে। যারা খারাপ করে সেটা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তাই খবরের চেয়ে জরুরি হলো পরিবারকে শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে হবে।’
কারও সাফল্যের গল্প বা ভালো কিছু ছাপা বন্ধ করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে অকৃতকার্য হচ্ছে তার মধ্যে এটার প্রভাব পড়বে, কিন্তু এর মানে এই না যে সফল হচ্ছে তার কথা বলা আমি বন্ধ রাখতে পারব।’
আরও পড়ুন:র্যাগিংয়ের দায়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আরেক ছাত্রকে আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য জানান।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখানে পুরো শিক্ষা জীবনে তারা আর হলে থাকতে পারবে না।’
বহিষ্কৃত সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। তবে তাদের নাম প্রকাশ করেননি উপাচার্য।
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও এক ছাত্রীকে মারধরের ঘটনায় কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনা ছাড়াও ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মাদকাসক্তিসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।’
অন্য এক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গাড়িচালককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ১১১ নম্বর কক্ষে ২০ ফেব্রুয়ারি সিনিয়ররা জুনিয়রদের র্যাগিং করার অভিযোগ ওঠে। ২২ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধানের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেদিন অভিযুক্ত ৫ শিক্ষার্থীকে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তারা হলেন- আপন মিয়া, আল আমিন, পাপন মিয়া, রিয়াজ হোসেন ও আশিক হোসেন। তারা সবাই ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।
এছাড়া ওই ঘটনায় অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন:নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয়জন ছাত্র আহত হয়েছেন।
ক্যাম্পাসের শান্তিনিকেতন, টং ও আবদুস সালাম হল এলাকায় বুধবার দুপুর ও রাতে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে ট্যুরিজম বিভাগের তামিরুল হাফিজ ও ফয়সল, সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী রিমন এবং মাইনুল আহত হয়েছেন।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিনিকেতন এলাকায় একটি চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নুহাশ গ্রুপ ও নাঈম গ্রুপের ছাত্রদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে ওই ঘটনার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের অনুসারীরা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়ান। এসময় মাইনুল নামে এক ছাত্র গুরুতর জখম হয়।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে নুহাশ গ্রুপের অনুসারীরা সালাম হলের কয়েকটি জানালা ভাঙচুর করে। পুনরায় সেখানেও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গিয়ে ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ নেতা নাঈমকে কল করা হলে তিনি জানান, সমস্যা সমাধানে বৈঠক চলমান রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন।
ছাত্রলীগের অপর পক্ষের নেতা মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের মধ্যে হালকা ঝামেলা হয়েছে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ঘটনার সঙ্গে তারা কোনো পক্ষ জড়িত নন।
নোবিপ্রবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এখন উভয় পক্ষ শান্ত আছে। আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।’
সুধারাম থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মিজান পাঠান জানান, কয়েকজন ছাত্র আহত হয়ে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আরও পড়ুন:হলের এক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের জের ধরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
বুধবার রাত ৮ টার দিকে এ মহড়া দেয় তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হল থেকে রড, রামদা, লাঠি ও ছুরিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে বটতলায় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা তাদের বাধা দেন। সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের মধ্যে অনেকক্ষণ কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশ টুডে পত্রিকার সাংবাদিক জুবায়ের আহমেদ ও ডিবিসি নিউজের আবদুল্লাহ আল মামুনের ওপর হামলা চালান।
এ সময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেনিন মাহবুব, সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ, আবুল কালাম আজাদ এবং আবদুল্লাহ আল ফারুক ইমরান উপস্থিত ছিলেন।
হামলার শিকার জুবায়ের আহমেদ প্রক্টর অফিসে দেয়া এক লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘উল্লিখিত ছাত্রলীগ নেতাদের ইন্ধনে তাদের অনুসারীরা লোহার পাইপ ও রামদা নিয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটায়।’
মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, ‘আজ সন্ধ্যায় বটতলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র আহমেদ গালিবকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একদল শিক্ষার্থী মারধর করেন। এর জের ধরেই তারা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের দিকে যাচ্ছিলেন।’
সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে গত রোববার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) ৪৭তম ব্যাচের ও রবীন্দ্রনাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ গালিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভীর ইসলাম, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির হাসান সাগর ও খালিদ হাসানসহ অজ্ঞাত ৪০ জনের বিরুদ্ধে প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন মাহফুজুর। এদের ২ পক্ষই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
বটতলায় দেড় ঘণ্টা অবস্থানের পর মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফিরে যাওয়ার পর সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন উপস্থিত হন।
জানতে চাইলে সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। তাই ঘটনাস্থলে আসতে দেরি হয়েছে। ছাত্রলীগের কেউ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আজকের ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। আমরা এই ধরনের ঘটনাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখে তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রেও সেটি করা হবে। এর বাইরে কোনো ধরনের অভিযোগ পেলে সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে।’
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে অতিথি এক শিক্ষার্থীকে চড় মেরে কান ফাটিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সজিব আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ফরিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বহিরাগতদের সঙ্গে মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। বহিরাগতদের একজন ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য দিব্য। তাকে মীর মশাররফ হোসেন হলে নিয়ে যান হলের শিক্ষার্থীরা। অনিন্দ্য দিব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পূর্বপরিচিত।
বাগবিতণ্ডার ওই ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের হলের গেস্টরুমে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেতারা। তারা দিব্য ও অন্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সজীবের কানে এলোপাথাড়ি থাপ্পড় মারতে থাকেন হাসান মাহমুদ ফরিদ। এতে সজীবের কান দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
আহত সজীবকে তার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান বাধা দেন। পরে সজীবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া হয়। পরে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অতিথি কক্ষে আমাদের পাঁচজনকে সামনে দাঁড় করিয়ে কানে থাপ্পড় মারতে থাকেন ভাইয়েরা। সজিবের কানে একটু আগে থেকেই সমস্যা ছিল। থাপ্পড়ের কারণে তার কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।’
অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান বলেন, ‘আমরা হলে প্রতি সপ্তাহে গেস্টরুম করি। সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজকর্ম করার জন্য সেখানে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়। গতকালও (মঙ্গলবার) তেমনটিই হয়েছিল।’
তবে অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তাকে তো মারা হয়নি। তার কানে আগে থেকেই একটু সমস্যা ছিল। ডাক্তার তাকে পানি লাগাতে নিষেধ করেছে। গেস্টরুমে একটু চিৎকার হয়েছিল, তাতেই তার কানে সমস্যা দেখা দেয়। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য আমরাই দায়িত্ব নিয়ে মেডিক্যালে পাঠিয়েছিলাম। সে আমাদের ছোট ভাই। তাকে কেন আটকে রাখব?’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হাসান মাহমুদ ফরিদ বলেন, ‘কাল (মঙ্গলবার) রাতে গেস্টরুম হয়েছিল। সেখানে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। কাউকে কানে থাপ্পড় দেয়া বা মারা হয়নি। ওই ছেলে গেস্টরুমে অসুস্থ বোধ করছিল। তাই তাকে আমরা তার বন্ধুদের সঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
অতিথি কক্ষে এ ঘটনার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও শাহ পরান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আল রাজি সরকার প্রমুখ।
তারা সবাই মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘অতিথি কক্ষে নির্যাতন কিংবা মারধর হয়ে থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। স্বপ্রণোদিত হয়ে দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিতব্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)।
একাডেমিক কাউন্সিলে গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্ত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, গুচ্ছে যাচ্ছে জবি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, গুচ্ছে থাকা না থাকা নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
চলতি বছরের ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৪ তম একাডেমিক কাউন্সিলে (বিশেষ) সর্বসম্মতিক্রমে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে ২০ মার্চ ইউজিসির এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গুচ্ছ পদ্ধতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ পদ্ধতিতে থাকা আগের সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই অংশগ্রহণ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ওপর হস্তক্ষেপ করে জোর করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে থাকার চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ নিয়ে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সময়ক্ষেপণ না করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দাবি, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার কারণে নিজস্ব স্বকীয়তা হারাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন সংরক্ষণ, নিজস্ব স্বকীয়তা রক্ষা, গুচ্ছ পদ্ধতির নানা অসংগতি ও হয়রানি বন্ধ না হওয়া, সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ এবং গুচ্ছের বাইরে এই দুইভাগে বিভক্ত করে স্বায়ত্বশাসন নীতির মধ্যে বৈষম্য হচ্ছে।
ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করলেও গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে শিক্ষা-কার্যক্রমে ছয় মাস এগিয়ে রয়েছে। এতে সেশনজটে পড়েছেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিল ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। কাজেই একাডেমিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা থাকতে পারে না।
ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সরকারই পাশ করেছে। আবার শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য সরকারই বৃহৎ স্বার্থে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় সবাইকে অংশগ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য একাধিকবার গুচ্ছ পদ্ধতির জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও নির্দেশনা দিয়েছে। ইউজিসি শুধু তা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করেছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক বলেন, ইউজিসি তাদের সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তো আছেই। একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ে তো সিন্ডিকেট বড়। সিন্ডিকেটেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:বগুড়ায় এক বিচারকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীর মাকে অপদস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়াকে কেন্দ্র করে বিচারকের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সহপাঠীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, “এই বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে বগুড়ার জজ আদালতের এক বিচারকের মেয়ে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সোমবার ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডতা হয়।
“ওই রাতেই বিচারকের মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাধ্যমে মেসেঞ্জারে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়। সে পোস্টে উল্লেখ করে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা জজ। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো জজ হতে।’
“ওই পোস্টে বিচারকের মেয়ের চার সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে ওই বিচারক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। সে সময় ওই বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে দেয়ার হুমকি দেন। এ সময় দুই অভিভাবককে ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘বিচারকের মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বিচার বসানো হয়। এ সময় বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেয়ার হুমকি দিলে দুইজন অভিভাবক নিজে থেকেই পা ধরে ক্ষমা চান। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি বা পা ধরতে বলেনি।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে।
‘যতটুকু জেনেছি সোমবার বিচারকের মেয়ের ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে সে তিন মাস আগেই স্কুলে আসায় এই পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কাজটি সম্পন্ন করে। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ক্রিটিসাইজ করে। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু অভিভাবকদের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অভিভাবকেরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি।’
এদিকে অভিভাবকদের লাঞ্ছনা ও শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার বিদ্যালয়ে আসেন। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাস দেন।
একইসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
বিছানায় শুয়ে মোবাইল চালাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। পা টিপছেন শাখা ছাত্রলীগেরই দুই নেতা।
এমনই একটি ছবি সোমবার দিনজুড়ে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা।
শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের ৩১১ নম্বর কক্ষের চিত্র এটি। এই কক্ষে থাকেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। অন্যদিকে পা টিপতে থাকা দুই নেতা হলেন, উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক শামীম আজাদ ও উপক্রীড়া সম্পাদক শফিউল ইসলাম।
তবে সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের দাবি ছবিটি আড়াই বছর আগের। তার অসুস্থ থাকাকালীন এই ছবি দিয়ে অপরজনীতি করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
রুবেল বলেন, আমি অসুস্থ ছিলাম, আমার ছোট ভাই দুইজন আমার সেবা করেছে। এটা মানবিক বিষয়। ছাত্রলীগের সভাপতি বলে কি কেউ আমার সেবা করতে পারবে না? আমার সঙ্গেরই কেউ সেই সময় ছবি তুলে এখন অপরাজনীতি করছে।
তিনি বলেন, অসুস্থ হলে মানুষ মানুষকে এমনিতেই দেখতে আসে, সেবা-যত্ন করে। এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। ছবিতে ওষুধপথ্য দেখা যাচ্ছে। যারা অপরাজনীতি করছেন তারা অমানবিক কাজ করছেন। আমি নিজেও প্রেসিডেন্ট হয়ে পা টিপেছি, সেবা করেছি, এমন ছবিও আমার ওয়ালে দিয়েছি। সেটা ভাইরাল করুক।
পা টেপার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক শামীম আজাদ বলেন, রুবেল ভাই অসুস্থ ছিলেন। আমরা ওনার পায়ে মলম লাগিয়ে দিয়েছি। পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে অন্যরা যেমন সেবা করেন, এটাও তেমন।
বিশ্ববদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেজাউল হক রুবেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি স্নাতক পাস করেন ২০১০ সালে। স্নাতকোত্তর পাস করেছেন ২০১৩ সালে। আর ২০১৯ সালে ১৪ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। সভাপতির মেয়াদ এক বছর হলেও তিনি এখনো এই পদে রয়ে গেছেন। তার শিক্ষাবর্ষের অন্য শিক্ষার্থীরা অন্তত ৯ বছর আগে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। তবে তিনি এখনও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য