সৎমা ও এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বাবাকে গুম করার অভিযোগ তুলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থী। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাবিত সিয়াম সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তুলে তার বাবাকে উদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন।
সাবিত সিয়াম লিখিত বক্তব্যে জানান, তার বাবা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী সচিব মো. সোলায়মান আলী তালুকদারকে ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গুম করা হয়।
মাসুদ মোল্লা নামে যাত্রাবাড়ীর এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, সংমার বিরুদ্ধে পিতাকে নির্যাতন ও গুম এবং পিবিআই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রভাবিত হয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
সিয়াম বলেন, ‘মাসুদ আলম মোল্লা যাত্রাবাড়ীর একজন অসাধু প্রকৃতির লোক। তিনি বাবার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ফ্ল্যাট বন্ধকের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। কিছুদিন পর তিনি বাবার কাছ থেকে আরও ৩৭ লাখ টাকা ধার নেন। এরপর তিনি ওই ফ্ল্যাট বেদখল দেন।
‘বাবা টাকা ফেরত চাইলে মাসুদ মোল্লা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের একাউন্ট থেকে (চেক নং-এমসিই ১২২১৯৫৬) ১২ লাখ টাকা এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের একাউন্ট থেকে ১৭ লাখ টাকার (চেক নং-৭৪৯৩৫৬৭) দুটি ভুয়া চেক দেন।’
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এ বিষয়ে বাবা ২০২০ সালের ৭ জুন যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি করেন। আমার বড় ভাই সাকিব তালুকদার একই মাসের ২২ তারিখ আরেকটি জিডি করেন। আর এই দুঃসময়ে সৎমা মাহফুজা বেগম বাবাকে বাসা থেকে বের করে দেন। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে আমি মিরপুরের বাসায় থাকতে শুরু করি। বাবা যখন বাসায় একা থাকতেন তখন সৎমা এসে তার ওপর নির্যাতন চালাতেন। এই পর্যায়ে বাবা মাহফুজা বেগমকে তালাক দেন।
‘তালাকপ্রাপ্ত হয়ে মাহফুজা বেগম কৌশলে সৎবোন ফারিয়া তালুকদারের মাধ্যমে বাবাকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে নির্যাতন চালান। এরপর থেকে আমার বাবা নিখোঁজ। নিজেকে আড়াল করতে ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর মাহফুজা বেগম ফতুল্লা থানায় জিডি করেন। বাবাকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যে থানায় মামলা করতে চাইলে আমাদেরকেও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন মাহফুজা বেগম।’
সংবাদ সম্মেলনে জবির এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে আমি মামলা করি। পিবিআই নারায়ণগঞ্জকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে আমার বাবা পাগল হয়ে হারিয়ে গেছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেন।
‘আমার বাবা একজন পঙ্গু মানুষ। করোনার সময়ে তিনি কী করে একাকী হারিয়ে যাবেন? সব ঘটনা শুনে, দেখে আমরা নিশ্চিত হই যে বাবাকে গুম করা হয়েছে। আমি বাবাকে ফেরত পেতে প্রশাসনের প্রতি জোর আরজি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:হাইকোর্টের রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি নেয়ার অভিযোগে করা মামলায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকার শাহাবাগ থানা পুলিশ। এ মামলার বাদী হাইকোর্টের কোর্ট কিপার ইউনুস খান।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মুন্সী রুহুল আসলাম সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে কর্মরত অবস্থায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির জন্য কোটা সংরক্ষণের দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এ মামলার কিছু অবজারভেশনসহ রুলটি খারিজ হয়ে যায়, যা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও রয়েছে।
পরবর্তীতে এ কর্মকর্তা অজ্ঞাত আসামিদের সহযোগিতায় জাল রায় প্রস্তুত করে বিচারপতিদের স্বাক্ষর জাল করে নিজেই স্বাক্ষর দেন। তিনি রিট শাখাসহ আরডি শাখার কর্মরত অজ্ঞাত আসামিদের সহযোগিতায় মামলার রেকর্ড থেকে মূল রায় সরিয়ে জাল রায় ঢুকিয়ে রাখেন। সংশ্লিষ্ট রিট শাখার অনুলিপি বিভাগ থেকে জাল রায়ের নকল সংগ্রহ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে অন্যায় সুবিধা নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
পুলিশ আরও জানায়, তবে ফেনী পিটিআইয়ের পরিদর্শক (বিজ্ঞান) মো. জাকির হোসেন আগেই রেকর্ড থেকে মূল রায়ের একটি সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। ২০২২ সালের ২১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর মূল রায়ের সার্টিফাইড কপির ফটোকপিসহ এ সংক্রান্ত একটি জালিয়াতির অভিযোগ করেন তিনি। বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনা হলে তিনি বিচারপতি নাইমা হায়দার, জাকির হোসেন ও জিনাত হকের সমন্বয়ে একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন। এ বেঞ্চ ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করে ২০১৬ সালের মামলার রুল ডিসচার্জ করে দেন। একইসঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্টারকে অনুসন্ধান করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার নির্দেশ দেন।
এর ফলে শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলাম পেনাল কোডের ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে।
এরপর গত ১৫ এপ্রিল বাদি হয়ে হাইকোর্টের কোর্ট কিপার ইউনুস খান ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। আদালত ঢাকার শাহাবাগ থানায় মামলা নথিভুক্তর আদেশ দেন। মামলার পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে শাহাবাগ থানা পুলিশ শিবচর থানা পুলিশের সহায়তায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় যায়।
শিবচর থানার ওসি সুব্রত গোলদার বলেন, ‘শাহাবাগ থানা পুলিশ শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সী রুহুল আসলামকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
দেশের ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও বিবিএ প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। সোমবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা জিএসটি ভর্তি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নির্ধারিত ওয়েবসাইটে নিজেদের আইডিতে প্রবেশ করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। পাশাপাশি তাদের আসন বিন্যাসও দেখতে পারবেন।
এছাড়াও যেসব ভর্তিচ্ছুর ছবি বা সেলফি কর্তৃপক্ষের গাইডলাইন অনুযায়ী আপলোড করা হয়নি, তাদেরকেও সোমবারের মধ্যে সংশোধিত ছবি বা সেলফি আপলোডের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাছিম আখতার সোমবার নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানান।
উপাচার্য অধ্যাপক নাছিম আখতার বলেন, ‘২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত ২৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহের সুযোগ আজই (সোমবার) শেষ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ২৩ মার্চ এটি উন্মুক্ত করা হয়।
‘যেসব আবেদনকারীর ছবি বা সেলফি অথবা উভয়টি জিএসটির ফটো গাইডলাইন অনুযায়ী গৃহীত হয়নি, তারা সোমবার রাত ১০টার মধ্যে অবশ্যই জিএসটির ফটো গাইডলাইন অনুসরণ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ছবি বা সেলফি অথবা উভয়টি আপলোড সম্পন্ন করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে হবে। না হলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না।’
উপাচার্য অধ্যাপক নাছিম আখতার জানান, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন প্রক্রিয়া ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে শেষ হয়েছে। এবার মোট ৩ লাখ ৫ হাজার ৩৪৬টি আবেদন জমা পড়েছে।
এ বছর প্রায় ২১ হাজার আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৩৪৬। এবার প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বে গড়ে ১৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান শাখার ‘এ’ ইউনিটে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৯৯টি, মানবিক শাখার ‘বি’ ইউনিটে ৯৪ হাজার ৬৩১টি ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ‘সি’ ইউনিটে ৪০ হাজার ১১৬টি আবেদন জমা পড়েছে।
আগামী ২৭ এপ্রিল শনিবার (এ ইউনিট-বিজ্ঞান), ৩ মে শুক্রবার (বি ইউনিট-মানবিক) এবং ১০ মে শুক্রবার (সি ইউনিট-বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দুপুর ১২টা থেকে ১টা এবং অন্য দুই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
ভর্তি পরীক্ষার সব তথ্য গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইটে (https://gstadmission.ac.bd) পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের শিশুকাল থেকে মানবতার শিক্ষা দিতে তাদের টিফিনের টাকায় ছয় বছর ধরে ঈদ উপহার বিতরণ করছে ‘ডিলাইট কিন্ডারগার্টেন’ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, কুমিল্লা রেল স্টেশনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘ’-এর আয়োজনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদের নতুন পোশাক উপহার দেয়া হয়েছে।
ডিলাইট কিন্ডারগার্টেন প্রাঙ্গণে পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাছেদ মিয়ার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঈদ উপহার বিতরণে প্রধান অতিথি ছিলেন অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ছয় বছর ধরে পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নে ডিলাইট কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের একদিনের টিফিনের টাকার সঙ্গে শিক্ষক, অভিভাবক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা মিলিয়ে প্রতি বছর নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণের আয়োজন করা হয়।
এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শতাধিক স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে দুধ, চিনি, সেমাই, নুডুলস, সাবানসহ ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
এ ঈদ উপহার বিতরণের মাধ্যমে শিশুদের মানবিক ও পরোপকারী করে গড়ে তোলার জন্য এ আয়োজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপস্থিত এক বক্তা বলেন, ‘আগামী বছর আরও বড় পরিসরে এ আয়োজন করতে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।’
অন্যদিকে, কুমিল্লা রেল স্টেশনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে বৃহস্পতিবার সকালে ঈদের নতুন পোশাক বিতরণের মাধ্যমে সারা দেশে পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ৭০টি শিশুকে ঈদের নতুন পোশাক দেয়া হয়।
সংগঠনটির সদস্যরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী। তারা নিজেদের একদিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে শিশুদের মুখে হাঁসি ফুটাতে ঈদের নতুন জামা উপহার দিচ্ছেন।
আগামী পাঁচ দিন ধারাবাহিক এ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে ঈদের নতুন জামা উপহার দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
এ বিষয়ে লাল-সবুজ উন্নয়ন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি কাওসার আলম সোহেল বলেন, ‘১৩ বছর ধরে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, ঈদের নতুন পোশাক বিতরণ ছাড়াও মাদক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমরা কাজ করছি।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগমনা শিক্ষার্থীরা হত্যার হুমকি পাচ্ছেন দাবি করে নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
আবেদনে তারা বলেছেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর ও শিবিরের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাদেরকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমরা এসব আর নিতে পারছি না।’
বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন ছাত্রলীগমনা শিক্ষার্থীরা। এ সময় সেখানে ছয়জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন কেমিকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুল আলম ও সাগর বিশ্বাস।
আশিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের জীবন নিয়ে থ্রেট দেয়া হচ্ছে। আজ আমরা উপাচার্য স্যারের কাছে সবকিছুর প্রমাণ নিয়ে লিখিত আবেদন করেছি, যেন এটি বন্ধ করা হয়। আমরা ছাড়াও আরও যারা এটার ভুক্তভোগী তাদের নামও আমরা লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছি।
‘আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাইয়াকে খুনের আগে তাকে নিয়েও এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিং করা হয়েছিল। এরপরও যখন উনি দমছিলেন না তারপর ওনাকে নৃশংসভাবে আমাদের বুয়েট প্রাঙ্গণে হত্যা করা হয়। একই কায়দায় আমাদের বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহাম্মেদ ভাইয়াকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও একই জিনিস হচ্ছে। তাই আমরা উদ্বিগ্ন।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আমাদেরকে পাবলিকলি এবং ব্যক্তিগতভাবেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। যারা আমাদেরকে এই হুমকি দিচ্ছে তাদের নামগুলো উপাচার্য স্যারের কাছে দেয়া লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছি।
‘আমাদের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে বলা হচ্ছে- আপনার সন্তানকে দেখে রাখুন নয়তো পরে পাবেন না। এই কথাগুলোর মানে কী। এসব কিছুই করা হচ্ছে আমরা হিজবুত তাহরীর ও শিবিরের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি বলে।’
আশিকুল আলম বলেন, ‘বাঁশের কেল্লাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ গ্রুপে আমাদের ছবি পাঠানো হচ্ছে; যার স্ক্রিনশট আমাদের কাছে রয়েছে।’
আশিক বলেন, ‘এই শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করেছিল তাদের ৬ দাবির কোথাও হিজবুত তাহরীর, শিবির বা ছাত্রদলের নাম উল্লেখ ছিল না। শুধু ছাত্রলীগের ইমতিয়াজ রাব্বিসহ আরও যারা সেখানে ছিল তাদের বহিষ্কার চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন কেন তারা শিবির বা হিজবুত তাহরীর নিয়ে কথা বলছে? এটা কিন্তু ভাববার বিষয়।
‘আমরাই প্রথম শিবির ও হিজবুত তাহরীরের পয়েন্ট এনেছি। তারা এখন আমাদের এই পয়েন্ট নিয়ে পুরো আন্দোলনকে ঘুরিয়ে দিতে চাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘কয়েকদিন আগে কিছু শিক্ষার্থী বুয়েটে বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগিয়েছিল। কিন্তু এরও ৬ মাস আগে থেকে আমাদের মুজিব কর্নারের দেয়ালে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবিটি ছেঁড়া অবস্থায় ছিল। সেটির দেয়ালের দিকে তাকানোও যাচ্ছে না। পরে আমরা সেই জায়গাটি সংস্কারের আবেদন করেছিলাম ডিএসডব্লিউ স্যারের কাছে। কিন্তু তিনি আমাদেরকে সেটি সংস্কারের অনুমতি দেয়ার সাহসও করেননি।’
এই শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘হাইকোর্ট যেহেতু রায় দিয়েছে আর উপাচার্য স্যারও যেহেতু বলেছেন যে হাইকোর্টের রায় শিরোধার্য, তাই যদি উপাচার্যের অনুমতি থাকে আমরা বুয়েটে প্রগতিশীলতার রাজনীতি চালু করতে চাই।’
সম্প্রতি ‘বুয়েটে আড়িপেতে শোনা’ নামে বুয়েটের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি প্রাইভেট গ্রুপে ছাত্র রাজনীতি চালুর পক্ষ-বিপক্ষে ভোট চেয়ে পোল খোলা হয়। সেই পোলে ৪ হাজার ৭৯৬জন ভোট দেন। রাজনীতি চালুর পক্ষে ভোট পড়ে ২০টি আর ‘না’-তে ভোট পড়েছে ৪ হাজার ৭৭৬টি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংবাদ সম্মেলনে সাগর বিশ্বাস বলেন, ‘সেই পোলে যারা ভোট দিচ্ছে তাদের পরিচয় দেখার সুযোগ না থাকলে রেজাল্টটা এমন হতো না। অনেকেই আছেন যারা রাজনীতির পক্ষে। কিন্তু এখানে ভোট দিলে তাদেরকেও সামাজিকভাবে বয়কট করা হবে এই ভয়ে তারা ভোট দেননি।’
এ সময় তিনি এই গ্রুপগুলো যারা পরিচালনা করছে তাদের পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘সেই গ্রুপগুলোতে হেট স্পিচ ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের ছবি নিয়ে মকারি করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:আপনার সন্তান কিংবা নিজের জন্যে একজন যোগ্য হাউস টিউটর খুঁজে বের করাটা বলতে গেলে বেশ কঠিন কাজ। সাধারণত স্কুলের শিক্ষক বা পরিচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে খোঁজ-খবর নেয়ার মাধ্যমে হাউস টিউটর ঠিক করা হয়। তবে এই শিক্ষকরা আপনার সন্তানের উপযুক্ত কি না, সেটা জানতে-বুঝতেই অন্তত একমাস চলে যায়। অথচ পরে অনেক সময় মনে হয় যে সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়নি। যোগ্য হাউস টিউটর খোঁজার এই প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে এভাবে চলতেই থাকে।
অন্যদিকে, মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন তরুণ ছাত্ররা টিউশনি করাতে চাইলে উপযুক্ত ছাত্র খুঁজে পায় না। কীভাবে বিজ্ঞাপন করবে, দেয়ালে-ল্যাম্পপোস্টে পোস্টার লাগাবে- সেটা ভেবে হয়রান হয়।
স্কুলের ছাত্র থাকাকালে আফতাব আদনানের জন্য একজন ভালো হাউস টিউটর খুঁজতে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তার বাবা-মাকে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে নিজে যখন টিউশনি করতে চেয়েছেন, তখনও ছাত্র খুঁজে নেয়া বা অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে নানা বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির আইডিয়া মাথায় আসে তার, যেখানে হাউস টিউটর নিয়োগের ব্যাপারটা হবে সহজ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়।
সেই ভাবনা থেকেই সাহস যুগিয়ে ২০১৮ সালে ‘স্মাইল জবস অ্যান্ড টিউশনস’-এর শুরু করেন আদনান। শুরুতে একটা ডায়েরিতে শিক্ষক-অভিভাবকদের তথ্য লিখে রাখতেন তিনি। আর এখন পাঁচজনের টিম নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন টিউশনির এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতটাকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখার মধ্যে আনার জন্য।
বর্তমানে ‘স্মাইল জব অ্যান্ড টিউশনস’-এ রেজিস্টার্ড টিউটরের সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি। প্রায় ১২০০ অভিভাবক তাদের সন্তানের জন্য পছন্দমতো হাউস টিউটর খুঁজে নিয়েছেন ‘স্মাইল জবস অ্যান্ড টিউশনস’ থেকে।
এখন ঢাকার মধ্যে কার্যক্রম পরিচালিত হলেও এ যুবকের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য দেশজুড়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং টিউটরদের মধ্যে যোগসূত্র ঘটানো।
আদনান বিশ্বাস করেন যে তিনি পারবেন। কারণ এই স্বপ্নটা তিনি ঘুমিয়ে দেখেন না, বরং এটিই তাকে জাগিয়ে রাখে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২৯ মার্চ। ইতোমধ্যে সেই পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। ঈদুল ফিতরের পর ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন শুরু হলেও ঈদের আগে খুব একটা সময় পাওয়া যাবে না। চলতি সপ্তাহ ছাড়া আগামী সপ্তাহে মাত্র দুদিন সময় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া কয়েকটি জেলা থেকে উত্তরপত্র ঢাকায় পাঠাতে দেরি হবে।
‘ফলে ঈদের আগে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। আশা করছি, ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার পরপরই তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে পারব।’
প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দুই বিভাগের ৪১৪টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থী ছিলেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ।
এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে তিন বিভাগের ২২ জেলায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষার ফল ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। তাতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০ হাজার ৬৪৭ জন প্রার্থী।
তারও আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৩৩৭ জন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে প্রথম ধাপে ২ হাজার ৪৯৭ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে যাওয়া এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠায় ওই নিয়োগ আটকে গেছে। ইনস্টিউটটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বোর্ড অফ গভর্ন্যান্স এই নিয়োগ আটকে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বোর্ডের সভায় সভাপতিত্ব করেন। উপাচার্যের বাসভবন সংলগ্ন লাউঞ্জে সোমবার বিকেল ৩টায় এই বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা ওই শিক্ষকের নাম সাজু সাহা। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বিভাগেরই এক সাবেক ছাত্রী এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন।
সম্প্রতি সাজু সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র প্রভাষক পদের জন্য আবেদন করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের সভাপতিত্বে হওয়া নিয়োগ বোর্ড সাজু সাহাসহ চারজনকে নিয়োগের জন্য মনোনীত করে।
সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত বিজি (বোর্ড অফ গভর্ন্যান্স) বোর্ডে এটি পাস হওয়ার কথা ছিল। এর আগের দিন রোববার সাজু সাহার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়টি সামনে এনে সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
বিজি বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি এখন রিভিউ করার জন্য সিলেকশন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।’
সিলেকশন বোর্ডের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘বিষয়টি আজ বোর্ড অফ গভর্ন্যান্সে উঠেছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। সেখান থেকে এটি আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য।’
এর আগে রোববার নিউজবাংলায় প্রকাশিত সংবাদে ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে বলা হয়, অধ্যাপক সাজু সাহা কাউন্সেলিং করানোর নামে তাকে নিপীড়ন করেছেন উল্লেখ করে সাবেক ওই ছাত্রী বলেন, ‘তিনি আমার গায়ে হাত দিয়েছেন। আমাকে তার সঙ্গে হুক-আপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। ওনার প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য রেস্টুরেন্টে আমার পা পর্যন্ত ধরতে চেয়েছেন। এসবের ট্রমায় আমি এক সেমিস্টার ক্লাসেও নিয়মিত হতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘এসব আমি এতোদিন উপস্থাপন করার সাহস পাইনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইরুজ অবন্তিকার ঘটনার পর আমি এগুলো সামনে আনার সাহস পাই।’
সাবেক ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘সাজু সাহা ভয়ে আছেন আমার অভিযোগের ব্যাপারে। কারণ তিনি তো জানেন, তিনি আমার সাথে এসব করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেও উনি নিশ্চিত একই কাজ করবেন নারী শিক্ষার্থীদের সাথে। ওনার বিচার নিশ্চিত করেই ছাড়বো আমি, শুধু সময়ের অপেক্ষা।’
এদিকে সোমবার এই শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেলে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অপরদিকে এদিন দুপুরেই ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেন অধ্যাপক সাজু সাহা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য