দেশের ২ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ১৫ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী।
দেশে সরকারি সংজ্ঞা অনুযায়ী অন্তত একটি প্রতিবন্ধিতা রয়েছে এমন ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বলা হয়। শনিবার সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। একই সঙ্গে দেশেও এই দিনে জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়। এ বছর এই দিবসটি হবে আন্তর্জাতিকভাবে ৩১তম ও জাতীয়ভাবে ২৪তম।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনমুখী পদক্ষেপ, প্রবেশগম্য ও সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মাণে উদ্ভাবনের ভূমিকা।’
পূর্ণ পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি বলে ধারণা করা হয়। দেশটিতে এই বিপুল পরিমাণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই শিক্ষার সুযোগ পায় না। আর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা খুবই নগণ্য।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তির সংখ্যা ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৯৮১ জন। এর মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি ৩ লাখ ৬৪৯ জন। বিবিএসের জরিপের তথ্য মতে, দেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যার শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। ফাইল ছবি
বাংলাদেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পড়াশোনার একমাত্র সহায়ক হচ্ছে ব্রেইল পদ্ধতি। মূলত কাগজের ওপর ছয়টি বিন্দুকে ফুটিয়ে তুলে লিখবার একটি পদ্ধতি। দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা এই উন্নীত বা উত্তল বিন্দুগুলোর ওপর আঙুল বুলিয়ে ছয়টি বিন্দুর নকশা অনুযায়ী কোনটি কোন অক্ষর তা অনুধাবন করতে সক্ষম হন এবং লেখার অর্থ বুঝতে পারেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বলছেন, ডিজিটাল সুবিধা অনেক বাড়লেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। ব্রেইল পদ্ধতির নানা উপকরণ আরও সহজলভ্য হলে তাদের জন্য শিক্ষাগ্রহণ আরও সুবিধার হবে।
কীভাবে চলছে পড়াশোনা ও পরীক্ষা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৭১ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ৩১ জন রয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ভলান্টিয়ার শিক্ষার্থীরা এখানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিখন কাজে সাহায্য করে থাকেন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বা পিডিএফের সভাপতি তানভীর আহমেদ তন্ময় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্রেইল পদ্ধতিতে কিছু সমস্যা আছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল পদ্ধতির কথা ভাবছে। আমরা কয়েকবার এই বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথাও বলেছি। আমাদের এই বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে।’
ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সব শিক্ষাবর্ষে সব মিলিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৫ জন। এর মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৪ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করা পিডিএফ জানাচ্ছে, আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এখনও কোনো কারিকুলাম তৈরি হয়নি। এমনকি তাদের শিক্ষার জন্য অপরিহার্য ব্রেইল পদ্ধতিও নেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। শিক্ষার্থীরা শ্রুতি লেখকের সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় অংশ নেন।
সংগঠনের সভাপতি ৪৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আব্দুল গাফফার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে আমাদের সংগঠন থেকেই এই ৩৪ জনকে পড়াশোনা করার জন্য সাহায্য করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনও তাদের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা চালু হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ক্লাসের সব লেকচার রেকর্ড করে দেওয়া হয় তাদের। এরপর যখন পরীক্ষা শুরু হয়, তখন আমাদের একজন ভলান্টিয়ার তাদের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রেডি থাকেন। তবে এটা খুবই উদ্বেগজনক হয়ে পড়ে যখন আমাদের কোনো ভলান্টিয়ারের নিজের পরীক্ষা থাকে। তখন তিনি হয়তো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে সাহায্য করতে পারেন না।’
গাফফার বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই তাদের পরিপূর্ণ কারিকুলামের জন্য আন্দোলন করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে একটা ডিজ্যাবিলিটি কর্নার করা হবে। দুই মাস আগেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) একটা সভায় আমরা কারিকুলামের কথা বলেছি। ইউজিসি জানত না এত শিক্ষার্থী (দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী) পড়াশোনা করছে। তারা কারিকুলামের জন্য উদ্যোগ নিবে এমন আশ্বাস দিয়েছেন।’
শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা করে কোনো সুযোগ চালু হয়নি।
সারা দেশে কী অবস্থা
মৌলভীবাজারের সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের রিসোর্স শিক্ষক স্বপন চন্দ্র কর্মকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিজেও দৃষ্টিহীন। আর আমাদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।’
তিনি বলনে, ‘একজন শিশু যদি জন্মগতভাবেই দৃষ্টিহীন হয়ে থাকে, তবে তার শিক্ষার একমাত্র উপায় ব্রেইল। আগে আমাদের বইপত্র নিয়ে সমস্যা হলেও এখন চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে ব্রেইল বইপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে।’
তবে ব্রেইল লেখার সামগ্রী পাচ্ছেন না বলে জানান স্বপন চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘লেখার জন্য রাইটিং ফ্রেইম, বোর্ড এইগুলো পাচ্ছি না ঠিকমতো।’
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা হাতের সাহায্য ছাড়া পড়তে পারবে না। তাই ছোটবেলা থেকেই তাদের ব্রেইল পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। একটা সময় পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর সঠিক কারিকুলাম বা ব্রেইল সরঞ্জাম পান না তারা। এ ক্ষেত্রে নিতে হয় শ্রুতি লেখকের সাহায্য।
দৃষ্টিহীন এই শিক্ষক বলেন, ‘ব্রেইল পদ্ধতি থাকলে উচ্চশিক্ষার জন্য অবশ্যই ভালো হবে। তবে শ্রতিলেখকও লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘স্কুলে টেস্ট বা নির্বাচনি পরীক্ষা পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতি থাকছে। কিন্তু যখন পাবলিক পরীক্ষা দিচ্ছে, তখন তো খাতা আমার এখানে থাকবে না। বোর্ডে তো ব্রেইলের প্রতিকার নেই। তার জন্য শ্রুতি লেখকের সাহায্য লাগবেই।’
প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রাথমিকের শিক্ষা সহজতর হলেও উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা কঠিন হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অধিকাংশ স্কুলই শুধু প্রাথমিক পর্যায়ে। মাধ্যমিকে এই শিক্ষার্থীদের জন্য মূলধারার প্রতিষ্ঠান ছাড়া বিকল্প নেই। আবার থাকলেও নেই উপযুক্ত শিক্ষা উপকরণ।
২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির ৯ হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য সরকার ব্রেইল পদ্ধতির বই ছেপেছে।
সফটওয়্যার ও শ্রুতি লেখক প্যানেল
গত আগস্টে দৃষ্টিহীনদের হাতে লেখা ব্রেইল লিপি বাংলায় রূপান্তর করার একটি সফটওয়্যারের প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল। প্রাথমিকভাবে এ সফটওয়্যারে ৯৭ শতাংশ নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।
এই গবেষণায় যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক আহমেদুল কবীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আছেন, তাদের কথা ভেবেই আমরা এই সফটওয়্যার তৈরি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণত মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়াশোনায় ব্রেইল থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটি নেই। তারা ব্রেইলে যদি লিখেও থাকেন, সেটি পড়ার সক্ষমতা নেই। আমরা যে সফটওয়্যার বানিয়েছি, সেটি ব্রেইল লেখাকে বাংলায় রূপান্তর করতে পারবে। এটার মোবাইল স্ক্যান পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে।’
আহমেদুল কবীর বলেন, ‘ব্রেইলে লেখা কাগজ স্ক্যান করে সেটা সফটওয়্যারের মাধ্যমে দিলে ৯৭ ভাগ নির্ভুল এডিট করা যাবে এমন ওয়ার্ড ফাইল বা পিডিএফ লেখা আসবে। নেক্সট সেমিস্টারে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাহায্যে একটা পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেখানে আমরা আরও কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ করব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিক আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যখন বুঝব আমার এখানে এই ধরনের শিক্ষার্থী আছেন, তখন আমি পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারি। শুধু লিখে পরীক্ষা দেওয়ার বাইরেও অন্য কিছু পদ্ধতি যোগ করলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সুবিধা হবে।’
এই অধ্যাপক শ্রুতি লেখকের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘যদি এমন কোনো উপায় থাকে যে লিখতেই হবে, সে ক্ষেত্রে শ্রুতি লেখকের জন্য একটা প্যানেল করা উচিত। এই প্যানেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তৈরি করবে। এটা অবশ্যই একটা রি-এনফোর্সমেন্ট ভিত্তিতে হতে হবে। যারা এখানে কাজ করবে, তাদের একটা সার্টিফিকেট দিতে হবে। অথবা সময় দেওয়ার জন্য সম্মানী দিতে হবে। যখন কোনো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়কে তার পরীক্ষার সময় জানাবে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সেই সহযোগিতা দেবে।’
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই অধ্যাপক ব্রেইল পদ্ধতিরও উন্নতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের গ্রন্থাগারে ব্রেইল প্রিন্টার আছে, কিন্তু সেটা সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। কারণ অনেকেই জানেন না এটা কীভাবে কাজ করে। সেখানে অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ দিতে হবে। তাতে উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে।’
আরও পড়ুন:ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের (টিএনই) বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ফুলার রোড অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষা খাতের অংশীজন, অ্যাকাডেমিক কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন এবং ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের (টিএনই) বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর স্যালভাডোর কারবাজাল লোপেজ গবেষণা প্রতিবেদনের মূল তথ্য উপস্থাপন করেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস বলেন, ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে টিএনইয়ের প্রসার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ সুগম করবে।
‘টিএনই মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে আমরা আমাদের অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করে এ প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রচেষ্টার আমি সত্যিই প্রশংসা করি। এটি অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করছে।
‘এ সম্পর্ক জোরদার করা উভয় দেশের জন্যই উপকারী হবে, যা উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, জ্ঞান বিনিময় এবং এই খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, ‘ব্রিটিশ কাউন্সিলের ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন রিসার্চ রিপোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন বৈশ্বিক শিক্ষা অংশীদারত্বের মাধ্যমে শিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে দারুণ সুযোগ তৈরি করছে।’
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের সম্ভাবনা ও সামাজিক মূল্য’ বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সেশনটি পরিচালনা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর প্রোগ্রামস ডেভিড নক্স।
প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারি জেনারেল ইশতিয়াক আবেদিন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাউথ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর সালভাদর কারবাজাল লোপেজ।
ব্রিটিশ কাউন্সিল নিয়োজিত আন্তর্জাতিক যোগ্যতা মূল্যায়ন সংস্থা ইক্টিস গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা করেছে।
১. টিএনই প্রদানকারীদের জন্য নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াগুলো সহজ করা ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা
২. ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ব্রিজিং ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রাম চালু করা
৩. রিমোট ও অনলাইন লার্নিংকে সহায়তা করতে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করা
৪. মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াগুলোতে স্বচ্ছতা ও সমন্বয় বৃদ্ধি করা
৫. বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ
৬. মধ্যম আয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বৈত ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ
অনুষ্ঠানে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) ২০২৫ অনুদানের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি নির্বাচিত ইউকে-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২৫ হাজার পাউন্ড করে অনুদান পাবে।
বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে লিভারপুল জন মুরস ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশ।
এ ছাড়াও রয়্যাল হলোওয়ে, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে কাজ করবে, এবং কীল ইউনিভার্সিটি এফআইভিডিবির সঙ্গে অংশীদারত্ব করবে।
এ অনুদানগুলো ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন উদ্যোগের মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক ও গবেষণামূলক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালীর উদ্দেশে প্রদান করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য।
সম্পূর্ণ রিপোর্টটি ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
আরও পড়ুন:প্রাথমিক শিক্ষার জেলা ও বিভাগের টাস্কফোর্স কমিটি সংশোধন করে পুনর্গঠনের নির্দেশনা এবং এর কার্যপরিধি পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি ও প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপপরিচালককে সদস্য সচিব করে বিভাগীয় টাস্কফোর্স এবং জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে সদস্য সচিব করে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি, বেসরকারি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টার ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার সার্বিক অবস্থা ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করবে বিভাগীয় টাস্কফোর্স।’
জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা টাস্কফোর্স কমিটিকে।
বিভাগীয় বা মহানগরের প্রাথমিক শিক্ষা টাস্কফোর্স কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন রেঞ্জ ডিআইজি, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অদিদপ্তরের প্রতিনিধি, এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বিভাগভুক্ত সব জেলায় জেলা প্রশাসক এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
এ টাস্কফোর্স সরকারি, বেসরকারি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টার ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করবে।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে টাস্কফোর্স। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের যথাযথ বাস্তবায়নের তদারকি করবে এটি।
টাস্কফোর্স প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য নতুন নতুন ধারণা ও উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রয়োগ করবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত ও উদ্বুদ্ধ করবে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া রোধ, শিখন শেখানো কাজের উন্নয়ন, যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিরূপণ ও দূরীকরণে কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন:মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুব আলমের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার এ তথ্য জানানো হয়।
ড. ইহতেসাম উল হক এ বি এম রেজাউল করীমের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
আগের ডিজি অবসরে যাওয়ার এক মাসের বেশি সময় পর এ পদে নিয়োগ দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ৪ জানুয়ারি চাকরি শেষ করে অবসরে যান মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক রেজাউল করীম।
এর আগে গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর ২১ আগস্ট মাউশির মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভাগনে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
আরও পড়ুন:সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে সরকার।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
তার পোস্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নেত্রকোণার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে শুধু শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছে সরকার।
এ ছাড়া নওগাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়, মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে।
পাশাপাশি জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন থেকে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নারায়াণগঞ্জে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন থেকে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বলে ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়াও গোপালগঞ্জের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
আরও পড়ুন:রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট ও যশোর শিক্ষা বোর্ডে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বোর্ডে অধ্যাপক আ ন ম মোফাখখারুল ইসলাম, যশোর বোর্ডে অধ্যাপক খোন্দকার কামাল হাসান, সিলেট বোর্ডে অধ্যাপক শামছুল ইসলাম এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
এর আগে গত ১ জানুয়ারি এ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. নিজামুল করিম, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু তাহের ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. অলিউর রহমান।
দেশের ১১ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সাধারণ ৯টি। এগুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড।
বাকি দুটি বোর্ডের একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং অন্যটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। ১১ বোর্ডে কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার।
আরও পড়ুন:পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত করে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেছেন, ‘কাজটা যুদ্ধের মতো হয়েছে। ঠিক কবে নাগাদ সব বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া যাবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না।’
বুধবার ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন ১৫ জানুয়ারি আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেয়া যাবে। আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেবো না। পাঠ্যবই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলবো না।’
ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম সমস্যাটা হলো- আমরা বিদেশে বই ছাপাব না। তারপর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে। তাতে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যখন কাজ শুরু করা হয়েছিল, সেটা অনেক দেরিতে হয়েছে। অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে।
‘রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না। দলীয় রাজনীতিনিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুদের কাছে বই যাবে। সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সেজন্য উন্নত মানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘তাছাড়া এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছেন তাদের অনেককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যাদের বসানো হয়েছে, তারা অভিজ্ঞ। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সমিতির যে নেতা, তাদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়াটা করতে হয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। বই একটু দেরিতে পেলেও শিক্ষার্থীরা ভালো বই পাবে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে যাবে না।’
পাঠ্যবই নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘গল্পের একেবারে শেষে গিয়ে ছাড়া যেমন ষড়যন্ত্রকারী কে তা বোঝা যায় না, এখানেও তেমন। সেটা সরকারের কেউ হোক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোক, এনসিটিবির হোক, মজুতদার হোক, সিন্ডিকেট হোক। মানে, যে কেউ হতে পারে।
‘তবে এখনই আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আমরা একচেটিয়া ব্যবসা কমিয়ে আনবো। এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে।’
নতুন যে শিক্ষাক্রম আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকে সমালোচনা করছেন- কেন পেছনের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলাম আমরা। আমি মনে করি, যে শিক্ষাক্রম করা হয়েছিল নতুন করে, সেটাতে থাকলে শিক্ষার্থীদের আরও পশ্চাৎপদে নিয়ে যাওয়া হতো।’
তিনি বলেন, ‘দুই বছর এ শিক্ষাক্রম চালিয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরার উপায় ছিল না। সেটা সহজও হতো না। সেজন্য আমরা সাময়িকভাবে পেছনের শিক্ষাক্রমে গেছি। এটা আবার এগিয়ে নেয়ার কাজ করা হবে।
‘এবার কিছু পরিমার্জন হয়েছে। আগামীতে আরও পরিমার্জন করা হবে, যাতে শিক্ষাক্রমে ধারাবাহিকতার কোনো ঘাটতি না থাকে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম।
আরও পড়ুন:দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আজ বুধবার থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টারের অফলাইন ও অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিজিএমই) মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য দেশের ১৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারণী মহল সজাগ রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এবং সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, সতর্কতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকল্পে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখার নির্দেশনার আলোকে ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সব পর্যায়ে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত মেডিক্যাল কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি সব মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। আর ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি।
মন্তব্য