ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি আয়োজিত গবেষণা ও প্রকাশনা মেলায় রসায়ন বিভাগের স্টলের একটি পোস্টার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসাইন ওই পোস্টারে দেখিয়েছেন, মানব কঙ্কালের সঙ্গে আরবি বেশ কিছু হরফের মিল রয়েছে। এসব হরফ ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং আল্লাহ লিখতে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকেরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীদেহের হাড়কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখিয়ে বিভিন্ন ভাষার হরফের সঙ্গে মেলানো সম্ভব। এ কারণে এ ধরনের বিশ্লেষণ অযৌক্তিক। আর মেলার আয়োজকেরা বলছেন, ওই পোস্টারটির বিষয়বস্তু তাদের জানা ছিল না। সমালোচনার পরপরই সেটি সরিয়ে ফলা হয়।
অধ্যাপক আবুল হোসাইন বলছেন, বিষয়টি কোনো গবেষণালব্ধ জ্ঞান বা ফাইন্ডিংস নয়। মানব কঙ্কাল নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে রিভিউ আর্টিকেল লিখেছেন, পরে সেটি পিয়ার রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালিত ইউএসজিএস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পিয়ার রিভিউড প্রকাশনাকে কখনও কখনও একটি পাণ্ডিত্বপূর্ণ প্রকাশনা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। কোনো লেখকের পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজ, গবেষণা বা ধারণাগুলোর বৈজ্ঞানিক গুণমান নিশ্চিত করার জন্য একই বিষয়ের অন্য বিশেষজ্ঞরা এর খুঁটিনাটি দিক যাচাইবাছাই করে অভিমত দেন।
অধ্যাপক আবুল হোসাইনের আর্টিকেলটি ‘সিগনিফিক্যান্স অফ দ্যা স্ট্রাকচার অফ হিউম্যান স্কেলটন’ শিরোনামে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রকাশ করে আমেরিকান জার্নাল অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন। এটি বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি পিয়ার রিভিউ জার্নাল।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হয়ে মানব কঙ্কাল পর্যবেক্ষণের কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক আবুল হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ফিল্ড রসায়ন। ২০১৬ সালে ড্রাগ নিয়ে কাজ শুরু করি। এই ড্রাগ যেহেতু মানুষের বডিতে কাজ করবে তাই বডির বিভিন্ন সাইজ জানা দরকার ছিল। সেটার জন্য আমি অ্যানাটমি বই পড়েছি। সেটার কেমিক্যাল কম্পোজিশন জানতে বিভিন্ন বই পড়তে হয়েছে।
‘এ কাজ করতে গিয়ে দেখলাম মানুষের বডির ফান্ডামেন্টাল যে অরগান স্কেলিটন (কঙ্কাল) অনেকটা আরবি অক্ষরের সঙ্গে মিলে যায়। আমি মূল গবেষণার কাজ করতে গিয়ে অ্যানাটমি-সম্পর্কিতসহ বিভিন্ন বই পড়েছি। সব বই তো আর সব সময় পড়ব না, তাই বইগুলোর কোথায় কী পেয়েছি সেটা লিখে সবগুলোর একটা সামারি আমি প্রকাশ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এটা আমার রসায়নের ফান্ডামেন্টাল গবেষণা আর্টিকেল নয়। এটা একটা রিভিউ আর্টিকেল। আমার সাবজেক্টে কাজ করতে গিয়ে এটা একটা সাইড প্রোডাক্ট।
‘এটা আমি রিভিউ আর্টিকেল হিসেবে মেলায় পোস্টার আকারে শো করেছি। এরপর বিভাগ থেকে যখন বলা হয়েছে এটা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তখন সরিয়ে নিয়েছি।’
অধ্যাপক হোসাইন বলেন, ‘মেলায় আমার যে পোস্টার ছিল সেখানে তিনটা পার্ট ছিল। একটা ছিল সারফেস ক্যামিস্ট্রি, আরেকটা ন্যানো ক্যামিস্ট্রি আরেকটা ছিল ইন্টার ডিসিপ্লিন সায়েন্স অ্যান্ড রিলিজিয়ন নিয়ে। যেটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে সেটা ছিল সবশেষ ক্যাটাগরির মধ্যে।
‘এটা কারও পছন্দ হতে পারে বা না হতে পারে। কারও বিশ্বাসের ওপর আঘাত করার কোনো ইন্টেনশন আমার ছিল না।’
অধ্যাপক আবুল হোসাইন রিভিউ আর্টিকেলটি প্রকাশের জন্য ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি জমা দেন। এরপর পর্যালোচনা শেষে ১৬ জানুয়ারি সেটি প্রকাশ করা হয়।
অধ্যাপক হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আর্টিকেল পাবলিশের পর অনেক মুসলমান এবং আমার শ্বশুর বলেন আরও অনুসন্ধান করতে। এরপর আমি কোরআন-হাদিস নিয়ে বিভিন্ন স্টাডি করি। ইসলাম সম্পর্কে জানাশোনা আছে এ রকম বেশ কিছু গবেষকের সাহায্যও নিই।
‘এসব করে দেখেছি, কোরআন শরিফের সুরা তীনের একটা আয়াতের সঙ্গে এটার কিছুটা মিল আছে। এরপর আমি ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন লেখাপড়া করে ধর্মের সঙ্গে এটার কোনো লিংক আছে কি না, সেটি দেখার চেষ্টা করেছি। আর এসব নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার একটি জার্নালেও আর্টিকেল সাবমিট করি।’
ইন্দোনেশিয়ার সেই জার্নালটির নাম ‘আর রানিরি: ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইসলামিক স্টাডিজ।’ এই জার্নালে অধ্যাপক হোসাইনের নিবন্ধটি ২০১৮ সালের জুন সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
অধ্যাপক আবুল হোসাইন বলেন, ‘এটাও রিভিউ আর্টিকেল ছিল। কারণ আমি এখানে তো কোনো ল্যাব এক্সপেরিমেন্ট করিনি। কোরআন আর হাদিসের বিভিন্ন অংশকে আমি ব্যাখ্যা করেছি। তবে হালকা কিছু থিউরিটিক্যাল গবেষণা ছিল।’
আর রানিরি জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেলে অধ্যাপক হোসাইন দাবি করেছেন, মানুষের কঙ্কালের প্রধান অংশ মাথার খুলির সঙ্গে কোরআনে বর্ণিত তিন ফল অর্থাৎ জলপাইয়ের গঠনের মিল আছে। আর এটি আরবি হরফ ‘মিম’-এর মতো।
তিনি বলছেন, মানুষের বুকের পাঁজরের সঙ্গে সিনাই পর্বতের গঠনের মিল আছে। এটি আরবি হরফ ‘হা’-এর মতো। কোমরের সঙ্গে আছে ডুমুর ফলের মিল, যা আরবি হরফ ‘মিম’-এর মতো।
মানুষের হাঁটু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত মক্কা নগরীর মিল আছে। এটি আরবি হরফ ‘দাল’-এর মতো। আর এসব হরফের সমন্বয়ে মুহাম্মদ (সা.) নামটি লেখা হয়।
অধ্যাপক আবুল হোসাইন মনে করছেন, মানুষের হাতের পাঁচ আঙুলের গঠনটি আলিফ, লাম, লাম এবং হা এর সদৃশ। এসব হরফের সমন্বয়ে আল্লাহ লেখা হয়।
অধ্যাপক হোসাইন বলেন, ‘আমি রসায়নে কাজ করি বলে কি অন্য কোনো ফিল্ডে কাজ করতে পারব না? রসায়নের অনেক অধ্যাপক পদার্থবিজ্ঞান বা ম্যাথ ফিল্ডেও তো কাজ করেন। আবার ইন্টার ডিসিপ্লিন ফিল্ডেও কাজ করেন।’
কঙ্কালকে ধর্মের সঙ্গে মেলানোয় বিস্ময়
অধ্যাপক আবুল হোসাইনের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রাণিবিদ্যার বিশেষজ্ঞরাও এ ধরনের পর্যবেক্ষণে বিস্ময় প্রকাশ করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. নিয়ামুল নাসের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ একজন অন্ধের মতো কথা বললে তো হয় না। আমার কাছে মনে হয় এগুলো একটা সিস্টেম, শুধু মানব কঙ্কাল কেন, যেকোনো প্রাণীর কঙ্কালের ডিজাইন কাছাকাছি। এই ডিজাইনের মধ্যে ধর্মকে নিয়ে এলে কী ঠিক হবে? এসব কথাবার্তা আমাদের মূর্খতার পরিচয় হবে।’
একজন প্রাণিবিজ্ঞানীর অবস্থান থেকে অধ্যাপক নিয়ামুল বলেন, ‘আমরা ওইভাবে (ধর্মের আলোকে কঙ্কালকে ব্যাখ্যা) দেখি না। আমরা একটি প্রাণীর দিকে দেখি। প্রাণীটাকে রক্ষা করার জন্য যা করা দরকার সেটা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করি, সেটাই আমাদের গবেষণা।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে, সেখানে কোন কঙ্কাল কার মতো দেখতে সেগুলো নিয়ে বলার সময় আমাদের থাকে না। কঙ্কালের মধ্যে আমরা আমাদের ধর্ম-সংস্কৃতিকে নিয়ে আসতে পারি না। কঙ্কাল নিজস্ব সিস্টেমে তৈরি। মানব কঙ্কালের মতো আরও অনেক প্রাণীর কঙ্কাল আছে। সেখানে এটা দেখা গেছে, অমুক হরফ দেখা গেছে- এটা তো বলা যায় না।
‘ওইভাবে খুঁজতে গেলে তো অনেক ভাষার অক্ষরই দেখতে পাব। আমাদের ভাষায় হোক, অন্য ভাষায় হোক, কোনো না কোনো ভাষার সঙ্গে তো মিলবে। আমরা তো আসলে এগিয়ে যাচ্ছি, পেছন দিকে ফেরত যাওয়া কী ঠিক হবে?’
তিনি বলেন, ‘ধর্ম তো সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সেখানে কেন আমি এটাকে এই ছোট জিনিসের মধ্যে নিয়ে আসব?’
মেলা সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ২১ ও ২২ অক্টোবর আয়োজিত হয় গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা।
সেখানে রসায়ন বিভাগের স্টলের জন্য পোস্টার নির্ধারণ কোন প্রক্রিয়ায় হয়েছে জানতে চাইলে বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহিদা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা কমিটি গঠন করে তাড়াহুড়ো করে দেয়া হয়েছে। আর পোস্টারে এমন কিছু ছিল না যে এত তোলপাড় করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে পাবলিশড প্রকাশনাগুলো দেয়া হয়েছে। পোস্টারের জন্য একটা কমিটি করে দেয়া হয়েছিল । তারাই এটি করেছে।’
অধ্যাপক হোসাইনের আলোচিত পোস্টারের ব্যাপারে বিভাগ জানত কি না, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘তিনি (অধ্যাপক হোসাইন) সেভাবে আমাদের শো করে… এমনি একটা কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তবে কে কোনটা দিচ্ছে সেটা অত... (যাচাই) করা হয়নি। তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছিল তো তাই।’
গবেষণা মেলায় রসায়ন বিভাগের স্টল নিয়ে বিভাগটির অ্যাকাডেমিক কমিটি বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করে। এর একটি হলো কো-অর্ডিনেট কমিটি।
এই কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবু বিন হাসান সুশান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেলায় গবেষণাকর্ম প্রদর্শনের জন্য অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় সব শিক্ষকের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়। ২৫ জন শিক্ষক তাদের গবেষণার পোস্টার দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে কর্তৃপক্ষ জানায় ২৫টা দেওয়া যাবে না। পরে আমরা ১২টা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
‘এরপর প্রশ্ন ওঠে এই ১২টা কারা দেবে। তখন বলা হয়েছে শতবর্ষ উপলক্ষে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া গ্র্যান্ট যারা পেয়েছেন তাদের দিতে হবে। তারা দেয়ার পর কোনো পোস্টারের স্ট্যান্ড খালি থাকলে কেউ সেকেন্ড পোস্টার বা বাকিরা দিতে পারবেন।’
ড. সুশান বলেন, ‘সেই গ্র্যান্ট আবুল হোসাইনও পেয়েছেন। বলা হয়েছে, রিসার্চ অ্যাচিভমেন্ট হিসেবে কে কোনটা দেবে সেটা তার নিজের রেসপন্সবিলিটি। অধ্যাপক আবুল হোসাইনও দিয়েছেন। পরে তিনি যখন একাধিক পোস্টার দিতে চেয়েছেন তাকে বলা হয়েছে কোনো স্ট্যান্ড ফাঁকা থাকলে দিতে পারেন।
‘এরপরই মূলত মেলায় একটা স্ট্যান্ড ফাঁকা দেখে তিনি ওই পোস্টারটি ঝুলিয়েছেন। তবে সমালোচনা শুরু হলে ওনারটা সরিয়ে আরেক অধ্যাপকের পোস্টার দেয়া হয়।’
অধ্যাপক সুশান বলেন, ‘মেলায় বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বই প্ল্যাকার্ড ছাপানো হয়েছে। এগুলোর ভেতর বিভাগের ইতিহাস, অর্জন এবং ভবিষ্যতের তথ্য গেছে। এসব কনটেন্ট বাছাইয়ে একটা কমিটি ছিল। সেগুলো চেক করা হয়েছে। তবে আসলে বিশ্বের কোথাও পোস্টার আগে চেক করে ডিসপ্লে করা হয় না। এটা প্রেজেন্টারের নিজস্ব রেসপন্সবিলিটি।’
অধ্যাপক হোসাইন এমন কোনো কাজ করছেন বলেও কারও জানা ছিল না দাবি করে অধ্যাপক সুশান বলেন, ‘আমরা জানি, উনি ক্রোমিয়াম না কী নিয়ে গবেষণা করছেন। সেটা সায়েন্টিফিক। সেটা ডিসপ্লে হয়েছে। কিন্তু এটার ব্যাপারটা সমালোচনা হওয়ার পর পোস্টার দেখে জানতে পেরেছি।
‘ব্যক্তিগতভাবে ওনার এই পোস্টারটার বিষয়বস্তু আমার লজিক্যাল মনে হয়নি। আমাদের বিভাগে প্রচুর রিসার্চ ফিল্ড আছে, কিন্তু সব বাদ দিয়ে এ রকম একটা বিষয়ে তিনি যে কাজ করেন, সেটা আমরা কেউ জানতাম না। উনিও কখনও জানাননি। আর এটা কোনো রিসার্চ নয়, ওনার থিংকিং হতে পারে। সেটা মেলায় দেয়াটাই প্রাসঙ্গিক ছিল না।’
অধ্যাপক আবুল হোসাইনের পোস্টার নিয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেলায় আবুল হোসাইনের এটা ছাড়াও সায়েন্টিফিক একটা গবেষণাকর্ম ছিল। মেলা শুরুর পরে দুপুরে একটায় স্ট্যান্ড খালি পেয়ে তিনি তার ওই পোস্টারটি লাগিয়ে দেন।
‘আমি শুনেছি এটার ব্যাপারে বিভাগ অবহিত ছিল না। সমালোচনা শুরু হওয়ায় বিভাগের দৃষ্টিতে আসে এবং তাকে ডেকে এটি সরিয়ে ফেলতে অনুরোধ করা হয়। পরে তিনি সেটি সরিয়ে ফেলেন।’
আবদুস সামাদ বলেন, ‘তার এই পোস্টারটা মেলায় আসারই কথা না। এটা তো গৃহীত হয়নি। গবেষণা মেলার সঙ্গে এটা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভাগকে বলেছি যেন ওনাকে সতর্ক করা হয়। আর এটা নিয়ে আমরা উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। স্যারও বলেছেন, ওনাকে সতর্ক করা হোক। অনুষদ থেকেও ওনাকে সতর্ক করা হবে, যাতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।’
আরও পড়ুন:নওগাঁ শহরে রমজানে দুই টাকার বিনিময়ে ইফতারের প্যাকেট বিক্রি করছে ‘ফুড প্যালেস’ নামের রেস্তোরাঁ।
শহরের কাজীর মোড় এলাকায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে রেস্তোরাঁটির পক্ষ থেকে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করতে দেখা যায়।
প্রতিদিন নওগাঁ শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করা হয়। প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন কম আয়ের মানুষের মধ্যে এ ইফতার বিতরণ করা হয়।
কম আয়ের মানুষের জন্য দুই টাকায় ইফতারসামগ্রীর একটি প্যাকেটে থাকে খিচুড়ি, একটি ডিম, বেগুনি, পিঁয়াজু, ছোলা, শসা ও খেজুর। প্যাকেটগুলো দুই টাকায় বিক্রি হলেও এগুলোতে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ টাকার ইফতারসামগ্রী দেয়া হয়।
রিকশাচালক আতিক বলেন, ‘নওগাঁ শহরে আমি রিকশা চালাই। হঠাৎ দেখি এখানে ইফতার দেয়া হচ্ছে মাত্র দুই টাকার বিনিময়ে। তাই দুই টাকা দিয়ে ইফতারের প্যাকেটটি নিলাম। এত কম টাকায় পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’
ভ্যানচালক জাফর বলেন, ‘আমি তো প্রথমে অবাক হয়েছি। মাত্র দুই টাকায় ইফতার এখানে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই ভালো করে শুনে তারপর দুই টাকার বিনিময়ে ইফতার নিলাম।
‘আমাদের মতো মানুষের প্রতিদিন বেশি টাকায় ইফতার কিনে খাওয়া সম্ভব না। এ ধরনের উদ্যোগ নিলে আমরা সাধারণ মানুষরা কিনে খেতে পারব।’
৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আলম হোসেন বলেন, ‘ভ্যান গাড়ি দেখে পাশে দাঁড়িয়ে শুনি মাত্র দুই টাকার বিনিময়ে ইফতার দেয়া হবে। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে আমিও নিলাম।
‘খুব ভালো লাগছে। এত অল্প টাকায় এত সুন্দর আয়োজনের জন্য।’
ফুড প্যালেস রেস্টুরেন্টের মালিক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমার সাধ্যের মধ্যে কম আয়ের মানুষের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা করি। তার ধারাবাহিকতায় নামমাত্র দুই টাকা নিয়ে ইফতার বিতরণ করছি শহরের বিভিন্ন স্থানে পুরো মাস ধরে।’
দুই টাকা কেন নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি এমনিতে ইফতার দিই, তাহলে অনেকে লজ্জা পেতে পারে। তাই দুই টাকা দিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই।
‘এতে করে সাধারণ মানুষরা নিজের টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছে ভেবে আমাদের কার্যক্রমকে সহজে গ্রহণ করবে আর নিতে আগ্রহী হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে দেয়া ইফতার মাহফিলে তিনি এই আহ্বান জানান।
রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এই ইফতার মাহফিলে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফাভ, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার, অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন অংশ নেন।
এছাড়াও ইফতার অনুষ্ঠানে চীন, ভারত, পাকিস্তান, নরওয়ে, সুইডেন, নেপাল, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইফতারে কূটনীতিকদের স্বাগত জানান এবং তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এ সময় ইসরাইলি বাহিনী কর্তৃক ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। ফিলিস্তিনের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ‘টু স্টেট পলিসি’ বাস্তবায়নেরও দাবি জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট পড়েছে। দেশে একটা ফ্যাসিস্ট রেজিমের শাসন চলছে। তারা ৭ জানুয়ারি একটি নির্বাচন করেছে যেটা কোনো নির্বাচন হয়নি।’
নির্বাচন সামনে রেখে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ হাজার হাজার নেতা কর্মী গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা দায়েরের কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, দেশের জনগণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এই ফ্যাসিস্ট রেজিম সরকারের পদত্য্যাগ এবং নতুন নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করছে। বর্তমান সংকট সমাধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, মীর নাসির হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন ফজলে এলাহী আকবর, আবদুল কাইয়ুম, ফরহাদ হালিম ডোনার, সুজা উদ্দিন, ইসমাইল জবিউল্লাহ, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জহির উদ্দিন স্বপন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কায়সার কামাল, আসাদুজ্জামান আসাদ, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, মীর হেলাল, মওদুদ হোসেন আলমগীর, শাহ নেসারুল হক, ইশরাক হোসেন ও আতিকুর রহমান রুমন।
এছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক শহীদুজ্জামান, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক ব্যাংকার বখতিয়ার নাসের বখতিয়ার, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব তাজুল ইসলাম, সাবেক এমপি গোলাম মওলা রনি ইফতারে অংশ নেন। ইফতার ও মাগরিবের নামাজ শেষে কূটনীতিকরা নৈশভোজেও অংশ নেন।
আরও পড়ুন:ফরিদপুরে থ্রি জেড ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার পক্ষ থেকে একজন চিকিৎসকের উদ্যোগে অপেক্ষাকৃত কম দামে গরুর মাংস, তরমুজ ও আনারস বিক্রি করা হচ্ছে।
ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে শুক্রবার সকালে এ চিকিৎসকের উদ্যোগে তরমুজ ও আনারস বিক্রি শুরু হয়।
এর আগে তার উদ্যোগে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় গরুর মাংস।
ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজনের বড় তরমুজ বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। আর ছোট থেকে বড় আকারের তরমুজ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। অন্যদিকে প্রতিটি আনারস বিক্রি হয় ৩০ টাকায়।
জেলায় রমজানে মাংস ও ফল কম দামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন ডা. নাহিদ-উল-হক। পেশায় তিনি হরমোন ও অ্যান্ড্রক্রোলজিস্ট চিকিৎসক।
এ বিষয়ে এক ক্রেতা বলেন, ‘এবারের রোজার এই ১১ দিনে এসে এই প্রথম পরিবারের জন্য একটি তরমুজ কিনছি। কম আয়ের মানুষ এতে ইফতারে পরিবারের মানুষের মুখে একটু তরমুজ তুলে দেয়ার সুযোগ পেল।’
এর আগে এ চিকিৎসক রমজান উপলক্ষে ৫০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করেন। এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি এখনও চলছে।
শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লার ঈদগাহে শুক্রবার পাঁচটি দেশি গরু জবাই করে সেগুলোর মাংস ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন। এর পাশাপাশি শুক্রবার থেকে তিনি কম দামে তরমুজ ও আনারস বিক্রি শুরু করেন।
জানতে চাইলে ডা. নাহিদ-উল- হক বলেন, ‘ফরিদপুরের সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার আগ্রহ থেকেই থ্রি জেড ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। সাধারণ মানুষ কম দামে এভাবে গরু কিনতে পেরে অনেক খুশি।
‘তাদের দাবি, এ উদ্যোগ যেন আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। প্রয়োজনে সামর্থবানরা এ কাজে যেন এগিয়ে আসে।’
আরও পড়ুন:পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ পালনকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলিম কাবা প্রান্তরে ছুটে আসেন। তবে আধুনিক যুগে ইবাদত ও ওমরাহ পালনের পাশাপাশি ছবি তোলারও হিড়িক পড়ে যায় সেখানে।
উদ্ভূত বাস্তবতায় তাওয়াফ করার সময় ছবি তোলার মতো কাজ না করার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরবের পবিত্র কাবা শরিফ ও মসজিদে নববি তত্ত্বাবধানের জেনারেল অথরিটি।
ওমরাহ পালনকারীদের তাওয়াফ (পবিত্র কাবার চারপাশে প্রদক্ষিণ) করার সময় ছবি না তুলে ইবাদতে পূর্ণ মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সূত্র: সৌদি গেজেট।
তাওয়াফ করার সময় ওমরাহ পালনকারীদের শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘তীর্থযাত্রীদের চিৎকার-শোরগোল না করে নীরবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত। পবিত্র কাবার পবিত্রতা ও মর্যাদাকে সম্মান করতে হবে।
‘তাওয়াফ করার সময় হারাম শরিফের শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। তাদের পক্ষ থেকে কোনো অনুপযুক্ত আচরণ করা উচিত নয়, যেমন- ভিড় করা, ধাক্কাধাক্কি বা ফটোগ্রাফিতে ব্যস্ত থাকা।’
সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওমরাহ পালনকারীরা ভিড় না থাকলে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করতে পারেন এবং তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজও আদায় করতে পারেন।
কর্তৃপক্ষ কাবায় যাওয়া মুসলিমদের এমন কাজগুলো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছে যেগুলো অন্যদের বিপদে ফেলতে পারে।
এ ছাড়া মাতাফের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও ওমরাহ সঠিক পদ্ধতিতে পালন করতে আগ্রহী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:টাকা ভাঙতি করার কথা বলে সিরাজগঞ্জের এক কালী মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা হলে মাহমুদুল ইসলাম নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার শিয়ালকোলে অবস্থিত শ্রী শ্রী কালীমাতা মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।
১৯ বছর বয়সী মাহমুদুল ইসলাম সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই যুবক মন্দিরের পাশে অবস্থিত এক দোকানে এক হাজার টাকার নোট ভাঙানোর কথা বলে দোকানের ভেতর ঢুকে পড়েন। পরে মন্দিরের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেই ইট ও দা দিয়ে কালী প্রতিমার মুখমণ্ডল ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন।
তারা জানান, প্রতিমা ভাঙার সময় তিনি বলতে থাকেন, ‘এসব মূর্তি দেশের জন্য ভালো না।’ পরে অন্যান্য প্রতিমা ভাঙার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মন্দিরের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ সাহা বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেছেন।
সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. হাসিবুল্লাহ হাসিব বলেন, ‘শিয়ালকোলে কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙার ঘটনায় ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই যুবককে আটক করি। এ সময় তার কাছ থেকে প্রতিমা ভাঙার কাজে ব্যবহৃত একটি দা ও ভাঙ্গা ইট জব্দ করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
জামালপুরে দেড় শতাধিক এতিম শিশুকে নিয়ে দোয়া ও ইফতার মাহফিল করেছে জামালপুর জেলা প্রেসক্লাব।
বুধবার জামালপুর প্রেসক্লাবের ছাদে এই দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ইফতারের আগে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভায় জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ।
এ ছাড়াও পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন, জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ আকাশসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুভ্র মেহেদী।
এ সময় বক্তারা বলেন, এতিমদের নিয়ে এই ধরনের ইফতার আয়োজন সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। পবিত্র রমজানে সমাজের বিত্তবানদের সামর্থ্য অনুযায়ী এতিম, দরিদ্র ও অসহায়দের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান বক্তারা।
দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ শহরের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার দেড় শতাধিক এতিম শিশু ও আলেমগণ অংশগ্রহণ করেন।
দোয়া ও ইফতার মাহফিলে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন সদরঘাট জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ছানাউল্লাহ।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিন, ইনস্টিউটের পরিচালক এবং হলের প্রাধ্যক্ষকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। সেই চিঠি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
চিঠিটি দেয়া ১৫ মার্চ, শুক্রবার। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে বুধবার থেকে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি আইন বিভাগের কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী পূর্ব অনুমতি না নিয়ে ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শিরোনামে একটি সেমিনার আয়োজনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ার ভবনে জমায়েত করে।
“সেখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে এবং আইন অনুষদের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেছে।”
চিঠিতে বলা হয়, ‘পরবর্তীতে কিছু রাজনৈতিক সংগঠন ও রাজনৈতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিবর্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি তদন্ত করে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করছে।’
চিঠিতে সবশেষে বলা হয়েছে, এমতাবস্থায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি না দেয়ার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’
চিঠির শেষাংশে উল্লেখ করা ‘এ ধরনের কোন কর্মকাণ্ড’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে সেটি স্পষ্ট না হওয়ার কারণে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।
অনেকে বলছেন, এটির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘রমজান’ শীর্ষক কোনো প্রোগ্রাম আয়োজনের অনুমতি না দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে।
আবার অনেকে বলছেন, অনুমতি না দেয়া মানেই তো অনুষ্ঠান আয়োজনে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া। তাই এটা বলা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রমজানকেন্দ্রিক কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আর এই শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করলে বৃহস্পতিবার সেসব প্রতিবেদনকে অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রমজানের অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রমজানের আলোচনা সম্পর্কিত অনুষ্ঠান আয়োজনে কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রক্টর অফিস থেকে সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। রমজানের অনুষ্ঠান আয়োজনে ‘নিষেধাজ্ঞা’ শব্দটি এই বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও উল্লেখ নেই।
প্রকৃতপক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কখনও রমজানে শান্তিপূর্ণ ও ইতিবাচক অনুষ্ঠান আয়োজনে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বলাবাহুল্য, প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আসছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কতিপয় রাজনৈতিক সংগঠনের অনুসারীরা পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দু-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত রীতিনীতি লঙ্ঘিত ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিধিবদ্ধ রীতিনীতি ও নির্ধারিত স্থান রয়েছে, যা আমাদের সবারই মেনে চলা উচিত।
বিজ্ঞপ্তি এবং ওই চিঠিতে কোন ধরনের প্রোগ্রাম আয়োজনে অনুমতি না দেয়ার কথা বলা হয়েছে সেটি স্পষ্ট করেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আর অনুমতি না দিতে বলার বিষয়টি এক নয়। নিষেধাজ্ঞা মানে হচ্ছে সবকিছু নিষেধ। আর আমাদের চিঠিতে একটি পার্টিকুলার বিষয়েকে উল্লেখ করে বলা হয়েছে শুধু এ ধরনের অনুষ্ঠান...।
‘এ ধরনের কোন কর্মকাণ্ড’ বলতে কোন ধরনের প্রোগ্রাম বুঝানো হয়েছে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড বলতে প্রোডাক্টিভ রমাদান নামটি ব্যানারে আনা এবং যে জায়গায় প্রোগ্রাম করা হবে সে জায়গার অনুমতি না নেয়াকে বুঝানো হয়েছে। যাতে আমরা জানতে পারি কে কোন জায়গায় কী প্রোগ্রাম করছে। এছাড়া আর কোনো প্রোগ্রামকে বুঝানো হয়নি। আর বর্তমানেও তো ক্যাম্পাসে প্রতিদিন রমজানের কোনো না কোনো প্রোগ্রাম হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য