মেহেরপুর ও নওগাঁয় আরও দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর একটি করা হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সরকার প্রধান।
পরে বৈঠকের বিস্তারিত গণমাধ্যমে তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মেহেরপুরে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং নওগাঁয় বঙ্গবন্ধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করতে আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘মন্ত্রিসভায় আইন দুটির খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। তবে নওগাঁয় যে বিশ্ববিদ্যালয়টি হচ্ছে সেটির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় করার কথা বলেছে মন্ত্রিসভা।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হিসেব অনুযায়ী দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫২টি। এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে সরকারি উদ্যোগে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৪তে।
বেসরকারি উদ্যোগেও দেশে বিপুল সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ১০৮টির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে কয়েকটি কার্যক্রম শুরু করেনি এখনও।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরে (বশেমুরবিপ্রবিপি) ২০২৩-২৪ স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস আগামী ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. অলক কুমার সাহা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বশেমুরবিপ্রবিপিতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্মাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে প্রথম ব্যাচে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস (প্রথম ক্লাস) আগামী ২৮ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখ, সোমবার সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।
অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্মাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ভর্তি আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। ওই দিন বেলা ১১টা থেকে ১৭ অক্টোবর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে চূড়ান্ত ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পরবর্তী সময়ে ২০ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে ২২ অক্টোবর বিকেল চারটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিরোজপুরের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে চূড়ান্ত ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন:সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা। পরে শিক্ষক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা তাদের পুলিশে সোপর্দ করেন।
আটক দু’জন হলেন- ইবি ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক শাহিনুর পাশা এবং নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক আল আমিন সুইট। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র নজরুল কলা ভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বুধবার আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। ছাত্রলীগের ওই দুই পদধারী নেতা পরীক্ষা দিতে আসার খবর পেয়ে বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকরা তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে বের করে দেয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা বাধা হয়ে দাঁড়ান। পরে শিক্ষক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা দুই নেতাকে তাদের হেফাজতে নেন। বিকেল ৩টার দিকে প্রক্টরের উপস্থিতিতে তাদেরকে ইবি থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আজ এই সেমিস্টারের সবশেষ পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিতে না পারলে ক্ষতি হয়ে যেত। আমাদের ভুল হয়েছে বিভাগের শিক্ষকদের না জানিয়ে এসে। তবে আমাদের পরীক্ষা ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘আমরা জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের ওপর যাতে মব জাস্টিস না হয় সেটাকে গুরুত্ব দিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা মিলে তাদেরকে নিরাপদে থানায় সোপর্দ করেছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাদের আসার কথা জানতে পেরেই স্লোগান শুরু করে। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়েছি এবং শিক্ষার্থীদের আইন নিজের হাতে না তুলে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রক্টরের সহযোগিতায় তাদের পুলিশ সোপর্দ করা হয়েছে।’
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রহমান বলেন, ‘তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে না জানিয়েই পরীক্ষা দিতে আসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা তাদেরকে থানায় হস্তান্তর করেন। তারা আমাদের হেফাজতে আছেন।’
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ছাত্র সংসদ পাবলিক হেলথ ফোরামের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আসাদুজ্জামান ইমন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. গোলাম মোর্শেদ।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে দুপুর দুইটা পর্যন্ত। এরপর ভোট গণনা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফল ঘোষণা করা হয়।
ফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার ও সহকারী অধ্যাপক মো. আল মামুন।
কমিটির অন্যরা হলেন সহসাধারণ সম্পাদক মেরাজ হোসাইন মামুন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. শাহরিয়ার হোসেন সায়েম, ক্রীড়া সম্পাদক অভিষেক রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এস.এম. নাইমুল হক নব, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পাদক নাজমুল হাসান সাকিব, ডিজিটাল ওয়েলফেয়ার ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মো. মাহাদী হাসান।
নির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) আসাদুজ্জামান ইমন বলেন, ‘নির্বাচিত হতে পেরে আনন্দিত, তবে আরও বেশি ভালো লাগবে যখন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে পারব। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষাবিষয়ক রিসোর্স প্রদান, গবেষণামূলক কাজের মানোন্নয়ন, বিভাগের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা হবে আমার অন্যতম লক্ষ্য।’
নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো. গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘এই বিশেষ মুহূর্তে, পাবলিক হেলথ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হওয়াটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমার ব্যাচের বন্ধুদের প্রতি আমি বিশেষভাবে এবং সেই সাথে সিনিয়র এবং জুনিয়রদের সমর্থন ও আস্থার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
‘আমি বিশ্বাস করি, বিভাগের উন্নয়নের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে। বিভাগের বাস্তবসম্মত পরিবর্তন আনতে আমি আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ হয়েছে। যদিও এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের ফেসবুক পেজ থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় ১৪ জনের নাম রয়েছে।
কমিটিতে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের একজন, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের একজন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের তিনজন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আটজন এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
এর আগে প্রকাশ্যে এসেছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি আবু সাদিক কায়েম ও সেক্রেটারি এসএম ফরহাদের নাম।
আবু সাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আর এসএম ফরহাদ সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনিস্টিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রকাশিত ১৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন মহিউদ্দিন খান, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক পদে হোসাইন আহমাদ জুবায়ের, ছাত্র আন্দোলন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে মো. মাজহারুল ইসলাম, অফিস সম্পাদক পদে ইমরান হোসাইন, বায়তুল মাল সম্পাদক পদে আলাউদ্দিন আবিদ, দাওয়াহ ও ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক পদে হামিদুর রশিদ জামিল।
এছাড়া সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে নুরুল ইসলাম নূর, বিজ্ঞান ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. ইকবাল হায়দার, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে মো. আনিছ মাহমুদ ছাকিব, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে রিয়াজুল মিয়া, ব্যবসায় শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে হাসান মোহাম্মদ ইয়াসির এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক হিসেবে আব্দুল্লাহ আল আমিনের নাম রয়েছে।
কমিটির বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, ‘অন্যান্য সংগঠনের মতো করে আমাদের কমিটি হয় না। এজন্য আমাদের কমিটিতে সদস্য সংখ্যা কম মনে হতে পারে। ছাত্রদের নীতি-নৈতিকতা, স্কিল ডেভেলপমেন্টসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমাদের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। সেই বিভাগগুলো আমাদের কার্যক্রমগুলো তদারকি করে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই কমিটি গত জানুয়ারি মাসেই গঠিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে আমরা তা পাবলিকলি প্রকাশ করতে পারিনি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং শহীদদের আত্মত্যাগের ফলে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে এবং আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেয়েছি।’
আরও পড়ুন:আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। অন্যথায় আইন উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মঙ্গলবার আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন থেকে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো প্রত্যাহার, এসব মামলায় হওয়া রায় বাতিল, তার ওপর হামলায় জড়িত পুলিশ যাকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানানো হয়।
মানববন্ধনকালে শিক্ষার্থীরা ‘সাহসের অপর নাম, মাহমুদুর রহমান’; ‘জেলের তালা ভাঙবো, মাহমুদ ভাইকে আনবো’; ‘মাহমুদ ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’; ‘মাহমুদ ভাই ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ইসলাম হাদী বলেন, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আপোষহীন মাহমুদুর রহমানকে যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি না দেয়া হয়, তার বিরুদ্ধে আনীত মামলাগুলো যদি আইন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে বাতিল না করা হয় তাহলে আগামী রোববার আমরা ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবো। আমরা সেদিন প্রয়োজনে রক্তাক্ত হবো। কিন্তু মাহমুদুর রহমান মুক্ত না হলে আমরা কেউ বাসায় ফিরবো না।’
এর আগে শরীফ ইসলাম হাদী বলেন, মাহমুদুর রহমান প্রথম ব্যক্তি যিনি ফ্যাসিস্ট সরকারকে নৈতিকতার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে, একজন সম্পাদক হিসেবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। মাহমুদুর রহমানই প্রথম লিখেছেন ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি’। তিনি একাই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন৷
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান ভাই যখনই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লেখা শুরু করলেন ঠিক তখনই তার বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের পক্ষ থেকে মামলা দেয়া শুরু হয়। আমরা আজকের মানববন্ধন থেকে মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাই।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষে আতিফ হোসাইন বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান ফ্যাসিবাদ বিলোপের অন্যতম অগ্রনায়ক। এই দ্বিতীয় বাংলাদেশের অন্যতম প্রবক্তা এই মাহমুদুর রহমান। আর সেই মাহমুদ ভাইকে যদি দুই মিনিটের জন্য জেলে রাখা হয় তাহলে বুঝতে হবে বাংলাদেশকেও দুই মিনিটের জন্য জেলে রাখা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানে মুক্তি চাই।’
মানববন্ধনে আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, সাংবাদিক আবদুল আনোয়ার ঠাকুর, জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষে আতিক মুজাহিদ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য ও ঢাবি শিক্ষার্থী ফাতিমা তাসনিম, ঢাবি শিক্ষার্থী মাসুদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:দেশব্যাপী অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা ও বিদ্বেষী আচরণের বিষয়ে সরকারের নীতির ‘অস্পষ্টতা’ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বরাবর খোলা চিঠি দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক (ইউটিএন)। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এই চিঠি পাঠানো হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টা ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাকে চিঠির অনুলিপি দেয়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় শিক্ষক নেটওয়ার্কের হয়ে এই খোলাচিঠি পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।
খোলা চিঠি পাঠকালে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘পরিতাপের বিষয়, অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের অসহিষ্ণু, আক্রমণাত্মক ও নৈরাজ্যবাদী জমায়েত আমরা লক্ষ্য করছি। সেসব জমায়েত থেকে অপছন্দের গোষ্ঠী ও দলের বিরুদ্ধে কেবল হিংসাত্মক কথাবার্তাই বলা হচ্ছে না, ক্ষেত্রবিশেষে সেসব মানুষের ওপর হামলাও চালানো হচ্ছে।
‘তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘবদ্ধ হিংস্রতায় নিহত হয়েছেন তিনজন। অপরাধীদের ধরতে গিয়ে একজন সেনা কর্মকর্তা হামলায় নিহত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষকে।’
গীতি আরা নাসরিন আরও বলেন, ‘রাস্তায় ও পর্যটন অঞ্চলে নারীদের ওপর হামলা, নিগ্রহ এবং চরম হেনস্তা করা হয়েছে। শ্রমিকদের নিগৃহীত করেছে মালিক পক্ষের গুণ্ডারা। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও দপ্তরে ছোট ছোট অজস্র হিংস্রতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। মাজার, মন্দির, শিল্প-স্থাপনা ভাঙচুর থেকে শুরু করে বাউল এবং আহমদিয়াদের ওপরও আক্রমণ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনা সমাজের মধ্যকার দীর্ঘদিনের নানাবিধ অমীমাংসা ও গণতন্ত্রহীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে আমরা মনে করি। এভাবে চলতে থাকলে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের অভাব তীব্রতর হবে এবং সংকট উত্তরণে সরকারকে আরও বেগ পেতে হবে। আমরা দু-একদিনের মধ্যেই এই চিঠি পাঠাব।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সায়েদ ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা সরকারকে সময় না দিয়ে নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিচ্ছি। মালিক পক্ষের গুন্ডারা শ্রমিকদের অত্যাচার করছে। মাজার, মন্দির ও বিভিন্ন শিল্প স্থাপনা ভাঙচুর করা হচ্ছে।
‘আমরা দেখেছি, একটা গোষ্ঠী আমাদের অনেক শিক্ষককে ইসলামবিদ্বেষী বলে ট্যাগ দিচ্ছে। আমাদের যোগ্যতা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে কেন এসব ট্যাগ দিয়ে শিক্ষকদের হেনস্তা করা হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-রাজনীতি কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু সেখানে গণতন্ত্র থাকতে হবে। রাজনীতির নামে কেউ চাঁদাবাজি, হল দখল, সিট দখল করলে সেটা তো কোনো রাজনীতি নয়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী প্রমুখ এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ-কমিটি। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি, রেড জুলাইসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার সহযোগিতায় তৈরি শহীদদের এই তালিকায় এক হাজার পাঁচশ’ ৮১ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অডিটরিয়ামে শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য উপ-কমিটি, নাগরিক কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
কমিটির দেয়া তথ্যমতে, এই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে ৩১ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। তালিকাটি সম্পূর্ণ নয় বলে জানান কমিটির সদস্যরা। অনেক আহতের তথ্য একাধিকবার এসেছে এবং অনেকের নাম এখনও এই তালিকায় যুক্ত হয়নি বলেও জানান তারা।
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব তারেক রেজা বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে গঠিত স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রাথমিক তালিকায় মোট এক হাজার পাঁচশ’ ৮১ জন জনের তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
‘তালিকাটির তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এই কমিটি তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর চূড়ান্ত তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রদান করবে।’
তিনি বলেন, ‘তালিকা প্রণয়নের কাজে আমাদের সহায়তা দিয়েছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি, রেড জুলাইসহ অন্য বেশ কয়েকটি সংস্থা। পাশাপাশি, স্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তিরাও তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন, যা এই তালিকা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা শহীদ পরিবারকে ফোন দিয়ে বা সরাসরি যোগাযোগ করে এসব তথ্য নিশ্চিত হয়েছি। তবে হয়তো আরও অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা শহীদ হলেও তাদের নাম এই তালিকায় আসেনি।
‘আমরা জেলা কমিটিগুলোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন প্রতিটি নাম ও তথ্য ভেরিফাই হয়ে আমাদের হাতে আসে৷’
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক নাহিদা বুশরা, আইটি টিমের ফরহাদ আলম ভূইয়া, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি, রেড জুলাই-এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য