ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি আয়োজিত গবেষণা ও প্রকাশনা মেলায় রসায়ন বিভাগের স্টলের একটি পোস্টার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসাইন ওই পোস্টারে দেখিয়েছেন, মানব কঙ্কালের সঙ্গে আরবি বেশ কিছু হরফের মিল রয়েছে। এসব হরফ ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং আল্লাহ লিখতে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকেরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীদেহের হাড়কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখিয়ে বিভিন্ন ভাষার হরফের সঙ্গে মেলানো সম্ভব। এ কারণে এ ধরনের বিশ্লেষণ অযৌক্তিক। আর মেলার আয়োজকেরা বলছেন, ওই পোস্টারটির বিষয়বস্তু তাদের জানা ছিল না। সমালোচনার পরপরই সেটি সরিয়ে ফলা হয়।
অধ্যাপক আবুল হোসাইন বলছেন, বিষয়টি কোনো গবেষণালব্ধ জ্ঞান বা ফাইন্ডিংস নয়। মানব কঙ্কাল নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে রিভিউ আর্টিকেল লিখেছেন, পরে সেটি পিয়ার রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালিত ইউএসজিএস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পিয়ার রিভিউড প্রকাশনাকে কখনও কখনও একটি পাণ্ডিত্বপূর্ণ প্রকাশনা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। কোনো লেখকের পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজ, গবেষণা বা ধারণাগুলোর বৈজ্ঞানিক গুণমান নিশ্চিত করার জন্য একই বিষয়ের অন্য বিশেষজ্ঞরা এর খুঁটিনাটি দিক যাচাইবাছাই করে অভিমত দেন।
অধ্যাপক আবুল হোসাইনের আর্টিকেলটি ‘সিগনিফিক্যান্স অফ দ্যা স্ট্রাকচার অফ হিউম্যান স্কেলটন’ শিরোনামে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রকাশ করে আমেরিকান জার্নাল অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন। এটি বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি পিয়ার রিভিউ জার্নাল।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হয়ে মানব কঙ্কাল পর্যবেক্ষণের কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক আবুল হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ফিল্ড রসায়ন। ২০১৬ সালে ড্রাগ নিয়ে কাজ শুরু করি। এই ড্রাগ যেহেতু মানুষের বডিতে কাজ করবে তাই বডির বিভিন্ন সাইজ জানা দরকার ছিল। সেটার জন্য আমি অ্যানাটমি বই পড়েছি। সেটার কেমিক্যাল কম্পোজিশন জানতে বিভিন্ন বই পড়তে হয়েছে।
‘এ কাজ করতে গিয়ে দেখলাম মানুষের বডির ফান্ডামেন্টাল যে অরগান স্কেলিটন (কঙ্কাল) অনেকটা আরবি অক্ষরের সঙ্গে মিলে যায়। আমি মূল গবেষণার কাজ করতে গিয়ে অ্যানাটমি-সম্পর্কিতসহ বিভিন্ন বই পড়েছি। সব বই তো আর সব সময় পড়ব না, তাই বইগুলোর কোথায় কী পেয়েছি সেটা লিখে সবগুলোর একটা সামারি আমি প্রকাশ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এটা আমার রসায়নের ফান্ডামেন্টাল গবেষণা আর্টিকেল নয়। এটা একটা রিভিউ আর্টিকেল। আমার সাবজেক্টে কাজ করতে গিয়ে এটা একটা সাইড প্রোডাক্ট।
‘এটা আমি রিভিউ আর্টিকেল হিসেবে মেলায় পোস্টার আকারে শো করেছি। এরপর বিভাগ থেকে যখন বলা হয়েছে এটা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তখন সরিয়ে নিয়েছি।’
অধ্যাপক হোসাইন বলেন, ‘মেলায় আমার যে পোস্টার ছিল সেখানে তিনটা পার্ট ছিল। একটা ছিল সারফেস ক্যামিস্ট্রি, আরেকটা ন্যানো ক্যামিস্ট্রি আরেকটা ছিল ইন্টার ডিসিপ্লিন সায়েন্স অ্যান্ড রিলিজিয়ন নিয়ে। যেটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে সেটা ছিল সবশেষ ক্যাটাগরির মধ্যে।
‘এটা কারও পছন্দ হতে পারে বা না হতে পারে। কারও বিশ্বাসের ওপর আঘাত করার কোনো ইন্টেনশন আমার ছিল না।’
অধ্যাপক আবুল হোসাইন রিভিউ আর্টিকেলটি প্রকাশের জন্য ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি জমা দেন। এরপর পর্যালোচনা শেষে ১৬ জানুয়ারি সেটি প্রকাশ করা হয়।
অধ্যাপক হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আর্টিকেল পাবলিশের পর অনেক মুসলমান এবং আমার শ্বশুর বলেন আরও অনুসন্ধান করতে। এরপর আমি কোরআন-হাদিস নিয়ে বিভিন্ন স্টাডি করি। ইসলাম সম্পর্কে জানাশোনা আছে এ রকম বেশ কিছু গবেষকের সাহায্যও নিই।
‘এসব করে দেখেছি, কোরআন শরিফের সুরা তীনের একটা আয়াতের সঙ্গে এটার কিছুটা মিল আছে। এরপর আমি ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন লেখাপড়া করে ধর্মের সঙ্গে এটার কোনো লিংক আছে কি না, সেটি দেখার চেষ্টা করেছি। আর এসব নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার একটি জার্নালেও আর্টিকেল সাবমিট করি।’
ইন্দোনেশিয়ার সেই জার্নালটির নাম ‘আর রানিরি: ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইসলামিক স্টাডিজ।’ এই জার্নালে অধ্যাপক হোসাইনের নিবন্ধটি ২০১৮ সালের জুন সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
অধ্যাপক আবুল হোসাইন বলেন, ‘এটাও রিভিউ আর্টিকেল ছিল। কারণ আমি এখানে তো কোনো ল্যাব এক্সপেরিমেন্ট করিনি। কোরআন আর হাদিসের বিভিন্ন অংশকে আমি ব্যাখ্যা করেছি। তবে হালকা কিছু থিউরিটিক্যাল গবেষণা ছিল।’
আর রানিরি জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেলে অধ্যাপক হোসাইন দাবি করেছেন, মানুষের কঙ্কালের প্রধান অংশ মাথার খুলির সঙ্গে কোরআনে বর্ণিত তিন ফল অর্থাৎ জলপাইয়ের গঠনের মিল আছে। আর এটি আরবি হরফ ‘মিম’-এর মতো।
তিনি বলছেন, মানুষের বুকের পাঁজরের সঙ্গে সিনাই পর্বতের গঠনের মিল আছে। এটি আরবি হরফ ‘হা’-এর মতো। কোমরের সঙ্গে আছে ডুমুর ফলের মিল, যা আরবি হরফ ‘মিম’-এর মতো।
মানুষের হাঁটু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত মক্কা নগরীর মিল আছে। এটি আরবি হরফ ‘দাল’-এর মতো। আর এসব হরফের সমন্বয়ে মুহাম্মদ (সা.) নামটি লেখা হয়।
অধ্যাপক আবুল হোসাইন মনে করছেন, মানুষের হাতের পাঁচ আঙুলের গঠনটি আলিফ, লাম, লাম এবং হা এর সদৃশ। এসব হরফের সমন্বয়ে আল্লাহ লেখা হয়।
অধ্যাপক হোসাইন বলেন, ‘আমি রসায়নে কাজ করি বলে কি অন্য কোনো ফিল্ডে কাজ করতে পারব না? রসায়নের অনেক অধ্যাপক পদার্থবিজ্ঞান বা ম্যাথ ফিল্ডেও তো কাজ করেন। আবার ইন্টার ডিসিপ্লিন ফিল্ডেও কাজ করেন।’
কঙ্কালকে ধর্মের সঙ্গে মেলানোয় বিস্ময়
অধ্যাপক আবুল হোসাইনের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রাণিবিদ্যার বিশেষজ্ঞরাও এ ধরনের পর্যবেক্ষণে বিস্ময় প্রকাশ করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. নিয়ামুল নাসের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ একজন অন্ধের মতো কথা বললে তো হয় না। আমার কাছে মনে হয় এগুলো একটা সিস্টেম, শুধু মানব কঙ্কাল কেন, যেকোনো প্রাণীর কঙ্কালের ডিজাইন কাছাকাছি। এই ডিজাইনের মধ্যে ধর্মকে নিয়ে এলে কী ঠিক হবে? এসব কথাবার্তা আমাদের মূর্খতার পরিচয় হবে।’
একজন প্রাণিবিজ্ঞানীর অবস্থান থেকে অধ্যাপক নিয়ামুল বলেন, ‘আমরা ওইভাবে (ধর্মের আলোকে কঙ্কালকে ব্যাখ্যা) দেখি না। আমরা একটি প্রাণীর দিকে দেখি। প্রাণীটাকে রক্ষা করার জন্য যা করা দরকার সেটা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করি, সেটাই আমাদের গবেষণা।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে, সেখানে কোন কঙ্কাল কার মতো দেখতে সেগুলো নিয়ে বলার সময় আমাদের থাকে না। কঙ্কালের মধ্যে আমরা আমাদের ধর্ম-সংস্কৃতিকে নিয়ে আসতে পারি না। কঙ্কাল নিজস্ব সিস্টেমে তৈরি। মানব কঙ্কালের মতো আরও অনেক প্রাণীর কঙ্কাল আছে। সেখানে এটা দেখা গেছে, অমুক হরফ দেখা গেছে- এটা তো বলা যায় না।
‘ওইভাবে খুঁজতে গেলে তো অনেক ভাষার অক্ষরই দেখতে পাব। আমাদের ভাষায় হোক, অন্য ভাষায় হোক, কোনো না কোনো ভাষার সঙ্গে তো মিলবে। আমরা তো আসলে এগিয়ে যাচ্ছি, পেছন দিকে ফেরত যাওয়া কী ঠিক হবে?’
তিনি বলেন, ‘ধর্ম তো সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সেখানে কেন আমি এটাকে এই ছোট জিনিসের মধ্যে নিয়ে আসব?’
মেলা সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ২১ ও ২২ অক্টোবর আয়োজিত হয় গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা।
সেখানে রসায়ন বিভাগের স্টলের জন্য পোস্টার নির্ধারণ কোন প্রক্রিয়ায় হয়েছে জানতে চাইলে বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহিদা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা কমিটি গঠন করে তাড়াহুড়ো করে দেয়া হয়েছে। আর পোস্টারে এমন কিছু ছিল না যে এত তোলপাড় করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে পাবলিশড প্রকাশনাগুলো দেয়া হয়েছে। পোস্টারের জন্য একটা কমিটি করে দেয়া হয়েছিল । তারাই এটি করেছে।’
অধ্যাপক হোসাইনের আলোচিত পোস্টারের ব্যাপারে বিভাগ জানত কি না, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘তিনি (অধ্যাপক হোসাইন) সেভাবে আমাদের শো করে… এমনি একটা কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তবে কে কোনটা দিচ্ছে সেটা অত... (যাচাই) করা হয়নি। তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছিল তো তাই।’
গবেষণা মেলায় রসায়ন বিভাগের স্টল নিয়ে বিভাগটির অ্যাকাডেমিক কমিটি বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করে। এর একটি হলো কো-অর্ডিনেট কমিটি।
এই কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবু বিন হাসান সুশান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেলায় গবেষণাকর্ম প্রদর্শনের জন্য অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় সব শিক্ষকের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়। ২৫ জন শিক্ষক তাদের গবেষণার পোস্টার দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে কর্তৃপক্ষ জানায় ২৫টা দেওয়া যাবে না। পরে আমরা ১২টা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
‘এরপর প্রশ্ন ওঠে এই ১২টা কারা দেবে। তখন বলা হয়েছে শতবর্ষ উপলক্ষে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া গ্র্যান্ট যারা পেয়েছেন তাদের দিতে হবে। তারা দেয়ার পর কোনো পোস্টারের স্ট্যান্ড খালি থাকলে কেউ সেকেন্ড পোস্টার বা বাকিরা দিতে পারবেন।’
ড. সুশান বলেন, ‘সেই গ্র্যান্ট আবুল হোসাইনও পেয়েছেন। বলা হয়েছে, রিসার্চ অ্যাচিভমেন্ট হিসেবে কে কোনটা দেবে সেটা তার নিজের রেসপন্সবিলিটি। অধ্যাপক আবুল হোসাইনও দিয়েছেন। পরে তিনি যখন একাধিক পোস্টার দিতে চেয়েছেন তাকে বলা হয়েছে কোনো স্ট্যান্ড ফাঁকা থাকলে দিতে পারেন।
‘এরপরই মূলত মেলায় একটা স্ট্যান্ড ফাঁকা দেখে তিনি ওই পোস্টারটি ঝুলিয়েছেন। তবে সমালোচনা শুরু হলে ওনারটা সরিয়ে আরেক অধ্যাপকের পোস্টার দেয়া হয়।’
অধ্যাপক সুশান বলেন, ‘মেলায় বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বই প্ল্যাকার্ড ছাপানো হয়েছে। এগুলোর ভেতর বিভাগের ইতিহাস, অর্জন এবং ভবিষ্যতের তথ্য গেছে। এসব কনটেন্ট বাছাইয়ে একটা কমিটি ছিল। সেগুলো চেক করা হয়েছে। তবে আসলে বিশ্বের কোথাও পোস্টার আগে চেক করে ডিসপ্লে করা হয় না। এটা প্রেজেন্টারের নিজস্ব রেসপন্সবিলিটি।’
অধ্যাপক হোসাইন এমন কোনো কাজ করছেন বলেও কারও জানা ছিল না দাবি করে অধ্যাপক সুশান বলেন, ‘আমরা জানি, উনি ক্রোমিয়াম না কী নিয়ে গবেষণা করছেন। সেটা সায়েন্টিফিক। সেটা ডিসপ্লে হয়েছে। কিন্তু এটার ব্যাপারটা সমালোচনা হওয়ার পর পোস্টার দেখে জানতে পেরেছি।
‘ব্যক্তিগতভাবে ওনার এই পোস্টারটার বিষয়বস্তু আমার লজিক্যাল মনে হয়নি। আমাদের বিভাগে প্রচুর রিসার্চ ফিল্ড আছে, কিন্তু সব বাদ দিয়ে এ রকম একটা বিষয়ে তিনি যে কাজ করেন, সেটা আমরা কেউ জানতাম না। উনিও কখনও জানাননি। আর এটা কোনো রিসার্চ নয়, ওনার থিংকিং হতে পারে। সেটা মেলায় দেয়াটাই প্রাসঙ্গিক ছিল না।’
অধ্যাপক আবুল হোসাইনের পোস্টার নিয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেলায় আবুল হোসাইনের এটা ছাড়াও সায়েন্টিফিক একটা গবেষণাকর্ম ছিল। মেলা শুরুর পরে দুপুরে একটায় স্ট্যান্ড খালি পেয়ে তিনি তার ওই পোস্টারটি লাগিয়ে দেন।
‘আমি শুনেছি এটার ব্যাপারে বিভাগ অবহিত ছিল না। সমালোচনা শুরু হওয়ায় বিভাগের দৃষ্টিতে আসে এবং তাকে ডেকে এটি সরিয়ে ফেলতে অনুরোধ করা হয়। পরে তিনি সেটি সরিয়ে ফেলেন।’
আবদুস সামাদ বলেন, ‘তার এই পোস্টারটা মেলায় আসারই কথা না। এটা তো গৃহীত হয়নি। গবেষণা মেলার সঙ্গে এটা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভাগকে বলেছি যেন ওনাকে সতর্ক করা হয়। আর এটা নিয়ে আমরা উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। স্যারও বলেছেন, ওনাকে সতর্ক করা হোক। অনুষদ থেকেও ওনাকে সতর্ক করা হবে, যাতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্য ও সুন্দরের অভিসারী। তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন ভিশন ২০২১ থেকে রূপকল্প ২০৪১-এর দিকে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হল মাঠে সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে একথা বলেন।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যার যার জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে আমরা সহযোগিতা করি, তার হাতকে শক্তিশালী করি। অসুরের বিরুদ্ধে সুরের ঝঙ্কার তুলি, অশান্তির বিরুদ্ধে শান্তির পতাকা উড্ডীন করি। শান্তির পায়রা উড়িয়ে আমরা বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তর ঘটাই।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অস্ত্রের ঝনঝনানি একটা সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করেছিল। সেই ক্যাম্পাস এখন শান্তিপূর্ণ। এখানে সাম্প্রদায়িকতার আগ্রাসন আমরা চাই না, জঙ্গিবাদের আগ্রাসন চাই না। এদেশের রাজনীতিতে আমরা সেতুবন্ধন রচনা করব।’
স্মৃতিচারণ করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জগন্নাথ হল আমার জীবনের এক স্মৃতিময় অধ্যায় হয়ে আছে। ’৭৫-এর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের সব কর্মকাণ্ড এই হল থেকে পরিচালিত হয়েছে। আমরা একঝাঁক তরুণ সেদিন প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলাম।
‘এই জগন্নাথ হল থেকে প্রস্তুতি নিয়ে মধুর ক্যান্টিনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিলাম। এরপর বটতলা থেকে ৪ নভেম্বর আমরা গণমিছিল, শোক শোভাযাত্রা করেছিলাম; যার গন্তব্য ছিল বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাসভবন। ’৭৫-এর পর জিয়াউর রহমানের সময়ে আড়াই বছর জেল খেটেছিলাম। ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল।’
ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ধমনিতে ছাত্রলীগের রক্ত প্রবাহিত। আমার চেতনায়, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের চেতনায় এই সংগঠন প্রবাহিত। আমি ছাত্রলীগের গৌরবময় ইতিহাসের উত্তরাধিকারী। শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছি। কাজেই ছাত্রলীগ করলে কেউ হারিয়ে যায় না। কমিটমেন্ট থাকলে, লেগে থাকলে, জীবনে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায়। অনেক কৃতিত্ব অর্জন করা যায়।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকের এই দিনে বিদ্যা দেবীকে স্যালুট জানাই। আমাদের সবার অভিন্ন শত্রু সাম্প্রদায়িকতা। সনাতন ধর্মাবলম্বী সবাইকে বলব- আমাদের প্রধানতম এনিমি সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ। সাম্প্রদায়িকতা রুখতে হবে, জঙ্গিবাদ রুখতে হবে।’
এ সময় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা।
উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ।
আরও পড়ুন:বিদ্যার দেবী সরস্বতীর অর্চনায় মুখর হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মন্দির ও মাঠ এলাকা।
দীর্ঘ দুই বছর পর সেখানে বাধাহীনভাবে দেবীর আরাধনা করতে পারছেন ভক্তরা।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে জগন্নাথ হলের মাঠে একেবারেই উদযাপন করা যায়নি সরস্বতী পূজা। পরের বছর সীমিত পরিসরে উদযাপন হলেও ছিল না চিরচেনা আমেজ। এবার আবারও পুরোনো আবহ ফিরেছে জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজায়।
বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর কৃপার আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ হল মাঠে আলাদা মণ্ডপ বানিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্ত আর দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
বাংলাদেশে এককভাবে সবচেয়ে বেশি পূজা মণ্ডপ হয়ে থাকে এ হলের আঙিনায়। নানা আয়োজনে হল প্রাঙ্গণে এ বছর ৭৩টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছরই সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয় চারুকলা অনুষদের পূজা মণ্ডপ। অনুষদের শিক্ষার্থীরা এবার হলের পুকুরে সাদা হাঁসের ওপর বসিয়েছেন দেবী সরস্বতীকে। ভক্তরা পুকুরের চারপাশ ঘিরে আরাধনা করছেন দেবীর।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জগন্নাথ হলের মন্দিরে আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে সিক্ত হন শ্বেত পদ্মে আসীন বীণাপাণি।
জগন্নাথ হলের পাশাপাশি ঢাবির ছাত্রী হলগুলোতেও চলছে বিদ্যার দেবীর আরাধনা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। দেবীর এক হাতে পুস্তক, আরেকটিতে বীণা। এ জন্য তাকে বীণাপাণিও বলা হয়, যার বাহন শুভ্র রাজহাঁস।
প্রতিমা স্থাপনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায় আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কার্যক্রম শুরু হয়। সাড়ে ৭টায় বাণী বন্দনা, ৮টা ১০ মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি, সাড়ে ১১টায় প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে পূজার কার্যক্রম শেষ হয়। বেলা ১১টা ১০ মিনিট থেকে শুরু হয় হাতেকড়ি।
বাবা-মা সন্তান নিয়ে এসেছেন হাতেখড়ি দিতে। কেউ কেউ সঙ্গে করে বই নিয়ে এসেছেন দেবীর চরণ স্পর্শের জন্য।
বাবা-মায়ের সঙ্গে পূজা করতে এসেছে ছোট্ট পায়েল প্রামাণিক। তার হাতেখড়ি হয়েছে আজ। পুরোহিতের হাতে পাটখড়ি দিয়ে বেল পাতায় লিখেছে সে।
হাতেকড়ি শেষে বিকেল ৪টায় অতিথি আপ্যায়ন হবে।
দীর্ঘ দুই বছর পর ধুমধামে বিদ্যা দেবীর আরাধনা করতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা।
তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র রাজ কুমার বলেন, ‘অসাধারণ। বিদ্যা দেবীর আরাধনা করতে সারা বছর আমরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। দুই বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই আরাধনা করতে পারছে। কারও মুখে বা চোখে কোনো শঙ্কা নেই।
‘মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি, যেন জগতের সকলে সুখী হয়। আর আমার সামনে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা, সেটি যেন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়।’
পূজা দেখতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবিদ হাসান বলেন, ‘আমার হিন্দু বন্ধুদের আমন্ত্রণে তাদের পূজা দেখতে এসেছি। আমাদের ঈদের মতোই আনন্দ তাদের সবার মাঝে। তাদের সঙ্গে মিশে আমারও আনন্দ লাগছে।’
মেয়ে চন্দ্রিমাকে নিয়ে হাজারীবাগ থেকে পূজা দিতে আসা নিপু তন্বীর প্রার্থনা, তার মেয়ে যেন বিদ্যা-বুদ্ধিতে আলোকিত মানুষ হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অনু সরকার বলেন, ‘মায়ের কাছে আমার অনেক প্রার্থনা। উল্লেখযোগ্য প্রার্থনা ছিল, সামনে আমার ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা, সেটি যেন ভালো হয়। যে আশা নিয়ে গ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি, সেটি যেন পূর্ণ হয়।’
আরও পড়ুন:হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা বৃহস্পতিবার।
এই ধর্মীয় উৎসবে পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন অগণিত ভক্ত। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর চরণে প্রণতি জানাবেন তারা।
সনাতন ধর্মালম্বীদের মতে, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী।
‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে/ বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহ তুতে’ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র উচ্চারণ করে বিদ্যা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য দেবী সরস্বতীর অর্চনা করবেন।
বাসস জানিয়েছে, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, দেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্য আরো সুদৃঢ় করতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। তিনি দেবী সরস্বতীর পূজা অর্চণা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে জ্ঞানার্জনে ব্রতী হয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান।
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা বাণী অর্চনাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পূজা ছাড়াও অন্য অনুষ্ঠানমালায় আছে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জা প্রভৃতি।
প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলে মহাসাড়ম্বরে বিদ্যা ও আরাধনার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯টায় শুরু হবে পূজার্চনা এবং ১০ টা থেকে শুরু হবে অঞ্জলি প্রদান। সন্ধ্যা আরতি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:দেশের আকাশে রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এ হিসেবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে।
বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে সোমবার বাদ মাগরিব অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনিম হাসান।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে রজব মাস গণনা শুরু হবে এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার দিনগত রাতে শবে মেরাজ পালিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের আকাশে সোমবার ১৪৪৪ হিজরি সালের রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তাই মঙ্গলবার থেকে পবিত্র রজব মাস গণনা শুরু হবে। এ হিসেবে আগামী ২৬ রজব ১৪৪৪ হিজরি, ১৮ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ উদযাপিত হবে।
প্রথমে সংস্থাটি তাদের ফেসবুক পেজে ১৯ ফেব্রুয়ারি শবে মেরাজ উদযাপিত হবে বলে জানায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আবার জানায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে উদযাপিত হবে শবে মেরাজ।
রজব হিজরি সনের বিশেষ ও মহিমান্বিত একটি মাস। রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসা রজব আল্লাহ প্রদত্ত চারটি সম্মানিত মাসের একটি। এ মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন মুসলিমরা।
হজের উদ্দেশে সাইকেল চালিয়ে থাইল্যান্ড থেকে সৌদি আরব যাচ্ছেন থাইল্যান্ডের নাগরিক আব্দুস সালাম। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি শনিবার রাতে পৌঁছেছেন মাগুরা শহরে। সেখানকার পারনান্দুয়ালী জামে মসজিদে থাকছেন তিনি।
আব্দুস সালাম নিউজবাংলাকে জানান, স্কুল শিক্ষকতা থেকে গত বছর অবসরের পর তার হজে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। সাইকেল চালানোর শখ থেকেই এ বাহনটিতে চড়ে সৌদি যেতে চান তিনি।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের শহর চেঙ্গাইর বাসিন্দা সালাম জানান, গত ১৫ জানুয়ারি দেশ ছেড়েছেন তিনি, কিন্তু মিয়ানমারে আইনি জটিলতার কারণে দেশটিতে যেতে পারেননি। পরে উড়োজাহাজ দিয়ে ১৬ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন তিনি। সেখানে থেকে ছয় দিন সাইকেল চালিয়ে শনিবার মাগুরায় আসেন।
সালাম বলেন, ‘যশোরের বেনাপোল সীমান্ত পার হয়ে ভারত যাব। এরপর পাকিস্তান ও ইরান হয়ে সৌদিতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমার। এজন্য আমি গুগল ম্যাপের সহায়তা নিচ্ছি।’
এই থাই বৃদ্ধ জানান, সন্তান না থাকায় স্ত্রীকে নিয়ে থাইল্যান্ডে নিজের মতোই জীবন যাপন করেন তিনি।
সুইডেনের রাজধানীতে শনিবার তুরস্কবিরোধী বিক্ষোভে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভিন্ন দেশ।
স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাস ভবনের সামনে এক কপি কোরআন পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান কট্টর ডানপন্থি রাজনীতিক রাসমুস প্যালুডেন। এর আগেও বিভিন্ন বিক্ষোভে কোরআন পোড়ানোর নজির আছে তার।
তুরস্ক, পাকিস্তান, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বলে টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
তুরস্ক
কোরআন পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের ওপর জঘন্য হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই…মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর পাশাপাশি আমাদের পবিত্র মূল্যবোধকে অপমানকারী এ ধরনের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুমোদন দেয়াটা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।’
পাকিস্তান
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন ও উসকানিমূলক ইসলামভীতিকর কর্মকাণ্ড বিশ্বের দেড় শ কোটির বেশি মুসলিমের ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে আঘাত করেছে।’
কুয়েত
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সালেম আবদুল্লাহ আল জাবের আল সাবাহকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেইউএনএর বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত হানার পাশাপাশি মারাত্মক উসকানির সৃষ্টি করেছে।
সৌদি আরব
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সৌদি আরব সংলাপ, সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ঘৃণা ও চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করে।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশটি মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং নীতির বিপরীতে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নকারী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রটি বলেছে, কোরআন পোড়াতে সুইডেনের কর্তৃপক্ষ যে অনুমোদন দিয়েছে, তার প্রতিবাদ জানাচ্ছে তারা।
দেশটি ঘৃণা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইরান
কোরআন পোড়ানোকে ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানোর চেষ্টা আখ্যা দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, বাকস্বাধীনতায় সমর্থনের ভুয়া অজুহাতে ইউরোপের কিছু দেশ চরমপন্থি ও উগ্রবাদীদের ইসলামের পবিত্রতা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর সুযোগ করে দেয়।
আরও পড়ুন:তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সড়কে টঙ্গীমুখী অনেক মুসল্লি দেখা গেছে।
রোববার দুপুর ১২টায় শুরু হতে যাওয়া মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকে রাজধানী, সাভার, নরসিংদী, গাজীপুর ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের দিকে আসা শুরু করেন।
মুসল্লিদের এ ঢলে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় ধর্মীয় উৎসবের আবহ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানান, ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্ব পাশে বিশেষভাবে স্থাপিত মোনাজাত মঞ্চ থেকে এ মোনাজাত পরিচালনা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘সকালে মুরব্বি ও আয়োজক কমিটির ফয়সালা মোতাবেক দুপুর ১২টায় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত শুরু হবে। মোনাজাত পরিচালনা করবেন তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্ধলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভি। এর আগে তিনিই মুসল্লিদের উদ্দেশে হেদায়েতি বয়ান করবেন।’
ইজতেমা এলাকায় পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকলেও যাত্রী ও কাঁচামালবাহী যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে, তবে প্রথম পর্বে অনেকেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়ায় এবারের পর্বের মোনাজাতে মুসল্লির সংখ্যা কিছুটা কম।
প্রথম পর্বের মোনাজাত উপলক্ষে অধিকাংশ শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এবার তেমনটা রাখা হয়নি। তাই মুসল্লিদের সংখ্যা কিছুটা কম হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম জানান, রোববার ফজরের নামাজের পর ভারতের দিল্লির মোরসালিন নিজামুদ্দিনের বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার তৃতীয় দিন শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফুল।
তিনি আরও জানান, বয়ানের পর নাস্তার বিরতি দিয়ে ৯টা থেকে মাওলানা মোশাররফ তালিম শুরু করেন। এরপর শুরু হয় হেদায়েতি বয়ান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য