বরিশাল নগরীর ৯৪ নম্বর দক্ষিণ সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার। স্কুলটিতে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে তার পর থেকেই স্কুলে অনুপস্থিত থেকেছেন এই শিক্ষক।
স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে এর প্রমাণও পেয়েছেন সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার। দেখতে পান সালমা আক্তারের বদলে ক্লাস নিচ্ছেন এক যুবক। এরপর স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ইমরানা জাহান ও সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন তিনি।
এরপরই উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনাকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে এবং বিষয়টি সেখানেই শেষ করে দিতে বলেন সালমা আক্তারের স্বামী নগরীরে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার। অন্যথায় পরিবারসহ ওই কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকির অভিযোগ ওঠে এনামুল হকের বিরুদ্ধে।
অবশ্য প্রাণনাশের হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এনামুল হক। তার দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক সালমা বলছেন, শিক্ষা কর্মকর্তা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে তাকে ভোগান্তিতে ফেলছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
প্রতিবেদন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ২ আগস্ট দক্ষিণ সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরের দিকে পরিদর্শনে যান সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার। সে সময় দ্বিতীয় শ্রেণির কক্ষে শিক্ষার্থীদের হই-হুল্লোড়ের শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে দেখেন এক যুবক ক্লাস নিচ্ছেন। সে সময় ওই যুবক আবুল হোসেন জানান, তিনি সে স্কুলের শিক্ষক নন, তবে সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তারের পরিবর্তে ক্লাস নিচ্ছেন। পরে অফিসে গিয়ে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সালমা আক্তারের ওই স্কুলে যোগ দেয়ার বিষয়টি জানতে পারেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি, ১০ এপ্রিল, ২৪ জুলাই ও ৩ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে সালমা আক্তারকে পাননি। পরে হাজিরা খাতায় সে দিনগুলোতে নৈমিত্তিক ছুটিতে ছিলেন বলে উল্লেখ করেন সালমা।
বলা হয়, যেদিন যেদিন শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুল পরিদর্শনে গেছেন, সেসব দিনে তিনি শুধু ছুটিতে থেকেছেন বলে দেখিয়েছেন। বিষয়টি তার পরিবর্তে ক্লাস নেয়া যুবক আবুল হোসেন মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও লিখিত দেয়ার কথা বলে স্কুল থেকে পালিয়ে যান।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর থেকে স্কুলে থাকলেও সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তারকে স্কুলের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা চেনেনই না বলে জানান।
বিষয়টি দুই শ্রেণির ৩৩ শিক্ষার্থী লিখিতভাবে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও করেছেন।
ইউএনওর কাছে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমরানা জাহান, সহকারী শিক্ষক আবুয়াল হোসেন, রেহানা আক্তার, গোলাম মোস্তফা, পারভীন আক্তার মনি ও তাসরিন জাহান ২ আগস্টই সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তারের কাছে প্রত্যয়নপত্র দেন। সেখানে সালমা আক্তারের পরিবর্তে জনৈক এক ব্যক্তি শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে বলা হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিপিইএড প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া শেষে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও করেননি। এখনও ওই ব্যক্তি শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, যা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নিজে গিয়ে দেখেছেন।
সালমা আক্তারের বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণের পর স্কুলে যান তার স্বামী কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার। সেখানেই তিনি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তারকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন।
বরিশাল সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়া চিঠিতে সাবিনা আক্তার অভিযোগ করেছেন, ২৯ আগস্ট দক্ষিণ সাগরদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করোনার টিকা কার্যক্রম পরিদর্শনে গেলে তার সঙ্গে স্কুলের সভাপতি ও সালমা আক্তারের স্বামী অশালীন আচরণ করেন, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং পরিবারসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন।
সাবিনা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনিয়ম ধরে ব্যবস্থা নিতে বলায় আমাকে ও আমার পরিবারকে গাড়িচাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন এনামুল হক বাহার। আমি এখন পরিবার ও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছি।’
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, তাকে কেউ সালমা নামে চেনেন না, সবাই চেনে সাথী নামে। তাই হয়তো শিক্ষার্থীরা তাকে চিনতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমি তিন মাসের ছুটিতে ছিলাম। চলতি বছর মার্চে যোগ দিয়েছি। তারপর প্রতিদিনই ক্লাস নেই। তবে ২ আগস্ট আমার মেয়ে অসুস্থ থাকায় আমি আসতে পারিনি। বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে অবহিত করি।’
তবে তার অবর্তমানে কেউ তার হয়ে পাঠদান করান না বলেও দাবি করেন তিনি।
আবুল হোসেন ম্যানেজিং কমিটির মৌখিক অনুমতি নিয়ে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করতে ক্লাস নেন বলে দাবি করেন সালমা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, সবই রাজনৈতিক উদ্দেশে করা হয়েছে। আর আমাকে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল, তার জবাব দিয়েছি।’
কারণ দর্শানোর নোটিশে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমরানা জাহান উল্লেখ করেন, ‘সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার ২০১৮ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।’
বিষয়টি জানতে প্রধান শিক্ষককে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
হুমকির অভিযোগ সম্পর্কে সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তারের স্বামী এনামুল হক বাহার বলেন, ‘উনি (শিক্ষা কর্তকর্তা) এসব ফাও কথা বলতেছেন। ওনার হয়তো কোনো আত্মীয়-স্বজনের লগে আমার ঝামেলা আছে, সেইটার ফায়দা লোটা অথবা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হইতেছে আমার বিরুদ্ধে।
‘ওনার সাথে আমার কোনো কথা-কাটাকাটিই হয় নাই। আমি ওনাকে বলছিলাম, আমার ওয়াইফ অসুস্থ থাকায় আসতে পারে নাই। তখন উনি আমারে বলেন, আল্লাহর কাছে বলেন এসব। তার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করা হয়নি। আর হুমকির তো প্রশ্নই আসে না।’
সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর জাহিদুল কবির তুহিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসব এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নেব।’
বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) সোহেল মারুফ বলেন, ‘আমার নলেজে বিষয়টি এসেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হলো।
রায়ের সময় শরীফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জ্যেষ্ঠতা ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাঁকে চাকরিতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
মন্তব্য