ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হলগুলোতে কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না থাকলেও অদ্ভুত কিছু নিয়ম মানা হয় ছাত্রীদের হলগুলোতে। এসব নিয়মের কারণে এক হলের ছাত্রীরা আরেক হলে ঢুকতে পারেন না। এমনকি যেসব ছাত্রী হলে থাকেন না তাদেরও অ্যাটাচড হলে ঢুকতে দেয়া হয় না।
এখানেই শেষ নয়। রাত ২টার পর হলের অভ্যন্তরীণ বিল্ডিংগুলোর গেটও বন্ধ করে দেয়া হয়। এই সময়ের পর এক বিল্ডিংয়ের শিক্ষার্থীরা আরেক বিল্ডিংয়ে যেতে পারেন না। ফলে বিল্ডিংয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীদের আর নামার সুযোগ থাকে না।
এসব নিয়ম বাতিলসহ আরও কয়েকটি দাবি নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছেন হলগুলোর ছাত্রীরা। তারা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন পদক্ষেপে টনক নড়েছে ছাত্রলীগের। শিক্ষার্থীদের এই সমাবেশের ঘোষণা আসার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই শনিবার এসব দাবি বাস্তবায়নে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন পাঁচ ছাত্রী হলের ছাত্রলীগ নেত্রীরা।
শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলে বলছেন, ছাত্রলীগের এসব নেত্রী এতদিন কোথায় ছিলেন? শিক্ষার্থীরা সমাবেশের ঘোষণা দেয়ার পর ক্রেডিট নিতে তড়িঘড়ি করে একই দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে রোববার অনুষ্ঠেয় সমাবেশে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরার কথা রয়েছে। সেগুলো হলো অনাবাসিক ও এক হলের ছাত্রীদের অন্য হলে ঢোকার ব্যবস্থা করা, খাবারের মান বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানির ফিল্টার স্থাপন, হলের কর্মচারীদের দৌরাত্ম্য কমানো এবং ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, হলে ফার্মেসি স্থাপন এবং কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং অগ্রিম অ্যাপ্লিকেশন ছাড়া নাম এন্ট্রির মাধ্যমে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গেট দিয়ে হলে প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা।
ছাত্রলীগ নেত্রীদের দেয়া স্মারকলিপিতে থাকা আট দাবির ছয়টিরই শিক্ষার্থীদের এসব দাবির সঙ্গে মিল আছে। বাকি দুই দাবি হলো- দূরের হলগুলোতে যাতায়াতের জন্য বাসের ট্রিপ ও সময়সীমা বৃদ্ধি করা এবং ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য সঠিক রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করা।
ছাত্রলীগের এই স্মারকলিপি দেয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবদুল কাদের নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘তাড়াহুড়ো করে ছাত্রলীগ নেত্রীদের আরেকজনের বিল সেচা কৈ মাছ খাওয়ার জন্য দাঁত কেলানোর দরকার ছিল না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন এই দাবিটা তুলছে তখন তাদের সঙ্গে সংহতি জানানো উচিত ছিল। তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল। সেটা না করে তড়িঘড়ি করে তাদের দাবিগুলা কপি পেস্ট করে ভিসির কাছে গিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসতেছে। বাহ!’
জান্নাতুল সাদিয়া স্বর্ণালী নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘একেই বলে কেউ মরে বিল সেচে কেউ খায় কৈ। দাবি তুলল সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর সেটা কপি পেস্ট করে দ্রুততার সঙ্গে স্মারকলিপি দিয়ে দিল। বাহ!’
আবদুল্লাহ হীল বারি নামে আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘গতকালকেই দেখলাম ঢাবির নারী শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কর্মসূচি ডেকেছে রোববার। কিন্তু হুট করে আজ দেখি বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা স্মারকলিপিসহ ভিসি স্যারের কাছে চলে গেলো...! তারা এভাবে তাড়াহুড়ো করে স্মারকলিপি দিয়ে ঠিক কী বুঝাইতে চাইলো বুঝলাম না।
‘নাকি এমনটাই ভেবে নিচ্ছেন যে- হায় হায় এই যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে অন্যরা কথা বলতেছে, এই বুঝি সব নিয়ন্ত্রণ বেহাত হয়ে গেল!’
ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দীন সিফাত লেখেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে মেয়েদের হলগুলোর শিক্ষার্থীরা মিলে রোববার একটা প্রোগ্রাম আয়োজনের ব্যানার নিউজফিডে ভাসছে। আজকে দেখি অফ ডেতে তাড়াহুড়ো করে ছাত্রলীগ নেত্রীরা স্মারকলিপি দিয়ে আসছে!
‘যাকগে, দাবিগুলো তো পুরাই কপি-পেস্ট মনে হচ্ছে। এতো তাড়াহুড়ো না করে আগামীকাল শিক্ষার্থীদের পাশেই থাকতে পারতেন।’
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে রোববারের সমাবেশের অন্যতম আয়োজক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরেফা অবশ্য ছাত্রলীগের স্মারকলিপি দেয়াকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীকাল নারী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে প্রোগ্রামটা করব। আর আজ ছাত্রলীগ তাদের ব্যানারে স্মারকলিপি দিয়েছে। তারা তাদের মতো করছে। যত বেশি প্রোগ্রাম হবে তত বেশি ভালো। প্রশাসন সচেতন হবে।’
ছাত্রলীগ ক্রেডিট নেয়ার জন্য এই স্মারকলিপি দিয়েছে- শিক্ষার্থীদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা যদি ক্রেডিট নেয়ার জন্য কোনো প্রোগ্রাম করে থাকে তাহলে করুক। আমাদের ক্রেডিটের দরকার নেই। মূল বিষয় হলো আমাদের ভোগান্তি দূর হওয়া।’
এ বিষয়ে রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্রেডিট নেয়ার কিছু না। অন্য কেউ যদি এই বিষয়ে কথা বলে আমরা তাদের স্বাগত জানাই এবং তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে চাই। আমাদের সবারই চাওয়া এসব দাবি পূরণ হোক।’
দাবির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান কী বলেছেন জানতে চাইলে আতিকা বলেন, ‘স্যার বলেছেন যে এসব দাবির বিষয়ে আগামীকাল মেয়েদের হল প্রাধ্যক্ষ ও হাউস টিউটরদের নিয়ে মিটিং করবেন। হল প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’
উপাচার্যের বক্তব্যের সাথে আতিকার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীদের এসব দাবির বিষয়ে অধ্যাপক আখাতারুজ্জামান বলেন, আজকে তারা আমার কাছে এসেছে। ছাত্রীদের হলের বিভিন্ন সমস্যার কথা লিখিত আকারে জানিয়েছে। আমি ছাত্রী হলগুলোর প্রাধ্যক্ষদের আগামীকাল দুপুর বারোটায় চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। যোক্তিক উপায়ে কীভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা যায় সেসব নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করবো।
আরও পড়ুন:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য কমন বাথরুম রয়েছে ২৮টি। এর ২৭টিই পুরনো এবং জীর্ণ দশা। কেবল একটি বাথরুমের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সম্পূর্ণ টাইলস করা এবং বেসিন ও কমোডসহ বেশ কিছু অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বাথরুমটিতে। প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছর নতুন করে এসব সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। অত্যাধুনিক ফিটিংস দিয়ে সাজানো বাথরুমটি ব্যবহার করতেন শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। তাই স্বপ্রণোদিত হয়ে বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয় ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর। কমিটি গঠনের পর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এই হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ২২৮ নম্বর কক্ষে থাকা শুরু করেন। তারা দুজন হলের ২৩৪ নম্বর বাথরুমটি ব্যবহার করতেন।
নেতাদের তুষ্ট করতে বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ। তিনি বাথরুমটি আধুনিকীকরণ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বরাবর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর একটি আবেদনপত্র পাঠান। এই আবেদনপত্রের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
আবেদনপত্রটিতে বলা হয়েছে, ‘...জরুরি ভিত্তিতে বাথরুমটি আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি। উল্লেখ্য যে, উক্ত বাথরুমটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি ব্যবহার করে থাকেন।’
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘হল প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাথরুমটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেই। এ কাজে আনুমানিক দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘বিষয়টিকে মোটেও ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের শিক্ষার্থীরা হলগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করে। যেখানে অন্য বাথরুমগুলোর অবস্থা খারাপ সেই পরিস্থিতিতে দুজন বিশেষ ছাত্রনেতার জন্য বিপুল অর্থ খরচ করে বিশেষ সুযোগ দেয়া অন্যায় এবং বৈষম্য। কারণ এই টাকাগুলো কারও ব্যক্তিগত না; বরং শিক্ষার্থীদের ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান মুন্না বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ হিসেবে তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হতো, যারা ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারবেন। ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও ছাত্রলীগের রাজত্ব বজায় রাখতে পারবেন।
‘বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ শায়খুল কখনোই ছাত্রদের জন্য কিছু করেননি। উল্টো বিভিন্ন সময় ছাত্রদেরকে বিপদে ফেলেছেন তিনি। এমন বাথরুম-সেবা ছাড়াও তিনি সবসময় ছাত্রলীগকে নানামুখী সেবা দিয়ে গেছেন। এমন একজন ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার নেই।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ শাইখুল ইসলাম মামুন জিয়াদ বলেন, ‘ওরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছিল। এখানে আমার কিছু করার ছিল না।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক শায়খুল হল প্রাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে বলে দিতে চাই যে আপনারা হুঁশিয়ার হয়ে যান; যদি মনে করেন যে কিছু হবে না তাহলে তা হবে ভুল ধারণা। আর যারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন তারা ভাইবেন না যে এক ফ্যাসিস্টকে দেশছাড়া করার পর আরেক ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় বসাব।’
টাঙ্গাইল শহরের পৌর উদ্যানে বৃহস্পতিবার বিকেলে গণঅভ্যুত্থান প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে সারজিস আলম বলেন, ‘আপনারা রাজনীতি করবেন; তবে যোগ্য হয়ে আসবেন, যাতে করে কেউ আপনাদের কটু কথা না বলে। এমন লোক আসবেন যারা সঠিক কথা বলবেন। যারা সাধারণ মানুষের কথা বলবেন তারাই রাজনীতি করবেন।
‘একটি বিষয় মনে রাখবেন, কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করলে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজকের পর থেকে সব চাঁদাবাজি, সব সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম আইনি, মোবাশ্বিরুজ্জামান হাসান, মিতু আক্তার, আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, এলমা খন্দকার এ্যানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাকিবুল হাসান।
তারা বলেন, ‘প্রশাসনে আওয়ামী লীগের যেসব প্রভুর বসে আছেন তারা হারুনের দিকে তাকান; তাহলেই বুঝতে পারবেন। সাবধান হয়ে যান।
ছাত্ররা যখন মাঠে নামে খালি হাতে ফেরে না। ১৯৫২ সালে তারা ফেরেনি। ১৯৯০ সালেও শাসক গদি থেকে নেমেছিলে। এবারও ছাত্র-জনতা মাঠে নামার পর ফ্যাসিস্ট হাসিনা নেমে গেছেন।’
তারা আরও বলেন, ‘আগামীতে যদি কেউ ফ্যাসিস্ট সরকার হতে চায় তাহলে ছাত্র-জনতা কঠিনভাবে তা মোকাবিলা করবে। আমরা মাঠ থেকে সরে যাইনি। আমরা ট্রাফিকের কাজ করেছি, ক্লিনের কাজ করেছি, বন্যায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
আরও পড়ুন:বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পূর্ণকালীন দুজন সদস্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার। নিয়োগ পাওয়া দুজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১ শাখার উপ-সচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেনের সই করা প্রজ্ঞাপনে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আদেশ, ১৯৭৩ এর সংশোধিত আইন, ১৯৯৮-এর ৪ (১) (বি) ধারা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তাদের এই নিয়োগের মেয়াদ হবে চার বছর। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দায়িত্ব থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দিতে পারবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক।
একই দিনে বুয়েটে উপ-উপাচার্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পদে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগ দেও হয়। এতে সই করেছেন উপ-সচিব মোছা. রোখছানা বেগম।
উপাচার্যকে নিয়োগ দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর ১১(১) এবং (২) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামানকে বুয়েটের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়া হলো।
তাকে নিয়োগের শর্তে বলা হয়েছে, যোগদানের তারিখ থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হবে। আগামী চার বছর তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তার নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
তাছাড়া উপাচার্য পদে তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতা পাবেন। বিধি অনুযায়ী তিনি অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিক তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।
প্রথক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনক্রমে দ্য ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (সংশোধিত) অ্যাক্ট, ২০০১-এর ৩ নং অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১-এর ১২ (এ) ধারা অনুযায়ী অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরীকে বুয়েটের উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়া হলো।
তিনি আগামী চার বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তার নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের হল দখল, আধিপত্য বিস্তারে ছাত্রলীগকে প্রশ্রয়’ শিরোনামে ৮ সেপ্টেম্বর নিউজবাংলায় প্রকাশিত সংবাদের অংশবিশেষের প্রতিবাদ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ববি শাখা ছাত্রদলের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদিকা জান্নাতুল নওরিন উর্মি এবং ববি ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সদস্য মো. আরিফ হোসাইন শান্ত ও শেরে বাংলা হলের রিফাত মাহমুদ।
গত ৯ সেপ্টেম্বর আরিফ হোসাইন শান্ত স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, ‘প্রকাশিত সংবাদে যেসব শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। আমি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সংবাদে শেরে বাংলা হলের ২০০৭ নম্বর কক্ষে রিফাত মাহমুদকে সিট বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। হলে কোনো শিক্ষার্থীকে সিট বরাদ্দের কোনো এখতিয়ার অন্য কোনো শিক্ষার্থীর নেই, এটি হল প্রশাসনের এখতিয়ারভুক্ত। রিফাত মাহমুদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেক আগে থেকেই ওই কক্ষে অবস্থান করে লেখাপড়া চালিয়ে আসছেন এবং তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
নিউজবাংলা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এ বিষয়ে বলেন, রিফাত মাহমুদ শেরে বাংলা হলের বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থী নন। তিনি ২০০৭ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা রাজু মোল্ল্যার সিটে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন এবং কক্ষটিতে তার নামে কোনো আসন বরাদ্দও নেই। এর সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ প্রতিবেদকের কাছে বিদ্যমান।
অবৈধভাবে অবস্থান করায় কতিপয় শিক্ষার্থী রিফাত মাহমুদকে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে ওই কক্ষ থেকে নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।
রিফাত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কার্যনির্বাহী সদস্য আরিফ হোসেন শান্তর অনুসারী ও সক্রিয় কর্মী। আর আরিফ হোসেন শান্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ছাত্রী-বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল নওরিন উর্মির অনুসারী।
এই সংবাদ প্রকাশের আগে জান্নাতুল নওরিন উর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রিফাত মাহমুদকে হল থেকে নেমে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু রিফাত হল থেকে নামেননি।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর ধানমণ্ডি ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর সৃষ্ট এই সংঘর্ষে ১৭ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আহতরা হলেন- ঢাকা কলেজের মশিউর রহমান, আব্দুল্লাহ, তৌহিদুর রহমান তানভীর, বাদল, সামির, তাহমিদ সালেহ, আব্দুল্লাহ, আরিফ, শামীম, বখতিয়ার, শামীম, নিশাত, হুজাইফা ও ইয়াসিন একং আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী উসাইব, মুসা ও আব্দুল্লাহ।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীরা বের হলে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে তাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়।
অপরদিকে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে এসে ভাঙচুর করে ও প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড খুলে নিয়ে যায়। এর জের ধরে তাদের সঙ্গে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এতে তাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতরা চিকিৎসা নিতে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে পাঁচটার মধ্যে ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে আসে। তাদের অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। বাকি কয়েকজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে আশপাশের এলাকাগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা।
‘টেকনিক্যাল স্টুডেন্ট মুভমেন্ট’-এর ব্যানারে ছয় দফা দাবি আদায়ে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে ফার্মগেট থেকে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত বাস, প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাসহ সব ধরনের গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি গাজী শামীমুর রহমান ইউএনবি-কে বলেন, ‘অবরোধের কারণে সড়কের দুপাশে যানবাহন আটকা পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। অবরোধকারীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সড়ক অবরোধকালে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে- ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া সব ‘বিতর্কিত’ কারুশিল্প প্রশিক্ষককে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান থেকে অবিলম্বে বদলি করা, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি নিশ্চিত করা এবং প্রতিটি সেমিস্টার পূর্ণ মেয়াদের অর্থাৎ ছয় মাসের করা।
তারা আরও দাবি করেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে (দশম গ্রেড) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্য কেউ আবেদন করতে পারবেন না এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান পদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংস্কার করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত কোনো জনবল থাকতে পারবে না।
শিক্ষক সংকট দূর করতে শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে সব শূন্য পদে কারিগরি জনবল নিয়োগের দাবি জানান।
এছাড়াও উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ আসন নিশ্চিত করার দাবি তাদের।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য