‘সম্প্রতি আমি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পায়ে ব্যথা পাই। আমার ক্লাস আটতলায়। আগে নিয়মিত সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করলেও এখন পারি না। ক্লাস টাইমে দীর্ঘ লাইন থাকে। দীর্ঘ এই লাইনের জন্য সহজে লিফট ধরতে পারি না। ফলে প্রায় সময় ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও ঢুকতে দেরি হয়ে যায়।’
কথাগুলো বলছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফাহমিদা আনিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে লিফট পেতে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন তার মতো অনেকেই।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, লিফটের তুলনায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় অপেক্ষা দীর্ঘ হয়। এ কারণে প্রায়ই ক্লাসে যেতে দেরি হয় তাদের। পরীক্ষার কেন্দ্রেও নির্দিষ্ট সময় ঢুকতে পারেন না। শ্রেণিকক্ষ বা পরীক্ষার কেন্দ্র অনেক ওপরে হওয়ায় হেঁটে ওঠাও কষ্টকর।
জবিতে শুধু নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনে আছে লিফট। ভবনটিতে এলিভেটরের জন্য সাতটি জায়গা থাকলেও লিফট আছে চারটি।
এ ৪ লিফটেই প্রতিদিন ওঠানামা করেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জবির একেকটি লিফটে একবারে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ জন উঠতে বা নামতে পারেন। এর মধ্যে ১ নম্বর লিফটটি শুধু শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যে বরাদ্দ হলেও সেটি সাততলা পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। ফলে প্রায় সময় ২, ৩ ও ৪ নম্বর লিফট শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহার করতে হয়।
যান্ত্রিক ত্রুটিতে ৪ নম্বর লিফটটি এক মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনে ১৫ বিভাগে ৮ হাজার ৭৮০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এসব বিভাগে প্রায় ১ হাজার শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এ ছাড়াও ভবনটিতে অন্য ভবনের বিভাগগুলোর শিক্ষকদের কক্ষ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেল, গবেষণা পরিচালকের দপ্তর ও পরিকল্পনা দপ্তরসহ বেশ কয়েকটি দপ্তর রয়েছে ভবনটিতে। এ কারণে লিফটে প্রতিনিয়তই চাপ থাকে।
কী বলছেন শিক্ষার্থীরা
পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র শিহাব হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লিফটের লম্বা লাইনের কারণে আমার প্রতিদিনই পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেরি হয়, কিন্তু আমাকে তো পরে সময় বাড়িয়ে দেয় না।’
এ সমস্যা নিয়ে প্রশাসন উদাসীন বলে অভিযোগ শিহাবের।
লোকপ্রশাসন বিভাগের ইউছুব ওসমান বলেন, ‘অন্য সময় কষ্ট করে হলেও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যায়, কিন্তু সমস্যা হয় পরীক্ষার সময়। সে সময় লিফট ধরতে না পারলে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে শরীরে ক্লান্তি লাগে। আবার পরীক্ষার সময়ও নষ্ট হয়ে যায়। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা উচিত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগীত বিভাগের এক ছাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ক্লাস হয় ১২ তলায়। আমাদের বিভাগে প্রায় সময় পরীক্ষা থাকে। তাই আমাদের শাড়ি পরে আসতে হয়। শাড়ি পরে কোনোভাবেই হেঁটে ওঠা সম্ভব না।
‘আবার দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে যায়। পেছনের একটা লিফট বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। সেটা চালু থাকলেও লাইন কিছুটা কম থাকে। সেটা কেন বন্ধ থাকে, সেটাও জানি না। অন্তত ক্লাস টাইমে চালু রাখা উচিত।’
এদিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত সোমবার বিকেলে লিফট ছিঁড়ে পড়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
ওই সময় শিক্ষার্থীদের ১৫ মিনিটের মতো লিফটে আটকে থাকতে হয়। পরবর্তী সময়ে অপারেটর ও সিকিউরিটি গার্ড এসে তাদের উদ্ধার করেন।
প্রধান প্রকৌশলীর ভাষ্য
সার্বিক বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে আমরা চার নম্বর লিফটটি নতুন লাগিয়েছিলাম। যে কোম্পানির কাছ থেকে আমরা লিফট নিয়েছিলাম, তাদের সঙ্গে আমাদের সার্ভিসিংয়ের চুক্তি ছিল না।
‘এখন সার্ভিসিংয়ের অভাবে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় লিফট সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিফটের সমস্যা সমাধানে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে সার্ভিসিংয়ের জন্য চুক্তি করব। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি লিফটগুলো দেখেও গেছে।
‘আমরা হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কয়টি লিফট একসঙ্গে সার্ভিসিংয়ের ব্যবস্থা করব৷ আমরা দ্রুতই সমস্যাটির সমাধান করতে চেষ্টা করছি।’
হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী আরও জানান, যে লিফটি সাততলা পর্যন্ত যায়, সেটিকে ১৩ তলা পর্যন্ত নেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। নতুন আরেকটি লিফট বসানো হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডারও দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে খুব শিগগিরই বসানোর কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে গোসলে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়।
ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিতকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. সোহাদ হকের এ মৃত্যুকে অপমৃত্যু দাবি করে এর কারণ চিহ্নিত করে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য কমিটিকে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি কমিটিকে তদন্ত কাজ সম্পন্ন এবং সুইমিংপুলের ব্যবস্থাপনায় কোনো অবহেলা বা ত্রুটি আছে কি না, তা চিহ্নিত করে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এই কমিটি গঠন করেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য এবং তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শরিফ উল ইসলাম এবং বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন।
এর আগে সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন সুইমিংপুলে গোসল করতে নেমে পানিতে তলিয়ে যান মোহাম্মদ সোয়াদ।
পরে আশেপাশের শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেলা সোয়া ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জামিল নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে পুলে সোয়াদ তলিয়ে যায় সেটির গভীরতা ছিল ৮ থেকে ১০ ফিট। এটাতে কেউ ডুবে মারা যাবে, এটা স্বাভাবিকভাবে কারোর চিন্তায়ই আসবে না। পানির তলে গিয়ে ওপরের দিকে লাফ দিলেই ওপরে উঠে আসার কথা!’
তিনি বলেন, ‘আমরা শতাধিক ছাত্র ছিলাম, কিন্তু কেউই খেয়াল করিনি যে সে ডুবে গেছে।’
আরও পড়ুন:বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও একজন।
সোমবার বিকেল চারটার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়ানগরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, এদিন বিকেলে জিয়ানগরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে যায় চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা, দ্বিতীয় বর্ষের তাওফিক হোসাইন ও জাকারিয়া হিমু। পথিমধ্যে শাহ আমানত নামের একটি বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন শান্ত সাহা। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তাওফিক হোসাইন। মোটরসাইকেলের আরেক যাত্রী জাকারিয়া হিমুকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম শহরের এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহ আমানতের কয়েকটি বাস আটক করার পর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। একটি বাসে আগুনও দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (২১ ব্যাচ) শিক্ষার্থী পল্লব ঘোষ বলেন, ‘শান্ত ভাই আমার খুবই কাছের বড় ভাই এবং একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন, কিন্তু বাসের বেপরোয়া গতির জন্য আজ একটি প্রাণ ঝরে গেল। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি উপযুক্ত বিচার দাবি করি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যাবস্থা করা হবে। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না হয়, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সুইমিংপুলে গোসল করতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ সোয়াদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়তেন।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন সুইমিংপুলে গোসল করতে নামলে পানিতে তলিয়ে যান তিনি।
পরে আশেপাশের শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেলা সোয়া ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জামিল নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, যে পুলে সোয়াদ তলিয়ে যায় সেটির গভীরতা ছিল ৮/১০ ফিট। এটাতে কেউ ডুবে মারা যাবে, এটা স্বাভাবিকভাবে কারোর চিন্তায়ই আসবে না। পানির তলে গিয়ে ওপরের দিকে লাফ দিলেই ওপরে উঠে আসার কথা!
তিনি বলেন, আমরা শতাধিক ছাত্র ছিলাম। কিন্তু কেউই খেয়াল করিনি যে সে ডুবে গেছে!
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, পানিতে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার পর মেডিক্যালে নিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারা গেছেন। মরদেহ মর্গে নেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক শাহজাহান আলী বলেন, দর্শন বিভাগের সোয়াদ নামে এক শিক্ষার্থী সুইমিংপুলের পানিতে লাফালাফি করতে গিয়ে পানির সাথে ধাক্কা বা আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হয়। তখন সেখানে তার বন্ধুবান্ধব ছিল এবং আশেপাশে আমাদের লোকজনও ছিল।
তিনি বলেন, এ সময় তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে পাঠায়। পরে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়। বিষয়টি আমি আমাদের প্রক্টর মহোদয়কেও জানিয়েছি।
আরও পড়ুন:তীব্র দাবদাহে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ক্লাস কার্যক্রম চলবে অনলাইনে। তবে পরীক্ষা যথারীতি সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার বিকেল ৩টায় এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম।
রেজিস্ট্রার বলেন, সারাদেশে চলমান তীব্র দাবদাহের বিষয়টি মাথায় রেখে আজ (রোববার) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এক জরুরি মিটিং আহ্বান করেন। ওই মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, সব অনুষদের ডিন, ২৫টি বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রক্টর ও বিভিন্ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তীব্র দাবদাহের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সশরীরে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সারা দেশের ওপর দিয়ে প্রবহমান তীব্র দাবদাহের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সশরীরে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করেছে ঢাবি, তবে এ সময় যথারীতি চলমান থাকবে পরীক্ষা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে প্রচলিত ১০% অনলাইন ক্লাসের পরিবর্তে শতভাগ অনলাইন ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে, তবে পরীক্ষাসমূহ যথারীতি চলমান থাকবে। কোনো শিক্ষার্থী হল অথবা বাসার বাইরে আসতে চাইলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাদা বা হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরিধান করা; যথাসম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা; বাইরে যেতে হলে মাথার জন্য চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপ বা হাতা ব্যবহার করা; বিশুদ্ধ পানি পান করা; প্রয়োজনে লবণযুক্ত তরল যেমন- খাবার স্যালাইন ইত্যাদি পান করা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয় যেমন- চা ও কফি পান থেকে বিরত থাকা।
জবিতে ছয় দিন বন্ধ সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা
দেশে চলমান তাপদাহের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে আগামী ছয় দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তবে এ সময় অনলাইন ক্লাস চালু থাকবে।
তীব্র দাবদাহে করণীয় নির্ধারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে রোববার বেলা ১১টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে তার কনফারেন্স কক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচণ্ড দাবদাহে ২২ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে, তবে অনলাইনে ক্লাস চলবে। এ সময়ের পরীক্ষাগুলোর তারিখ পরিবর্তন করা হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য সশরীরে ক্লাসে অংশ নেয়া আসলেই কঠিন। উপাচার্য মহোদয় গত সপ্তাহেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন। এজন্য আজ একটি জরুরি সভায় ক্লাস অনলাইনে ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপাতত এ সপ্তাহ এভাবে চলবে। পরবর্তী সময়ে উপাচার্য মহোদয় পরিস্থিতি বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। শিক্ষার্থীদের জন্য যেটা ভালো হবে তেমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে তিনি।’
এদিকে দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে দেশের সব স্কুল-কলেজে সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। একইসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধিভুক্ত সব কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন:দেশব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহ চলমান। জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণায়নের এমন পরিস্থিতির উল্লেখ করে ১০ দিনে পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগ বলছে, তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা। এই কর্মসূচি সফল করতে কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়।
দেশে চলমান দাবদাহের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের উপপরিচালক (কলেজ-১) মো. ওয়াহিদুজ্জামান শনিবার বিকেলে মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ সাত দিন বন্ধ থাকার সিদ্ধান্তের কথা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
এর আগে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চলমান তাপদাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় আগামী ২১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ পর্যন্ত সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয়সমূহ ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।’
তারও আগে দেশজুড়ে চলমান দাবদাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দেশজুড়ে বহমান তাপদাহের ওপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া না পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’
গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দাবদাহ। কোনো কোনো জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ।
ভারত সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন বাস্তবতায় দৈনন্দিন কাজকর্ম করা কঠিন হয়ে গেছে বিভিন্ন বয়সীদের।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য