বরিশাল নগরীর ৯৪ নম্বর দক্ষিণ সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার। স্কুলটিতে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে তার পর থেকেই স্কুলে অনুপস্থিত থেকেছেন এই শিক্ষক।
স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে এর প্রমাণও পেয়েছেন সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার। দেখতে পান সালমা আক্তারের বদলে ক্লাস নিচ্ছেন এক যুবক। এরপর স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ইমরানা জাহান ও সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন তিনি।
এরপরই উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনাকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে এবং বিষয়টি সেখানেই শেষ করে দিতে বলেন সালমা আক্তারের স্বামী নগরীরে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার। অন্যথায় পরিবারসহ ওই কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকির অভিযোগ ওঠে এনামুল হকের বিরুদ্ধে।
অবশ্য প্রাণনাশের হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এনামুল হক। তার দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক সালমা বলছেন, শিক্ষা কর্মকর্তা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে তাকে ভোগান্তিতে ফেলছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
প্রতিবেদন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ২ আগস্ট দক্ষিণ সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরের দিকে পরিদর্শনে যান সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার। সে সময় দ্বিতীয় শ্রেণির কক্ষে শিক্ষার্থীদের হই-হুল্লোড়ের শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে দেখেন এক যুবক ক্লাস নিচ্ছেন। সে সময় ওই যুবক আবুল হোসেন জানান, তিনি সে স্কুলের শিক্ষক নন, তবে সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তারের পরিবর্তে ক্লাস নিচ্ছেন। পরে অফিসে গিয়ে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সালমা আক্তারের ওই স্কুলে যোগ দেয়ার বিষয়টি জানতে পারেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি, ১০ এপ্রিল, ২৪ জুলাই ও ৩ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে সালমা আক্তারকে পাননি। পরে হাজিরা খাতায় সে দিনগুলোতে নৈমিত্তিক ছুটিতে ছিলেন বলে উল্লেখ করেন সালমা।
বলা হয়, যেদিন যেদিন শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুল পরিদর্শনে গেছেন, সেসব দিনে তিনি শুধু ছুটিতে থেকেছেন বলে দেখিয়েছেন। বিষয়টি তার পরিবর্তে ক্লাস নেয়া যুবক আবুল হোসেন মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও লিখিত দেয়ার কথা বলে স্কুল থেকে পালিয়ে যান।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর থেকে স্কুলে থাকলেও সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তারকে স্কুলের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা চেনেনই না বলে জানান।
বিষয়টি দুই শ্রেণির ৩৩ শিক্ষার্থী লিখিতভাবে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও করেছেন।
ইউএনওর কাছে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমরানা জাহান, সহকারী শিক্ষক আবুয়াল হোসেন, রেহানা আক্তার, গোলাম মোস্তফা, পারভীন আক্তার মনি ও তাসরিন জাহান ২ আগস্টই সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তারের কাছে প্রত্যয়নপত্র দেন। সেখানে সালমা আক্তারের পরিবর্তে জনৈক এক ব্যক্তি শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে বলা হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিপিইএড প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া শেষে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও করেননি। এখনও ওই ব্যক্তি শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, যা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নিজে গিয়ে দেখেছেন।
সালমা আক্তারের বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণের পর স্কুলে যান তার স্বামী কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার। সেখানেই তিনি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাবিনা আক্তারকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন।
বরিশাল সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়া চিঠিতে সাবিনা আক্তার অভিযোগ করেছেন, ২৯ আগস্ট দক্ষিণ সাগরদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করোনার টিকা কার্যক্রম পরিদর্শনে গেলে তার সঙ্গে স্কুলের সভাপতি ও সালমা আক্তারের স্বামী অশালীন আচরণ করেন, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং পরিবারসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন।
সাবিনা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনিয়ম ধরে ব্যবস্থা নিতে বলায় আমাকে ও আমার পরিবারকে গাড়িচাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন এনামুল হক বাহার। আমি এখন পরিবার ও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছি।’
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, তাকে কেউ সালমা নামে চেনেন না, সবাই চেনে সাথী নামে। তাই হয়তো শিক্ষার্থীরা তাকে চিনতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমি তিন মাসের ছুটিতে ছিলাম। চলতি বছর মার্চে যোগ দিয়েছি। তারপর প্রতিদিনই ক্লাস নেই। তবে ২ আগস্ট আমার মেয়ে অসুস্থ থাকায় আমি আসতে পারিনি। বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে অবহিত করি।’
তবে তার অবর্তমানে কেউ তার হয়ে পাঠদান করান না বলেও দাবি করেন তিনি।
আবুল হোসেন ম্যানেজিং কমিটির মৌখিক অনুমতি নিয়ে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করতে ক্লাস নেন বলে দাবি করেন সালমা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, সবই রাজনৈতিক উদ্দেশে করা হয়েছে। আর আমাকে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল, তার জবাব দিয়েছি।’
কারণ দর্শানোর নোটিশে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমরানা জাহান উল্লেখ করেন, ‘সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার ২০১৮ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।’
বিষয়টি জানতে প্রধান শিক্ষককে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
হুমকির অভিযোগ সম্পর্কে সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তারের স্বামী এনামুল হক বাহার বলেন, ‘উনি (শিক্ষা কর্তকর্তা) এসব ফাও কথা বলতেছেন। ওনার হয়তো কোনো আত্মীয়-স্বজনের লগে আমার ঝামেলা আছে, সেইটার ফায়দা লোটা অথবা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হইতেছে আমার বিরুদ্ধে।
‘ওনার সাথে আমার কোনো কথা-কাটাকাটিই হয় নাই। আমি ওনাকে বলছিলাম, আমার ওয়াইফ অসুস্থ থাকায় আসতে পারে নাই। তখন উনি আমারে বলেন, আল্লাহর কাছে বলেন এসব। তার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করা হয়নি। আর হুমকির তো প্রশ্নই আসে না।’
সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর জাহিদুল কবির তুহিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসব এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নেব।’
বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) সোহেল মারুফ বলেন, ‘আমার নলেজে বিষয়টি এসেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য